#তোকেই ভালোবাসি
#লেখক – তানভীর হৃদয় নীল
#পর্ব – ২৯
রাকিব – লোকদের ফোন দিয়ে বলেছিলাম। মেঝো মামাকে খুঁজে বের করে মেরে ফেলতে। এখন মামুন ভাই ফোন দিয়ে বললো, আমাদের ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার জন্য।ওই দুজনকে সহ মেঝো মামাকে ফ্যাক্টরিতে বেঁধে রেখেছে। কিন্তু মেঝো মামাতো আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
তানভীর – কী বলছিস এইসব?তোর মাথা ঠিক আছে তো নাকি?(কিছুটা রেগে)
রাকিব – আমি কিছু বুঝতে পারছি না।মেঝো মামা আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ মামুন ভাই বললো, আমাদের লোকজন নাকী মামাকে ফ্যাক্টরিতে বেঁধে রাখা রেখেছে। দু’জন লোক নিয়ে বড় মামী কে মারতে বাসায় যাচ্ছিলো। সেখান থেকে ওই দুজনকে সহ মামাকে তুলে ফ্যাক্টরিতে নিয়ে যায়।
তানভীর – ঠিক আছে।চল ফ্যাক্টরিতে যাই। তাহলে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।
রাকিব – হে চল।
– দুজনে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে,গাড়ি নিয়ে ফ্যাক্টরিতে চলে গেলাম। ফ্যাক্টরিতে গিয়ে কলেজের সভাপতি শরিফ চৌধুরীর লাশ দেখে দুজনে কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম।মেজো মামার সাথে যারা হাসপাতালে গিয়েছিলো। তাদের দুজনের মৃত দেহ ফ্লোরে পড়ে আছে।
রাকিব – এইসব কী? আর শরিফ চৌধুরীকে মারলেন কেন?
মামুন – এই শরিফ চৌধুরী নুসরাতকে মারার চেষ্টা করছে। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে তোমার মামীকে মামার জন্য তাদের বাসায় যাচ্ছিলো। কিন্তু তার আগেই আমাদের লোকজন ওদেরকে ধরে এখানে নিয়ে আসে।
তানভীর – শরিফ চৌধুরী নুসরাতকে মারতে চাইবে কেন? নুসরাতকে মারার চেষ্টা করেছে মেঝো মামা। আর আপনি তো বলেছেন মেঝো মামাকে লোকজন তুলে নিয়ে এসেছে। তাহলে শরিফ চৌধুরী এখানে আসলো কিভাবে? আর তাকে মারলেন কেন?
মামুন – তোমাদের বোঝার ভুল হচ্ছে। শরিফ চৌধুরী তার ছেলের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নুসরাতকে মারার চেষ্টা করেছে। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে। তোমার মামীকে মামার জন্য তার বাসায় যাচ্ছিলো।
-যাতে কেউ তাকে চিনতে না পারে। সেই জন্য সার্জারি করে তার আসল চেহারা চেঞ্জ করে ফেলে।তারপর তোমার মামার ছদ্মবেশ ধারণ করে এইসব করেছে। হাসপাতালের সিসি টিভির ফুটেজে যাকে দেখেছো। সেটা তোমার মামা না শরিফ চৌধুরী ছিলো।
– তোমার মামার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু শরিফ চৌধুরী। তোমার মামা কখন হাসপাতালে আসবে?সেটা সে আগে থেকেই জানতো।এটাও জানতো নুসরাতের কিছু হলে তুমি তোমার মামাকে এতো সহজে ছাড়বে না। মূলত এইসব কিছু করছে আশরাফুলের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।
– আর আমার কথা বিশ্বাস না হলে। পাশের দুজনের চেহারা ভালো করে দেখো। নিশ্চয়ই হাসপাতালের সিসি টিভির ফুটেজে তাদের দুজনকে দেখেছিলে।
রাকিব – এবার কী হবে? শরীফ চৌধুরী চেহারা পাল্টিয়ে মামার ছদ্মবেশ ধরে নুসরাতকে মারতে চেয়েছিল।আমরা সবাই তো ভেবেছি মেঝো মামা এইসব করছে। তার জন্য মামাকে দুজনে কতোকিছুই না বলেছি। মামা কী আমাদের ক্ষমা করবে?
তানভীর – এইসব ভেবে আর কী হবে? আমাদের তো কিছু করার ছিলো না।রাগের মাথায় মামাকে অনেক কিছু বলেছি। তাছাড়া শরিফ চৌধুরী এমন ভাবে কাজটা করেছে।সেটা আমরা কেন?কোনো মানুষই বুঝতে পারবে না।
মামুন – গিয়ে সবাইকে সবকিছু খুলে বলো। আশাকরি ওনি তোমাদের ক্ষমা করে দিবে।
– তারপর ফ্যাক্টরি থেকে দুজনে হাসপাতালে চলে গেলাম। হাসপাতালে গিয়ে দেখি পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে।মেঝো মামার হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো।সবাই মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
পুলিশ অফিসার – এতোক্ষন তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। একজন বাবা হিসেবে ওনি এমন একটা কাজ করবে। আমারা সেটা ভাবতে পারছি না।
তানভীর – অফিসার মেঝো মামাকে ছেড়ে দিন।মামা এইসব কিছুই করে নি।
পুলিশ অফিসার – কী বলেছো তুমি? নুসরাত নিজের মুখে বলেছে ওনিই তাকে মারার চেষ্টা করেছে। তাছাড়া হাসপাতালের সিসি টিভির ফুটেজেও দেখা গেছে।(অবাক হয়ে)
রাকিব – আপনার সব কথাই ঠিক। কিন্তু মেঝো মামা এইসব কিছু করেনি।নুসরাত যাকে দেখেছে সেটা শরীর চৌধুরী ছিলো।মেজো মামা নয়।
পুলিশ অফিসার – এইসব কি বলছো তোমরা?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
তানভীর – কলেজের সভাপতি শরিফ চৌধুরী। আমার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নুসরাতকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো। আশরাফুলকে যে মেরেছি সেটা শরিফ চৌধুরী জেনে গেছে। যার জন্য এইসব কিছু করছে।
– যাতে কেউ তাকে চিনতে না পারে। সেই জন্য সার্জারি করে তার আসল চেহারা চেঞ্জ করে ফেলে।তারপর মেঝো মামার ছদ্মবেশ ধারণ করে নুসরাতকে মারার চেষ্টা করেছিলো।
– হাসপাতালের সিসি টিভির ফুটেজে যাকে দেখা গেছে।সেটা মেঝো মামা না শরিফ চৌধুরী ছিলো। নুসরাত যাকে দেখেছে সেটাও শরিফ চৌধুরীই ছিলো।
রাকিব – মেঝো মামাকে ছেড়ে দিন। এইসবের পেছনে মেঝো মামার কোনো দোষ নেই।
– সবকিছু শুনার পর পুলিশ মেঝো মামাকে ছেড়ে দেয়। আমাদের দুজনের কথা শুনে।সবাই অবাক দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে জান্নাত বললো, ভাইয়া তুই সামান্য কারণে আশরাফুলকে মেরে ফেললি?ওতো আমার কোনো ক্ষতি করতে পারে নি।
তানভীর – সেটা তোর কাছে সামান্য কিছু হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে সেটা সামান্য কোনো কারণ না।এটা ঠিক ওইদিন আশরাফুল তোর কোনো ক্ষতি করতে পারে নি। কিন্তু আমি যদি ওইদিন কলেজে না যেতাম।তাহলে আশরাফুল কিন্তু তোকে
এমনি এমনি ছেড়ে দিতো না।
– কলেজের এর আগের প্রিন্সিপালের মেয়েকে আশরাফুল,রনি ও তার বন্ধুরা ধর্ষন করেছিলো। বিচার চাওয়ার অপরাধে আদালতে সেই মেয়েকে পতিতা হিসেবে প্রমাণ করেছে।এদের মতো মানুষ বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।এরা বেঁচে থাকলে এমন হাজারো বোন ধর্ষিতা হবে।
– শুভর বোন মুক্তাকে রনি ও তার বন্ধুরা ধর্ষন করেছিলো। আংকেল সেটা মেনে নিতে পারেনি। যারা কারণে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। কিন্তু এইসব আমাদের ছাড়া কেউ জানে না। একজন ধর্ষণকের যদি উপযুক্ত শাস্তি হতো। তাহলে ভুলেও দ্বিতীয়বার কেউ কোনো মেয়েকে ধর্ষণ করার সাহস পেতো না।
তামিম – তার মানে রনি, রিফাত,ছামি, অনিক তাঁদেরকেও তোরাই মেরেছিস?
রাকিব – শুধু ওরা নয়। ছোট্ট মামার সব লোকদের আমরাই মেরেছি।
তানভীর – শরিফ চৌধুরী আর সাথের দুজকে আমাদের লোকজন মেরে ফেলেছে। বিষয়টা একটু সামলে নিয়েন।
পুলিশ অফিসার – ঠিক আছে। এই বিষয়ে তুমি কোন চিন্তা করো না।
– বলেই পুলিশ অফিসার চলে গেলো। রাকিব মেঝো মামার কাছে গিয়ে বললো,মামা আমাদের ক্ষমা করে দিন।রাগের মাথায় আপনাকে অনেক কিছু বলে ফেলেছি। শরিফ চৌধুরী এমন একটা কাজ করবে আমরা ভাবতে পারি নি।
মেঝো মামা – আমি তোদেরকে কী ক্ষমা করবো? বরং তোরা আমাকে ক্ষমা করে দে। সত্যিটা না জেনে এতো বছর তোদের সাথে অনেক অন্যায় করেছি। বিনা অপরাধে তোদের জীবন থেকে দশটা বছর নষ্ট হয়ে গেছে।আমাকে ক্ষমা করে দে।আমি তোদের মামা হয়েও কিছু করতে পারলাম না।
(কাঁদতে কাঁদতে)
রাকিব – এখন আর এইসব বলে কোনো লাভ নেই।যা হওয়ার হয়ে গেছে।
আংকেল – সব ভুলে গিয়ে বাসায় ফিরে চল বাবা।তোর আম্মু অবস্থা বেশি একটা ভালো না। ডাক্তার বলেছে তাকে সবসময় হাসিখুশি রাখার জন্য। যাতে কোনো ভাবেই তোর আম্মুর উপর কোনো রকম মানসিক চাপ না পড়ে। আবার যদি তোর আম্মুর কিছু হয়ে যায়। তাহলে আর তোর আম্মুকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।প্লীজ বাবা বাসায় ফিরে চল।(কাঁদতে কাঁদতে)
তানিয়া – দেখো যা হওয়ার তা হয়েগেছে। এখন এইসব ভেবে অযথা কষ্ট পেয়ে লাভ নেই। নিজেকে পরিবার থেকে দূরে সরিয়ে।নিজেও কষ্ট পাবে আবার মা,বাবা,ভাই, বোন তাদের ও কষ্ট দিলে।এতে করে লাভটা কী হবে ?দিন শেষে তোমরা কিংবা তোমাদের পরিবারের কেউই সুখী হবে না।
– এমনিতেই তোমাদের জীবন থেকে দশটা বছর অতিবাহিত হয়েগেছে। সামনে আরো অনেকটা সময় আছে। আরো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে তোমাদের।নিজেদের জীবনটাকে গুছিয়ে নাও।
– নিজের পরিবার মা,বাবা,ভাই, বোন, আত্নীয়-স্বজন তাদের কাছ থেকে নিজেকে এইভাবে দূরে সরিয়ে রেখো না।এতো তোমরাও কষ্ট পাবে।সাথে নিজের পরিবারকেও কষ্ট দিলে।
-আনেক তো হলো এবার অন্তত নিজেদের জীবনটা গুছিয়ে নাও। সবকিছু ভুলে নতুন করে জীবনটা শুরু করো। বাকিটা সময় সবাইকে একসাথে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখো।এতে নিজেও ভালো থাকবে।পাশাপাশি নিজের পরিবার,মা,বাবা,ভাই, বোন, আত্নীয়-স্বজন সবাই ভালো থাকবে।
– তানিয়া ভাবির কথা শুনে দুজনেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। আংকেল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এখনও কাঁদছে। হঠাৎ রাকিব কান্নাভেজা কন্ঠে বললো, আব্বু এইভাবে আরো কেঁদো না। আম্মুকে সাথে নিয়ে আজ হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরবো।
আংকেল – সত্যি বলছিস?(অনেক খুশি হয়ে)
রাকিব – হে সত্যি বলছি।
জান্নাত – ভাইয়া তুই কিছু বলছিস না কেন? তুই কী বাসায় যাবি না?
আম্মু – এইভাবে আমাকে আর কষ্ট দিস না। দয়াকরে এবার অন্তত বাসায় ফিরে চল বাবা।আমি তোর কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছি।(কাঁদতে কাঁদতে)
তানিশা – প্রয়োজনে আমি তোর পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবো। তবুও তুই বাসায় ফিরে চল ভাই।(কাঁদতে কাঁদতে)
তানভীর – কারো কিছু করতে হবে না। আমার কারো প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। নুসরাত সুস্থ হলে তারপর বাসায় ফিরে যাবো।
#চলবে