কন্ট্রাক্ট অফ ম্যারেজ পর্ব-২০+২১

0
922

#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi

“পর্ব-২০”

অফিসে বসে মৃধা নিজের মনে কাজ করছে। হঠাৎ সে খেয়াল করল আয়ান আর ন্যায়রা হেসে হেসে কথা বলতে বলতে অফিসে ঢুকছে। মৃধা তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিল ওদের দিক থেকে। তারপর আবার নিজের কাজে মন দিল। কিন্তু ওই যে বেহায়া মন বারংবার সেদিকেই দৃষ্টিপাত করছে। ওদের একসঙ্গে দেখে হৃদয়ের গহিনে তীব্র ব্যথা জাগ্রত হচ্ছে। এ ব্যথার কী নাম দেওয়া যায়? জেলাসি? হয়তো তাই। কিন্তু মৃধার মন তা মানতে নারাজ। মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে সে নিজেকে বোঝাল আয়ানের সঙ্গে তার বিয়েটা শুধুই একটা কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ। এক বছর পর তাদের দু’জনের রাস্তা ভিন্ন। তাই আয়ান কী করল, কার সঙ্গে মিশলো এটা তদারকি করার অধিকার মৃধার নেই।

মৃধার নিশ্চুপ চাহনি দৃষ্টি এড়াল না আয়ানের। কিন্তু সেদিকে পরোয়া না করে ন্যায়টাকে নিয়ে সোজা ভেতরে চলে গেল সে। এদিকে ন্যায়রা যাওয়ার আগে পেছন ফিরে মৃধার দিকে তাকিয়ে এক বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে চলে গেল। ন্যায়রার এই হাসিতে মৃধার মনে অজানা আতঙ্কের বীজ বপন শুরু হলো। না চাইতেও কিছু অনিশ্চিত চিন্তা তাকে গ্রাস করতে লাগল ক্রমাগত।

————————-

–“তোমার জন্য এসব কিছু হয়েছে। তুমি নিশ্চয়ই কাজটা ঠিক মতো করতে পারো নি নয়তো আয়ান কীভাবে মৃধাকে বিয়ে করে?”

–” আরে আরে রিলাক্স। এতো ব্যস্ত হচ্ছ কেন? সবে তো কলির সন্ধ্যে। বিয়ে করেছে তো কী হয়েছে আগে সংসার তো করুক?”

–” মানে কী বলতে চাইছ তুমি?”

–” মানে এটাই যে আমাদের প্ল্যান পুরোপুরি ফ্লপ হয়নি। দেখছ না আয়ান কেমন মৃধাকে ইগনোর করছে। হয়তো পরিস্থিতির চাপে বিয়েটা করতে হয়েছে। আয়ান মৃধার এই দূরত্বই বলে দিচ্ছে ওদের রাস্তা বেশি দূর এগোবার নয়।”

–” এমনটাই যেন হয়।”

–” অবশ্যই হবে। হতেই হবে। আর যদি নাও হয় তাহলে এবার এমন ব্যবস্থ করব না যাতে সাপও মরে লাঠিও না ভাঙে।”

তারপর দুজনেই উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করল। এদিকে এদের এসব কথা সবটাই শুনে ফেলল মৃধা। সে মনে মনে ভাবল, ‘তাহলে এই সেই কারণ জন্য আয়ান আমাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করছিল। কিন্তু ওদের প্ল্যানটা কী ছিল? আয়ানকে ওরা কী এমন বলেছে যার জন্য এতো কিছু করল আয়ান? উত্তর জানতে মৃধা দরজা ঠেলে রুমের ভেতরে প্রবেশ করল। মৃধাকে দেখা মাত্র নয়ন আর ন্যায়রা দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল।আবার মুহূর্তেই নিজেদের যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে নিল। মৃধা ওদের দু’জনের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ওদের দু’জনের এসব নিয়ে কোনো ভাবান্তর নেই।আর এই ওরা দু’জন হলো ন্যায়রা আর নয়ন। অফিসের একটা ফাঁকা রুমে বসে তারা তাদের কুকীর্তি গুলো আলোচনা করছিল আর ঠিক সেসময়ই মৃধা ওই রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের কথপোকথন শুনে নেয়।

মৃধার দৃষ্টি উপেক্ষা করে ন্যায়রা তাচ্ছিল্যের সুরে নয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— “এই দেখো চলে এসেছে তোমার জানেমান। কী টান দেখেছ তো প্রতি। তবুও তুমি শুধু বলো ও নাকি তোমাকে লাইক করে না। দিস ইজ নট ফেয়ার নয়ন।”

নয়ন ন্যায়রার কথায় তাল মিলিয়ে ঠাট্টার ছলে মৃধাকে বলল,

–” ওহ রিয়েলি, এতটা পছন্দ করো তুমি আমাকে মৃধা? ওই যে বাংলা সিনেমায় একটা গান আছে না, তুমি যেখানে আমি সেখানে সে কী জানো না, একই বাঁধনে বাঁধা দু’জনে ছেড়ে……………. ”

নয়নকে গানটা শেষ করতে না দিয়ে মৃধা গিয়ে খুব শক্ত করে তার কলার চেপে ধরে বলল,

–” শয়তানের দল, ইচ্ছে করে এসব করেছিস তোরা? আয়ানের চোখে আমাকে অপরাধী তৈরি করেছিস? কী এমন দেখিয়ে আয়ানকে ভুল বুঝিয়েছিস বল আমায়? দ্রুত বল? ”

নয়ন তার কলারের যে অংশটা মৃধা চেপে ধরে আছে সেদিকে একবার তাকালো তারপর অন্যদিকে তাকিয়ে কিয়ৎক্ষণ মৃদু হেসে বলতে শুরু করল,

–” হ্যাঁ বেইব, আমরাই এই কাজটা করেছি তোমাকে আর আয়ানকে আলাদা করার জন্য। কারণ ন্যায়রার চাই আয়ানকে আর আমার চাই তোমাকে। তাই দুজনে মিলে তোমাকে আয়ানের কাছে খারাপ প্রমাণ করেছি। এবার আয়ান আর কখনোই তোমাকে একসেপ্ট করবে না। এই সুযোগে ন্যায়রা আয়ানকে নিজের করে নেবে। আর তুমি যখন স্বামীর অবহেলা সইতে না পেরে বেদনার স্রোতে ভাসবে ঠিক তখনই আমি সেই স্রোত থেকে তোমায় টেনে তুলে আমার ভালবাসার সাগরে ভাসিয়ে দিবো।”

নয়নের কথা শুনে মৃধার রাগ যেন সপ্তম আসমানে চড়ে বসল। সে নয়নের কলার আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলল,

–” ইতর,বদমাইশ, না আয়ান আমার থেকে দুরে যাবে আর না তুই কোনোদিন আমাকে পাবি। আমি আয়ানের কাছে সবকিছু প্রমাণ করে দিব।তোরা শুধু দেখে নিস তারপর তোদের কী হয়।”

নয়ন এবারেও হেসে ফেলল মৃধার বক্তব্যে। সে তড়িঘড়ি করে মৃধার হাত থেকে শার্টের কলার ছাড়ানোর এক্টিং করে বলল,

–” এই এই বেইব, কী করছ তুমি? শার্টটা ছিড়ে যাবে তো। আমার তো তোমার জামাইয়ের মতো কোটি কোটি টাকা নেই যে ঘন্টায় ঘন্টায় নিউ ড্রেস পরব। তুমি বরং এই রাগ গুলো বাড়ি গিয়ে নিজের জামাই এর ওপর দেখাও। শুধু শার্ট কেন দরকার পরলে প্যান্ট, গেঞ্জি, টাওয়াল সবকিছু ছিড়ে ফেল তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। কিন্তু আমার শার্টটা ছেড়ে দাও। আমি গরীব মানুষ ভাই?”

এতক্ষণ ন্যায়রা ওদের কথা শুনছিল আর দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসছিল। সে এবার ওদের একদম কাছাকাছি এসে মৃধার হাত থেকে নয়নের শার্টের কলারটা ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,

–“দেখো কাপড় ছিঁড়তে গিয়ে আয়ানের গায়ে যেন টাচ করে বসো না। ওটা কিন্তু আমার হক।তুমি কখনোই আয়ানকে আটকে রাখতে পারবে না। আমি আমার আয়ানকে ঠিকই নিজের কাছে এনে তবে ছাড়ব। চলে এসো নয়ন। ”

তারপর নয়ন আর ন্যায়রা মৃধাকে পাশ কাটিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল। এদিকে ওরা চলে যেতেই মৃধা ধপ করে নিচে বসে পরল। এখন সে কী করবে? কীভাবে এদের বিরুদ্ধে সকল প্রমাণ জোগাড় করবে? আয়ান তো প্রমাণ ছাড়া কিচ্ছু বিশ্বাস করবে না? তাহলে উপায়?

———————–

ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুলে চিরুনি চালাচ্ছে আহিবা। বিকেল পাঁচটা ওভার হয়ে গেছে এখনই আদ্র চলে আসবে। নিজেকে একটু গুছিয়ে নেওয়া প্রয়োজন এখন তার। চুলে চিরুনি কেটে বিনুনি তৈরি করছে সে। অর্ধেক বিনুনি তৈরি হতেই আদ্র চলে এলো। আহিবা অপ্রস্তুত হয়ে উঠে দাড়াল। হাত থেকে চিরুনি পড়ে গেল ফ্লোরে। আদ্র ভ্রু কুঁচকে আহিবাকে পর্যবেক্ষণ করছে । মেয়েকে একটু নার্ভাস লাগছে তার কাছে। আদ্র কৌতুহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,

–” হোয়াট হ্যাপেন্ড? এনি প্রবলেম?”

আহিবা নাকের ওপর জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম এক হাতে মুছে নিল। অন্য হাতে তার অর্ধেক বিনুনি ঝুলছে। ড্রেসিং টেবিলের আয়নাতে সে আদ্রকে দেখছে। আদ্রের প্রশ্নের উত্তর স্বরুপ সে ছোট্ট জবাব দিল,

–” কই কিছু না তো।”

আদ্রের সন্দেহ তবু গেল না। সে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল,

–” তাহলে এভাবে ঘামছ কেন?”

আহিবার মৃদু স্বরে জবাব,
–” ওই গরম লাগছে হয়তো তাই।”

আদ্র আর কথা বাড়াল না। ছোট্ট করে শুধু “ওহ” বলে চলে গেল ওয়াশরুমে। আহিবা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। হাতে থাকা অর্ধেক বিনুনি দ্রুত টেনে টুনে সম্পন্ন করল। তারপর ছুটে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। এই লোকটা কাছাকাছি থাকলে তার হার্টবিট ফার্স্ট হয়ে যায়।এর কারণ তার অজানা?

চলবে,

#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi
–“পর্ব-২১”

“এই বল না বাসর রাত কেমন কাটালি?আমার ভাইটা নিশ্চয়ই তোকে অনেক অনেক আদর দিয়েছে?”

–“এসব কথা ছাড় তো মৃধা।”

–” কেন কেন? কেন ছাড়ব? একে তো তুই আমার বেস্টু তারওপর এখন আবার আমার ভাবি। তো সেই সূত্রে আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে তোর পারসোনাল ম্যাটার সম্পর্কে জানার। ”

–” আচ্ছা কিছু যদি নাই হয় তাহলে তুই কী জানতে চাইছিস বল?”

–‘ কিছু হয়নি মানে কী?’

–” কিছু হয়নি মানে কিছুই হয়নি। তোর ভাইটা একটা আস্ত নিরামিষ। বাসর রাতে সে আমার থেকে সময় চেয়ে নিয়েছে নিজেকে আমার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য।”

–‘ কী বলছিস এসব? ‘

–‘ হুম ঠিকই বলছি।’

তারপর আহিবা মৃধাকে তাদের বাসর রাতের সব কথা খুলে বলল। মৃধা কী বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না। তাদের দু বান্ধবীর জীবনটা এমন কেন হলো ? বাসর রাত নিয়ে প্রতিটি নারীর মনেই আলাদা আলাদা স্বপ্ন বোনা থাকে কিন্তু সেই স্বপ্নের জলাঞ্জলি দিতে হয় পুরুষদের ইচ্ছের কাছে। আদ্র হয়তো আহিবাকে সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে মেনে নিবে কিন্তু আহিবার মনের সুক্ষ্ম স্বপ্নগুলো তার কী হবে? এটা ভাবার সময় তার নেই।

—————————-

“কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”

মৃধার প্রশ্নে থমকে দাড়াল আয়ান। ঘাড় কাত করে পেছন ফিরে একপলক পর্যবেক্ষণ করে নিল মৃধাকে। তারপর আবার ফিরে গেল নিজ মূর্তিতে। মৃধার প্রশ্নে আয়ানের ত্যাড়ছা উত্তর,

–‘ কৈফিয়ত দিতে হবে তোমাকে?বউ গিরি ফলাচ্ছ?’

মৃধা টাসকি খেয়ে গেল। অপ্রস্তুত কন্ঠে আমতা আমতা করে বলল,

–‘ নাহ তেমন কিছু নয় আসলে মা বলছিল আপনার কথা এজন্য বললাম।’

আয়ান ছোট্ট করে উত্তর দিল,
–‘ ওহ ‘ আচ্ছা তাহলে আসি ন্যায়রা ওয়েট করছে আমার জন্য। ‘

আয়ান চলে গেল দ্রুত। পেছন ফিরে মৃধার করুণ মুখশ্রী দেখার সময় তার আর হলো না। আয়ান চলে যেতেই মৃধা বিষন্ন মনে দৌড়ে গেল বেলকনিতে যেখান থেকে আয়ানের বাড়ি থেকে বিদায় মুহুর্ত দৃশ্যমান।

আয়ান বাড়ি থেকে বেড়তেই ন্যায়রা এসে তাকে জাপটে ধরে কী কী যেন বলতে লাগল। এই দৃশ্য চক্ষুগোচর হলো না মৃধার। বুকের মধ্যে তীব্র ব্যথার সঞ্চার হচ্ছে তার। তবুও দেখা ছাড়া আপাতত তার কাছে আর কোনো অপশন নেই।
এদিকে আয়ানের বিরক্ত লাগছে প্রচুর। অন্যসময় হলে ন্যায়রা এতক্ষণে কড়া করে কিছু কথা শুনিয়ে দিত সে কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্যরকম। কারণ চুপিসারে সেও প্রেয়সীর মায়াভরা মুখের স্নিগ্ধতা দেখতে মিস করে নি। সামনে যতই মৃধাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য ন্যায়রাকে স্বায় দিক কিন্তু অন্তরের অন্তঃস্তলে তো শুধু মৃধারই বসবাস। দেখা যাক এই জেলাসির খেলায় কে জেতে আর কে হারে?

————————–

‘মাথা কী খুব ব্যথা করছে? আমি কী একটু টিপে দিব তাহলে?’

আহিবার উদ্বীগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন। আদ্র একপলক তার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নিল।তারপর কিয়ৎক্ষণ পরে মৃদু স্বরে বলল,

–‘ নাহ থাক। কাজের প্রেসার পড়লে আমার এমনটা প্রায়শই হয়ে থাকে। এটা নিয়ে টেনশনের কিছু নেই। তুমি বরং শুয়ে পড়।’

আদ্রের কথায় অস্থিরতা যেন দিগুণ বেড়ে গেল আহিবার। লোকটা এমন কেন? কী হতো যদি মাথা একটু সে টিপে দিত? নিজের শান্তির জন্য না হোক অন্তত তার শান্তির জন্য হলেও তো পারত সম্মতি দিতে? লোকটা কী তাকে একটুও বুঝে না? তার বেদনায় যে দিগুণ রক্তক্ষরণ হয় আহিবার মনে। কবে বুঝবে এই লোক তাকে? আদৌও কী বুঝবে কখনো?

মারাত্মক যন্ত্রণা সহ্য করে আদ্র ঘুমোনোর চেষ্টা করছে। ঘুমটা ঠিকভাবে হলে মাথা ব্যথা অনেকটা কমে যাবে। এদিকে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করে ছটফট করছে আহিবা। মনে হচ্ছে পেইন আদ্রের নয় তার হচ্ছে। শত চেষ্টা করেও মনের কোণে শান্তি খুজে পাচ্ছে না সে। তীব্র ব্যথার মাঝেও আদ্রের মনের কোণে দেখা মিলল এক চিলতে সুখের। যাক কেউ তো অন্তত তার কষ্টে কষ্টায়িত হচ্ছে। তার যন্ত্রণায় কারও তো ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। কেউ তো বারবার খেয়াল রাখছে তার। কেউ তো করছে টেক কেয়ার।এত এত পাওয়ার মধ্যেও মনের কোণে আরও একটি প্রশ্ন এসে বারবার হানা দিচ্ছে তার। এই অনুভূতি সারাজীবন থাকবে তো এমন? নাকি ভেঙে চুরে চুরমার হয়ে যাবে? আবার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না তো সেই ঘটনার? এমন হলে আদ্র একেবারে চিরতরে নিঃশেষ হয়ে যাবে।

—————————-

ড্রেসিং টেবিলের ফুলদানিটা ঠিকঠাক করে গুছিয়ে করছিল মৃধা। আকাশে প্রচন্ড মেঘ করেছে। মেঘগুলোর রঙ বেশ রক্তিম। মুরব্বিরা বলেন এমন রক্ত রঙা মেঘ জমলে নাকি ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আয়ানের জন্য ভেতরে ভেতরে টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছে সে। একে তো ন্যায়রার সঙ্গে বেড়িয়েছে তারওপর আবার এই আশঙ্কা জনক রাতে। টেনশন যেন ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে তার। বারংবার শুধু ঘড়ির কাঁটায় চোখ বুলচ্ছে সে।

রাত এগারোটা নাগাদ ঘরে প্রবেশ করল আয়ান। মৃধার চিন্তার মাত্রা আয়ান আসতেই কিছুটা কমে এলো। কিন্তু আয়ানের ভাব-লক্ষণ তার কাছে সুবিধার ঠেকছে না। কেমন জানি অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে মৃধার পানে। মৃধার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। আয়ানের চোখের দৃষ্টি শান্ত। ওই শান্ত চোখের মাঝেও লুকিয়ে আছে কিছু চাওয়া। মৃধা খুব সহজেই আয়ানের দৃষ্টির মানে বের করে ফেলতে সক্ষম হলো। আয়ান হঠাৎ ধুম করে দরজাটা লাগিয়ে দিল। দরজার শব্দে মৃধার আত্মা কেঁপে উঠার উপক্রম। দরজা আটকে আয়ান ঢুলুঢুলু পায়ে একটু একটু করে মৃধার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আয়ানের হাঁটার গতিবিধি এবং চোখের রক্তবর্ণ ধারণ দেখে মৃধা খুব সহজেই বুঝে গেল আয়ান ড্রাংক। অজানা ভয়ে মৃধার বুক দুরুদুরু করছে। মৃধার মন বলছে তার এখন এখান থেকে পালানো উচিত কিন্তু তার পা অবশ হয়ে আছে। বিন্দু মাত্র নড়বার শক্তি তার নেই। আয়ান যখন মৃধার খুব কাছাকাছি প্রায় ঠিক তখনই মৃধা প্রবল চেষ্টার পর এক ছুটে পালাতে চাইল সেখান থেকে কিন্তু দেখা যাচ্ছে তার আগেই আয়ান তাকে আটক করে নিয়েছে নিজের বাহুডোরে। মৃধা গলা কাটা মুরগীর ন্যায় ছটফট করতে রয়েছে আয়ানের থেকে ছাড়া পাবার জন্য। কিন্তু আয়ান,,, সে তো নিজের কাজে অটুট। মৃধার ছটফটানি বন্ধ হচ্ছে না দেখে আয়ানের বেজায় রাগ হচ্ছে। সে এবার স্বজোরে ছুড়ে মে’রে মৃধাকে বিছানার উপর ফেলে দিল। তারপর নিজেও চড়ে বসল মৃধার ওপর। আয়ান নিজের দু’হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে নিয়ে বিছানার সঙ্গে চেপে ধরল মৃধার হাতজোড়া। মৃধা যেন এবার বাকহারা, সর্বশক্তি হারা। মৃধার ছটফটানি বন্ধ হয়ে গেছে মুহূর্তেই। আয়ান সেটা দেখে মৃদু হেসে মৃধার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

–‘ গুড গার্ল। ‘

ততক্ষণাৎ আয়ানের মুখ থেকে মাদকের বিশ্রী গন্ধ ভেসে ভেসে মৃধার নাকে গিয়ে ঠেকল।ওই গন্ধে মৃধার বমি হওয়ার উপক্রম। ব্যাস, মৃধার ধ্যান ভাঙতে এটুকুই যথেষ্ট ছিল।

——————————-

কোনো মিষ্টি মধুর উষ্ণ আলিঙ্গনে ঘুমিয়ে ছিল আহিবা। আজানের ধ্বনি কর্ণপাত হতেই চোখ মেলে তাকালো সে। চোখ খুলতেই ভীষণ ভাবে অবাক হলো সে সাথে লজ্জা। আদ্রের বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়ে ছিল সে এতক্ষণ? ভাবা যায় এসব? লজ্জায় লাল নীল বেগুনি হতে লাগল তার মুখশ্রী। সে মনে মনে ভাবল, কতটা বেহায়া হয়ে যাচ্ছে সে দিন কে দিন। বেহায়ার মতো নিশ্চয়ই নিজে থেকে লোকটা কাছে গিয়েছিল? কিন্তু আহিবা হয়তো একটু খেয়াল করলে বুঝতে পারত বেহায়া সে নয় আদ্র হয়েছে। কারণ আদ্রের কাছে নয় বরং আদ্র তার জায়গায় এসে তাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিল। নিজেকে হাজার টা গালি দিতে দিতে বিছানা থেকে নেমে সে চলে গেল ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে।

চলবে,