নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-৩৬+৩৭

0
1335

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩৬

আইরাত যে আব্রাহাম কে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় মেরেছে তাতে আব্রাহামের কিছুই হয় নি। সে তবুও আইরাতের দিকেই তাকিয়ে আছে। সে কিছু বলবে না আজ, কিচ্ছু বলবে না। কারণ এটা তার প্রাপ্প ছিলো। আব্রাহাম না বুঝেই যা করেছে তার জন্য এটা অতি সামান্য একটা বিষয়। এমন টা হবারই ছিলো। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত এবার হু হু করেই কেদে দেয়। জোরে জোরে দম নিচ্ছে আর আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। দিয়া বুঝলো যে এদের মাঝে খুব বড়োসড়ো কিছু একটা ঝামেলা পেকেছে। তাই দিয়া সোজা সেখান থেকে চলে আসে। আব্রাহাম কিছু বলতে যাবে আইরাতকে তখন আইরাত তার হাত দিয়ে আব্রাহাম কে থামিয়ে দেয়। আইরাতের রাগও লাগছে আর কান্নাও। আইরাত সেখান থেকে চলে আসতে নিলে আব্রাহাম তার হাত ধরে ফেলে। তারপর আবার তাকে নিজের সামনে এনে দাড় করিয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; মারো কাটো বকো যা ইচ্ছে করো। তাও দূরে যেও না প্লিজ।

আইরাত;;

আব্রাহাম;; আইরাত প্লিজ, আমি মরে যাবো তোমাকে ছাড়া। আমি সত্যিই মরে যাবো তুমিহীনা। প্লিজ যেও না। হ্যাঁ আমি ভূল করেছি। আমার একটা বার তোমার কথা শোনা উচিত ছিলো। আমি শুনি নি। সত্যি অনেক বড়ো ভূল করেছি আমি। প্লিজ মাফ করে দাও আর হবে না এমন আর কখনো এমন করবো না। প্লিজ আইরাত প্লিজ যেও না। কথা তো বলো।

আইরাত;; হাত ছাড়ুন।

আব্রাহাম;; জানপাখি প্লিজ।

আইরাত;; আমার হাত ছাড়ুন।

আব্রাহাম;; আইরাত!

আইরাত;; বললাম না হাত ছাড়ুন (চিল্লিয়ে)

আইরাত এক ঝটকায় তার হাত টা ছাড়িয়ে নেয়।

আইরাত;; শেষ? মানে সব তামাশা-নাটক শেষ? নাকি আরো বাকি আছে?

আব্রাহাম;;

আইরাত;; আপনি না খুন করেন। তাহলে এক কাজ করুন। ওহহ সরি কাজ না আমার ওপর একটা মেহেরবানি করুন প্লিজ। আমাকে না মেরে ফেলুন। প্লিজ মেরে ফেলুন আমাকে। এভাবে আমি আর পারছি না।

আব্রাহাম;;

আইরাত;; ভালোবাসায় অন্ধ হতে দেখেছি আমি কিন্তু অমানুষ না। তবে কাল রাতে আমি অমানুষ কেই দেখেছি। আপনি কীভাবে এটা করতে পারলেন আব্রাহাম??

আব্রাহাম;; আইরাত মাফ করে দাও না। আর হবে না এমন আমি বুঝি নি অনেক রাগ হচ্ছিলো আমার। রায়হানের সাথে তোমাকে আমি জাস্ট ভাবতে পারছিলাম না। তোমাদের একসাথে মেনে নিতে পারছিলাম না আমি কোনভাবেই। আমি রাগ সামলাতে পারি না জানো তো তুমি। তুমি তো আমার।

আইরাত এবার সোজা তেড়ে গিয়ে আব্রাহামের কলার খামছে ধরে।

আইরাত;; আমি কারো না। আমি আমার নিজের বুঝেছেন আপনি। আপনি কোন সাহসে আমার ওপর অধিকার খাটান। কোন সাহসে হ্যাঁ। কে হই আমি আপনার? আর আপনি ভাবলেন কি করে যে সেইদিন সেই হোটেলে এতো সিন ক্রিয়েট হবার পর তারপর আবার আমি যখন জানতে পারলাম যে রায়হান আপনারই সৎ ভাই তারপরেও। তারপরেও আমি ওই রায়হান কে বিয়ে করবো। আমাকে কি পাগল মনে হয় আপনার।

আব্রাহাম;; আমি এতো শত কিছু জানি না। আমি এখন শুধু এটা জানি যে তুমি আমার। আই এম সরি ভূল হয়ে গেছে আমার। বললাম তো আর কতো বলবো। তুমি বলো আমাকে কি করতে হবে, কি করলে তুমি আমাকে মাফ করবে। কি করলে তুমি আবার আমার আগের আইরাত হয়ে যাবে। বলো, শুধু একটা বার বলো।

আইরাত;; যা বলবো তা শুনবেন তো?

আব্রাহাম;; অবশ্যই।

আইরাত;; Just stay away from me…

আব্রাহাম;; আইরাত…

আইরাত;; আমার থেকে দূরে থাকুন।

আব্রাহামকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আইরাত সেখান থেকে চলে আসে। আব্রাহাম আইরাতকে আটকায় না। কারণ সে জানে যে এখন আইরাত কারো একটা কথাও শুনবে না। আর অনেক কিছু গিয়েছে মেয়েটার ওপর দিয়ে তো এমন রিয়েক্ট করা নরমাল। আব্রাহাম তার গেস্ট হাউজে যায়। সেখানে গিয়ে কাল যে গার্ড টা আব্রাহাম কে আইরাতের বিয়ের খবর দিয়েছিলো তাকে ফোন দিয়ে দ্রুত আসতে বলে। সে এসেও পরে।

গার্ড;; স্যার ডেকেছেন?

আব্রাহাম এতোক্ষন মাথা নিচু করে বসে ছিলো। গার্ড আসাতে সে ফট করে মাথা তুলে সামনে তাকায়। আব্রাহামের চাহনি দেখে তো গার্ডের যার যার অবস্থা। ভয়ংকর লাল হয়ে আছে।

আব্রাহাম;; গতকাল কার বিয়ে ছিলো?

গার্ড;; স্যার আসলে আইরাত ম্যামের….

গার্ডের এই কথা বলার সাথে সাথে আব্রাহাম তার পাশে থেকে একটা এলকোহলের কাচের বোতল নিয়ে টেবিলে বারি দেয়। যার ফলে বোতল টা হাফ ভেঙে যায় আর হাফ আব্রাহামের হাতেই থেকে যায়। আব্রাহাম বোতল টা ভেঙেই এক ঝটকায় উঠে গিয়ে গার্ডের পেছনে দিক দিয়ে গিয়ে তার গলায় ধরে। গার্ডের তো ভয়ে ঘাম ছুটে যাচ্ছে।

আব্রাহাম;; বিয়ে কি কাল হয়েছিলো?

গার্ড;; স স স্যার আ আসলে আ……

আব্রাহাম;; Speak up damn it!!

গার্ড;; স্যার গাড়ির ড্রাইভার তো তাই বলছিলো যে রায়হান স্যার নাকি বিয়ের করার জন্য অনেক আগেই আইরাত ম্যামের বাসায় গিয়েছে আর তখন অনেক সময় পার হয়ে গিয়েছিলো স্যার। আমি ভেবেছি বিয়ে হয়েই গিয়েছে তাই,, তাই আপ….

আব্রাহাম;; তাই আমাকে ভূল ইনফরমেশন দিয়ে দিলি তাই তো?!

গার্ড;; ভূল ইনফরমেশন মা মা মানে স স্যার?

আব্রাহাম;; বিয়ে হয় নি। আর তোর এই ভূল তথ্যের জন্য আমি কি থেকে কি করে বসেছি রাগের বসে।

এই কথা বলার সাথে সাথে আব্রাহাম সেই গার্ডের ঘাড়ের বাম সাইডে কাচের বোতল দিয়ে একটা আচড় কাটে। গলগল করে রক্ত ঝড়ছে। গার্ড টা তার ঘাড়ে এক হাত দিয়ে চেপে ধরে কাতরাচ্ছে। তখনই আব্রাহামের ডাকে আরো দুইজন গার্ড আসে।

আব্রাহাম;; গলা বা ঘাড়ের মাঝ বরাবর আচড় কাটি নি। নয়তো সাথে সাথে মরে থাকতো। একে হস্পিটালে নিয়ে যা। হয়তো দুই একটা সেলাই লাগবে তারপর ঠিক।

আব্রাহামের হাতে রক্তের হাল্কা কিছু ছিটেফোঁটা লেগেছে সে তা টিস্যু দিয়ে মুছতে মুছতে বলে কথাটা।

গার্ড গুলো চলে গেলে আব্রাহাম আবার দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে। তার মাথা কাজ করা পুরো বন্ধ করে দিয়েছে। সে কীভাবে আইরাতকে মানাবে সেই বুদ্ধিই আসছে না। যে অবস্থা তাতে তো দেখে মনে হয় না যে সহজে কিছু হাতের নাগালে এসে পরবে। আব্রাহাম বসে বসে এগুলোই চিন্তা করে যাচ্ছে।


ওদিকে রায়হান তার হাতে একটা পাজেল বক্স নিয়ে মিলানোর চেষ্টা করছে। সে এই পাজেল বক্স টা কোন ভাবেই মিলাতে পারে না। কমপক্ষে তিন দিন লেগে যায় তার এটা মিলাতে। এখন সেটা মিলানোরই চেষ্টা করছে আর ভাবছে যে কী করে আইরাতকে নিজের করা যায়। অবশ্যই তাতে আব্রাহাম তো বাধা হয়ে আসবেই। কিন্তু কথায় বলে না “” সাত-সমুদ্র তেরো নদী পাড় করে কাছে পেলাম তোমাকে “” ব্যাপার কিছুটা তেমনই। অনেক বাধা পেরোতে হবে। আর আব্রাহাম নিজেই অনেক বিপদের সমান। রায়হান এগুলো ভাবছিলো তখনই রায়হানের কাছে কলির ফোন আসে।

রায়হান;; হ্যালো।

কলি;; হ্যালো আমি আইরাতের চাচি বলছি।

রায়হান;; জ্বি আমি চিনতে পেরেছি বলুন।

কলি;; আইরাত কি চায় আর কি চায় না তা তো ওর নিজের মুখেই শুনলেন।

রায়হান;; জ্বি আমি শুনেছি। কিন্তু আমি হাল ছেড়ে দেবো না। আইরাত কে এতো সহজে আমি আব্রাহামের হতেও দিবো না।

কলি;; না এখন আপনি এমন কিছুই করবেন না। আইরাত যেহেতু চায় না তাহলে আমিও আর জোর করবো না। থাক মেয়েটা অনেক রেগে ছিলো। আর এছাড়াও আইরাতের চাচা এখন সবটা ব্যাপার জানে তার পরেও যদি আইরাতের ওপর এখন আমি জোর করি তাহলে আমার সংসারে আগুন লাগবে যা আমি চাই না। তো বুঝতেই পারছেন। আইরাতকে ভূলে গেলেই এখন আপনার জন্য ভালো হবে। আর আপনার ভাই নাকি আব্রাহাম। সেও কিন্তু আইরাতের জন্য পাগলের ওপরেও বেশি। কিছু হের থেকে ফের হলে কিয়ামত বাধিয়ে দিবে সোজা।

রায়হান;; আপনি কি আমাকে সোজা ভাষায় না করছেন নাকি হুমকি-ভয় দেখাচ্ছেন কোনটা?

কলি;; হুমকি-ভয় দেখানোর আমি কেউই না। সোজা কথায় মানা করে দিচ্ছি।

রায়হান;; আর আপনি কি ভাবলেন আইরাতকে ছেড়ে দিবো আমি আপনার কথাতেই।

কলি;; একটা কথা শুনে রাখুন প্রেমের মরা জলে ডুবে না। প্রেম-ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যার ফলে মানুষ নিজ হাতে নিজে বরবাদ পর্যন্ত হয়ে যায়। নিজেই নিজের বরবাদি ডেকে আনবেন না বা নিজের ধ্বংস হবার রাস্তায় হাটবেন না। নিজের ভালো পাগলেও বুঝে।

কলি এই বলেই ফোন কেটে দেয়। আর রায়হান তো রাগে ফুসছে।

রায়হান;; না না নাহ, এভাবে ছেড়ে দিলে চলবে না। যে করেই হোক সব ঠিই করতে হবে। নিজের জন্য সব ঠিক করতে হবে হোক না সেটা অন্যের চোখে ভুল।

রায়হান মদের গ্লাস থেকে মদে খেয়ে আবার রাগি ভাবে বলতে শুরু করে…

রায়হান;; দরকার পরলে সব শেষ করে দিবো। খুন করে ফেলবো সবাইকে তবুও আইরাতকে চাই আমার।


রাত বাজছে ১২ঃ২০ মিনিট। এখনো ইকবাল সাহেব আর কলি বাসায় ফিরে নি। আইরাতের চোখে ঘুম নেই। এখন তো তার একা এক রুমে ঘুমাতেই ভয় লাগে। না চাইতেও সেই রাতের সব কথা গুলো বার বার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। আইরাতের ভাবতেই সব কেমন জানি গা গুলিয়ে উঠছে। আইরাত একটা খাতা বের করে তাকে লিখতে শুরু করে। পড়াতে মনোযোগ দিক তাতেও যদি এগুলো আজাইরা চিন্তা মাথা থেকে কিছুটা দূর হয়। আইরাত লিখা শুরু করবে তখনই তীব্র বেগে গাড়ির হর্ন। আইরাত চকমে উঠে,, যার ফলে তার হাত থেকে কলম টা নিচে পরে যায়। সাথে সাথে আরো বেশ কয়েকবার গাড়ির হর্ন। যেহেতু মধ্যরাত তাই হর্নের আওয়াজ টাও বেশ জোরে শোনা যাচ্ছে। আইরাত উঠে গিয়ে করিডরে দাঁড়ায়। দেখে আব্রাহাম। এতো রাতে আব্রাহাম কে নিজের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আইরাত অবাক হয়।

আব্রাহাম;; এই মাইয়া নিচে নামো।

আইরাত;; হারামজাদা পোলা (মনে মনে)

আব্রাহাম;; এইই মেয়ে কানে শোন না। নিচে নামবে নাকি আমি ওপরে আসবো (চিল্লিয়ে)

আইরাত;; ধ্যার ছাতা। এই কি শুরু করছেন রাত-বিরাতে। এখানে সবাই ঘুমাচ্ছে। এভাবে ষাড়ের মতো চিল্লাচ্ছেন কেনো?

আব্রাহাম;; আমি ওপরে আসলাম।

আইরাত;; এই আমি আসতাছি, দাড়ান।

আইরাতের রাগে কি যে করতে মন চাইছে। এখন কোন রকমে শুধু দাতে দাত চেপে রেখেছে। পড়ার টেবিলে গিয়ে কলম দানি টা ছুড়ে মারে রাগে। তারপর নিচে নেমে পরে কেননা সে জানে যে এখন নিচে না গেলে আব্রাহাম ওপরে চলে আসবে। আইরাত দ্রুত নিচে যায়। গেটের বাইরে যেতেই আইরাত হা হয়ে আব্রাহাম কে দেখে নেয় একবার। আব্রাহাম শট”স পরে আছে। মানে হাটু অব্দি থ্রি কুয়াটার প্যান্ট এশ কালারের। আর ওপরে একটা টি-শার্ট সেটা এশ আর হুয়াইট কালারের মিক্স। আইরাত মুখটাকে বাংলার পাঁচ বানিয়ে দিয়েছে 😟।

আব্রাহাম;; এসেছো তুমি?

আইরাত;; এটা কি? কি পরেছেন আপনি এগুলো।

আব্রাহাম;; তো এতো রাতে কি আমি তোমার জন্য সুট আর টাই পরে আসতাম নাকি এই গরমে।

আইরাত;; তাই বলে এটা। যাই হোক গরু তো গরুই। তাও ওই আপনাকে বিশাল দেহিই লাগছে। কি হয়েছে?

আব্রাহাম;; সরি (কানে ধরে)

আইরাত;; কেনো?

আব্রাহাম;; ওয়াও গ্রেট সব ভুলে গেছো।

আইরাত;; একটা কাজ করুন। একটা মানুষ কে মেরে ফেলুন একদম লাশ ওকে তারপর তার সামনে গিয়ে আস্তে করে সুন্দর করে বলুন যে সরি। দেখুন তো মানুষ টা আবার বেচে যায় কিনা।

আব্রাহাম;;

আইরাত;; সরি সবকিছুর সমাধান হয় না। এটা কিছুটা এমন যে আপনি একটা বড়ো কাচ ভেঙে ফেলেছেন তারপর সেটার ওপর সামান্য একটা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়েছেন ঠিক হবার জন্য। আপনি কি করেছেন বা তাতে আমার কি হয়েছে সেটা কেবল আমিই বুঝতে পারছি।

আব্রাহাম এগিয়ে এসে আইরাতের হাত ধরে ফেলে।

আব্রাহাম;; আর করবো না তো। সরি মাফ করে দাও না। সত্যি অনেক সরি। মাফ চাইতাছি আমি। সে কখন থেকে বলতাছি আর হবে না আর হবে না। আমি কি বুঝে করেছি নাকি।

আইরাত;; রাগ অনেক খারাপ জিনিস আগেও বলেছি আপনাকে আপনি শুনেন নি। ওকে ফাইন মানলাম আপনি বুঝে করেন নি। কিন্তু আমাকে কি আপনার একটা বার সবকিছু বলার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিলো না?একটাবার। কিন্তু না আপনি তা দেন নি। নিজের রাগের বশে যা মাথায় এসেছে করেছেন। পশুর মতো ঝাপিয়ে পরেছেন আমার ওপর। আমার ওপর এক বিন্দু বিশ্বাস নেই আপনার এতে এটাই বুঝা যায়।

আব্রাহাম এবার আবার আইরাতের হাত ধরে একই প্রলাপ বকতে লাগলো।

আব্রাহাম;; আমি যদি আবার এমন কিছু করেছি তাহলে,, তাহলে। তাহলে আমি নিজেই নিজেকে শুট করে মেরে ফেলবো। সত্যি। শুনো তুমি আমার তো আর কতো বলবো। হ্যাঁ আমি মানলাম আমি যা করেছি তোমার সাথে ভুল কিন্তু এখনো তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না। এখনো তুমি আমারই আছো। তুমি চাইলেও না চাইলেও। তোমার ওপর অধিকার ছিলো আমার আর এখনো আছে। মাফ চাচ্ছি। একটা বার মাফ করে দও না। Everyone deserves a second chance,, প্লিজ আর একটা সুযোগ দাও না। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর হবে না।

আইরাত;; চুপ করেন কানের পোকা নড়ে যাচ্ছে।

আব্রাহাম;; আরে সরি বলছি তো আর হবে না এমন। মাফ করে দাও না আইরাত প্লিজ। আমার বেবিগার্ল, আমার জানপাখি আমার সব। প্লিজ মাফ করে দাও না। সরি সরি সরি তো বাবা।

আব্রাহামের কথা বলে শেষ হলে আইরাত তার হাত গুলো আব্রাহামের হাতের ভাজ থেকে দ্রুত ছাড়িয়ে আবার আব্রাহামের গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে দেয়। এতে আব্রাহামের সামনে চুল গুলো সব কপালে এসে পরে। আইরাত চোখ পাকিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে।

আইরাত;; গরু কোথাকার,, ভাঙা রেকর্ড বাজানো শুরু হলে আর থামে না। বেশি প্যাচাল পারলে না রাস্তার পাগলা কুকুর পেছনে ধরিয়ে দিবো। বাড়ি যান।

আব্রাহাম কে ঝাড়ি দিয়েই আইরাত দ্রুত বাসার ভেতরে চলে গেলো। আব্রাহাম অবাক হয়ে আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর নিজের দুই হাত ছড়িয়ে দিয়ে বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; এটা কি ছিলো!? মানে সিংহ কে বিড়ালের ভয় বাহহ।

আইরাত;; সাইকো কোথাকার।

আব্রাহাম;; মেরি বিল্লি মুঝেই মেউ।

আইরাত বাসার ভেতরে চলে গেলো। কিন্তু আব্রাহাম তো নাছোড়বান্দা সে সেখান থেকে যাবার নাম নিচ্ছে না। দাঁড়িয়ে আছে তো আছেই। এদিকে আইরাতেরও চোখে ঘুম নেই। রাত বেজে গেলো ২ টা। আইরাত তার করিডরে গিয়ে বাইরে রাস্তায় উকি দেয়। দেখে আব্রাহাম গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে পকেটে দুই হাত রেখে আইরাতের করিডরের দিকেই তাকিয়ে আছে। আইরাত উকি দিলে আব্রাহাম আইরাতকে দেখে ফেলে। আর আইরাত দ্রুত নিচে ঝুকে যায়।

আব্রাহাম;; দেখেছি দেখেছি লুকিয়ে লাভ নেই। আমি যাবো নায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া এখান থেকে। ওইযে কথায় আছে না যে যেখানে রাত সেখানেই কাৎ। আজ আমিও তেমন করবো এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো।

আইরাত আব্রাহামের দিকে একটা ভেংচি কেটে এসে পরে। তারপর আরো ত্রিশ মিনিট পার হয়ে যায়। আইরাত আরামছে হুমায়ুন আহমেদের বই পড়ছে আর গরম গরম কফি খাচ্ছে। তখনই বেশ আওয়াজ করে বিদুৎ চমকিয়ে উঠে। যাকে আমরা খাটি বাংলা ভাষায় বলি ”ঠাডা”। সেটা পরেছে আর কি ⚡⚡। আইরাত মুখে কফি নিয়ে চুপ করে বসে আছে। যে জোরে বিদুৎ চমক দিয়েছে। করিডর দিয়ে বাইরে উকি দিবে কি দিবে না চিন্তায় পরে যায় আইরাত। এক প্রকার দোটানা। আর এবার কোন কথা ছাড়াই হুড়মুড়িয়ে একদম আকাশ কাপিয়ে মুষুলধারে বৃষ্টি নেমে পরলো। আইরাত এবার আর বসে থাকতে পারলো না। উঠে গিয়ে করিডরে যায়। গিয়ে দেখে আব্রাহাম আগের মতো করেই দাঁড়িয়ে আছে। দুই হাত ভাজ করে মাথা নিচে নামিয়ে রেখেছে। বৃষ্টির বেগ অনেক বেশি। সেই বৃষ্টি তেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজে চলেছে। আইরাত করিডরে দাঁড়িয়ে ছিলো তখনই আব্রাহাম আবার মাথা তুলে তাকায়। আইরাত কে দেখে হেসে হাত নাড়ায়। কিন্তু আইরাত সরে আসে সেখান থেকে। ছেলেটা বাইরে এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছে। আইরাতের কেমন জেনো মায়া লাগছে কিন্তু পরক্ষনেই আবার সেই রাতের কথা গুলো মনে পরে। আইরাত নিজেকে শক্ত করে।

আইরাত;; না না এভাবে নরম হয়ে গেলে চলবে না। শক্ত হতে হবে। এতো সহজেই রাগ ভাংতে দেওয়া যাবে না। রাগ করেই থাকবো। আমাকে এতদিন ভরা যে জ্বালাতন গুলো করেছে এক এক করে সব গুলোর শোধ তুলবো। থাক রাস্তায় ভিজুক যতো ভিজতে পারে। জাহান্নামে যাক আমার কি।

আইরাত বিছানাতে গিয়ে শুয়ে পরে। জানালার থাই গ্লাস টা সরিয়ে একটু খানি মুখ টা বের করে দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। আব্রাহাম কে দেখছে।

আইরাত;; ভিজ হারামি। আমিও দেখবো তুই কতো ভিজতে পারিস। এমন এমন সব শাস্তি দিবো না। নাকের পানি চোখের পানি সব এক করে ছারবো যেভাবে আমাকে করেছিস। না না সে তো কাদবে না। যে স্টোং। তবুও শোধ আমি তুলবোই। আমিও দেখবো যে ওর ধৈর্য কতো। ভিজ তুই।

আইরাত আব্রাহামের দিকে কতোক্ষন তাকিয়ে থাকে। আইরাত খেয়াল করে যে আব্রাহাম একটু উঠে দাঁড়ায় হেলান দেওয়া থেকে। বৃষ্টির পানিতে ভিজছে আর রাস্তার মাঝে পায়চারি করছে। মাঝে মধ্যে আইরাতের জানালার দিকে তাকাচ্ছে। তবুও বাসায় যাবার নাম নিচ্ছে না। কি পরিমান ঘাড় ত্যাড়া তাহলে। থেকে থেকে বৃষ্টির পানিতে ফুটবলের মতো কিক মারছে। এভাবে বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই কখন যে আইরাতের চোখ লেগে গেছে তা সে জানে না। সারারাত অনেক বৃষ্টি হয়েছে। তাই ওয়েদার টাও বেশ শীতল।


আইরাত ঘুমিয়ে ছিলো আরামছে কিন্তু কোন পাথর দিয়ে বড়ো কাচে ঢিল দিলে যেমন শব্দ হয় ঠিক তেমন বিকট আকাড়ের একটা শব্দে আইরাতের ঘুম ভাংে। আইরাত চমকে গিয়ে ঘুম থেকে ধরফর করে উঠে পরে। কোথায় কোন দিকে শব্দ টা হয়েছে তা খুজতে লাগে। ফ্লোরে তাকিয়ে দেখে যে আসলেই এটা কাচ ভাংঙার শব্দ ছিলো। বিছানা থেকে নেমে পরে। নেমেই দেখে একটা সাদা গোল আকৃতির কি যেন। বলের মতো দেখতে। আইরাত সেটা হাতে তুলে নেয়। আসলে এটা একটা পাথর আর পাথর টা একটা সাদা কাগজে মুড়ানো। আইরাত জানালার দিকে তাকিয়ে দেখে থাই গ্লাস টার ঠিক মাঝ বরাবর বিশাল এক গোল করে ফাটার মতো। মানে ভাঙা। সে কাচ টা ভেদ করেই এই কাগজ যুক্ত পাথর তার রুমের ভেতরে এসেছে। আইরাত পাথর টা ফেলে দেয়,, সেটা মেলে দেখে কাগজে কিছু একটা লিখা।

“” ঠিক ৯টার ভেতরে আমার অফিসে দেখতে চাই,, এক সেকেন্ডও যেন এদিক-ওদিক না হয় “”।

আইরাত রাগে কাগজ টা দুমড়েমুচড়ে ছিড়ে একদম ত্যানা ত্যানা করে দিলো। অফিসে যাবে সে কিন্তু অফিসে গিয়ে কি যে করবে তা আইরাত নিজেও জানে না। সব উলটপালট করে দিবে একদম। আগে একটা বার অফিসে যেয়ে নিক। আইরাত কি জানি ভেবে দ্রুত করিডরে যায়। দেখে কালো কালারের একটা গাড়ি সাই করে মাত্রই চলে গেলো। সেটা আব্রাহামের গাড়ি তারমানে আব্রাহাম সবেমাত্র আইরাতের বাসার নিচ থেকে গেলো।

আইরাত;; এই খবিশ কেবল আমার বাসায় নিচ থেকে গেলো নাকি। তাহলে কি সারারাত এই তুফানের মাঝেই এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছিলো? হায়রে। যা ইচ্ছা করুক গা আমার কি কচুর মাথা।

আইরাত রেগে মেগে আগবাবুলা হয়ে চলে যায়।





চলবে~~

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩৭

আইরাত রেডি হয়ে সোজা চলে যায় আব্রাহামের অফিসে। তার মুখের মাঝে রাগ আর জেদ স্পষ্ট। আইরাত বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রায় বিশ মিনিট পর অফিসে পৌঁছায়। অফিসে গিয়েই দেখে সবাই একদম চুপচাপ শান্ত। আইরাতকে দেখে রোদেলা এগিয়ে আসে, আইরাতের সাথে কথা বলতে যাবে কিন্তু আইরাত পাশ কাটিয়ে চলে আসে। কারো সাথে কোন কথাই বলে না। সোজা এসে পরেছে। আইরাতের এমন হাবভাব দেখে রোদেলা বেশ অবাক হয়ে যায়। যাই হোক আইরাত আব্রাহামের কেবিনে চলে যায় সরাসরি। না বলে কয়েই বিনা পারমিশনে। আব্রাহাম বসে বসে ফোনে কথা বলছিলো তখনই আইরাতকে এমন তেড়ে আসতে দেখে আব্রাহাম তার দিকে তাকায়।

আব্রাহাম;; গুড মর্নিং বে………

আব্রাহাম কিছু বলতে যাবে তার আগেই আইরাত তার কাছে এসে ঠাস করে একটা কাগজ আব্রাহামের টেবিলের ওপর রাখে। টেবিলের ওপর হাত দিয়ে কিছুটা ঝুকে রয়েছে আর রাগে লাল হয়ে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম একবার আইরাতের হাতের দিকে তাকায় আরেকবার আইরাতের দিকে।

আইরাত;; আমার রেসিগন্যাশন লেটার। আমি এই চাকরি ছাড়ছি।

আব্রাহাম;; তুমি হয়তো….

আইরাত;; রাখেন আপনার এক বছরের কমিটমেন্ট। আমি চাকরি করবো না মানে না শুনেছেন আপনি। And don’t you dare to stop me ok!

আব্রাহাম;; ন্যাহ, একদম না। আমি আটকাবো না তোমাকে যা ইচ্ছে করতে পারো।

আইরাত;; আপনি আমাকে আটকানোর কে হন? Who the hell are you?

আব্রাহাম;; আপাতত কেউই না কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ই হয়ে যাবো।

আইরাত;; হাহ, দিনের বেলা জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন।

আব্রাহাম;; হয়েছে তোমার?

আইরাত;; হ্যাঁ এটাই বলতে এসেছিলাম আপনাকে আর এখন শেষও বলা তাই চলে যাচ্ছি।

আব্রাহাম;; আইরাত!

আইরাত এক ঝটকায় আব্রাহামের কেবিন থেকে চলে আসে। আব্রাহাম আটকায় না আইরাত রেগে মেগে চলে আসে। আইরাত চলে গেলে আব্রাহাম শুধু একটা দম ফেলে কেননা এমনটা হওয়ারই ছিলো। সাননে তাকিয়ে দেখে আইরাতের রেসিগন্যাশন লেটার টা। আব্রাহাম তুলে তা হাতে নিয়ে নেয়। তারপর লাইটার দিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। নিমিষেই তা ছাইয়ে পরিনত হতে লাগে।

আব্রাহাম;; রাগ করবে সারাজীবন করে থাকো মানা নেই। রেগে থাকলেও আমার কাছেই থাকবে। যাই হয়ে যাক ছেড়ে যাবে না। আমি যেতে দিবোই না।

আগুনের আভাগুলো যেন আব্রাহামের চোখের মনি তে জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠেছে।


আইরাত আর কাউকে কিছু না বলেই ভার্সিটি চলে গিয়েছে। নিজের ক্লাস রুমে চুপ করে এক জায়গায় বসে পরে। দিয়া আইরাতকে দেখে দ্রুত তার পাশে এসে বসে।

দিয়া;; কিরে এসেছিস আমি তো ভেবেছিলাম যে আসবি না!

আইরাত;; হ্যাঁ পড়া গুলো তুই পড়ে দিবি তাই তো!?

দিয়া;; আস্তে ভাই চেইতা যাইতেছিস ক্যান?

আইরাত;; ভালো লাগছে না রে কিছুই।

দিয়া;; আচ্ছা শোন আব্রাহাম ভাইয়ার সাথে তোর কি কিছু হয়েছে নাকি?

আইরাত;;

দিয়া;; কিরে বল!

আইরাত;; না কিছুই হয় নি। এমনি জাস্ট ভালো লাগছে না আমার।

দিয়া;; অফিসে যাস নি?

আইরাত;; আমি আর ওখানে যাবো না চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।

দিয়া;; বাড়িতে কেউ কিছু বলবে না?

আইরাত;; বললে বলুক। দরকার পরলে বাড়িও ছেড়ে দিবো। একদম একা হয়ে যাবো। কাউকে এখন আর ভালো লাগে না। আমার ওপর দিয়ে যে কি যাচ্ছে তা কেবল আমিই জানি।

দিয়া;; আমাকেও ছেড়ে দিবি 🙂?

আইরাত;; ঘোড়ার ডিম।

আইরাত আর দিয়া ক্লাস করে চলে গেলো। আইরাত ভার্সিটির গেটের বাইরে এসে চলে যেতে ধরবে তখনই নিজের ওরনাতে টান পরে। আইরাত ফট করে মাথা ঘুড়িয়ে পেছনে তাকায়। দেখে আব্রাহাম তার ওরনার এক পাশ ধরে রেখেছে। আইরাতের মেজাজ ৪৪০ হয়ে গেলো আব্রাহাম কে দেখে।

আইরাত;; আবার আপনি? এখানে কি করছেন?

আব্রাহাম;; একটা বার বলো তো যে কি করতে হবে আমায় আমি তাই করবো। প্লিজ দূরে যেও না।

আইরাত;; এক কথা বারবার শুনতে মজা লাগে না।

আব্রাহাম;; আই এম সরি।

আইরাত;; সরি! সরি! সরি তাই না সরি! ওয়েট আপনার কে তো আমি……

আইরাত এই কথা বলেই তার আশে পাশে কি যেনো একটা খুজতে লাগলো। আর পেয়েও গেলো। আইরাত তার হাতে একটা বেশ বড়োসড়ো পাথর নিলো তারপর আব্রাহামের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। ঠাস করে গাড়ির সামনের দুই হ্যাডলাইট ভেঙে দিলো। তারপর আবার গাড়ির দুই পাশের দুই উইন্ডো গ্লাস ভেঙে দিলো। একদম ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায় দেখে যে আব্রাহাম কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে। আইরাত তার হাত থেকে পাথর টা ফেলে দিয়ে দুই হাত ঝেড়ে ঝেড়ে আব্রাহামের সামনে আসে। দুইভাত ভাজ করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।

আইরাত;; আপনার সরি আপনাকেই মুবারাক। আই এম সরি!! ভুল হয়ে গেছে আর হবে না।

আব্রাহাম;;

আইরাত;; দেখুন তো আব্রাহাম কাচ গুলো আবার জোড়া লেগেছে কি না। দেখুন দেখুন। লেগেছে? লাগে নি তাই তো। ঠিক তেমন আমিও। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনি আমার সাথে ওইসব করেছেন। ভেঙে দিয়েছেন আপনি আমাকে। আমি আর জোড়া লাগবো না ঠিক এই কাচের মতো।

আব্রাহাম;; যা ইচ্ছে বলো, যা ইচ্ছে করো।

আইরাত;; ইচ্ছে তো করে আপনাকেও খুন করে ফেলতে কিন্তু পারি না।

আইরাত সেখান থেকে চলে আসতে নেয় আব্রাহাম তখন আইরাতের হাত ধরে থামিয়ে দেয়। আইরাত রাগি ভাবে একবার আব্রাহামের হাতের দিকে তাকায় আরেকবার আব্রাহামের দিকে তাকায়। এবার আইরাত তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আব্রাহামের গাড়ির কাছে এগিয়ে গিয়ে একটা কাচের টুকরো তুলে নেয় হাতে। তারপর আবার আব্রাহামের কাছে আসে। আব্রাহামের হাত টা নিজের হাতে তুলে নেয়। আইরাত আব্রাহামের দিকে আর আব্রাহাম আইরাতের দিকেই তাকিয়ে আছে।

আইরাত;; সব মানুষের দুটো রুপ থাকে। মানুষ আর হিংস্র পশুর রুপ। সেইদিন রাতে আমি আপনার পশুর রুপ তো দেখে নিয়েছি কিন্তু আফসোস আমি আপনার মতো এতোটা পশু না। তাই আপনি দেখতে পারবেন না। আর এতোদিন আপনি তো আমার ভালোবাসা দেখেন নি তবে এখন আমার ঘৃণা ঠিকই দেখবেন।

এই বলেই আইরাত তার হাতে থাকা কাচের টুকরো টা দিয়ে আব্রাহামের হাতের তালুতে বেশ বড়ো একটা আচড় কাটে। মূহুর্তেই হাতের চামরার ভাজ গুলো কেটে গিয়ে রক্ত নেমে পরে।

আইরাত;; আপনি তো ঠিক এভাবেই আমার হাতও সেইদিন কেটে দিয়েছিলেন ছুরি দিয়ে তাই না। এটা তার জন্য।

আইরাত এটা বলেই আরেক টা টান দেয় কাচ দিয়ে আব্রাহামের হাতে।

আইরাত;; এটা মানুষ কে খুন করার জন্য। আমি জানি আপনি বিনা দোষে কাউকেই মারেন না কিন্তু তবুও এতোটা নির্মম এতোটা নির্দয় হবার জন্য।

আইরাত এটা বলেই আরেক টা ঘা বসিয়ে দেয় আব্রাহামের হাতে। তারপর লাগাতার একসাথে অনেক গুলো আচড় কাটেতে থাকে আব্রাহামের হাতে। আইরাতের হাতে যতো গুলো সহ্য হয় ঠিক ততগুলোই আচড় কেটে গেছে। একসময় আইরাত থেমে যায়।

আইরাত;; আর এগুলো ছিলো সেইদিন আমার ওপর ওমন ভাবে ঝাপিয়ে পরার জন্য। আমার ওপর বিশ্বাস না রাখার জন্য। আমার কথা একটা বার না শোনার জন্য।

আইরাতের নিজের চোখেও পানি চিকচিক করছে। সে তার হাত থেকে কাচের টুকরো টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে আব্রাহামের সামনে থেকে চলে আসে।

আইরাত যখন আচড় গুলো কাটছিলো আব্রাহামের হাতে আব্রাহাম তখন এক ধ্যানে আইরাতের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলো। এমনকি চোখের পলক অব্দি ফেলে নি। আসলে আইরাতের মাঝে একদিনেই তার প্রতি ঠিক কি পরিমান ঘৃণার জন্ম নিয়েছে আব্রাহাম তাই দেখছিলো। আইরাত রাগ করে এগুলো করলেও আব্রাহাম তার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়েই ছিলো। যেনো তার কোন ব্যাথাই লাগছে না এতে। আইরাত তার সামনে থেকে চলে আসলে আব্রাহাম সেখানে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে। হাত টা কেটে একদম বলি দিয় ফেলেছে। অঝোরে রক্ত গড়িয়ে পরছে কিন্তু সেদিকে আব্রাহামের কোন খেয়ালই নেই। আইরাত চলে গেলে আব্রাহাম নিজেও সেখান থেকে চলে আসে। আব্রাহাম অফিসে চলে যায়। তার যে কাটা হাত টা আছে সেটা সে আর ব্যান্ডেজ করে নি। ভাবলেশহীন ভাবে অফিসের সবার সামনে দিয়ে এভাবে এসে পরেছে। সবাই তো পুরো তাজ্জব লেগে গেছে। সাথে ভয়ও পেয়েছে। সবাই ভেবেছে আব্রাহাম হয়তো কাউকে খুন করে এসেছে বা মেরে এসেছে। এটা রাশেদেরও চোখে পরে। আব্রাহাম কে কিছু জিজ্ঞেস করবে কিনা তাতেও ভয় পাচ্ছে। আব্রাহাম যখন কেবিনে চলে যায় তখন রাশেদ হাতে একটা মেডিসিনের বক্স এনে তার কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। রাশেদের আত্না আগেই কাপছে আব্রাহাম কে কিছু বলবে তো দূরে থাক। তবুও কাপা কাপা স্বরে বলে ওঠে….

রাশেদ;; স স স্যার, স্যার আসবো?

আব্রাহাম;;

রাশেদ;; স্যার স স, স্যার আসবো?

আব্রাহাম;; এসো।

রাশেদ ভেতরে কেবিনে গিয়ে দেখে আব্রাহাম তার কাটা হাত টা নিচে রেখে দিয়ে আরেক হাতে নিজের কপাল চেপে ধরে রেখেছে। চোখ গুলো বন্ধ করে রেখেছে। খুব শান্তই লাগছে দেখে।

রাশেদ;; স্যার মানে আসলে বলছিলাম কি যে ব্লিডিং হচ্ছে আপনার হাত দিয়ে।

আব্রাহাম;;

রাশেদ;; স্যার পরে প্রব্লেম হবে দিন ব্যান্ডেজ করে দি।

আব্রাহাম;;

রাশেদ;; স্যার হাত কি করে কাটলো। স্যার অসুস্থ হয়ে পরবেন হাত টা দিন।

আব্রাহাম কিছু বলছে না দেখে রাশেদ আব্রাহামের হাত টা নিজের কাছে নিয়ে নেয়। ব্লাড গুলো ভালো ভাবে পরিষ্কার করে দেয়। আব্রাহাম নিজের চোখ বন্ধ করেই রেখেছে। আইরাতের বলা এক একটা কথা যেন তার কানে বাজছে। রাশেদ আব্রাহামের হাত টা ব্যান্ডেজ করে দিয়ে উঠে চলে যায়। এদিকে আব্রাহামের যেন শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে আইরাত কে ছাড়া। নিজেকে নিজেরই শুট করে দিতে ইচ্ছে করছে। আজ তার, একমাত্র তার দোষের ফলেই তার আইরাত আজ তাত থেকে এতো দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলেই তো আর চলবে না। এভাবে হাতে হাত রেখে দিলে হবে না। আইরাত অনেক রেগে আছে। কিছু তো করতেই হবে। আব্রাহাম রকিং চেয়ারে বসে বসে এগুলোই ভেবে চলেছে।


আইরাত তার বাসায় চলে যায়। গিয়ে দেখে তার চাচা-চাচি এসে পরেছে। আইরাতের চাচি কে দেখে আইরাতের রাগে আরো গা জ্বলে যাচ্ছে। এই মহিলা টার বেশি বুঝার ফল আজ এগুলো। আইরাত কাউকে কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে যেতে ধরলে আইরাতের চাচি ডাক দেয়….

কলি;; এসেছিস?

আইরাত;; কেনো বাসায় এসেছি দেখে কি তোমার সমস্যা হচ্ছে।

কলি;; এখনো রেগে আছিস?

আইরাত;; তুমি যা করেছো তার জন্য আমি একদম শেষ হয়ে গিয়েছি চাচি। একটা বার আমাকে জিজ্ঞেস তো করতে যে আমি আদৌ কাউকে পছন্দ করি কিনা, কাউকে ভালো লাগে কিনা বা এখনই আমি বিয়ে জন্য রেডি কিনা। না বলে কয়েই বিয়ে ঠিক করে নিয়েছিলে। বিয়ে কি আমাকে তো একদম তুলে দিতে চেয়েছিলে বিয়ে করিয়ে। আজ একমাত্র তোমার জন্য রকমাত্র তোমার জন্য আমার জীবনে আজ তুফান বইছে।

এই কথা বলেই আইরাত তার রুমে চলে যায়। কলি আর কি বলবে সে এখন বুঝতে পারছে যে আসলেই তার কাউকে না জানিয়েই এতো বড়ো একটা ডিসিশন নেওয়া উচিত হয় নি। কলিও সেখান থেকে চলে আসে। তবে এগুলো ইকবাল সাহেব দেখেন। বুঝতে পারলেন যে আইরাত হয়তো কোন ঝামেলায় আছে।

ওদিকে আব্রাহাম উঠে পরে লেগে গেলো আইরাতের রাগ ভাঙানোর জন্য। আইরাত যে তার হাত কেটে দিয়েছে তার দিকে তাকিয়ে নিজের আনমনেই হেসে ওঠে। সেও দেখবে যে আইরাত তার সাথে ঠিক কি কি করতে পারে। আব্রাহাম তো জীবনেও হাল ছারার পাত্র না। দেখা যাক শেষ কি হয়। আইরাত রাগ করতে করতে হেরে যায় নাকি আব্রাহাম তার রাগ ভাঙাতে ভাঙাতে হেরে যায়।


পরেরদিনও আইরাত তার কলেজে চলে যায়। এখন তার কাছে এই ভার্সিটি আর বাসায় ব্যাস এই দুটোই যাওয়ার জায়গা। ক্লাসে স্যার লেকচার দিচ্ছিলো আর আইরাত তা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। হঠাৎ এরই মাঝে আব্রাহাম তার ভারি ভারি কদম ফেলে ক্লাসে ভেতরে এসে পরে। স্যার আব্রাহাম কে দেখে চুপ হয়ে যায়। আর ক্লাসে সবাই হা। এভাবে হুট করেই আব্রাহাম কে দেখবে কেউ ভাবে নি। আইরাত মাথা তুলে দেখে আব্রাহাম এসেছে। আইরাত তো ভেবে পায় না যে এই এখানে এই সময়ে কি করছে। আর ক্লাসে মেয়েদের কথা না হয় না বলাই রইলো। আব্রাহাম যাতে আইরাতকে না দেখতে পায় এর জন্য সে তার মুখের সামনে একটা বড়ো বই ধরে। কিন্তু তখন আব্রাহাম বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; হে ইউ গার্ল।

আইরাত কিছুটা ঘাবড়ে যায়।

আব্রাহাম;; Hay you Brown Bird…

আব্রাহামের এই কথায় সবাই সোজা আইরাতের দিকে তাকায়। আর এবার আইরাতের সন্দেহ স্পষ্ট হয়। কেননা আইরাত ব্রাউন কালারের গোল জামা পরে আছে। আইরাত আস্তে আস্তে মুখের সামনে থেকে বই নামিয়ে ফেলে।

আব্রাহাম;; হাই।

আইরাত;; 😡😡

আব্রাহাম;; কাম অন। চলে এসো।

আইরাত কোন রকমে নিজের রাগ টা কোন্ট্রল করে।

আব্রাহাম;; আরে চলে এসো তাড়াতাড়ি।

আইরাত;; আমার ক্লাস চলছে এখানে দেখতেই পারছেন 🙂।

আব্রাহাম;; সো হুয়াট, কাম।

আইরাত তাকিয়ে দেখে সে যে আব্রাহামের হাত কেটে দিয়েছিলো গতকাল তাতে আজ ব্যান্ডেজ করা। এরই মাঝে আব্রাহাম দ্রুত চলে আসে আইরাতের কাছে। তারপর আইরাতের হাত ধরে তাকে ক্লাসের সবার সামনে দিয়ে নিয়ে এসে পরে। আইরাত তার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আব্রাহাম ছাড়লে তো। আব্রাহাম আইরাতকে ক্যান্টিনে নিয়ে আসে ভার্সিটির। আইরাত এবার দাঁড়িয়ে পরে। কি যে রাগ লাগছে তার। আইরাত তার পাশে তাকিয়ে দেখে টেবিলে পানি রাখা। আইরাত সেই পানি নিয়ে সোজা আব্রাহামের মুখে ছুড়ে মারে। আব্রাহাম তার চোখ বন্ধ করে ফেলে তারপর আবার আইরাতের দিকে তাকায়।

আব্রাহাম;; শেষ? মানে পানি শেষ নাকি রাগ শেষ কোনটা? আরো পানি লাগবে আরো ছিটা মারবে বলো আমাকে আমি এনে দিই।

আইরাত;; আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াহহহহহহহহহহহহহহ!!

আইরাত নিজের দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে রাগে দেয় এক চিল্লানি। সে আর পারছে না রাগ আটকাতে। রাগে এখন কেদেই না দেয়। আব্রাহামের দিকে তাকালে আব্রাহাম তাকে একটা মেকি হাসি দেয়। আইরাত আব্রাহামের কলার খামছে ধরে…

আইরাত;; কি তামাশা শুরু করেছেন এগুলো? সারারাত বাইরে ঝড়ের মাঝে দাড় করিয়ে রাখলাম, চাকরি ছেড়ে দিলাম, আপনার হাত টা পর্যন্ত কেটে দিলাম এতোখানি, মুখে পানি আর কতো মারবো তারপরও শিক্ষা হন না আপনি। এভাবে ভার্সিটির সবার সামনে দিয়ে টেনে নিয়ে আসার কোন মানে হয়। বিরক্তিকর।

এই কথা বলেই আইরাত চলে আসতে ধরে আর আব্রাহাম তার বাহু খামছে ধরে সোজা নিজের গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে দেয়। তারপর চলে যায়। আর আইরাত যে এদিকে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে গলা ফাটাচ্ছে তার দিকে কোন খেয়ালই নেই আব্রাহামের।





চলবে