#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_১৭
তুই আয়না রে কাছে আয়না রে প্রাণ তো আর হায় সয় না রে বলবো কথা কানে কানে একি পথে চলনা রে,
আবরার অফিসে আসছে ধরে চুপ করে তার ডেস্কে বসে আছে। তার পাশে ইশান ঘাপটি মেরে বসে আছে। আবরার কে পরোক্ষ করছে। তার স্যারের কিছু একটা হয়েছে। স্যার কে এমন আগে কখনো দেখেনি। চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। চুল গুলো এলোমেলো। কিছু যে জিজ্ঞেস করবে সেটাও পারছে না ভয়ে। আবরার একটা কলম হাতে নিয়ে ঝিম ধরে আছে। সে অনেক কিছু ভাবছে। তার মনের ভিতর হাজারো কথা ঘুরাঘুরি করছে। আবরার
হুট করে বলে ওঠে,,
” ইশান কয়টা বাজে?
” হঠাৎ করে কথা বলায় চমকে ওঠে ইশান। তাড়াতাড়ি করে উত্তর দেয় স্যার দুপুর দুইটা। কেন স্যার? কিছু কি হয়েছে? স্যার আপনি কি ঠিক আছেন? আমার মনে হচ্ছে আপনি ঠিক নেয়। অনেকটা সাহস জুগিয়ে বলে।
” ইশান আমাকে একটা কথা বলবে।
” জ্বি স্যার বলেন।
“ভালোবাসা কি?
” কিহহহ,,
” কানে কম শোনো নাকি। কি বলছি শুনতে পাও নি।
” না মানে স্যার আমি কি ঠিক শুনছি। আবরার তেজ ভালোবাসার কথা জিজ্ঞেস করছে।
” আবরার চোখ গরম করে তাকায়। ইশান ভয়ে চুপসে যায়।
” সরি স্যার।
” যেটা বলছি সেটা বলোো হারি আপ?
” স্যার ভালোবাসা মানে তাকে মনের গভীরে গেথে ফেলা, তার মনেও ভালোবাসার বীজ রোপণ করা। তাকে পাবে না জেনেও ভালোবেসে অপেক্ষা করা। ভালোবাসা মানে তাকে ভালোবাসার পর আর কাউরে ভালোবাসার ইচ্ছে টা মরে যাওয়া।
ভালোবাসা মানে একে অপরের পাশে থাকা। সকল বিপদে আপদে দুজন দুজনকে সাপোর্ট করা। ভালোবাসা মানে সারাজীবন তাকে ভালোবেসে আগলে রাখা। কখনো কখনো তাকে ছাড়া এক মুহূর্ত ভালো লাগে না। চোখ বুজলে যার ছবি চোখের পাতায় ভেসে ওঠা। তাকে পাবার এক তীব্র বাসনা।
আবরার খুব মনোযোগ দিয়ে শোনে। কথা গুলো তার হৃদয় ছুয়ে গেছে।
দুপুর হতে চললো মানহা এখনো রুম থেকে বের হয়নি। কাল রাত থেকে তার কিছু ভালো লাগছে না। সব কিছু ফাঁকাফাঁকা লাগছে। মনে হচ্ছে তার খুব কাছের কেউ তার থেকে দুরে সরে গেছে। চোখ বুজলেই আবরারের চেহারা ভেসে উঠছে। বিছানায় শুয়ে কপালে হাত দিয়ে আছে। সকালেও কিছু খায়নি। দুপুরেও কিছু খায়নি।। তার খেতে ইচ্ছে করছে না। সবাই কে বলছে তার শরীরটা ভালো লাগছে না। মাথা ব্যথা করছে কেউ যেন তাকে ডিস্টার্ব না করে। তানিয়া বেগম মেয়ের শরীর ভালো না বলে জোর করেন নি।
নিরা সবটা খেয়াল করছে। কাল রাতেও ঠিক ছিলো হঠাৎ করে কি হলো,? অনেকটা ভাবায় তাকে। তাই তো সব কাজ সেরে রুমে চলে আসে। অয়ন শো রুমে গেছে। রুমে এসে দরজা বন্ধ করে বেলকনিতে চলে যায়। দ্রুত ভাই কে কল করে।
দুইবার রিং হতেই কল রিসিভ করে আবরার।রিসিভ হওয়ার সাথে সাথে বলে,,
” ভাইয়া কালকে মানহা আপুর সাথে তোমার কি হয়েছে?
” আবরার অবাক হয়ে বলে, কেন কি হয়েছে? আমি আবার কি করলাম।
” আপু আজ সারাটা দিন খায়নি। ঘর থেকে পর্যন্ত বের হয়নি। চোখ দুটো অনেক লাল হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে খুব কান্না করছে।
” আবরার অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে মানহা এখন কোথায়? তোরা জোর করে খাওয়াতে পারিস নি। সব কি বলে দিতে হয়। এখনই ওকে ভাত খাওয়াবি। নইলে অসুস্থ হয়ে পরবে।
” ভাইয়ের অস্থিরতা দেখে মুচকি হাসে। অতঃপর বলে, আচ্ছা ঠিক আছে বিষয়টা আমি দেখছি। বাট তুমি আগে বলো কাল কি এমন হয়েছে যার জন্য আপু এত আপসেট।
কাল রাতের সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। নিরা সব কিছু শুনে আশ্চর্য হয়ে যায়। কাল এত কিছু হয়ে গেলো আর সে কিচ্ছু টের পায় নি। আবার একটা কথা ভেবে ভালো লাগছে। তার ভাইকে ওই ভাবে বলে আপু খুব কষ্ট পেয়েছে। নিরা দুষ্টু হেসে বলে,,
” ভাইয়া আমি একটা বিষয় খেয়াল করছি?
” কি?
” আপুর মনে তোমার জন্য একটু হলেও ভালোবাসা আছে। তা না হলে আপু কাঁদবে কেন? তুমিই বলো তোমাকে ওই ভাবে বলে আপু নিজেও কষ্টে আছে।
” সত্যি বলছিস বোন৷
” হ্যা৷ এখন রাখি ভাইয়া পরে কথা বলব।
” আচ্ছা। ভালো থাকিস। আল্লাহ হাফেজ।
” আল্লাহ হাফেজ।
ফোন কেটে দিয়ে মুচকি মুচকি হাসে আবরার। মাথা চুলকে বিড়বিড় করে বলে, বনবিড়াল আমার জন্য আপনার মনে একটু একটু করে ভালোবাসা তৈরি হচ্ছে। খুব শীঘ্রই আপনি আমাকে বলবেন, আবরার আই নিড ইউ। আপনাকে আমার খুব প্রয়োজন।
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
”
‘
‘
দেখতে দেখতে সময় পেড়িয়ে যাচ্ছে। দিন থেকে রাত, রাত থেকে দিন। এভাবেই দুইটা দিন পার হয়ে গেছে। আজকের আবহাওয়া টা খুব সুন্দর। তাই সবাই মিলে ঠিক করছে ঘুরতে যাবে। তাই নিয়মমাফিক সবাই রেডি হচ্ছে। মানহা নিরা তানশি অয়ন মিরাজ তাসকিন আর আবরার আসবে এটা মানহা জানে না। মূলত মানহা কে কেউ বলেনি। আবরার বলতে নিষেধ করছে। ভাইয়ের কথা মতো নিরা সবাইকে নিষেধ করে দিছে। অয়নরা মানে তারা কয় ভাই বোনে জানে আবরার মানহা কে পছন্দ করে। সবাই জানলে না জানার ভান করে মানহার সামনে। নিরা যখন অয়ন কে সবটা বলে তখন অয়ন খুব অবাক হয়। পরমুহূর্তেই অনেক ভালো লাগা কাজ করে। তার বোনটার দুঃখের দিন শেষ হয়ে সুখের দিন আসবে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। আবরার ভাই খুব ভালো মনের মানুষ কিন্তু তার পরিবারের সবাই মানবে তো। এটাই ভাবে শুধু।
বাড়ির গাড়িতে করে যাবে। অল্প একটু পথ। ছয়জনে বসে পরে গাড়ির সিটে। জানালার পাশের সিটে বসতে খুব পছন্দ করে মানহা। তাই তো তাকে সেখানে বসতে দেওয়া হয়েছে। গাড়ির ভিতর স্লো মিউজিক বাজছে। অয়ন নিজে সিলেক্ট করে একটা গান প্লে করে। দেখতে দেখতে পৌঁছে যায় নির্ধারিত গন্তব্যে।
গাড়ি থেকে নেমে পার্কের ভিতর গিয়ে একটা টেবিলে বসে। এই জায়গা অসম্ভব রকমের সুন্দর। যে কোনো মানুষেরই পছন্দ হওয়া মতো জায়গা। একটা টেবিলে ছয়টা চেয়ার থাকলেও সেখানে আরও দুটো চেয়ার দিতে বলে। মানহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,,
” দুটো চেয়ার কেন দিতে হবে? আমরা তো ছয়জন?
” অয়ন সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিজেকে বলতে হবে এটা ঢের বুঝতে পারে অয়ন।
” কি ব্যাপার তোমরা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছো কেন?
” আসলে বোন আরও দুইটা লোক আসবে তাই আর কি।
” কারা ভাইয়া?
” আসলেই দেখতে পাবে আপু নিরা কথা ঘুরানো জন্য ফট করে বলে ফেলে।
মিনিট দশেকের মধ্যে দুজন ছেলে মেয়ে আসে পার্কে। তারা অয়নদের টেবিলের দিকে এগিয়ে আসছে। মানহা মাথা নিচু করে ফোন স্কল করতে করতে সবাই উদ্দেশ্য বলে,,
” আর কতক্ষণ বসে থাকবো কিছু তো অর্ডার করো ভাইয়া বলে মাথা সিধা করে তাকায়। কিন্তু সামনে তাকিয়ে আশ্চর্য হয়ে যায়।
তাদের দিকে এগিয়ে আসছে আবরার আর তার সাথে একটা মেয়ে। মেয়েটা আবরারের এক হাত জড়িয়ে আছে। দৃশ্য টা দেখে মানহার চোখ ছলছল করে ওঠে। সে কি ভুল দেখছে। সত্যি কি ওটা আবরার। সে স্বপ্ন দেখছে নাতো।
হঠাৎ মানহা কে থেমে যেতে দেখে সবার দৃষ্টি মানহা তে পরে। মানহার দৃষ্টি অনুসরণ করে সবাই সেদিকে তাকায়। টেবিলে থাকা সবাই হতভম্ব হয়ে যায়।
আবরার এগিয়ে এসে বলে,,
” হেই গাইস আমার কি লেইট হয়ে গেছে নাই? আসলে নিসা’র জন্য দেড়ি হয়ে গেছে।
মানহা এখনো এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। আবরার আড়চোখে সবটা খেয়াল করে। মানহার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে তার খুব মজা লাগছে সাথে খারাপ ও লাগছে।
” অয়ন সৌজন্য মুলক হেসে বলে,ভাইয়া প্লিজ বসুন।
আবরার আর নিসা নামের মেয়েটা বসে। অয়ন ওয়েটার কে ডেকে খাবার অর্ডার দেয়। হঠাৎ করে নিরার কথায় চমকে ওঠে মানহা।
” গাইস তোমাদের সবাইকে একটা কথা বলতে ভুলে গেছিলাম। তার জন্য সরি। সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেই, নিসা হচ্ছে ভাইয়ার উডবি। কিছুদিন আগে পরিবারের সবাই মিলে ঠিক করছে তাদের বিয়ে। আর কিছু দিন পরেই বিয়েটা হবে।
টেবিলে বসা সবাই একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। মানহা আবরারের দিকে তাকায়। দুজনের চোখে চোখ পরে যায়। মানহা দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নেয়।
খাবার পাট চুকিয়ে সবাই উঠে বসে। সবাই যে যার মতো পরিবেশ টা উপভোগ করতে ব্যস্ত। শুধু মানহা আর আবরার দুজনে টেবিলে বসে আছে।
‘
‘
‘
দুজনে নিশ্চুপ হয়ে থাকে। নিরবতা ভেঙে মানহা আবরার কে উদ্দেশ্য তাচ্ছিল্য হেসে বলে,,
” পুরুষেরা এমনই। তারা কখনো এক নারীতে আসক্ত হতে পারে না। দুদিন আগে যার জন্য হাজারও পাগলামি করে। তার ঠিক দুদিন পরেই অন্য নারী কে বিয়ে করে নেয় বলে আবরারকে বলার সুযোগ না দিয়ে
চেয়ার থেকে উঠে চলে যায়।
আবরার কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। মুচকি হেসে তার বনবিড়ালের পানে চেয়ে থাকে।
চলবে ইনশা আল্লাহ
#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_১৮
আজ তানশি আর তাসকিন আমেরিকা ব্যাক করবে। সকাল থেকে এই নিয়ে খুব মন খারাপ তার। মানহা কে জড়িয়ে ধরে খুব কান্না করছে। আমেরিকা যেতে ইচ্ছে করছে না তার। যদি কোনো মিরাক্কেল হয়ে যেতো তাহলে খুব ভালো হতো। তাসকিনের ভার্সিটির পরীক্ষা কয়েকদিন পর সেজন্য এখানে থাকা পসিবল নয়। ভাইয়ের জন্য তাকে চলে যেতে হবে। এই একটা মাসে কত আনন্দ উল্লাস করছে। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সেগুলো ভুলতে পারছে না। সকাল থেকে খান ভিলায় খুব রান্না বান্না হচ্ছে। ইয়াসমিন বেগম আর তানিয়া বেগম মিলে রান্না করছেন। নিরা হাতে হাতে এগিয়ে দিচ্ছে। সন্ধ্যায় ফ্লাইট তানশিদের। দুপুরে নিরার বাবার বাড়ি থেকে সবাই আসবে। তাদের কে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। মিলন খান নিজে দাওয়াত দিছেন স্বপরিবারে আাসার জন্য । আনোয়ার হোসেন কথা দিয়েছেন আসবেন।
__________________
দুপুর দুইটা নাগাদ আসেন আনোয়ার হোসেন তার বাবা স্ত্রী ছেলে। কলিংবেলের শব্দ পেয়ে দরজা খুলে দেয় নিরা। হাসি মুখে সবাই কে ভিতরে আসতে বলে। তারা ভিতরে এসে সোফায় বসেন। মিষ্টি সামগ্রী নিরার কাছে দেন৷ নিরা সেগুলো শাশুড়ীর কাছে দেয়।
মিলন খান আর মিনহাজ খান দুজনে এসে হাসি মুখে কথা বলেন। সোফায় বসে খোশমেজাজে গল্প শুরু করেন। আবরার চুপ করে বসে আছে। বড়দের মাঝে অস্বস্তি হয় তার সেজন্য বলে,,
” আঙ্কেল আপনারা কথা বলুন আমি একটু আসছি বলে উঠে চলে যায়।
মানহা আর নিরা দুজনে নাস্তা দেয় সবাইকে। মানহা ভদ্রতার খাতিরে সবার সাথে কথা বলে। হালিমা বেগম মানহা কে নিজের পাশে বসান। মানহা কে তার খুব ভালো লাগে। মেয়েটা চুপচাপ স্বভাবের। নম্র ভাবে কথা বলে। সবাইকে সম্মান করে।
হালিমা বেগম মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে,,
” মানহা মা কেমন আছো তুমি?
” জ্বি আন্টি, আলহামদুলিল্লাহ আপনি কেমন আছেন?
” এই তো মা ভালো আছি। তো এখন কি করবে পড়াশোনা তো শেষ নাকি।
” জ্বি আন্টি। এখনো তেমন কিছু ভাবিনি। দেখা যাক কি করা যায়।
” ওহ আচ্ছা। তা না হয় করলে মা কিন্তু,
মা তুমি কি শুরু করলে বলো তো আগে খেয়ে নাও। লান্সের সময় হয়ে গেছে। নিরার কথা শুনে বলতে গিয়ে থেমে যায় মেয়ের কথা শুনে। নিরা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। তার মা কি না কি বলে ফেলতো তার ঠিক নেয়। আবরার এক টুকরা আপেল খেতে খেতে উঠে যায়। এখানে না থাকায় বেটার মনে হয়।
দুপুরের খাবার শেষ করে বড়রা ড্রয়িংরুমে বসে আর ছোট রা বাড়ির ছাদে চলে যায়। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা তার পরেই উড়াল দেবে অচিন দেশে।
নিরার বাবা মা দাদু চলে গেছেন শুধু থেকে গেছে আবরার। তাকে যেতে দেয় নি নিরা। সন্ধ্যার ছয়টা ব্যাগ গুছিয়ে রেডি হয়ে নেয় তাসকিন আর তানশি। একে একে সবার থেকে বিদায় নেয়। সবার লাস্টে আসে মানহার কাছে। তানশি মানহা কে ঝাপটে ধরে কান্না করে দেয়। ছোট বোনের কান্না দেখে মানহা নিজেও কান্না করে দেয়। এত দিন যাদের সাথে ছিলো তারা সবাই আজ অনেক দুরে চলে যাবে। দুইটা বছর বড়ো বোনের আদর দিয়ে তানশি কে আগলে রেখেছিল। ডিপ্রেশন থেকে বেরোতে তার মাস দুয়েক লাগছিল। তার ফুপি ফুপা ভাই বোনেরা তাকে খুব সাপোর্ট করতো। মানহা কে কান্না করতে দেখে নিরা বললো,,
” আপু তুমিও তানশির মতো বাচ্চামো করছো কেন? ওকে শান্তনা না দিয়ে তুমি কাঁদো তাহলে ও তো ভেঙে পড়বে।
মানহা চোখের পানি মুছে হেঁসে হেসে বলে,,
” বোন আমার প্লিজ কান্না করিস না। আমি কয়েকদিন পরেই যাবো। গিয়ে তোকে দেখে আসবো।
” কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, তুমি সত্যি বলছো আপু।
” হ্যা রে পাগলী। আমি সত্যি যাব। আর তাসকিন তানশি কে দেখে শুনে নিয়ে যাবি। আমার বোনটার যেন কিছু না হয়।
” হ্যা আপু নিবো। এবার চলোতো দেড়ি হয়ে যাবে আমাদের।
” হ্যা চল।
মানহা তানশি অয়ন মিরাজ আর আবরার যাবে এয়ারপোর্টে। গাড়িতে বসে একটা কথাও বলেনি তানশি। আবরার শুধু লক্ষ্য করে এদের ভাই বোনের বন্ডিং। তাদের ভাই বোন গুলো এমন হলেও পারতো। মিনিট বিশেকের মধ্যে এয়ারপোর্টে পৌঁছে যায় সবাই। সাতটার সময় প্লেন উড়াল দেবে।
তানশি মিরাজের সাথে কোনো কথা বলেনি। এয়ারপোর্টের ভিতরে প্রবেশ করার সময় শুধু বলে,,
” তানু বিবি সাবধানে যাস। গিয়ে একটা ফোন করিস। মাথা নেড়ে হ্যা বলে। অন্য সময় হলে ঝগড়া বেধে যেতো মিরাজের সাথে কিন্তু এখন কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। প্রিয়মানুষ গুলোকে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হয় সেটা আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কথা গুলো গলায় আটকে যাচ্ছে। সবার চোখের সামনে দিয়ে চলে যায় তানশি তাসকিন।
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় ফিরে আসে সকলে। রাত গভির হচ্ছে। কেউ কেউ ঘুমিয়ে গেছে তো কেউ জেগে আছে। মানহার ঘুম আসছে না আজ। তাই ছাদে যায় গিয়ে দেখে সেখানে আগে থেকেই মিরাজ দোলনায় বসে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে । ভাই কে দেখে তার পাশে গিয়ে বসে জিজ্ঞেস করে,,
” মিরাজ ঘুমাসনি কেন? বারোটা বাজে। এত রাত পর্যন্ত জেগে থাকলে শরীর খারাপ করবে তো?
মিরাজ মানহার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। ভাইয়ের এমন কাজে আশ্চর্য হয়ে যায়। মিরাজ তো কখনো এমন চুপ করে থাকে না তাহলে কি হয়েছে ওর। নিজের ভিতরে জমা কথা গুলো দমিয়ে রাখে। অন্য প্রসঙ্গ তুলে বলে,
” তানশিদের জন্য মন খারাপ তোর ।
” (…) নিশ্চুপ মিরাজ।
” আপু কে না বললে আপু জানবে কি ভাবে বল?
ছাদের মৃদু আলোয় মিরাজের মুখ টা দেখে আতকে ওঠে মানহা। তার ভাই কে এমন দেখাচ্ছে কেন? অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,
” মিরাজ তুই কি তানশি কে পছন্দ করিস ভাই।
” এবার উঠে বসে মিরাজ। কিছুক্ষণ দম নিয়ে বলে,জানি না আপু। কিন্তু আমার খুব কষ্ট হচ্ছে জানো। বারবার শুধু তানশির হাসি মুখ টা ভেসে উঠছে। তানশির সাথে করা দুষ্টামি গুলো সবটা অনেক বেশি মনে পরছে আপু। বুকের বা পাশটায় চিনচিন করে ব্যথা করছে। এমন কেন হচ্ছে আপু?
মানহা আগেই এমন কিছু আন্দাজ করতে পারছিল। মিরাজ তানশি কে পছন্দ করে। আবার তানশি যাওয়ার সময় অনেক ভেঙে পড়ছিল৷ মনে মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। সব কিছু পিছনে ফেলে বলে,,
” আচ্ছা বুঝছি। রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
” তুমি ঘুমাবে না আপু।
” তুই যা আমি একটু পর যাচ্ছি।
মিরাজ ছাদ থেকে নেমে যায়। মানহা উঠে গিয়ে ছাদের রেলিং ধরে দাড়ায়। জোছনা রাত হওয়ার সব কিছু দিনের আলোর মতো পরিষ্কার লাগছে৷
আকাশে তারা রা মিটিমিটি করে জ্বলছে মনে হচ্ছে তারা হাসছে।
আবরারের ঘুম না আসায় ছাদে আসছিল। এসে ভাইবোনের সুন্দর এক দৃশ্য দেখলো তাতে মনটা ভরে গেছে। মিরাজ ছাদ থেকে নেমে গেলে সে হেটে মানহার পাশে দাড়ায়। পাশে কারোর অস্তিত্ব পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে আবরার কে দেখে অবাক হয়। এই সময়ে এখানে তাকে আসা করেনি।
চলবে ইনশা আল্লাহ
আজকের পর্ব টা অনেকটা অগোছালো হয়ে গেছে। আমার ফ্রেন্ডরা আসছিল তাই গল্প দিতে দেড়ি হয়ে গেছে।
[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]