গোধূলির শেষ প্রণয় পর্ব-৩৭+৩৮

0
5

#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৩৭

দেখতে দেখতে সময় চলে যায়। আজ চারদিন হলো তারা গ্রামে এসেছে। কালকে তারা ঢাকা ব্যাক করবে। অফিস থেকে আবরারের কাছে বার বার ফোন আসছে। তাকে খুব দরকার অফিসে। সে না গেলে হচ্ছে না। আজ গ্রামের মানুষ গুলোর মধ্যে নিজেকে মিলিয়ে ফেলছে আবরার। গ্রাম্য স্টাইলে তানজিমের থেকে লুঙ্গি নিয়ে পরেছে। প্রথম বার লুঙ্গি পড়ায় আনইজি ফিল করছে আবরার। তার খুব ভয় হচ্ছে যদি লুঙ্গি খুলে যায়। তাহলে মানসম্মান বলতে কিছু থাকবে না। সকাল সকাল আবরার কে লুঙ্গি পড়তে দেখে চারশো চল্লিশ ভোল্টের ঝটকা খায় মানহা। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রয় আবরারের দিকে। পর মুহূর্তে জোরে জোরে হেসে ওঠে মানহা। মানহা কে হাসতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায় আবরার। ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, হাসছো কেন?

মানহা হাসতে হাসতে আবরারের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,

” তোমাকে যা লাগছে না।

” মানে! ভালো লাগছে না আমাকে। খুলে ফেলবো।

” আরে না। আমি বলতে চেয়েছি। তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। চলো সবার সামনে নিয়ে যায়। সবাই দেখলে যা ঝটকা খাবে না বলে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। আবরার না না করলেও শোনে না। সকালের মিষ্টি রোদে উঠানে বসে আছে মানহা’র নানু জোবেদা বেগম। মানহা জোবেদা বেগমের সামনে দাড় করিয়ে বলে,

” নানু দেখো তো তোমার নাতজামাই কে লুঙ্গি পরে কেমন লাগছে?

” জোবেদা বেগম পান চিবোতে চিবোতে বলেন,

” আবরার নানু ভাই তোকে অনেক ভালা লাগছে লুঙ্গি পইড়া। একদম গ্রামের মানষের মতন। গ্রামের সক্কলে যেমনে লুঙ্গি পড়ে হাটে ঘাটে মাঠে যায়। তোর লুঙ্গি পইড়া দেইখা তোর নানা জানের কথা মতো মনে পইড়া গেলো রে। মানুষ টা লুঙ্গি পড়লে তোর মতোই সুন্দর লাগতো। দেখতে তোর মতন ফর্সা লম্বা ছিল।

আবরার নানির কথায় কি উত্তর দেবে ভেবে পাচ্ছে না। আবরার কে চুপ থাকতে দেখে মানহা বলে,

” নানু জানো আবরার না বাইরে আসতে চাইছিল না৷ আমি টেনে নিয়ে আসছি।

” সে কি কথা নানু ভাই। এমনে লজ্জা পাইলে কি চলে।

” আসলে নানু আমি তো লুঙ্গিতে কমফোর্টেবল না এজন্য আর কি?

” আইচ্ছা বুঝবার পারছি। তাইলে রুমে গিয়ে খুলে ফেল নানুভাই।

” আচ্ছা নানু।

*********

পড়ন্ত বিকেল। তানজিম সবাইকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে। গ্রামের শেষ দিন আজ মানহাদের। কাল ঢাকা ব্যাক করবে বলে সবগুলোর মন খারাপ। আরও কয়েকটা দিন থেকে যেতে বলছে কিন্তু আবরারের জন্য পারছে না। কলি আর অলি জমজ দুবোনের মনটা বেশি খারাপ। এই চারদিনে সবার সাথে খুব ভাব হয়ে গেছে তাদের। আজকে আর তারা মাঠ দিয়ে যাবে না। সোজা রাস্তা দিয়ে যাবে। সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে হেঁটে হেটেই যাবে তারা। কিন্তু আগে যদি জানতো এতোটা পথ তাহলে কখনোই হেঁটে আসার জন্য রাজি হতো না মানহারা। এমন একটা অবস্থায় এসে দাড়িয়েছে।
❝ ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি ❞

একসাথে এত মানুষ দেখে গ্রামের অনেকেই তাদের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায়। আবার কেউ কেউ এসে জিজ্ঞেস করে, কারা এ?

*******

পাক্কা ত্রিশ মিনিট পর এসে নির্ধারিত গন্তব্য পৌঁছায়। এখান থেকে আবার হেঁটে বাসায় ফিরতে হবে ভেবে কান্না পাচ্ছে নিরার। তানজিম দের অভ্যাস আছে বিধায় সমস্যা হচ্ছে না। তাদের এসে এসে অভ্যাস হয়ে গেছে।

মানহা গ্রামে অনেক বার আসলেও এই জায়গাটায় আসেনি। জায়গা টা অসম্ভব রকমের সুন্দর। অনেক বড়ো বড়ো অনেক গুলা ঘেড়। ঘেড়ে মাছের অভাব নেই। ছোট বড়ো সব ধরনের মাছ লাফালাফি করছে। প্রতিটা ঘেড়ের পাশ দিয়ে কলাগাছ সহ বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো আছে। ঘেড়ের তত্তাবধানে আছে ছয়-সাত লোক। নিয়ম করে মাছকে খাবার দিচ্ছে। কেউ ঘেড়ে পানি দিচ্ছে। ঘেড়ের ভিতর নৌকা বাঁধানো। বড়ো বড়ো মেহেগুনি গাছ। বিভিন্ন ধরনের সবজি গাছ। সবটা দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় মানহা সহ শহর থেকে আসা বাকি ক’জন। মানহা অবাক হয়ে বলে,

” জায়গাটা মারাত্মক সুন্দর লাগছে।
তানজিম ভাইয়া আমাকে তো আগে কখনো বলোনি এখানে এমন একটা জায়গা আছে।

” আরে জায়গাটা আগে থেকে করলেও তেমন একটা পরিচিতি ছিল না। জাস্ট কয়েক বছর এর খুব পরিচিতি বাড়ছে। আর তুই তো কতদিন আসিস না।

” ওহ আচ্ছা ছোট্ট জবাব মানহা’র।

মানহা’র পাশ থেকে নিরা এক্সসাইটেড হয়ে বলে,

” আমি নৌকায় উঠবো। তোমাদের ভিতর থেকে কে বৈঠা বাইতে পারো। প্লিজ দ্রুত চলো না আমার আর তর সইছে না। নিরার এক্সসাইটমেন্ট দেখে হেসে ওঠে সবাই। মানহাও খুব এক্সাইটেড। কারণ তারা আগে কখনো নৌকায় ওঠে নি।

অনেক বড় নৌকা হওয়ায় একটা নৌকায় সবাইকে ধরে। বাট আবরার সেই নৌকায় ওঠে না। মানহা’র হাত ধরে ইশারায় না বলে। মানহা মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কথা বলছে না।

দু’জন বাদে বাকি ক’জন একটা নৌকায় ওঠে। মিরাজ আসার সময় ক্যামেরা আনছে গ্রামে কিন্তু পরশু যেদিন প্রথম ঘুরতে আসছিল সেদিন ক্যামেরাটা ভুলে রেখে আসছিল। বাট আজ আর সেই ভুল করেনি। ক্যামেরাটা নিজের গলায় ঝুলিয়ে রাখছে।

*******

মানহা কে মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আড়ালে মুচকি হাসে আবরার। মুখ টা গম্ভীর করে মানহা’র হাত ধরে বলে চলো। মানহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

” কোথায়?

” আগে চলো তো এত কেন প্রশ্ন করছো তুমি।

মানহা আর একটা কথাও বলেনি। চুপচাপ আবরারের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে। সেটা খেয়াল করে আবরার বলে,

” আমার সবটাই তো তোমারই। তাই সামনে তাকিয়ে হাটো। যেকোনো সময় হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে পারো। বাসায় ফিরে মন ভরে দেখো আমাকে। আবরারের কথায় লজ্জা পায় মানহা। চুপচাপ মুখ নিচু করে হাঁটে। মুখে তার লাজ রাঙা হাসি।

আবরার আরেকটা ঘেড়ের সামনে এসে দাঁড়ায়। সবগুলো ঘেড় পাশাপাশি। নিরা রা যেটাই উঠছে তার পাশেরটায় উঠবে আবরার রা। মানহা’র হাত ধরে নৌকায় ওঠে আবরার। মানহা অবাক হয়ে সব দেখছে। আবরার যে বৈঠা চালাতে ওারে সেটা তার অজানা ছিল।

মানহা’র মুখে হাসি দেখে আবরার বলে,,

” এতক্ষণ কারোর মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। আবরারের কথার পরিপ্রেক্ষিতে মানহা বলে,

” তুমি বৈঠা বাইতে পারো এটা তো আমাকে বলোনি।

” যদি বলতাম তাহলে কি বউয়ের মুখে মিষ্টি হাসি দেখতে পারতাম বলো?

” ধুর। তুমি শুধু ফাজলামো করছো।

অয়নরা নৌকা থেকে নেমে মানহাদের পায় না। চারপাশ টায় চোখ বুলাতেই দেখতে পায় তাদের। অয়নের দৃষ্টি অনুসরণ করে সকলে তাকাই তাদের দিকে। সবার মুখে হাসি। মিরাজ তার ক্যামেরা দিয়ে ফটাফট কয়েক টা ফটো তুলে নেয়।

সবাইকে দেখে আবরার নৌকা ফিরিয়ে আনে। বেলা শেষ হতে চলল। বাসায় ফিরতে হবে তাদের।

****

মাগরিবের আজানের অনেক পরে বাসায় ফেরে সবাই। তানিয়া বেগম সবাই দেখে এগিয়ে এসে সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলে,,

” তোদের কোনো আক্কেল জ্ঞান নেই হ্যাঁ। এত দেড়ি করে ফেরে কেউ। ওরা শহরের মানুষ ওদের কি এভাবে বেড়ানোর অভ্যাস আছে। আর সন্ধ্যার পর গ্রাম থেকে কোনো মেয়ে বের হয় না জানিসই তো। আমরা টেশনে বাঁচি না। আর তোদের আসারও খবর নেই। তানিয়া বেগমের কথা শুনে আবরার বলে,

” আম্মু আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। আপনি টেনশন করবেন না প্লিজ। আমরা সবাই ঠিক আছি।

” যাও ফ্রেশ হয়ে নাও বাবা।

আর মানহা ব্যাগপত্র গুলো গুছিয়ে নিস মা। কাল সকালেই আমরা বের হবো। বাকিরাও সব গুছিয়ে নিও।

” ঠিক আছে মা।

চলবে ইনশা আল্লাহ

#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৩৮

দুইটা দিন হয়ে গেছে গ্রাম থেকে এসেছে। ঢাকা ব্যাক করার পরপরই আবরার ভিষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। মানহা কে দুদিন খুব কম সময় দিতে পেরেছে। মানহা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে একা একা। অনেক দিন পর মনটা তার খুব খারাপ কেন খারাপ সেটা জানে না।

গোধূলি বেলায় তুমি যেন আকাশের ভাষা, আমি দিবো তাতে সূর। গানে গানে করবো মুখরিত তোমায়, বিষাদ পালাবে বহুদূর।

পিছন থেকে কথার আওয়াজ পেয়ে ফিরে দাঁড়ায় মানহা। অসময়ে আবরার কে দেখে খানিকটা অবাক হয়। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

” তুমি এখন? অসময়ে কখনো আসো না তো।

” কেন আমাকে আশা করোনি বুঝি।

” না। সত্যি ভাবিনি তুমি আসবে।

” যাই হোক। কবিতা টা কেমন হয়েছে বললে না তো কিছুটা ঝুঁকে।

” সুন্দর হয়েছে মন খারাপ করে বলে।

আবরার দুই হাত দিয়ে মানহা’র মখ আঁকড়ে ধরে বলে,,

” আমি বুঝতে পারছি আমার বনবিড়ালের মনটা খারাপ। কেন খারাপ সেটা বুঝতে পারছি না। আমাকে একটু বলো জান। তোমাকে এমন আপসেট লাগছে কেন?

মানহা আবরার কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে। মনে হয় ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। অজানা ভয়ে কেঁপে ওঠে মানহা। আবরার দুহাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

” বনবিড়াল কি হয়েছে বলো প্লিজ। তোমাকে এমন কেন দেখাচ্ছে। মানহা বিড়বিড় করে বলে,,

” আমার খুব ভয় হচ্ছে আবরার। মনে হচ্ছে খারাপ কিছু হবে। মনের ভিতরে কেমন কু ডাকছে। কেন এমন হচ্ছে জানি না। খুব ভয় করছে আবরার।

” নো প্যানিক পাখি। কিচ্ছু হবে না। তুমি হয়তো টেনশন করছো এজন্য এমন হচ্ছে। রুমে চলো একটু রেস্ট নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

” (….) নিশ্চুপ

মানহা কে চুপ থাকতে দেখে আবরার কোলে তুলে নেয় মানহা কে। সোজা রুমে এনে খাটে বসিয়ে দেয়। ফের বলে, তুমি একটু শুয়ে থাকো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তারপর খাবার খেয়ে তুমি ঘুমাবে ঠিক আছে। মানহা মাথা নেড়ে সায় দেয়। আবরার ওয়াশরুমে চলে যায়।

রাতের ডিনার শেষ করে রুমে এসে শুয়ে পরে দু’জনে। আবরার মানহা’র চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে আর মানহা বিড়াল ছানার মতো লেপ্টে শুয়ে আছে। একসময় ঘুমিয়ে পড়ে দুজনে।
























:



মানহা বিকালে বাবা’র বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হয়েছে। আবরার অফিসে আছে৷ খুব বিজি সেজন্য আর ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করেনি মানহা। ছোট্ট একটা মেসেজ দিয়ে রাখছে। শাশুড়ী মা কে বলে বাসা থেকে বের হয়েছে। বাসার গাড়ি টাও সাথে আনেনি। রাস্তায় তেমন একটা গাড়ি গুড়া দেখা যাচ্ছে না। অনেক্ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরেও গাড়ি না পেয়ে হাঁটতে থাকে মানহা। সামনে থেকে রিকশা বা অন্য কিছু পেলে উঠে পড়বে।

হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ চলে আসে মানহা। তবুও গাড়ি পায় না। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ কথা বলায় ভয় পেয়ে যায়। পিছনের লোকটা বলে,

” খুব তো সুখে দিন পার করছো। এই দিকে যে আমি ভালো নেই সেটা কি তুমি জানো। তোমার বিরহে আমার দিন পাড় হয়।

মানহা চকিত দৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকায়। লোকটা কে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পরোক্ষ করে। বাট চিনতে পারে না। শুধুমাত্র চোখ দুটো ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছে না। লোকটা ধীরে ধীরে মানহা’র দিকে এগিয়ে আসছে। মানহা তুতলিয়ে বলে,,

“কে- আপ- নি? সামনে আগাচ্ছেন কেন? কাছে আসবেন না। আমি আপ- নার ক- কি ক্ষতি কর-ছি। আপ নাকে তো আমি চিনি না তাহলে।

লোকটা মানহা’র কথা শুনে না শোনার ভান করে। নিজের মতো সামনে আগাতে থাকে। মানহা’র ভয়ার্ত চেহারা দেখে লোকটা হেঁসে ওঠে। মানহা আরও ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে পিছাতে থাকে। লোকটা বলে,,

” তোমাকে আমি সুখে থাকতে দেবো না। তুমি আমার না হলে আর কারোর হবে না। তাহলে তোমাকে শেষ করে দেব বলে জোরে জোরে হাসতে থাকে। মানহা কিছু না ভেবেই দৌড় দেয় । লোকটাও মানহা’র পিছুপিছু দৌড়াতে থাকে। একসময় কোথা থেকে আরও কয়েকজন লোক এসে মানহা কে ঘিড়ে ফেলে। মানহা ভয়ে জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে থাকে। লোক গুলোর ভিতর আরও একটা লোক এসে দাড়ায়। মানহা কে তাড়া করা লোকটা। মানহা দিকশূন্য লাগে সব কিছু। বারবার আবরারের মুখ ভেসে উঠছে। বাবা মা ভাই বোন সবাইকে মনে পড়ছে। মনে মনে বলছে, তাহলে কি তার শেষ রক্ষা হবে না। আপনজনের কাছে ফেরা হবে না। বাবা মায়ের আদর ভালোবাসা পাবে না। আর আবরার সে আমাকে ছাড়া কেমনে থাকবে। আমি ছাড়া সে নিঃস্ব। । বাসায় এসে যখন দেখবে আমি নেই তখন, তখন কি করবে?মানহা’র ভাবনার মাঝেই দুটো লোক মানহা’র দুই হাত ধরে। মানহা চমকে লোক গুলোর দিকে তাকায়। সব গুলো লোকের মুখ ঢাকা। কাউকে চেনা যাচ্ছে না। নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে। সাহায্য চাওয়ার মতো কাউকে দেখছে না।

জায়গা টা নির্জন। তেমন মানুষের আনাগোনা নেই। মাঝে মাঝে দুই একটা গাড়ি হাওয়া চটে চলে যাচ্ছে। মানহা আকুতি মিনতি করে বলে,,

” প্লিজ ভাই আমাকে ছেড়ে দেন। আমি আপনাদের কি ক্ষতি করেছি। আপনাদের ও তো বাসায় মা বোন আছে। তাহলে কেন আমাকে এভাবে ধরে রেখেছেন। প্লিজ ছেড়ে দিন না। লোকটা ধমকে বলে ওঠে,,

” এই চুপ কর। বেশি কথা কস না। জানে মেরে দেব। লোকটার কথা শুনে কেঁপে ওঠে মানহা। দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরে। হাতের ফোনটাও নেই। সব কেড়ে নিছে লোক গুলো। মানহা ভেবে পাচ্ছে লোক গুলো কারা হতে পারে।

সবার ভিতর থেকে বস টাইপের লোকটা বলে,,

” শোনো আমি জানি তোমাকে আমি পাব না। তাই তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার কোনো প্রশ্নই আসে না বলে পকেট থেকে ছুরি বের করে। ছুরি দেখে কলিজা কেঁপে ওঠে মানহা’র। লোকটা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে মানহা’র দিকে। ভয়ে মানহা’র গলা বুক শুকিয়ে আসে। লোকটা মানহা’র পেটে ঢুকিয়ে দেয় ছুরি। মানহা জোরে চিৎকার করে ওঠে ।

*********

অর্ধেক রাতে চিল্লানোর শব্দ শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠে আবরার। পাশে মানহা কে ভয়ে গুটিশুটি মেরে থাকতে দেখে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, বনবিড়াল কি হয়েছে? এমন করছো কেন? আমি আছি দেখো কিচ্ছু হবে না পাখি। প্লিজ ভয় পেয়ো না। মানহা আবরার কে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ধরে রাখে। যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। ভয়ে মানহা’র পুরো শরীর কাঁপছে। মানহা বিড়বিড় করে বলছে,

” প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও। আমাকে মেরো না। প্লিজ আমাকে মেরো না । আমি কিছু করিনি।

আবরার বুঝতে পারে মানহা দুঃস্বপ্ন দেখেছে। অনেক ভয়ংকর কিছু। এজন্য খুব ভয় পেয়েছে।

দরজার কাছে বাড়ির সবাই দাড়িয়ে আছে। দরজা ভিড়ানো ছিল আবরার বললে সবাই হুড়মুড় করে ভিতরে ঢুকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? মানহা চিৎকার করল কেন? আবরার সবাইকে বলে, স্বপ্ন দেখছে। খুব ভয় পেয়েছে মা। বাড়ির সবাই খুব টেনশনে পরে যান। হঠাৎ করে মেয়েটা কি এমন স্বপ্ন দেখল যার জন্য এতটা ভয় পেয়েছে। আবরার কে সাবধানে থাকতে বলে চলে যাব সবাই।

মানহা ভয়ে একটা কথাও বলতে পারেনি। তখনের পর সারাটা রাত আর ঘুম হয়নি দুজনের। নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে তারা।

চলবে ইনশা আল্লাহ