#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩৮ & {বোনাস🌺}
আব্রাহাম আইরাতকে গাড়িতে করে নিয়ে সোজা চলে আসে। নিজের আনমনেই গাড়ি চালাচ্ছে আব্রাহাম। এদিকে আইরাত এই যে চিল্লাচ্ছে, কথা বলছে সেগুলো যেনো আব্রাহামের কানের পর্দাকে উপেক্ষা করে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। আইরাত আরো একটু চিল্লাতে যাবে তখনই তার কাশি উঠে পরে। কাশির বেগ তীব্র হয়ে এলে আব্রাহাম আইরাতের দিকে পানির বোতল টা এগিয়ে দেয়। আইরাত তা আব্রাহামের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়। তারপর পানি খেয়ে কিছুটা শান্ত হয়। আব্রাহাম এক নজর আইরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে যে আইরাত এবার তার দুই হাত ভাজ করে গম্ভীর মুডে বসে আছে।
আব্রাহাম;; শেষ মানে এনার্জি শেষ কি? আরো করো বেশি করে চিল্লা-পাল্লা।
আইরাত তার অগ্নিদৃষ্টি আব্রাহামের দিকে নিক্ষেপ করলে আব্রাহাম কিছুটা বাকা হেসে আবার গাড়ি ড্রাইভ করাতে মন দেয়। দেখতে দেখতে এক সময় আব্রাহাম তার গাড়ি হাইওয়ে এর রোডে নিয়ে এসে থামায়। গাড়িটা এক সাইডে নিয়ে রাখে। এখানে বরাবরই গাড়ি-ঘোড়া বা মানুষ-জনের যাতায়াত বেশি। আব্রাহাম তার গাড়ি থেকে নেমে পরে। আইরাত কপাল কুচকে প্রথমে আব্রাহামের দিকে তকিয়ে থাকে তারপর সেও বাইরে নেমে পরে। দেখে এইটা একটা হাইওয়ে রোড।
আইরাত;; এই হাইওয়ে তে আমরা কি করছি? এখানে কেনো এলাম?
আব্রাহাম;; অবশ্যই কিছু না কিছু তো করতেই এসেছি।
আইরাত;; কিন্তু কি?
আইরাত আর আব্রাহাম রোডের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো,, তখন আব্রাহাম আইরাতের গলাতে হাত দেয়।
আইরাত;; এই কি করছেন?
আব্রাহাম;; তোমার গলার স্কাফ দাও।
আইরাত;; হুয়াট?
আব্রাহাম কিছু না বলেই আইরাতের গলা থেকে তার স্কাফ নিয়ে নেয়। ছোট একটা স্কাফ। আইরাতের গলা থেকে আব্রাহাম তার স্কাফ টা নেবার পর আইরাতের দিকে নিজের চোখ গুলো স্থীর রেখেই নিজের পেছন দিকে আস্তে আস্তে পেছাতে লাগে। অর্থাৎ রাস্তার মাঝে যাচ্ছে। মুখে ঝুলে আছে বাকা হাসি। আইরাত কিছুই বুঝতে পারছে না যে আব্রাহাম করছে টা কি। রাস্তা তে অনেক বেশির গাড়ি চলাচল করছে, এক একটা হাওয়ার বেগে যাচ্ছে। আইরাত একবার রাস্তার আশে পাশে তাকাচ্ছে তো আরেকবার আব্রাহামের দিকে। কিন্তু আব্রাহাম তো আইরাতের দিকে তাকিয়ে পিছিয়েই যাচ্ছে পিছিয়েই যাচ্ছে। এক সময় রাস্তার মাঝ বরাবর আব্রাহাম চলে আসে। আর তখনই আব্রাহাম তার হাতে থাকা আইরাতের সেই স্কাফ টা নিয়ে নিজের চোখে বেধে দেয়। আইরাতের মুখ তো পুরো হা হয়ে গেলো। এই করছে টা কি? আগে থেকে গাড়ির স্পিড যেনো আরো বেড়ে গেলো আর তার সাথেসাথে আইরাতের ভয়ও। আব্রাহাম নিজের মন মতো করে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে চোখ বেধে। আইরাত আর থাকতে না পেরে চিল্লিয়ে ওঠে…..
আইরাত;; আব্রাহাম আপনি করছেন টা কি? আব্রাহাম প্লিজ সাবধানে গাড়ি গুলো খুব বাজে ভাবে চলাচল করছে। আব্রাহাম আপনি এমন করছেন কেনো?
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল, আমি জানি আমি সাথে অনেক বেশি বাজে করে ফেলেছি। আর এর শাস্তি তো অবশ্যই আমায় পেতেই হবে তাই না। তাই নিজেকে শাস্তি দিচ্ছি।
আইরাত;; কিহহহ? শাস্তি মানে? আব্রাহাম প্লিজ চলে আসুন। দেখুন একটা বার যদি কোন কিছুর সাথে ধাক্কা লাগে তাহলে সব শেষ। আব্রাহাম প্লিজ চলে আসুন।
আব্রাহাম;; ধাক্কা লাগলে লাগুক বাট আমি যাচ্ছি না।
আব্রাহাম এবার এক পা এক পা করে হাটতে শুরু করলো। আর আইরাতের অবস্থা কাহিল। সে রাস্তার সাইডে থেকে অনেক ডাকাডাকি করছে আব্রাহাম কে কিন্তু কে শোনে কার কথা। আইরাত বেশ কয়েকবার নিজের পা রাস্তায় রাখার চেষ্টাও করেছে কিন্তু পা ফেলার আগেই গাড়ি এসে পরে। যাওয়া মুশকিল আব্রাহামের কাছে। তখনই হঠাৎ একটা গাড়ি আব্রাহামের সাথে একদম লাগে লাগে একটা অবস্থা। আইরাত চিৎকার করবে কিন্তু ভাগ্য ভালো তার আগেই সেই গাড়ির ড্রাইভার টা ব্রেক কষে দিয়েছে। আব্রাহাম তার চোখ থেকে স্কাফ টা সামান্য তুলে দেখে তার সামনে একটা গাড়ি থেমে আছে। আব্রাহাম উলটা সেই গাড়ির ড্রাইভার কে হাই বলে। আর ওই গাড়ির ভেতরে যে মেয়েরা বা বাকি মানুষ রা ছিলো তারা উকি দিয়ে দিয়ে দেখছে৷ সেই গাড়ি তো চলে যায়। কিন্তু আব্রাহাম এবার নিজের দুই হাত দুই পাশে প্রশারিত করে রাস্তার মাঝখানে হেটে চলেছে। আইরাত এই ঠান্ডা আবহাওয়া তেও ঘেমে যাচ্ছে বারবার। আব্রাহাম কে অনেক ডাকছে এসে পরার জন্য কিন্তু লাভ নেই। আস্তে আস্তে আইরাতের আশেপাশে বেশ মানুষ জন জড়ো হতে লাগলো। সবাই আইরাতকে বলছে যে কি হয়েছে, কি হয়েছে? আর আইরাত ইশারাতে সামনে আব্রাহাম কে দেখাচ্ছে। এবার আইরাতের সাথে সাথে বাকি মানুষ রা সহ আব্রাহাম কে রাস্তার মাঝখান থেকে চলে আসতে বলছে কিন্তু শোনে না সে কথা।
আইরাত;; আব্রাহাম দেখুন আমার ভীষণ ভয় লাগছে প্লিজ এসে পরুন। কখন কি হয় আব্রাহাম আপনি কি শুনতে পারছেন আমার কথা। আব্রাহাম?
আব্রাহাম;; সব শুনতে পারছি৷
আইরাত;; এমন পাগলামি গুলো করার কি কোন মানে হয়?। যখন নিজের জীবন হারাবেন তখন বুঝবেন।
আব্রাহাম;; ওহহ হ্যালো তুমি কাকে কি বলছো। জীবন-মন সব অনেক আগেই হেরে বসেছি আমি তোমাতে 🥀।
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ এসে পরুন।
আব্রাহাম;; Then first say that you forgive me!?
আইরাত;; Not at all…
আব্রাহাম;; Ok fine then আমি যাবো না এখান থেকে।
আইরাত;; আব্রাহাম ফাজলামি করার একটা সীমা থাকে, ভালো লাগছে না আমার। প্লিজ চলে আসুন।
আব্রাহাম;; আগে বলো আমাকে ক্ষমা করেছো তারপর আসবো। নয়তো আমি আসবো না। আমার সাফ কথা আগে বলো যে তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো।
আইরাত;; না করি নি।
আব্রাহাম;; আমি যাবো না।
আইরাত তো এক মহা মুশকিলে পরলো। এই পাগল কে নিয়ে সে কি করবে। আইরাতের সাথে সাথে আরো অনেক মানুষ ই ডেকে চলেছে আব্রাহাম কে কিন্তু আব্রাহাম কোন কিছুরই পাত্তা দিচ্ছে না। সেম আগের মতোই হেটে যাচ্ছে রাস্তার মাঝে আব্রাহাম,, আইরাতের চিল্লাতে চিল্লাতে গলা ভেঙে যাওয়ার মতো অবস্থা। আইরাত এবার যেন সমুদ্র আর খাদের মাঝ বরাবর পরে গেছে। আব্রাহাম কে মাফ করবে কি করবে না। আইরাত নিজের কপালে হাত দিয়ে দেয়। কি বিপদ রে বাবা। আইরাত টেনশনে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে ছিলো আর এগুলো ভাবছিলো। তখনই একটা গাড়ি আব্রাহামের দিকে বেশ জোর গতিতে এগিয়ে যেতে ধরে। আব্রাহাম তো নিজের মতো করে হাটছিলো তাই একদম ঠিক সময়ে সে সরে আসে গাড়ির সামনে থেকে। আর গাড়ির যে চালক ছিলো সে অতি ভয়ে দ্রুত ব্রেক কষতে গিয়ে আরেকটা গাড়ির সাথে কিছুটা ধাক্কা খায়। আইরাত জোর চিল্লিয়ে ওঠে আর সাথে মুখে দুই হাত দিয়ে দেয়।
আইরাত;; এই ছেলে পাগল। আমি সিওর পাগল। এই পাগল গাদর থেকে আসছে। এই যেখানেই যাক ওর তো কিছু হবেই না উলটো অন্য মানুষের ক্ষতি হবে।
আইরাত আবার ডাক দেয়।
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ আমার একটা কথা তো শুনুন উঠে আসুন না।
আব্রাহাম;; আগে বলো আমাকে ক্ষমা করেছো কিনা?!
আইরাত;; হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ ক্ষমা করেছি করেছি। একদম ক্ষমা করে দিয়েছি। এবার তো প্লিজ আসুন।
(করি নি ক্ষমা বেটা খবিশ, মনে মনে)
আব্রাহাম;; ন্যাহ ন্যাহ ন্যাহ।
আইরাত;; না মানে, আরে বললাম তো মাফ করে দিয়েছে এবার প্লিজ মাঝ রাস্তা থেকে চলে আসুন প্লিইইইইইইজ।
আব্রাহাম;; Say that ‘You love me’..
আইরাত;; কিহহহহহহ?
আব্রাহাম;; এই মেয়ে কানে বেশি শুনো নাকি? বলো যে তুমি আমায় অনেক অনেক অনেক ভালোবাসো বলো এটা।
আইরাত;; জীবনেও বলবো না আমি।
আব্রাহাম;; জীবনেও এখান থেকে যাবো না আমি।
আইরাত;; উফফফফ আব্রাহাম 😤!
আব্রাহাম;; বলো তুমি আমায় ভালোবাসো বলো আগে আমি এসে পরবো,, আগে বলো।
আইরাত;; হায়রে আল্লাহ।
আইরাতের পাশে যে মানুষজন ছিলো এবার তারা মিটিমিটি করে হাসতে শুরু করলো। তারা সবাই বুঝলো যে আব্রাহাম-আইরাত দুইজন একচুয়ালি লাভ বার্ড”স্।
তবে গাড়ির যাতায়াত আর স্পিড যতো বেশি বাড়ছে আইরাতের বুকের ধুকপুকানি ঠিক ততো বেশিই জোরে বিট করছে।
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ এবার তো চলে আসুন।
আব্রাহাম;; আগে বলো যে তুমি আমায় ভালোবাসো।
আইরাত বিরক্তি + রাগে মাথা ঘুড়িয়ে ফেলে। তখন একজন বৃদ্ধ মহিলা আইরাতের পাশে এসে তার কাধে হাত রাখে….
বৃদ্ধা;; মা
আইরাত;; জ্বি
বৃদ্ধা;; যতটুকু বুঝলাম ছেলেটা একটা উন্মাদ পাগল তোমার জন্য। রাগ-অভিমান সব সম্পর্কে তেই হয়। কিন্তু সেটা মনে বেশি দিন জমিয়ে রাখতে নেয়। আস্তে আস্তে পাহাড় সমান হয়ে যাবে। তাই রাগ বা অভিমানের পাহাড় গড়ার আগেই সেটা ভেঙে দাও। ভুল করেছে মাফ করে দাও না, বলে ফেলো যে ভালোবাসো।
আইরাত;; কিন্তু আমি তো….
বৃদ্ধা;; বলে ফেলো। ভালোবাসি কথা টা এমন একটা জিনিস যেটা বলে দিলেও মনে হবে যে কেনো বললাম আর না বললেও মনে হবে যে কেনো বললাম? তাই সবথেকে ভালো হবে যে বলে ফেলেই নিজেকে বলো যে কেনো বললাম। আর এখন যা দেখছি তোমার কাছে এটা বলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। বলে দাও মা ☺️। (আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে)
আব্রাহাম;; জানপাখি আমার, আমি কি মরে যাবো??
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ!
আব্রাহাম;; আগে বলো যে তুমি আমায় ভালোবাসো।
আইরাতের পাশে থাকা সব মানুষই আইরাতকে বলে দিতে বলছে আর আইরাতের সামনে আব্রাহাম এমন অবস্থা করছে। এগুলো যেনো আইরাতের মাথা খেয়ে ফেলছে। একদিকে এরা সবাই আরেক দিকে এই সাইকো আব্রাহাম। কি করবে কি করবে না ভেবে পায় না। তখন আরেকটা গাড়ি সাই করে আব্রাহামের দিকে আসতে ধরলে আইরাত নিজের দুই হাত দিয়ে দুই কান চেপে ধরে চিল্লিয়ে বলে ওঠে….
আইরাত;; আব্রাহাম আমি আপনাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি আমি আপনাকে। অনেক বেশি। আমি আপনাকে ভালোবাসি আব্রাহাম।
ব্যাস এটা বলার সাথে সাথেই আব্রাহাম হেসে দিয়ে নিজের চোখ থেকে আইরাতের স্কাফ টা খুলে ফেলে। মুখে তার ফুটে ওঠেছে গাঢ হাসির রেখা। আইরাত পিটপিট করে চোখ খুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহাম আইরাতের দিকে হেসে তাকিয়ে ছিলো ঠিক তখনই আরেকটা গাড়ি এসে এবার সত্যি সত্যি আব্রাহাম কে ধাক্কা মেরে দেয়।
আইরাত;; আব্রাহামমমমমমমমমমমমমমমমম!!
আইরাত এবার কেদেই দিয়েছে। সবকিছু ভুলে সোজা রাস্তার দিকে দৌড় লাগায়। এর মধ্যে রাস্তাতে সব গাড়ি গুলোই থেমে গিয়েছে। যে গাড়ি টা এসে ধাক্কা দিয়েছিলো তার ওনার বাইরে বের হয়ে আসে। সব থেমে গেছে। আইরাত দ্রুত গিয়ে আব্রাহাম কে ধরে আব্রাহাম একদম ব্যাথা পায় নি। শুধু কপালে চিকন একটা আচড় কেটেছে। আইরাত এসে সোজা আব্রাহামের জেকেট খামছে ধরে। আব্রাহাম তার চোখ থেকে আইরাতের স্কাফ টা খুলে নিজের হাতে পেচিয়ে নেয়। আইরাত তো কাদো কাদো ভাব। আব্রাহামের কপালে ছোট কাটা জায়গায় নিজের হাত রেখে দিয়েছে।
আইরাত;; আপনি ব্যাথা পেয়েছেন তাই না। সব আমার জন্য তাই না। আপনাকে কখন থেকে বলছি যে এসে পরুন এসে পরুন আপনি কথাই শুনেন না।
আব্রাহাম;; তুমি আমায় ভালোবাসো বলেছো।
আইরাত;; ধুর রাখুন তো। আপনার অনেক লেগেছে তাই না?
আব্রাহাম;; ন্যাহ একদম না 😊।
আইরাত;; মিথ্যা বলবেন না।
আব্রাহাম;; আহা কাল যে আমার হাত কেটে দিয়েছিলে না তুমি তার থেকে এটা অনেকটাই কম।
আইরাত;; চুপ করুন তো। কি এক পাগলের পাল্লায় পরেছি আমি। দেখুন সব থেমে গেছে রাস্তায়।
গাড়ির ওনার;; আই এম সো সো সো সরি স্যার। আমি ভাবি নি এই সময়ে এভাবে আপনাকে দেখবো। কি বলবো আমি বুঝতে পারছি না। আই এম সো সরি আব্রাহাম স্যার। আপনার লেগেছে। স্যার সরি।
আব্রাহাম;; হে ম্যান ইট”স ওকে। ভুলে যাও। ব্যাপার না।
গাড়ির ওনার;; থ্যাংক ইউ স্যার।
এই বলেই সেই ব্যাক্তিটি তার গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
আইরাত আব্রাহামের দিকে ক্লান্ত নয়নে তাকায়।
আব্রাহাম;; নিজের জীবন বাজি রাখলাম আমি কিন্তু এমন রিয়েকশন দিচ্ছো তুমি।
আইরাত;; চলুন তো। এমন আজাইরা উদ্ভট কাজ যদি আবার করেছেন তো আপনার একদিন কি আর আমার যতোদিন লাগে।
আইরাত আর আব্রাহাম আবার নিজেদের গাড়িতে গিয়ে বসে পরে।
আব্রাহাম;; কোথায় যাবে বেবিগার্ল?
আইরাত;; চান্দের দেশে।
আব্রাহাম;; সরি সেখানে নিয়ে যেতে পারবো না আমি।
আইরাত;; আরে বাড়ি যাবো আমি। বাড়ি নিয়ে চলুন আমাকে।
আব্রাহাম আইরাতের কথা মতো তাকে তার বাড়ির সামনে ড্রপ করে দিলো। আইরাতও চলে যেতে ধরে কিন্তু আবার থেমে যায়।
আইরাত;; আমার স্কাফ?!
আব্রাহাম;; সেটা এখন আমার কাছে আমারই থাকবে আর দিবো না আমি।
আইরাত;; 😑। না দিলেন হাহ্।
এই বলেই আইরাত চলে যায়। আর আইরাতে বাড়ির ভেতরে না যাওয়া অব্দি সে তার দিকে তাকিয়েই থাকে। আইরাত চলে গেলে আব্রাহামও চলে যায়।
।
।
।
রাত বাজে ৯ টার কাছাকাছি। আইরাত বসে বসে টিভি দেখছে। তখন তার কাছে ফোন আসে।
আইরাত;; হ্যালো।
অয়ন;; হ্যাঁ আইরাত আমি অয়ন।
আইরাত;; জ্বি ভাইয়া বলুন।
অয়ন;; জলদি আব্রাহামের বাড়ি এসো।
আইরাত;; কি এখন কিন্তু কেনো?
অয়ন;; আব্রাহাম যে কি করছে আল্লাহ মালুম।
আইরাত;; কেনো কি করেছে?
অয়ন;; ট্যারেসের ওপরে চলে গিয়েছে। গিয়ে ট্যারেসের গ্লাস একদম লক করে দিয়েছে। খুলছে না। আর আইরাত ট্যারেস অনেক উঁচু । সেখান থেকে জাম্প না করে বসে আব্রাহাম।
আইরাত;; কি যাতা বলছেন আপনি। আচ্ছা আব্রাহাম কেনো এগুলো করছে?
অয়ন;; অবশ্যই তোমার জন্য। আইরাত বোন প্লিজ জলদি এসো।
আইরাত;; ধুত্তুরি।
এই বলেই আইরাত ফোন কেটে দেয়। এক দৌড়ে তার চাচ্চুর কাছে চলে যায়।
আইরাত;; চাচ্চু চাচ্চু,, এই চাচ্চু!
ইকবাল;; কি হয়েছে রে মা?
আইরাত;; জলদি তোমার গাড়ির চাবি দাও।
ইকবাল;; কি এতো রাতে তুই গাড়ির চাবি দিয়ে কি করবি? আর আমার গাড়ি তো….
আইরাত;; জানি সেটা ১৯শ কটকটি শনের। টাকা এটা ওটার অপর খরচ করতে পারো কিন্তু একটা গাড়ি কিনতে পারো না। যাই হোক জলদি চাবি দাও।
ইকবাল;; এতো রাতে গাড়ির চাবি দিয়ে কি করবি?
আইরাত;; আরে ওইযে মা মা মানে ওইযে আরে ওইতো দিয়া। হ্যাঁ হ্যাঁ দিয়া আরকি দিয়া না ওর মা মা মামার বাসা থেকে আসার সময় আটকে গিয়েছে বুঝলে। তো আমাকে ফোন করেছিলো হেল্প লাগবে ওর। তাই আমি যাচ্ছি। ওকে তো আর এভাবে একা একা রাতের বেলা ছেড়ে দিতে পারি না বলো। তাই চাবি লাগবে চাবি দাও।
ইকবাল;; তো আমি নিয়ে যাই।
আইরাত;; এই না না না না।
ইকবাল;; কি?
আইরাত;; না মানে বলছিলাম কি যে তোমার না শরীর খারাপ, প্রেসার আছে। তাই তুমি থাকো। তোমার যেতে হবে না। আমি পারবো আর জলদি এসে যাবো। চিন্তা করো না চাবি দাও তো দ্রুত।
ইকবাল;; আচ্ছা এই নে।
আইরাত চাবি নিয়েই দেয় এক্কেবারে দৌড় বাড়ির বাইরে। বাড়ির পেছন দিক থেকে তার চাচার গাড়ি টা বের করে স্টার্ট দিয়ে চলে যায়। বেশ অনেক সময় পর আব্রাহামের বাড়ির সামনে আসে। এসেই আইরাত গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে আব্রাহামের বাড়ির ভেতরে চলে যায়। গিয়েই দেখে অয়ন চিন্তার চোটে নিজের হাতের নখ কামড়াচ্ছে।
আইরাত;; ভাইয়া আব্রাহাম কোথায়?
অয়ন;; তুমি এসেছো। আব্রাহাম ওপরে।
আইরাত কিছু না বলেই সোজা ওপরের দিকে দৌড় লাগায়। কিন্তু এবার আইরাত গিয়ে দেখে যে ট্যারেসের দরজা খোলা। যাই হোক সেইদিক টা ইগ্নোর করে আইরাত চলে যায় ওপরে। যেতেই যা দেখে তাতে আইরাতের আত্না টা ছাত করে ওঠে। কেননা সামনে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম ছাদের একদম ওপরে ওঠে তার রেলিং-এর ওপর দিয়ে হাটছে। তার হাতে রয়েছে একটা এলকোহলের বোতল। এরই মাঝে আব্রাহাম এই পরে যায় যায় অবস্থা তখন আইরাত জোরে ডাক দেয়।
আইরাত;; আব্রাহাম আবার। উফ আল্লাহ আপনি আবার কি করছেন এটা। নিচে নামুন। হায় আল্লাহ হাতে এলকোহলের বোতল। আব্রাহাম আপনি ড্রাংক। প্লিজ নিচে নামুন।
আব্রাহাম;; Look who”s come! My Babygirl…
আইরাত;; আব্রাহাম নিচে নামুন।
আব্রাহাম;; আইরাত জানো আমার কেনো জানি মনে হয় যে তুমি না আমাকে ক্ষমাই করো নি।
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ, মানে আমার মন বলে যে তুমি সত্যি ক্ষমা আমাকে করো নি। শুধু তখন আমাকে রাস্তা থেকে আনার জন্য এমনি বলেছিলে।
আইরাত;; এইরে (মনে মনে)
আব্রাহাম;; কি বলো ঠিক ধরেছি আমি তাই না?
আইরাত;; ছাড়ুন ওইসব কথা আপনি নিচে নামুন তো আগে।
আইরাত এই বলেই আব্রাহামের দিকে এক পা এগোতে লাগে আর আব্রাহাম বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; আব.. স্টপ রাইট দ্যায়ার। এক পা এগোবে না। ক্ষমা করো নি তুমি আমায়।
আইরাত;;
আব্রাহাম;; আমি জানতাম 😅।
আব্রাহাম;; আমার জানপাখি আমায় মাফ করে নি তাহলে আমি কেনো বেচে থাকবো। এই বেচে থাকার কোন মানেই হয় না। এর থেকে ভালো আমি মরে যাই।
আইরাত;; আব্রাহাম এবার কিন্তু খুব বেশি বারাবারি হচ্ছে। নিচে নামুন।
আব্রাহাম;; আ আ… এক কদম আগে বাড়াবে না বললাম তো।
আইরাত;; আব্রাহাম…
আব্রাহাম;; গুড বায় সুইটহার্ট।
এই বলেই আব্রাহাম তার দুই হাত মেলে দিয়ে ছাদের রেলিং-এর ওপর থেকে পেছনের দিকে পরে যেতে নেয়। আইরাত চোখ খিচে বন্ধ করে আব্রাহামের নাম ধরে ডাক দেয়।
আইরাত চোখ মেলে সামনে তাকায় দেখে কেউ নেই। মানে কি আব্রাহাম কি নিচে পরে গিয়েছে নাকি। আইরাত ছুটে গিয়ে রেলিং এ হাত রাখে। তারপর নিচের দিকে উকি দেয়। কোথাও কাউকেই তো দেখাই যাচ্ছে না। একদম শুনশান নীরব। তখনই আইরাত তার কাধে কারো হাতের শীতল স্পর্শ পায়। আইরাত চমকে গিয়ে চিল্লিয়ে ওঠে। এমনকি আইরাত নিজেই ভয়ে পেছনে ঘুরে পরে যেতে নিলে একটা হাত এসে আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে আষ্ঠেপৃষ্ঠে। আইরাত দেখে তা আর কেউ না স্বয়ং আব্রাহাম নিজে। আব্রাহাম হেসে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহামকে একদম ঠিকঠাক দেখে আইরাতের কলিজাতে যেনো পানি এলো। আইরাত এতোই ভয় পেয়েছে যে সে সব ভূলে আব্রাহাম কে একদম জোরে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহামও তাই। আইরাত তো আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে সোজা হাউমাউ করে কেদে দিয়েছে।
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ এমন করবেন না আমার সাথে। আমি ভয়েই মরে যাবো। কেনো এমন করেন বলুন তো। আমি সত্যি ভয় পেয়ে গিয়েছি। আপনি চলে গেলে আমি নিজেকে কখনোই মাফ করতে পারবো না। আমি আপনাকে ভালোবাসি। প্লিজ এমন করবেন না।
আব্রাহাম;; তো তোমার কি মনে হয় আমি এগুলো সত্যি সত্যি করছিলাম বাকি?
আইরাত মাথা তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আইরাত;; মানে?
আব্রাহাম;; এগুলো সব কিছু আমাদের প্ল্যান ছিলো। মানে আমার, অয়ন আর হ্যাঁ দাদিরও।
আইরাত;; কিহ, কি বলেন এগুলো?
আব্রাহাম;; সত্যি।
আইরাত;; আর আপনি ড্রাংক না?
আব্রাহাম;; আরে না ওইটা এলকোহলের বোতল ছিলো ঠিকই কিন্তু তাতে লেমন জুস ছিলো।
আইরাত;; 🤦♀️🤦♀️।
তখনই ট্যারেসের দরজা দিয়ে অয়ন আর ইলা ভেতরে আসে।
অয়ন;; রাগ ভাঙলো তবে?!
ইলা;; আহাম আহাম। ভেঙেছে ভেঙেছে।
আইরাত এগুলো দেখে রাগ করে বসে আবার। এক মস্ত বড়ো বোকা বানিয়েছে আব্রাহাম আইরাতকে। আইরাত তারপর আব্রাহামের বুকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি সব দিতে থাকে। আব্রাহাম হেসে হেসে আইরাতকে জড়িয়ে ধরে আর সাথে আইরাতও।
।
।
।
।
চলবে~~
#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩৯
আইরাত-আব্রাহামের রাগ গুষা যাই ছিলো সব শেষ। এতোকিছুর পর অবশেষে আইরাত তার আব্রাহাম কে মাফ করেই দিয়েছে। এখন সবকিছু ভালোই। দেখতে দেখতে মাঝখানে কেটে গেছে আরো বেশ কয়েক দিন। আইরাত আর আব্রাহামের মাঝে সারাদিন খুনশুটি লেগেই থাকে। আব্রাহামের পাগলামির মাঝে আইরাতের দিন কাটে। কি কি যে সাইকো মার্কা কাজ করে বসে। আর এর প্রভাব মাঝে মাঝে আইরাতের ওপরও পরে। এইতো কিছুদিন আগের কথা আইরাতের ফাইনাল এক্সাম ছিলো ভার্সিটিতে। এখন স্যার রা ছেলে-মেয়ে দের একসাথে সীট ফেলেছে। এক ব্রেঞ্চে দুইজন করে। একটা ছেলে আরেকটা মেয়ে। এটা শুনেই তো আব্রাহামের মাথা খারাপ। আইরাতের পাশে বসবে অন্য ছেলে এটা কি আদৌ সম্ভব। এর জন্য আব্রাহাম নিজে এক্সাম হলে গিয়ে আইরাতের সামনে এক পায়ের ওপর আরেক পা তুলে বসে ছিলো। আর একটা মেয়ে কে আইরাতের পাশে বসিয়েছে। মানে দিয়াকেই বসিয়েছে আর কি। শুধু দিয়াকে আইরাতের পাশে বসায় নি। এমনকি আইরাত যেই রুমে বসে এক্সাম দিচ্ছিলো সেই রুমে অন্য কোন ছেলেকে ঢুকতেই দেয় নি। ছেলেদের অন্য রুমে স্যার দের বলে সিফট করে দিয়েছিলো। যত চুরাই বুদ্ধি ছিলো, যতো নকল করার বুদ্ধি ছিলো আব্রাহাম সব এক এক করে আইরাতকে শিখিয়ে দিচ্ছিলো কিন্তু অবশেষে আইরাতের ধমক আর ঝাড়ি খেয়ে সে চুপ হয়ে যায়। কারণ এক্সামের জন্য আইরাতের প্রিপারেশন এনাফ ভালো ছিলো। যতগুলো এক্সাম হয়েছে সবগুলোতেই আব্রাহাম তার অফিসে না গিয়ে আইরাতের সাথে তার এক্সাম হলে ছিলো। নিজে সাথে করে আইরাত কে ভার্সিটি নিয়ে গেছে আবার নিজের সাথে করে নিয়েও এসেছে। একসময় আইরাতের এক্সাম শেষ হয়ে যায়।
আব্রাহামের আইরাত কে নিয়েই হুট হাট প্ল্যান ছাড়া বের হয়ে পরা। লং ড্রাইভে চলে যাওয়া। টপ করেই আইরাতের বাড়িতে টপকে পরা, যদিও আইরাত আব্রাহাম কে মানা করেছে কিন্তু কথা শুনলে তো আব্রাহাম। আইরাতের চাচার সাথে আব্রাহামের সম্পর্ক কিছুটা ইঁদুর-বিড়াল। দুইজন দুইজনের পেছনে পরেই থাকে। আর আইরাতের চাচি তো আব্রাহামের সামনে চু পর্যন্ত করতে পারে না। আব্রাহাম কে দেখলেই কলির রিয়েকশন কিছুটা এমন হয় 🙂। আব্রাহাম আগে যেভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা অফিসে থাকতো এখন আর তেমন থাকে না। যতটুকু প্রয়োজন ততোটুকুই থাকে। আরে তার আইরাতকে টাইম যে দিতে হবে। গভীর রাত পর্যন্ত আইরাতের সাথে ফোনে কথা বলা আব্রাহামের। মাঝে মাঝে তো এমনও হয় যে আইরাত ফোন কানে রেখেই ঘুমিয়ে পরে। আর যখন পরেরদিন সকালে আইরাত ঘুম থেকে ওঠে তখনও দেখে যে আব্রাহাম ফোনের লাইনেই আছে। লাইন কাটে নি। এমনকি আইরাতের ঘুমও ভাঙে আব্রাহামের ডাকেই। আবার যখন আইরাতের মুড কোন কারণে খারাপ হয় তখনই আব্রাহাম হাজির হাতে এত্তোগুলো চকোলেট বা ফুচকা নিয়ে। মানে যা আইরাতের পছন্দ তা নিয়েই। ভার্সিটির কোন ছেলেই আইরাতের ধারে কাছে আসে না। সবাই আপু বলে ডাকে। এমনও হয় যে আইরাতের নিজের ক্লাসমেট রাই মাঝে মাঝে আব্রাহামের ভয়ে আইরাতকে আপু ডেকে ফেলে। আইরাতের আর বুঝতে অসুবিধে হয় না যে এটা আব্রাহাম ছাড়া আর কারোরই কাজ না।
।
।
এখনো আইরাত-আব্রাহাম একসাথে। একটা কফি শপের ভেতরে বসে আছে। আইরাত বসে বসে খাচ্ছে আর আব্রাহাম কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছে। তারপর রেখে দেয়।
আইরাত;; কে ছিলো? (খেতে খেতে)
আব্রাহাম;; ছিলো কিছু ক্লাইন্ট।
আইরাত;; খাবেন?
আব্রাহাম;; আমি বার্গার খাই না। এতে অনেক ফ্যাট থাকে।
আইরাত;; এহহহ আসছে রে আমার The most health conscious man….
আব্রাহাম;; হ্যাঁ অবশ্যই, আমাকে ফিট থাকতে হয়। আমি কি তোমার মতো মোটা নাকি।
আইরাত;; হ্যাঁ? এই কি কি বললেন আপনি? আমি, আমি মোটা?
আব্রাহাম;; নিজেকে দেখেছো একবার গালের দিকে মাংস বেড়ে যাচ্ছে। কিছুটা ভুরিও তো বেড়েছে তোমার।
আব্রাহামের এমন কথা শুনে আইরাতের খাওয়াতে তালা লেগে গেলো। খাওয়া পুরো বন্ধই হয়ে গেলো তার। মুখে এক বাইট বার্গার রেখে আব্রাহামের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম তো ফাজলামি করছিলো কিন্তু আইরাতের এমন চেহারা দেখে হাসতে হাসতে শেষ। আব্রাহামের হাসি দেখে আইরাত রাগে শেষ। রাগে মুখে থাকা বার্গার টা আস্তে আস্তে চিবুচ্ছে আর আব্রাহামের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে।
আব্রাহাম;; হাহাহাহাহা 😆😆। আস্তে খাও।
আইরাত;; শালা খবিশ। আমি ৫৩ কেজি, হাইট ৫.৫ আর কতো লাগে। আমি নাকি মোটা। হ্যাঁ মানলাম আমার গালে একটু মাংস বেশি। কিন্তু এই গাল সরকারি না বুঝলেন। আমার গাল, আমার সম্পত্তি তাতে কার বাপের কি! আর এতোই মোটা লাগে তো যান না অন্য মেয়েদের কাছে যান এখানে কি করেন। যত্তসব।
আব্রাহাম;; হায়য়য়য়য়য়য়য়য়য়!! এই রাগের আগুনেই না আমি আব্রাহাম ঝলসে যাই।
আইরাত;; 😏
আব্রাহাম;; আরে বুঝো না কেনো মজা করছি। আর এছাড়াও আমার শুটকি মার্কা মানুষ পছন্দ না। আমার এইযে গোলুমোলু মানুষই পছন্দ।
আইরাত;; হুম হয়েছে এখন ভালো ছেলের মতো আরেকটা বার্গার অর্ডার দিন।
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত;; শুনেন না 😠।
আব্রাহাম;; দিচ্ছি তো।
আব্রাহাম আরো একটা বার্গার অর্ডার দেয় সাথে একটা ক্যাপাচিনো তার নিজের জন্য। বার্গার এলে আইরাত খাওয়া শুরু করে। আব্রাহামও আইরাতকে দেখছে আর খাচ্ছে। তখনই একটা মেয়ে আসে। মুখে হ্যাভি মেকাপ, ওয়েস্টার্ন ড্রেসাপ পরা। হয়তো আব্রাহামেরই ভুল ছিলো যে সে ওই মেয়েটার চোখে পরেছে। বাপরে বাপ। নেকামোর একটা সীমা থাকে। মেয়েটা এসেই আব্রাহাম কে দেখে ছোট-খাটো একটা চিৎকার দিয়ে কিছুটা লাফিয়ে ওঠে। মানে তার সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যাবার মতো অবস্থা। হুমড়ি খেয়ে পরছে।
আব্রাহাম;; আরে ঠিক ভাবে খাও। মুখের সাইডে লাগাচ্ছো কেনো? এদিকে কাছে আসো দেখি।
আব্রাহাম হাতে টিস্যু নিয়ে আইরাতের ঠোঁটের সাইডে মুছে দিচ্ছিলো আলতো ভাবে। তখনই ওই মেয়েটি ছুটে আব্রাহামের কাছে আসে।
মেয়েটি;; ওহ গড ওহ গড ওহ গড। এই আমি কাকে দেখছি। আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী। আপিনিইইইইইই?
আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না। স্যার আপনি জানেন না আমি আপনার কতো বড়ো ফ্যান। আর এভাবে নরমাল ভাবেই যে আপনাকে দেখতে পারবো আমি ভাবিই নি। আজ বুঝলাম যে আপনি হয়তো অনেক বড়ো একজন মানুষ কিন্তু অনেক ভালো। তাইতো এভাবে নরমাল ভাবে চলাচল করেন। স্যার আপনি তো আমার জন্ম-জন্মান্তরের ক্রাশ। বলতে গেলে আমার ভালোবাসা। আপনার যে ঠিক কতো গুলো ছবি আমার রুমে লাগানো তা আমি নিজেও জানি না।
মেয়েটি এসে তার নিজের মতো করেই এইগুলো বলে যাচ্ছে। আর আব্রাহাম তার মুখে হাত রেখে শুধু হুম হুম করে যাচ্ছে। আব্রাহাম কিছুটা বাকা চোখে আইরাতের দিকে তাকায়। দেখে যে আইরাত শান্ত ভাবেই বসে আছে। কিন্তু হুট করেই আইরাতের এতো শান্ত স্বভাব টা কেনো জানি আব্রাহামের হজম হচ্ছে না। তার মাঝেই মেয়েটা আবার বলে ওঠে…
মেয়ে;; স্যার স্যার আমার নাম জোতি। আমি কি আপনার সাথে জাস্ট একটা, জাস্ট একটা ছবি ক্লিক করতে পারি।
আব্রাহাম;; আব… ইয়াহ সিওর।
মেয়েটি আব্রাহামের কাছে গিয়ে তার সাথে একটা ছবি নেয়। (মেয়েটা এতো নির্লজ্জ কেন 🙄)
মেয়ে;; স্যার ছবিতেও আপনাকে দারুন লাগছে। স্যার স্যার একটা অটোগ্রাফ প্লিজ।
আব্রাহাম;; ওকে…
মেয়ে;; আমার হাতেই করে দিন।
মেয়েটা একটা জেল প্যান বের করে আব্রাহাম কে দেয়। আব্রাহামও অটোগ্রাফ দিয়ে দেয়। কি আর করার। সে আইরাতের দিকে তাকায় দেখে আইরাত আস্তে আস্তে মানে একদম আস্তে আস্তে বার্গার খাচ্ছে।
মেয়ে;; স্যার থ্যাংক ইউ সো মাচ। আমার তো খুশিতে গড়াগড়ি খেতে মন চাইছে। ইশশশশ আপনার সাথে ছবিইইইইই।
আইরাত;; হ্যাঁ এখন ওই ছবিটা ফ্রেমে বাধিয়ে নিও তারপর দেওয়ালের সাথে সাথে নিজের সাথেও চিপকিয়ে নিও। আর হ্যাঁ হাতের যে ওই অটোগ্রাফ টা আছে না। এককাজ করো হাতের চামড়া খুলে সেটাকেও ফ্রেম করিয়ে নাও ঠিকআছে বইন 🙂🙂?
মেয়ে;; এ মানে…. স্যার উনি কে?
আইরাত হাসবে না কাদবে ভুলে গেছে।
আইরাত;; হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন না আব্রাহাম জ্বি আমি আপিনার কে? বলুন।
আব্রাহাম;; মানে আসলে….
আইরাত;; আব্রাহাম জ্বি, আরে বলুন না আমি আপনার কে? বলুন, বলা তো উচিত তাই না। বলে ফেলুন বলে ফেলুন। আমি আপনার কে হই আব্রাহাম?
আব্রাহাম একদম স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড জবাব দিলো।
আব্রাহাম;; আমার বউ।
মেয়ে;; জ্বি??
আব্রাহাম;; জ্বি, আমার বউ উনি।
মেয়ে;; ওহহ আচ্ছা না মানে আচ্ছা ঠিকআছে আমি এবার তাহলে যাই।
এই বলেই মেয়েটি সেখান থেকে কেটে পরে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকায় দেখে যে সে আইরাত না তো রাগে একটা আগুনের গোলা। মানে একটা আগুনের গোলা কে আব্রাহাম তার পাশে নিয়ে বসে আছে। সেই মেয়েটা এসে এখন এমন একটা কিছু করবে তা আব্রাহাম ভাবেই নি। আইরাতের মাথা-মুথা তো রাগে ফেটে যাচ্ছে। আব্রাহাম কিছু বলতে যাবে তার আগেই আইরাত উঠে রাগে চলে যায় সেখান থেকে।
আব্রাহাম;; আবার চেইতা গেছে। আরে আল্লাহ 😑।
আব্রাহাম সবসময় নিজের সাথে দুই একটা গার্ড নিয়েই বাইরে বের হয়। তবে তারা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো। আব্রাহাম তাদের বিল পে করতে বলে নিজে দ্রুত আরাতের পেছন পেছন চলে যায়। আইরাত কে পেছন থেকে অনেক ডাক দেয় কিন্তু আইরাত শোনে না। এবার আব্রাহাম কিছুটা দৌড়ে গিয়েই আইরাতের একদম সামনে এসে পরে। হাত ধরে থামিয়ে দেয় তাকে।
আব্রাহাম;; কি হয়েছে?
আইরাত;; 🥺🥺।
আব্রাহাম;; আরেএএএ কাদছো কেন?
আইরাত;; 😔😔
আব্রাহাম;; জানপাখি কি হয়েছে কাদছো কেনো?
আইরাত;; ওই মাইয়া এতো লুইচ্চা কেন। আপনার দিকে নজর দিবো কেন। কীভাবে আপনার ওপর হুমড়ি খেয়ে পরছিলো। কীভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে আপনাকে দেখছিলো 😭।
আইরাত সত্যি কেদে দিয়েছে। আব্রাহাম বুঝলো যে এগুলো আইরাতের রাগ যা কান্নায় পরিনত হয়েছে। আব্রাহাম মুচকি হেসে আইরাতকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। আইরাত আব্রাহামের বুকে মুখ গুজে দিয়ে এক রকম চিল্লাচ্ছে। আব্রাহামের বুক থেকে উঠে আসতে চাইলে আব্রাহাম তাকে আরো জোরে চেপে ধরে নিজের সাথে। আব্রাহামের এই মূহুর্তে প্রচুর হাসি পাচ্ছে।
আইরাত;; শুনেন আপনি আমার তো তাই না, আপনাকে অন্য মেয়ে কেনো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে। আপনি আমার তো। এর পর থেকে আমি আপনাকে বোরকা পরে বাইরে নিয়ে আসবো।
আব্রাহাম;; কিইইইই?
আইরাত;; হ্যাঁ সত্যি। আর এখন ছাড়ুন আমাকে। আমি ওই মেয়ের কাছে যাবো। তারপর এই কুত্তির মাথার সব চুল টেনে টেনে ছিড়বো। ছবি ক্লিক করা একদম ঘুচিয়ে দিবো। লুচ্ছি বেডি। ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন।
আব্রাহাম;; আরে বাবা আমি কি চলে গিয়েছি নাকি। আমি তো আছি তাই না। আমি তো তোমারই। কেউ নিবে না আমাকে তোমার কাছ থেকে। এমন করে না। এমন পাগলামি করে না বেবিগার্ল।
আইরাত;; এহহহ এক সাইকো-পাগলে আমায় বুঝ দিচ্ছে যে আমি যেনো এমন পাগলামি না করি। হায়রে।
আব্রাহাম;; আচ্ছা চলো।
আইরাত;; কোথায়?
আব্রাহাম;; একটু আগে যেই কথা বলছি তা সত্যি করবো।
আইরাত;; মানে?
আব্রাহাম;; বিয়ে করবো বিয়ে, বিয়ে।
আইরাত আব্রাহামের কাছে গিয়ে দাত কটমট করতে করতে বলে ওঠে…
আইরাত;; আমি বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যাবো হাহ্।
এই কথা বলেই আইরাত চলে আসে। তার মানে এখনো রেগে আছে। আব্রাহাম আবার চলে যায় আইরাত আইরাত করতে করতে। রাগ যে ভাঙাতে হবে। গোধূলির লগ্ন। সূর্য অস্ত যায় যায় ভাব। একদিকে সূর্য ডুবছে আরেক দিকে এই দুই লাভ বার্ড নিজেদের খুনশুটি করতে করতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে 🍂।
।
।
।
।
চলবে~~