#খেলাঘর
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ১৯
দুদিন হয়ে গেল, ফারিদ তাকদিয়ার মারা যায়নি। সেদিন পুলিশ যদি ঠিক সময় মতো না পৌঁছাতে পারতো তাহলে হয়তো মারায় যেত। আজকে ফারিদ তাকদিয়ার কে হসপিটাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হলো। বাসায় এসেই লাজদের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিলো। কিছুক্ষণ পর কতগুলো প্রেসের লোক আসলো।সাথে একজন পুলিশ অফিসারও ছিলো।পুলিশ অফিসার একে একে সবকিছু জিজ্ঞেস করতে লাগলো ফারিদ তাকদিয়ার কে…….
-“স্যার,আপনি এখন কেমন আছেন?”
-“আলহামদুলিল্লাহ এখন একটু সুস্থ আছি।”
-“আচ্ছা, দুদিন আগে আপনার সাথে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা নিয়ে আমাদের কিছু জানার ছিলোআপনার থেকে।”
-“হুম, কি জানতে চান বলুন!”
-“আপনি ঐখানে কি করছিলেন? তাও আবার ভাইরাল হওয়া সেই মহিলাটির সাথে? আর আপনাকে কে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলে? কে ঐ মহিলাটিকে হত্যা করেছে।”
-“আসলে প্লান টা ঐ মহিলাকে মারার জন্য করা হয়নি করা হয়েছিল আমাকে মারার জন্য। ঐদিন সকালে আমার কাছে কল আসে, মহিলাটিকে কেউ দরে নিয়ে গেছে। আর আমি যদি ঐখানে না যায় তারা মহিলাটিকে মেরে দিবে। আমি আর কিছু না ভেবে মহিলাটির কথা ভেবে ছুটে গিয়েছিলাম।কিন্তু কি করে জানতাম গেলে এমন হবে। আমাকে মারার জন্য গুলি করলে ভুলবশত মহিলাটি সামনে চলে আসে। আর গুলি দুটো ওর গায়ে লাগে।”
-“তাহলে আপনার গায়ে ছুড়ি কে বসালো?”
-“আমি যখন মহিলাটিকে হসপিটালে নেবার জন্য চেষ্টা করছিলাম তখন ওরা আমাকে আগাত করে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে ওরা মনে করে আমি মারা গেছি। তাই তারা দ্রুত ঐখান থেকে বের হয়ে পরে।”
-“তাহলে আপনার ছেলে ফারাজ তাকদিয়ার কি করে জানলো আপনি ঐখানে বিপদে আছেন?”
পুলিশ অফিসারের কথা শুনে ফারাজ একটু ভয় পেয়ে যায়। শয়তানি হাসি দিয়ে ফারিদ তাকদিয়ার বলে,”আসলে আমিই ওকে স্পেশাল ডায়াল কলে রেখেছিলাম। যার ফলে জ্ঞান হারানোর আগে আমি সহজেই ওকে কল করতে পারি।”
-“কিন্তু একটা জিনিস কিন্তু এখনো খটকা খেয়ে আছে। ঐ মহিলার সাথে আপনার কিসের সম্পর্ক?”
-“আসলে মহিলাটি আমাকে নিজের ভাইয়ের মতো করে দেখতো,মহিলাটির একটি মাত্র ভাই ছিল তাকে কতগুলো গুন্ডা মেরে ফেলে। এরপর বিচার চায়তেই আমার কাছে আসে, সেখান থেকেই ওনি আমাকে ভাইয়ের মর্যাদা দেয়। এজন্য ওর মেয়ে ফারিনকেও আমার দায়িত্বে রেখে গেছে মরতে মরতে। তাই না মা!”
ফারিদ তাকদিয়ার কথাটা বলে ফারিনের দিকে তাকালে ফারিন ভয়ে লাজের রুমে চলে যায়। লাজও ওর পিছু পিছু দৌড়ে যায়।
ফারিদ তাকদিয়ার কে আবারো প্রশ্ন করে,” তাহলে আমরা এই কেইস নিয়ে কাজ শুরু করে দেয়?”
-“নাহ,এটা নিয়ে কোনো কাজ করার দরকার নেই। যা হবার হয়ে গেছে। কিন্তু আমি সরকারের কাছে এটাই অনুরোধ করবো আমার আর আমার আপন জনের সুরক্ষা’র কথা ভেবে হলেও নির্বাচন টা খুব তারাতাড়ি করা হোক!”
-“ওকে স্যার, তাহলে আমরা এ নিয়ে আর কোনো কাজ করছি না।”
তারপর প্রেসের লোকেরাও কতগুলো প্রশ্ন করলো ফারিদ তাকদিয়ার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলো আবার কতগুলো প্রশ্নের উত্তর দিলো না।
ফারিন রুমে এসে কান্না করতে লাগলো,লাজ এসে তার কাঁধে হাত রাখলে ফারিন হাতটা সড়িয়ে দেয়। লাজ ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালে মুখ ঘুড়িয়ে নিয়ে বলে,”তুমি কেন ওদের কে সবটা বললে না? কেন বললে না আমার মাকে ঐ ফারিদ তাকদিয়ার গুলি করেছে?”
-“সবসময় সবকিছু বলতে হয় না,কিছু কথা গোপন রাখতে হয়!”
-“তুমি!তুমি বলছো এ কথা? যে সবার সামনে এমপি কে প্রশ্ন করছিল সেই মেয়ে আজকে এই কথা বলছে? কেন বলছো? নিজের স্বামীকে বাঁচাতে?”
-“ফারিন!”
-“হুম, সেটাই! তুমি তোমার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য আজকে সবার সামনে মুখ খুলো নি। আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম।ভেবেছিলাম একমাত্র তুমিই আছো যে কিনা আমার মায়ের হত্যাকারীকে শাস্তি দিতে পারবে। কিন্তু এটা ভাবিনি নিজের স্বামীর জন্য এত সহজে সবটা মেনে নিবে।”
ফারিন কথাটা বলে কান্না করতে করতে রুম থেকে বেড়িয়ে পরলো।ফারাজ এতক্ষণ সবটা দাঁড়িয়ে শুনছিলো,লাজ ফারিনের পিছু পিছু যেতে নিলে তার ধরে ফারাজ জিজ্ঞেস করে,” সত্যি কি তুমি আমাকে বাঁচানোর জন্য আজকে কিছু বলোনি?”
-“ফারাজ, এটা বিষয় না। কিন্তু তবুও এটাই এখন বিষয়!”
-“মানে?কি বোঝাতে চায়ছো?”
-“সবটা বোঝে যাবে,এখন আমাকে প্লিজ কিছু জিজ্ঞেস করো না!”
-“তুমি যদি আমার জন্য এসব করে থাকো,তাহলে তুমি ঠিক করোনি। ফারিন তোমাকে বিশ্বাস করেছিল তোমার ওর বিশ্বাস টা নষ্ট করা ঠিক হয়নি!”
-“ফারাজ আর যায়হোক তুমি অন্তত এসব বলো না, ফারিন ছোট এখন সে মনের অভিমানে এসব বলছে কিন্তু যখন সবটা বোঝতে পারবে তখন সে আবার আমাকে বিশ্বাস করবে। বোঝতে পারবে আমি কেন আজকে মুখ খুলিনি?কেন তার মায়ের হত্যার কথা বলিনি?”
-“তাই যেন হয়!”
-“তাই হবে,শুধুমাত্র তুমি আমার পাশে থেকো। এই খেলাঘরের সমাপ্তি খুব তারাতাড়ি হবে!”
লাজের কথা শেষ হলে ফারাজ ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
রাতেরবেলা লাজ খাবার নিয়ে ফারিনের কাছে আসলো, কারণ সে আজকে সারাদিন না খেয়ে ছিল।লাজ’কে দেখতে পেয়ে মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো ফারিন। লাজ খাবারটা নিয়ে ওর সামনে গিয়ে বলল,”অভিমান জমেছে আমার প্রতি?”
-“এটাকে অভিমান বলে না, এটাকে রাগ আর ঘৃনা বলে!”
-“ফারিন,তুমি আমাকে বিশ্বাস করতো? যদি করো তাহলে আমাকে আর কিছুদিন সময় দাও আমি সবটা সবাইকে বলবো,শুধু মাত্র কিছু জিনিস গোছানো বাকি আছে!”
-“বিশ্বাস করি না,করতাম! এখন বিশ্বাস করতে পারছি না!”
-“ভাইকে তে বিশ্বাস করতে পারিস!”
ফারাজ কথাটা বলে রুমের ভিতরে ঢুকলো,ফারিন ছলছল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ফারাজ ফারিনের সামনে গিয়ে বলল,”তোর মা তোকে আমার কাছে রেখে গেছে,আর বলেছে নিজের বোনের মতো করে দেখতে। আমারও কোনো বোন নেই তুই ই আমার বোন। আমি কথা দিচ্ছি তোর মাকে হত্যা করার শাস্তি লাজ ঠিকই দিবে।”
-“তুমি আমাকে এসব বলছো?”
-“হুম আমি বলছি,কারন আমি লাজ’কে ভালো করেই চিনি। ও যেহেতু কিছু একটা ভেবেছে তাহলে আমি বিশ্বাস করি ওর ভাবনা টা সঠিক!”
-“কিন্তু…”
-“ভাইয়া ডাকবি না?”
ফারাজের কথা শুনে ফারিন কান্না করে দেয়, দৌড়ে গিয়ে ফারাজ কে জড়িয়ে ধরে।ভাইয়া বলে ডাকে, ফারাজও ফারিনকে জড়িয়ে ধরে। লাজ একা একা দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছিল, তারপর ওদের মাঝে গিয়ে বলে,”বাহ ভলো,ভাই বোন এক হয়ে এখন আমি লাজের কথা কারো মনেই নেই।”
লাজের কথা শুনে ফারাজ ওকে টান দিয়ে তাদের সাথে মিলিয়ে নেয়।লাজ শান্ত গলায় ফারিন কে বলল……
-“ফারিন,আমি তোমার বিশ্বাস আর তোমার ভাইয়া তোমাকে দেওয়া কথা কোনো টাই নষ্ট হতে দিবো না। সব সত্য আমি সবার সামনে আনবোই আনবো।”
সকালবেলা, লাজ গোসল করে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছিল। ফারাজ তখনো ঘুমে, লাজের চুলের পানি ফারাজের মুখে পরলে আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকায়। হলুদ শাড়ির মাঝে লাজের সাদা পেট টা অনেকখানি দেখা যাচ্ছিল। ঘুম থেকে এমন একটা জিনিস দেখে ফারাজ কেমন একটা ঘুরে চলে গেল। সে বেড থেকে উঠে লাজের কাছে চলে গেল। পিছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো লাজকে, পেটের মাঝে আস্তে করে খামচে ধরে। লাজ বাঁধা দিতে নিবে তার আগেই ফারাজ ওকে কুলে তুলে নিলো।লাজ চোখ দিয়ে ইশারা করলো,”এসব কি হচ্ছে?”
ফারাজ একটা ফ্লাইং কিস দিয়ে বেডে ফেলে দিলো, লাজ কি করবে বোঝতে পারছে না, ফারাজ ওর একদম কানের কাছে এসে বলল,” একটা কিস কি করা যাবে মিসেস চাশনি!”
লাজ কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেল সে ভেবেছিল হয়তো অন্য কিছু হবে। সে লজ্জা পেয়ে মুচকি মুচকি হাসছিল,ফারাজ এটা দেখে বোঝতে পারলো লাজের অনুমতি আছে। সে লাজ কে একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসে। তারপর আস্তে আস্তে করে তার দিকে এগোতে লাগে, পিছন থেকে দুহাত দিয়ে চুলগুলো ধরে ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়। লাজের চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেল,সে কিস ভেবেছিল কিন্তু এমন লিপ কিস নয়। ফারাজ পাগলের মতো চুমু খাচ্ছে, লাজ প্রথম দিকে নড়াচড়া করলেও পরে আর করেনি। ফারাজ লাজের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া হালকা ভাবে দরলে লাজ এক ধাক্কা দিকে ফারাজ কে দূরে সরিয়ে দেয়। তারপর নিজের ঠোঁট মুছতে মুছতে বলল….
-“এটা কি হলো?কিস করবে বলেছিলে তাহলে?”
-“হুম,কিস ই করলাম!সকাল সকাল কি মিষ্টি টাই না পেলাম!”
-“ডং,এখন আমাকে আবার গোসল করতে হবে!”
-“গোসল করার কি হলো?”
-“আবার জিজ্ঞেস করে কি হলো?”
লাজ চলে যেতে নিলে শাড়ির আঁচল ধরে ফারাজ বলে,”গোসল যখন করবে তাহলে ফরজ গোসল ই করো,চলো তাহলে বাকি কাজটুকু…”
ফারাজ বাকি কথা না বলে একটা শয়তানি হাসির সাথে চোখ মারলো।
-“অসভ্য!”
লাজ শাড়ির আঁচল জোড়ে টেনে ওয়াশরুমে যেতে নিবে তার আগেই ফোন বেজে উঠে। ফোনের কাছে গিয়ে দেখে একটা আননোন নাম্বার, রিসিভ করে কানে দেবার সাথে সাথে ওর চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
#চলবে!
#খেলাঘর
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ২০
লাজ ফোন পেয়ে তারাতারি করে বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে। ফারাজ ঠিক বোঝতে পারলো না কি হলো বা কে কল করেছিল? ফারাজও তারাতাড়ি করে তার টি-শার্ট চেন্জ করে বেড়িয়ে পরে।কিন্তু বেড়িয়ে কোথাও লাজকে দেখতে পেল না।
লাজ কল পেয়ে এতটায় তারাহুরো করেছিল যাতে করে সে ভুলেই যায় পায়ে দৌড়ে যাওয়ার থেকে বাড়ির গাড়ি নিয়ে গেলে তারাতাড়ি যেতে পারবে। লাজ দৌড়াচ্ছে তখনই দুটা মটর সাইকেল ওর সামনে এসে দাঁড়ায়।লোক গুলো ফারিদ তাকদিয়ার তা লাজ দেখেই বোঝতে পেরেছিল।সে কি করবে কিছু বোঝতে পারছিল না, এই নির্জন রাস্তায় কাকে ডাকবে? আর ডাকলেও কি কেউ আসবে এদের সামনে দাঁড়াতে? লোকগুলো ওর দিকে এগিয়ে আসছে আর লাজ পিছচ্ছে। হঠাৎ করে লাজের পিছন থেকে একটা মটর সাইকেল এসে একটা লোককে ধাক্কা মারে, গুন্ডা টা নিচে পরে যায়। বাইক দেখে লাজ বোঝলো এটা ফারাজ, আর হেলমেটের ভিতর ফারাজের লাল লাল চোখ দেখে অন্য গুন্ডা টি বাইক নিয়ে পালিয়ে যায়।ফারাজ বাইক থেকে নেমে হেলমেট টা খুলেই লাজকে একটানে নিজের সামনে দাঁড় করায়,তারপর রাগী গলায় বলে,” তুমি নিজেকে কি মনে করো একটা বার বলবে আমাকে? যখন যা ইচ্ছে হয় তখন তাই করতে চাও,যখন যেখানে যেতে হয় কাউকে কিছু না বলে চলে যাও?তোমার কি এতটুকু ভয় করে না?”
-“ভয় জিনিসটা অনেক আগেই হারিয়ে গেছে।”
-“দেখো একদম ডায়লগ মারবে না, তোমার ভয় হয় না কিন্তু আমারতো ভয় হয় তোমাকে নিয়ে।কোথায় কখন বাবা-র লোকেরা তোমার ক্ষতি করে এই ভয়ে আমার মাথা ঠিক নেই।তারউপর একটা কল পেয়ে দৌড়ে চলে আসলে!”
-“সরি,আমার বলে আসা উচিত ছিলো”
-“তোমার কি সেই ধ্যান আছে?আর আমাকে বলতে যাবা কেন? আমি তো কেউ না!”
-“আরে এখন এসবের সময় না,তারাতাড়ি নিয়ে চলো তো আমাকে?”
-“কোথায়?”
-“আয়েরা’র বাড়িতে!”
-“ঐখানে কেন?”
-“এত প্রশ্ন না করে চুপচাপ চলো,সবকিছু বোঝতে পারবে।”
ওরা দুজন বাইকে উঠে আয়েরা’ দের বাড়িতে গেল। আয়েরা তার জন্যেই অপেক্ষা করছিলো কিন্তু সাথে ফারাজ কে দেখে বেশ অবাক হয়। লাজ চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করলে সে তাদের কে ভিতরে আসতে দেয়। ফারাজ কে সোফায় বসতে বলে লাজ আয়েরা’কে জিজ্ঞেস করলো,”কোথায় ও?”
-“ভিতরেই আছে,তুই বললে নিয়ে আসবো?”
-“হুম নিয়ে আয়!”
-“কিন্তু, ফারাজ…..”
-“অনেককিছুই তোকে বলা হয়নি কোনো একদিন সময় করে বলেদিব।তুই এখন ওকে নিয়ে আয়।”
আয়েরা ফারাজের দিকে তাকিয়ে ভিতরে গেল,লাজ ফারাজের পাশে বসে হাতে হাত রেখে বলল,” আজকে তোমার সামনে তোমার বাবা আরেকটা খারাপ কাজের পর্দা ফাঁস করতে যাচ্ছি!”
লাজের কথার কোনো কিছু বোঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করতে যাবে তখনই দেখতে পায় আয়েরা একটা মেয়েকে নিয়ে তাদের দিকে আসছে। লাজ পিছন ফিরে তাকতেই দেখলো সেদিন সেই অপহরন হওয়া মেয়েটি। যেই মেয়েটার বাবা অপারেশন ছিলো, লাজ উঠে ঐ মেয়েটার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। লাজ মেয়েটির হাতে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো….
-“কেমন আছে তুমি?”
-“আব, ভালো আছি!”
মেয়েটি ফারাজকে দেখে ভয়ে লাজের হাত খামচে ধরলে লাজ বিষয়টি বোঝতে পেরে বলে…..
-“ভয় পেও না!ও ওর বাবার মতো না৷ ওর আমার স্বামী!”
মেয়েটি স্বস্তি পেয়ে লাজের হাত ছাড়লো আর কেঁদে দিয়ে বলল…
-“আপা আমাকে মাফ করে দেন, আমি ঐদিন থানায় আসতে পারিনি আমাকে ওরা….”
-” আস্তে আস্তে, কান্না থামাও আমাকে কিছু বলতে হবে না। কিন্তু তুমি আজকে হঠাৎ করে আয়েরা’র বাসায় কি করে এলে?”
-“তারআগে আমাকে বলে এই মেয়েটি কে?”
ফারাজ সোফা থেকে উঠে লাজকে এই প্রশ্নটা করে। লাজ ফারাজের সামনে গিয়ে বলে….
-“এই মেয়েই হলো সেই মেয়ে যাকে তোমার বাবা আমাকে সহ অন্য মেয়েদের সাথে পাচার করে দিতে চেয়েছিল। এই মেয়ে হলো সেই মেয়ে যেই মেয়েকে ভয় দেখিয়ে এই শহর থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর এই মেয়েই হলো আমাদের কঠিন হাতিয়ার!”
-“তারমানে বাবা সত্যি!”
-“হুম আপনার বাবা সত্যি মেয়ে পাচার করে, আমাকে আমার বাবার অপারেশন এর টাকা দেবার কথা বলে পাচার করতে চেয়েছিল। সেদিন লাজ আপা না থাকলে আমার আর বাকি মেয়েদের কি যে হতো আল্লাহই ভালো জানতেন!”
মেয়েটি কথাটা বলে আবার কান্না করলে আয়েরা এসে তার কাঁধে হাত রেখে বলে….
-“দেখো সুহানি, যা হয়নি তা ভেবে কান্না করো না। যা হতে চলেছে তার জন্য ভাবো!”
-“আয়েরা,তুই ওকে কি সবটা বলেছিস?”
-“হুম বলেছি কিন্তু ও ওর পরিবার নিয়ে ভয় পাচ্ছে!”
-“ভয় পেও না,আমি এখন আর কোনো রিক্স নিবো না। যা করবো ঠান্ডা মাথায় আর সবকিছু ঠিক রেখে। শুধুমাত্র মনোনয়ন এর তারিখ ঠিক হোক তারপর দেখো আমি কি করি?”
ফারিন তার নিজের মায়ের ছবি নিয়ে কান্না করছিল।পিছন থেকে তার মাথায় কেউ হাত রাখলে তাকিয়ে দেখে মাহেরা তাকদিয়ার। সে নিজের চোখের পানি মুছতে লাগলো,মাহেরা তাকদিয়ার বলল,”মার কথা খুব মনে পরছে তাই না, মা এমন একটা মানুষ যে মানুষ টার জায়গা কখনো অন্য কেউ নিতে পারেনা, আর ভালোও বাসতে জানে না। কিন্তু কি করবে বলো ভাগ্যের লিখন তো কেউ পাল্টাতে পারে না বলো। যা হওয়ার ছিলো হয়ে গেছে,এখন এসব নিয়ে মন খারাপ করলে শরীরও খারাপ হয়ে যাবে।”
-“এত সহজেই কি মাকে ভুলা যায়? যে মা আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিত চুল বেঁধে দিত সেই মাকে কি এত সহজে ভুলে যেতে পারি, যার সাথে রাত জেগে গল্প করতাম সারাদিনের গল্প বলতাম তাকে কি করে ভুলি বলো?”
ফারিন কান্না করতে করতে কথাটা বলল, মাহেরা তাকদিয়ার ফারিনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলল,” মারে জানি তুই চন্দ্রার জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে পারবি না কিন্তু তাও বলবো একটা সুযোগ দিবি আমাকে? আমি তোর মায়ের মতে হওয়ার চেষ্টা করবো,তোর চুল বেঁধে দিবো,রাত জেগে গল্প করবো তোর গল্প শুনবো। একটাবার সুযোগ দিবি আমাকে তোর মা হয়ে উঠতে।”
ফারিন আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, তার মা কান্না জড়িত কন্ঠে মা বলে ডাক দেয়। এই ডাক যেন মাহেরা বেগম এর প্রান ছুঁয়ে গেল।
বিঃদ্রঃ আমি খুবই অসুস্থ তাই গল্প লিখতে পারছিলাম না, আজকে আপনাদের কথা ভেবে ছোট করে একটা পার্ট লিখে দিলাম। জানি না নেক্সট পার্ট কবে আপনাদের কে দিতে পারবো। তাই প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিবেন আর সবাই একটু দোয়া করবেন।
#চলবে!!