নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-৫৮+৫৯

0
1144

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৫৮ { Surprise 🔥}

.
.
.
.

প্রায় বেশ কিছু সময় ড্রাইভ করার পর আইরাত, তনয়া, রোদেলা আর রাশেস একটা জায়গায় থামে। এখানে অনেক গুলো গাড়ি দাড় করানো। দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে এটা পার্কিং প্লেস। গাড়ি পার্ক করার পর তারা সবাই নেমে পরে। আইরাতের জায়গা টার ওপর কিছুটা সন্দেহ হয়। তখনই তনয়া তাকে হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যায়। আর যেতেই আইরাতের সন্দেহ টা একদম ঠিক হয়ে যায়। এটা কনসার্ট। উফফফফ আজ আবার এই কনসার্ট। আইরাত একটু ক্লান্ত দৃষ্টিতে তনয়ার দিকে তাকায়। আইরাত আগে যদি জানতো যে তাকে ধরে বেধে আবার এই কনসার্টেই আনা হচ্ছে তাহলে সে জীবনেও আসতো না। প্রচুর মানুষ। সবাই এক প্রকার লাফাচ্ছে আর চিল্লাচ্ছে। আর সবার সামনে কনসার্টে থাকা DJ তো বক্স একদম ফাটিয়ে দিচ্ছে গানের জোরে। আজ যেনো সেইদিন কার থেকে আরো বেশি মানুষ-জন। আইরাত, তনয়া, রোদেলা আর রাশেদ সামনের দিকে গেলো।

আইরাত;; প্লিজ নট এগেইন তনয়া। আজ আবারও এই কনসার্ট। সেইদিন না আসলাম আজ আবার কেনো। আর ওয়েট এর জন্যই তোরা কেউ আমাকে কিছু বলছিলি না যে আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি রাইট?

তনয়া;; ইয়েস।

আইরাত;; ধুর।

তনয়া;; আরে অনেক মজা হবে তো।

আইরাত;; আচ্ছা কনসার্ট তো ব্যাসিক্যালি একদিনের হয় তাই না তাহলে আজ আবার?

তনয়া;; এখানে কাহিনী আছে বেইব। তোকে নিয়ে সেইদিন যখন আসি তখন একজন বিশেষ কেউ আসার কথা ছিলো বাট সে আসতে পারে নি কিছু প্রব্লেমের জন্য তবে আজ আসবেই। আজ অনেক স্পেশাল।

আইরাত;; তা কে উনি শুনি?

তনয়া;; তা তো তুই উনি এলেই দেখতে পারবি। আইরু বেইব মানে আমি জাস্ট বলতে পারবো না যে উনি কি পরিমাণ হ্যান্ডসাম। মেয়েরা পাগল ওর জন্য। এই রঙিন দুনিয়ার রকস্টার উনি। মানে ভাষায় প্রকাশ করা মুশকিল। দি মোস্ট ইয়াং সিংগার দের মাঝে একজন। প্রতিটি মেয়ের দিলের ধারকান উনি জানিস, মানে উনি যেখানে যান সেখানে আর কিছুই লাগে না চার চান্দ লেগে যায়। মাঝে মাঝে ভাবি আল্লাহ কি দিয়ে বানিয়েছেন উনাকে। এই যে উনাকে দেখি তবুও পেট-মন কিছুই ভরে না। আমার যে কত্তো বড়ো ক্রাশ গো উনি।

আইরাত;; আরে মেরি মা চুপ কর একটু। এহহহহ আসছে রে কে না কে আর তার নামে এতো প্রশংসা। চুপ কর তো। আমার অস্বস্তি লাগছে।

তনয়া;; একটা বার উনাকে আসতে দে স্টেজে তারপর দেখবি তোর সব রকমের অস্বস্তি দূর হয়ে গেছে আই গ্যারান্টি ইট। আর এখানে যে এত্তো মানুষ-জনকে দেখছিস না তারা সবাই শুধু উনাকেই এক নজর দেখার জন্যই বেকুল হয়ে এসেছে।

আইরাত;; হাহ হয়েছে। তো এই অতি ফ্যামাস ব্যাক্তি টা
কে শুনি? জীবনে তো নামও শুনলাম না।

তনয়া;; একটু পরেই স্টেজ কাপিয়ে আসবে তখন দেখিস। ক্রাশ তুই না খেলে পরে আমায় বলিস। হায় আসেনা ক্যান এখনো কখন আসবে রেএএএএএএএএএএএএএএএ 😍।

আইরাত;; আজাইরা।

আইরাত আর তনয়া দাঁড়িয়ে ছিলো তখনই আইরাতের ফোনে ফোন আসে। আইরাত খুব কষ্টে ফোন টা পিক করে কিছুটা সাইডে চলে যায়।

আইরাত;; হ্যালো।

আহসান;; হ্যালো আইরাত তুমি কোথায়?

আইরাত;; জ্বি ভাইয়া আমি একটু বাইরে আছি।

আহসান;; ওহহ আচ্ছা মানে আসলে অফিসে রোদেলা, রাশেস বা তনয়া কাউকেই তো পাচ্ছি না তাই তোমায় ফোন দিলাম আর কি।

আইরাত;; ওহহ আচ্ছা।

আহসান;; তাহলে তোমরা কখন আসবে?

আইরাত;; আমি তা নিজেও জানি না। এরা সবাই আমাকে একটা কনসার্টে নিয়ে এসেছে।

আহসান;; ওহহ তো ইনজয় করো।

আইরাত;; আরে না। আচ্ছা ভাইয়া এখানে আওয়াজ আসছে না। অনেক বেশি শোরগোল আমি পরে কথা বলছি।

আহসান;; ওকে, বায়।

এই বলেই আইরাত ফোন টা কেটে দেয়। আর এই হচ্ছে আহসান আহমেদ। আইরাতের অফিসেই কাজ করে। আইরাতের থেকে বড়ো হওয়াতে আইরাত তাকে ভাই বলেই সম্বোধন করে। আর একটা সময় যখন পরিস্থিতি সব হাতের প্রায় বাইরে চলে গিয়েছিলো তখন ইনি ই আইরাতের অনেক হেল্প করেন। আইরাত যে কোন প্রব্লেমে পরলে এস এ ভাই আহসানই সবার আগে এসেছে। তো যাই হোক এই আহসান এখন আইরাতের অফিসেই কাজ করে। আইরাত তো কিছুটা দূরে গিয়েছিলো ফোনে কথা বলার জন্য তখন রাশেদ আসে।

রাশেদ;; ম্যাম।

আইরাত;; হ্যাঁ আহসান ভাইয়া ফোন করেছিলো।

রাশেদ;; হ্যাঁ আমার কাছেও।

আইরাত;; অফিসে যেতে হবে ইমিডিয়েটলি কিছু কাজ পরে গেছে।

রাশেস;; হ্যাঁ আস…….

তনয়া;; কিরে আইরু বাইরে আসলি কেনো ভেতরে চল।

আইরাত;; আরে অফিসে কিছু কাজ পরে গেছে রে জরুরি ভবে যেতে হবে।

তনয়া;; কিইইইইইই? একদম ই না। কতো ধৈর্য ধরে এখানে এসেছি জাস্ট একটা নজর উনাকে দেখার জন্য। একটু পরেই উনি এসে পরবেন আর এখন কিনা এই কনসার্ট ছেড়ে যেতে হবে। আইরু না প্লিজ আমি যাবো না।

আইরাত;; কিন্তু…

রাশেদ;; ম্যাম এক কাজ করি আমি আর রোদেলা চলে যাই আপনারা পরে এসে পরবেন তাহলেই হবে।

তনয়া;; বেস্ট আইডিয়া। হ্যাঁ তাই হবে। আইরু প্লিজ না বলিস না।

আইরাত;; আরে বাবা আচ্ছা ঠিকআছে থাকবো।

তনয়া;; অনেক ধন্যবাদ রে।

আইরাত;; আরে হয়েছে। আব….রাশেদ তুমি আর রোদেলা সাবধানে যাও ওকে। আর অফিসে ভাইয়া আছেন তো কি কি লাগে না লাগে সব দেখো।

রাশেদ;; জ্বি ম্যাম একদম চিন্তা করবেন না।

এই বলেই রাশেদ আর রোদেলা অফিসের উদ্দেশ্যে চলে যায়। আর আইরাত & তনয়া আবার কনসার্টের ভেতরে চলে যায়। প্রচুর জোরে বিট বাজানো হচ্ছে। নানা রং-বেরঙের ডিসকো লাইট জ্বলজ্বল করছে চারিদিকে। সবাই বিটের তালে তালে দুলছে। তবে তার কিছুক্ষন পর হুট করেই পুরো কনসার্টের লাইট গুলো অফ হয়ে যায়।

পাবলিক;; ওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওও!!

সবার মাঝেই যেনো একটা গম্ভীর শব্দ কাজ করে। এভাবেই লাইট চলে যাওয়ার কোন মানেই হয় না। তবে তার সাথে সাথেই যার যার ফোনের ফ্ল্যাস লাইট জ্বলে ওঠে। এই অন্ধকার পরিবেশে সবার ফোনের ফ্ল্যাস লাইট যেনো সাদা মুক্তোর মতো ফুটে উঠেছে। সবাই হাতে ফোনটা নিয়ে ওপরে তোলে কিছুটা দুলতে থাকে। পরিবেশ টার মাধুর্যই পালটে গেছে। দারুন লগছে সবকিছু। তখন স্টেজে কারো অবয়ব দেখা যায়। হয়তো সে পেছন ঘুড়ে আছে। আর শুধু এই অবয়ব টা দেখেই জনগনের মাঝে যেনো উল্লাসের সীমা নেই। চিল্লাপাল্লা মূহুর্তেই আগে থেকে আরো দ্বিগুণ হারে জন্ম নিলো। আর সেই অবয়ব টা তার ঘাড় ঘুড়িয়ে খানিক পেছনের দিকে তাকায়, মুখে ফুটে ওঠে বাকা হাসি। তবে তাকে কেউ দেখতে পারছে না ঠিক ভাবে।

মুখের কাছে মাইক টা নিয়ে একদম হাল্কা স্বরে গুনগুনিয়ে উঠে। তাতেই সকলের গলার স্বর আরেক ধাপ ওপরে উঠে পরে। তখনই তনয়া তার পাশে থাকা আইরাত কে বলে ওঠে….

তনয়া;; Look, Here is the Dream boy…..

আইরাত;; দেখাই তো যাচ্ছে না।

তনয়া;; আরে দেখতে থাক আগে আগে কি হয়।

সেই আবছা অবয়ব টা এবার পুরো পুরি সামনের দিকে ঘুড়ে গেলো। তবে মুখে কোন আলো নেই সেই অন্ধকারই ছেয়ে আছে। হঠাৎ সে তার এক হাত ওপরের দিকে তুলে ধরে 🤟। উৎসুক জনতা উল্লাসে ফেটে পরে। আর বিশাল আকারের স্টেজে সেই অবয়ব টা তার ভারি ভারি কদম ফেলে কিছুটা সামনে এগিয়ে আসে।

Hummmm…Hummm…Hummmmmmmm
Hummmm…Hummm…Hummmmmmmm !!

“Bekhayali main bhi tera hi khayaal aaye
Kyun bichhadna hain zaroori
Ye sawaal aaye ❣️~~

~Teri nazdeekiyon ki khushi behisaab thi
Hisse main faashle bhi tere bemisaal aaye 🌸

“~Main joo tumse door hoon
Kyun door main rahoon
Tera guroor hoon ~~
′′Aa tu faasla mita
Tu khwaab sa mila
Kyun khwaab tod doon 🍂

“~~Bekhayali main bhi tera hi khayaal aaye
Kyun judaai de gaya tu ye sawaal aaye,
Thoda sa main khafa ho gaya apne aap se__
Thoda sa tujhpe bhi bewajah hi malaal aaye 🌷

__Hai ye tadpan, hai ye uljhaan
Kaise jee loon bina tere —
“Meri aab sab se hain annban
Bante kyun ye khuda mere Hummmm 🌹………

~~Ye jo log-baag hain
Jungle ki aag hain
Kyun aag main jalun 🔥……..
~Ye nakaam pyaar main
Khush hain haar main
••Inn jaisa kyun banun ooooooooooo 🌿………

“~~Raatain dengi bata
Neendon main teri hi baat hai–
••Bhulun kaise tujhe 🥀
Tu toh khayalon main saath hai 💔

~~Bekhayali main bhi tera hi khayaal aaye
Kyun bichhadna hain zaroori
Ye sawaal aaye 🧡🍂

~~Nazar gira de har ek manzar
Ret ki tarha bikhar raha hai“
~~Dard tumhara badan main mere
Zeher ki tarha utar raha hai “….

~~Aa zamaane aazma le roothta nahin
Faaslon se hausla ye toot”ta nahin “
“Naa hai woh bewafa aur
Na main hoon bewafa “
~`~`Woh meri aadaton ki tarah
Chhoothta nahin~ 🖤🥀…………………..

গান টাতে না পাওয়ার বেদনা, হারিয়ে ফেলার তীব্র যন্ত্রণা, প্রতিটা দিন প্রতিটা রাত কারো স্মৃতি নিয়ে ছটফট করার মতো অসহনীয় চাপ, কাউকে ভুলতে না পারার গাঢ় ছাপ স্পর্শ ছিলো। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে গেয়েছে গান টা। তাই গান টাতে এক রাশ মুগ্ধতাও ছিলো। কারো যেনো চোখ সরার নামই নিচ্ছিলো না। এক আলাদা নেশা, এক আলাদা ভালোলাগার মতো অনুভূতি কাজ করছিলো সবার মাঝেই। অবশেষে গান শেষ হয়। আর তখন আরেক দফা সবাই চিল্লিয়ে ওঠে।

পাবলিক;; Once more! Once more! Once more! Once more!

আসলেই এটা মানতে হবে যে যেই এই গানটি গেয়েছে He has a magical voice… আইরাত নিজেও বুঝলো যে না সে যতোটা খারাপ ভেবেছিলো আসলে ততটা খারাপ না। অনেক অনেক অনেক বেশিই ভালো। সে তার পাশে তাকিয়ে দেখে তনয়া অন্য দিন-দুনিয়ার কোন হুশ নেই। সে তার মতো করেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আইরাত তা দেখে দেয় হালকার ওপর তাকে এক ধাক্কা। এতে তনয়ার হোস আসে।

তনয়া;; কিরে দেখলি তো দারুন না। আমি তো তোকে আগেই বলেছিলাম যে এই ছেলেটা সবার মাথা খারাপ করে রেখে দিয়েছে নিজের চার্ম দিয়ে।

আইরাত;; ছাতার মাথা।

তখনই স্টেজে এনাউন্সমেন্ট হয়।

“” Ladies & gentlemen, so finally here is the most handsome and powerful singer-rockstar Mr. Abraham Chowdhury Arnil…..””

কনসার্টের সামনে-পেছনে এবং দুই সাইড দিয়ে ফায়ার ওয়াল্ক জ্বলে ওঠে ঠাস করে। আর অবশেষে এবার কনসার্টের ফোকাস লাইট এসে আব্রাহাম ওরফে অর্নীলের ওপর এসে পরে। অর্নীল সোজা ফোকাস লাইটের দিকে তাকায়। তার চোখের মধ্যবিন্দু তে তা যেনো চিকচিক করছে। সেই চিরচেনা কাতিলানা হাসি, সেই মায়াবি চেহারা, সেই চাপদাড়ি, আর সেই চার্মিংনেস। অর্নীল সবার দিকে কিছুটা ফ্লাইং কিস ছুড়ে মারে। সবাই যে পরিমান চিল্লাচ্ছে তাতে এখন পাগল হওয়ার উপক্রম। তনয়া নিজেও চিল্লাচ্ছে। কিন্তু আইরাত, আইরাত সে যেনো এখন এক অন্য জগৎ এ চলে গিয়েছে। সে এখন আর নিজের মাঝে নেই। সব কিছু মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। কি থেকে কি হচ্ছে এইসব সে কিছুই বুঝতে পারছে না। কেননা আইরাত অর্নীল কে দেখেছে। হুবাহু আব্রাহামের মতো দেখতে হুবাহু। কোন অমিল নেই, এক বিন্দু পরিমানও নেই। কীভাবে সম্ভব এটা? আইরাত এখন অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গিয়েছে। আইরাত এতো ভীড়ের মাঝে দাঁড়িয়েও চোখ গুলোতে একরাশ বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। হঠাৎ টুপ করেই আইরাতের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে। সে নিজের চোখ গুলো কেই বিশ্বাস করতে পারছে না। একটা মানুষের আরেকটা মানুষের সাথে এতোটা মিল কি করে থাকতে পারে। পুরো কার্বান কপি। আইরাত আর যাই হোক না কেনো সে নিজের আব্রাহাম কে চিনে। খুব ভালো করেই চিনে। আইরাতের নিজেকে চিনতে ভুল হতে পারে কিন্তু তার আব্রাহাম কে চিনতে ভুল কখনোই হবে না। এটা কি তাহলে কোন কাকতালীয় ব্যাপার নাকি সত্যি আব্রাহাম। এতো বছর পর আবার আব্রাহাম? কি করে সম্ভব এটা । আইরাতের আব্রাহাম কি তাহলে মরে নি, সে বেচে আছে। আইরাত এগুলোই ভেবে চলেছে আর অপলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। আইরাতের শরীরে কাটা দিয়ে উঠেছে। এক অজানা ভয় মনে এসে বাধা বেধেছে। কেনো জানি আইরাতের এখন সামনে থাকা এই অর্নীল কে দেখে খুব ভয় লাগছে। স্টেজের ওপরে অর্নীল হাসছে, কথা বলছে, তার ফ্যান দের দিকে হাত তুলে হাত নাড়াচ্ছে। আইরাতের দম ভারি হয়ে এসেছে এখন। মাথা কেমন যেনো ঘোড়াচ্ছে। নিজের চোখে এতো টাই পানি জড়ো হয়েছে যে সামনে সবকিছু কেমন ঘোলা ঘোলা দেখতে পারছে সে এখন।
তবে হঠাৎ করেই অর্নীল চলে যেতে লাগে। সেদিকে আইরাতের কোন খেয়াল নেই, সে তার মতো করেই নিজের ভাবনায় মগ্ন আছে। অর্নীল যখন একদম চলে যায় স্টেজের ওপর থেকে তখন আইরাতের মনে পরে যে সে স্টেজের ওপরে অর্নীল আর নেই। আইরাত দ্রুত পায়ে ভীড় ঠেলে বাইরে এসে পরে। বেশ কিছু মানুষের সাথে তার কিছুটা ধাক্কাও লেগেছে। বাইরে এসেই আইরাত নিজের চারিপাশে আব্রাহাম কে খুঁজতে লাগে। কিন্তু সে নেই। সেখান থেকে আরো কিছুটা দূরে এসেই আইরাত দেখে আব্রাহাম ফোনে কার সাথে যেনো কথা বলতে বলতে গাড়িতে উঠছে। একজন গার্ড গাড়ির দরজা খুলে দেয় আর আব্রাহাম গিয়ে বসে পরে। এটা দেখেই আইরাত সোজা আব্রাহামের কাছে চলে যায়। কিন্তু ততক্ষণে আব্রাহাম তার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিয়েছে। আইরাত আর কোন উপায় না পেয়ে পাগলের মতো করে আব্রাহামের গাড়ির পেছনে ছুটতে লাগে।

আইরাত;; আব আব.. আ আব্রাহাম। আব্রাহাম। আব.. আব্রাহাম দাড়ান। আব্রাহাম একটু দাড়ান। আব্রাহায়ায়ায়ায়ায়ায়াম দাড়ান। আব্রাহাম আমার জন্য দাড়ান। আব..আব্রাহাম।।

আইরাত এগুলোই বলছে আর দৌড়িয়ে যাচ্ছে আব্রাহামের গাড়ির পেছনে। কিন্তু গাড়িতে জোরে গান বাজার ফলে কিছুই শোনা যাচ্ছে না। আর এদিকে আইরাত পাগলের মতো করে ছুটছে তো ছুটছেই। গাড়ির বেগ যেনো আরো আগে থেকে বেশ বেড়ে গেলো আর একটা সময় আইরাত হোচট খেয়ে নিচে পরে যায়। আর গাড়ি দূরে চলে যায়। আর যাই হোক কেউ তো আর গাড়ির সাথে দৌড়িয়ে পারবে না তাই না। আইরাত কোন রকমে উঠে দাঁড়ায়। হাটুতে ব্যাথা পেয়েছে অনেক। ছাল উঠে গিয়েছে। কুনি তেও কিছুটা ছাল উঠেছে। আইরাত উঠে দাঁড়িয়ে পরে। তারপর আবার সেই কনসার্টের কাছে চলে যায়। তনয়া কনসার্টের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো। আইরাতকে আসতে দেখে তনয়া দ্রুত তার কাছে যায়।

তনয়া;; কিরে কোথায় ছিলি তুই? খুজছি তো আমি। আর একি ব্যাথা পেলি কি করে। ও গড ব্লাড বের হয়েছে তোর।

আইরাত;; শোন ওইসব ছাড় এখন এগুলো দেখার টাইম নেই। আগে এটা বল যে আজ কনসার্টে যে গান গেয়েছে সে কে ছিলো? (নিজের ওপরের হুডি টা খুলতে খুলতে)

তনয়া;; কি বলিস তুই এইসব, তুই উনাকে চিনিস না??

আইরাত;; না, মানে হ্যাঁ আরে কে উনি বল না?

তনয়া;; ইন্ডাস্ট্রির সবথেকে সাকসেসফুল রকস্টার আর সিংগার। আব্রাহাম চৌধুরী অর্নীল। কেই না চেনে উনাকে। এক নামে পরিচয় উনার। বাট এটিটিউড আর ইগো এগুলোই বেশি আর কি। পাত্তাই দেয় না। আর আজ তো দেখলি যে কি পরিমণ সুদর্শন উনি।

আইরাত;; আব্রাহাম!!

তনয়া;; কি?

আইরাত;; বাড়ি চল এক্ষুনি আর শোন আমার কোন এক গার্ড তোকে বাড়ি পৌঁছে দিবে বুঝলি আমি এখন গেলাম।

তনয়া;; কিন্তু এতো তাড়া কিসের তোর আরে??

আইরাত;; আমি যাই, বায়।

আর হ্যাঁ তনয়া আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী নামে কাউকে চিনে না। মানে দেখে নি। তাই তনয়ার কাছে এই অর্নীলই প্রথম। যার ফলে সে স্বাভাবিক আছে।
এই বলেই আইরাত গাড়িতে উঠে সাই করে চলে গেলো। প্রায় ৩০ মিনিট পর সোজা নিজের বাড়ির সামনে এসে থামে আইরাত। গার্ড কে গাড়ি পার্ক করতে বলে আইরাত দৌড়িয়ে বাড়ির ভেতরে চলে যায়।

আইরাত;; দাদি!! দাদি! প্লিজ নিচে এসো দাদি!!

ইলা আইরাতের গলা শুনতে পেরে হলরুমে আসে।

ইলা;; কিরে কি হয়েছে? এসেই এমন করছিস কেনো?

আইরাত;; দাদি।

আইরাত গিয়েই আগে ইলা কে জড়িয়ে ধরে। ইলা নিজের কাধে তরল কিছুর স্পর্শ পেলে বুঝে যে আইরাত কান্না করছে। থাকতে থাকতেই আইরাত হুহু করে কেদে দেয়।

ইলা;; আরে আরে হলো কি? কিছু কি হয়েছে নাকি আইরাত??

আইরাত;; দাদি আমি জানতাম যে আমার, আমার আব্রাহাম আমাকে, আমকে ছেড়ে কখনো কোথাও যাবে না। তোমরা শুধু ওকে ভুল বুঝেছো। আমি জানতাম ও ঠিক আছে। ওর মতো মানুষের কিছু কি করে হতে পারে। ইট”স জাস্ট ইম্পসিবল। কাল সব কটা পুলিশ অফিসারের চাকরি আমি খেয়ে দিবো কেননা তারা সব ভুল ইনভেস্টিগেশন চালিয়েছিলো।

ইলা;; মানে কি?

আইরাত;; আমি আমার আব্রাহাম কে দেখেছি দাদি। ও আব্রাহাম ই ছিলো। আমি ওকে চিনতে কখনোই ভুল করবো না। আমি সিওর, আমার মন বলে ও আমার আব্রাহাম। আই হেভ গাট ফিলিংস। ও, ও আমার আব্রাহাম ই ছিলো দাদি।

ইলা;; কাকে কি বলছিস? হয়তো ভুল দেখেছিস তুই।

আইরাত;; না দাদি, বিশ্বাস করো আমায় শুধু একটা বার। আমি ভুল দেখি নি।

ইলা;; হুমম (চিন্তিত সুরে)

আইরাত দৌড়ে গিয়ে সিড়ি দিয়ে ওপরে ওঠে নিজের রুমে চলে যায়।





চলবে~~

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৫৯

আইরাত;; আমি জানি না কিছুই। আমার জাস্ট ওই ছেলের সব ইনফরমেশন চাই তাও ১০ মিনিটের মাঝেই।

গার্ড;; জ্বি ম্যাম পেয়ে যাবেন শুধু কয়েক টা মিনিট সময় দিন।

আইরাত;; ফাস্ট।

এই বলেই আইরাত ফোন কেটে দেয়। চেয়ারে ধপ করে বসে পরে। হাত দিয়ে কপালের এক সাইডে স্লাইড করে যাচ্ছে সে। চিন্তায় আর ভালো লাগছে না কিছু। কাল সারাটা রাত আইরাত শুধু ঘরে পায়চারি করেই কাটিয়ে দিয়েছে। একবার ঘড়ির দিকে তাকায় তো আরেকবার নিজের দিকে। সে আসলে ঠিক আছে তো? নাকি তার কোন মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। আইরাত নিজেও সব বুঝে যে এখন যদি সে এতো গুলো বছর পর আবার আব্রাহামের ফিরে আসার কথা বলে তাহলে অবশ্যই কেউ তাকে বিশ্বাস করবে না। কারণ যে দুই বছরেরও বেশি হবে সময় আগে মারা গিয়েছে এত্তো গুলো দিন পর সেই আবার কি করে ফিরে আসবে তাও এমনভাবে। আইরাত অনেক ট্রাই করেছে বুঝার যে কোথাও না কোথাও সে নিজেই ভুল নয়তো কিন্তু না বারবার, লাগাতার আব্রাহামের ওই হাস্যজ্বল মুখখানা তার চোখের দেওয়ালে ভেসে ওঠেছে। আইরাত একটা ফোটা ঘুমায় নি রাতে। একটা মুহুর্তের জন্য চোখের পাতা লেগে আসি নি। কারণ এমন একটা কিছু সে দেখবে তার ধারনা দূর দূর পর্যন্ত তার ছিলো না। তবে ধারনা কে আজ সত্যি করে দিয়েছে। ঘুম হারাম, সারা রাত আব্রাহামের চিন্তায়ই মগ্ন ছিলো সে। কখন সকাল হবে আর কখন সে অফিসে ছুটে যাবে তাই ভেবে এসেছে। আর সকাল হতে না হতেই আইরাত এসে পরেছে আজ অফিসে। ইলা শুধু আইরাতের কান্ড দেখছিলো। মানলো যে আইরাত প্রায় উন্মাদ পাগল হয়ে গিয়েছিলো আব্রাহাম কে ছাড়া তবে সময়ের সাথে সাথে সে নিজেকেও এনাফ স্ট্রোং করে নিয়েছে। আইরাতের দ্বারা এতো বড়ো ভুল হবার কথা না আর ব্যাপার টা যখন আব্রাহামের তখন সেইক্ষেত্রে তো মোটেও না।
আর আইরাত অফিসে এসেই দ্রুত এক গার্ড কে ফোন করে আব্রাহামের সব ডিটেইলস বের করতে বলে।
আইরাতের এই মূহুর্তে প্রচুর কান্না পাচ্ছে। অবশেষে, অবশেষে সে তার আব্রাহাম কে খুঁজে পেয়েছে। আইরাত জানে যে মৃত্যু সবার জন্যই অবধারিত। যে একবার মরে যে কখনোই ফিরে আসে না কিন্তু যেখানে আব্রাহাম মরেই নি সেখানে তার না ফেরার প্রশ্নই আসে না। এত্তো গুলো বছর একটা জলজ্যান্ত লাশ, একটা কাঠের পুতুলের মতো থাকার পর অবশেষে আইরাত নিজের জীবনের মানে খুঁজে পেয়েছে। এ যেনো কাঠ ফাটা রোদযুক্ত মরুভূমিতে একবিন্দু পানির সমান গুরুত্ব রাখে। আইরাত আগে পুরো পাগল না হলেও এখন মনে হয় সে সত্যি সত্যি পাগল হয়ে যাবে, খুশিতে। আব্রাহাম কে আইরাত আবার পেয়েছে। এটা উচ্চারণ করতেই যেনো বুকে একরাশ প্রশান্তি এসে নাড়া দেয়। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ছিলো আইরাত। মাথা টা ওপরের দিকে করে রেখেছে। এগুলো ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ টুপ করে এক ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পরে চোখ দিয়ে। তখনই দরজাতে কড়া নাড়ে কেউ।

রাশেদ;; ম্যাম আসবো?

আইরাত;; এসো।

রাশেদ;; ম্যাম কিছু কি হয়েছে এতো জরুরি ভাবে ডেকেছেন যে?

আইরাত;; কিছু হয়েছে?? বলো যে কি হয়নি?

রাশেদ;; বুঝলাম না ম্যাম।

আইরাত;; আব্রাহামের কথা মনে পরে?

আইরাতের এমন প্রশ্নে রাশেদের মাথা টা আপনা আপনিই নিচে নেমে পরে। মুখ টা শুকিয়ে যায়।

রাশেদ;; ম্যাম গত ৬-৭ বছর‍ যাবৎ স্যারের সাথে ছিলাম আমি। স্যার আমাকে অনেক উপকার করছেন যেগুলো হয়তো আমি সারাজীবনেও শোধ করতে পারবো না। আর ম্যাম কিছুদিন একটা বস্তু নিজের কাছে রাখলেও তার ওপর মায়া পরে যায় আর তো সেখানে এতো গুলো বছর। অনেক মনে পরে।

আইরাত;; আবার যদি আব্রাহাম আসে কেমন হবে?

রাশেদ;; জ্বি ম্যাম??

আইরাত;; অর্নীল নামে কাউকে চেনো?

রাশেদ;; জ্বি ম্যাম আসলে উনি তো সিংগার। সত্যি বলতে আমি কখনো উনাকে দেখি নি তবে নাম শুনেছি।

আইরাত;; হ্যাঁ আ………….

রোদেলা;; আসবো?

আইরাত;; আরে আসো।

রোদেলা;; আইরাত এগুলো কি?

আইরাত;; কি হলো?

রোদেলা;; কাল কনসার্টে?

আইরাত;; লেট মি এক্সপ্লেইন। রাশেদ তুমি তো এই অর্নীল কে কখনো দেখো নি রাইট। তো আজ দেখে নাও।

রোদেলা তার হাতে একটা ফোন নিয়ে ছিলো। তাতে আব্রাহামের ছবিই বের করা। রোদেলা তা রাশেদের দিকে ধরে। আর রাশেদ দেখেই হা হয়ে যায়।

আইরাত;; এবার বুঝতে পারলে কিছু। অর্নীল ই আব্রাহাম। কাল যখন রাশেদ তুমি আর রোদেলা এসে পরলে কনসার্ট থেকে তার বেশ কিছুক্ষন পরই স্টেজের ওপরে আব্রাহাম আসে। তোমরা তো অনেক আগেই এসে পরেছিলে। কিন্তু কাল সম্পূর্ণ কনসার্ট-স্টেজ আব্রাহামের ছিলো। আমি ভেঙে বলতে পারবো না তোমাদের যে কাল যখন আমি কনসার্টে আব্রাহামকে দেখি তো আমার অবস্থা কেমন ছিলো। এই আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী আর আব্রাহাম চৌধুরী অর্নীল একই ব্যাক্তি। আব্রাহাম মরে নি। আব্রাহাম বেচে আছে। হয়তো এতোদিন আমাদের সবার কাছ থেকে দূরে ছিলো কিন্তু বেচে আছে সে। আব্রাহাম নিজের ন্যাম চেঞ্জ করেছে, ফ্রেম চেঞ্জ করেছে কিন্তু চেহারা না তা করে নি আর না ই অন্য কিছু। আমার গাঢ় বিশ্বাস সে আব্রাহাম আব্রাহাম আর আব্রাহাম ই।

রাশেদ আইরাতের কথায় একবার রোদেলার হাতে ফোনে থাকা আব্রাহামের ছবির দিকে তাকায় তো আরেকবার আইরাতের দিকে তাকায়। পরমুহূর্তেই রাশেদের বেশ জোরে সোরে কাশি উঠে যায়। কাশতে কাশতে রাশেদের খারাপ অবস্থা। বেশ বিষম খেয়েছে সে। আইরাত দ্রুত রাশেদের দিকে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দেয়। পানি টা এক চুমুকেই শেষ করে রাশেদ কিছুটা শান্ত হয়ে বসে। সে যেনো এখন একটা ঘোরের মাঝে আছে। কিছুক্ষন পর রাশেদ বলে ওঠে….

রাশেদ;; কিন্তু ম্যাম এটা কি করে সম্ভব?

আইরাত;; আমি জানি না আমি শুধু এটা জানি যে আমার আব্রাহাম আছে ব্যাস।

রোদেলা;; কিন্তু স্যার যদি ঠিকঠাক ই থেকে থাকেন তাহলে এতো দিন আমাদের কারো কাছে এলেন না কেনো। কারো কাছে তো দূর সে তোমার কাছেও আসে নি কেনো?

আইরাত;; সেইসব উত্তরই জানার আছে উনার কাছ থেকে। এখনো আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বকি আছে।

হঠাৎ তাদের কথা বলার মাঝেই আইরাতের ফোন আসে, সে ধরে।

আইরাত;; হ্যালো?

গার্ড;; ম্যাম, উনার নাম আব্রাহাম চৌধুরী অর্নীল। তিনি গত সাড়ে তিন বছর যাবৎ ইন্ডাস্ট্রিতে কজ করছেন। অনেক পপুলার উনি। উনার নিজের আপন বলতে কাউকে পায় নি তেমন। আর উনি এই শহরেই থাকেন।

আইরাত;; সাড়ে তিন বছর?? আব্রাহামের এক্সিডেন্ট হয়েছে দুই বছর আর কয়েক মাস হবে কিন্তু সে সাড়ে তিন বছর যাবৎ ইন্ডাস্ট্রিতে। কীভাবে সম্ভব? (মনে মনে)

গার্ড;; ম্যাম

আইরাত;; হুমম। তার সাথে যে করেই হোক আমার দেখা করার ব্যাবস্থা করো।

গার্ড;; ম্যাম এপোয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।

আইরাত;; তো নাও। তাতে কি হয়েছে। যা করতে হয় করো কিন্তু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তত তাড়াতাড়ি উনার সাথে আমার দেখা করার ব্যাবস্থা করো।

গার্ড;; জ্বি আচ্ছা।

আইরাত;; হুমম।

গার্ড;; ম্যাম!!

আইরাত;; হুয়াট?

গার্ড;; উনি একদম আমাদের আব্রাহাম স্যারের মতো দেখতে।

আইরাত;; হ্যাঁ।

আইরাত ফোন টা রেখে দেয়। সামনে তাকিয়ে দেখে রাশেদ আর রোদেলা ঠিক আগের মতো করেই অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আইরাত;; ভাবনা-চিন্তা শেষ হলো?

রাশেদ;; আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না। সবকিছু কেমন যেনো মাথার ওপর দিয়ে যচ্ছে।

আইরাত;; লিসেন এই অর্নীল আর আব্রাহাম হুবাহু এক বা কপি ক্যাট দেখেই যে আমি এতো বিশ্বাস নিয়ে বলছি তা না। আমি আব্রাহাম কে হারে হারে চিনি। ওকে চিনতে কখনো আমার ভুল হতেই পারে না আমার।

এভাবেই সেই সময় টুকু কেটে গেলো। আইরাতের গার্ড রা আব্রাহামের সাথে আইরাতের একটা এপোয়েনেন্ট ফিক্স করে।

রাশেদ;; ম্যাম আপনার সাথে গার্ড…….

আইরাত;; কোন দরকার নেই আমি একাই যাবো।

আইরাত এই কথা বলেই বাইরে বের হয়ে পরে। গাড়ি ড্রাইভ করে প্রায় বেশ সময় পর একটা ফ্ল্যাটে এসে পরে। এটা অর্নীল ওরফে আব্রাহামের মেইন বাড়ি তো না শুধু ফ্ল্যাট। আইরাত সেখানে যেতেই বেশ কিছু মানুষ এগিয়ে আসে। আইরাত কে স্বাগত জানায়। আইরাত কোন রকমে সেগুলোতে এড়িয়ে গিয়ে সোজা ম্যানেজারের সাথে কথা বলে….

ম্যানেজার;; আসুন ম্যাম আসুন। আপনার জন্যই এতো অপেক্ষা।

আইরাত;; তো কোথায় উনি?

ম্যানেজার;; ম্যাম অর্নীল স্যার তো ভেতরে।

আইরাত;; দ্রুত উনার সাথে দেখা করতে হবে আমায়।

ম্যানেজার;; জ্বি ম্যাম আমরা জানি আর তাই তো এতো কিছু করা। আসুন।

আইরাত সেখান থেকে দ্রুত চলে গেলো। কেননা যখন তখন মিডিয়ার লোকজন সব এসে পরতে পারে এখানে। আর তাদের সামনে একবার পরলে আর রেহাই নেই। আইরাত আর ম্যানেজার লিফটে উঠে পরে। তারপর সোজা ১৩ নাম্বার ফ্লোরে এসে পরে।

ম্যানেজার;; এদিকে ম্যাম।

আইরাত ম্যানেজারের সাথে যাচ্ছে। ১৩ নাম্বার ফ্ল্যাটে একজন রেসিপশনিস্ট ছিলো তার সাথে ম্যানেজার কিছু কথা বলে।

ম্যানেজার;; ম্যাম আপনি ভেতরে যান। স্যার আপনাকে যেতে বলেছেন।

আইরাত আবার সেখান থেকে হাটা দেয়। ৪-৫ মিনিটের মতো হাটার পর একটা বেশ বড়ো সড়ো রুম আইরাতের চোখে পরে। আইরাত ওপরে তাকায়। ওপরে সুন্দর করে লিখা আব্রাহাম চৌধুরী অর্নীল। আইরাতের বুকে ১০১ টা হাতুড়ি পেটানো শুরু করে দিয়েছে। আইরাত আগে বুক ভরে একবার দম নিয়ে নেয়। কেমন যেনো লাগছে তার। আচ্ছা এই তো আব্রাহাম, আইরাতের সেই আব্রাহাম। তাহলে আইরাতের কেনো এমন লাগছে। এক অজানা ভয় এসে বুকে কড়া নাড়ছে। আইরাত দরজার দিকে হাত বাড়াবে কি বাড়াবে না তা নিয়ে দ্বিধায় পরে যায়। দরজার দিকে নিজের হাত বাড়িয়েও আবার তা গুটিয়ে নিয়েছে কয়েকবার। আইরাত এবার চোখ বন্ধ করে কিছুটা দম নেয় তার পর আবার দরজার দিকে ভালোভাবে তাকায়। কিন্তু এবার আইরাত একটা জিনিস লক্ষ করে আর তা হলো দরজার সাইডে একটা লগো দেওয়া
“” Don’t Disturb “” এটা দেখে আইরাত কিছুটা কপাল কুচকায়। মানে কি? এপোয়েন্টমেন্ট আছে জেনেও এমন লগো তাও সোজা দরজার বাইরে। আজব। সে যাই হোক আইরাত দরজা খোলে সোজা রুমের ভেতরে চলে যায়। দরজা খোলে ভেতরে যেতেই আইরাত তার চোখ গুলো একবার সম্পূর্ণ রুমে ঘুড়িয়ে নেয়। ঠিক আগের মতো সাদা-কালো সব জিনিস। আইরাত কয়েক কদম সামনে আসে রুমের আর তখনই দরজা টা আপনা আপনিই লেগে যায়। আইরাত একবার পেছন ঘুড়ে দেখে আরেকবার সামনে দেখে। রুমে কেউ নেই। তাহলে দেখা করতে বললো কার সাথে। আইরাত কিছুটা কপাল কুচকায়। আশে পাশে খুঁজছে কিন্তু যখন সে কাউকে পেলোই না তখন আইরাত ঘুড়ে চলে আসতে নেয়। যেই না আইরাত চলে আসতে নিবে তখনই কানে গাঢ় ভাবে কারো পিয়ানো বাজানোর শব্দ আসে। পিয়ানোর সাউন্ড টা এত্তো পরিমাণে সুইট যা বলার বাইরে। আইরাত পিয়ানোর সাউন্ড অনুসরণ করে সেদিকেই এগিয়ে যায়। কিছুদূর যেতেই আইরাত দেখে একটা রুম সেখানে অনেক বড়ো বড়ো পর্দা সেগুলো বাতাসে দুলছে। আর সেখান থেকে পিয়ানোর শব্দ ভেসে আসছে। আইরাত আস্তে আস্তে সেইদিক যেতে ধরবে কিন্তু তখনই টিউন চেঞ্জ হয়ে যায়। যেই পিয়ানোর সাউন্ড কিনা এত্তো সুইট ছিলো তা এখন
অগোছালো, কানের মাথা খেয়ে ফেলবে এমন কর্কশ শব্দ। আইরাত বেশ বিরক্তিবোধ করলো। আইরাত জানে যে এটা আব্রাহাম, আর সেই এমন করছে। আইরাতের বেশ রাগ উঠে গেলো।

আইরাত;; Is anyone here?

এবার আইরাতের কানে কারো হেটে আসার শব্দ আসে। যেই রুম থেকে পিয়ানোর সাউন্ড আসছিলো আইরাত সেদিকেই তাকিয়ে ছিলো। তখনই হুট করে আইরাতের পেছন থেকে এক গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠ ভেসে আসে।

আব্রাহাম;; Hay you, বিনা পারমিশনে ভেতরে আসার সাহস হলো কি করে?

আইরাত ফট করে পেছন ঘুড়ে তাকায়। সে আব্রাহাম।
আব্রাহাম যে তাকে কোন কথা বলেছে সে দিকে আইরাতের কোন খেয়ালই নেই। আইরাত জোরে জোরে দম নিচ্ছে আর চোখে একরাশ পানির ফোটা নিয়ে জ্বলজ্বল করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ গুলো লাল টকটকে হয়ে গেছে মূহুর্তেই। এই যেনো টুপ করে পানি গড়িয়ে পরে এমন। আইরাত নিজের মন ভরে আব্রাহাম কে দেখছে। কত্তো গুলো বছর পর সে আব্রাহাম কে দেখছে। যাকে ছাড়া একটা মুহূর্ত ভাবতে পারতো না তাকে ছাড়া আজ কতো গুলো দিন পারি দিয়ে ফেলেছে সে। আইরাতের মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠেছে আর চোখে পানি চিকচিক করছে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে এক ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে আছে। আইরাত কয়েক কদম এগিয়ে যায় আব্রাহামের দিকে। আইরাত তার হাত গুলো আব্রাহামের দিকে বাড়াতে নিয়েও থেমে যায়। কি করবে সে ভেবে পাচ্ছে না। আইরাতের সামনে আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে। মানে এটা যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না আইরাতের। আগের মতোই আছে আব্রাহাম একটুও পালটায় নি। হয়তো আগে থেকে আরো বেশিই এট্রাকটিভ হয়ে গেছে। কিন্তু আইরাতের তো জীবন যায় যায় অবস্থা আব্রাহাম কে দেখে। আইরাত তার হাত গুলো নিজের মুখে চেপে ধরে। প্রচুর কান্না পাচ্ছে তার। এই মূহুর্তে আইরাতের নিজের বুক ফেটে কান্না আসছে।

আব্রাহাম;; কি আশ্চর্য আপনি কে? আর এভাবে কাদছেন কেনো। আমি কিন্তু আপনার সাথে কোন ধরনের কোন অসভ্যতামি করি নি যে এভাবে মরা কান্না কাদছেন।

আব্রাহামের এই কথা বলা শেষ হতে না হতেই আইরাত আব্রাহামের ওপর এক প্রকার ঝাপিয়ে পরে। আব্রাহাম কে নিজের সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। একদম আব্রাহামের বুকের সাথে মিশে যায়। আইরাত আব্রাহামের গলা জড়িয়ে ধরে এবার পাগলের মতো হাউমাউ করে কেদে দেয়। তার কান্না করার বেগ এতো টাই যে সে কথা অব্দি বলতে পারছে না।

আব্রাহাম;; আরে আ………

আইরাত;; আব্রাহাম, আমিহ, আম আমি আ আপনার কা কাছে হাত জ জোর করছি। প প প্লিজ আপ আপনিহ আমাকে, আমাকে ছেড়ে আর আর কখনো দূরে চলে যবেন না। প্লিজ। আমি মরে হ, মরে যাবো। আমি ক কি ন নিয়ে য যে বেচে ছিলাম ত তা কেবল আম আমি ই জানি। আব্রাহাম আমিহ, আমিহ আপনাকে অ অন্নেক ভালোবাসি। আমি বুজাতে পা পারবো না। আমিহ, আমিহ আল্লাহ কে বলবো যে উনি যে যেনো আমার হায়াত নিয়ে আপনাকে দিয়ে দেন। তবুও আপনি আমার কাছে থাকুন। আমি ধ্বংস হয়ে গেছিলাম খুব কষ্টে নিজেকে সামলিয়েছি আমি সব। একবার ভেঙে চুরমার হয়ে গেছিলাম উঠে দাঁড়িয়েছি খুব বেশি কষ্টে। আপনি প্লিজ আমার থেকে আর দূরে যাবেন না। কেননা, কেননা আমি আর ভাঙতে পারবো না। ভেঙে আবার উঠে দাঁড়ানোর মতো সেই শক্তি আমার মাঝে নেই। আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি আব্রাহাম। আপনি আমার, শুনেছেন আপনি। আপনি আমার।

এই কথা বলেই আইরাত যেনো আবার পাগলের মতো করে বিলাপ পারা শুরু করে দিয়েছে। আইরাত আর থাকতে না পেরে এবার জোরে জোরে চিল্লিয়েই কান্না করা শুরু করে দেয়। হিচকি উঠে গিয়েছে। আব্রাহামের পরণের সাদা কালারের শার্টের কাধের অংশটা আইরাতের চোখের পানিতে ভিজে একদম লেগে ধরেছে। তবে আব্রাহাম ঠাই দাঁড়িয়েই আছে। কি করবে কি করবে না ভেবে পাচ্ছে না। আইরাত আরো শক্ত ভাবে আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে। এভাবে কিছুক্ষন থাকার পর আইরাত তার মাথা টা তুলে আব্রাহামের সামনে আনে। আব্রাহাম দেখে আইরাতের চেহারার নকশাই পুরো পালটে গেছে। চোখ মুখ সব ফুল চেহারাতে কেমন এক লাল আভা ফুটে ওঠেছে। আইরাত ছলছল চোখে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থেকে। পরমুহূর্তেই আইরাত পাগলের মতো করে আব্রাহামের গালে, কপালে, নাকে, চোখে, মুখে চুমু খেতে শুরু করে দেয়। আব্রাহাম শুধু চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আইরাত আবারও আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে হিচকি তুলে কাদা শুরু করে দেয়।





চলবে~~