তুই যে আমারই পর্ব-২৬+২৭

0
4421

#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 26

আঁখি বসে বসে হরর মুভি দেখছে। সবসময় আজিফার সাথে বসে দেখতো কিন্তু আজকে মনে সাহস জুগিয়ে একা একা দেখছে। কিন্তু ভয়ে বারবার কেঁপে কেঁপে ওঠছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই। সবাই যে যার যার রুমে গিয়ে শুয়ে পরেছে। পুরো ড্রয়িংরুমে সে একা। মনে মনে দোয়াদরুদ পরে টিভি দেখতে লাগলো। কিন্তু হটাৎ করেই টিভি থেকে মুভির ভুতুড়ে সিনটা আসতেই আল্লাহগো বলেই এক দৌড়ে সোজা আয়াজের রুমে গিয়ে আয়াজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

–হটাৎ এভাবে আঁখিকে জড়িয়ে ধরতেই আয়াজ কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। তাই জিজ্ঞেস করলো..
–ককি হয়েছে।
–ভভভুত
–ভুত? কিসের ভুত? এখানে ভুত আসবে কোথা থেকে।
–ওখানে ভুত!
–আজিব মেয়েতো, কোথায় ভুত?
-টিভিতে ভুত।
–কিহ? টিভিতে ভুত। এই তুই হরর মুভি দেখিসনিতো আবার?
–আমি কিছু না বলে আয়াজ ভাইয়াকে আরো জোরছে জড়িয়ে ধরি।
–আয়াজ চোখ লাল করে আঁখির দিকে তাকিয়ে বলে, তোকে মানা করেছি না হরর মুভি দেখতে। তাও তুই দেখেছিস?
–সরি আআর দেখবো নাহ।
–হয়েছে যা রুমে গিয়ে ঘুমো।
-ননাহ
–নাহ কেন?
–ভয় লাগে
–তো?
–যযাবো না
-তাইলে ঘুমোবি কোথায়।
-এএখানে ঘুমোবো।
-আমার সাথে খুব সফটিলি বলল।
–হুম
–আয়াজ আর কিছু না বলে, বলল ওকে যা খাটে গিয়ে শুয়ে পর। আমার কিছু কাজ আছে।
-হুমম বলেই শুয়ে পরলাম। কিন্তু ঘুমোতে কিছুতেই পারছি না। বারবার ভয়ে কেঁপে উঠছি। চোখের সামনে খালি ওই বিদঘুটে আকৃতির চেহারাটা ভাসছে। তাই আর না পেরে উঠে বসে পরলাম।

আয়াজ আঁখিকে এভাবে উঠে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। আঁখি মাথা নাড়িয়ে কিছু হয়নি বুঝালো। আয়াজ বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে আঁখি ভয় পেয়েছে। তাই আয়াজ লেপটপটা বন্ধ করে আঁখির পাশে গিয়ে আঁখিকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো। আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আঁখিও আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরলো।

মাঝরাতে হটাৎ আঁখির ভিষণ ওয়াশরুম পাই। যার জন্য আঁখি আর বিছানায় ঘুমিয়ে থাকতে পারে না। এবং উঠেই দেখে আয়াজ ঘুম। কিন্তু এদিকে একা ওয়াশরুমে যেতে পারছে না। ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তাই বাধ্য হয়ে আয়াজকে ডাকতে থাকে। আয়াজ ঘুমুঘুমু আওয়াজে বলে
–হোয়াট হেপেন্ড?
–ওয়াশরুম যাবো।
-তো যা।
–উমমমম
-কি উমমম?
–ভিতুর ডিম। বিয়ের পর বাচ্চা কিভাবে পালবি।

এরপর আয়াজ ওয়াশরুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে আর আঁখি ওয়াশরুমে যায়। ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে শুয়ে পরে। কিন্তু ঘুম ছুটে যাওয়ার কারণে ঘুম যেনো আসছেই না। তাই এপাশ ওপাশ করছে। আয়াজ এমন করতে দেখে জিজ্ঞেস করলো কিরে হয়েছেটা কি?
-কিছু না।
-কিছু নাহলে এমন করছিস কেন?
-আআসলে ঘুম আসছে না।
বলতেই আয়াজ আঁখিকে টান দিয়ে বুকে নিয়ে আসে। আর আলতো করে আঙ্গুল দিয়ে গালে স্লাইড করতে করতে বলে তাহলে কি করবি এখন।
-জানিনা।
-তাই?
-হুম।
-কিন্তু এখনতো আমার অন্য কিছু করতে ইচ্ছে করছে?
-কী? না বুঝেই প্রশ্নটা করলাম।
-আমার এমন বেক্কল মার্কা প্রশ্ন দেখে আয়াজ হেসে দিলো
– আমি হা হয়ে তাকিয়ে আছি। এতে হাসার কি আছে, আমি কি মজা করেছি নাকি।
-আয়াজ এবার কিছু না বলে হুট করে আমার ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরলো।

আমি যেনো পুরো ভড়কে গেলাম। এটা কি হলো। ব্যাপারটা বুঝে উঠতে বেশ কিছুক্ষণ সময় নিলো। বুঝে উঠতেই ছাড়া পাওয়ার জন্য ভিষণ ছুটাছুটি করছি। আমার এমন ছুটোছুটিতে আয়াজ হয়তো বিরক্তবোধ করেছে, তাই সে এক হাত দিয়ে আমার দুই হাত পিছন দিকে চেপে ধরে আর অন্য হাত দিয়ে আমার মাথার পিছনে চুলগুলো চেপে ধরে একমনে চুমু খেয়ে যাচ্ছে। এভাবে কতক্ষণ ছিলাম জানিনা।

কিন্তু ছাড়া পেতেই আমি যেনো আমার আত্মাটা ফিরে পেলাম। প্রাণটা যেনো বেরিয়ে গেলো। বুক ভরে নিশ্বাস নিতে লাগলাম। এতোক্ষণ যেনো দমটা আঁটকে ছিলো।

আয়াজ কানের নিচে ফিসফিস করে বলে এখন থেকে অভ্যেস করে নে। বিয়ের পর থেকে আরো বেশিই হবে। বলছে আর হাত দিয়ে পিঠের উপর স্লাইড করছে। কিছুক্ষণ পরপর গলায় ঘারে চুমু খাচ্ছে। আমি যেনো আর নিতে পারছিনা। তাই বললাম

–ঘঘুম পাচ্ছে।
-তো?
-ঘুমাবো
–তো ঘুমা
-এমন করলে ঘঘঘুম আসেনা তো।
-কেমন করলে
–এইযে এমন পঁচা কাজ করেন।
-বিয়ে পরতো আরো অনেককিছুই হবে, তখন কিভাবে ঘুমোবি?
-কি হবে?
-প্রাকটিক্যালি করে দেখায়।
–ধ্যাত!
–তখন ধ্যাত করলেও কোনো কাজ হবেনা। অনেকদিন অপেক্ষা করিয়েছিস।
-প্লিজ
-অকে অকে ঘুমা বলেই মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

সকালে
কিরে হয়েছে তোর হয়েছে। হ্যাঁ ভাইয়া শেষতো। এইযে আরেকটু।
-এতোদিন রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাও, ঘুরতে নিয়ে যাও করে করে আম্মুর মাথা খেয়ে ফেলছিস। আর আজ যখন নিয়ে যাচ্ছি তোর রেডি হওয়া শেষই হচ্ছে না।
–এই যে আমি এসে গেছি। আমাকে কিন্তু বাইকে করে ঘুরাতে হবে বলে দিলাম। আর পুরো শহর বাইকে ঘুরিয়ে দেখাতে হবে। নয়তো আড়ি।

-হয়েছে হয়েছে থাম থাম ঘুরাবো। চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।
-হুম।
এরপর আয়াজ বাইকে করে পুরো শহর ঘুরিয়ে একেবারে রাতে ডিনার সেরে বাসায় ফিরে।

এদিকে আমি রুমে এসে ওই অবস্থায় বিছানার উপর শুয়ে পরি। কজ ভিষণ টায়ার্ড। শরীর যেন চলছেই না। তাই এভাবেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।

আয়াজ ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই আঁখির রুমে চোখ পরলো। আর দেখলো ফ্রেশ না হয়ে ওই ঘামে ভেজা শরীর নিয়েই সটান হয়ে শুয়ে আছে। আয়াজের মেজাজ যেনো চরম পর্যায়ে। আঁখির রুমে গিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগে…..

-এখনো ফ্রেশ না হয়ে এভাবে শুয়ে আছিস কেন? হ্যাঁ? শরীরের ঘাম শুকিয়ে অাবার অসুস্থ হওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি? ওঠ! থাপ্পড় খাওয়ার আগে ওয়াশরুমে যা।
-মনের সুখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম। কিন্তু এমন গন্ডারের ভয়ংকর চিল্লানিতে ভয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে পরি। আর উঠেই ওয়াশরুমে ঢুকে বুকে ফুঁ দিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয়।

বেরিয়ে দেখি আয়াজ ভাইয়া রুমে নেই। যাক বাঁচলাম। কখন যে মুড চেঞ্জ হয় বলতেই পারিনা। এই মেঘ তো এই বৃষ্টি। উফফ না জানি কোনদিননা পাগল হয়ে যায়। যেহেতু বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি তাই আর রাতে ডিনার করা লাগেনি। কিন্তু আমি জানি, এই আয়াজের বাচ্চা আয়াজ এখন এসে আমাকে সেই বিষাক্ত তরল পদার্থ দুধ গেলাবে। কিন্তু আমি আজকে খাবোনা। শহীদ হয়ে গেলেও না। তার জন্য তো কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু কি করি কি করি? আইডিয়া! ঘুমের অভিনয় করতে হবে। এমনভাবে ঘুমোতে হবে, যেনো আয়াজ ভাইয়া এসে আমাকে দেখেই মনে করে আমি বেঘোরে ঘুমোচ্ছি। আর এমন কাঁচা ঘুম ভেঙে দুধ খাওয়ানো মোটেও ঠিক হবেনা।

ইয়েস! যেই ভাবা সেই কাজ।

এদিকে আয়াজ টিভিতে নিউজ দেখা শেষ করেই হামি দিতে থাকে। দেন টিভিটা অফ করে আঁখির জন্য রান্নাঘর থেকে দুধ নিয়ে রুমে গেলো। আর গিয়ে দেখলো বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। কিন্তু আয়াজ বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছে যে এই দুধ না খাওয়ার জন্য ঘুমের অভিনয় করছে। তাই বলল….

–আমি জানি তুই ঘুমোসনি। সব তোর অভিনয়। সো উঠে পর।
-কিন্তু আঁখি উঠছেই না।
-তাই আয়াজ কিছু একটা মনে করে ডেভিল হাসি দিয়ে, দুধটা টেবিলের উপর রেখে আস্তে করে আঁখির পাশে বসলো। বসেই দেন হাতটা আস্তে করে আঁখির জামার নিচে দিয়ে উপর রাখলো। আর আলতো আলতো চাপ দিচ্ছে। আঁখি যেনো অবাকের চরম পর্যায়ে।
-এবং তড়িঘড়ি করে উঠে পরলো।

আঁখিকে এভাবে উঠে যেতে দেখে আয়াজ দুধটা আঁখির মুখের সামনে ধরলো আর বলল
-নে শুরু কর
-আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আয়াজ বলল
– নো এক্সকিউজ। খেতে বলছি।
-আমি আর কি করবো চুপচাপ চোখ খিঁচে খেয়ে নিলাম। খাওয়া শেষ হতেই একটা বড় করে ঢেঁকুর দিলাম।
-আয়াজ মুচকি হেসে পিঠে আস্তে আস্তে চাপর দিতে দিতে বলল গুড।
দেন আমাকে শুইয়ে দিয়ে গায়ে ব্লাঙ্কেট জড়িয়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে লাইটটা অফ করে দিয়ে দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলো।

আয়াজ ভাইয়া যেতেই আমিও ঘুমিয়ে পরলাম।
চলবে

#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 27
সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ অফ করেই ব্রাশ করে করে নিচে নামলাম। আমাকে এভাবে নিচে নামতে দেখে খালামনি জিজ্ঞেস করলো
-কিরে ঘুম থেকে উঠে মেইন ডোরের দিকে কেথায় যাচ্ছিস?
-আমি ঘুমুঘুমু চোখে বললাম, গোলাপ গাছে পানি দিতে।
-কিহ? গোলাপ গাছে পানি?
তখনই আয়াজ বলে উঠলো আম্মু তোমার আদরীনি মনে হয় ঘুমের মধ্যে গোলাপ গাছে পানি দিতে স্বপ্ন দেখেছে মনে হয়।
-এই মেয়ে চোখ খোল।
-আমি চোখ খুলেই বললাম উফফ খালামনি কি হয়েছে এমন করছো কেন?
-তো কি করবো? যা উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। তারপর গোলাপ গাছে পানি দে নাহয় আম গাছে পানি দে যা খুশি করিস কেউ কিছু বলবে না।
-আর আমিও মুখটাকে পেঁচার মতো করে উপরে চলে আসতে লাগলাম। উপরে এসেই ফ্রেশ হয়ে নিলাম একেবারে লম্বা একটা সাওয়ার ও নিয়ে নিলাম। দেন একটা টি-শার্ট আর লেডিস ট্রাউজার পরে মাথায় টাওয়েল পেচিয়ে নিচে নামলাম।

আঁখিকে সিড়ি দিয়ে নামতে দেখে আয়াজ হা হয়ে তাকিয়ে আছে। কজ মাথায় টাওয়েল আর মুখে হালকা হালকা পানিতে মেয়েটাকে এতটা যে স্নিগ্ধ লাগছে আসলেই বলার মতো না। আসলে ভালোবাসার মানুষটা যতই কুৎসিত বাজে বা সুন্দর যাই হোকনা কেন, যদি সেটা সত্যিকারের ভালোবাসা হয় তাহলে সে যেভাবেই আসুকনা কেন, বারবার তার প্রেমে পরতে ইচ্ছে করে ততই বেশি সুন্দর লাগে। কুৎসিত জামা বিশ্রী সাজগোজেও পরী লাগে ভালোবাসার মানুষটার কাছে। আয়াজও যেন তার ব্যতিক্রম নয়। ভালোবাসার মানুষটার প্রেমে হাজারবার ডুব দিলেও যেনো এর কোনো শেষ নেই।

আলতাফ চৌধুরী এভাবে ছেলেকে আঁখির দিকে ওমন ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটা কাশি দিলো।
বাবার কাশির শব্দে ধ্যান থেকে ফিরে আসলাম। এবার যেনো লজ্জা পেয়ে গেলাম না জানি বাবা কি ভাবলো। তাই মাথা নিচু করে ব্রেকফাস্টে মন দিলাম।

আমিও চেয়ারে বসে এসে বসলাম। খালামনি ব্রেড দিতেই তাতে কামর বসাতেই আয়াজ ভাইয়াকে বলতে শুনলাম
-আব্বু কালকে বিকেলের ফ্লাইটে কক্সবাজার যাবো আর আমাদের সাথে আজিফা আর ইফাজও যাচ্ছে।
-এটাতো বেশ ভালো কথা।
-আমি খুশিতে জোরেই বলতে লাগলাম ইয়াহু আজিফা আপুও যাবে। অনেক মজা হবে। বলেই দ্রুত নাস্তা শেষ করে উপরে এসে লাগেজ গোছাতে শুরু করলাম। আহা আমার খুশি আর দেখে কে?

আয়াজ আমার রুমে এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
আমি স্মেল পেয়েই বুঝে গিয়েছি আয়াজ ভাইয়া।
–উফফ ছাড়ুননা। দেখছেননা ব্যাগ গোছায়।
-আমি ধরলেই ছাড়ুননা ছাড়ুননা শুরু হয়ে যায় তোর হ্যাঁ?
-আরে ব্যাগ গোছাতে হবেনা?
-আগে বল সকাল সকাল গোসল করতে কে বলেছে তোকে?
-ওমা কে আবার বলবে, এমনি কেমন অপরিষ্কার লাগছিলো নিজেকে তাই গোসল করে নিয়েছি।
-জানিস ওমন ভেজা ভেজা শরীর আর মাথায় টাওয়াল জড়ানোতে কতটা কিউট লাগছে তোকে।
-টাওয়ালে আবার কিউট লাগে নাকি?
-হুম লাগেতো। অনেক কিউট। এই যে এখন আমার বউটাকে লাগছে। বলেই আমার মাথা থেকে টাওয়ালটা এক টান দিয়ে খুলে ফেলে। আর আমার চুলের ভিতর মুখ গুঁজে দিয়ে নাক ঘষতে শুরু করে।
-কি শ্যাম্পু লাগিয়েছিস যে চুল থেকে এতো ভালো স্মেল আসছে।
-কেন রিভাইব লাগিয়েছি।
-পাগল করে দিবি আমাকে তুই।

আমি আর কিছু বললাম না। আয়াজ হটাৎ করেই আমাকে সামনে ঘুরিয়ে টান দিয়ে আমার গলায় মুখ গুঁজে দেয়। আর ঘনঘন চুমু খায়। আমার নিশ্বাস যেন ভারী হয়ে আসছে। আমি আয়াজ ভাইয়ার শার্টটা শক্ত করে চেপে ধরে আছি। হটাৎ কিছু একটা পরার শব্দে বাস্তবে ফিরে আসলাম। পিছন ফিরে দেখলাম চিরুনি পরলো।

আমি আয়াজ ভাইয়াকে ছাড়িয়ে দৌড়ে ছাদে চলে গেলাম। কজ আমি লজ্জায় কিছুতেই ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। ছাদে এসে রেলিং ধরে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি।

কিছুক্ষণ পর চোখটা খুললাম। খুলেই আকাশের দিকে তাকালাম। আর বলছি জীবনটা কেন এতো সুখের। আচ্ছা এই সুখ কপালে সইবেতো। কেন মাঝে মাঝে অজানা ভয় ভিতরটা মুচড়ে ধরে। মনে হয় এই বুঝি আমি আমার প্রিয় জিনিসগগুলো হারিয়ে ফেলেছি। হটাৎ চোখ পড়লো গোলাপ গাছটার দিকে। দেখলাম খুব সুন্দর ফুল ফুটেছে। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।

ফুলটার দিকে ঝুঁকে লম্বা করে একটা সুগন্ধি নিলাম। ভিতরটায় যেনো ঠান্ডা হয়ে গেলো। আহা কি সুবাস। হৃদয়টায় জুড়িয়ে গেল। পানির নলটা নিয়ে ছাদের সবগুলো গাছের নিচে পানি দিচ্ছি আর গুনগুন আওয়াজে গান করছি।

গাছে পানি দিতে দিতে শুনলাম কেউ যেনো আমার নাম ধরে ডাকছে। অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখলাম। সবুজ, মিথিলা, দীপ্তি ওরা পাশের ছাদ থেকে ডাকছে।

আমি ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে?
-আমাকে হাত থেকে নাটায় আর ঘুড়ি দেখিয়ে বলল ঘুড়ি উড়াবো। আমিও হাত নাড়িয়ে বললাম ওয়েট কর আমি আসছি। এরপর একদৌড় মেরে বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলাম ওদের ছাদে। একসাথে জয়েন হয়ে ঘুড়ি উড়ানোতে মেতে উঠি।
–রেড ভার্সেস ইয়েলো। আমরা রেড আরেক দল ইয়েলো।

আয়াজ বারান্দায় বসে কপি খাচ্ছিলো আর বুকস পড়ছিল। কিছু মিষ্টি মধুর হাসির আওয়াজে বই থেকে মুখ উঠিয়ে দেখলো ছেলে মেয়েরা ঘুড়ি উড়ানোতে মেতে উঠেছে। তাকিয়ে দেখলো তার প্রিয়তমাও আছে। রেলিংয়ে দুপাশে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছি জানপাখিটার দিকে। আর সেই মিষ্টি মধুর হাসিটা দেখছি। রোদের ঝিলিকে যেনো মায়াবতিকে আরো বেশি মায়াময়ী করে তুলেছে। মোবাইল ফোনটা নিয়ে কিছু পিক সাথে সাথেই ক্যামেরা বন্দি করে নিলাম।

কিন্তু হটাৎ করেই নোটিশ করলাম মুখটা কেমন চিন্তিত হয়ে আসছে। তাকিয়ে দেখলাম বিপক্ষ দল তাদের ঘুড়ি সব কেটে দিচ্ছে। বেচারা বাচ্চাগুলো যেনো পারছেই না। মুচকি হেসেই একটা লাল টি-শার্ট পরে ওদের কাছে গেলাম। গিয়ে সবুজের কাছ থেকে ঘুড়ির সুতোটা হাতে নিয়ে ফটাফট বিপক্ষ দলের কয়েকটা ঘুড়ির সুতো কেটে দিলাম।

আঁখি খুশিতে লাফিয়ে উঠে…
-ওয়াও সবু..কথা যেনো বের হচ্ছেই না। গলায় যেনো বাকি কথাগুলো আটকে গেলো। কারণ তাকিয়ে দেখলো স্বয়ং আয়াজ খেলছে।
-ভভভাইয়া আআপনি।
–হুমম
-বিশ্বাস হচ্ছে না!
-কেন আমি কি কি ঘুড়ি উড়াতে পারিনা না নাকি। এসব খেলা আমার জন্য এক তুড়ির ব্যাপার।
হটাৎ দীপ্তি চেঁচিয়ে বলে উঠলো আরে আরে ওরা আমাদের ঘুড়ির সুতো কেটে দিচ্ছে তো? সাথে সাথেই সবাই ওদিকে তাকালাম। আর আয়াজ সহ সবাই একসাথে ঘুড়ি খেলায় মেতে উঠলাম।
চলবে