তোকে ছাড়া আমি শূন্য পর্ব-২৪+২৫

0
3568

তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ২৪
#Faria_Siddique







ওইপাশ থেকে বলে ওঠলো,” কেমন আছো ফারিয়া?”মেহেক আপু
আমি- আমি ভালোই আছি এই আরকি তুমি কেমন আছো?
মেহেক- আমিও এই অফিস আর কাজ নিয়ে ব্যস্ত বাসায় সবাই কেমন আছে?
আমি– আছে ভালোই।বিয়ে বলে কথা।
মেহেক– কার বিয়ে?(অবাক আর ভীত স্বরে)
আমি– আমার আর দাদাভাই দের…
মেহেক– তোমার বিয়ে কনগ্রেচুলেশন!আর ফারদিন আর ফারহানের কার সাথে বিয়ে?
আমি– ফারহান ভাইয়ার বিয়ে আমার বান্ধবী রুশার সাথে আর ভাইয়ার মেহেক চৌধুরীর সাথে..(হেসে)
মেহেক– কোন মেহেক কে তোমার দাদাভাই বিয়ে করছে ওকে তো আমি মেরেই ফেলবো…এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড মেহেক চৌধুরী মানে…
আমি– তুমি..
মেহেক– আমি!!(চিল্লিয়ে..) আমি কিভাবে?
আমি– তাহলে শোনো আমি চাই তুমি দাদাভাই
কে বিয়ে করো..
মেহেক– আমিও (ফট করে মেহেক বলে ওঠলো)… মানে ওই আরকি…
আমি– জানি জানি..তুমি আর দাদাভাই দুজন দুজন কে ভালোবাসো।আর আমিও তোমাদের মিল করা তে চাই।মাঝখানে তোমাদের মাঝখানে কি হয়েছে সেটা আমি জানি না আর জানতেও চাইনা
তুমি আমার ভাবি হও আর আমাদের ফ্যামিলির বড় বউ হও সেটা চাই।
মেহেক– তোমার দাদাভাই মানবে?
আমি– মানতে হবে😁
আমরা দুজনই হেসে দিলাম।








জৈষ্ঠ্যমাস শুরু গরম টা হঠাৎ ই যেনো বেড়ে গিয়েছে। এখন ও মাঝে মাঝে হাওয়া বয়ে যায়।
তবে ভাপসা গরম খুব তাড়াতাড়ি পরে যাবে।
বৃষ্টি হলেও গরম কমবে বলে মনে হচ্ছে না।
এই গরমেও সবাই সবার কাজে ব্যস্ত।আমি ও ব্যস্ত রুদ্র কে নিয়ে।বেচারা সারাক্ষণ আমার চিন্তায় থাকে।আমার খুব কেয়ার করে।অবশ্য নিজের বোনেরও করে।






রুশা হসপিটালে প্রায় ৫ দিন হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে
আমি ভাইয়া প্রতিদিন যেতাম।রুদ্রও ওর মা ও সময় করে থাকতো।সবাই মিলে ওর এতো খেয়াল
রেখেছি যে ৬ দিনের মাথায় ওকে ডাক্তার বলেছে
আর দু এক দিনের মধ্যে রিলিজ দিয়ে দেয়া হবে।
আর সবচেয়ে বেশি খেয়াল রেখেছে ভাইয়া।ভাইয়ার খেয়াল দেখে সবাই বুঝেই গিয়েছে। যে ভাইয়া রুশা
কে ভালোবাসে।






আর আমি ও রুদ্র কে কথাটা বলেছি।রুদ্র প্রথমে
একটু সংকোচে থাকলেও শেষে ভাইয়ার রুশার প্রতি খেয়াল দেখে মেনে গিয়েছে। বিয়ে দেওয়ার ব্যপারে।আর এখন রুশা আর ভাইয়ার মাঝখানে
ভালোবাসা কয়েক গুনে বেড়ে গিয়েছে। আর গভীর
হয়েছে সম্পর্ক।





আর মেহেক দাদাভাই কে আরে জেলাস করাতে করাতে দাদাভাই হয়রানি দিয়েছে।দাদাভাই নিজেই
মেহেকের বাবাকে বিয়ের প্রস্তার পাঠিয়েছে।
খুবই জলদি আমাদের বাড়িতে বিয়ে লাগছে।
এখনই বিয়ে বাড়ির আমেজ পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
আমি এখন ভার্সিটি তে যাওয়া নিয়মিত করে দিয়েছি কারণ বিয়ের আগ দিয়ে তো আর ভার্সিটিতে যাওয়া হবে না।




আমি বেলকানিতে বসে আছি।আজকে বড় আপুর কথা খুব মনে পরছে।আপুর সাথে কাটানো মুহুর্তগুলা মনে পরছে।আমি আপুরছবি বুকে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে রকিং চেয়ারে বসে আছি।ঠিক তখনি কারোর হাত আমার কাধ স্পর্শ করলো। আমি চোখ মেলেদেখি বিশাল।আমি একটু মুচকি হাসলাম।
আমিঃ কিরে তুই এখানে???
বিশালঃআসলাম আরকি
আমিঃবস
বিশালঃ মন খারাপ??
আমিঃনা।শুধু আপুর কথা মনে পরছে।
বিশাল আর কিছু বলল না।দুইজনই চুপচাপ বসে আছি। হঠাৎ আমার মোবাইল বেজে উঠল।
আমি হাতে নিয়ে দেখি রুদ্র কল করেছে।
বিশাল বুঝতে পেরে চলে গেল।
আমি কল রিসিভ করতেই রুদ্র বলে উঠল
রুদ্রঃএকটু নিচে আসো তো।
আমিঃকেন?
রুদ্রঃআসো না.
আমিঃ আসছি।
এই বলে আমি নিচে গেলাম।দেখি রুদ্র সাহেব গাড়ির সাথে হেলাম দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমিঃ কি সাহেব??
রুদ্রঃচলো…
আমিঃকই যাবো।
রুদ্রঃচল তো।
এই বলে রুদ্র আমাকে গাড়িতে তুলে একটা ব্রিজের ওপর নিয়ে গেল।।
আমি আর রুদ্র গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার মাঝখানে গেলাম।
রুদ্রঃচোখ বন্ধ করো
আমিঃ কেন?
রুদ্রঃ করো না
আমি রুদ্রের কথামত আমি চোখ বন্ধ করলাম।
রুদ্রঃ I love u faria…..( চিৎকার করে)
আমি এটা শুনে একটা মুচকি হাসি দিয়ে যেই চোখ খুলতে যাবো ওমনি রুদ্রের চিৎকার শুনলাম।
আমি চোখ খুলে দেখি রুদ্রকে একটা গাড়ি ধাক্কা দিয়ে চলে গেল।
আমি চিৎকার করে রুদ্রের কাছে দৌড়ে গেলাম।




চলবে

#তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ২৫
#Faria_Siddique






সময়ের স্রোত বহমান। সময় কারোর জন্য যে থেমে থাকে না সেটা আমাদের সকলেরই জানা।
তেমনি আজ প্রায় ২ বছর সময় পেরিয়ে গেছে।হুম পেরিয়ে গেছে সময়।বদলেছে অনেক কিছু।
রুদ্রর এ্যাকসিডেন্ট হওয়ার পর তখন-




অতীত




ফারিয়া— রুদ্র!!………………..…….

বলে দৌড়ে রুদ্রর মাথার কাছে বসে ওর রক্তে মাখা মাথা কোলে নি।আর বলি,”রুদ্র…র… কীভাবে হলো?? এটা….বলে কেঁদে উঠলো হাউমাউ করে উঠি।

রুদ্র খুব কষ্টে বলে,ফারি…য়া…তুম্.. মি কান্না.. করো না! প্লিজ!

আমি– কান্না করবো না?? কখন এটা হলো!!
তুমি কেন দাঁড়ালে ওখানে!!হুম বলে আবারো কান্নায় ভেঙে পরলাম

বেশকিছু সময় ওইভাবে কেটে যায় আমি ওকে কোলের মাথা জড়িয়ে ধরায় আমার সারা শরীর রক্তে মেখে যায়।আমি আর দেরি না করে এ্যাম্বুলেন্স এ কল করি।
কারন আমি তো ওকে নিয়ে যেতে পারবো না।কোনো ভাবে। আমি সম্পুর্ণ ভাবে ভেঙে পরেছি।আবারও ওই
আপু মারা যাওয়ার সময় যখন বুকে ফাঁকা লাগছিল।সেই কষ্ট আবারও সহ্য করার ভয় জেঁকে ধরেছে।
আমি রুদ্রর মাথা কে চেপেই ধরে আছি বুকে। ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।লাগছে যদি হারিয়ে যায় রুদ্র, না না!
ওকে আমি হারাতে দিব না।

আমি— রুদ্র চুপ কেন করে আছো কথা বলো!

রুদ্র— আজ… আআ…র কথা না শুধু তাকিয়ে থাক..বো যদি আমি…

আমি— তুমি.. কি?? হ্যা কি!! তোমার কিছু হলে আমি মরে যাবো!..আমি কান্না করতে থাকি আবারও..

রুদ্র— নিজের… কিছু হওয়ার কথা বল..বে না!! “তোকে ছাড়া যে আমি শূন্য”

আমি— আমিও তোমাকে ছাড়া শূন্য..

আর পারছিলাম না আর রুদ্রের ও কথা বলতে পারছিল না।আমি ওর এই মুখ পানে চেয়ে।

রুদ্রর রক্ত পরা থামাতে নিজের ওড়না ওর মাথায় টাইট করে বেধে দিলাম।তারপর আবারও মোবাইল নিয়ে দাদাভাই কে ফোন করি সব বলি।

তারপর ওকে হসপিটাল এ নিয়ে যাওয়া হয়।





বর্তমান






আর আজ ও কোমায়।আমি আজ ও ওর পথ চেয়ে।রুশা ভাইয়া, আর দাদাভাই মেহেক ভাবির বিয়ে হয়ে গিয়েছে।

আশ্চর্যজনক ব্যাপার সবার আগে বিয়ে ঠিক হয়েছিল
রুদ্র আর আমার তারপর আমি বায়না করি দাদাভাই আর ভাইয়ার বিয়ে নিয়ে। কিন্তু আজ ওদের বিয়ে হয়ে গেছে আর লিলিপুট রাও হয়েছে। তবুও আমাদের কোনো দেখা নেই বিয়ের। আজও হবু বউ হয়েই ওর খেয়াল রাখি ওর বাসায় থাকি। যদিও কোমায় তাতে আমার কি আমার তো রুদ্রর কাছে থাকাটাই অনেক।
রুদ্র শুয়ে থাকে তখন ও কোমায় থাকে জানি তবুও
ওর সাথে গল্প করি এক তরফা।মানুষ এক তরফা ভালোবাসা করে না? আমিও ভালোবাসার টানে এক তরফা গল্প করি।ওর সামনে বক বক পক পক করতেই
থাকি।এখনও ইনভেস্টিগেশন চলছে রুদ্রর এ্যাকসিডেন্ট এর পিছনে কার হাত তা বের করার জন্য।আমি ভাবি কে আমাদের এতো বড় ক্ষতি করল
কি তার শত্রুতা। আমার রুদ্রকে কেন টার্গেট করল।
আমি কে করতো!তাহলে ও ভালো ছিল।

আমি আজ আমি দাদাভাই এর বাসায় যাবো। ফারা কে দেখতে মেহক ভাবি আর দাদাভাই এর কিউট একটা
মেয়ে বেবি হয়েছে। তার ১ বছর বয়স তার প্রথম বার্ড ডে বানানো হয়নি কোনো কারণ বসত। আর আমি ওকে এতদিন দেখতেও যায়নি। রুদ্র কে ছেড়ে কোথাও যেতামই না।আজ যাচ্ছি বাবা অনেক করে বললো।দাদাভাই আর ভাইয়া তো অভিমানী করেই আছে যে আমি ওদের ভুলে গেছি আর বাসায় যাইনা।আর মেহেক ভাবি ও বললো ফারা ওর পিপিন কে দেখতে চায়( বিদ্রঃপিপিন = ফুফি)

আমি ফারার জন্য ছোট ছোট কিউট জামা আর চকলেটের বক্স নিয়ে রওনা হলাম।জানি যে এতটুকু বাচ্চা চকলেট খেতে পারবে না তাই ফ্রুট জেলি চকলেট নিয়েছি নরম নরম ও দেখতেও কিউট। রুদ্রর মা বললো দেখে আসলে বেবিকে মন টাও ভালো হবে।
মা/রুদ্রর মা আগেই ফারাকে দেখে গিফট দিয়ে আসছে জন্মের সময় ফারার।

আমি গিয়ে বাসা পৌছে দেখি দুই দাদাভাই অভিমানী মুখ করে বাগানে ফুল দেখছে।আমি জানি ওরা আমার জন্য বাহিরে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু তা আমাকে বুঝতে না দেওয়ার জন্য ফুল দেখার অভিনয় করেছে।

আমি— কারা যে ফুল দেখার অভিনয় করে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল আর এখন আমাকে জড়িয়ে জড়িয়ে ও ধরছে না চলেই যাই বরং….

দাদাভাই এসে আমাকে জড়িয়ে বলে,” ঢং এ বাঁচে না… নিজেই আসে নেই আর আমাদেরই ভয় দেখায় হুম!
ভাইয়া ও জড়িয়ে ধরে বলে,”চলে ভাই আজ বোনু কে কোলে করে গৃহ প্রবেশ করাই।
দুই ভাই মিলে কোলে নিয়ে আমাকে বাসায় নিয়ে চললো।





সবাই আজ তাকিয়ে আছে। আমাদের দিকে।
আমাকে সোফায় বসাতেই বাবা আসলো।আমি বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,”কি বউ মা দের আদর যত্নে আমাকে ভুলে যাচ্ছো!??”

বাবা— আমি ভুলছি নাকি তুই সারাদিন সারাক্ষণ হবু শশুর বাড়ী পরে থাকিস!আমাদের কথা মনে পরলে আরকি😒

আমি— এমন না বাবা রুদ্রর মার বয়স হয়েছে উনি রুদ্রর খেয়াল রাখতে পারেন না একা তার ওপর রুশা তো ওই বাসায় গেলে নাকি আমি আসি রুশাও তো যায় না😒

রুশা— এই তোর কি মনে হয় আমার যেতে ইচ্ছা করে না কিন্তু তোর ভাইয়া ই তো যেতে দেয় না।

আমি ভাইয়ার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম
ভাইয়া হকচকিয়ে যায়।

ভাইয়া— আমি! আমি কবে যেতে মানা করলাম তোমাকে আমি বলেছি মেহেক দিদিভাই এর একা একা কষ্ট হবে এর বেশি কিছু না।

আমরা সবাই হেসে দিলাম।আজ কতো দিন পর হাসলাম রুদ্রর কথা মনে হতেই ফাঁকা ফাঁকা লাগলো।
একটা ফোন করে খবর নি।তখনই মেহেক ভাবি কোলে করে সোনা মনি ফারা কে আনলো।

আমি ওকে কোলে নিয়ে বলি,”ফারা কেমন আছে?”

ফারা আমার ড্রেসের পুতির সাথে খেলতে খেলতে বলে,”ফালা বালো আত্তে, তুলি কে?(মানে ফারা ভালো আছে! তুমি কে?”

আমি— তোমার পিপিন আমাকে পিপি বলো..

ফারা— পিপ পিপ তুমি মদার অলেক(পিপি তুমি মজার অনেক)

আমি— পাকনি বুড়ি চলো খেলবো। রুমে গিয়ে তোমার জামা আর চকলেট ও দিব! মেহেক ভাবি ওকে রুমে নিয়ে যাই ওকে?

মেহেক— অবশ্যই, আমিও তোমার দাদাভাই এর কাছে যাই।

আমি— হুম যাও যাও তুমি দাদাভাই কে ছাড়া থাকতেই পারো না 😜

মেহেক — কিসব বলো আচ্ছা যাই কেমন😳

আমি ফারা কে নিয়ে ওপরে চললাম খেলতে, মনে হচ্ছে আমার আর রুদ্রর বেবি হলে নাম কি রাখবো মেয়ে হলে রিদি আর ছেলে হলে ফায়াজ। মেয়ে হলে ফারা আর রিদি অনেক ভালো বান্ধবী হবে ছেলে হলে ফায়াজ ওর বোনের খেয়াল রাখবে।আমি বেবি খাওয়া বো আদর করবো খেলবো সব করবো ওর সাথে।
আচ্ছা তো ততদিনে রুদ্র বুড়ো হয়ে যাবে হিহি করে হেসে উঠলাম।আবারও হয়তো রুদ্রর কোমা থেকে বেরিয়ে এলে আমাদের ও হবে পিকচার পার্ফেক্ট সংসার। ফিক করে হেসে দিলাম।




#চলবে