#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৭
সকাল দশটা। খান বাড়ির ছোট সদস্য গুলো বরযাত্রী যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। মানহা চুপচাপ বসে সবার কার্যকলাপ দেখছে। কে কি করছে না করছে সবটা নোটিশ করছে। সবাই কত এক্সাইটেড বিয়ে নিয়ে। এখনও ঢের সময় আছে। বরযাত্রী যাবে একটার দিকে। আর এখনই সাজা নিয়ে মাতামাতি করছে। মানহা বিছানা থেকে উঠে গিয়ে বেলকনিতে দাড়ায়। তার গোসল করা হয়ে গেছে। চুল গুলো শুকালেই এখন হবে।
অয়ন নিজের রুমে বসে নিরার সাথে ফোনালাপ করছে। কোথা থেকে হুট করে একটা ছেলে অয়নের রুমে ঢুকে ফোনটা নিয়ে নেয়। হঠাৎ কেউ ফোন নিয়ে নেওয়ায় হকচকিয়ে যায়। সাথে মেজাজ টাও খারাপ হয়ে গেছে কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায় অয়ন। মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে নেয়। ছেলেটা মুচকি হেসে অয়নের সামনে গিয়ে বসে। অয়ন আবার মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে নেয়। অয়নের কান্ডে হো হো করে হেসে ওঠে ছেলেটা। ছেলেটার হাসা দেখে অয়ন বলে,
” এমন ছাগলের মতো হাসছিস কেন? ছেলেটা হাসি থামিয়ে বলে,
” অয়ন আরেকটু পর বিয়ে তোর। আর তুই বাচ্চাদের মতো করছিস। লোকে কি বলবে মামা।
” তুই কেনো আসছিস সেটা বল। যা এখান থেকে। তোকে আমার ভাল্লাগছে না। চলে যা।
” ভাই বোঝার চেষ্টা কর অনেক প্যারায় ছিলাম। একটা ডিল নিয়ে অনেক ঝামেলা হইছিল।
” দেখ রাকিব আমাকে পাগল বোঝাতে আসিস না। আমি সব জানি।
(রাকিব অয়নের বন্ধু)
” রাগ করিস না বন্ধু। আর কিছু মিস যাবে না।
” আচ্ছা যা এবারের মতো মাফ করে দিলাম। এবার আমার ফোনটা তো দে। তোর জন্য ঠিক করে কথাও বলতে পারলাম না।
” বন্ধু কস কি? তুই ভাবির লগে কথা বলছিলি। আগে কবি না বলে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে নিরাশ হয় রাকিব। কারণ নিরা ফোনটা অনেক আগেই কেটে দিছে।
” যাহ ভাবি তো লাইনে নেয়। আচ্ছা তুই বসে বসে এত সময় নষ্ট করছিস ক্যান। কত বাজে জানিস। আন্টি আমাকে বলল তোকে তাড়াতাড়ি রেডি করিয়ে দিতে। একটুপর বের হবে।
” আচ্ছা বুঝলাম।
______
বরযাত্রী রেডি যাত্রা শুরু করে কনে বাড়ির উদ্দেশ্য। সব ভাই বোনেরা বরের গাড়িতে উঠছে। আর বাকি লোকগুলো অন্য গাড়িতে।
নিরাকে পার্লার থেকে দুইটা মহিলা এসে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়ে গেছে। নিরাকে দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে। লাল রঙের শাড়িতে মারাত্মক সুন্দর লাগছে। নিরার খালাতো বোন বর্ষা হেসে হেসে বলে,
” আপু আমি হ্যান্ডেড পার্সেন্ট শিউর দুলাভাই তোমাকে দেখলে হার্টহেটাক করবে। তোমাকে যা সুন্দর লাগছে।
” নিরা লজ্জায় মাথা নিচু করে বলে, চুপ কর। বেশি কথা বলিস কেন?
” ওরে বাবা। আমার আপু দেখি লজ্জা পাচ্ছে। আর কিছু বলার আগেই বাইরে থেকে আওয়াজ শোনা যায়,, বর এসেছে বর এসেছে। বর্ষা ছুটে চলে যায় গেট ধরতে।
রুমে নিরার একা একা বসে আছে। নিরার অন্যরকম অনুভূতি সৃষ্টি হয়। যা এর আগে কখনও হয়নি। একটু পর সে অন্য কারোর হয়ে যাবে। যাকে সে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।
অনেক গুলো মেয়েছেলে মিলে বরের গেট ধরছে। তাদের দাবি তাদেরকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে হবে। অয়ন চুপচাপ শুনছে কারণ তার ভাইয়েরা মেয়েদের সাথে তর্ক করছে তারা এত টাকা দিতে পারবে না। তারা পাঁচ হাজারের বেশি দিতে পারবে না। শেষ মেষ বিশ হাজার টাকা দিতে রাজি হয় অয়ন। অয়নের কাজে মিরাজরা অখুশি কিন্তু কিছু বলে না। তারাও বাড়ি গিয়ে নেবে। ছাড় দেবে না। উঁহু।
মানহা এসব ঝামেলা থেকে দুরে দাঁড়িয়ে আছে। মানহা কে একপাশে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আবরার এগিয়ে এসে মানহার পাশে দাড়ায়। কিছুক্ষণ পর বলে,,
” আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে মিস মানহা। শাড়িটা পরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
” মানহা মুচকি হেসে ধন্যবাদ বলে।
দুর থেকে এক জোড়া চোখ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দুজনের পানে। তাদের মাঝে আরও কিছুক্ষণ কথা হয়। তার পর বিয়ের আসরে চলে যায়।
তিন কবুলের মাধ্যমে অয়ন আর নিরার বিয়ে সম্পূর্ণ হয়। ধীরে ধীরে ধরণীতে সন্ধ্যা নেমে আসছে। এবার বিদায়ের পালা। নিরাকে আর আপন নীর থেকে চলে যেতে হবে। প্রিয় মানুষ গুলো থেকে দুরে যেতে হবে। নিরা খুব কান্না করছে মা বাবা ভাই কে জড়িয়ে ধরে। ক্ষনে ক্ষনে কেপে উঠছে নিরা। আনোয়ার হোসেন অয়নের হাতে নিরাকে তুলে দেন। একমাত্র মেয়ে কে অন্যের ঘরে দিয়ে দেন। নিজেকে সামলে রাখছেন। পুরুষের কান্না করতে নেয়। আবরার সবার সামনে থেকে চলে যায়। বোনের চলে যাওয়া নিজ চোখে দেখতে পারবে না।
অয়নের হাত ধরে শুরু করে এক নতুন জীবন।
_________
খান ভিলা হয়ে উঠেছে জাঁকজমক। নতুন বউ এসেছে বউ এসেছে। সবাই ঝাঁক বেঁধে আসছে বউ দেখতে।
রাত দশটা। অয়নের রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে মানহা তানশি মিরাজ তাসকিন মাইশা রিয়া আরও কয়েকজন কাজিন। মানহা আসতে চাইছিল না কিন্তু সবাই জোর করে আনছে। সে না থাকলে নাকি অয়ন তাদের টাকা দেবে না। তাই তো ভাই বোনদের খুশির জন্য নিজেকে হাসি মুখে প্রেজেন্ট করতে হলো সবার সামনে। অয়ন নিচ থেকে উপরে এসে নিজের রুমের সামনে সবাইকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নিচে নামার জন্য পা বাড়াতেই তাকে ঝাপটে ধরে মিরাজ আর তাসকিন। অয়ন আর নড়তে পারে না। মানহা সামনে এসে বলে,
” ভাইয়া তুমি কিন্তু কাজটা মোটেও ঠিক করছিলে না।
” আমি কি করলাম বোন.
” আমাদের হক আমাদের বুঝিয়ে দিয়ে তুমি রুমে প্রবেশ কর তা না করে আমাদের দেখেই পালাচ্ছো ছিহ!
” আচ্ছা তোদের ডিমান্ড বল।তানশি চেচিয়ে বলে,
” পঞ্চাশ হাজার টাকার এক টাকা কমেও ছাড়ব না। পঞ্চাশ হাজার বুঝছো ভাইয়া।
“এ্যাাাা,,,,,
” এ্যাাাা নয় হ্যাাা সবাই একসাথে বলে,
” আমার কাছে এত টাকা নেই বিশ্বাস কর তোরা।
” অযুহাত বাদ দিয়ে আমাদের টাকা দিয়ে দাও ভাবি তোমার জন্য অপেক্ষা করছে বেচারা আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবে বলোো টেনে বলে,
” নিরার কথা মাথায় আসতে মুচকি মুচকি হাসে অয়ন। সেটা সবাই লক্ষ্য করে বলে,
❝ হাসলে না ফাসলে❞
সবার কথায় অয়ন হকচকিয়ে যায়। তারপর বলে, ওকে তোদের টাকা দেব বাট একটু কমিয়ে বল বোন নইলে ফকির হয়ে যাব। সদ্য বিয়ে করলাম এখনও বাসর টাও করতে পারিনি তার আগে ফকির বানানোর ধান্দা করছিস তোরা কাঁদো কাঁদো গলায় বলে
” শুধু কথায় চিড়ে ভিজবে না ” ভাইয়া। আচ্ছা বিশ হাজার নে। ক্যাশ আছে মাত্র বিশ হাজার। আর নেই।
” বিকাশে সেন্ড করো মিরাজ বলে
অয়নকে অগত্যা পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে হলো সবাইকে। টাকা পেয়ে অয়নের হাতে চাবি ধরিয়ে দিয়ে কেটে পরে সবগুলো।
আর অয়ন নিজের রুমে ঢুকে পরে।
নিরা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে খাটে। অয়নকে দেখে নেমে এসে সালাম করতে যায় কিন্তু করতে পারে না তার আগেই অয়ন নিরার হাত ধরে ফেলে। দুজনে ফ্রেশ হয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরে।
_________________
দেখতে দেখতে অয়ন আর নিরার বিয়ের দশদিন হয়ে গেছে। ছাদে দাড়িয়ে মানহা করোর সাথে ফোনে কথা বলছে। তার টিকিট কনফার্ম হয়ে গেছে আর দুই দিন পর তার ফ্লাইট। পিছন থেকে কেউ একজন শুনে ফেলে তার কথা গুলো,।
মানহা কথা বলায় এতটাই মগ্ন যে আশেপাশে কেউ আছে কি না খেয়াল করেনি। দুইদিন পর দেখা হচ্ছে বলে কল কেটে দেয়,,,,
চলবে ইনশা আল্লাহ