গোধূলির শেষ প্রণয় পর্ব-১২

0
6

#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_১২

এই যে আমার স্বপ্নে দেখা প্রেয়সী……
আপনি যে আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে দেননা।
কখনো যদি আপনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে আমার দুটি চোখ, তখন কি করবেন শুনি??
তখন কি ম্লান হবে না আপনার ঠোঁট, কবিতার শোকে?
যদি আপনার নীল শাড়ি রং ভুলে যায়, সুগন্ধি চুল তার সুবাস হারায়। যদি মনে হয় বরফের নদী, মৃত্যুর বিষাদে ব্যাকুল।
আমি হারিয়ে গেলে জোছনা রাতে আপনার অস্তিত্ব কে খুজবে, শুনি?
কবিতার খাতা যদি ফাঁকা থাকে, ফাঁকা থাকে মন, আমি ছাড়া আপনি, আপনার কাজল চোখ, বাঁচবে কতক্ষণ?
এবার ফিরান তবে, আমাকে হে প্রেয়সী,
আমাতেই বেঁচে আছেন আপনি,
আমাতেই আপনার বাড়ি।
তবে আমি চাই,, কবিতার আবার পুনর্জন্ম হোক,
শহরের বুকে জাগুক আবার,
একজোড়া মায়াবতী নদী….!!!

আকাশের দিকে তাকিয়ে কবিতাটা বলে থেমে যায় আবরার। আকাশের পানে এক ধ্যানে চেয়ে থাকে। বিরতিহীন চেয়ে থাকে। চুল গুলো উসকো খুশকো। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। কয়েকদিন ঠিক ভাবে ঘুম হয় না তার। সব কিছু এলোমেলো লাগছে। নিজেকে শূন্য শূন্য লাগছে। সে একটা ডিসিশন নিয়েছে। এবার সে মানহা কে নিজের ভিতরে লুকিয়ে রাখা অনুভূতির কথা বলে দেবে। আর কত দিন গোপন করে রাখবে। অন্য কেউ মানহার জীবনে আসার আগেই সে নিজের করে নেবে। মানহা কে সে হারাতে পারবে না। খুব ভালোবেসে ফেলছে। এই কয়েকদিনে খুব করে বুঝতে পারছে মানহা কে ছাড়া তার চলবে না। আর অপেক্ষা করতে পারবে না সে। কালই তার মনের কথা গুলো বলে দেবে। এটাই সবচেয়ে ভালো হবে।

আচ্ছা মানহা কি মেনে নেবে? নাকি রিজেক্ট করে দেবে? কোনটা? আমি কি দেখতে খারাপ নাকি যে আমাকে রিজেক্ট করবে? আমার জন্য কতশত নেয়ে পাগল আর আমি কিনা ভয় পাচ্ছি? যাহ! এটা লোকে শুনলে কি বলবে? আর আমার প্রস্তাপ মেনে নাও নেয় তাহলে অন্য পথ দেখব কিন্তু হারাতে পারবো না আপনাকে। যেকোনো মূল্যে আপনাকে আমার চায় মিস মানহা খান। আপনার এ্যাটিটিউট কথা বার্তার ধরণ চাল চলন সবটা আমার মন কেড়ে নিছে।আপনার আত্মসম্মান বোধ টা অনেক প্রখর যেটা আমার অনেক বেশি ভালো লাগেছে।

___________

রাত গভীর হচ্ছে। ঢাকা শহরটা এমন একটা শহর যেখানে সারাটা রাত মানুষ ছুটে চলে। সারাদিনের ক্লান্তি দুর করে রাতের এক প্রহর ঘুমায়। আবার কিছু কিছু মানুষ যারা সারাটা রাত জেগে থেকে কাজ করে যায়। রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রাস্তায় ছুটে চলা যানবাহন দেখতে ব্যস্ত মানহা। সবাই সবার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে রাস্তা দিয়ে কয়েকজন মানুষ হেঁটে চলছে। আবার কতজন তাদের প্রিয় মানুষ নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে। মানহা তাচ্ছিল্য হেসে বলে,

হায় রে মানুষ! জীবনের জন্য কি না করিস। আবার দিনশেষে কাউকে ঠকাতে ভুলিস না রে। এমন কেন করিস।

রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। খুব ঘুম পাচ্ছে মানহার। অনেক রাত হয়েছে এবার ঘুমাতে হবে। কালকে একটু মার্কেটে যেতে হবে কিছু কেনাকাটা আছে।

এখন থেকে তাকে এই শহরেই থাকতে হবে। এখান থেকে যাবে না আর। পরিবারের সবার সাথে বাকিটা জীবন পার করবে। বাবা মা কে নিয়ে বাঁচবে। নিজেকে আর লুকিয়ে রাখবে না। কেউ কিছু বলতে আসলে কাউকে ছাড় দেবে না। সব কটাকে উচিত জবাব দেবে।

_______

ভোর পাঁচটায় ঘুম ভেঙে যায় আবরারের । বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে ফজরের নামাজ পরে। রেডি হয়ে নিচে নামে। অনেক দিন হলো তার জিম করা হয় না। কাজের ব্যস্ততার কারণে জিম করতে যাওয়া হয় না। আগে সময় পেলেই যেতো। আজ যেহেতু দিনটা তার ভালো। ফজরের নামাজ পরে মনে অনেক শান্তি লাগছে তার। তাই ভাবলো হাতে এখনও ঢের সময় আছে বাইরের ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস, চারপাশ টা হালকা কুয়াশায় ঢাকা সব মিলিয়ে পরিবেশ টা উপভোগ করতে চায়৷ তাই জন্য বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় যায়। দেখে অনেক মানুষই আছে। আবরার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে।

আটটায় বাসায় ফেরে আবরার। গা থেকে টপ টপ করে ঘাম ঝরছে। বাসায় ঢুকেই সোফায় গিয়ে বসে পরে। পা থেকে জুতা আর মুজা খুলে ফেলে। মা কে ডেকে এক গ্লাস পানি দিতে বলে।

হালিমা বেগম ছেলের ডাক শুনেই পানি নিয়ে ছুটে আসেন ছেলের কাছে। আবরার মুচকি হেসে মায়ের কাছ থেকে গ্লাস টা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে শেষ করে ফেলে। হালিমা বেগম আঁচল দিয়ে ছেলের মুখ মুছাতে মুছাতে বলেন,,

” তেজ উপরি গিয়ে গোসল করে নিচে আয় বাবা। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা হয়ে গেছে তোর। গোসল করলে ভালো লাগবে। বাসার সবাই তেজ বলেই ডাকে। আবার অফিসের সবাই ও তেজ স্যার বলে।

” আবরার মুচকি হেসে আচ্ছা বলে দোতলায় হাঁটা ধরে। মা ঠিক বলছে এখন গোসল করলে ভালো লাগবে আর নয়টায় তার অফিস আছে। তাকে বের হতে হবে।

খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে আবরার দের পরিবারের সবাই। তখন আনোয়ার হোসেন আবরার কে বলে,,

” তেজ বয়স তো কম হচ্ছে না। আর কত অপেক্ষা করাবে। কবে দাদা দাদি ডাকটা শুনতে পাবো। এবার বিয়েটা তো করো।

” বাবার কথায় গলায় খাবার আটকে যায় আবরারের। হালিমা বেগম তাড়াতাড়ি পানি দেন ছেলেটা। আর স্বামী কে বকেন। বলার আর সময় পাও না।

” আবরার খাওয়া বাদ দিয়ে কিছুক্ষণ দম মেরে বসে থেকে বাবার কথার উত্তর দেয় বাবা আমি সোজাসাপটা কথা বলতে পছন্দ করি সেটা তোমরা সবাই জানো। আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি।

খাবার টেবিলের সবাই অনেক অবাক হয় কিন্তু কিছু বলে না। আবরার একটা মেয়েকে পছন্দ করে এটা তো খুব ভালো কথা। আনোয়ার হোসেন খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করেন,

” মেয়েটা কে? কোথায় থাকে? তার ঠিকানা দে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে আসি।কি বলো বাবা তুমি। আনোয়ার হোসেন তার বাবাকে জিজ্ঞেস করেন।

” হ্যাঁ।
” বাবা একটা সমস্যা আছে।
” কি সমস্যা অবাক হয়ে বলেন।

” বাবা মেয়েটাকে আমি পছন্দ করলেও মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে কি না সেটা জানি না।

” আমার ছেলেকে কোনো মেয়ে পছন্দ করবে না এটা হতে পারে না । আমি শিউর মেয়েটাও তোকে পছন্দ করবে বেটা।

” তাই যেন হয়।
” তাড়াতাড়ি করে মনের কথা টা বলে দে বেটা।

“আচ্ছা আমি তাহলে আসি। অফিসে যেতে হবে। বলে খাবার টেবিল ছেড়ে অফিসের উদ্দেশ্য রওনা হয়।

” সাবধানে যাস বাবা হালিমা বেগম চেচিয়ে বলে ওঠেন।

” আচ্ছা মা,,

ডিয়ার প্রেয়সী আজ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে অন্য রকম একটা দিন। যে দিন টা আপনি কখনও চাইলেও ভুলতে পারবেন না বলে মুচকি হাসে আবরার।

চলবে ইনশা আল্লাহ

[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]