গোধূলির শেষ প্রণয় পর্ব-৩৯

0
8

#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৩৯

শীতের হিমেল সকাল। ঢাকা শহরের রাস্তা গুলো যেন আজ অন্যরকম। একে একে গাছের পাতা গুলো সোনালী রং ধারণ করেছে, ঠান্ডা বাতাসে জীবনের এক অদ্ভুত স্বপ্নীলতা।

সময় প্রবাহমান স্রোতের মতো দেখতে দেখতে তিন তিন টা বছর পাড় হয়ে গেছে। কোনো কিছুই থেমে নেয়। সবকিছু চলতে থাকে নিজ নিয়মে। কোনো কিছু চাইলেও পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। এই তিনটা বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। কিছু মানুষের জীবনই অন্যরকম হয়ে গেছে।

খান ভিলায় তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। কেন না খান বাড়ির ছোট ছেলে মিরাজ খানের বিয়ে কাল। সেজন্য পুরো বাড়ি জুড়ে হইচই হচ্ছে। সারা বাড়ি তে মানুষ গিজগিজ করছে। মিরাজের বিয়ে উপলক্ষে পাঁচ দিন আগে এসেছে মানহা আর তার পুচকে ছেলেমেয়ে। হ্যাঁ মানহা আর আবরারের ভালোবাসার চিহ্ন তাদের জমজ সন্তান। মানহা’র জমজ সন্তান হয়েছে। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। মেয়েটা সাতান্ন সেকেন্ডের বড়। আর ছেলেটা সাতান্ন সেকেন্ডের ছোট। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখে আছে মানহা। তাদের ছোট্ট একটা সংসার। যেখানে ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। শশুর শাশুড়ির চোখের মণি মানহা’র ছেলে আয়ুশ আর আরুহি। তাদের বয়স দুই বছর।
আয়ুশ কম কথা বলে। গম্ভীর স্বভাবের। আর আরুহি অনেক চঞ্চল দুষ্টু। সারা বাড়িতে গুটিগুটি পায়ে হেটে বেড়ায়। কখনো স্থির থাকে না।

*****

অয়ন আর নিরার একটা ছেলে হয়েছে। ছেলের নাম আদ্রিশ। আরুহির একমাসের বড়। সাপে নেউলের সম্পর্ক দুজনের। দুজন এক জায়গায় থাকলে ঝগড়া বেঁধেই যায়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে কথা বলা বন্ধ করে দেয়, পরমুহূর্তেই এসে মিলে যায় দুজনে।

****

সকল আত্মীয় স্বজনরা এসেছে। খুব ধুমধাম করে বিয়ে মিরাজের। বিয়েটা প্রিয় মানুষের সাথে হচ্ছে। এজন্য মিরাজের আনন্দের শেষ নেয়। তানশির সাথে তার সম্পর্কের কথা এক বছর আগে জেনেছে সবাই। মানহা সবাই কে জানিয়ে দিয়েছে। ভাই আর বোনের ভালোবাসার পূর্ণতা পাইয়ে দেবার জন্য সব করেছে।

তানশি’র পরিবার বাংলাদেশে ব্যাক করেছে এক মাস হলো। আমেরিকা থেকে একেবারের জন্য চলে এসেছে। তানশি’র বাবা নিজের রেস্টুরেন্ট বিক্রি করে দেশে এসে একটা বড় রেস্টুরেন্ট দিয়েছে। আর কত কালই বা নিজ জন্মভূমি ছেড়ে থাকবে তারা। শেষ বয়সে না হয় নিজ জন্মভূমিতে বাকি জীবন কাটাক। ছেলে মেয়ের কথা ভেবে এতদিন দুর দেশে থেকেছেন।

নিজের বাড়িতে বসে ফোনে প্রেমালাপ করছে মিরাজ আর তানশি। কিন্তু তাদের প্রেমালাপ বেশিক্ষন স্থায়ী হলো না। তাদের প্রেমালাপের ব্যগাত ঘটানোর জন্য চলে আসছে মিরাজের বন্ধু নাহিদ। এসেই ফাজলামো শুরু করে দেয়। নাহিদের কাজকর্মে বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে দেয় মিরাজ। রাগি দৃষ্টিতে নাহিদ কে বলে,

” তুই আমাকে কথা বলতে দিলি না। এখন তোর ব্রেকাপের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমার।

” লও ঠেলা সামলাও। সামান্য কথা বলতে দিলাম না বলে তুই আমার ব্রেকাপ করে দিবি মামা। দুই দিন পর বাবা মা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে বলছে। এখন যদি বলি মা বাবা আমার ব্রেকাপ হয়ে গেছে। তোমাদের যেতে হবে না। তখন তারা অন্য কোথাও আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পরে লাগবে। মানসম্মান বলতে কিছু থাকবে না আমার।

নাহিদের কথায় হেসে উঠে মিরাজ বলে, আমি তো এটাই চাইছি মামা।

” শালা বন্ধু নামের কলংক তুই। থাকুম না তোর বিয়েতে চলে যাবো।

” কোথায়?

” বিদাশেে,, বলে দু’জনে উচ্চ স্বরে হাসতে থাকে। দু’জনের হাসির শব্দ শুনে সেখানে উপস্থিত হয় মানহা। সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় হাসি’র শব্দ শুনে না এসে আর পারল না। এসে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,,

” কি ব্যাপার তোরা দুজন এভাবে হাসছিস কেন? পাগলটাগল হয়ে গেলি না তো। মানহা’র কথার পরিপ্রেক্ষিতে মিরাজ বলে,

” চলে যাব কিন্তু? মানহা অবাক হয়ে বলে কোথায়?

” বিদাশেেে

মিরাজের কথা শুনে মানহা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কিসব বলছে তার ভাই। আজ বাদে কাল তার বিয়ে। মানহা এগিয়ে গিয়ে মুখে হাত দিয়ে সিরিয়াসলি বলে,

” মিরাজ তোর কি হয়েছে? এভাবে আবোলতাবোল বলছিস কেন? তুই ঠিক আছিস তো ভাই।

মিরাজ বুঝতে পারে তার আপু অন্য কিছু ভেবে ফেলছে। তাই আপুকে জড়িয়ে ধরে বলে, আপু আমি মজা করছিলাম তোমার সাথে। তুমি টেনশন করো না তো। একটু আগে নাহিদ আমাকে একই কথা বলছিল তাই আমিও তোমাকে সেটাই বলছি।

” যাক বাবা। সব ঠিক থাকলেই হচ্ছে। তোরা এনজয় কর আমি আসি।

” ওকে আপু।

*******

রাত এগারোটা। একটু আগে মিরাজের হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। এখন যে যার মতো করে আছে। কেউ কেউ হাতে মেহেদী নিচ্ছে, কেউ কেউ শুয়ে পরছে, কেউ ফোন দেখছে।

নিজের চিরচেনা রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে মানহা। তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে আছে আবরার। মানহা চুপচাপ উপলব্ধি করেছে তার ব্যক্তিগত পুরুষের ছোঁয়া। আবরার নেশালো কন্ঠে বলে,

” তুমি এত কিউট গুলুমুলু কেন বনবিড়াল? তোমাকে এত কেন ভালো লাগে আমার?

আবরারের কথায় মানহা হেঁসে ওঠে বলে, তুমি আমাকে ভালোবাসো বলে আমাকে কিউট গুলুমুলু লাগে তোমার কাছে। পুরুষের চোখে তার ভালোবাসার নারীকে দেখতে সবসময়ই ভালো লাগে। কখনো খারাপ লাগে না। বুঝছো।

” হু। হতে পারে। একই ভাবে থেকেই আবার বলে, দেখতে দেখতে কতগুলো দিন পাড় হয়ে গেলো। সবটা স্বপ্নের মতো লাগে তাই না।

” হ্যাঁ। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে যে আমার ভয় লাগে আবরার।
সেদিনের সেই স্বপ্ন আজও আমায় তাড়া করে বেড়ায়।

” আমি থাকতে ভয় কিসের। সবসময় নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে তোমাকে আগলে লাগব। বলে মানহা কে ঘুরিয়ে কপালে ভালোবাসার পরশ ছুয়ে দেয়।

অনেক রাত হয়েছে চলো ঘুমিয়ে পড়ি। বাচ্চা দুটো ঘুমাচ্ছে। ওদের কে ওদের মতো থাকতে দাও। তুমি আমাকে সময় দাও বউ। অনেক দিন হলো বউয়ের সাথে ঠিক করে রোমাঞ্চ করতে পারি না। আজ একটু সুযোগ পেয়েছি সেটা কি ছাড়া যায় বলে ঠোঁট কামড়ে হাসে আবরার। আবরারের কথায় মুখ হা হয়ে যায় মানহা’র। বিস্ময় নিয়ে বলে,

” ছিহ! কি বলো। দুই বাচ্চার বাপ হয়েও ঠোঁট কাটা কথাবার্তা ছাড়তে পারলা না। বুইড়া বয়সে এসে এসব কথা বলো ছিহ! ছিহ!

” তুমি আনরোমান্টিকই থেকে গেলে বউ। একটু রোমান্টিক হতে পারো না। তাহলে আমার ছেলে মেয়ের আবার ভাইবোন দুনিয়ায় ল্যান্ড করতে পারতো।

আবরারের লাগাম হীন কথাবার্তা আর সহ্য করতে পারে না মানহা। বেলকনি থেকে রুমে চলে যায়। মানহা’র কান্ডে বোকা বনে যায় আবরার। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। সে বুঝতে পারল না তার বউ রাগ করল নাকি লজ্জা পেয়ে চলে গেলো।

চলবে ইনশা আল্লাহ

[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]