একমুঠো সুপ্ত বাসনা পর্ব-৪০+৪১+৪২

0
630

#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৪০

ভাদ্রমাসের এই বৃষ্টিসিক্ত দিনেই বিয়ে হচ্ছে আদ্র-আনজানার৷ আনাজের পরিবার খুশির অবলীলায় মেতে উঠেছে। বহিরাগত কিছু মেহমানদের নিয়ে ছোটখাটো অনুষ্ঠান করো সেরে ফেলা হবে আনজানা আর আদ্রর বিয়ে। আদ্র কিছু ক্লোজ ফ্রেন্ডদের নিয়ে এসেছে। আনাজদের কিছু আত্মীয় আর ইয়ানার পরিবার। ব্যাস এরাই। ইয়ানারও বেশ লাগছে, এতোদিন পর বাসায় তার পরিবার এসেছে। তার ভাইবোনকে দেখে ভীষণভাবে খুশি হয়েছো।
আয়নার সামনে বসে আছে আনজানা। একটু পর ইয়ানা ভাবি এসে মেকওভার করে দিবে। মনে মনে লাড্ডু ফোটার মতো লাগছে তার। খানিক বাদেই ইয়ানা আসে তার সামনে। তাকে দেখে মুচকি হেসে শাড়ী পড়াতে শুরু করে। হালকা মেকআপ করিয়ে দিয়ে একটা স্মার্ট লুক এনে দেয়। বেশ টিপটাপ ব্রাইড লাগছে আনজানাকে। তেমন সাজগোজ নেই। হাতে চুড়ি আর গলায় গলায় একটা স্বর্ণের চেইন আছে। এটাই জাস্ট। আনজানাও গয়নাগাটিকে পছন্দ করে না। শাড়ীটাও একদম বেনারসি নয়। খুব সিম্পল কাজ করা আর্টিস্টিক প্যাটার্নের সিল্কের শাড়ী। এটাতেই কমফোর্ট ফিল করছে সে।
কপালে টিপ দেওয়ার পরে মাথার ঘোমটাটা টেনে দিয়ে আনজানার বাহুদ্বয় ধরে নিচে নিয়ে যায় ইয়ানা। নিচের বড় ড্রয়িংরুমটায় অতিথির সমাগমে মুখরিত। আনজানা শাড়ির কুচিগুলো ধরতে ধরতে নিচে নেমে আসে। সবার চাহনিবিদ্ধ হয় আনজানাতে। হালকা সাজেও অসাধারণ লাবণ্যময়ি লাগছে তাকে। সবাই তার কাছে এগিয়ে আসে। এসবে একটু লজ্জিত বোধ করছে আনজানা। মাথা খানিকটা নিচু করে যথা সম্ভব কথা বলছে। মাঝেমাঝে তার দুষ্টু মনটা আদ্রর খোঁজ করছে। তবে, এদিক ওদিক তাকিয়েও আদ্রর খোঁজ পায় না। রাগ ওঠে তার। ছেলেটা গেলো কই! সবার সাথে আলাপচারিতা শেষে বেলকনিতে ঢু মারতে যায়। সেখানেই আদ্রকে আবিষ্কার করে সে। আদ্র তাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। আজকে অন্যরকম হ্যান্ডসাম হাঙ্ক লাগছে আদ্রকে। শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি, চুলটা জেল দিয়ে সেট করা। আদ্র হেসে উঠতেই তার গজদাঁতটা আবার বেরিয়ে আসে। আনজানা কিছুক্ষণ গজদাঁতটার দিকে মোহময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর বুঝতে পারে সে কি করছিলো। এই ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে আদ্রর কাছে থাকলে সে আর নিজের মধ্যে থাকে না। হারিয়ে যায় এক কল্পনার রাজ্যে। যেটা শুধু ভালোবাসাময়।

–‘আমাকে খুঁজছিলে মনে হচ্ছে? ‘ (আদ্র)
–‘ক..কই না তো!’ (জড়তার সাথে আনজানা বলে)

–‘আমার আনজুপরিটা মিথ্যে বলা শিখেছে দেখছি? ‘

আদ্র রম্যের সুরে বললেও ব্যাপারটা ভালো লাগে নি আনজানার। কিছুটা রেগে গিয়ে আদ্রর পাঞ্জাবির গলা ধরে নিজের কাছে টেনে আনে। আনজানার এমন কাজে হকচকিয়ে যায় আদ্র। মুখের মাঝে সল্প জায়গা অবশিষ্ট রেখে বলতে শুরু করে,

–‘আমার সাথে মশকরা হচ্ছে জি? বিয়ের পর মশকরার মাশুল কিন্তু গুণতে হবে’
ডেভিল হাসি দেয় আনজানা। মুখে হাসি রেখে ঢোক গিলে আদ্র। আনজানা হঠাৎ সিরিয়াস মুখভঙ্গি করে। হাসিটা মুখ থেকে নিমিষেই গায়েব হয়ে যায়। অবাক হয়ে যায় আদ্র। আড়ষ্টভাব নিয়ে ‘কি হয়েছে’ বললেই উন্মাদের মতো আনজানা হেসে উঠে। বোকা বনে যায় আদ্র।

–‘ এই তোমার মুড সুইং এর রোগ আছে? ‘

–‘এমন বলছো কেনো? ‘ অন্যদিকে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে অভিমান করে বসে আনজানা। আনজানার এমন বাচ্চামি দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে আদ্র হেসে দেয়। আনজানাও হাসতে শুরু করে। হাসতে হাসতে একসময় আদ্র আনজানা একে অপরের মাঝে হারিয়ে যায়।
তাদের হাসির শব্দ শুনে ইয়ানা দেখতে আসে। চুপিচুপি কোটর থেকে দেখতে পায় তাদের উন্মাদনা। হাসি দমিয়ে রাখতে পারে না ইয়ানা। একসময় সেও শব্দ করে হাসতে শুরু করে দেয়। হঠাৎ হাসি থামিয়ে চমকে যেয়ে ভাবির দিকে তাকায় আদ্র আর আনজানা। তাদের ভাবি এতোক্ষণ দেখছিলো ভেবে লজ্জা বোধ করে একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে। ইয়ানা কোনোমতে হাসি থামিয়ে বলে,

–‘আমি কিন্তু কিচ্ছুটি দেখিনি হুম! তো তোমরা যে এখনই হাসা হাসি , নাচানাচি করছো বিয়ে হলে তখন কি মুখ গোমড়া করে বসে থাকবে? ‘

আবার হাসতে শুরু করে ইয়ানা। তারপর তাদের কোনোরকম ডেকে ভেতরে চলে যায়। সেখানে এতোক্ষণ থাকলে নির্ঘাত হাসতে হাসতে শহীদ হয়ে যেতো!

————————– ❀

তিন কবুলের মাধ্যমে সবচেয়ে পবিত্র বন্ধন স্বামী-স্ত্রী তে রূপান্তরিত হয় আদ্র-আনজানা। রেজিস্ট্রার পেপারে সাইন করার সময় চোখ থেকে একফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়েছিলো আদ্রর। ব্যাপারটা উপস্থিত কারোই দৃষ্টিগোচর হয় নি। নিজের ভালোবাসার মানুষটা কাছে পাওয়ার মতো সুখটা অন্যরকম। এটা কথা দ্বারা বোঝানো আদৌ সম্ভব না। আনজানার সে মূহুর্তে ইচ্ছে হচ্ছিলো আদ্রকে জড়িয়ে ধরার। মানুষ থাকায় তা আর হয় নি। সবার সামনে আদ্রর হাতটা শক্ত করে ধরলো সে….

চলবে,,,

#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৪১

–‘আমি আনজানাকে আমার সাথে নিয়ে যেতে চাই!’
আদ্রর এহেন কথায় ভ্যাবাচেকা হয়ে যান আনুজ। ভেতরে ভেতরে কিছুটা রেগেও যান। একে তো তিনি তার একমাত্র মেয়ের সাথে আদ্রর বিয়ে দিতে চাইছিলেন না। আনজানার মুখের দিকে তাকিয়ে বিয়ে দিতে বাধ্য হলেন তবে, শর্তটা এই যে আনজানার মাস্টার্স কামপ্লিট করার পর তবেই জামাইয়ের বাসায় যেতে পারবে। কিন্তু আদ্রর এমন দাবি তার পক্ষে মানা আদৌ সম্ভব নয়, আর সেটা আদ্রও ভালো করে জানে। এখন জানা সত্বেও এভাবে যদি নিয়ে যেতে চায় তাহলে অবশ্যই রেগে যাবেন।

–‘হোয়াট? দেখো বাবা তুমি এখন আমার জামাই আর তোমার ওপর রাগলে সেটা খারাপ দেখাবে। তাই ভালোভাবেই বলছি মেয়ের মাস্টার্স কাম্পিলিট না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে।’

–‘কিন্তু বাবা, ও তো আমার সাথে থেকেও পড়াশোনা করতে পারে তাই নয় কি?’

–‘তা কেনো পারবে না? অবশ্যই পারবে, তবে আমার মতেরও একটা ব্যাপার আছে না? যেটাতে আমি সম্মতি দেই নি। তাছাড়া তোমাদের জোড়াজুড়িতে রেজিষ্ট্রেশন অব্দি সম্পর্কটা এগোলো নতুবা আমি সেটাও করতে দিতাম না!’

–‘দেখুন বাবা, আমি বুঝতে পারছি আপনি এতে রাজি নন। মেয়েকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে আপনার। একটাই মেয়ে কি-না! কিন্তু আপনি আমার ব্যাপারটাও বুঝুন, আমিও একা অনেক প্রবলেম ফেইস করি। আর মোটকথা আমি আনজুপরিকে ছাড়া এক দন্ড ঠিক থাকতে পারি না যে!’ (বিনয়ের সুরে আদ্র বলে)

–‘দেখো বাবা, এতে কিছু করার নেই। আর আমার মেয়েও তোমার সাথে যেতে রাজি নয়।’ (আনুজ)

–‘আপনি জিজ্ঞেস করেছেন আপনার মেয়েকে? সে কিসে রাজি? ‘ (আদ্র)

–‘না। তবে,ও রাজি থাকলে আমার কিছু করার থাকবে না।’

আদ্রর মুখে হাসি ঝলকিয়ে যায়। এক ছুটে চলে যায় আনজানার কাছে। এসব রুম থেকে শুনছিলো আনজানা। সে ভেবে কুল পাচ্ছে না এখন আদ্র আসলে কি উত্তর দেওয়া যাবে। মনটা তার আদ্রর সাথে থাকতে চাইছে আবার পরিবারকে ছাড়তেও ইচ্ছে করছে না। রীতিমতো গোলকধাঁধায় পড়ে গেলো আনজানা। আদ্র তার কাছে এসে আলতো করে হাত টেনে ড্রয়িংরুমের কাছে নিয়ে যায়।

–‘আনজানা ইটস ইয়োর ডিসিশান, তুমি কি করবে- আমার বাসায় উঠবে নাকি এখানেই থাকবে? ভেবে চিন্তে বলো! ‘
কি বলবে বুঝতে পারছে না আনজানা। অথচ সবার কৌতূহল চাহনি তার মাঝে আবদ্ধ! এক সময় আনজানা ঠোঁটজোড়া প্রসারিত করে বলতে শুরু করে।

–‘বাবা, আমরা তো লিগ্যালি হাজবেন্ড-ওয়াইফ তাই না? তহলে তো ওর সাথে থাকতে পারতাম…

শেষের কথাটা কোনোমতে বলে জিভ কামড়ে ধরে আনজানা। এই বুঝি বাবার কাছে ধমক খাবে! কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে আনুজ তার মাথায় হাত রেখে বলেন,

–‘আমি বুঝছি, তুইও আদ্রকে ছাড়া কষ্ট পাবি। তুই ইচ্ছে প্রকাশ করেছিস তোকে আর বাঁধা দেবো না। যাহ আদ্রর সাথে যেতে পারিস তুই, তবে মাঝেমাঝে এখানে না আসলে কিন্তু খবর আছে!’

খুশিতে চোখের কার্নিশে পানি এসে জড়ো হয় আনজানার। এটা কি সত্যিই তার বাবা? মুখে হাসি দিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। বাবাও খুশি হয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দেন। মেয়ের কপালে চুমু খান।

–‘বাবা, তুমি চিন্তা করবে না। দু’দিন পরপর দেখা করতে আসবো হুম। নাহলে আমার জামাইয়ের এক দিন কি আমার একদিন।’

আনজানার কথায় উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে দেয়।

–‘দু’দিন পরপর আসতে হলে এমন জামাইয়ের বাড়ি যাওয়ার দরকার নাই ভাই! তুই এখানেই ভালো আছিস।’ (আনাজ)

–‘ভাইয়া.. আনাজের কথায় বিরক্ত হয়ে আনজানা বলে৷ সবাই আবার হাসিতে মশগুল হয়ে পড়ে।

———————————

ইয়ানার সাহায্যে লাগেজ প্যাক করে আদ্রর সাথে যাওয়ার জন্য রওনা হয় আনজানা। মনটা খারাপ যাচ্ছে। আনাজ ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে পরছে, মুখে কৃত্রিম হাসিটা দৃশ্যমান। বেশি রাত হয়ে যাবে বিধায় আদ্র আর দেরী করতে চায় না। সবাইকে এক এক করে জড়িয়ে ধরার পর মা-বাবার থেকে দোআ নিয়ে যেতে উদ্যত হয়। সবাই দাড়িয়ে আছে নিস্তব্ধতার সাথে। এমন কিছু হবে, তার জন্য প্রস্তুত ছিলো না সবাই। অগত্যাই আনজানার জোরাজোরিতে যেতে দিতে হচ্ছে। আদ্রর সাথে গাড়ীতে উঠে পড়ে আনজানা। আরেকবার ভাবিকে জড়িয়ে ধরে। মন খারাপ থাকলেও কান্না আসছে না তার। যেহেতু ঢাকার মধ্যে বিয়ে হয়েছে খুব বেশি দূরে না। যখন ইচ্ছা একটা সিএনজি নিয়ে চলে আসতে পারবে। আর কথা তো দিয়েছেই দু’দিন পরপর দেখা করতে আসবে, তাহলে ক্ষতি কি? বরং ভালো লাগছে আদ্র বেচারাকে আর একা একা কষ্ট পেতে হবে না। এতো দিন ভালোই ভোগান্তির মাঝে জীবনযাপন করেছে। এখন তা ঘুচবে।

চলবে,

#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৪২

ব্যালকোনিতে বিষন্নরূপে বসে আছে ইয়ানা। আনজানা যাওয়ার পর থেকে ভালো লাগছে না একটুও। এতোক্ষণ আনজানা থাকলে আড্ডা-হাসিতে সময়টা পেরিয়ে যেতো। আনজানা না থাকায় কেমন উদ্ভট ধরনের লাগছে। শাশুড়ীমা রোজদিন কার মতো জলদি শুয়ে পড়েছেন। বাসার সবার মন খারাপ আনজানার এভাবে চলে যাওয়ায়। মেয়েটা থাকলে এতোক্ষণ সবাইকে মাতিয়ে রাখতো। না জানি আনজানাও কি অবস্থায় আছে। আয়না শুয়ে শুয়ে ভাবছেন তার মেয়ে যতোই ভালোবেসে বিয়ে করুক আর যতোই স্বামী ভক্ত হোক দিন শেষে পরিবারকেই মনে পড়বে। যতোই হোক রক্তের সম্পর্ক সবার সাথে। তাদেরকি আর চট করে ভোলা যায়? কালকে আনজানা যাওয়ার পর একবার কথা বলেছেন, এই। আজকে ফোন দিতে চাইলেও দিলেন না কি মনে করে। মেয়ের চলে যাওয়ায় তিনিও কষ্টের ভেতরে আছেন। আনুজের দিকে দৃষ্টিপাত করেন। নাহ, তিনি ঘুমিয়ে গিয়েছেন। মেডিসিন নেওয়ার কারণে জলদি ঘুমিয়ে যান তিনি।

——–
আনাজ বাসায় আসতেই গেটটা খুলে দেয় ইয়ানা। আনাজ বরাবরের মতো ফিক করে হেসে ভেতরে ঢুকে। এপ্রোনটা আর ব্যাগটা ইয়ানার হাতে ধরিয়ে দেয়। মুখ ফুলিয়ে সেগুলো ভেতরে নিয়ে যায় ইয়ানা। আনাজ ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে। ইয়ানা ডায়নিং রুমে এসে আনাজের ডিনারের ব্যাবস্থা করতে থাকে। খানিক বাদেই আনাজ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ডায়নিং রুমে আসে। ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,

–‘মা বাবা ঘুমিয়ে গিয়েছেন? ‘
–‘হু’ মুখ ফুলিয়ে উত্তর দেয় ইয়ানা।

আনাজ চশমাটা টেবিলের উপর রেখে বলে,
–‘একটা প্লেট কেনো? খাবে না তুমি? নাকি আগেই খেয়েছো? ‘
–‘ইচ্ছে করছে না।’
সন্দেহের নজরে ইয়ানার দিকে তাকায় আনাজ।

–‘খাবে না মানে? রাতের খাবারটা কতোটা ভ্যালুয়েবল জানো তুমি? রাতে আমাদের শরীরের যাবতীয়…..

আনাজকে থামিয়ে দিয়েই ইয়ানা বলে,

–‘আমি কি বলেছি আমাকে জ্ঞান দিতে? আমার খাওয়ার ইচ্ছে নেই বিধায় আমি খাচ্ছি না। আপনি জোড় খাটাচ্ছেন কেনো?’

–‘এই তুমি কি কোনো কারণে আমার উপর রাগ করেছো? ওয়েট আজকে কি কোনো বিশেষ দিন? উহু মনে পড়ছে না। দ্যান তুমি কি কিছু আনতে বলেছিলে যে ভুলে গিয়েছি? নাহ এরকম কিছুও মনে পড়ছে না তাহলে? ‘

–‘তাহলে কোনো কারণই না। এখন চ্যাচামেচি না করে খেতে বসো?’
ইয়ানা ভাত বাড়তে নিলেই আনাজ চেয়ার থেকে দাড়িয়ে যায়৷ অন্যদিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে,

–‘তুমি রাগি হলে আমি রাগি আল্ট্রা প্রো ম্যাক্স। মাইন্ড ইট। তুমি যেহেতু খাবে না, তাহলে আমি একা একা খেলে সেটা আমার কাছে অন্যায় নয়তো খাওয়াটা আমার মন মেনে নিতে পারবে না।

–‘এগুলো সিনেমার মধ্যেই মানায় মি.আনাজ এহমাদ! গলার স্বর নিচু করে আর টাইম ওয়েস্ট না করে খেতে বসুন।’

–‘দ্যাটস্ নট এনি কাইন্ড অব ড্রামাটিক্যাল একশান ইউ নো। সো আমি খাচ্ছি না। দ্যাটস ফাইনাল।’

–‘ওকে ফাইন দ্যান কাউকে খাওয়া লাগবে না তাহলে। একটা রাত না খেলে কিছু হয় না,

চোখ টিপে ইয়ানা বলে। থতমত হয়ে যায় আনাজ। ইয়ানার হাত ধরে তার কাছে এনে বলে,

–‘না খাওয়িয়ে রাখবা?’
–‘তুমিই তো বললা খাবে না, এখন আমার দোষ না?’

–‘ওকে তাহলে আমি খাবো, আর তুমিও! ‘

সশব্দে হেসে উঠে ইয়ানা। বাধ্য হয়ে আনাজের সাথে খেতে বসতে হয়।

————————————

–‘ইয়ানা তোমার কি হয়েছে? আনজানার জন্য মন খারাপ করছো? ‘

ইয়ানার বেডের পাশে বসে আনাজ বলে্। সেই ইয়ানাকে কেমন মনমরা লাগছে। কেমন চুপসানো বলের মতো বসে রয়েছে৷ এরকম ব্যাবহারতো তেমন একটা করে নি ইয়ানা। বিয়ের এতো দিন হয়ে গেলো। তবে আজকে কি হয়েছে তার? বিষয়টা খোলাসা করতে ইয়ানাকে ঠান্ডা মাথায় জিজ্ঞেস করে আনাজ। ইয়ানার মধ্যে বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো না। আগের মতোই এক দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে বলে,

–‘আমি খুব একা ফিল করছি আনাজ!’

–‘আচ্ছা তাই বুঝি? আমি ননদ ভাবির ভালোবাসা দেখে বিষম খাচ্ছি তো। তো তুমি কি চাচ্ছো আরেকটা বিয়ে করে একটা সতীন এনে দিই? তার সাথে মজায় মজায় সময় কেটে যাবে?’
আনাজের কথায় রম্যের সুরটা স্পষ্ট। ইয়ানা চোাখ পাকিয়ে বলে,

–‘মোটেও রসিকতা করতে আসবেন না। আপনি এতোটা স্যাভেজ আর ধান্দাবাজ লোক কি বলবো! সব সময় নিজের ধান্দা খুঁজেন। আমি বুঝি না এরকম ধান্দাবাজ ডক্টর এতো ফেমাস কেনো!’

–‘ওহ, তাহলে তুমি ভাবছো তোমার মতো সবার উপর ধান্দাবাজি ফলাই? উহু মোটেও না। আমার সব ধান্দাবাজী তোমার উপর হে হে হে! ‘

আবার হাসতে শুরু করে আনাজ। ইয়ানা আবার মন খারাপ করে অন্যদিকে তাকাতেই থেমে যায় আনাজ। ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,

–‘বাসার সদস্য বাড়ানোর ফন্দি আঁটছো?’

ইয়ানার মুখ হাসিতে ঝলমলিয়ে উঠে৷ আনাজকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে আলতো করে ঘুষি মেরে দেয়।

চলবে,,,