#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৯
আপনজনদের মুখ আসলে তারার মত। দুচোখে গোনা যায় না। সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পরিবারের সবাই আপনজনদের নিয়ে একসাথে থাকা। দুঃসময় কিংবা সুসময়ে যাদেরকে পাশে পাওয়া যায়। তারাই আসলে আমাদের প্রকৃত আপনজন। আমাদের কখনো আপনজনদেরকে হারানো উচিত নয়। কিন্তু মানহার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত। আজ একটা দিন সবার থেকে দুরে দুরে থাকছে মানহা। কারোর সাথে ঠিক মতো কথা বলছে না। ঠিক ভাবে খাচ্ছে না পর্যন্ত। তার কি হয়েছে কেউ যানে না। সবাই শুনলে বলছে শরীরটা ভালো না। তানিয়া বেগম মেয়ের ব্যবহারে সন্ধিহান। কিছু একটা হয়েছে তিনি নিশ্চিত। তাই তো এখন নিজের মেয়ের রুমের দরজার সামনে দাঁড়ানো। দরজা ভিতর থেকে দেওয়া। সেজন্য তিনি ডাক দেন,
” মানহা দরজাটা খোল তো মা। তোর সাথে কথা আছে।
” মানহা চুপচাপ দরজা খুলে দিয়ে খাটে গিয়ে বসে
মা’য়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, কি?
” তানিয়া বেগম মেয়ের পাশে এসে বসে। দুই হাত ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, তো কি হয়েছে মা? সত্যি করে বল? মা সব ঠিক করে দেবে?
” মানহা মা’ কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। তানিয়া বেগম পরম যত্নে মেয়েকে বুকে আগলে নেন। ফের জিজ্ঞেস করে, বল মা। তোর কি হয়েছে?
” কিছু হয়নি মা। এমনিতেই কিছু ভালো লাগছে না। তোমাদের ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হয় মা।
“তোকে তো কত করে বলছি থেকে যা। তুই তো কারোর কথায় কানে তুলছিস না।
” এখানে আমার দম বন্ধ লাগে মা। মাঝে মাঝে নিঃশ্বাস নিতে পারিনা। মনে কেউ আবার সেই বিষাক্ত স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায়।
” সব ঠিক হয়ে যাবে মা। তুই খামাকা টেনশন করিস। তুই এখানে বোস আমি তোর জন্য খাবার আনছি। তোকে নিজ হাতে খাইয়ে দেব। মাথা নেড়ে সায় দেয়। তানিয়া বেগম নিচে গিয়ে ভাত নিয়ে ফিরে আসে । মেয়েকে যত্ন করে খাইয়ে দেয়। মানহা তৃপ্তিসহকারে খায়। মানহা কে রেস্ট নিতে বলে চলে যান তিনি।
মায়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে মানহা। আর বলে, আমাকে ক্ষমা করে দিও মা। আর কবে তোমাদের সাথে দেখা হবে জানি না আমি। তোমাদের কথা খুব মনে পরবে।
সন্ধ্যা সাতটায় মানহার ফ্লাইট। সবকিছু গুছিয়ে রাখছে। সবার চোখ ফাকি দিয়ে যাবে। যখন মাগরিবের নামাজ পড়তে যাবে সবাই ড্রয়িংরুমে কেউ থাকবে না আর তখনি বাসা থেকে বের হবে। দারোয়ান চাচাও নামাজে চলে যাবে। কেউ টের পাবে না। পুরো বাড়িটা এখন একটু ঘুরে দেখবে। সেজন্য রুম থেকে বের হয় মানহা।
সারা বাড়ি টা ঘুরে ছাদে গিয়ে দোলনায় বসে। মানহা খুব করে অনুভব করতে পারছে পরিবারের কাছে থাকা কতটা মধুর। পরিবারের কাছে থাকলে আলাদা শান্তি পাওয়া যায়। । নিরার ডাকে ভাবনার ছেদ পড়ে মানহার।
” আপু তুমি এখানে আর আমি সারা বাড়ি তন্নতন্ন করে খুজে বেড়াচ্ছি। কোথাও পাচ্ছি না।
” বসো এখানে তোমার সাথে একটু গল্প করি। তাহলে সময়টাও পাড় হয়ে যাবে। কি বলো মুচকি হেসে বলে। নিরা মানহার পাশে বসে পরে।
” আপু তোমাকে একটা কথা বলব। যদি কিছু মনে না করো?
” না কিছু মনে করব না। তুমি নির্দ্বিধায় বলতে পারো।
” তুমি সবসময় মন খারাপ করে থাকো কেন? সব সময় হাসিখুশি থাকতে পারো না? হাসলে তোমাকে খুব সুন্দর লাগে।
” জানো ভাবি
” উফফ! আর পারা গেলো না মাথায় হাত দিয়ে।
” কিহ অবাক হয়ে জিঞ্জেস করে
” তুমি সবসময় আমাকে ভাবি ভাবি করো কেন হ্যাঁ? নাম ধরে ডাকবে। তুমি ভাবি বললে কেমন আনইজি ফিল হয়। প্লিজ ভাবি ডেকো না আপুমণি।
” আচ্ছা বেশ। আজ থেকে নাম ধরে ডাকব খুশি।
” হ্যাঁ। এবার বলো কি বলতে চাইছিলে।
” কিছু কিছু সময় আমাদের চুপ থাকতে হয়। পরিস্থিতি বুঝে কথা বলতে হয়। আর একাকিত্ব জীবনটা আমার কাছে প্রিয় হয়ে উঠছে। একাকিত্ব অসম্ভব সুন্দর। আর তুমি হাসার কথা বলছো না? আমি হাসতে ভুলে গেছে। হাসতে গেলে নিজের কাছেই কেমন লাগে।
” তাই বলে তুমি হাসবে না। তোমারও তো জীবন। একটা জীবন্ত মানুষ হয়ে কি বাঁচা যায় বলো। তুমি মন খুলে হাসবে।
” চাইলেই সব কিছু সম্ভব না।
” “অবশ্যই সম্ভব আপু। তুমি জানো না তোমার জন্য বাড়ির সকলে মন খারাপ করে। তোমার জন্য টেনশন হয় আপু।
” হ্যা।
” চলো এখানে মন খারাপ করে বসে না থেকে নিচে যায়। সবাই মিলে কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়া যাবে।
মানহা আর নিরা দুজন নিচে নেমে আসে। মিরাজ তাসকিন তানশি কে ডেকে নিচে আনে। অয়ন বাসায় নেই শো রুমে গেছে। সন্ধ্যার আগে চলে আসবে বলছে। সবাইকে বসিয়ে রেখে কিচেনে চলে যায় নিরা। সে আগে থেকেই ফুসকা রেডি করে রাখছে।প্লেটে করে ফুসকা এনে টেবিলের সামনে রাখে। ফুসকা দেখে জিভে জল চলে আসে তানশির। তানশি ফুসকা খুব পছন্দ করে কিন্তু আমেরিকায় তেমন পাওয়া যায় না সেজন্য খেতে পারে না। বাংলাদেশে আসলেই ফুসকা খাবে। তানশি চেচিয়ে বলে ওঠে,
” ওয়াও ভাবিমণি তুমি ফুসকা আনছো। তারাতাড়ি করে আগে আমাকে দাও। আমার তর সইছে না।
” একটু অপেক্ষা করো তানশি।সবাইকে দিচ্ছি। নিরা একে একে সবাইকে দেয় শুধু তাসকিন বাদে। সে এসব ছাইপাঁশ খায় না। এটা মেয়েদের খাবার সে কেন খাবে? তাসকিনের কথায় এক দফা হেসে নেয় সকলে।নিরা তাসকিনের জন্য নুডলস করে দেয়।
খাওয়া শেষ হলে মিরাজ আর তাসকিন বাড়ির বাইরে হাঁটতে যায়। আর
দেখতে দেখতে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। আর মাত্র কয়েকটা ঘন্টা তারপর চলে যাবে ভিনদেশে। যাদের কে সে চিনতো জানতে তাদের কাছে। যারা তাকে আপন করে নিয়েছে। যারা তার একাকিত্বের সময় সঙ্গ দিয়েছে তাদের কাছে। হাজার কষ্ট হলে ও চলে যেতে হবে। চারদিকে মসজিদের মাইকে আযান শোনা যাচ্ছে। মাগরিবের নামাজের সময় হয়ে গেছে। মানহা নিজেকে তৈরি করে নেয়। নিজের রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখে। শখের জিনিস গুলো আবারও ছেড়ে যেতে হচ্ছে ভাবতেই বুক ফেটে কান্না বেড়িয়ে আসে কিন্তু কাঁদে না নিজেকে সামলে নেয়। সামনে আগালে আর পিছু হটবে না। কোনো পিছুটান সে রাখতে চায় না। আবরারের দেওয়া শাড়িটা পরে মুখে মাক্স মাথায় হিজাব বেধে নেয়। হাতে ব্যান্ডের ঘড়িটা পরে নেয়। আয়নায় নিজেকে দেখে। পারফেক্ট আর কিছু করা লাগবে না। এবার চুপিসারে বাড়ি থেকে বেড়োতে পারলেই হবে। হাতে থাকা সাইড ব্যাগটা চেক করে সবকিছু ঠিক ঠাক আছে কি না। ব্যাগ দেখতে গিয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তার পাসপোর্ট ভিসা কই গেলো। সে তো সাইড ব্যাগেই রাখছিল। লাগেজ খুলে কাপড় চোপড় উল্টেপাল্টে তন্নতন্ন করে খোঁজে কিন্তু নির্ধারিত জিনিসটা পায় না। তার সম্পূর্ণ মনে আছে সে ব্যাগেই রাখছে তাহলে গেলো কোথায়। মাথা কাজ করে না মানহার। কি করবে এখন। হাতে বেশি সময় ও নেই। এখন কি করব আল্লাহ! কেন সবকিছু এমন হয় আমার সাথে। আমার ঘরে কি কেউ এসেছিল? কিন্তু কে আসবে? পাসপোর্ট কেন নেবে? আর কোনো উপায় না পেয়ে মা’ কে ডাকে। তানিয়া বেগম মেয়ের ডাকে ছুটে আসে। মানহা কে এমন করতে দেখে জানতে চায় কি হয়েছে । আর তুই সেজেগুজে কোথায় যাবি এখন। এই সন্ধ্যায়।
“মা আমার পাসপোর্ট কোথায়? আমি ব্যাগে রাখছিলাম তাহলে গেলো কোথায়? আমার রুমে কে আসছিল?
” তানিয়া বেগম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, তুই পাসপোর্ট কি করবি?
” মা বেশি কথা না বলে জানলে বলো প্লিজ ?
” আমি সত্যি জানি না।
খুজে লাভ নাই পাসপোর্ট আমার কাছে। তানিয়া বেগম আর মানহা পিছনে তাকিয়ে দুজনেই অবাক হয়। দরজায় দাড়ানো মানুষটাকে দেখে বিস্ময়ে মানহার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে যায়,,
চলবে ইনশা আল্লাহ
[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]