#গল্প_কাব্য_কথা
#পর্ব_৭
#লেখনীতে_ওয়াসেনাথ_আসফি
২ দিন আগে,,,,,,,,,,,,,,!
ডায়েরীর একটা পাতায় আমার ছবি আঁকা আর নিচে লেখা আমার প্রিয়সী। লেখাটা পড়ে মনের ভিতর প্রজাপতি উড়ছে আর কেমন যেনো একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে আমার। অনেক কৌতুহল নিয়ে পরের পাতা পড়তে লাগলাম,,,,,,,,,,,!
তোমাকে দেখেছিলাম এক বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায়। তোমার পরনে ছিলো কলাপাতা রঙের শাড়ি, হাত ভর্তি সাদা আর কলাপাতা রঙের চুরি আর ছিলো একমুঠো কদম ফুল। তোমাকে দেখতে দেখতে আমি তোমার মাঝে হারিয়ে গেছিলাম। সেইদিন আর তোমার সাথে আমি কথা বলতে পারিনি কিন্তু তোমাকে ভুলে থাকতে পারিনি। তার পর কেটে গেল ১৫ দিন এই ১৫ দিনে আমি বহুবার সেই জায়গায় গিয়েছিলাম কিন্তু তোমাকে পায়নি অনেক সময় অপেক্ষা করেছি তুমি আসবে বলে কিন্তু তুমি আসনি। হঠাৎ একদিন দেখি তুমি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছো তোমার কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম কিন্তু আমার ভাগ্য তোমার কাছে আমাকে যেতে দেয়নি। তার পর কেটে গেল একটা মাস এই একমাস আমি শুধু তোমাকে নিয়ে ভাবতাম আর তোমার ছবি আঁকতাম। আমার ভাগ্যে হয়তো তুমিই ছিলে তাইতো তুমি নিজে নিজে আমার কাছে ধরা দিয়েছিলে আমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলে তোমাকে ওইদিন দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না মনে হচ্ছিলো আমি কল্পনার জগতে আছি কিন্তু না তুমি সেদিন বাস্তবে আমার সাথে ছিলে। কিন্তু সেদিনও তুমি আমার কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলে । আমি সব থেকে বেশি অবাক হই পরের দিন সকালে যখন জানতে পারি তুমি আমার বোনের বেস্ট ফ্রেন্ড আর এই ভার্সিটিতে পড়ো তাইতো ভার্সিটি থেকে পাওয়া অফারটা তাড়াতাড়ি গ্রহণ করে নেই। জানো ওইদিন তোমাকে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিল তাই তোমাকে ওই অন্ধকার রুমের ভেতর নিয়ে গেছিলাম কিন্তু জড়িয়ে ধরতে পারিনি তাই তোমার কপালে একটা ছোটো চুমু দিয়ে বেরিয়ে পরি আর আড়াল থেকে তোমাকে দেখি। আমি তোমার সাথে সব সময় কথা বলতে চাই কাছে পেতে চাই তোমার হাত ধরে হাটতে চাই তোমায় জড়িয়ে ধরতে চাই তাই তো তোমাকে কারণে অকারণে আমার কাছে আসতে বাধ্য করি। তোমাকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি অনেক বেশি কিন্তু তোমাকে আমি আমার ভালোবাসার কথা বলতে পারিনা আমার মনে হয় তুমি যদি না করো আর কখনো আমার সাথে কথা না বললো তাহলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো আমি অনেক কিছু হারিয়েছি কিন্তু তোমাকে হারাতে পারবো না। হয়তো তুমি একদিন এই ডায়েরি টা পড়বে আর তখন আমি তোমার পাশে থাকবো না ভয় পেওনা আমি হারিয়ে যাব না । তখন তুমি আমায় অনুভব করতে পারবে তোমার মনে হবে আমি তোমার পাশে বসে আমার ভালোবাসার কথা গুলো তোমাকে বলছি,,,,,,,,,,,,,,, !
ডায়রিটা পড়তে পড়তে মনের অজান্তেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরলো। কাব্য ভাইয়ার প্রতি আমার অজানা অনুভূতি গুলো এখন একটা নাম পেয়েছে আর সেই নামটা হলো ভালোবাসা। একটা কথা আমায় ভীষণ ভাবাচ্ছে তাহলো সে কি এমন জিনিস হারিয়েছে যে আমাকে হারাতে ভয় পায় এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চলে গেলাম ইতির কাছে,,,,,,,,,,,
লম্বু একটা কথা জিজ্ঞেস করি সব সত্যি বলবি ঠিক আছে
হুম বলবো বল
কাব্য ভাইয়া তার জীবনে কি কি হারাইছে?
অনেক কিছু। কিন্তু তুই এই কথা জানতে চাচ্ছিস কেনো?
বলনা কি কি হারায়ছে?
মা বাবা।
মানে?
মানে,,, কাব্য ভাইয়া যখন ৫ বছরের ছিলো তখন বড়ো বাবা আর খালামনি একটা দুর্ঘটনায় মারা যান। আর তখন থেকে ভাইয়া আমাদের সাথে থাকে।
লম্বুর কথা শুনে বুকটা ফেটে যাচ্ছে দুচোখ ভরে কান্না আসছে। মন চাইছে কাব্য ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরে বলি আমিও তাকে ভালবাসি এইগুলো ভাবতে ভাবতে দেখি কাব্য ভাইয়া বাসায় চলে আসলো আর আসেই বলতে লাগলো,,, মিমি সাউন্ড বক্স এখনও বাসায় যাওনি কেনো?
আপনার অপেক্ষায় ছিলাম। আমার এমন কথা শুনে আমার দিকে তাকালো আর বললো,,,,,, আমার জন্য মানে বুজলাম না?
আমি বসা থেকে উঠে তার সামনে গিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,, সন্ধ্যা হয়ে গেছে আমি একা একা বাসায় যেতে ভয় পাই যদি কোনও বিপদ হয় তাহলে তো আমার ভালোবাসার মানুষটা আমাকে হারিয়ে ফেলবে তাইনা সেই জন্যে আপনার অপেক্ষায় ছিলাম আপনি আমাকে সহি সালামত বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবেন। আমার মুখে ভালোবাসার মানুষ কথাটা শুনে রাগে কাব্য ভাইয়ার চোখ দিয়ে যেনো আগুন বের হচ্ছে আর সাথে দাতে দাত চেপে দাড়িয়ে আছে। নিজেকে একটু শান্ত করে আমাকে বলে উঠলো,,, তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে?
হুম আছে।
নাম কি?
আপনাকে কেনো বলবো?
ওহহ আচ্ছা চলো তাহলে ( রাগী গলায়)
হুম চলেন।
বাড়ির বাইরে ভাইয়া দাড়িয়ে আছে আমি ভাইয়াকে দেখতে পেয়ে কাব্য ভাইয়াকে বললাম ,,,, আসেন আপনাকে আপনার বোন জামাইয়ের সাথে পরিচয় করায় দেই।
মানে?
মানে আমার ভাইয়ার সাথে।
ওহহ আচ্ছা।
হুম আসেন,,,
ভাইয়া এটা হলো ইতির বড়ো ভাই কাব্য ভাইয়া আর এটা হলো আপনার ছোটো বোন জামাই ইনান। আমার কথা শুনে দুজনেই আমার দিকে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। আর কাব্য ভাইয়া বলে উঠলো মিনি সাউন্ড বক্স কি বলছো চুপ করো এইভাবে কেউ পরিচয় করায়।
ইনান: মিনি সাউন্ড বক্স মানে?
পরিস্থিতি সামাল দিতে কাব্য ভাইয়া বলল,,,,,,, পিচ্ছি তুমি এখন ভিতরে যাও আমরা বড়রা কথা বলছি। ওনার কথা শুনে রাগে গজগজ করতে করতে ভিতরে চলে গেলাম। তারপর তাদের মধ্যে কি কথা হলো বলতে পারি না।
আজকে ইতির জন্মদিন। ইতি আর আমি দুজনেই আজকে শাড়ী পরেছি। ইতি পড়েছে নীল শাড়ি আর আমি পরেছি গোলাপী আর সাদার মিশ্রণে হাতের কাজ করা একটা শাড়ি আজকে দুজনকেই খুব সুন্দর লাগছে। রেডি হয়ে বাইরে বের হয়ে দেখি আমার ভাইয়া ইতির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর আমার দিকে তাকিয়ে আছে কাব্য ভাইয়া। ইতি কাব্য ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললো,,,,,,, ভাইয়া আমার জন্য তুমি অনেক করছো তার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে তোমাকে ছোটো করবোনা কিন্তু আজকে আমার আর একটা আবদার রাখবে?
কাব্য ভাইয়া ইতির মাথায় হাত দিয়ে বললো,,,,,,, হুম রাখবো।
ইতি দৌড়ে গিয়ে একটা গিটার নিয়ে আসলো আর কাব্য ভাইয়াকে বললো,,,,,, একটা গান শোনাবে?
কাব্য ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললো,,,,,,, হুম গাইবো । কথাটা বলেই গিটারটা হাতে তুলে নিল আর গাইতে শুরু করলো,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
তুমি না ডাকলে আসবো না
কাছে না এসে ভালোবাসবো না
দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়
নাকি চলে যাওয়ার
বাহানা বানায়
দূরের আকাশ নীল থেকে
লাল গল্পটা পুরনো
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও
আমি বাসি
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও
আমি বাসি
এটা কি ছেলেখেলা আমার
এই স্বপ্ন নিয়ে চাইলে
ভেঙে দেবে গড়ে
দেবে ইচ্ছে হলে
আমি গোপনে ভালোবেসেছি
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছে
তোমায় নিয়ে যাবো বলে
একবার এসে দেখো
এসে বুকে মাথা রেখো
বলে দেবো চুলে রেখে হাত
দূরের আকাশ নীল থেকে
লাল গল্পটা পুরনো
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও
আমি বাসি
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও
আমি বাসি
ভোর না হতে হতে
তোমাকেই দেখার আশায়
শেষ ছবিটা দেখি বারে
বারে আহা দেখি
আমি গোপনে ভালোবেসেছি
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছে
তোমায় নিয়ে যাবো বলে
একবার এসে দেখো
এসে বুকে মাথা রেখো
বলে দেবো চুলে রেখে হাত
দূরের আকাশ নীল থেকে
লাল গল্পটা পুরনো
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও
আমি বাসি
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও
আমি বাসি।
গানটা শুনে মনে হচ্ছিলো সে আমাকে কিছু বলছে। আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
কিছুক্ষন পর আমার মা আর আব্বা ইতিদের বসায় আসলো তাদের দেখে মনে হচ্ছে তারা জন্মদিনে না পাত্রী দেখতে আসছে।
কিছু বুঝতে না পেরে ভাইয়া কে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম……………
কি ব্যাপার ভাইয়া, মা আব্বা এমন করে কেনো আসলো?
ইনান: বিয়ের আগে প্রেম করা আমি পছন্দ করি না তাই একবারে বিয়ে করে পারে বউয়ের সাথে প্রেম করমু বুঝলি।
হুম বুঝছি, আমার ভাই যে সুপার ফাস্ট এটা আজকে জানতে পারলাম।
চিন্তা করিস না কালকে আরো কিছু জানতে পারবি।
মানে?
এতো মানে বুঝিস কেনো তুই? যা গিয়ে দেখ আমার বউ রেডি হইসে কিনা?
আরে বাবা তুমিতো দেখি বিয়ের আগেই আমাকে পর করে দিলে।
এতো চাপ নিস না তোরে কালকেই বাড়ি থেকে বিদায় করে দিবো। এখন যা আর ইতিকে নিয়ে নিচে আয়।
ভাইয়ার কথায় গাল ফুলিয়ে ডাকতে গেলাম ইতিকে কিন্তু ইতির রুমে যাওয়ার আগে কেউ আমার হাতে টান দিয়ে নিয়ে গেলো কাব্য ভাইয়ার রুমে। আচমকা এমন হওয়াতে ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলাম আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখি কাব্য ভাইয়া মিটি মিটি হাসছে আর আমর কানের কাছে ফিসফিস করে বলতে লাগল,,,,,,,,,
অনুমতি ছাড়া কারও ব্যাক্তিগত জিনিস পত্রে হাত দেওয়া নিষেধ জানো না।
এইরে খাইছি ধরা,,,,,, আল্লাগো আমারে এইবার বাঁচাও আমি আর জীবনে কোনো দিন কারো পার্সোনাল জিনিসে হাত দিমু না।
কি হলো কথার মুখে কথা নেই কেনো?
এক্সট্রা পার্ট…………….
আসলে আমি,,,,,,
আচ্ছা আসলে নকলে কালকে শুনবো এখন তুমি তাড়াতাড়ি করে ইতিকে বউ সাজাও একটু পরেই কাজী চলে আসবে।
বউ মানে? আজকে কি ভাইয়ার বিয়ে?
হুম এখন তুমি যাও।
একপ্রকার জোর করেই আমাকে ঘর থেকে বের করে দিল। আমিও ইতিকে সাজিয়ে নিচে নিয়ে আসলাম তারপর বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হলো। আমারা ইতিকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসলাম। বাসায় আসে ভাবছিলাম ভাইয়ার সাথে কিছু কথা বলবো তারপর ভাবলাম থাক কালকে সকালে বলবো তার পর আমি আর দেরী না করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
খাটের একোনে বসে আছে ইতি, ইনান ঘরে ঢুকামাত্র ইতি সালাম করলো ইনানকে।
ইতি তুমি আমার পায়ে ধরে সালাম কেনো করলে?
এটা নাকি নিয়ম।
ঠিক আছে আর কোনোদিন এমন করবা না বুঝতে পারছো?
হুমম।
আচ্ছা এখন হাতটা দাও।
কেনো?
এত কেনো কেনো করো কী জন্য। হাত দিতে বলছি দাও। ইতির হাতে একটা আংটি পরিয়ে দিল আর বলল এইভাবেই আমাকে ভালবাসবে? কথাটা শুনে ইতি ইনানকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো হুমম বাসবো কিন্তু আমার একটা প্রশ্নও আছে?
কি প্রশ্ন?
এতো সব কিছু কীভাবে হইলো? মানে একদিনের মধ্যে বিয়ে?
আচ্ছা শোনো গতকাল তোমার ভাইয়া তোমার বিষয়ে সব আমাকে বলে আর আমি বিয়ের আগে প্রেম ভালোবাসা পছন্দ করি না তাই তোমাকে বিয়ে করে আনছি। আর মা বাবাও আগে থেকেই তোমাকে আমার জন্যে পছন্দ করে রাখছিল তাই আর দেরী না করে বিয়ে করে নিছি বুঝছো আমার পিচ্ছি বউ। এখন আর কিছু জিজ্ঞেস করো না অনেক ক্লান্ত আমি ফ্রেশ হয়ে এসো নামাজ পরে ঘুমাবো।
সকাল 10টা বাজে ঘুম ভাঙ্গলো আমার। বাইরে বেরিয়ে শুনি আজকে নাকি আমার বিয়ে। আমার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না শুধু বুক ফেটে কান্না আসছে। কোনো উপায় না পেয়ে কাব্য ভাইয়াকে ফোন দিলাম কিন্তু ফোনটা বন্ধ বলছে, ইতি কে জিজ্ঞেস করলাম কার সাথে আমার বিয়ে ইতি বললো সেও জানেনা ভাইয়া শুধু ইতিকে বলছে আমাকে বউ সাজাতে। দুপুর একটা বর আসছে ইতিকে পাঠালাম বর দেখতে কিন্তু আমি এখানেও হতাশ বর নাকি ফুলের পাগড়ী দিয়ে মুখ ঢেকে রাখছে। আমার মাথা ঘুরছে পরিবারের সম্মান রাখতে কবুল বলে দেই আর কিছু মনে নেই। চোঁখ খুলে দেখি আমি বাসর ঘরে শুয়ে আছি।
#চলবে…………..।