#তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ২২
#faria_Siddique
।
।
।
।
।
।
রুশার চিৎকার শুনে পিছনে তাকায় ছোট দাদাভাই।তাকিয়ে দেখে একটা গাড়ি রুশাকে ধাক্কা মেরে চলে গিয়েছে। আর রুশার রক্তাত দেহ পরে আছে।ও ছুটে সেখানে গেল।
ভাইয়াঃ রুশা এই রুশা।
ও আর দেরি না করে কোলে তুলে গাড়িতে বসে ড্রাইভ করতে থাকে আর রুশার গালে থাপ্পড় দিতে থাকল যাতেও একেবারে জ্ঞান না হারায়।
।
।
।
হসপিটাল পৌছিয়ে -ঃ
ভাইয়া ওটির সামনের যে বসার চেয়ার থাকে সেগুলো তে বসে আছে চিন্তায় মরে যাচ্ছে।
আমাকে ভাইয়া ফোন করে জানায় রুশার এই অবস্থা তাই শুনে আমি ছুটে হসপিটাল এ যাই।
আমি গিয়ে ভাইয়া এর পাশে বসি আর বলি,”এসব কি..ভাবে হলো?ভাইয়া? ”
ভাইয়া, “আমি রুশাকে দেখে চলে যাচ্ছিলাম তখন ওর চিৎকার শুনে আমি পিছনে ফিরে দেখতে পাই ওর রক্তাক্ত দেহ ওকে একটা গাড়ি ধাক্কা দিয়ে চলে
গিয়েছে। ”
।
।
।
।
।
।
আমি- রুদ্র..কে ফোন করে সব জানাই
আমি- রুদ্র শোনো একটা ছিল.(অসস্থি তে)
রুদ্র-কি হয়েছে ফারিয়া তোমার গলা এমন শোনা’ছে কেন?
আমি-এক্সিডেন্ট হয়েছে রুদ্র রুশার, আমি এখন হসপিটাল এ।
রুদ্র- কি!! রুশার এক্সিডেন্ট হয়েছে কিভাবে কখন?আর তুমি কি করে জানো তোমার কিছু হয়েছে?
আমি-না আমি ছিলামই না আমার কিছু হয়নি।আমাকে ছোট দাদাভাই ফোন করে জানিয়েছে।দাদাভাই নাকি রুশা কে রাস্তায় একটা গাড়ি ধাক্কা দিয়ে যেতে দেখেছে।
(আমি বেশি কিছু বললাম না দাদাভাই আর রুশার ব্যাপারে কারণ এখন ওসব বলার সময় না)
রুদ্র- আমি আসছি তাড়াতাড়ি।
।
।
।
।
।
।
।
ভাইয়া ওটির সামনে বসে আছে।আমি গিয়ে ভাইয়ার পাশে বসলাম।ভাইয়া আমার দিকে তাকালো।দেখলাম ভাইয়ার চোখ থেকে দুই ফোটা পানি পরল।আমি ভাইয়ার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললাম।
আমিঃ এতই যদি ভালোবাসো তাহলে রুশাকে বললে না কেন??
ভাইয়াঃওর ওপর অনেক রাগ ছিল আমার।
আমিঃভাইয়া যাকে ভালোবাস তার ওপর আর রাগ করে থেক না ভাইয়া।
ভাইয়াঃহুম।রুশাকে আর কস্ট দিব না আমি।
আমিঃগুড এই না হল আমার ভাই।
ভাইয়া কিছু না বলে মুচকি হাসল।
।
।
।
।
।
।
।
।
আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে রুশার যদি কিছু হয়ে যায় কি হবে আমি রুদ্র কে কিভাবে সামলাবো?
ভাইয়া কেই বা কিভাবে সামলাবো। আমার
কিছু তেই মন শান্ত হচ্ছে না।কতো ভালো যাচ্ছিল সময়
হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেল। এর জন্যই বলে জীবনের
কোনো ঠিক নেই কখন কি হয়ে যাবে আমরা কেউ জানি না।
।
।
।
।
।
রুদ্র যতো দ্রতু সম্ভব গাড়ি ড্রাইভ করছে।তার আদরেরে ছোট বোনের এক্সিডেন্টের কথা শুনে কোনো
ভাবেই নিজে স্হির থাকতে পারছেনা ।কারোরই নিজের আদরের বোনের এরকম এক্সিডেন্টের কথা
শুনে স্হির থাকতে পারার কথা না।
।
।
।
।
রুদ্র মা বাবা কে এখন ও কিছু বলেনি তারা শুনলে
আরো উত্তেজিত হয়ে পরবে।আগে ও গিয়ে দেখুক তারপর ফোন করে জানিয়ে দিবে।
।।।।
।।।।
।।।।
ওটি থেকে ডাক্তার কে বের হতে দেখে ভাইয়া দাঁড়িয়ে যায় আর অস্থির হয়ে বলে,”ডাক্তার ওর এখন কেমন অবস্হা? বুলন না।”
ডাক্তার- আমরা যথাযথ চিকিৎসা করেছি এখন উনি ঠিক আছেন তবে জ্ঞান ফিরেনি কারণ ওনাকে অজ্ঞান করা হয়েছিল অপারেশন এর সময়।তবে একটা রিক্স আছে যে ওনার মাথায় ভালো পরিমাণের আঘাত পেয়েছেন ওনার যাতে স্মৃতি শক্তি না যায় তা কামনা
করছি আমরা।
ভাইয়াঃধন্যবাদ ডাক্তার।ডাক্তার আমি কি একবার ভিতরে গিয়ে দেখতে পারি ওকে?
ডাক্তার- এখন না,ওনাকে কেবিনে শিফট করে দেওয়া হবে তারপর দেখা করতে পারবেন।
ভাইয়া- ঠিকাছে ডক্টর। আবারও থ্যাংক ইউ।
ডাক্তার- নো ইটস মাই প্লেজার।
।
।
।
।
।
।
।
রুদ্র এসে পরেছে। ও তাড়াতাড়ি যায় দেখে ভাইয়া ওটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
রুদ্র- ফারহান রুশার কি হয়েছে এখন কেমন আছে? (রুদ্র কে পুরা পাগল পাগল লাগছে,মাথার চুল গুলো
আউলা ঝাউলা, ঘেমে একাকার এসির মধ্যে ও)
ভাইয়াঃ ওকে এখন কেবিনে শিফট করা হবে। অপারেশনের সময় অজ্ঞান করার ফলে
জ্ঞান এখনও ফিরেনি তবে ও ঠিক আছে। কিন্তু..
রুদ্র- কিন্তু কি ফারহান?
ভাইয়াঃ ওর জ্ঞান ফেরার পর বোঝা যাবে ওর স্মৃতি শক্তি আছে নাকি। সেটা এখনও বোঝা যাচ্ছে না।
রুদ্র- আমি ডাক্তারের সাথে দেখা করে আসি ওকে কেবিন এ শিফট করা হলে আমাকে ফোন করে দিও।
ভাইয়াঃ হুম
।
।
।
।
।
#চলবে……
#তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ২৩
#Faria_Siddiqeu
।
।
।
।
।
।
আমি সব ঔষধ পত্র নিয়ে ফিরে দেখি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।
আমি– ভাইয়া রুশা?
ভাইয়া–রুশার অপারেশন হয়ে গিয়েছে ওকে কেবিনে শিফট করা হবে।তবে একটা আশংকা রয়ে গেছে যে ওর স্মৃতি শক্তি না হারিয়ে যায়।
আমি– চিন্তা করো না রুশার স্মৃতি শক্তি হারাবে না।রুদ্র কে ফোন করি এখনো কেন আসছে না।
ফোন করার আগেই ভাইয়া থামিয়ে বললোঃ রুদ্র এসেছে ও ডক্টরের কেবিনে গিয়েছে কথা বলতে।
আমি– আমি দেখে আসি।
————-
আমি ডক্টরের কেবিনে যাচ্ছিলাম দেখি রুদ্র ও বের হচ্ছে।ওর মুখ পানে তাকিয়ে থমকে যাই।মুখটা কতোটুকু সময়ের মধ্যে বদলে গিয়েছে। রাগী অ্যাডিটিউট ওয়ালা মুখ টা।বোনের এ্যাকসিডেন্টে সেই মুখটা বদলে গিয়ে ছোট ও মাসুম বাচ্চার মতো হয়ে গিয়েছে। আমি ওইভাবেই তাকিয়ে ছিলাম।রুদ্র আমাকে দেখে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।আমি চমকে যাই এইভাবে কেঁদে জড়িয়ে ধরায়।আমিও ওকে জরিয়ে ধরে পিঠে হাত বুলিয়ে বলি,” রুদ্র শান্ত হও।রুশা তো এখন ভালো আছে বলো।তাহলে এখন শান্ত হও।প্লিজ”
।
।
।
।
।
।
।
আমি রুদ্র কে চেয়ারে বসালাম।তারপর ওকে শান্ত করলাম।
আমি– এখন তো রুশা ভালো আছে রুদ্র।
রুদ্র– কিন্তু ডক্টর বললো। জ্ঞান না ফিরার পর্যন্ত
বলা যাচ্ছে না স্মৃতি শক্তির ব্যাপারে
আমি– চিন্তা করো না আল্লাহ যখন রুশা কে এতো
বড় এক্সিডেন্টের পর বাঁচিয়েছে তাহলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ ভালোই করবে যা করবে।
আল্লাহর ওপর ভরসা রাখো।
রুদ্র– হুম।
আমি– তুমি বসো আমি তোমার জন্য পানি নিয়ে আসছি।
রুদ্র কে বসিয়ে রেখে আমি তিন বোতল পানি নিয়ে আসলাম হসপিটালের ক্যান্টিন থেকে।
ভাইয়া কে এক বোতল পানি দিয়ে এসে রুদ্র পাশে বসে ওকে পানি খাওয়ালাম।তারপর
আমিও একটু পানি খেয়ে নিলাম।
——————
রুশা কে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। ভাইয়া কেবিন বসে আছে।আমি আর রুদ্র যেতেই ভাইয়া উঠে আমাদের কে বসার জায়গা
করে দিল।
রুদ্র গিয়ে রুশার হাত ধরে চুমে খেল যেই হাতে
স্যালাইন লাগানো। আরেক হাতে রক্তের ব্যাগ লাগানো।আমি নিঃশব্দে কেঁদে উঠলাম।রুশার এই
অবস্থা দেখে।যে মেয়েটা চঞ্চলতায় আমরা হাঁপিয়ে ওঠতাম।সে মেয়েটিই এখন জীবনের জন্য লড়াই করে হাঁপিয়ে ওঠেছে।ভাইয়া আমাকে কাঁদতে দেখে জড়িয়ে ধরলো। আমি জানি ভাইয়ারও অনেক কষ্ট হচ্ছে। ভাইয়া আমি আর রুদ্র থাকায়
সেটা প্রকাশ করতে পারছেনা।আমি কান্না থামিয়ে ছোট দাদাভাই কে বললাম,” নিজে কো শক্ত করো ভাইয়া।তোমাকে রুশা এই অবস্থায় দেখলে ওর কিন্তু সহ্য করতে পারবে না।শোনো ওকে ক্ষমা করে দিও।যা হয়েছে ভুলে যাও।মেয়েটা কম কষ্ট সহ্য করেনি”
ভাইয়া – কিন্তু..
আমি– কোনো কিন্তু না,আর কষ্ট দিও না ওকে।পরে না ওকে হারিয়ে ফেল তখন কিন্তু তোমার ই কষ্ট হবে।
ভাইয়া– ঠিক আছে ওর জ্ঞান ফিরুক।
আমি– হুম।
——–
রুদ্র বোনের নিষ্পাপ চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে। রুশার যে হাতে স্যালাইন লাগানো ওই হাত টা একটু নড়ে ওঠে।রুদ্র তা দেখে বলে,” রুশার হাত নড়েছে তার মানে ওর জ্ঞান ফিরেছে।”
আমি ও তাকিয়ে দেখি হ্যা ওর হাত নড়েছে আমি ছোট দাদাভাই কে বলি,”ভাইয়া রুশা…”
ভাইয়া স্থির চোখে তাকিয়ে আছে। রুশার দিকে।
রুশার জ্ঞান ফিরতেই ও হাত ওপরে উঠাতে গেলে টান অনুভব করে।চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখে দুই হাতে দুই ব্যাগ। একহাতে স্যালাইনের অন্যহাতে রক্তের। রুশা কি হয়েছিল মনে করার চেষ্টা করে।মাথা টা চেপে ধরে।ভাঙা গলায় বলে,”আমার কি হয়েছিল? ”
আমি– কি হয়েছিল মনে করার দরকার নেই এখন মাথায় চাপ নিস না।পরে তুই সুস্থ হলে তোকে সব বলবো।
রুদ্র– হুম এখন চুপচাপ লক্ষি মেয়ের মতো শুয়ে থাক দেখি।
ভাইয়া– আমি ডক্টর কে ডাক দি বলি রুশার জ্ঞান ফিরেছে।
আমি– হুম
ভাইয়া ডক্টর কে ডেকে আনে উনি সব চেক করে বলে। এখন আলহামদুলিল্লাহ সব ভালো। রুশাকে এখন বেশ কিছুদিন হসপিটালে
থাকতে হবে।তবে জলদি রিকোভার করলে তারা
তাড়াতাড়ি ডিসচার্জ করে দিবে।আমরা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি আল্লাহ রুশাকে বাচিয়ে দিয়েছে ও স্মৃতি শক্তি হারায়নি সেজন্য।
———-
রুদ্র কে আমি বাসায় পাঠিয়ে দি।আর বলি আমি আর ভাইয়া আছি।রুদ্র যেতে চাইনি তাও আমি বললাম ওকে বাসা থেকে ফ্রেশ হয়ে শাওয়ার নিয়ে
কাপড়চোপড় বদলিয়ে আসতে। ও জানে যেহেতু আমি রুশার বেস্টি তাই ও অবশেষে মেনে গেল। রুদ্র আসলে আমি যাবো বাসায়।
আমি ভাইয়া কে বলি,”ভাইয়া রুশাকে সুপ খেতে দিয়ে গিয়েছে নার্স।এখন ভারি কিছু দেয়নি বিকালে আবার দিবে কিছু খেতে।”
ভাইয়া – হুম তো খাইয়ে দে ওকে..
আমি– আমি না তুমি। তুমি ওকে সরি বলে ওর সাথে মিল হবে আর ওকে সুপ খাইয়ে দিবে।আর এটা আমার শেষ কথা।আমি আর কিছু জানি না।
ভাইয়া – ওকে ফাইন। কোথায় সুপ?
আমি টেবিল থেকে সুপের বাটি নিয়ে ভাইয়া হাতে দিলাম।
ভাইয়া – রুশার পাশে বসে চেয়ারে।
রুশা– ফারহান….
ভাইয়াঃ – শহহ…চুপচাপ এভাবে থাকো তোমাকে সুপ খাইয়ে দিচ্ছি।
রুশা তো অনেক খুশি ভাইয়ার হাতে খেতে পেয়ে।
ও চুপচাপ খেতে থাকে। হঠাৎ ভাইয়া বলে,” সরি রুশা… ”
রুশা অবাক হয়ে যায় ভাইয়া ওকে সরি কেন বলছে?
ভাইয়াঃ – অবাক হওয়ার কিছু নেই তখন আমার তোমাকে ওভাবে একা ফেলে চলে আসা উচিত হয়নি।আর শোনো ফারিয়ার সাথে সাথে আমরা বিয়ে টা করে ফেলবো।
রুশা এবার বিশ্বাস করতে পারছেনা ভাইয়া ওকে বিয়ে করার কথা বলেছে।
রুশা– আমাকে চিমটি কাটো তো ফারহান।
ভাইয়া– কেন???(চমকে গিয়ে)
রুশা– কাটো না বলছি যখন
ভাইয়া আসতে করে রুশাকে চিমটি কাটলো।
রুশা– ইয়ে ইয়ে আমাদের বিয়ে হবে!!!(চিল্লাতে চিল্লাতে)
ভাইয়া – এই রুশা তোমাকে চিমটি কাটতে বললে কেন আর এভাবে চিল্লাছো কেন?
রুশা– আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না তুমি তোমার আর আমার বিয়ের ব্যাপারে বলেছো তারজন্য
ভাইয়া –ওফ!!
————–
বিকালে রুদ্র আসার পর আমি আর ভাইয়া চলে যাই।আবার আগামীকাল আসবো।আমার মনে মনে অনেক খুশি লাগছে রুশা আর ভাইয়ার মিল হওয়ায়।এখন আমার আর রুদ্রর সাথে সাথে
দাভাই আর ভাইয়ার বিয়ে টাও হয়ে যাবে। আমি
মেহেক আপু কে ফোন করলাম।মেহেক আপুর সাথে আমার মাঝে মাঝেই কথা হতো আগে যখন
দাদাভাই আর মেহেক আপু ভালো ফ্রেন্ড ছিল।
।
।
।
।
।
।
।
মেহেক আপু কে দেখে আমি ভালো মতনই বুঝতাম তারাএকে ওপর কে ভালোবাসে।তবে মাঝখানে কি যেন হলো।মেহেক আপু আর দাদাভাই দুজনেই যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয়।
সেই যাই হোক আমি মেহেক আপুকে ফোন করতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে…….
চলবে………