গোধূলির শেষ প্রণয় পর্ব-০৮

0
8

#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৮

একটা পার্কে পাশাপাশি বসে আছে আবরার আর মানহা। মূলত মানহা একা বাইরে বেড়িয়েছিল। কাউকে সাথে আনেনি। নিজে কিছু একান্ত সময় কাটাবে বলে। কিন্তু ভাগ্য ক্রমে আবরারের সাথে দেখা হয়ে যায়।ভদ্রতার খাতিরে বসতে বলে আবরার কোনো প্রশ্নবিহীন বসে পরে । মানহার দৃষ্টি দুরের বেঞ্চিতে বসা কাপলের দিকে। কি সুন্দর দুজনে বসে আছে। মেয়েটা তার প্রিয় মানুষের কাঁধে মাথা দিয়ে রাখছে। মানহার চোখ ছলছল করে ওঠে। তারও তো জীবনটা এমন হতে পারতো। মাঝে মাঝে অনুভূতিরা বড্ড পিড়া দেয়। আবরার মানহার দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকায়। দেখে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। আবরার গলা ঝেড়ে বলে,

” অনুভূতি বড্ড খারাপ জিনিস মিস মানহা। সেটা কে আটকানোর কারোর সাধ্যি নেই। কখন কার উপর কেমন অনুভূতি হবে কেউ বুঝতে পারে না। মাঝে মাঝে অনুভূতির বেড়াঝালে আটকে যায়।

” আমাদের দেহের সবচেয়ে দামী অংশ কি জানেন?

” কি।

” হৃদপিন্ড। আর সেই দামী অংশ যখন কারোর আঘাতে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় তখন মানুষের মন মরে যায়।আর মন মরে গেলে দেহটাও মরে যায়। মানুষ তখন ঘুনে খাওয়া কাঠের ন্যায় হয়ে যায়। উপরের রং স্বচ্ছ থাকলেও, ভেতরটা রঙচটা থাকা।

” আবরার নিশ্চুপ হয়ে মানহার কথা গুলো শোনে। মানহা ভুল কিছু বলেনি। আসলেই তো আমাদের উপরটা যেমন স্বচ্ছ ভেতরটাও কি তেমনি স্বচ্ছ থাকে । না। । ভিতরটা থাকে রঙবিহীন।

“চুপ করে গেলেন যে। ভুল কিছু বলছি আমি। আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে

” তেমন কিছু না। এমনিতেই।
” হঠাৎ কি মনে করে এখানে আসলেন?
” আবরার থতমত খেয়ে যায় মানহার প্রশ্নে এখন কি বলবে। সে মানহার পিছু পিছু আসছিল। মানহা জানলে কি ভাববে।

” কি হলো?
” আসলে এখান দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম আপনি ভিতরে ঢুকছেন। তাই ভাবলাম একটু দেখা করে যায়।

“ওহ। ছোট্ট জবাব
” আপনি কি মনে করে আসছেন। কেউ সাথে আসেনি?
” সঙ্গ দেওয়ার জন্য কি সবাইকে পাওয়া যায়৷ কিছু কিছু সময় নিজেকেই একা থাকতে হয়।

” আপনি চাইলে আমি আজীবন সঙ্গ দেব । বিড়বিড় করে বলায় মানহার কর্ণগোচর হয় না আবরারের কথা।

” কিছু বললেন?
“না না কিছু বলিনি কিছুটা হেসে।
” ওহ।
” (…….) নিশ্চুপ দুজনে।

“আজ উঠি। অন্য কোনো একদিন আবারও দেখা হবে। ভাগ্যে থাকলে।
” এমন করে বলছেন যেন আজই চলে যাবেন?

” সেরকমই।
” মানে?
” কিছু না।
” চলুন আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।

” না থাক আপনার কষ্ট করতে হবে না । আমার কিছু কাজ আছে সেটা করে তারপর বাসায় যাব।
“আচ্ছা।

মানহা চলে যায়। আবরার সেদিকে চেয়ে থেকে বলে, আপনাকে কোথাও যেতে দেব না মিস মানহা। আপনাকে আমার মনিকোঠায় গোপন করে রাখব। #গোধূলির_শেষ_প্রণয় হয়ে ধরা দেবেন আমার কাছে। কাউকে ছুতে দেব না।ট্রাস্ট মি।

❝প্রণয় তুমি থমকে থেকো,
শেষ গোধূলির আলোয়
ভীষণ সংগোপনে আমায় রেখো
তোমার মনিকোঠায় ❞
~ছনিয়া~

________

পিচঢালা রাস্তা দিয়ে নিরিবিলি হেটে যাচ্ছে মানহা। আশেপাশের কোলাহল। গাড়ির হর্ণ সবটা বিরক্ত লাগছে তার কাছে। আজ পণ করছে হেঁটে হেঁটে বাসায় যাবে। আর কবে এমন সুযোগ পাবে তার ঠিক নেই। তাই সুযোগের সৎ ব্যবহার করাটাই উত্তম মনে হয় মানহার কাছে। গোধূলি বেলায় হাটা ও হয়ে যাবে। খালি পা’য়ে হাটতে পারলে আরও ভালো লাগতো কিন্তু এতএত মানুষের মাঝে সেটা বেমানান লাগবে। খুব কষ্ট লাগছে মানহার। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে। সবাইকে ছেড়ে থাকতে তার যে খুব কষ্ট হবে। কিন্তু ভাগ্যে যা আছে সেটাই হবে। হাঁটতে হাঁটতে একটা দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সবার জন্য কিছু চকলেট নেবে বলে ভাবে আর হয়তো দেওয়া হবে না। তার ফুপি আর ফুপা চলে গেছে। তাসকিন আর তানশি থেকে যায়। তারা আরও কিছু দিন থাকবে এখানে। তানশির ওখানে ভালো লাগে না। জন্মভূমি ছেড়ে থাকতে কার ভালো লাগে। কারোরই না। তাই তানভি খান রেখে গেছেন দুই ছেলে মেয়ে কে। তাদের ব্যবসার ক্ষতি হয়ে যাবে বলে তারা থাকেন নি। পাড়ি জমিয়েছেন সুদুর আমেরিকায়।

মানহা দোকানে গিয়ে অনেক গুলা চকলেট আইসক্রিম নেয়। নিজের জন্য একটা ড্রিংকো নেয়। ড্রিংক খেতে খুব ভালো লাগে তার। চকলেটের দাম মিটিয়ে আবারও হাটা ধরে। হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যথা হয়ে গেছে সেজন্য আর হাটবে না বলে ঠিক করে। একটা রিকসা দেখে কিন্তু পায় না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে রিকসার জন্য। কোথা থেকে একটা বাইক এসে মানহার সামনে ব্রেক মারে। মানহা দু’কদম পিছিয়ে যায়। মাথার হেলমেট খুলে ফেলে ছেলেটা। মানহা বললো,

” আরে রাকিব ভাইয়া। আপনি এখানে কেন? আজ দেখি অনেকের সাথেই দেখা হচ্ছে।

” হ্যাঁ আমি। আর কার সাথে দেখা হলো তোমার। এই মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কার জন্য অপেক্ষা করছো?

” কারোর জন্য না। রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।

” এখানে রিকসা কই থেকে পাবা তুমি। প্রায় সন্ধ্যাে হয়ে আসলো আমার বাইকে উঠে পরো। নামিয়ে দেব।

” আমি মেনেজ করে নেব। আপনি যেতে পারেন।
“দেখো মানহা দিন সময় ভালো না। কখন কি হয় বলা যায় না। তোমার ভালোর জন্য বলছি চলো।

” মানহা ভাবে রাকিব ঠিকই বলছে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। তাকে বাসায় যেতে হবে। বাসার সবাই চিন্তা করবে। অনেক ভেবে চিন্তে রাকিবের বাইকে উঠে পরে।

দুর থেকে এক জোড়া চোখ সবটা দেখে। রাগে তার চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। তাকে বারবার বলা সত্ত্বেও তার সাথে গেলো না। আর কোত্থেকে একটা ছেলে এসে বলল ওমনি রাজি হয়ে গেলো। এটা ঠিক করলে না❝ বনবিড়াল ❞।

রাগে গাড়ির স্ট্রেয়ারিং এ ঘুষি মেরে দেয়। আর বলে তুমি শুধু আমার। তোমাকে কারোর হতে দেব না বনবিড়াল । তোমাকে আমার হতেই হবে। গাড়ি নিয়ে হাওয়া চটে চলে যায়। গাড়ির গতি এত জোরে দিছে যে সামনে থাকা গাড়ি গুলো সব পিছনে পরে যায়।

রাকিব বাসার সামনে এসে নামিয়ে দেয় মানহা কে। মানহা ধন্যবাদ বলে বাসার ভিতরে চলে যায়। মানহার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা যায় ততক্ষণ পর্যন্ত চেয়ে থাকে। দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে গেলে বাইক স্টার্ট দেয় রাকিব। চলে যায় নিজ গন্তব্য।

মানহা ড্রয়িংরুমে এসে দেখে সব ভাই বোন গুলো বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। মানহা কে দেখে নিরা বলে,

” এই তো আপু চলে আসছে। এবার আরও মজা হবে। আপু তুমি ও আমাদের সাথে জয়েন্ট হও।

” ভাবি তোমরা আড্ডা দাও আমার ভালো লাগছে না কিছু। আর এগুলো সবাইকে দিয়ে দাও বলে নিরার হাতে চকলেট আইসক্রিম দেয়। কাউকে কিছু না বলে দোতালায় চলে যায়। সবাই বিস্ময়ে মানহার দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ কি হলো তার ,,,

চলবে ইনশা আল্লাহ

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ]