#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_২৯
আজ বিয়ের দুই দিন। আবরার আর মানহা খান বাড়িতে যাবে। আবরার প্রথম বার শশুর বাড়িতে যাবে সেজন্য নিজের রুমে রেডি হচ্ছে। কালো প্যান্ট কালো শার্ট তার উপরে কালো কোর্ট পড়েছে। ফর্সা গায়ে কালো রঙে ভালো মানিয়েছে। দেখতে মাশাআল্লাহ অনেক সুদর্শন লাগছে আবরার কে। মানহা খাটের উপর বসে এক ধ্যানে আবরার কে দেখছে। আয়নায় সবটা দেখছে আবরার আর মিটিমিটি হাসছে।
মানহা আবরারের সাথে ম্যাচিং করে কালো রঙের জামদানী শাড়ি পড়ছে। মাথায় হিজাব। সিম্পল সাজ এতেই পারফেক্ট। আবরার মানহা’র সামনে এসে দাঁড়ায়। নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলে,
” তোমার বর কে কি আজ একটু বেশিই সুদর্শন লাগছে হ্যাঁ।
আবরারের কথায় লজ্জায় অন্য দিকে তাকায়। মুখে তার লাজুকতার হাসি। মুখে হাত দিয়ে আছে। আবরার আবারও বলে,
” কি ব্যাপার। আমার বউটা কি লজ্জা পাচ্ছে উহু।
” ধুর কি যে বলেন আপনি। একটু চুপ করবেন প্লিজ।
” আচ্ছা তা না হয় করলাম চুপ। বাট আমার একটা কন্ডিশন আছে।
” কি?
” রাজি আছো কি না বলো? যদি আমার কন্ডিশনে রাজি থাকো তাহলে চুপ করব।
” আচ্ছা আমি রাজি। কি কন্ডিশন বলেন।
“আজ এখন থেকে তুমি আমাকে তুমি করে বলবে বুঝছো ডিয়ার বনবিড়াল। ।
” এ্যাাাা—-
” এ্যাাাা নয় হ্যাঁ।
” কিন্তু।
” কোনো কিন্তু নয়।
” আচ্ছা চেষ্টা করব।
” বলো?
” এখনই।
” হ্যাঁ
মানহা কি বলে বলবে বুঝতে পারছে না। বলতে গিয়ে বার বার থেমে যাচ্ছে। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেছে। এতদিন আপনি করে বলে হঠাৎ তুমি করে বলতে গেলে কি হয়। মানহার ভাবনার মাঝেই বলে,
” কি হলো বলছো না কেন? মানহা আবরারের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আচ্ছা চলো তো দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। নিচে সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আবরার প্লিজ তুমি দ্রুত নিচে আসো বলে দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
আবরার হেঁসে ওঠে মানহা’র কান্ডে। বেচারা লজ্জা পেয়েছে।
‘
‘
‘
‘
‘
‘
”
”
”
”
‘
মিনিট বিশেক হয়েছে তারা খান ভিলায় আসছে। আসার পর থেকে আবরার জামাই আদরে অতিষ্ট হয়ে গেছে। তার সামনে বিভিন্ন ধরনের নাস্তা, মিষ্টি, পিঠা আরও কত কি সব কিছু খেতে হ’য়েছে।
দেখতে দেখতে রাত বাড়তে আছে। খান বাড়ির সবাই এখন বসে আছে ডাইনিং টেবিলে। তানিয়া বেগম আর ইয়াসমিন বেগম খাবার সার্ভ করছেন। আবরার চুপচাপ অল্প অল্প করে মুখে দিচ্ছে। মূলত সে খেতে পারছে না তবুও তাকে দেওয়া হচ্ছে। খেতে খেতে মিরাজ বলে,,
” ছোট আম্মু দুলাভাই কে একটু গোশত দাও তো? একটু বেশি বেশি দিতে পারছো না। তোমাদের বলে দিতে হবে কেন?
মিরাজের কথায় তানিয়া বেগম আরও গোশত দেন আবরারের প্লেটে। আবরার করুন চোখে শাশুড়ির পানে তাকান। সে খেতে পারছে না তাকে কেন দিচ্ছে। কিন্তু তার মুখের ভাষা কেউ বুঝলো না। দুলাভাইয়ের অবস্থা দেখে মিরাজ হেসেই যাচ্ছে। মানহা মুখ টিপে হাসছে। অয়ন জোরে হাসতে পারছে না কারণ আবরার সম্পর্কে তার বড় শালা। মানহা আবরারের পাশেই ছিল। টেবিলের নিচ থেকে মানহা’র পায়ে গুতা দেয় আবরার। মানহা আহ শব্দ করে ওঠে। মানহার শব্দ শুনে সকলে তার দিকে তাকায়। মিনহাজ খান বলেন,
” কি হয়েছে মামনি।
” মানহা হেঁসে উঠে বলে, কিছু না বাবা। জিভে কামড় লেগেছে বলে মনে মনে আল্লাহ কে বলে,
হে আল্লাহ মাফ করে দিও। খাওয়ার সময় মিথ্যা বলতে হলো।
সবাই খাওয়াই মনোযোগ দেয়। মানহা রাগি দৃষ্টিতে আবরারের দিকে তাকায়। মানহার তাকানো দেখে মুচকি হাসে আবরার। আবরারের হাসি দেখে জ্বলে ওঠে মানহা। ফিসফিস করে বলে,
” তুমি হাসছো হ্যাঁ। তোমার জন্য আমাকে মিথ্যা বলতে হলো।
” আগে তুমি আমাকে বাচাও। আমি খেতে পারছি না। তবুও শাশুড়ী আম্মা আমাকে এত গোশত দিল। আমি এখন কি করে খাব।
” বেশ তো শাশুড়ী আম্মা তার মেয়ের জামাই কে আদর যত্ন ভালোবাসা দিয়ে খাওয়াচ্ছে। তুমি বরং তৃপ্তি করে খাও আমি গেলাাম বলে হাত ধুয়ে উঠে যায়। মানহার যাওয়ার পানে করুন চোখে তাকিয়ে থাকে।
ভাইয়ের করুন অবস্থা দেখে নিরার খুব মায়া হয়। বড়দের সামনে কিছু বলতেও পারছে না। কি করে ভাইকে বাচানো যায় তাই ভাবছে। তার কিছু করার আগেই মিনহাজ খান বলেন।
” আবরার বাবা খেতে না পারলে রেখে দাও। কষ্ট করে কিছু খেতে হবে না। শশুরের কথায় অনেক খুশি হয় আবরার। দ্রুত হাত ধুয়ে উঠে পরে। মুচকি হেসে বলে, তাহলে আমি যাই বলে ডাইনিং থেকে চলে আসে।
আবরারের চলে যাওয়া দেখে তানিয়া বেগম বলল, আরে জামাই তো কিছুই খেলো না। তুমি কেন বলতে গেলে হ্যাঁ তোমার জন্য কিছু খেতে পারলো না বলে নিজে নিজে বকতে থাকেন।
*********
রুমে এসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আবরার। বড়ো বাঁচান বেচে গেছে সে। শশুর কে সালাম করতে হয়। ঠিক সময় জামাইয়ের মনের কথা বুঝে ফেলছে। রুমে মানহা কে না দেখে বেলকনিতে যায়। দেখে বেলকনির রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে মানহা। আবরার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বউকে। হঠাৎ কেউ জড়িয়ে ধরায় চমকে ওঠে মানহা। পরক্ষণে বুঝতে পারে জড়িয়ে ধরা লোকটা কে? তাকে স্পর্শ করার মতো একজনই আছে। কোমড়ে শীতল হাতের স্পর্শ পেতেই কেঁপে ওঠে সে। শরীরের লোমকূপ শীর শীর করে খাড়া হয়ে যায়। শরীর জুড়ে কম্পন সৃষ্টি হয়। আবরার ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,
” বউ কাজটা তুমি ভালো করোনি কিন্তু। তার জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।
” মানহা কাপাকাপা কন্ঠে বলে, কি বলছো এসব তুমি। আমি আবার কি করেছি।
” নিচে আমাকে না বাঁচিয়ে চলে আসাটা কি ভালো হয়েছে বলো? কাজটা তুমি মোটেও ভালো করোনি।
” মানহা কোমড় থেকে আবরারের হাতটা সরিয়ে ঘুরে দাড়ায় আবরারের সামনে। দেখে তার দিকে নেশালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মানহা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবরার নিজের ঠোঁট দ্বারা মানহার ঠোঁট আঁকড়ে ধরে। হঠাৎ এমন কিছু হওয়ায় অপ্রস্তুত হয়ে যায় মানহা। আবরার নিজের কাজে ব্যস্ত।তখন পিছন থেকে নিরা বলে,
” আমি কিছু দেখিনি, আমি কিছু দেখিনি বলে নিজের হাত দ্বারা নিজের চোখ ঢেকে নেয়।
হঠাৎ কারোর কথা শুনে ছিটকে দুরে সরে দাঁড়ায় দুজন। মানহা লজ্জায় অন্য দিকে তাকিয়ে হাঁপাতে থাকে । ছি ছি কি লজ্জা। লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যেতে মন চাচ্ছে।
আবরার স্থির হয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি। নিরা চোখ থেকে হাত সরিয়ে ভাইকে বলে,,
” রোমান্স করার আগে দরজাটা বন্ধ করে নিতে পারো না হ্যাঁ।
” কারোর রুমে প্রবেশ করার আগে তার থেকে পারমিশন নিতে হয় সেটা কি তুই জানিস না। তোর জন্য আমার রোমাঞ্চের বারোটা বেজে গেলো। আসার আর সময় পেলি না।
” আমার না হয় খেয়াল নেই। কিন্তু তুমি তো আর ছোট না। মিনিমাম জ্ঞান টুকুও নেই। এই বাসায় এত গুলো মানুষ। যে কেউ যেকোনো সময় চলে আসতে পারে।
” যা হবার হয়ে গেছে। কি বলতে আসছিস বলে বিদায় হু।
” যত দোষ নন্দ ঘোষ”
এখন সব আমার দোষ তাই না। ভাবিমণির কাছে আসছিলাম। ভাবলাম সবাই মিলে একটু আড্ডা দেব। সেজন্য ছাদে বসার জন্য জায়গা করে আসছি। তোমরা দুজন তাড়াতাড়ি ছাদে আসো বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
নিরা চলে যেতেই মানহা আবরারের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
” তোমার জন্য শুধু তোমার জন্য আমাকে লজ্জায় পড়তে হলো। এখন আমি কি করে নিরার সামনে যাব। ধুর কিছু ভাল্লাগে না। বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। বউয়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছু মনে পড়তেই মাথা চুলকে হেঁসে ওঠে।
চলবে ইনশা আল্লাহ
#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৩০
রাতে সবাই মিলে আড্ডা জমিয়েছে ছাঁদে।সময়টা পার করার জন্য খেলা করবে তারা। ছয়জনে গোল হয়ে বসেছে। তারা ট্রুথ ওর ডেয়ার খেলবে। সেই অনুযায়ী মিরাজ একটা কাঁচের বোতল নিয়ে আসে। কিভাবে খেলতে হবে সেটা নিরা বুঝিয়ে দিয়েছে। নিয়মমাফিক খেলা শুরু করে মিরাজ। মিরাজ বোতল ঘুরিয়ে দেয়। সেটা গিয়ে সর্বপ্রথম পড়ে অয়নের দিকে। প্রথমেই অয়নের পড়ায় অয়ন ঘাপটি মেরে চুপ করে থাকে। কারণ এসব খেলা সে আগে কখনো করেনি। মেয়েদের খেলা কি ছেলেরা কখনো করে। বিপাকে পরে খেলতে হচ্ছে তার। না করলে বউ তার খবর করে ছাড়বে। মানহা চিল্লিয়ে বলে,
” হে হে ভাইয়া তুমি ট্রুথ নাকি ডেয়ার কোনটা নিবে। অয়ন নিরার দিকে করুন চোখে তাকায়। নিরা চোখ রাঙিয়ে ইশারায় বলতে বলে। অয়ন মানহার দিকে তাকিয়ে বলে,
” কোনটা নিলে ভালো হবেনে বোন। যেটা নিলে ভালো হয় সেটা বল। অয়নের কথায় সবাই হেঁসে ওঠে। মিরাজ বলে,
” ভাইয়া তুমি ডেয়ার নাও। অয়ন মিরাজের দিকে তাকিয়ে মুখের হাবভাব বোঝার চেষ্টা করে। নিজে ফের বলে,
” ট্রুথ।
” সিউর ভাইয়া ( মানহা)
” হু
” ওকে। তাহলে ভাইয়া কে তোমরা কে প্রশ্ন করবে?
” আমি বলে হাত তোলে নিরা। নিরা হাসছে। হাসার ভাব দেখে অয়ন ঢের বুঝতে পারছে তাকে যা তা প্রশ্ন করবে তার বউ ভাবতেই গলা বুক শুকিয়ে যায়। আমতাআমতা করে বলে,
” তুমি ?
” হ্যাঁ। আচ্ছা তুমি জীবনে কয়টা প্রেম করছো ভ্রু নাচিয়ে বলে ?
মিথ্যা বলা যাবে না কিন্তু?
সবাই অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন সবার দিকে তাকিয়ে বোকা হেঁসে বলে,
” বিশ ত্রিশ টা করছি।
” কিহহহ বলে চেচিয়ে ওঠে নিরা। তুমি আমাকে ঠকিয়েছো। আমাকে তুমি মিথ্যা বলছো বলে কান্না শুরু করে দেয়। নিরার কান্নায় হকচকিয়ে গিয়ে বলে,
” আরে তুমি কান্না করছো কেন? আমি মজা করে বলছি। তুমি আমার জীবনে প্রথম প্রেম আর শেষ প্রেম প্লিজ কান্না থামাও। নিরা কান্না থামিয়ে চোখ ছোট করে বলে,
” সত্যি।
” হ্যাঁ।
মিরাজ এবার বলে, তোমরা ড্রামা বাদ দিবে। এভাবে করলে আমরা কখন খেলবো হ্যা। বলে বোতল টা আবার ঘুরিয়ে দেয়। এবার গিয়ে পরে আবরারের দিকে। মিরাজ প্রশ্ন করে,
” দুলাভাই আপনি কি নিবেন ট্রুথ নাকি ডেয়ার।
” আবরার সোজাসাপ্টা বলে দেয় সে ডেয়ার নিবে। তার নাকি সৎ সাহস আছে। মিরাজ আবরার কে বলে,
” ভাইয়া আপনি আপুর জন্য একটা কবিতা বলবেন।
” কবিতা হ্যাঁ
” আচ্ছা বলে মানহার চোখে চোখ রেখে বলে,,
তোমারি যেন ভালোবাসি আছি
শত রুপে শত বার।
জনমে জনমে জুগে জুগে অনিবার
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়ে গাতিয়াছি গীতহার,
কত রুপ ধরে পড়েছো গলায়,
নিয়েছো যে উপহার
জনমে জনমে জুগে জুগে অনিবার।
সবাই করতালি দেয়। আবরারের কবিতার প্রশংসা করে। আবরার মুচকি হেসে মানহা কে চোখ মারে। মানহা লজ্জায় চোখ সরিয়ে নেয়।
অনেক হাসি ঠাট্টার মধ্যে দিয়ে খেলা শেষ করে। রাত অনেক হওয়াই ঘুমোতে চলে যায়। যে যার রুমে গিয়ে শুয়ে পরে।
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
সূর্য তার নিয়ম মতো আজও পূর্ব আকাশে উদিত হয়েছে।
আজ মানহা রা চলে যাবে। যেখানের কাউকে সে ঠিক মতো চিনতো না জানতো না। তাদের সবার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হয় নিজ গন্তব্যে।
****
গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে মানহা। আবরার গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আড়চোখে বউকে দেখছে। মানহা গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে। চোখের কার্নিশ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরে। সেটা লক্ষ্য করে আবরার গাড়ি থামায়। হঠাৎ গাড়ি থেমে যাওয়ায় চোখ খুলে তাকাতেই আবরারের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়। আবরার আলতো হাতে চোখের পানি মুছে নেয়। খুব যত্নে যাতে ব্যথা না লাগে। আবরার বলে,,
” বনবিড়াল প্লিজ তুমি কান্না করো না। তোমার চোখের পানি যে আমার সহ্য হয় না। বুকে খুব ব্যথা করে।
” আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আবরার। বাবা মা’র জন্য মনটা খুব পুড়ছে। ভেতরে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। বাড়ির সবার কথা মনে পড়ছে।
” মানহা’র মুখে আলতো ভাবে হাত দিয়ে বলে, সব ঠিক হয়ে যাবে জান। একটু সময় দাও আর কষ্ট হবে না পাখি।
” মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে।
” আচ্ছা এখন তো বিকাল চলো দুজন কোথাও গিয়ে ঘুরে আসি। কোনো এক নিরিবিলি জায়গায় গেলে তোমার মনটা নিমিষেই ভালো হয়ে যাবে।
” না না থাক। এখন বাসায় চলো। আম্মু হয় তো একা আছে।
” আম্মুর জন্য তোমার টেনশন করতে হবে না। আম্মুর কাছে নিসা আছে। খালামণি আছে।
” তাহলেও দরকার নেই। অন্য একদিন যাব তুমি বাসায় চলো।
আবরার কি শোনার মানুষ। প্রেয়সীর মুখে হাসি ফুটানোর জন্য সে সব করতে পারে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নিজের মতো চালাতে থাকে। বাসার রাস্তায় না গিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। সেটা দেখে মানহা জিজ্ঞেস করে ,,
” তুমি বাড়ির রাস্তায় না গিয়ে কোথায় যাচ্ছো?
আবরার নিজের মতো গাড়ি চালাতে ব্যস্ত। মানহা’র কথায় কোনো রেসপন্স করে না। মানহা ফের বলল, আবরার কোথায় যাচ্ছো সেটা তো বলো?
” বনবিড়াল চুপ করে থাকো। যেখানে যাচ্ছি সেখানে গেলে তোমার ভালো লাগবে। মানহা আর একটা কথাও বলে না। জানে হাজার বললেও আবরার কোনো উত্তর দেবে নানে।
******
নির্দিষ্ট জায়গায় এসে গাড়ি থামায় আবরার। গাড়ি থেকে ইশারায় নামতে বলে আবরার। মানহা চুপচাপ নেমে পরে। জায়গা টা সম্পূর্ণ নতুন। আগে কখনো আসেনি। চারপাশে চোখ বুলাতেই শরীর জুড়ে শীতল হাওয়া বয়ে যায়। মুহূর্তেই চোখ বুজে ফেলে। আবরার গাড়ি থেকে নেমে মানহা’র সামনে দাড়িয়ে বলে,
” চলো। মানহা’র হাত ধরে নিয়ে যায় নদীর পাড়ে। আশেপাশে খুব কম মানুষই আছে। বেশির ভাগ কাপল এখানে। মানহা’র হাত ছেড়ে দেয়। মানহা নদীর পাড়ে বসে পরে। পা দুটো নদীর পানিতে ভিড়িয়ে দেয়। মুক্ত পাখির মতো হাত দুটো মেলে দেয়। আবরার গোপনে প্রেয়সীর কয়েকটা ফটো তুলে নেয়।
প্রেয়সীর দেখাদেখি আবরারও সেম কাজ করে। ধপ করে নিচে বসে পরে। নিজের পাশে আবরার কে বসতে দেখে আবরারের মুখে পানি দেয়। আবরারও কম যায় না সেও মানহা’র মুখে পানি চেলে দেয়। মানহা’ খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। হাসির শব্দে চারপাশ মুখরিত হয়ে ওঠে। মানহা’র হাসির সাথে তাল মিলিয়ে পানির ঝনঝন শব্দ হচ্ছে।
দুজনে দুষ্টুমি করে একে অপরের গায়ে পানি দিচ্ছে। সেখানে থাকা কিছু মানুষ তাদের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। তাতে আবরারের কিছু যায় আসে না। আবরার মনে মনে ভাবে। একটু আগে যার চোখে পানি ছিল এখন সে হাসছে। মন খুলে প্রকৃতির সাথে মিশে গেছে।
ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে আসে। আর কিছুক্ষণ পরে মাগরিবের আজান দিবে। চারপাশে লালচে আভা ছড়িয়ে পড়েছে। সেটা লক্ষ্য করতেই বাড়ির কথা মনে পরে। মানহা আবরার কে তাড়া দেয় বাড়িতে যাওয়ার জন্য। নদীর পাড় থেকে উঠে দাড়ায় দুজনে। সেখান থেকে পা বাড়ায় গাড়ির কাছে যাওয়ার জন্য। আবরার নিজের হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে রাখে মানহা’ হাত। দুজনে হাত ধরে হেটে যাচ্ছে গাড়ির কাছে। পিছন থেকে কেউ মানহা বলে ডাক দেওয়ায় পা থেমে যায় দুজনের। মানহা পিছনে ফিরে অবাক হয়ে বলে,
” আপনিিিি…???
চলবে ইনশা আল্লাহ
রিচেক দেওয়া হয়নি।
[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]