তোমাতেই বসবাস পর্ব-১৮

0
379

#তোমাতেই_বসবাস
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#পর্ব_১৮

বিয়ে সম্পূর্ণ হওয়ার পরের মহূর্তে আয়াজ এর কাছে যেয়ে আদ্রিতা বলে উঠে।
—থ্যাংঙ্ক ইউ আয়াজ ভাইয়া আজ আপনার জন্যেই আমাদের বিয়েটা হলো।
—আমার জন্য মানে।
—হ্যা আপনিই তো আমাকে বলেছিলেন একবার নীড়কে ভালোবাসো। আপনার প্রশ্নের উওর চিন্তা করতে যেয়েই তো আমি বুঝেছিলাম হ্যা আমি তাকে ভালোবাসি আর আপনিও সেটা রেকর্ড করে নীড়কে পাঠিয়েও দিয়েছিলেন কিন্তু আমি একটা কথা বুঝলাম না আপনি তো আমার নীড়কে ভালোবাসার কথা রেকোর্ড করেছিলেন কিন্তু নীড়ের জায়গায় আপনার নামটা আসলো কিভাবে।

আয়াজ কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা এদিকে নীড় নিজেও অবাক কারণ এইসব তো সে কাউকে বলেনি আটমাশ আগে হঠাৎ আয়াজের সে অভিও ক্লিপ পেয়েই নীড় আদ্রির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলো। এটা জানতে যে আসলেই কি সে নীড়কে ভালোবাসে। তাহলে নীড়ের সাথে যোগাযোগ বন্ধ হলে সে কি করবে কিছু সে কথা যে আদ্রি জেনে গেছে তা সে টের অব্দি পায়নি।

—কি বলছো এইসব তুমি বেবি ডোল।
—যা আপনি আমাকে দেখিয়েছেন যায়হোক এতোকিছু করলেন নিজের ফ্রেন্ডের জন্য আরেকটু করে দেন ভাইয়ায়ায়ায়ায়া,,,

আয়াজ এর তো অবস্থা শেষ যাকে বউ বানাতে চেয়েছিলো তাকে নিজের চোখের সামনে বউ সাজা দেখতে হচ্ছে অন্যকারো আবার বর এর জায়গায় ভাইয়া,,।

—বলো কি চায়?(আমতা আমতা করে)
—আমাদের বাসর ঘরটা সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েন কেমন আসলে আদ্রিয়ান ভাইয়া আর নওমি আপু আমার ভাই আবার ভাবি এদিকে আমার ফ্রেন্ড গুলোও নাই আর রিয়াজ ভাইয়া গেছে ঘুরতে আদ্রফ ভাইয়া বিজনেস ট্রিপ বুঝেন ই তো।আর রুহী আমার কই মাসের বড়।

আয়াজের এখন নিজের মাথার চুল নিজে ছিড়তে মন চাচ্ছে।আয়াজের এই মহূর্তে অবস্থা “ছেড়ে দে মা কেদে বাচি”। কিন্তু আদ্রিতা আর আয়াজ কে ছাড়েনা সত্যি সত্যিই আয়াজকে আদ্রির বাসর সাজাতে হয়

হঠাৎ কিছু পরে যাওয়ার আওয়াজে আয়াজের ধ্যান ভাংগে সামনে রামিসাকে দেখে চোখ ছোট ছোট করে ফেলে।
—আপনি এখানে কি করছেন মিস চাশমিশ,,

রামিসা এদিক ওদিক তাকাতে শুরু করে ভয়ে তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে।কি বলবে কই যাবে কিছুই মাথায় আসছেনা। এই লোকটাকে দেখলে অজনা কারণেই ভয় লাগে এই ভয় এর সূত্র সে এখনো বের করে উঠতে পারেনি।আয়াজ কি মনে করে বলে উঠলো

—বিয়ে করবে আমাকে মিস চাশমিস??
—কিহ আমি?(অবাক হয়ে)
—এখানে আর কেউ চাশমিস আছে বলে আমার মনে হয়না। (আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে)
—আমি বিয়ে করবোনা (ভীত চোখে)
—কেন আমাকে বিয়ে করতে কি সমস্যা।
(চোখ ছোট ছোট করে)
—আমার ভয় লাগে আপনাকে।
—কিন্তু কেন আমি কোনদিন তোমার উপর রাগ করেছি।
—নাহ(দুই সাইডে মাথা নাড়িয়ে)
—তাহলে ভয় পাওয়ার কারন কি।
—জানিনা(আমতা আমতা করে)

আয়াজ এবার রেগে রামিসাকে নিজের দিকে টেনে তার গালে কিস করে।হঠাৎ এমন হওয়াই রামিসা কেদে দেয় সাথে সাথে রামিসার ঠোঁট জোড়া আকড়ে ধরে কিছুক্ষন পরে ছেড়ে দিতেই রামিসা আয়াজকে থাপ্পড় দিয়ে সেখান থেকে কান্না করতে করতে চলে যায়।আয়াজ থাপ্পড় দেওয়া গালে হাত রেখে কিছুক্ষন সেদিকে তাকিয়ে থাকে বিরবির করে বলে উঠে
—আমি চায় বা না চায় আদ্রির চিন্তা আমার মাথা থেকে বের করা সম্ভব না।তাই তার মতোই একটা মেয়েকে জীবনে জড়িয়ে দেখি চাইলেও তো সম্ভব। দুইজনার কোন মিল থাকুক আর না থাকুক দুইজনার মাঝে অদ্ভুত এক মিল তাদের গালের টোল যা হাসলে কথা বলার সময় ফুটে উঠে। একটা ভুল তো করে ফেলেছি দুইজনকে আলাদা করার সরযন্ত্রে এবার নাহয় নিজের থেকে শিখি।

আয়াজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেখান থেকে চলে যায়।যে যাকে চায় তাকে পেলে হয়তো কিছু মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস নিতো।ভালোবাসা তার প্রতিই কেন আসতে হয় যে আমাদের নসিবে নেয়।আয়াজ এর প্রতিটি ধাপ বলে দিচ্ছে তার বুকের ভার। প্রিয় মানুষ কে চিরতরে হারানোর যন্ত্রণা কারো প্রেমিকা কাড়া সহজ কিন্তু তিন কবুল বলা স্ত্রীকে কাড়া কি আদৌও সহজ। যার ভাগ্যতে আল্লাহ নিজেই তাকে দিয়েছে সে ভাগ্য কি আদৌ বদলানো সহজ।

—ভালো সেও বেসেছিলো আমিও বেসেছিলাম কিন্তু পূর্ন্যতা পেলো তার ভালোবাসায় হয়তো কোথাও একটা কমতি থেকে গেছিলো আমার চাওয়াই আমার দোয়াই হয়তো সে থাকলেও তার দোয়াই ছিলো অন্যকেউ মোনাজাতের মিল না হলে আসলেই ভাগ্যে মিলেনা।

*****

এক মনে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছে আদ্রিতা।চোখ তার অন্ধকারে আচ্ছন্ন আকাশের দিকে কানে এসে বাড়ি খাচ্ছে মৃদু বাতাস।ঠান্ডা বাতাসের প্রবাহে বার বার শিউরে উঠছে আদ্রিতার হাতের পশম বজ্রপাতের আওয়াজ কানে আসতেই আখিদ্বয় বন্ধ করে ফেলছে বার বার।হঠাৎ কোমরে কারো স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠে সে জানে এই স্পর্শ কার। কিন্তু তবুও আদ্রিতার মাঝে কোন হেলদল ছিলোনা। এখনো আগের মতোই এক ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ করেই ঘাড়ে উষ্ণ ছোয়া পেতেই শিউরে উঠে তবুও আদ্রিতা একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।নীড় আদ্রিতার ঘাড়ে স্লাইড করতে করতে গাল বেয়ে উপরে উঠে কানে কিস করে।হালকা হাতে আদ্রিতার মাথার ঘোমটা খুলে মুখ ডুবিয়ে দেয় আদ্রিতার দীঘল কালো রেশমি চুলে। আদ্রিতা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। নীড় আদ্রির মাঝে এতোটাই ডুবে ছিলো সে টাল সামলাতে না পেরে আসলেই দুই কদম পিছিয়ে যায়। অবাক নয়নে আদ্রির দিকে তাকায় তা দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠে আদ্রির ঠোঁটের কোণায়।

—কিহ অবাক হলেন হঠাৎ কাছে আসতে দিয়ে দূরে ঠেলে দিলাম কেন।

নীড় তখন ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রির দিকে।

—আমার ও এমন ই মনে হয়েছিলো।এরচেয়ে দ্বিগুন ধাক্কা পেয়েছিলাম তিব্র আঘাতে জরজড়িত হয়েছিলাম। ভাংগা হৃদয় পুনরায় জোড়া লাগার আগেই আপনি ভেংগে দেওয়ার চেষ্টা করতে শুরু করেছিলেন হঠাৎ যখন এই ভাবেই দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম আমার ও দম আটকে এসেছিলো মাঝে মধ্যে পাগল প্রায় লাগতো রাতে ঘুম আসতোনা দিনে শান্তি পেতাম না বিকালের দিকে এসে একাকিত্ব ঘিরে ধরতো।আপনার অবহেলায় জান বেরিয়ে আসতে লাগতো।

নীড় অবাক হয়ে যায় প্রতিটা কথা তার বুকের মাঝে ঝড় তুলছে নিজের অজান্তেই তার পাখি কতোটা কষ্ট পেয়েছে তা তিলে তিলে অনুভব করতে শুরু করে কোন মুখে সে তার আদরপাখিকে কৈয়ফিয়ত দিবে তার জানা নাই।মুখে যেনো কুলুপ এটে বসে আছে যা খুলার কোন অপশেন নেয়।

—আর সবচেয়ে মজার বিষয় কি জানেন আমাকে ভালোবাসার মানুষ টার আমার উপর বিশ্বাস ই নেয় কেউ কোন একটা অডিও ক্লিপ শুনিয়ে দিলো র বিশ্বাস করে নিলো চুপচাপ মেনে নিলো আমি তাকে না অন্যে কাউকে ভালোবাসি বিশ্বাস করে নিলো তার মিথ্যা আর নিজের সত্যি ভালোবাসা অবিশ্বাসের তালিকাই। যার নিজের ভালোসার উপরে বিশ্বাস নেয় সে আমাকে কি ভালোবাসবে কি করে চাইবে আমাকে আমি আপনাকে বিয়ে করেছি ঠিক আছে কিন্তু সংসার করতে না। কাছে টেনেও কিভাবে দূরে সরাতে হয় আর সেয় অনুভূতি কতোটা জঘন্য হয় সেটা বুঝাতে তিলে তিলে নিজের কষ্ট বুঝবেন আপনি আর আমি নিজ দ্বায়িত্ব নিয়ে সেটা বুঝাবো আই প্রমিজ আর খান রা কখনোই তার প্রমিজ ভাংগে না

আদ্রিতা যেতেই হাটু মুরে বসে পড়ে নীড়।নিজের ভুলের একটা আঘাত তার প্রিয়সীকে কত আঘাতে খন্ড বিখন্ড করেছে নীড় টের পাচ্ছে।প্রিয়সীর চোখের প্রতিটা চোখের দানা যেনো তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে তার অপরাধবোধ। এদিকে আদ্রিতা বৃষ্টির মধ্যে ছাদে বসে পড়ে চিৎকার করে উঠে তার ভীতরের স্বত্তা। বজ্রপাতের আওয়াজের সাথে যেনো কোন কম্পিটিশান এ নেমেছে সে। বৃষ্টির বিন্দু কনা ভিজিয়ে দিচ্ছে তার সম্পূর্ণ শরীর,মিশে যাচ্ছে তার প্রতিটি অশ্রুকোণার সাথে।যে রাত হতে চলেছিলো তাদের পূর্ণ্যতার যে বৃষ্টি সাক্ষি দিতো তাদের প্রেম মহূর্তের সে বৃষ্টি সাক্ষি হচ্ছে তাদের যন্ত্রণার তাদের বিচ্ছেদের,,,। কি হতে চলেছে এই বৃষ্টির পরিনতি কি হবে এদের শেষ,,।

চলবে