গোধূলির শেষ প্রণয় পর্ব-৩১+৩২

0
7

#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৩১

দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। চারপাশে লালচে আভা ছড়িয়ে পড়ছে। সেটা লক্ষ্য করে করে বাড়ি ফেরার কথা ভাবে মানহা। বাড়ি যাওয়ার জন্য দ্রুত নদীর পাড় থেকে উঠে দাড়ায় দুজনে। সেখান থেকে পা বাড়ায় গাড়ির কাছে যাওয়ার জন্য। আবরার নিজের হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে রাখছে প্রেয়সীর হাত দুটো। দুজনে হেটে হেটে গাড়ির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তে কেউ একজন মানহা’র নাম ধরে ডাক দেয়। পা দুটো থেমে যায় মানহা’র। মানহা কে থেমে যেতে দেখে আবরার নিজেও থেমে যায়। মানহা পিছনে তাকিয়ে থমকে যায়। পুরো দুনিয়া টা অন্ধকার লাগলো তার কাছে। এত গুলো বছর, এত গুলো দিন পর মানুষ টাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। আবরারের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে। দু পা পিছিয়ে যায় মানহা। হঠাৎ মানহা কে দুর্বল হতে দেখে অস্থির হয়ে ওঠে আবরার। ব্যতি ব্যস্ত হয়ে পরে মানহা কে নিয়ে।
মানহা বিস্মিত হয়ে বলল,

” আপনিিি..?

মানহা’র দৃষ্টি অনুসরণ করে আবরারও তাকায়। দেখে একজন অচেনা লোক তাদের থেকে একটু দুরে দাঁড়িয়ে আছে। বাট লোকটার সাথে মানহা’র কি সম্পর্ক সেটাই বুঝতে পারছে না। আবরার আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে,

” তুমি চেনো উনাকে? আবরারের প্রশ্নে তার দিকে তাকায় মানহা। ফের লোকটার দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে চোখ মুখ শক্ত করে বলে,

” আপনি এখানে কেন? আমার পিছু পিছু আসলেন কেন? আপনি কেন আমাকে ডাকলেন হ্যাঁ কেন? বলতে বলতে জোরে শ্বাস নেয় মানহা। মানহা কে অস্থির হতে দেখে বলে,,

” কুল ডাউন বনবিড়াল। এত হাইপার হয়ে যাচ্ছো কেন? লোকটা কে? তার সাথে তোমার কি সম্পর্ক?

তাদের সামনে থাকা লোকটা শুধু অবাক হয়ে দেখছে। মানহা কে নিয়ে কেউ একজন অস্থির, উৎকন্ঠা। চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পরে। সেটা অতি সন্তর্পণে কেউ দেখার আগে মুছে নেয়। সে মানহা কে বলে,,

” কেমন আছো মানহা নরম কন্ঠে বলে। লোকটার মুখে নিজের নাম শুনে গা ঘিনঘিন করে ওঠে মানহা’র। মানহা উত্তেজিত হয়ে বলে,

” ডোন্ট শাট ইউর মাউথ মিস্টার রুপম। আপনার মুখে আমার নামটা যেন আর না উচ্চারণ করেন। কারণ আপনার মুখে আমার নামটা মানাই না। আমি আপনাকে ঘৃণা করি।

( হ্যাঁ লোকটা আর কেউ নয়। মানহা’র প্রাক্তন স্বামী রুপম )

” সেটা আমি জানি আর জানি বলেই তোমাকে এত দিন পাগলের মতো খুজে বেড়িয়েছি। সারা শহর তন্নতন্ন করে খুজেছি। এমন একটা দিন যায়নি আমার চোখ দুটো তোমাকে খুজেনি। কিন্তু তোমার খোঁজ পায়নি।

” কেন খুজেছেন আমায়। কিসের দরকার আমায়। আবার ঠকাবেন, অবহেলা করবেন সেজন্য। শুনে রাখুন মিস্টার রুপম মানহা কখনো অন্যের ব্যবহারিত জিনিস ছুয়ে দেখে নে।

❝ যে থুথুু একবার ফেলে দিছি সেটা আর উঠাবে না ❞

” আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না মানহা। জানি আমি ক্ষমার যোগ্য না তবুও বলছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও বলে মানহা’র হাত দুটো ধরে।

মানহার হাত ধরায় আবরারের চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মানহা’র কথা শুনে থেমে যায়।

মুহূর্তেই মানহা অগ্নিমূর্তির ধারণ করে। ঝাড়া মেলে রুপমের হাত দুটো ফেলে দিয়ে বলে,

” ডোন্ট টার্চ মি। ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট মিস্টার রুপম। আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে টাচ করার।আমাকে টাচ করার অধিকার দুই বছর আগেই হারিয়েছেন। ফারদার ভুলেও এই কাজ করবেন না। আমাকে টাচ করার অধিকার একমাত্র ইনার আছে বলে হাত দিয়ে আবরার কে দেখায়।

রুপম এতক্ষণ খেয়াল না করলেও মানহা’র কথা শুনে আবরারের দিকে তাকায়। দেখতে তার থেকে কোনো অংশে কম নয়। বরং তার থেকে হাজার গুণ হ্যান্ডস্যাম। রুপম বলে,,

” কে ইনি?

” মানহা তাচ্ছিল্যের হেসে বলে, কে শুনতে চান। তাহলে শুনুন ইনি আমার একমাত্র বর। যাকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলছি। তার ছোট ছোট কেয়ার, আমার জন্য তার পাগলামি সবটা নিজের অজান্তেই তার সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছি। যাকে আমি অসম্ভব রকমের ভালোবেসে ফেলছি।

মানহার মুখে ভালোবাসার কথা শুনে চমকে যায় আবরার। মুখে ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসি।

” রুপম ফের বলল, খুব সুখে আছো তাই না।

” হ্যাঁ খুব সুখে আছি।
জীবনে দ্বিতীয় বার যে আসে সে পৃথিবী ভর্তি সুখ নিয়ে আসে। তার ভালোবাসা যত্ন সোহাগ দেখলে মনে হয় আমিই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী নারী। যার এমন একটা শখের পুরুষ আছে। সে পাশে থাকলে সুখী থাকার জন্য দ্বিতীয় কারোর প্রয়োজন পড়ে না।

” পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। তুমি সুখে আছো শুনে অনেক শান্তি লাগছে। বাট আমি সুখে নেই জানো। রিয়া আমাকে ঠকিয়েছে। আমার সম্পত্তির জন্য ওর বয়ফ্রেন্ড আর ও মিলে আমাকে ফাঁদে ফেলছে। আমার সব সম্পত্তি নিজের নামে করে বাড়ি থেকে বের করে দিছে। এখন সেই বাড়িতে ও আর ওর বয়ফ্রেন্ড থাকে। আর আমার আর নেই। পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে গেছে। আমি বড্ড একা হয়ে গেছি। সব আমার পাপের ফল।

মানহা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,,
রিভেঞ্জ অফ নেচার বলে একটা কথা আছে। প্রকৃতি কখনো ছেড়ে দেয় না। আপনার জন্য আমি এমন একজন কে পেয়েছি যে আমি ডিভোর্স জেনেও আমাকে ভালোবেসেছে। আমার অতিত জেনে আমাকে ভালোবেসেছে। কখনো অবজ্ঞা অবহেলা করেনি।

আবরার এতক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে দুজনের কথা শুনছিল। একটা কথাও বলেনি। মানহা’র ভিতরে যে ক্ষোভ ছিল সেটা প্রকাশ করতে পেরে হালকা লাগবে ভেবে বাঁধা দেয় নি। সে প্রথমেই এমন কিছু আন্দাজ করেছিল। পরে দুজনের কথা শুনে নিশ্চিত হয়েছে। আবরার রুপম কে বলে,,

” মিস্টার রুপম আমি আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ।

” কৃতজ্ঞ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।

” হ্যাঁ। আপনার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। আপনার জন্য আমি মানহা কে পেয়েছি। তাকে পেয়ে আমি খুব লাকি।

” ওহ ছোট্ট জবাব রুপমের। রুপম আবরারকে বলে, আপনি খুব ভাগ্যবান আপনি মানহা কে পেয়েছেন। আমি তাকে পেয়েও ধরে রাখতে পারিনি এটা আমার ব্যর্থতা। বাট আপনি ওকে পেয়েছেন। খুব সুখে থাকবেন। বাকি জীবন সুখে শান্তি তে কাটাবেন এটাই কামনা করি।

” আসি ভালো থাকবেন বলে মানহা’র হাত ধরে গাড়িতে উঠায়। গাড়ি শা শা করে চলে যায়। রুপম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে গাড়ির পানে। নিজের ভুলের জন্য তার এই অবস্থা। ভুলের মাশুল তো তাকে দিতেই হবে সেটা যে ভাবেই হোক না কেন?

চলবে ইনশা আল্লাহ

#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৩২

ভালোলাগা আর বিষণ্ণতার মাঝামাঝি এই নভেম্বর! নভেম্বরের এই শীত শীত বাতাস অসম্ভব বিষাদময়, চা খেতে খেতে সমস্ত ফেলে আসা স্মৃতি থেকে ঘুরে আসা যায় এই নভেম্বরের বিকেলগুলোতে!

দেখতে দেখতে দুইটা দিন কেটে গেছে। মানহা আগের থেকে কিছুটা নরমাল হয়েছে। বিষন্নতায় থাকলে আবরার সেটা দুর করার জন্য মানহা কে হাসানোর চেষ্টা করে। কিছুতেই মুখ গোমড়া করে থাকতে দেয় না। বাসার সবাই ভাবছে বাবা মা সবাইকে ছেড়ে আসছে এজন্য হয়তো মন খারাপ। বাট তারা তো আর জানে না আসল কাহিনি কি?

পড়ন্ত বিকেলে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে মানহা। আবরার বাসায় নেই। সে অফিসে গেছে। এই কয়েকটা দিন সে অফিসে যায় না। কিন্তু আজ না গেলে হলো না। মানহা কে একা রেখে যেতে মন সায় দেয় না আবার অফিসে না গেলেও হচ্ছে না। এক প্রকার বাধ্য হয়ে অফিসে গেছে।

আনমনা হয়ে তাকিয়ে আছে দুর আকাশের দিকে। মনে তার হাজারও ভয়। আবার ফিরে আসবে না তো তার কালো অতিত। অজানা ভয়ে কুকড়ে ওঠে মানহা। তার ভাবনার মাঝেই নিচ থেকে শাশুড়ী মায়ের ডাক শুনে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। বাসায় শুধু বউ শাশুড়ী আছে। আর বাকি সময় চলে গেছে। মানহা’র শশুর আর দাদা শশুর দুজনে বাজারে গেছেন। বাসায় থেকে বোর না হওয়ার থেকে বাইরে থেকে ঘুরে আসা ভালো। সেজন্য বাপ কা বেটা বেড়িয়েছেন।

মানহা নিচে এসে দেখে তার শাশুড়ী মা সমুচা সিংগারা নিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছেন। মানহা এসে শাশুড়ির পাশে বসে পরে জিজ্ঞেস করে,,

” আম্মু এগুলো কখন বানালেন?

” এই তো মা একটু আগে। গরম গরম ঝটপট খেয়ে নাও তো। মানহা মাথা নেড়ে একটা সমুচা নেয়। সেটা অল্প অল্প করে খেতে থাকে।

মানহা কে অন্যমনস্ক দেখে হালিমা বেগম বলল, মানহা কি হয়েছে মা? তোমাকে অন্য মনস্ক লাগছে? কিছু হলে আমাকে নির্ধিদ্বায় বলতে পারো আমি কিছু মনে করব নানে। মানহা মুচকি হেসে বলে,

” তেমন কিছু না আম্মু। আসলে বাড়ির সবার জন্য মন খারাপ তাই আরকি।

” এটা নিয়ে এত মন খারাপ পাগলি। আমি তেজ কে বলব কালই তোমাকে নিয়ে ও বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে।

” না আম্মু তার দরকার নাই। আবরার এমনিতেই বেশ কয়দিন অফিসে যায় না। আমি চাই না আমার জন্য অফিসের কোনো ক্ষতি হোক।

” মানহা’র কথা শুনে তিনি হাসেন। দু’জনে খাওয়া শেষ করে। মাগরিবের আজান কানে আসতেই তিনি বলেন, বউমা তুমি রুমে যাও। আমি গিয়ে নামাজ পরে আসি। মানহা শাশুড়ির কথা শুনে নিজের রুমে চলে যায়।

______________

সন্ধ্যা সাতটা। আনোয়ার হোসেন আর আনসার হোসেন দুজনে মাগরিবের নামাজ পরে বাসায় আসছেন। তাদেরকে চা করে দেয় মানহা। এক জায়গায় বসে সবাই গল্প করে। আনসার হোসেনের কথা শুনে মানহা হেসে ওঠে। মানহা’র দাদা শশুর ভাড়ি মজার মানুষ। সবাইকে বেশ হাসাতে পারে।

তখন কলিংবেলের শব্দ শুনে মানহা উঠে গিয়ে দরজা খোলে। দরজায় আবরার কে দেখে হেঁসে হেসে ভিতরে আসতে বলে। মানহার হাসি মুখটা দেখে সারাদিনের ক্লান্তি মুছে যায় আবরারের। ঠোঁটে তার চওড়া হাসি৷ আবরার ড্রয়িংরুমে চোখ বুলিয়ে ফের মানহা’র দিকে তাকিয়ে ইশারায় উপরে আসতে বলে নিজে দোতালায় চলে যায়। মানহা সবার সামনে দিয়ে যেতে কেমন একটা লাগে। সে চুপচাপ গিয়ে সোফায় বসে পরে। সেটা দেখে আনোয়ার হোসেন বলেন, মানহা মা তুমি কেন এখানে বসলে ছেলেটা সারাদিন পর বাসায় আসছে ওর কাছে যাও। যদি কিছু লাগে। শশুরের কথায় কিছু টা লজ্জা পায় মানহা। মানহা জ্বি বলে উপরে চলে যায়।

মানহা কে আসতে বলছে রুমে এখনো আসেনি বলে রাগে গজগজ করতে থাকে আবরার। রুম জুড়ে পায়চারি করছে। বউটা তার অলস হয়ে গেছে। এতক্ষণ সময় লাগে নিচে থেকে আসতে। মানহা দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আবরার কে পরখ করে মিটিমিটি হাসছে। আবরার পায়চারি করতে করতে দরজায় চোখ পরে। মানহা কে দরজায় দেখে দ্রুত পায়ে গিয়ে হাত ধরে টান দিয়ে ভিতরে নিয়ে আসে। আসার আগে দরজাটা বন্ধ করে দেয়। দরজা বন্ধ করতে দেখে মানহা বলে,

” দরজা বন্ধ করছো কেন?

আবরার দুষ্টু হেসে এগিয়ে আসতে আসতে বলে, রোমাঞ্চ করব। আবরারের কথা শুনে মানহা তুতলিয়ে বলে,

” মা নে কি বল ছো তু মি?

” তুমি তোতলাচ্ছো কেন?

” কই। আমি তো ঠিক ভাবেই জিজ্ঞেস করলাম।

আবরার গা থেকে কোর্ট খুলে বিছানায় ফেলে দেয়। এক টানে মানহার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়। মানহা মুচড়া মুচড়ি করে ছাড়া পাবার জন্য। আবরারের শক্তির সাথে পেড়ে ওঠে না। আবরার মানহা কে কিস করতে যাবে ঠিক সেই সময় নিচ থেকে হালিমা বেগমের কথা শুনে থেমে যায় আবরার।

তেজ বউমা কে নিয়ে নিচে আয়।

তিনি খাবার খাওয়ার জন্য তাদেরকে নিচে যেতে বলছে। আবরার বিরক্তি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে মানহা ফিক করে হেঁসে ওঠে। মানহা’র হাসি দেখে আবরার বলে,

” তোমাকে তো পড়ে দেখে নিচ্ছি।

আবরার ফ্রেশ হয়ে আসলে দুজনে খেতে বসে সবার সাথে। ডাইনিং টেবিলে বসে খাওয়া শেষ করে সবাই। খাওয়া শেষ হতেই আবরার নিজের রুমে গো গো করে চলে যায়।

মানহা শাশুড়ি মায়ের সাথে সব কাজ শেষ করে তারপর নিজের রুমে যায়। হালিমা বেগম নিষেধ করলেও শোনেনি মানহা। থালাবাটি সব পরিষ্কার করে তবেই গেছে। মানহা রুমে এসে দেখে পুরো রুম ফাঁকা। কেউ নেই রুমের ভিতর। বেলকনিতে আছে ভেবে দরজা বন্ধ করে বেলকনিতে যায়। গিয়ে দেখে মশাই বেলকনির রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে। মানহা গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। মানহা’র স্পর্শ পেয়ে আবরার মুচকি হাসে। মানহা কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,

” আমার বউটার মুড দেখছি খুব ভালো আছে। আজ খুব হাসিখুশি লাগছে কেন? ব্যাপার কি উহু ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে।

আবরারের কথা শুনে চোখ ছোট করে তাকায় মানহা। মানহা কে চোখ ছোট করে তাকাতে দেখে বলে, কি হলো? তোমাকে আমার সুবিধার লাগছে না। আজ হঠাৎ কি হলো।

” ধুর কি যে বলো না। তোমার কথা শুনে আমার খটকা লাগছে। তুমি ঠিক আছো তো।

” না গো আমি ঠিক নেই।

” ওমা কি বলো? তোমার আবার কি হলো?

” আমার প্রেম প্রেম পাচ্ছে। আবরারের কথায় লজ্জায় মুখ লুকায় আবরারের বুকে। প্রেয়সীর লজ্জা মাখা মুখ উঁচু করে বলে,,

” লজ্জা পেলে তোমাকে অনেক কিউট লাগে। তোমার লজ্জা মাখা টমেটোর মতো গাল দুটো কে টুপ করে গিলে ফেলতে মন চাই। আবরারের কথায় বুকে কিল ঘুষি মেরে বলে,

” ধুর কিসব বলছো। আমার খুব লজ্জা লাগছে।

” তাহলে চলো লজ্জা ভাঙানোর ব্যবস্থা করে দেয়। কি বলো?

মানহা ঘাপটি মেরে আবরারের বুকে লেপ্টে থাকে। আবরার দুষ্টু হেসে বলে, নিরবতা কিন্তু সম্মতির লক্ষণ। তাহলে কি আমি ধরেই নেবো আমার প্রস্তাবে তুমি রাজি আছো বলে এক ঝটকায় কোলে তুলে নেয় মানহা কে? বেলকনিতে থেকে রুমে এনে বিছানায় শুইয়ে দেয়। নিজেও মানহা’র উপরে শুয়ে পরে। একে অপর কে কাছে পাবার তীব্র বাসনা জেগে ওঠে দু’জনের মাঝে। দুজনে হারিয়ে যায় ভালোবাসার গহীন রাজ্যে।
















‘.’





সকালের মিষ্টি আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় মানহা’র। পিটপিট করে চোখ খুলে প্রথমেই আবরারের উন্মুক্ত বুকে চোখ পরে। রাতের কথা মনে হতেই লজ্জায় কুকড়িয়ে যায়। মুখে তার লাজ রাঙা হাসি। আবরারের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রয় কিছুক্ষণ। আবরারের কিউট গুলুমুলু গাল দুটোই কিস করতে মন চায়। মানহা ঠোঁট এগিয়ে আবরারের কপালে ভালোবাসার পরশ ছোয়ায়। ফের সেখান থেকে দু গালে। এভাবে সারা মুখে ভালোবাসার পরশ ছোঁয়ায় মানহা।

আবরার এতক্ষণ ঘুমের অভিনয় করে সব দেখছিল তার বনবিড়াল কি কি করে? আবরার ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে,

” থামলে কেন আর দাও? হঠাৎ করে কথা বলায় হকচকিয়ে যায় মানহা। আমতাআমতা করে বলে, তুমি জেগে আছো?

আবরার চোখ খুলে চমৎকার হাসে। সেই হাসির দিকে মানহা এক ধ্যানে তাকিয়ে রয়। আবরারের কথায় লজ্জায় মুখ নিচু করে নেয়।

” সকাল সকাল আমার বউয়ের দেখি রোমাঞ্চ করতে মন চাচ্ছে। কাল রাতে কি আমার আদরে ভরে নি সকাল সকাল আরও আদর খেতে মন চাচ্ছে উহু। আর কিছু বলার আগেই মানহা আবরারের ঠোঁট চেপে ধরে নিজের হাত দিয়ে।ফের বলে,

” এমন ঠোঁট কাটা স্বভাবের হলে কবে থেকে। আগে তো কখন এমন করো নি। মুখ টা কি কন্ট্রোল করা যায় না।

” বউয়ের সামনে সব পুরুষেই ঠোঁট কাটা হয় বুঝছো? তাই এত ভেবে বলার কিছু নেয় এখানে।

মানহা কিছু না বলে চাদর জড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে পরে। সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়। ও দিকে আবরার বেআক্কেলের মতো মানহা’র দিকে তাকিয়ে থেকে হেঁসে ওঠে। বউটা তার লজ্জা পেয়েছে। লজ্জাবতি বউ আমার।

চলবে ইনশা আল্লাহ

[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]