#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_১১
সকালের মিষ্টি রোদ চোখে পরতেই ঘুম ভেঙে যায় মানহার। জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে রোদ এসে পরে মুখে। আড়মোড়া ছেড়ে বিছানায় উঠে বসে মানহা। চোখ কচলিয়ে বিছানা থেকে নেমে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায় । একেবারে ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে বের হয়। এবার ড্রয়িংরুমের দিকে হাঁটা ধরে। আর মনে মনে ভাবে আজ থেকে নিজেকে অন্য রকম গড়ে তুলব। নতুন করে বাঁচবো। সবাইকে নিয়ে বাঁচবো। হাসবে মন খুলে হাসবে। সবাইকে দেখিয়ে দেবো মানহা কখনও ভেঙে পড়ে না। আর পড়বেউ না। ভাবতে ভাবতে কখন যে নিচে নেমে গেছে বুঝতে পারেনি। মানহাকে দেখে নিরা হাসি মুখে বলে,
” আপু তুমি এত সকালে উঠতে গেলে কেন? সবাই তো এখন ঘুমোচ্ছে।
” ঘুম ভেঙে গেলে আর ঘুম আসে না গো। তাই তো নিচে নেমে আসছি। আচ্ছা নিরা মা কোথায়?
” ছোট আম্মু তো রান্না ঘরে কেন কি হয়েছে?
” তেমন কিছু না।
” আচ্ছা তুমি বসো আমি তোমার জন্য কফি করে আনছি।
” ওকে যাও।
সোফায় একা একা বসে ভাবছে মানহা। পরিবারের সবাই অনেক অভিমান করছে। সহজে এদের অভিমান ভাঙানো যাবে না। তার মা তো তার সাথে কাল থেকে কথা বলছেই না। নিরার ডাকে ভাবনার ছেদ পড়ে মানহার।
“এই আপু কি এতো ভাবছো? কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো।
” হ্যাঁ। দাও।
” আপু তুমি থাকো আমি একটু উপরে যাচ্ছি। দেখে আসি তোমার ভাইয়া উঠছে কি না। বেলা বাড়ছে এখনও মশাইয়ের ঘুম ভাঙে নি।
” আচ্ছা যাও হাসি মুখে বলে।
মানহা পা টিপে টিপে কিচেনের সামনে যায়। দেখে তার মা রান্না করছে। বড় আম্মুও এখানে নেই হয়তো রুমে গেছে। মানহা চুপিচুপি গিয়ে মা’য়ের পিছনে দাঁড়ায়। তানিয়া বেগম মেয়ের উপস্থিতি বুঝতে পেরেছেন। তবুও চুপ করে আছেন। মেয়ে কি করে তাই দেখার জন্য। এমন ভাব করে রান্নায় ব্যস্ত যেন আসেপাশে কেউ নেই। মানহা পিছন থেকে মা কে জড়িয়ে ধরেন। মানহার কাজে তানিয়া বেগম ভড়কে যান। মেয়ে যে এমন কিছু করবেন বুঝতে পারেনি।
মানহা বলে,
” মা।
” তানিয়া বেগম নিশ্চুপ
“মানহা ফের বলে ও মা কথা বলবে না আমার সাথে।
” (…..)
” আমি কি খুব বেশি করে ফেলছি মা। তোমরা কেউ আমার সাথে কথা বলছে না। আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে মা বলে নিরবে কান্না করে। চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে তানিয়া বেগমের ঘাড়ে গিয়ে পরে।
” তানিয়া বেগম চমকে যান। মেয়ে তার কান্না করছে। সমস্ত অভিমান ঝেড়ে ফেলে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেন। সান্ত্বনা বাণী দেন। কাঁদিস না মা। সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই কেন ওমন করতে গেলি। বাড়ির সবাই যে খুব কষ্ট পেয়েছে।
মানহা ফুপিয়ে কেঁদেই চলেছে থামার কোনো নাম গন্ধ নেয়। বেশি কাঁদার ফলে হেঁচকি ওঠে গেছে। অনেক্ক্ষণ ধরে মা কে জড়িয়ে ধরে রাখে।
নিরা রুমে ঢুকে দেখে অয়ন বিছানায় নেয়।। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ শুনে বুঝতে পারে অয়ন গোসল করছে। সেজন্য বেলকনিতে দাড়ায় অয়নের আসার অপেক্ষা করছে। মিনিট পাচেক পর অয়ন বাইরে আসে। বেলকনিতে কাপড় নাড়ার জন্য আসলে সেখানে নিরাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হাতের কাপড় গুলো চেয়ারে রেখে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। কোমড়ে শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে ওঠে নিরা। বুঝতে পারে মানুষ টা কে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, কি করছো অয়ন। ছাড়ো। তোমার জন্য কফি আনছি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
” উহু। আমি এখন কফি খাবো না।
” খাবে না মানে। তাহলে খাবেটা কি চা করে আনবো?
” চা’ ও খাবো না।
” তাহলে
” আমি অন্য কিছু খাব।
” কি সেটা বলো আমি নিচে গিয়ে করে আনছি বলে ঘুরে তাকায় অয়নের দিকে। তার দিকে কেমন নেশালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
” চুমু খাবো।
” মানে। কিসব বলছো? সাতসকালে ছাইপাঁশ খেয়ে আসছো না– বাকিটুকু আর বলতে পারলো না তার আগেই অয়ন নিজের ঠোঁট দ্বারা নিরার ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়। এভাবে কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ছেড়ে দেয় অয়ন। দুজনেই হাঁপাতে থাকে। নিরা লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখে। নিরার চোখে মুখে লাজুক ভাব। অয়ন নিরাকে লজ্জা পেতে দেখে বলে,
” বউ। ঘোর লাগা কন্ঠ। নিরা আড়চোখে অয়নের দিকে তাকায়। দেখে অয়ন তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
“অয়ন ফের বলে, বউ তোমার লজ্জা ভাঙেনি। বিয়ের প্রায় মাস হতে চললো এখনো যদি লজ্জা না ভাঙে তাহলে কি লজ্জা ভাঙার ব্যবস্থা করবো দুষ্টু হেসে বলে।
” অয়ন কিছু বুঝে উঠার আগেই নিরা এক দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। হঠাৎ এমন হওয়ায় কিছু বুঝে উঠতে পারে না। যখন বুঝতে পারে তখন হেসে ওঠে অয়ন আর বলে,
” বউ আমার লজ্জা পেয়েছে।
নিরাকে দৌড়ে যেতে দেখে তানশি অবাক হয়। ভাবে ভাবির আবার কি হলো এভাবে দৌড়াচ্ছে কেন? পাগলটাগল হয়ে গেলো নাকি। তানশিকে এভাবে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিরাজ এগিয়ে আসে। মাথা গাট্টি দিয়ে বলে,
” কি রে তানু বিবি। তোর আবার কি হলো এমন বেক্কলের মতো ওদিকে চেয়ে আছোস ক্যান?
” মিরাজের বাচ্চা নাম ঠিক করে বল। নট মি তানু বিবি। কল মি তানশি। ওকেহ।
” এ্যা আসছে তানু বিবি। তাকে নাকি তানশি বলতে হবে মুখ ভাঙিয়ে বলে মিরাজ।
” তানশি রেগে বোম হয়ে যায়। অগ্নি দৃষ্টিতে মিরাজের দিকে তাকায়। মিরাজ ভয় পাওয়ার ভান করে বলে, ওরে বাবা গো। আমি তো ভয় পাইছি। ওমন করে তাকাস ক্যান?
মিরাজ আর তানশির সাপে নেউলের সম্পর্ক। তারা সমবয়সী হওয়ায় সম্পর্কটা অন্য রকম।
” তানশি রেগে এক ঘা দিয়ে বসে মিরাজের বুকে। মিরাজ আাা করে বলে মারিস ক্যান বইন। ব্যথা লাগে তো ইনোসেন্ট ফেস করে।
” রাখ তোর ব্যথা। বল আমাকে কখনও ওই নামে ডাকবি। বল নইলে আরও দেব কিন্তু।
” হ্যাঁ ডাকবো তো। বলার সাথে সাথে ধুরুম ধুরুম করে কিল ঘুষি কারতে থাকে৷ তানশির হঠাৎ আক্রমণে ভড়কে যায় মিরাজ।
মানহা উপরে আসার সময় দুজনকে এভাবে ঝগড়া করতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
” এই তোরা কি শুরু করছিস। এভাবে ঝগড়া করছিস কেন? কি হয়েছে?
” তানশি কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে, আপু তুমি তোমার ভাইকে ভালো হয়ে যেতে বলো।
” কেন? কি করছে ও।
” আপু তুমি তানু বিবি কে ভালো হতে বলো কিন্তু।
” মিরাজের বাচ্চা তোকে তো আমি দাঁতে দাঁত চেপে চিল্লিয়ে বলে।
“তানশি ফের মানহা কে বলে আপু জানো তোমার ভাই আমাকে কি বলে ডাকছে।
” কি?
” তানু বিবি।
” মানহা হো হো করে হেসে ওঠে।
” আপু তুমিও হাসছো। তুমিই বলো মিরাজ ভাই কি কাজটা ঠিক করছে।
” মানহা হাসি থামিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে মোটেও না। মিরাজ অন্যয় করছে। আমার বোনের সুন্দর নাম থাকতে সে কেন এই নামে ডাকবে।
” তাহলে তাকে শাস্তি দাও।
” এ্যা কি বলিস শাস্তি।
” হ্যাঁ আপু শাস্তি। মানহা থতমত খেয়ে যায় এবার কি করবে সে। কি এক ঝামেলায় পরলো সে।মিরাজ তো রেগেমেগে ফায়ার। তার আপু তানু বিবির কথায় সায় কেন দিচ্ছে।
মানহা অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে দুজনকে দুদিকে পাঠায়। দুজনে চুপচাপ চলে গেলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। যাক বাবা বাঁচা গেলো। আনমনে হেসে ওঠে বলে, দুইটাই পাগল । এক জায়গায় হলেই শুধু ঝগড়া আর ঝগড়া।
চলবে ইনশা আল্লাহ
[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]