তুই আমার কাব্য পর্ব-৩৮+৩৯

0
1866

#তুই_আমার_কাব্য 🍂

#Writer: Anha Ahmed
#Part: 38 + 39
.
🍁
.

বিবাহিত স্ট্যাম্প লেগেছে তার আজ দুইদিন। বরাবরের মতোই আজও সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠেছে মেঘলা। ধীর গতিতে সব কাজ করছে। ফ্রেস হয়ে এক কাপ কফি নিয়ে বারান্দায় কার্নিশে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ এদিক ওদিক কিছু একটা খুঁজছে। কিছু একটা কি আর! দি কাব্য ভাইয়া। কি ভেবেছিলো আর কি হলো। কোথায় ভেবেছে আর পাঁচটা মেয়ের বিয়ে হলে যেমন শ্বশুর বাড়ি যায়, বেশ আনন্দঘন পরিবেশ হয়, গান বাজনা, সবার সাথে আড্ডা, এতো এতো উপহার, রাতের বেলা কে কি উপহার দিলো সেগুলো দেখা, দেনমোহর আদায় করা। কিন্তু সে আর কোথায়? বিয়ে তো নামে হলো। বিয়ে করে বাবার বাড়িই রেখে গেলো। জন্মের পর থেকে তো বাবার বাড়িই আছি। শ্বশুড়বাড়ির চেহারা কি দেখা হবে না? মানে দেখেছে কিন্তু নিজের শ্বশুড়বাড়ি হিসেবে না তো। ফিলটাই আলাদা। আচ্ছা! এসব কিছু বাদ দিলাম। এই যে স্বামী নামক আজব প্রাণীটা খুব তো প্রেম দেখায়, সামনাসামনি দেখায় না মানলাম বাট আড়ালে তো স্বীকার করেছে ঠিক তবুও কি সে একদিনও এসেছে সকালে শুভ সকাল জানাতে? নাহ্! তার তো পাত্তাই নাই। বিয়ে করে উদ্ধার করেছে একদম। না না উদ্ধার করে নি, ভেলায় বাসিয়েছে। বিয়ে হয়েছে কোথায় কয়েকটাদিন মাথায় থাকবে তা না। লেখাপড়ার জন্য ছেড়ে রেখে গেছে। লেখাপড়ার কাছ থেকে ছুটটেই বিয়ে শ্বশুড়বাড়ি যাবে। সব কিছু উল্টো। হুহ! লেখাপড়ার কথা মনে আসতেই মনে পড়লো বেশ কয়েকদিন যাবৎ মেঘলার ভার্সিটির মুখটা দর্শন করা হয় না। কাপটা ছোট টেবিলটায় রেখে এতো সবকিছু ভেবে, আফসোস করে একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে ভার্সিটির জন্য রেডি হতে চলে গেলো।

গাঢ় নীল রঙের একটা চুড়িদার পড়ে মাথায় চুলগলো এক সাইডে চিকন বেনি করে রওনা দিলো। গাড়িতে ওঠতে যাবে তখনই ফোনে একটা ম্যসেজ এলো। ম্যাসেজটা দেখে খুশিতে টইটুম্বুর হয়ে গেছে মেঘলা। তারপর খুশিটা ছালা দিয়ে ঢেকে রেখে গাড়ি রেখে গেটের দিকে হেঁটে চলে যায়। গেটের বাহিরে আসতেই পাশেই কাব্যর গাড়ি দাঁড়ানো অবস্থায় পেলো। খুশি খুশি চেহারায় গম্ভীরতা এনে কাব্যর জানালায় টোকা দিলো। বেটার এটিটিউট কি! জানালা বন্ধ করে বসে আছে। মেঘলা যে গিয়েছে তা কি দেখে নি? তবুও বসে আছে। বেটা আসলেই খাটাস। জানালার কাঁচটা নামিয়ে মেঘলার দিকে না তাকিয়েই গম্ভীর মুখে বললো,

– এপাশ দিয়ে কি আমার কোল বসে যাবে?

একটাবার তাকালোও না। কি ভাব! (এই ভাবের মধ্যে যদি আগুন না দিসি আমি তাহলে আমার নাম আনহা না।) মেঘলার কাব্যর ভাব দেখে সকাল সকাল যেনো মেজাজ চড়ে গেলো। সেও ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,

– বিন্দুমাত্র শখ নাই আপনার কোলে বসার। হুহ! আপনার কোলো বসার থেকে তো ভালো আমি এই রাস্তায় বসে থাকি।

– তাহলে তাই থাকো। আমি গেলাম।

– যেতে না করেছে কে? আমার অনেক লোক আছে যারা সেচ্ছায় আমাকে লিফট দিবে। আপনার মতো আলগা ভাব দেখাবে না।

– আলগা ভাব! কি ভাষা! ভার্সিটিতে পড়া একটা মেয়ে নাকি এইরকম ভাষা ব্যবহার করে।

– ভার্সিটিতে পড়া একটা ছেলে নাকি তার একমাত্র বউয়ের সাথে এইভাবে আচরণ করে।

– বউ! কে তুমি?

– না না। আমি কেনো হবো? আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন যিনি আমার ডাবল আত্মা তিনি।

– ওয়াট ননসেন্স!

– বাংলায় বলুনতো এইটা। পারবেন? ইংরেজিতে বকা দেয়াই যায়।

– এই মেয়ে একদম চুপ! একদম আজে বাজে বকবক করবে না। ওপাশ দিয়ে ঘুরে এসে বসো চুপচাপ। মাথা খেয়ে নিচ্ছে সকাল সকাল। আল্লাহ জানে সারাজীবন কিভাবে সংসার করবো এর সাথে।

মেঘলা পাশের ছিটে এসে বেল্ট বাঁধতে বাঁধতে বললো,

– করতে বলছিলো কে? আমি কি যেচে আপনাকে বিয়ে করতে গিয়েছি নাকি? আপনি, আপনি এসেছেস বিয়ে করতে।

– বুদ্ধিভ্রম হয়েছিলো আমার।

– তারমানে স্বীকার করলেন আপনি করছেন?

কাব্য মেঘলার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে তো দেরি মেঘলার চুপ হতে দেরি না। সাথে সাথে মিউট হতে দেখে কাব্যর বেশ হাসি পাচ্ছিলো। সামনের দিকে তাকিয়ে মুখটা সোজা করে আছে। বাকি রইলো মেঘলার কথা। সে এখনো চুপচাপই আছে।

গাড়ি গেটের বাহিরে এসে থেমেছে। মেঘলা দ্রুত নামতে যাবে কিন্তু গেট আর খুলছে না। গেট খুলছে না দেখে মেঘলা কাব্যর দিকে ঘুরে তাকালো। কাব্য সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং হুয়িলে হাত রেখে আঙ্গুল নাচাচ্ছে। মেঘলা বিরুক্তি প্রকাশ করে জিজ্ঞাসা করলো,

– সমস্যা কি? খুলে দিন দরজা।

– আগে মাথায় ওড়না দাও।

– দিবো না

কাব্য মেঘলার কাছে গিয়ে এক হাত মেঘলার ঘাড়ের ওপরের সিটে রেখে আরের হাত সামনে ভর দিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলে,

– ডিয়ার! আমি জিজ্ঞাসা করি নি আর না কোনো অপশন রেখেছি।.. বাই দা ওয়ে পরপুরুষকে চুল দেখানোর এতো শখ?

– মোটেই না।

– দ্যান ডু ইট। আর এতো সাজগোছ করেছো কেনো? কাকে দেখ্তে এতো সাজগোছ করছো? কোনো আশিক টাশিক জুটিয়েছো নাকি।

– হ্যা। একটা না একাধিক। সমস্যা কোনো?

– এইটা আবার জিজ্ঞাসা করতে হয়? আমার বউয়ের আশিক থাকবে তাতে আমার সমস্যা থাকবে না তো কি পাশের বাড়ির আন্টির ছেলের থাকবে?

– কিছুক্ষণ আগেই তো অস্বীকার করলেন বউ না আমি আবার এখনি বলছেন বউ? আপনার তো মেয়েদের থেকেও ব্যপক মুড স্যুইং করে।

– প্রমাণ আছে কোনো বলেছি?

– আপনার না মাথা খারাপ হয়েছে পুরো। আপনার সাথে থাকলে আমারো হবে।

– নামার আগে লিপস্টিকটা মুছো

– মুছবো না

– ওকে

মেঘলা অন্য দিক তাকানোর সাথে সাথে বড় সড় একটা শক খেলো। ধুপ করে কাব্য মেঘলার ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে করে নিয়ে সেকেন্ডের মধ্যে ছেড়েও দিলো। এরপর আবার নিজের জায়গায় গিয়ে স্বাভাবিকভাবে বললো,

– হুম! এখন ঠিক আছে। পারফ্যক্ট কালার।

মেঘলা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে এইটা বাস্তব নাকি কল্পনা। ঝড়ের বেগে সবকিছু হয়ে গেলো। কিন্তু এইটা হলো টা কি। একচুলও নড়ছে না মেঘলা। স্ট্যচুর মতো সামনের দিকে বড়বড় তাকিয়েই আছে। কাব্য হর্ণ বাজালে মেঘলা নড়েচড়ে বসে। কাব্যর দিকে তাকাতে পারছে না লজ্জায়। এরকম একটা কাজ করবে কাব্য তা মেঘলার ভাবনার দূর দুরান্তেও ছিলো না। দৌড়ে মাথা নিচু করে নেমে চলে যায়।

কাব্য মেঘলার কাহিনী দেখে মুচকি হেসে গাড়ি পার্ক করতে চলে যায়।

মেঘলা আর তনু সেই বট গাছের নিচে বসে হাওয়া খাচ্ছে। দুটো ক্লাস পরপর ফাকি দিয়ে বসে বসে বসে বাদাম চিবুচ্ছে আর গল্প করছে। ফোনে আলাপ করে শান্তি পায় নি এতোদিন তাই এখন পুনরায় সব টেলিকাস্ট করা হচ্ছে। তনু বেচারি সেই আক্ষেপ করছে বিয়েতে থাকতে না পেরে। গল্প করতে করতে ওখানে গিয়ে হাজির হয় একটা ছেলে। ছেলেটিকে চিনতে একটুও কষ্ট হয় নি ওদের। সর্ব প্রথম দিন যে ছেলেটি স্প্রে দিয়েছিলো সেই ছেলেটি। ছেলেটি এসেই বললো,

– ভাবি! ভাই আপনাকে ক্যফেতে যেতে বলেছে।

মেঘলা তনু দুজনেই হা করে তাকিয়ে থেকে মেঘলা বললো,

– কাকে বলছেন?

– আপনাকে

– আমাকে? আমি তোমার কোন জন্মের ভাবি? কোন ভাইয়ের বউ আমি তোমার?

– আগ্গে এই জন্মেরই ভাবি আর আমাদের কাব্য ভাইয়ের বউ।

মেঘলার মুখে তখনও বাদাম ছিলো কথাটা শুনেই কাশি ওঠে যায়। তনু তাড়াতাড়ি পানির বোতল বের করে মেঘলাকে খাইয়ে দিলো। ছেলেটি আবার বলে ওঠে,

– ভাবি একটু তাড়াতাড়ি যান। না হলে আমাকে নিখোঁজ করে দেবে ভাই।

– হুম! আসছি। আপনি যান।

তনু মেঘলা একসাথে ক্যফেতে ঢুকলো। কাব্য একা বসে কিছু একটা করছে পাশে রনিও । সামনে বেশকিছু খাবার। সকালের ঘটনারটার জন্য মেঘলার কাব্যকে দেখলেই লজ্জায় গাল গরম হয়ে যাচ্ছে। কাব্যর কাছে যেতেও হাত পা কিঞ্চিৎ কাঁপছে। মাথা নিচু কাব্যর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

কাব্য কিছু লিখছে সম্ভবত। লেখার মধ্যেই মেঘলাকে চলে আসতে দেখে খাতা কলম রেখে মেঘলাকে বসে বলে। রনিও তখন ওঠে এসে তনুকে ইশারায় সরে আসতে বললো। যদিও তনু রনিকে ওতোটা চেনে না কিন্তু এমন জায়গায় কাবাবের হাড্ডি হওয়ার ইচ্ছে নেই। তাই রনির সাথে গিয়ে অন্য টেবিলে বসলো। মেঘলাকে বসতে বলে খাবারের সব প্লেটগুলো মেঘলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

– আধা ঘন্টা টাইম সবগুলো খালি করবে। আমার প্রেজেন্টেশনটা রেডি করতেও আধা ঘন্টা টাইম লাগমে। একসাথে যেনো শেষ হয়।

#তুই_আমার_কাব্য 🍂
#part: 39

এতো খাবার একসাথে শেষ করা সম্ভব ব্যপার। মেঘলার অসহায় দৃষ্টিতে কাব্যর দিকে তাকালো। কাব্যর মুখের কোনো পরিবর্তন না করে বলে,

– ওভাবে বেচারি করে তাকিয়ে থেকে কোনো লাভ হবে না। আমার বাড়িতে যাওয়ার আগে সব রোগবালাই ঠিক করতে হবে তোমার। সারাজীবন কি এমন রোগীলাকে নিয়ে থাকতে বলো নাকি? সবগুলো আয়রন জাতীয় খাবার। রক্ত বাড়াতে সাহায্য করবে। প্রতি দুই ঘন্টা পর পর খেতে বলেছেন ডক্টর। আড়াই ঘন্টা হয়ে গেছে কিছু খেয়েছো?

– হুম খেয়েছি তো। বাদাম।

– খুবই ভালো। এখন এগুলো খাও ধীরে ধীরে। পুরো পুরি শেষ না করতে পারলেও অর্ধেক করে খাও।

– আমি পারবো না সত্যি

– শুরু করার আগেই অজ্ঞান হচ্ছো কেনো দেখো। আচ্ছা! শুরু করো তারপর আমি আছি।

মেঘলা ঠোঁট উল্টিয়ে বসে আছে। কাব্য ওর দিকে তাকাতেই একটা আপেল টুক করে হাতে নিয়ে কামড় বসায়। কাব্য কপাল কুচকে বলে,

– ফল খাওয়ার পর খেতে হয়। পরবর্তীতে মনে রাখবে এইটা।

মেঘলা মাথা নিচু করে খাচ্ছে। আপেলটা কখনোই তার খেতে ভালো লাগে না। কিন্তু আজ ভয়ে সেটাই কুচকুচ করে খেয়ে নিচ্ছে।

মেঘলার খাওয়ার মাঝখানে পানি খাচ্ছে তখনই এক উত্তেজিত কণ্ঠ শুনে থেমে পেছন ঘুরে তাকিয়ে রাগে ভ্রু কুচকে এলো।

কাব্য বলে খুশিতে চিৎকার দিয়ে রাহি কাব্যর কাছে এসে বসে হাত জড়িয়ে ধরে বলে,

– দোস্ত আই মিস ইউ সো মাচ। কত্ত মিস করেছি তোকে। কয়েকদিন তুই উধাও ছিলি আর কয়েকদিন আমি। সেই এক্সামের পর থেকে তোর সাথে দেখাই হয় না। কত্ত হ্যন্ডসাম হয়ে গেছিস রে তুই।

মেঘলা চোখ সরু কাব্যর দিকে তাকিয়ে আছে। কাব্য রাহির হাত ছুটিয়ে মেঘলার দিকে লক্ষ করতেই দেখে রাগে ফুসছে। কাব্য তাকাতে দেরি তো মেঘলার উঠে তনুদের কাছে গিয়ে বসতে দেরি নেই। কাব্য কিছু উঠে মেঘলার কাছে যাবে তখন রাহি আবার থামিয়ে দিয়ে সামনে তাকাতেই মেঘলাকে চোখে পড়ে। রাহি এতোক্ষণ মেঘলাকে খেয়াল করে নি। রনিকে ওদের সাথে দেখে রাহি ওদের টেবিলে এগিয়ে গিয়ে বলে,

– হে রনি! তুই আবার ওদের সাথে কবে থেকে ভাব জমানো শুরু করলি?

– এখানে ভাব জমানোর কি দেখলি তুই?

– বসে আসিস একসাথে তো আর কি বলবো?

কাব্য রনি আর মেঘলার মাঝখানে রাহির বরাবর দাড়িয়ে রাহিকে চুপ হতে বলে। কিন্তু রাহি তো রাহিই। অকারণেই সেই মুরু থেকে মেঘলার প্রতি তার ক্ষোভ। তাই কোনো সুযোগই ছাড়ে না। মেঘলাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

– হে ইউ! সিনিয়র ছেলেদের সাথে এতো কিসের মিলামিশা? তোমার মতলব তো খারাপ মনে হচ্ছে।

তখনই কাব্যর ধমকে চমকিয়ে ওঠে সবাই। কাব্য এমনভাবে রিয়েক্ট করবে তা হয়তো রাহির জানা ছিলো না। কাব্য রাগী গলায় বলে ওঠে,

– রাহি ডোন্ট ক্রশ লিমিট। ভদ্রভাবে কথা বলতে শিখ। অযথা কাউকে কথা শুনানো তোর খুবই বাজে স্বভাবে পরিণত হচ্ছে। কারো সাথে কেউ কথা বললেই মতলব খারাপ হয় না। সামনে থেকে কারো সাথে বিশেষ করে মেঘলার সাথে এমন বিহেব করতে যেনো না দেখি তোকে।

রাহি অভিমানী সুরে বলে,

– তুই এই মেয়েটার হয়ে কথা বলছিস? ওর জন্য তুই আমার সাথে বারবার রুড বিহেব করছিস? কেনো? একটা বাহিরের মেয়ের জন্য নিজের ফ্রেন্ডকে অপমান করছিস?

– ও বাহিরের মেয়ে না। একবার বলে ফেলেছিস নেক্সট টাইম থেকে না । ও বাহিরের মেয়ে না।

– কে ও? কি হয় তোর যে তুই ওর জন্য নিজের এতে বছরের ফ্রেন্ডকে অপমান করছিস?

– কে হয় তা জানার……

কাব্যর উত্তরের সাথে সাথেই পাশ থেকে তনু ধুম করে বলে ওঠে,

– আরে মেঘলা তো কাব্যর ভাইয়ার চাচাতো বোন হয়। তাই না মেঘলা?

মেঘলাকে কুনুই দিয়ে গুতো দিয়ে। মেঘলা, রনি ও কাব্য তিনজনরই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। তিনজনেই ভেবাচেকা খেয়ে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। তনু একটা মেকি হাসি দিয়ে রাহির দিকে তাকিয়ে বলে,

– হে হে মেঘলাই তো বলেছে।

মেঘলাকে আবার একটা গুতো দিতেই মেঘলাও স্বীকার করে ফেলে। মেঘলার মুখে সম্মতি শুনে কাব্য মেঘলার দিকে তাকায়। স্পষ্ট আহত এ চাউনি। আর মেঘলা দুই ঠোঁট চেপে ধরে দুঃখিত চোখে তাকিয়ে থাকে।

তনু সাথে সাথে আবারো ফুসে বলে ওঠে,

– চাচাতো ভাই? কেমন চাচাতো ভাই? কাব্য তোর যে চাচা আছে জানতাম না তো।

তখন তনু আবারো বলে,

– আরে আপন না তো।

– তাহলে?

– মেঘলা জানে

আবারো মেঘলার দিকে কাটা ঘুরিয়ে দিলো। এই মেয়েটা মেঘলার থেকেও মাথামোটা। একে তো নিজে ফাঁসিয়েছিস তারওপর আবার সাফাইও দিতে তাকেই লাগে। এখন কি বলবে? কিভাবে বুঝাবে কেমন চাচাতো ভাই। কাব্য রাগে বলেই পড়লে। সামনের শসার পিছগুলো মেঘলার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে খাচ্ছে। মেঘলার তো গলা শুকিয়ে কাঠ তার মধ্যে আবার কাব্যর এমন চাউনি। কিছুক্ষণ ভাবার পর অবশেষে সাফাই পেলো। হাসি হাসি মুখে মেঘলা বলে,

– চাচাতো চাচাতো ভাই

রাহি একটু অবাক হয়ে বলে,

– এইটা আবার কেমন?

– মানে হলো কাব্য ভাইয়ার আব্বু আর আমার আব্বু হলো বন্ধু। আমার আব্বুর আব্বু যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে কাব্য ভাইয়ার আব্বু নিশ্চয় তাকে কাকা বলে ডাকতেন। কাকা মানেই চাচা। তাহলে সেই হিসেবে আমার আব্বু আর কাব্য ভাইয়ার আব্বু হলেন চাচাতো ভাই। আবার কাব্য ভাইয়ার আব্বু আমার আব্বুর বন্ধু হওয়ায় তাকে আমি আংকেল বলে ডাকি। আমরা সবাই জানি আঙ্কেলের বাংলা চাচা। এখন কাব্য ভাইয়াে আব্বু আমার চাচা হলে তার ছেলে অর্থাৎ কাব্য ভাইয়া আমার চাচাতো ভাই। সিম্পল! হি হি

মেঘলা একদমে কথা বলে কাব্যর দিকে তাকালো। কাব্য বেশ ঠান্ডা হয়ে বসে আছে। এইটুকু সময়েই ঠান্ডা হয়ে গেছে। নিশ্চয় শশা খাওয়ার সুফল। এখনো খাচ্ছে। পুরো শশার প্ল্যটটা হাতে নিয়ে মেঘলার গাঁজাখুরি গল্প মন দিয়ে শুনছে।

অন্যদিকে তনু রনি এমনকি রাহি নিজেও বেশ কন্ফিউশনে পড়ে গেলো মেঘলার কথা শুনে। কেননা মেঘলার কথার শব্দগুলো প্রায় একই। বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। যার কারণে শুধু চাচা আর আব্বু এগুলোই ঘুরছে। রাহি তো মিলাতেই পারি নি। অবশেষে বিরক্ত হয়ে বসে পড়ে।

রাহি বসতেই কাব্য প্লেটটা রেখে সোজা ওঠে মেঘলার হাত ধরে টানতে টানতে বেড়িয়ে গেলো। তনু আর রনি রাহির দিকে তাকিয়ে দুজনে একসাথে কেটে পড়ে। আর রাহি শুধু তাকিয়েই রইলো।

কাব্য মেঘলাকে নিয়ে পাঠাগারের ভেতরে নিয়ে যায়। একদম শেষ সারির কোণায় চেয়ারে বসিয়ে মেঘলার উপর ঝুকে জিজ্ঞাসা করে,

– এই মেয়ে! আমি তোমার কোন জন্মের চাচাতো ভাই?

– হে হে এই জন্মের

– ঠাটায় এক চড় মারলে হাসি বন্ধ হয়ে যাবে আর জামাইকেও ভাই বলা বের হবে। অসভ্য মেয়ে।

– আমাকে কেনো বকছেন? আমি বলছি নাকি? বললো তো তনু।

– ওকে বলছে কে?

– আমি বলি নি। আমি তো ওকে সব সত্যি বলেছি। এসব আমি বলি নি। আমি জানি না কেনো ও এইটা বললো

– দুটোই মাথা মোটা। আর না হয়ে যাবে কোথায়? বান্ধবী যখন তখন তো এগুলার ব্রেণ একিই জাতীয় থাকবে। গোবর সব। আর কিছু বলা যেতো না? আর কোনে পরিচয় নেই? আমি যে তোমার বোনের দেবর সেইটাও কি মাথায় আসলো না?

– আরে বাবা আমাকে বলছেন কেনো? আমি কি বলছি নাকি আজব।

কাব্য সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কোমড়ে দুই হাত রেখে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে আবারো মেঘলার উপর ঝুকে বলে,

– এই বারের মতো ছাড় দিলাম। ফারদার আর শুনছি এরকম কথা মেরে তক্তা বানাবো একদম।

মেঘলার মুখটা চুপসে আছে একদম। কাব্য ব্যপারটা বুঝতে পেরে স্বাভাবিক হয়ে মেঘলাকে দাঁড় করিয়ে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জগিয়ে ধরে। থুতনিটা মেঘলার কাঁধে রাখে। মেঘলার পেটের ওপর দিয়ে কাব্যর হাত। সারা শরীর ঠান্ডা বরফ হয়ে জমে যাচ্ছে। নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে প্রবাহিত হওয়া রক্ত অবাধ্যভাবে যেনো ছুটছে। বুকের ভেতর বিরামহীন হাতুড়ি পেটাচ্ছে। অসহ্যরকমের ভালালাগা। কাব্যর নিঃশ্বাসগুলো কাঁধে আঁচড়ে পড়ছে। হাতের লোমগুলো দাঁড়িয়ে যাচ্ছে মেঘলার। এক হাতদিয়ে জামা খামছে ধরে আছে। কাব্য বেশ নরম গলায় বলে,

– মিসেস কাব্য হয়ে এতটুকুতে চুপসে গেলে হবে? সাহস রাখতে হবে। তবে অনেকটা না আবার একদম কমও না। একতম চুপসে গেলেও চলবে না আবার ভয় না পেলেও চলবে না। বুঝেছো? আর শুনো একদম বাধ্য মেয়ে হতে হবে। খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করতে হবে। সুস্থ না হলে আমি তোমাকে আমার বাড়িতে নেবো না। আমার কাছেও নেবো না। এভাবেই থাকবো সারাজীবন। এখন সিদ্ধান্ত তোমার। কি চাও?

কাব্যর শেষের কথা শুনে মেঘলার মন ছোট হয়ে এলো। এ ছেলে কি কিছুই বুঝবে না। নিজেও তো ভালোবাসে সেইটা স্বীকার করবেই না আবার অন্য যে ভালোবাসে সেটাও বুঝবে না। মেঘলা গাল ফুলিয়ে হ্যা সূচক উত্তর জানায়। এরপর সামনে ঘুরিয়ে মাথায় ওড়নাটা টেনে কানে চুল গুজে কোমড়টা এক হাত দিয়ে টেনে বলে,

– ক্লাসে যাও। আর একটা ক্লাস আছে। শেষ করে গেটের বাহিরে দাঁড়াবে। আমি পিক করে নিবো। উস্তাদগিরি করে একা যাবে তো সুরমা নদীতে ঢিল দিয়ে রেখে যাবো যাওয়ার সময়।

ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। কাব্য যেতেই মেঘলা তিনবার বড় বড় নিশ্বাস ফেলে। আর কিছুক্ষণ এরকম থাকলে আবারো হয়তো অজ্ঞান হয়ে যেতো না হলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যেতো। পরে করোনার রুগি ভেবে হাসপালে ধরে নিতো। সাংঘাতিক ব্যাপার। মানুষকে মারতে বেশি কিছু লাগে না। এভাবেই মেরে ফেলা যায়।

চলবে…….. ❤