#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 16
তাই টিনা রেগে হেঁটে ওখান থেকে চলে গেলো। আর আঁখিকে দেখে আছে সে কি করছে না করছে।
এদিকে আঁখিকে একদিকে দাঁড়িয়ে থাকতে একটা ছেলে আসলো
-আর বলল হাই, আমি পলাশ। ইউ
-আমি আঁখি।
-ওহ গুড। কি করেন?
-জ্বী পড়াশোনা।
-ওও দ্যাটস গুড। কিসে পরেন?
-ক্লাস টেন।
-বাহ্ ভালো তো
আঁখিকে এভাবে হেসে হেসে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে আর ওই ছেলের সাথে হাত মিলাতে দেখে আয়াজের যেনো রাগ আকাশে উঠে গেছে। তাই সে রাগে ওইদিক থেকে চলে গেছে। কারণ সে বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাচ্ছে না।
যদি ওখানে আর কিছুক্ষণ থাকতো তাহলে দেখা যেতো ওই ছেলের সাথে কিছু একটা করে ফেলতো। তাই সে সরে গিয়েছে।
আঁখি ছেলেটার সাথে কথা বলেই একটু অন্য দিকে যেতে নেই তখনই কেউ একজন হাত চেপে ধরে কই যেনো নিয়ে যাচ্ছে। আঁখি সামনে তাকিয়ে দেখলো এটা টিনা আপু।
-একি টিনা আপু আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।
-টিনা কোনো কথা বলছেই না। তারপর টিনা আঁখিকে ছাদে নিয়ে আসলো। এনেই ধাক্কা দিলো। আর বলতে লাগলো
-এই বেহায়া মাইয়া তোর লজ্জা করে না। এভাবে নিজের রূপ দেখিয়ে আয়াজকে ভোলাতে এসেছিস। আসলে তোদের মতো সস্তা মেয়েরা এর থেকে বেশি আর কিবা পারে। দেখেতো মনে হয় পিচ্চি। ভাজা মাছটাও উলটে খেতে পারিস না। কিন্তু কিভাবে ছেলে ভোলাতে তা খুব ভালো করেই জানিস। এসব বেশ্যাপানা করে তুই এই টিনার সাথে পার পাবিনা। আর শুনে রাখ আয়াজ আমার বয়ফ্রেন্ড। ওকে আমি বিয়ে করবো। আমরা দুইজন দুজনকে ভালোবাসি। সো তোকে যদি আর কখনো আয়াজের আশে পাশে দেখেছিতো তোর এমন হাল করবোনা আয়না নিজের চেহারা নিজেই দেখে ভয় পাবি।
-ছিহ! আপনি এতো নিচ। আমার ভাবতেি লজ্জা লাগছে যে আয়াজ ভাইয়ার মতো মানুষ আপনাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে বাঁচায় করেছে। ছেলেদেরকে আমি রুপ দেখিয়ে বেড়ায় না। বেড়ানতো আপনি এসব শর্ট কামিজ পরে ছেলেদের সামনে ঘুরে বেড়ান। বেশ্যাপানা আমি করে বেড়ায় না। আজ পর্যন্ত কার সাথে নোংরামো করে বেড়িয়েছি। আর আয়াজ ভাইয়ার কাছে আমি কখনো যায়না। আর যাবোও না। বলেই ওখান থেকে হনহন করে চলে আসতে লাগলাম।
যেতেই মাঝপথে হঠাৎ আয়াজ ভাইয়া আমাকে টান মেরে পাশের রুমে ঢুকিয়ে ফেলে। আর হাত দুটি দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলতে থাকে ওই ছেলের সাথে হেসে কথা বলছিস কেন? হাসি যেনো থামছেই না না। ছেলেদের হাসি দেখাতে খুব ভালো লাগে তাই না।
আঁখির যেনো রাগে শরীর জ্বলছে। শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে আয়াজে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়।
আর চিৎকার করে বলতে থাকে, কি পেয়েছেনটা কি সবাই আমাকে। খেলার পুতুল আমি? যে যেভাবে নাচাবেন সেভাবে নাচবো? আমার কোনো স্বধীনতা নেই। মানুষ মনে হয়না আমাকে? আমার ভিতরে কি কোনো প্রাণ নেয়? আমার সবকিছু নিয়ে কেন এতো মাথাব্যথা। কই বাসায়তো মেয়ে আরো আছে তাদের সাথে এমন করেন না। আমি এটা করলে দোষ ওটা করলে দোষ এটা করতে পারবিনা ওখানে যাবি না। পেয়েছানটাকি? আপনাদের বাসায় থাকি খায় পড়ি এইজন্য এমন করেন। এতো কিছু না করে এককাজ করুন আমাকে মেরে ফেলুন। খাবারের সাথে বিষ দিয়ে মেরে ফেলুন কেউ জানবে না। আপনাদের ঘার থেকে আপদ নেমে যাবে।
শুনুন, আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। নেক্সট টাইম আমার ধারে কাছেও ঘেঁষার চেষ্টা করবেন না। বলেই হনহন করে রুমের দিকে হাঁটা দিলাম।
আয়াজ যেনো অবাক। এ কাকে দেখছে সে? যে কিনা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারেনা সে। কি হয়েছে এই মেয়ের? নিশ্চয় কেউ কিছু বলেছে। কে বলতে পারে? আর ছাদে কেন গেলো?
-সাথে সাথেই আয়াজ ছাদে গেলো। কিন্তু কাউকে পেলো না। নিচে নেমে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। আমাকে এভাবে এখানে ওখানে তাকাতে দেখে আদনান এসে বলল
-কিরে কি খুঁজিস?
-ছাদে কাউকে যেতে দেখেছিস?
-নাহ তা দেখিনি। তবে কিছুক্ষণ আগে টিনাকে নামতে দেখলাম।
-আয়াজের এবার যেনো পরিষ্কার হয়ে যায়।
জলদি ওখান থেকে টিনার কাছে যায়।
টিনার কাছে যেতেই টিনা বলল
-আরে বেপ এসেছো? আমিতো তোমাকে খুঁজছি। বলেই আয়াজকে হাগ করতে যাবে, অমনি আয়াজ হাত দিয়ে আটকিয়ে দিলো
-আর আস্ক করলো, আঁখিকে তুমি কি বলেছো?
-কি বলেছি মানে?
-এতো ঢং না করে সত্যি টা বলো?
-ওই নোংরা মেয়েটা তোমাকে আমার নামে পেচ লাগিয়েছে তাই না?
-জাস্ট সাট আপ! ও তোমার মতো নয় যে যেটা সেটা আমাকে বলতে আসবে। তুমি কি বলেছো সেটাই বলো চিল্লিয়ে বলে উঠলাম।
-আয়াজে চিৎকারে টিনা কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। আর রেগে বলল, কি বলেছি আমি! আর যা বলেছি ঠিকি বলেছি। ওই দুই টাকার মেয়েটা যেনো তোমার পিছনে ঘুরঘুর না করে তাই বলেছে। রুপ দেখিয়ে তোমাকে বোলাতে এসেছে তাই বলেছি। কজ তুমি আমার বয়ফ্রেন্ড তোমাকে আমি বিয়ে করবো, যাতে করে সে তোমার কাজ থেকে দূরে থাকে তাই বলেছি।
-আয়াজ ঠাসস করে টিনার গালে চর বসিয়ে দিলো। আর বলল, আমি কখন বলেছি তুই আমার গার্লফ্রেন্ড। তুই নিজেই যেচে সবাইকে বলে বেড়াস আমি তোর প্রেমিক হয় আমি না। আর কাকে দুই টাকার মেয়ে বলছিস। আঁখিকে? ওর হাতের নখের যোগ্যতা তোর মধ্যে আছে। আর কি বলছিস ও আমাকে রুপ দেখিয়ে বশ করেছে।
-শুনে রাখ ও রুপের মায়ায় আমি সে জন্মের পর থেকে পড়ে আছি। ভালোবাসি আমি তাকে। she is my love, my wife, my soulmate everything… আর কিছু বলার আছে?
-ওয়াফ? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো টিনা।
-ইয়েস। আমার বউ। আমার বিয়ে করা বউ। এবার বুঝেছিস ওর জায়গাটা কোথায়। দ্বিতীয় বার তোকে যদি আঁখির আশেপাশে দেখেছি তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বলেই আয়াজ সেখান থেকে চলে গেলো।
এদিকে আঁখি রুমের দরজা বন্ধ করে ভিষণ কান্না করতে থাকে। আয়াজ আঁখির রুমের সামনে দিয়ে যেতেই কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়। দরজা ধাক্কা দিতেই বুঝতে পারে ভিতর থেকে লক করা। তাই সে রুম থেকে এক্সট্রা চাবি নিয়ে আসে।
দরজা খুলেই দেখে বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে, কান্না করছে। আয়াজ তাই আঁখির মাথার পাশে হাত রাখতেই আঁখি চমকে ওঠে। পিছন ফিরে দেখে আয়াজ ভাইয়া।
মেজাজটাই যেনো গরম হয়ে গেলো।
-তাই ওঠে রেগে বলতে লাগলাম আবার কেনো এসেছেন? কি চাই? আমি আমার কাছে আসতে বারন করেছিলাম না। তবুও কেন এসেছেন? আপনার লজ্জা করে না।
-আমার আমার কথাটাতো শোন?
-নাহ কিচ্ছু শুনবো না চলে যান এখান থেকে।
-আঁখ
-সাট আপ বেরিয়ে যান বলছি ভিষণ উত্তেজিত হয়ে গেছি।
আয়াজ আর পেরে না উঠে চট করে আঁখিকে চেপে ধরে আঁখির ঠোঁট দুটো নিজের মধ্যে নিয়ে নেয়। কারণ এটা ছাড়া আর তার কোনো উপায় নেই। কারণ সে আঁখিকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছিলো না।
আঁখি ছাড়া পাওয়ার জন্য ভিষণ চটপটাতে থাকে, আর না পেরে একসময় শান্ত হয়ে যায়।
-আঁখি শান্ত হতেই আয়াজ আঁখিকে ছেড়ে দেয়। আর বলতে থাকে টিনার কথায় কষ্ট পেয়েছিস?
-আঁখি কোনো কথায় বলছে না। চুপ করে আছে।
–টিনা মেয়েটা এমনি। ওর থেকে দূরে থাকবি সবসময়।
-ওহ আপনার গার্লফ্রেন্ড তাই?
-কে বলেছে আমার জিএফ। টিনা? ও সবাইকে তাই বলে বেড়ায়। তারপর আয়াজ সব খুলে বলে আঁখিকে।
-আঁখি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, আপনি চড় মেরেছেন তাকে?
-হুমম?
-😳😳😳
-এতো অবাক হওয়ার কিছুই নাই। আমার পিচ্চি কে বাজে কথা বলবে আর আমি ছেড়ে দিবো।
-আঁখি হেসে দিলো।
-ইসসসস কেঁদেতো চোখে মুখে কাজল লেপ্টে গেছে। ভুতনির মতো লাগতো। যা মুখ ধুয়ে আয়।
-আচ্ছা।
এরপর আঁখি ওয়াশরুমের দিকে যায়।
আর আয়াজ মনে মনে ভাবতে থাকে বাবাগো বাবা মহারাণীর ভিতরে যে এতো রাগ আছে জানা ছিলো না। কথায় আছে না চোরের দশ দিন গৃহস্থের একদিন। কথাটা আসলেই সত্য। সারাবছরের রাগ একেবারে ঝেরে দিলো।
এরপর আঁখি মুখ ধুয়ে বের হতেই আমি বললাম আমি তোকে সাজিয়ে দেবো। বলেই আর দেরি করলাম না। সুন্দর করে সাজিয়ে দিলাম। আঁখি যেতে নিবে অমনি আমি হাতটা ধরে ফেললাম। আর বললাম
শোন
-হুমম
-তখন যে বললি তুই আমাদের বাড়ির আপদ, আসলে সত্যি করে বলতো তোকে কখনো আম্মু আব্বু আমি সবাই আজিফাকে যতটা ভালোবাসি ঠিক ততটা কি আমরা তোকে ভালোবাসিনি? কখনো কি আজিফা কে বেশি তোকে কম এমন চোখে দেখেছি?
-নাহ। ববরং আমাকেই বেশি আদর করে সবাই।
-তাহলে বললি যে?
-রাগ হয়েছিলো খুব। কি বলতে কি বলেছি ননিজেও জজানি না।
-দ্বিতীয় বার যেনো আর না শুনি। আর রইলো মরার কথা। আজকে বলছিস তো বলেছিস আর কখনো যেনো মরার কথা না শুনি। নয়তো আমার খারাপ আর কেউ হবে না।
আর তোকে এখানে যেতে দেয়না ওখানে যেতে দেয়না সেটা সময় হলেই বুঝতে পারবি।
এটপর আয়াজ আঁখি দুজনে নিচে আসে। নিচে আসতেই ইফতি আপু জিজ্ঞেস করে কিরে তোর সাজ কই।
–আসলে আপু ভিষণ ভারী লাগছিলো তাই ধুয়ে ফেলেছি।
-ওহ।
এদিকে এফাজ আজিফাকে আংটি পরাচ্ছে আর আজিফা ইফাজকে। খুব সুন্দর ভাবেই অনুষ্ঠান শেষ হয়।
রাতে….
চলবে
#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 17
রাতে আঁখি বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে, তখন আয়াজ ভাইয়া কি বলল, সময় হলে বুঝবো? কি বুঝবো আমি? আচ্ছা আয়াজ ভাইয়া আমার কাছে আসলে এমন কেন লাগে। কেমন যেনো অদ্ভুত ফিলিং? আমার যেমন ফিল হয় ওমন ফিল কি আয়াজ ভাইয়ারও কি হয়। আচ্ছা আয়াজ ভাইয়া কি আমায় ভালোবাসে? যদি বেসেই থাকে তাহলে বলে না কেন? এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম।
সকালে
ঘুম থেকেই উঠে ফ্রেশ হয়ে হন্তদন্ত হয়ে রেডি হতে লাগলাম। আসলে স্কুলে কালচারাল প্রোগ্রামের জন্য গান নাচ প্রেকটিস চলছে। তাই একটু আগেই যেতে হবে। নাস্তা করেই আজকে একাই স্কুলে রওনা হলাম। কারকারণ আয়াজ ভাইয়ার সাথে যাওয়ার সময় নেই।
টেবিলে আয়াজ ব্রেকফাস্ট করেই আঁখিকে ডাক দিতে যাবে ওমনি রোজিনা চৌধুরী বললেন
-নেই। চলে গেছে
-মানে? একা?
-হুমম। স্কুলের প্রোগ্রামে নাকি এটেন্ড করতে লেট হয়ে যাবে তাই দ্রুত চলে যায়।
-আয়াজ মনে মনে ভাবছে এই মেয়েকে কয়েকদিন ছেড়ে রেখেছি দেখে ভয়ভীতি একদমই কমে গেছে। কতোবড় সাহস একা স্কুলে যায়। ফাযিল মেয়ে আজ আসুক খবর আছে।
এদিকে স্কুলে গিয়ে আমি প্রোগ্রামে জয়েন হলাম। কজ আঁখি আর ফ্রেন্ডসরা একটা গ্রুপ ডান্সে গান আর কবিতায় লিস্ট হয়েছে। তাই তারা প্রেকটিস করছে। কারণ দুইদিন পরই প্রোগ্রাম।
আয়াজ ওর ফ্রেন্ডসদের নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে। আর আজকে আয়াজের সব ফ্রেন্ডসরা বান্দরবান ট্রিপে যাবে। বাট আায়াজ যেতে পারবে না কজ তার অফিস সামলাতে হবে। সেজন্য আয়াজ তাদের সাথে বেরিয়েছে। যেহেতু ওরা বাসে যাবে তাই আয়াজ স্টেশন অবধি পৌঁছে দিতে যাচ্ছে। আয়াজ অনেক করে বলেছে গাড়ি নিয়ে যেতে। বাট ওরাই না করে দিয়েছে। আর টিনা সেদিনের পর পরই রাগ করেই আয়াজের বাসা থেকে চলে যায়। আর আজিফা ইফাজের সাথে বের হয়েছে। পুরো বাসাটাই একেবারে ফাঁকা হয়ে আছে।
বিকেলে সবাই বাসায় ফিরলো। আঁখি স্কুল থেকে ফিরেই ওয়াশরুমে ঢুকে যায় ফ্রেশ হতে। বাট সাওয়ার শেষে বুঝতে পারলো যে কাপড় টাওয়েল কিছুই আনেনি।
-হায় হায় বের হবো কেমনে এখন? কাউকেতো ডাকলেও শুনবে না। এখন বের হয় কিভাবে। ইউনিফর্ম টাও তো ভিজে গেছে। কি করি এখন? উফফফ!……আচ্ছা রুমের ডোরতো মেইবি লক করা। তাইলে হয়তো কেউ দেখবে না। কজ একদৌড়ে টাওয়ালটা নিয়ে চলে আসবো। যেই ভাবা সেই কাজ। স্কুলের স্কার্ফটা শুকনো ছিলো। তাই সেটা কোনোরকম কোমড়ে বেঁধে রুমে ঢুকে টাওয়াল নিতে যাবো তখন দেখি খাটের উপর আয়াজ ভাইয়া। দেখলাম আয়াজ ভাইয়া চোখ বড়সড় করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
-আমি নিজের দিকে তাকিয়ে আআআআআআআআ চিৎকার মেরে ওয়াশরুমমে ঢুকে দরজাটা ধাম করে আটকে দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকি। এটা কি হলো? এখন আমার কি হবে আমি আয়াজ ভাইয়ার সামনে কিভাবে যাবো, আমার সবতো দেখে নিয়েছে। গোপন বলতে আর কিচ্ছু রইলো না।
এদিকে আয়াজ চোখ বন্ধ করে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করলো।
-পাঁচ মিনিট দশ মিনিট কিন্তু এই মেয়ে কোনো সাড়াশব্দ নেই না বের হচ্ছে। পরক্ষণেই আয়াজ কিছু একটা ভেবে ওয়্যারড্রপ থেকে জামা কাপড় নিয়ে দরজায় নক করতে থাকে। কিন্তু আঁখি খুলছেই না।
-তাই আয়াজ বলল কি হলো ডোর খুলবি নাকি আমি ভাঙ্গবো।
-আঁখি কথাটা শুনতেই ডোর লাকটা খুলল আর হাতটা বের দিলো, আয়াজ হাতের উপর জামা গুলো দিলো আঁখি জামা নিয়েই আবার বন্ধ করে দিলো।
এবার আঁখি ধন্দে পরে যায় বের হবে কি হবে না সেটা নিয়ে। কিন্তু এভাবে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো?
শেষে আর না পেরে বেরিয়ে গেলাম। কিন্তু কিছুতেই মুখ তুলে তাকাতে পারছি না। ভিষণ লজ্জা লাগছে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
আয়াজ আস্তে আস্তে করে আমার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। এসেই আমার থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে আর আয়াজ দেখে লজ্জায় আঁখির গাল দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে।
-আয়াজ আস্তে করে আমার গাল দুটো টেনে দেয়। আর নিজেকে সামলে বলল, আজকে একা স্কুলে গিয়েছিস কেন?
-ককেন আআবার। দেরি হহয়ে গগেছিলো তাই।
-স্কুলে কিসে কিসে নাম দিয়েছিস?
-নাচ গান আর কবিতা।
-এতো মানুষের সামনে নাচার কোনো প্রয়োজন নেই। যদি নেচেছিসতো পা ভেঙে গুটিয়ে দিবো।
-কিন্তু?
-কোনো কিন্তু না। বারণ করেছি মানে বারণ মনে থাকে যেনো? বলেই আয়াজ চলে গেলো। আর আমি ফ্লোরে হাত পা ছিটিয়ে কাঁদতে বসলাম।
অনুষ্ঠানের দিন শাড়ি পরেছি ঠিকি কিন্তু শাড়ির সাথে হিজাব পরেছি। কারণ আয়াজ সাফ সাফ মানা করে দিয়েছে শাড়ি পরেছি ঠিক আছে, কিন্তু হিজাব ছাড়া যেনো বের না হয়।
এরপর স্কুলে গেলাম। সবকিছু ভালোই ভালোই চলছিলো। বাট হঠাৎ খেয়াল করলাম কলেজের একটা ছেলে আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। প্রথম পাত্তা দেয়নি। পরে দেখছি নাহ বিষয়টা মোটেই ভালো দেখাচ্ছে না। তাই আমার বান্ধবীদের বললাম চল এখান থেকে উঠে অন্যদিকে গিয়ে বসি।
তারপর ওখান থেকে চলে গেলাম। অনুষ্ঠান শেষে ছেলেটা আমার কাছে আসলো আর আমাকে বলল আঁখি তোমার সাথে একটু কথা বলা যাবে।
-কি কথা? তাড়াতাড়ি বলুন আমার তাড়া আছে যেতে হবে।
-আসলে কথাটা কিভাবে যে বলি?
-এতো আমতা আমতা না করে সরাসরি বলো কি বলবা?
-বলছিলাম যে আমি সাদিয়াকে অনেক পছন্দ করি বাট বিষয়টা তাকে বলতে পারছিনা। ভিষণ ভয় করছে।
-ওর কথাটা শুনে আমার হাসি পেলো। তাই হাহাহাহা করে হেসে দিলাম। আর বললাম ওও এই ব্যাপার। তো এটা নিয়ে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে।
-আসলে যে কিভাবে প্রপোজ করি ভিষণ নার্ভাস লাগছে।
-আচ্ছা ওকে ওকে। তুমি এক কাজ করো, ধরো আমি সাদিয়া আমাকে নির্ভয়ে প্রপোজ করো। দেখবে ভিতরের নার্ভাসনেসটা কেটে গেছে।
-ওকে দারুণ আইডিয়া দিলেতো। ওয়েট
-বলেই ছেলেটি আমাকে একটা গোলাপের তোড়া নিয়ে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে সুন্দর করে প্রপোজ করলো আর আমিও হেসেই ফুলগুলো নিলাম। এরপর ছেলেটা ওঠে আমাকে একটা চকলেট বক্স দিলো। আর বলল এটা তোমার জন্য। আমি খুশি নিলাম। আর বললাম।
-কি ভয় কেটে গিয়েছে না? এখন কি আর নার্ভাস লাগছে?
-নাহহ বোন! অনেক অনেক ধন্যবাদ বলেই আমাকে খুশিতে জড়িয়ে ধরলো। আমি মাথায় হাত লাগলাম।
-ওকে যাও প্রপোজ করে এসো। তারপর আনাস সাদিয়াকে প্রপোজ করতে গেলো। আর আমি ওয়েট করতে লাগলাম। মিনিট বিশেক পর দেখলাম আনাস হাসি হাসি মুখ করে আমার কাছে আসলো। আর এসে বলল আমি পেরেছি বোইন।
-সত্যি!
–হ্যাঁ বলেছে।
-হুুমম….
পিছনে দেখলাম সাদিয়া সহ রিয়া বৃষ্টি ওরাও দাঁড়িয়ে আছে। সাদিয়া লজ্জা লজ্জা মুখ করে মাথা নিচু করে আছে। তখনি রিয়া বলে উঠলো আমাদের কিন্তু ট্রিট চাই। ট্রিট না দিলে কিন্তু হবে না।
–আনাস বলল ওকে ওকে চলো।
-দেন সবাই আগে ফুচকা স্টলে ঢুকলাম। দেন সবাই ফুচকা খাচ্ছি আর হাসাহাসি করছি। আনাস সাদিয়াকে ফুচকা খাইয়ে দিতে দেখে আমি পিঞ্চ মেরে বললাম
–খালি প্রেমিকাকে খাইয়ে দিলে হবে? প্রেমিকার বান্ধবীদেরও তো হক আছে। তাদেরকে ওতো একটু খাইয়ে দিতে পারো আমার সাথে সাথে বাকিরাও তাল মিলালো।
এরপর আনাস আমাকে ফুচকা খাইয়ে দিলো এরপর রিয়া বৃষ্টি বাকিদেরকেও খাইয়ে দিলো।
এদিকে দূর থেকে আমাদের এসব যে কেউ একজন ভিডিও করছে আমার জানায় ছিলো না।
এদিকে বাসায় ল্যান্ডফোনটা বেজে ওটতেই রোজিনা চৌধুরী ফোন ধরলেন। ওদিক থেকে কিছু একটা শোনার পর রোজিনা চৌধুরী বলে উঠলো______
-কি বলছেন এসব? কি হয়েছে? ওকে ওকে আমি রাখছি।
–আয়াজ জিজ্ঞেস করলো আম্মু কি হয়েছে?
-আরে আর বলিস না তোর বড় মামাকে নাকি হসপিটালে ভর্তি করেছে। হার্ট ব্লক হয়ে গিয়েছে। কন্ডিশন নাকি ভালো না। আইসিউতে রাখা হয়েছে?
–তো এখন?
–আমি চিটাগং যাচ্ছি তোর বাবাসহ।
-আজিফা কথাটা শুনে বলল, কি বলছো এসব আম্মু? আমিও যাবো?
-কিন্তু তুই যদি যাস আঁখিতো বাড়িতে একা?
-তো কি হয়েছে আয়াজ ভাইয়া তো আছে।
-তারপর আয়াজ বলল আচ্ছা ওকে। তোমরা যাও আমি আছি বাসায়।
–আচ্ছা বাবা। বলেই রুমে চলে গেলেন রোজিনা।
আয়াজ রুমে চলে গেলো। হঠাৎ দেখলো ড্রেসিং টেবিলের ওপর ফোনটা কেঁপে উঠলো। আর যা দেখলো আয়াজ যেনো মূহুর্তেই হিংস্র বাঘ হয়ে উঠলো। রাগে আয়াজের সারা শরীর কাঁপছে।
কারণ আয়াজ সেখানে আঁখির ছেলেটার হাত থেকে ফুচকা খাওয়া, জড়িয়ে ধরা, ফুল নেওয়া সবকিছু ভিডিও আর পিকচার্স করা আছে।
সাথে সাথেই আয়াজকে নিরবকে ফোন দিলো।
-আর চেঁচিয়ে বলল এসব কি?
-জ্বি ভাই যা দেখছেন সব সত্যি। আমি হয়তো মুখে বললে বিশ্বাস করতেন না তাই ভিডিও করে রেখেছি।
-ওকে রাখছি।
সন্ধ্যায় বাসায় আঁখি ঢুকতে দেখলো পুরো বাসা অন্ধকার। আঁখি মনে মনে ভিষণ ভয় পাচ্ছে। কারণ আজকে বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক লেট হয়ে গেছে। মাগরিবের আযান ও শেষ হয়ে গিয়েছে। দেখলো কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই। আঁখি যেনো কিছুটা ভড়কে গেলো। আস্তে আস্তে ড্রয়িং রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিলো।লাইট জ্বলাতেই দেখলো আয়াজ সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে।
–কটা বাজে?
–সসাতটা!
–এখনকি বাসায় ফেরার সময়?
–ভিষণ ভয় করছে আয়াজ ভাইয়ার চোখ মুখ দেখে। মনে হচ্ছে এই চেহারায় কোনো দয়া মায়া নাই। আছে শুধু হিংস্রতা। আআআব আআসসসলে ইইয়ে মমানে
-অমনি মুখের উপর ঠাসসসসসসসস
-ভভাইয়া!
-পরলো আরেকটা…..আয়াজ রেগে চিৎকার করে বলতে লাগে, ছেলেদের সাথে ফষ্টিনষ্টি করা হচ্ছে। ফুল নেওয়া হচ্ছে। ভালোবাসা আদান প্রধান করা হচ্ছে। বলেই এলোপাতাড়ি থাপরাতে লাগলাম। কারণ আয়াজ যেনো নিজের মধ্যে নেই? এদিকে আঁখির হাতে চকলেটের বক্সটা দেখে রাগ শতগুণ বেড়ে গিয়েছে।
–ভভভভাইয়া আআআমার ককথ
–কি কি…বল ছেলেটা কে? কিসের এতো পিরিতি। কি ভেবেছিস তুই আমি কিছু জানবো না।
—ফুচকা খাওয়া? খাওয়াচ্ছি তোকে! বলেই আয়াজ কোমড় থেকে বেল্ট খুলে নিয়ে বেধোড়াম পিটাতে লাগলো আঁখিকে। কজ মাত্রাতিরিক্ত রাগে আয়াজের কোনো হুস জ্ঞান নেয়।
–আমাকে মমেরো না। আআমি আঁখি যেনো কথায় বলতে পারছে না। শরীর যেনো রক্তে ভরে গেছে। এক পর্যায়ে আঁখিও জ্ঞান হারায়।
-আয়াজের যেনো কোনো হুসই নেই কিছুই চোখে দেখছে না। এক নাগাড়ে পিটাতে থাকে। কারণ রাগ এমন একটা জিনিস যার কারণে মানুষ মানুষের কাছে খুন পর্যন্ত হয়। একসময় আয়াজ ক্লান্ত হয়ে নিজেই ছেড়ে দেয়। আর আয়াজ সোফায় বসে জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করে। টেবিল দুই গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করেই খেয়ে নেই। তারপর মাথায় হাত চেপে জিম মেরে বসে থাকে। প্রায় আধা ঘন্টা পর আয়াজ শান্ত হয়, আর স্বাভাবিক হয়ে নিজের মধ্যে ফিরে আসে। হঠাৎ ফ্লোরে চোখ পরতেই আয়াজের যেনো রুহটা কেঁপে ওঠে। দৌড়ে…..
চলবে
গল্প অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে। ধামাকা আসছে