নেশাক্ত ভালোবাসা ২ পর্ব-৩০+৩১

0
1477

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩০

বিকেলের দিকে বেশ কতোগুলো স্টাফ আইরাত-আব্রাহামের কাছে আসে। আসলে পার্টি টা বেশ বড়োসড়ো হবে তাই এক এক জনের গেটাপ টাও হবে সেই ভাবেই। মূলত স্টাফ গুলো আব্রাহাম আর আইরাতের ড্রেস & বাকি সব ঠিক করার জন্য এসেছে। তবে আব্রাহাম নিজের পছন্দ অনুযায়ী তাদের জন্য ড্রেসাপ এবং অন্যান্য জিনিস চুস করে সবাই কে বাইরে চলে যেতে বলে। আইরাত কে সে রেডি করিয়ে দেয় নিজ হাতেই। একটা গাঢ় নেভি ব্লু কালারের গাউন পরিয়ে দেয়। পেছনে কিছুটা ব্যাকলেস আর হাতা গুলো গুটানো। আর আব্রাহাম সাদা-কালো সুট পরে নেয়। আইরাত আয়নার সামনে বসে বসে কানের দুল পরছিলো তখন আব্রাহাম আইরাতের পেছনে এসে দাঁড়ায়। আইরাত চোখ তুলে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। সামনে একটা ন্যাকলেস ছিলো তা আব্রাহাম নিজ হাতে তুলে নিয়ে আইরাত কে পরিয়ে দিতে দিতে বলে…

আব্রাহাম;; ইউ লুক প্রিটি।

আইরাত;; থাংকু।

আব্রাহাম আইরাত কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। এক হাটু ভাজ করে আইরাতের সামনে বসে পরে। তার ঠোঁটের পাশে আলতো করে চুমু এঁকে দেয়। আইরাতও কিছু বলে না শুধু ক্ষনিকের জন্য নিজের চোখ বন্ধ করে নিয়ে আবার মেলে তাকায়।

আইরাত;; আব্রাহ….

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল কিছু বলার আছে আমার তোমাকে।

আইরাত;; হ্যাঁ বলুন না।

আব্রাহাম;; একচুয়ালি আই নিড ইউর হেল্প।

আইরাত;; হেল্প? কিন্তু আমি কীভাবে আপনাকে সাহায্য করবো!

আব্রাহাম;; তুমিই করতে পারো।

আইরাত;; আচ্ছা বলুন।

আব্রাহাম;; আসলে সত্যি বলতে আমি এখানে আমাদের হানিমুনের জন্য আসি নি।

আইরাত;; তাহলে?

আব্রাহাম;; কোহিনূর চুরি হয়ে গেছে৷

আইরাত;; মানে বুঝলাম না। কোহিনূর তাও আবার চুরি? কি করে সম্ভব এটা?

আব্রাহাম;; আমি শুধু জানি যে এই কোহিনূর চুরি হয়ে গেছে। আন্ডারগ্রাউন্ড এর যে অফিসার রা ছিলো তারা সবাই হন্নে হয়ে খুঁজে যাচ্ছে। আর যতটুকু সম্ভব এই ব্যাপার টা মিডিয়া/প্রেস এইসবের থেকে লুকিয়ে রাখা হচ্ছে। কেননা একবার শুধু একবার এই নিউজ পাবলিক হয়ে গেলে সবার সম্মুখীন হতে হবে সরকার কে আর…

আইরাত;; আপনাকে..!

আব্রাহাম;; হয়তো হ্যাঁ। কেননা কোহিনূর যেখানে ছিলো সেখানের পুরো গার্ড রা সব আমারই ছিলো। প্রশ্ন উঠবে আমার ওপর। আমার যাতায়াত ছিলো সেখানে, আঙুল উঠবে আমার ওপর। বাট এতে আমার কিছুই যায়-আসে না। আমি লোকজনের ব্যাপারে মাথা ঘামাই না একবিন্দুও। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে চুরি করলো কে? আর যেই করে থাকুক না কেনো ব্যাটা অনেক চালাক আর চুরির বিষয়ে তো এক্সপার্ট বলা যায়। কারণ এতো গুলো ক্যামেরা, গার্ড এদের চোখ ফাকি দিয়ে কোহিনূর চুরি করা মামার বাড়ির মোয়া না। স্পেশালি সেখানে ‘রেড ল্যাজার লাইট’ আছে। প্রচুর ক্ষতিকারক এই লাইট গুলো। হিউম্যান বডিতে লাইট লাগলে মানুষ পুরো পুড়ে যাবে। ইন ফ্যাক্ট মারাও যেতে পারে। তো এতো টাও ইজি না।

আইরাত;; এখন?

আব্রাহাম;; লিসেন এখানে কেউই জানে না যে তুমি আর আমি হাসবেন্ড এন্ড ওয়াইফ ওকে!

আইরাত;; কিহ?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ। আমি তা জানানোর প্রয়োজন মনে করি নি তাই জানাই নি। সেইদিন তোমাকে ওভাবে স্কাফ, মাস্ক, চশমা পরিয়ে নিয়ে এসেছি ফার্স্ট অফ অল তোমার সেইফটির জন্য আর সেকেন্ড হাইড করার জন্য। বিকজ এটা দরকারি ছিলো।

আইরাত;; মানে আপনার-আমার বিয়ের ব্যাপার টা পাবলিক না?

আব্রাহাম;; অন্তত এখানে না।

আইরাত;; হুম।

আব্রাহাম;; এবার শোন আমরা হোটেলের সবথেকে বড়ো হলরুমে যাচ্ছি বুঝলে সেখানেই পার্টি হবে। এমন একটা ভাব ধরবে যে তুমি আমাকে চেনোই না। শুধু আমার সাথে নরমাল ভাবে যাবে ওকে। সেখানে অনেক রকমের মানুষ থাকবে, তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে। যে এসব কিছুতে তুমি অনেক এক্সপার্ট। যদিও প্রকৃতপক্ষে তুমি এক্সপার্ট ই। এখানে সব ফরেইন কান্ট্রির লোক। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে যে তুমি এখানে কোথায় থাকো বা আগে তো তোমাকে এখানে কেউ দেখি নি, কার সাথে এসেছো? তাহলে বলবে তুমি রুম নাম্বার ০৯ এ থাকো ওকে!

আইরাত;; হুমমম।

আব্রাহাম;; মনে রেখো রুম নাম্বার ৯।

আইরাত;; কিন্তু ৯ ই কেনো?

আব্রাহাম;; এর উত্তর তুমি নিজেই পেয়ে যাবে। বুঝেও যাবে।

আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম;; আর হ্যাঁ বেবিগার্ল একদম ভয় পাবে না বুঝলে কারণ আমি সবসময় তোমার কাছে তোমার পাশে থাকবো। হ্যাঁ হতে পারে যে তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছো না তাই বলে এটা ভেবো না যে আমি নেই বা আমি তোমাকে দেখছি না। মাই আই”স আর ওলয়েস আপওন ইউ।

আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম;; যাওয়া যাক?

আইরাত;; হ্যাঁ।

আব্রাহাম-আইরাত এসে পরে। আইরাত কে সোজা হোটেলের হলরুমে যেতে বললেও আব্রাহাম একটু ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে তারপর সেখানে যায়। আইরাত হলরুমের ওপরের বেশ বড়োসড়ো একটা সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে যেতে ধরে। আচমকাই রুমের বিশাল ফোকাস লাইট এসে পরে আইরাতের ওপর। সবার নজর যায় তার দিকে। তবে সে কোন কিছুই না ভেবেই সোজা নিজের মন মতো করে নিচে চলে যায়। সত্যি বলতে সবাই হা করেই তাকিয়ে ছিলো তার দিকে। আর তাদের মাঝে তায়াফও ছিলো৷ সে হাতে নিজের কোর্ট টা ঝুলিয়ে নিয়ে হাতে একটা এলকোহলের গ্লাস নিয়ে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত এইসব রেখে সোজা এলকোহল শপের সামনে গিয়ে বসে পরে। পরিবেশের মাধুর্যতা ধরে রাখার জন্য একটা সফট মিউজিক প্লে করে দেওয়া হয়েছে। আইরাত আশে পাশে তাকাতাকি করছে৷ কেউ কেউ এক জায়গায় গোল হয়ে কথা বলছে, কেউ ফ্রেন্ড নিয়ে আবার কেউ ফ্যামিলি নিয়ে, আবার কেউ প্রেমিক-প্রেমিকা নিয়ে ঘুড়ছে। সব বয়সের লোকজনই আছে এখানে। আইরাত মূলত আব্রাহাম কে খোঁজার চেষ্টা করছে কিন্তু তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। এমন এক অজানা-অচেনা পরিবেশে একা সে। তবে পূর্বে আব্রাহামের বলা কথা গুলো মনে করে করেই আইরাত নিজেকে শান্তনা দিচ্ছে। তার ভাবনার মাঝে ছেদ ঘটিয়ে দেয় একটা ছেলে। এ যেনো এক বিলেতি ইন্দুর। তাকে আইরাতের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আইরাত কপাল কুচকে ইচ্ছে করেই অন্য পাশে মাথা ঘুরিয়ে নেয়।

— Hay, you look really very beautiful..

আইরাত;; No chance bro so get lost..

ছেলেটা অবাক হয়ে তাকায় আর আইরাত তার দিকে তাকিয়ে এক টেডি স্মাইল দেয়। মিষ্টি সুরে অপমান। ছেলেটা চলে যায়। আইরাত একটা অরেঞ্জ জুসের অর্ডায় দেয়। কিছু সময় চলে যাওয়ার পর এনাউন্সমেন্টের আওয়াজে আইরাত সেদিকে তাকায়। আব্রাহাম আসছে।

আইরাত;; এহ কি ভাব! (মনে মনে)

আব্রাহাম এসে সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। তবে কিছুটা চিল্লাপাল্লার শব্দে আইরাত তার পেছনে তাকায়। দেখে তিন থেকে চারজন মেয়ে মাতামাতি করছে আব্রাহাম কে নিয়ে। যেনো তাদের আর তর সইছে না। আইরাত তাদের দেখে সেন্টি খেয়ে যায়। মানে এটা কি! বউ এর সামনে মেয়েরা তার জামাই কে নিয়ে এতো খুশি। আইরাত এমন এক সিচুয়েশনে পরেছে যে সে না পারছে কিছু কইতে আর না পারছে কিছু সইতে। সবাই কে তাদের মতো করে থাকতে দিয়ে আব্রাহাম সাইডে এসে পরে। আর আব্রাহাম আইরাত কে যেভাবে থাকতে বলেছে আইরাত ফুল ট্রাই করছে সেভাবেই থাকার। আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের পাশে একটা উঁচু চেয়ারে বসে পরে। আইরাত কিছুটা গলা খাকাড়ি দিয়ে ওঠে। ওয়েটার এসে আব্রাহামের উদ্দেশ্যে “হ্যালো স্যার” বলে এক জাড় ওয়াইনের পেগ ট্রে রেখে যায় তার সামনে। আইরাত চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায় তার দিকে। তবুও কিছু বলে না। আইরাত একমনে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম নিজে একদম সোজা হয়ে থাকলেও তা টের পেয়েছে বেশ। সে আইরাতের দিকে তাকালে সে আস্তে করে অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে ফেলে৷ এভাবেই বেশ সময় যায়। তবে এর মাঝে কেউ কারো সাথে কথা বলে না। আইরাতের কথা বলার বেশ ইচ্ছে করছে কিন্তু সে অপারগ। আব্রাহাম কয়েক পেগ মেরে দেয় একসাথে।
তৎক্ষনাৎ একজন এসে হলরুমের মাঝেখানে দাঁড়িয়ে এনাউন্সমেন্ট করে একটা ‘গেইম ডান্স’ এর। এখানে সবাই কাপল থাকবে। প্রথমে সবাই নিজ নিজ পার্টনার কে নিয়ে কাপল হয়ে দাঁড়াবে। তবে পরবর্তীতে মিউজিকের তালে তালে পার্টনার তার স্থান পরিবর্তন করবে। এভাবে একে একে ঘুড়েফিরে সবাই আবার একটা কাপল হবে সে অচেনা হলেও কিছুক্ষন থাকতে হবে। তারপর আবার মিউজিক অন হলে তাদের স্থান পরিবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ ঘুড়ে যেতে হবে। এভাবে যে একদম শেষ অব্দি নিজের আসল পার্টনারের সাথে টিকে থাকতে পারবে সেই বিজয়ী হবে। তবে এক্ষেত্রে আরো একটা টুইস্ট আছে আর তা হলো এখানে ছেলে-মেয়ে উভয়েরই পুরো মুখে বা শুধু চোখের অংশ টুকুতে বিভিন্ন ডিজাইন/কালারের মাস্ক থাকবে। পুরো হলরুমের আলো টাও কিছুটা ধোয়াসা থাকবে। সবাই কিছুটা চিল্লিয়ে ওঠে। হাতে গোণা শুধু কিছু কাপল দের বাদ দিয়ে আর বাকি সবাই এখানে পার্টিসিপ্যান্ট করে। আব্রাহাম উঠে চলে যায়। আইরাত ভাবে সে আর গিয়ে কি করবে তাই বসে বসে জুস খাচ্ছিলো তখনই একজন এসে আইরাতের সামনে নিজের হাত মেলে ধরে। আইরাত একবার তার হাতের দিকে তাকিয়ে আরেকবার হাতের মালিকের দিকে তাকায়। দেখে পুরো মুখ এক কালো ডিজাইন করা মাস্ক দিয়ে ঢাকা।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!

আব্রাহামের ডাকেই আইরাতের মুখে হাসির ঝলক ফুটে ওঠে। তার আর বুঝতে বাকি থাকে না যে এই আব্রাহাম। আইরাত কিছু না ভেবেই সোজা আব্রাহামের হাতে নিজের হাত রেখে দেয়। তারা দুজনে এগিয়ে যায়। যাওয়ার সময় দুজন মেয়ে এসে আইরাতের চোখে দ্রুত একটা মাস্ক পরিয়ে দেয় তারপর চলে যায়। মিউজিক প্লে করে দেওয়া হয়। আব্রাহাম-আইরাত পাশাপাশি গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহাম আস্তে করে আইরাতের কানে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; যেভাবে সব চলছে তা চলতে দাও।

আইরাত;; হুম।

আব্রাহাম আইরাত কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে এনে একহাতে তার আরেক হাত ধরে নেয়। আরেক হাত দিয়ে আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে। বাকিরাও তাই করে। আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে দুবার ঘুরিয়ে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে একটা চুমু বসিয়ে দেয়। আবার ঘুরিয়ে কিছু সময় ক্যাজুয়াল ডান্স করে আব্রাহাম আইরাত কে নিজের বাহুতে বেশ নিচু হয়ে ঝুকিয়ে নেয়। মিউজিক আবার প্লে হলে আইরাত এবার সাথে সাথে ঘুরে আরেক জনের কাছে চলে যায়। আব্রাহাম হাওয়া হয়ে যায়। আইরাত ডান্স আরেক জনের সাথে করলেও তার নজর যেনো আব্রাহাম কেই খুঁজছে। আইরাত সামনে তাকায়। দেখে একটা ছেলে। আইরাত তার সাথেই নাচছে। হঠাৎ করে সেই ছেলে টা বলে ওঠে…

— সংকোচ ফিল করবেন না। আমি অলরেডি বিবাহিত। কিন্তু করার কিছুই নেই রুলস আর রুলস। ফ্রেন্ড ভাবতে পারেন একদম ক্ষণিকের জন্য।

আইরাত বিনিময়ে মুচকি হাসে। আবার মিউজিকের তাল চেঞ্জ হয়ে গেলে আইরাত আবার ঘুরে যায়। আর এবার আইরাত যার কাছে যায় তার শুধু চোখ ই ঢাকা পুরো মুখ না। যার দরুন আইরাতের আর চিনতে বেশি একটা দেরি লাগে না। এই সেই কাল কে রিসোর্টে দেখা ছেলেটাই, তায়াফ। আইরাত বিরক্ত হয়। আবার চোখ ঘুরিয়ে আব্রাহাম কে খুঁজতে লাগে। কিন্তু সে নেই। তবে তায়াফের নজর আইরাতের দিকেই৷ আইরাত খেয়াল করে যে তায়াফের হাত টা আইরাতের দিকে এগিয়ে আসছে তবে তার আগেই আইরাত নাচের ছলে তার থেকে দূরে সরে আসে। তায়াফ সরু দৃষ্টিতে তাকায়।

তায়াফ;; দূরে চলে গেলে কাছেও আনতে পারি।

আইরাত;; এতো তাড়া কিসের! মনে রাখবেন গোলাপের সাথে কিন্তু কাটাও থাকে।

হুট করেই মিউজিকের থিম চেঞ্জ হয় আর আইরাত নিজেও হাওয়া হয়ে যায়। এবার ঘুরে গিয়ে আইরাত পরে এক ছোট বাচ্চা ছেলের সামনে। বাচ্চাটা কিউট প্রচুর। সাদা চুল সবগুলো, মুখটা দুধের মতো ফর্সা আর গালগুলো গাঢ় গোলাপি। পরণে কালো সুট। সে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আইরাতের দিকে। আইরাত বড়ো একটা হাসি দেয় বাচ্চা টাকে দেখে। সেও হেসে দেয়।

— Dance with me??

আইরাত;; Of course…

আইরাত ছেলে টার থেকে বেশ লম্বা। এখন নাঁঁচবে কি করে। ছেলেটা কনফিউজড হয়ে যায়। তার কনফিউজড মাখা মুখটা দেখে আইরাত ফিক করে এসে দেয়। আইরাত ছেলেটার হাত ধরে নেয়। কোন রকমে নেচে আইরাত কিছুটা নিচে ঝুকে যায়। তারপর ছেলেটার হাতটা ধরে তাকেই কয়েক বার ঘুরিয়ে দেয়। হঠাৎ মিউজিকের থিম আবার চেঞ্জ এবার সবাই আবার ঘুরে যায়। আর এখন হুট করেই আব্রাহাম এসে আইরাত কে নিজের দিকে টান দেয়। আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে। আইরাত তো আব্রাহামের ছোয়া পেয়েই বুঝে গেছে যে এই আব্রাহাম। আইরাত আর আব্রাহাম কে ডান্স কাপল হিসেবে চলে যেতে দেখে ওই ছোট ছেলেটা মন খারাপ করে। আব্রাহাম নিজেও হেসে দেয় ব্যাপার টা বুঝে।

আব্রাহাম;; Now she is mine..

আইরাত ছেলে টার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে…

আইরাত;; But still you are my favourite dance partner…

ছেলে টা হেসে দেয়। তারপর একটা ছোট মেয়ে আসলে সেও তার সাথে চলে যায়। আইরাত নাচতে নাচতেই আব্রাহাম কে জিজ্ঞেস করে…

আইরাত;; এই কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?

আব্রাহাম;; অন্য মেয়ে দের সাথে নাচতে।

আইরাত;; কি?

আব্রাহাম;; কাজ ছিলো।

আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম;; চলো এখন এখান থেকে।

আইরাত;; আরে না আমি এই গেইম টা জিতবোই জিতবো৷ আমি যেতে পারবো না।

আব্রাহাম;; আইরাত এটা শুধুমাত্রই একটা গেইম ছাড়া আর কিছুই না। চলো৷

আইরাত;; কিন্তু আমি জিতবো তাও আবার আপনার সাথে।

আব্রাহাম;; আইরাত খেলায় হার-জেত তো থাকেই তাই না।

আইরাত;; আমি হারবো না।

আব্রাহাম;; আমি কখনো হারতে শিখি নি আইরাত। তবে মাঝে মাঝে হারতে হয়। হোক তা ইচ্ছে করেই। কেননা না হারলে কখনো জেতার স্বাদ তুমি পাবে না।

আইরাত;; হুম।

আব্রাহাম;; কিন্তু আমি তো আমার আইরাত কে জিতে গেছি।

আইরাত;; হুম।

আব্রাহাম;; মুখটা গোমড়া করলে কিন্তু চুমু দিয়ে বসবো।

আইরাত;; শরম ছাড়া পোলা।

আব্রাহাম;; চলো (হেসে)

আব্রাহাম-আইরাত কে নিয়ে চলে যায় হলরুমের ওপরের ফ্লোরে। সেখানেও অনেকেই আছে। পুরো হোটেলেই পার্টি। তবে ভেতরে যাবার আগে আব্রাহাম আইরাত কে সব বুঝিয়ে দেয়। আইরাত কে সামনে দিয়ে যেতে বলে সে পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকবে বলে ঠিক করে। আর আইরাত যেনো ভেতরে গিয়ে একটু বেপরোয়া ভাব নিয়ে চলে এমন। টেবিল নং ১৭ তে গিয়ে বসে থাকতে বলে। তারপর আইরাত কে কি করতে হবে তা সে জানে। আইরাতের চুল ছোট ছোট ক্লিপ দিয়ে খোপা করা ছিলো সুন্দর করে। তা আব্রাহাম তার হাত দিয়ে খুলে দেয়। আইরাতের চুলগুলো পিঠে আর সামনেও বেশ ছড়িয়ে দেয়। আইরাতের কানে একটা ব্লুটুথ গুজে দেয় আব্রাহাম। নিজের ব্লুটুথের সাথে কানেক্ট করে নেয়। অর্থাৎ দুজনেই কানেই ব্লুটুথ যা একে অপরের সাথে যুক্ত করা। তবে তা আইরাতের চুলের ভাজে ঢাকা পরে গেছে। আব্রাহাম চলে যায় আর আইরাতও ভেতরে চলে যায়। আইরাতের ভেতরে যেতেই সবার নজর তার দিকে যায়। অনেক ছেলে বসে আছে এখানে যাদের পাশের টেবিল টাও ফাকা। তারা যেনো ভেবে রেখেছে যে আইরাত এখানেই বসবে। তা ভুল প্রমাণ করে দিতে আইরাত গিয়ে বসে ১৭ নং টেবিলে। গা এলিয়ে বসে। আইরাত ইচ্ছে করেই নিজের ব্যাগ থেকে একটা লিপস্টিক বের করে সবাই কে দেখিয়ে দেখিয়ে নিজের ঠোঁটে লিপস্টিক ঘষতে লাগে। নিজেকে খাপছাড়া বানাচ্ছে সে। তবে তা লিমিটে থেকে। আইরাত খেয়াল করে দেখে যে সে যেই টেবিলে বসে আছে সেখানের এক কোণায় লিখা “বুকড” অর্থাৎ টেবিল টা বুক করা।

আইরাত;; না জানি কার টেবিলে এসে বসলাম। (ফিসফিস করে)

কিছুসময় পর একটা ব্রাউন কালারের শার্ট-সুট পরিহিত একজন লোক আসে। সে আইরাত কে তার টেবিলে বসে থাকতে দেখে বেশ অবাক। এতোক্ষন পেছনের দিক থেকে আইরাত কে দেখলেও এবার যেনো আইরাতের সামনে আসে। আইরাত দেখে তাকে। তবে তার মাঝে কোন নড়চড় নেই। আইরাত একটা বেখেয়ালি ভাব নিয়ে হাই তুলে 🥱। এবার আর চুপ করে বসে থাকতে না পেরে ওপর পাশের লোকটা বলে ওঠে…

উল্লাস;; কে আপনি?

আইরাত;; যাহ বাবা আপনি তো দেখি চোখ থাকতেও কানা। দেখছেন না আমি মানুষ। আপনি কে?

উল্লাস;; উল্লাস শেখ আমি।

আইরাত;; ওহহ ভালো।

উল্লাস;; আপনি আমার টেবিলে বসে আছেন।

আইরাত;; কেনো টেবিল কি আপনার বাপের নামে লিখা নাকি!!

এটা শুনেই উল্লাসের পাশে থাকা একজন গার্ড কিছু বলতে যাবে কিন্তু উল্লাস তাকে থামিয়ে দেয়।

উল্লাস;; আপনি কার সামনে বসে আছেন খেয়াল আছে?

আইরাত;; খেয়াল থাকার প্রয়োজন মনে করি না আমি।

উল্লাস;; অনেক চালু মেয়ে আপনি।

আইরাত;; এছাড়াও আমার ধীর গতির জিনিস মোটেও পছন্দ না।

উল্লাস;; আমাকে দেখে যেখানে সবাই সালাম দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে সেখানে আপনি এই এটিটিউড নিয়ে আমার সাথে কথা বলছেন।

আইরাত টেবিলের ওপর নিজের হাত রেখে কিছুটা ঝুকে চোখজোড়া সরু করে বলে ওঠে…

আইরাত;; জনাব, খোঁজ নিয়ে দেখুন যেসব লোকগুলো আপনাকে স্বসম্মানের সাথে সালাম দেয়। ঠিক তারাই আপনার চলে যাওয়ার সাথে সাথেই আপনার পিঠ পিছে থুথু ফেলে।

আইরাত একদম সোজা হয়ে বসে। উল্লাস তো চটে যায়।

উল্লাস;; মনে হচ্ছে না আপনি বেশিই বকছেন একটু!

আইরাত;; হে ট্যাক এ চিল পিল। সত্য কথা সবসময় তেতোই হয়।

উল্লাস;; আর ইউ সিঙ্গেল?

আইরাত;; হ্যাঁ, কি করবো বলুন কাউকে আজ অব্দি খুঁজেই পেলাম না।

উল্লাস কে কিছু বলতে না দিয়েই আইরাত বলে।

আইরাত;; তবে ক্রাশ আছে। আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর ওপর।

আব্রাহামের নাম নিতেই উল্লাস তার হাতে পাশে থেকে একটা কাটা চামচ তুলে নেয়।

উল্লাস;; কোন কানেকশন আছে কি আপনার তার সাথে?

আইরাত;; হ্যাঁ আগামীতে একটা ডিল ফাইনাল করার কথা উনার সাথে এই যা।

উল্লাস;; গুড।

আইরাত;; হুমম।

উল্লাস;; আজ রাতে কি আমরা দেখা করতে পারি?

আইরাত;; অবশ্যই, কেনো না।

উল্লাস;; তো আপনি কত নং রু……

আইরাত;; রুম নাম্বার ০৯।

উল্লাস;; ৯?

আইরাত;; ইয়াহ।

উল্লাস;; ওকে।

আইরাত;; বায়।

এই বলেই আইরাত চলে আসে। সেই ফ্লোর থেকেই জলদি চলে আসে। আর বাইরে আসতেই বুক ভরে দম নেয়। কানের পিঠে চুল গুজে ব্লুটুথ চেপে ধরে কানের সাথে হ্যালো বলে।

আইরাত;; হ্যালো আব্রাহাম!

আব্রাহাম;; সামনে তাকাও।

আইরাত কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে সামনে তাকায় দেখে আব্রাহাম তার জন্যই অপেক্ষা করছে। আইরাত আব্রাহামের কাছে চলে যায়।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!

আইরাত;; হুমমম।

আব্রাহাম;; ইউ সুড ট্রাই ইন মুভি ইন্ডাস্ট্রি।

আইরাত;; কেনো?

আব্রাহাম;; তুমি এতো ভালো এক্টিং পারো তা জানা ছিলো না।

আইরাত;; হ ঘোড়ার আন্ডা। কিসের ভেতরে যে ছিলাম আল্লাহ জানে। তবে লোক টাকে কথায় কথায় নিচু দেখিয়ে বেশ মজা পাচ্ছিলাম। মন চাইছিলো আরো করি কিন্তু এসে পরলাম। আচ্ছা ও কে?

আব্রাহাম;; সব জানতে পারবে। সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে শুধু রাত অব্দি একটু ধৈর্য ধরো।

আইরাত;; সে আজ রাতে দেখা করতে বলেছে।

আব্রাহাম;; দেখা তো অবশ্যই হবে। তবে তা হয়তো উল্লাসের সাথে তার মৃত্যুর। যদি আমার সন্দেহ টা ঠিক বের হয় তাহলে কপালে মরণ লিখা আছে ওর।

আইরাত;; আপনার মাথায় কি খিচুড়ি পাকছে আসলে?

আব্রাহাম;; বললাম তো সবই বুঝে যাবে জাস্ট ওয়েট।

আইরাত আর আব্রাহাম দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করে। যেনো তাদের কেউ দেখে না ফেলে একসাথে। আব্রাহাম হাঁটতে হাঁটতে এসে আইরাত কে রুম নাম্বার ৯ দেখিয়ে দেয়। তারপর আবার তারা চলে যায়।





চলবে~~

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩১

আব্রাহাম-আইরাত এসে পরে। রুমে এসেই আইরাত গাউন হাত দিয়ে কিছুটা ওপরে তুলে বিছানার ওপর ধপ করে বসে পরে। চুলগুলো ওপরে বেধে নেয়। হাতের উল্টো পাশ দিয়ে কপাল টা মুছতে মুছতে বলে ওঠে…

আইরাত;; এত্তো গরম।

আব্রাহাম আইরাতের কিছুটা পেছনে বসে একহাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। আইরাতের গাউনের পেছনে অর্থাৎ বেকল্যাস জায়গা টুকু কে ছুইয়ে দিতে দিতে বলে…

আব্রাহাম;; ইট”স কলড ‘হটন্যাস’।

আইরাত;; ফ্রিজে পানি আছে। খাবেন?

আব্রাহাম;; মাথায় ঢালো তুমি।

আইরাত সোজা চিতপটাং হয়ে পরে যায় বিছানাতে। আব্রাহাম উঠে গিয়ে বেডের পাশে থাকা বড়ো থাই গ্লাস টা খুলে দেয়। সাই সাই করে ঠান্ডা বাতাস আসতে লাগে সেদিক দিয়ে। এখান থেকে রিসোর্টের সমুদ্রের ভিউ টা দারুন দেখতে লাগে।

আব্রাহাম;; উঠো বেবিগার্ল ফ্রেশ হয়ে নাও।

আইরাত;; হুম যাচ্ছি।

আব্রাহাম;; এসে দ্রুত রেডি হও।

আইরাত;; আবার কোথায় যেতে হবে?

আব্রাহাম;; উল্লাসের সাথে দেখা করতে হবে না!

আইরাত;; শালা প্রচুর ফ্লার্টি। আর আপনি বলছেন এই কথা?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ, ও এমনিতেই মরবে। আমার যা জানা দরকার তা যদি জেনে যাই তাহলেও মরবে আর না জানলেও মরবে।

আইরাত;; তা কেনো?

আব্রাহাম;; ফ্লার্ট করেছে তোমার সাথে তাই। জিন্দা ছাড়ার তো প্রশ্নই আসে না।

আইরাত উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। এসেই প্যান্ট পরে নেয়, আর ওপরে একটা টি-শার্ট পরে নেয়। তখন আব্রাহাম ফোন ঘাটতে ঘাটতে করিডর থেকে রুমে আসে।

আব্রাহাম;; রেডি?

আইরাত;; না।

আব্রাহাম;; কি হলো?

আইরাত;; এটা কি?

আব্রাহাম;; হুডি। পরে নাও প্লাস বড়ো সানগ্লাস পরে নাও।

আইরাত;; আমি এই হুডি পরবো না।

আব্রাহাম;; কেনো? পছন্দ হয় নি?

আইরাত;; আমি আপনার হুডি পরবো।

আব্রাহাম;; কি? (হেসে দিয়ে)

আইরাত;; আমি কিন্তু যাবো না।

আব্রাহাম;; যাও কাবার্ডে আমার সব হুডি আছে যেটা পছন্দ পরে নাও।

আইরাত গিয়ে মুখে আঙুল দিয়ে কিছু সময় ভাবতে লাগে। বেশ সময় ভাবার পর একটা ব্রাউনিশ সেডের হুডি বের করে পরে নেয়। হুডি আইরাতের একদম পা পর্যন্ত হয়েছে। পুরো ঢেকে গেছে। আব্রাহাম আইরাতের কাছে গিয়ে হুডির কলার ঠিক করে দিতে দিতে বলে।

আব্রাহাম;; পিচ্চি পিচ্চি লাগতাছে।

আইরাত;; আমি তো আপনার মতো এতো বডিবিল্ডার না।

আব্রাহাম হালকা হেসে দিয়ে আইরাতের একপাশের গালে হাত দিয়ে আরেক পাশে কানের নিচে মুখ ডুবিয়ে চুমু এঁকে দেয়।

আব্রাহাম;; শোন। তুমি এখান থেকে সোজা ৯ নাম্বার রুমে ঢুকে যাবে। কিন্তু কোথাও দাঁড়াবে না বুঝলে!

আইরাত;; না।

আব্রাহাম;; ওকে বুঝাচ্ছি।

আইরাত;; হুমমম।

আব্রাহাম;; আমার হুডিতে মানে তোমার হুডির বাটনে একটা ছোট ক্যামেরা থাকবে। যা বোঝার কোন উপায়ই নেই সেই ভাবেই আমি লাগিয়ে দিবো। আমার ফোনে আমি সবই দেখতে পারবো। তোমার ফোনের লোকেশন অনেক আগে থেকেই আমার ফোনের সাথে ট্রেক করা। তাই তুমি যেখানেই যাও না কেনো যেনে যাবো।

আইরাত;; ওহ আচ্ছা এর জন্যই আমি যেখানে যেখানে যেতাম আপনি তা জেনে যেতেন।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ আমার বউ।

আইরাত;; আর আমি জানলাম ই না।

আব্রাহাম;; এই শোন আমি এখান থেকে তোমার ওপর নজর রাখবো বুঝলে। তুমি এখান থেকে গিয়ে সোজা ৯ নাম্বার রুমে গিয়ে আবার পেছনের রাস্তা দিয়ে বের হয়ে পরবে। যেনো কেউই না টের পায় যে তুমি রুম থেকে বের হয়ে গেছো৷ সো বি কেয়ারফুল ওকে! আর চিন্তা নেই সেই রুমে কোন সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। বেবিগার্ল মনে রাখবে তোমার ওপর শুধু আমার না আরো একজনের নজর আছে। মানে তুমি শুধু এটা বোঝাবে যে তুমি ওই ৯ নাম্বার রুমেই আছো ব্যাস। বাকিটা আমার ওপর।

আইরাত;; হুমম হয়ে যাবে। তো আমি কি এখন এখান থেকেই যাবো?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ। তুমি অন্য দরজা দিয়ে যাও।

আইরাত;; আচ্ছা।

আব্রাহাম আইরাত কে পেছনের দরজা দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দেয়। আইরাতের পেছনে ছয় জন গার্ড কে কড়া নজর রাখতে বলে। তবে তা অগোচরে। আইরাত জানে। কোন রকমের কোন গন্ডগোলের আভাস পেলেই যেনো আইরাতের কাছে চলে যায়। আব্রাহাম নিজেও দ্রুত রেডি হয়ে নেয়। কালো জেকেট টা নিজের ওপর জড়িয়ে নিয়ে, রিভলবারে বুলেট”স সব লোড করে নিয়ে সে নিজেও দ্রুত বের হয়ে পরে। আর ওদিকে আইরাত তার মাথায় একটা বড়ো কালো টুপি পরেছে যার ফলে তার মুখের অর্ধেক অংশ ঢেকেই রয়েছে। বলা যায় আইরাত কে চেনাই যাচ্ছে না।আইরাত নয় বাম্বার রুমে গিয়ে ওপরে একবার তাকিয়ে দেখে নেয়। রুম নং দেখে রুমের ভেতরে চলে যায়। তবে একটা ব্যাপার আইরাত কে অবাক করে তা হলো রুমের বাইরেও কোন রকম কোন গার্ড নেয়। তবে লুকিয়ে থাকতেও পারে বলা যায় না কোথায় কি আছে। রুমের ভেতরে গিয়ে আইরাত আরো অবাক হয় কেননা রুমে শুধু বিশাল আকারের অস্ত্রসস্ত্র। তবে আইরাত সেগুলো কে ইগনোর করে এসে পরতে ধরে পেছনের দরজা দিয়ে। কিন্তু পেছনের দরজা তে যেতেই আইরাত থেমে যায়। উল্লাস দাঁড়িয়ে আছে পেছন দিক হয়ে, ফোনে কার সাথে যেনো চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কথা বলছে। আর আব্রাহাম তার ট্যাবে এসব কিছুই দেখছে। আইরাতের কানে যে ব্লুটুথ ছিলো তার মাধ্যমেই আব্রাহাম বলে…

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!

আইরাত;; কি করবো আমি? আপনি তো বলেছিলেন রুমে ঢুকে যেনো আবার সোজা বের হয়ে যাই কিন্তু এখানে তো এই খচ্চর ব্যাটা দাঁড়িয়ে আছে। উল্লাস সামনে। এখন?

আব্রাহাম;; আমি প্রায় এসে গেছি নয় নাম্বার রুমে। শুধু কয়েক কদমের অপেক্ষা।

আইরাত;; জলদি আসুন প্লিজ। তবে এখন আমি কি করবো!

আব্রাহাম;; উল্লাসের সাথে কথা বলো তাকে এটা ওটা বলে আটকিয়ে রাখো আমি যখন চলে আসতে বলবো তখন দ্রুত এসে পরবে।

আইরাত;; ওকে।

আইরাত উল্লাসের দিকে এগিয়ে যায়। একজন গার্ড আইরাত কে দেখে উল্লাসের কানে কানে বলে যায় কিছু একটা। উল্লাস তার চোখ থেকে গ্লাস খুলে ফেলে আইরাতের দিকে তাকায়। দেখে আইরাত সিড়ি বেয়ে নামছে। আসলে নয় নাম্বার রুমে হলরুম আছে, তার সামনে ছোট একটা বাগানের মতো আছে। সেখানেই উল্লাস দাঁড়িয়ে। কান থেকে ফোন নামিয়ে দেয় সে।

উল্লাস;; মিস. আইরাত!

আইরাত;; জ্বি।

উল্লাস;; ওয়েলকাম।

আইরাত;; আমি কে?

উল্লাস;; জ্বি?

আইরাত;; আমি এখানে কে?

উল্লাস;; আমার অতিথি বলা চলে।

আইরাত;; তাহলে একজন অতিথি কে যে খালি হাতে ওয়েলকাম করা যায় না সেই নূন্যতম ম্যানার টুকুও কি আপনার জানা নেই মিস্টার. উল্লাস শেখ!

উল্লাস আইরাতের কথায় ভরকে যায়।

উল্লাস;; আপনার সাথে কথায় পারা অনেক কঠিন।

আইরাত;; আই নো দ্যাট। এখন বলুন কেনো ডেকেছেন?

উল্লাস;; খুন করতে।

আইরাত;; আমাকে?

উল্লাস;; যদি বলি হ্যাঁ।

আইরাত;; আমি বলবো পারবেন না কখনোই।

উল্লাস;; কনফিডেন্স থাকা ভালো মিস. আইরাত তবে ওভার কনফিডেন্স না।

আইরাত;; এটা আপনার কাছে হয়ত ওভার কনফিডেন্স তবে আমার কাছে আমার বিশ্বাসের মাপকাঠি।

উল্লাস;; আই এম কিডিং। সে কোন এক নির্দয় পাশান ব্যাক্তিই হবে যে কিনা আপনার মতো একজন চোখ ধাধানো সুন্দরী কে খুন করতে চাইবে। এটা আমি করতে পারবো না। বরং আপনার হাতে আমি মরতে রাজি।

আইরাত;; এভাবে বলতে নেয় কে জানে কখন আল্লাহ মরণের দোয়া কবুল করে নেয়।

উল্লাস;; তা তো হায়াতের ব্যাপার। তবে আপনার মতো মেয়ে যে দিনে কতোজন কে নিজের রুপ দিয়ে ঘায়েল করেন তার খবর কি রাখেন?

আইরাত;; যে মেয়ে সুন্দরের অধিকারী সে মানুষের মন-আত্না জিতে, যে মেয়ে বুদ্ধিমতী সে জীবনের বাজি-খেলা জিতে আর‍ যে মেয়ে সৌন্দর্য-বুদ্ধি উভয়েরই অধিকারী সে পুরো দুনিয়াই জিতে যায়।

উল্লাস;; আপনি?

আইরাত হেসে দেয়।

আইরাত;; আমার মতে আমি এইসবের কিছুই না। তবে আমি আমার জীবনে একজন মানুষ কে জিতেছি যে আমার সব। আমার পুরো দুনিয়া। তাকে পেয়ে এখন আমার জীবনে আর কোন কিছুর কমতিই নেই।

আইরাতের মাথায়-চোখের সামনে বর্তমানে শুধুমাত্র আব্রাহামের মুখ টাই ভেসে উঠছে।

উল্লাস;; হুম বুঝলাম। তো কি খাবেন বলুন
চা/কফি/এলকোহল! কোনটা?

আইরাত;; আমি আ….

উল্লাস;; যদিও আপনার এলকোহল খাওয়ার কোন প্রয়োজনই নেই, আপনাকে দেখলে এমনিতেই নেশা লাগার মতো অনুভূতি কাজ করে।

আইরাত;; অন্যের জিনিসের ওপর নজর দেওয়া নেহাত বোকামি।

উল্লাস আইরাতের কথার মানে বুঝে না। আইরাত আরো এটা ওটা বলে উল্লাস কে থামিয়ে রাখে। কথার ভাজে রেখে দেয়। আইরাত খেয়াল করে দেখে আগে থেকে গার্ড বেশ কমে গেছে। তবে এখানে দুজন গার্ড দাঁড়িয়ে আছে।

আইরাত;; উল্লাস!

উল্লাস;; জ্বি! আপনি এতো নরম সুরে ডাকেন যে সাড়া না দিয়ে আর থাকাই যায় না।

আইরাত;; এর জন্যেই তুই একটা ম********। (মনে মনে)

আইরাত এক টেডি স্মাইল দিয়ে উল্লাসের দিকে তাকিয়ে নিজের মনে মনেই যে কত শত গালি দিয়েছে তা হিসেব ছাড়া।

আইরাত;; আপনার সাথে আমার কিছু প্রাইভেট কথা আছে। যদি আপনি আপনার গার্ডদের একটু ওদিকে মানে ওই পেছনের জায়গা তে চেপে যেতে বলতেন আরকি।

উল্লাস;; ওদের‍ যাওয়া টা কি জরুরি?

আইরাত;; আচ্ছা ওরা থাক তাহলে আমিই চলে যাই।

উল্লাস;; না থাক। এই তোরা সবাই দূরে যা এখান থেকে।

উল্লাসের বলাতে গার্ড গুলো অন্য পাশে চলে যায়৷
কিন্তু এখন আইরাত কি করবে ভেবে পায় না। কারণ মাথায় এখন কিছুই আসছে না পুরো ব্ল্যাংক হয়ে গেছে। রাগ লাগছে এখন আব্রাহামের ওপর, সে কেনো এখনো আসছে না তা দেখে। আইরাত নিজের দুহাত মুচড়াচ্ছে বারবার। কয়েক সেকেন্ড পরই আব্রাহাম আইরাতের কানে থাকা ব্লুটুথে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল আমি এসেছি তুমি জলদি এখান থেকে কোন এক বাহানা দিয়ে দূরে যাও।

আইরাত এবার ভুলে কিছুটা বোকামি করে বসে। সে জোরেই বলে ওঠে…

আইরাত;; আপনি এখন কোথায় আছেন?

নিজে বলে নিজেই ভরকে যায়। এটা সে কি করলো! উল্লাস কপাল কুচকে আইরাতের দিকে তাকায়৷

আইরাত;; না বলছিলাম যে আপনি কোথা থেকে এসেছেন? মানে আপনার হোমটাউন কোথায়?

উল্লাস;; বাংলাদেশী আমি।

আইরাত;; ওহ আচ্ছা আচ্ছা।

আইরাত এখন কি বাহানা দিবে তাই ভেবে পায় না।

আইরাত;; উল্লাস!

উল্লাস;; জ্বি?

আইরাত;; আসলে আপনাকে না অনেক হ্যান্ডসাম দেখতে।

উল্লাস;; থ্যাংক্স।

আইরাত;; শালারপুত তোরে দেখলে বমি আসে আমার কুত্তা। (মনে মনে)

আইরাত;; বলছিলাম কি যে এখন আমি যাই।

উল্লাস;; আরে আসলেনই মাত্র কিছু সময়ই তো হলো!

আইরাত;; আসলে কি বলবো বলুন। সত্যি বলতে এতো হ্যান্ডসাম একটা মানুষের সাথে থাকলে না জানি কখন প্রেমে পরে যাই। ভয় হয় তো৷ তাই চলে যাই।

উল্লাস;; হ্যাঁ আচ্ছা।

আইরাত;; হাহ যে না আমার চেহারা নাম তার রাখছে পেয়ারা। রাস্তার কুত্তাও তোর দিকে তাকাবো না আবার প্রেম। এহহহহহহ ড্রেনের পোকা। আইতাছে তোরে বাঁশ দিতে।

উল্লাস;; চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি। হেল্প করি।

আইরাত;; হেল্প টুকু বাঁচিয়ে রাখুন। না জানি কখন আপনার নিজেরই দরকার পরে।

উল্লাস;; জ্বি না আমি আশা রাখছি সে রকম বিপদে পরবো না।

আইরাত;; আশা হয়তো আশাই রইলো আপনার।
যাই হোক আমি আসি।

উল্লাস;; হুমমম।

আইরাত;; বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে।

উল্লাস;; হুমম (কপাল কুচকে)

আইরাত নিজের চোখে গ্লাস টা পরে সেখান থেকে এসে পরে। তবে এবার নয় নাম্বার রুমের বাইরে আসতেই আইরাত কিছুটা চমকে যায়। কেননা বাইরে এখন দরজার পাশে এক না দুই না বেশ কয়েক জন গার্ড দাঁড়িয়ে আছে৷ সবার হাতেই গান।

গার্ড;; ম্যাম ভয় পাবেন না। আমরা আব্রাহাম স্যারের লোক তবে গেটাপ চেঞ্জ করে এসেছি। স্যার ই আমাদের এখানে পাঠিয়েছেন স্পেশালি আপনার সেইফটির জন্য।

আইরাত;; গার্ড পাঠিয়েছে তা জানি তবে তা যে আপনারা তা জানতাম না।

গার্ড;; ম্যাম আপনাকে স্যার উনার রুমে চলে যেতে বলেছেন দ্রুত।

আইরাত;; জ্বি চলুন।

আইরাত মাঝখানে তার পেছনে তিনজন গার্ড আর সামনে তিনজন গার্ড। আইরাত রুমে পৌছে গেলে গার্ড গুলো আবার নয় নাম্বার রুমের পাশে চলে যায়। আর ওদিকে উল্লাস তার গলা ছেড়ে দিয়ে চিল্লিয়ে তার গার্ড দের ডাকছে তবে কেউ নেই। একটা মাছি অব্দি নেই। উল্লাস আবার‍ যেই না গার্ড দের ডাক দিতে যাবে তখনই আড়াল থেকে আব্রাহাম বের হয়ে আসে সিটি বাজাতে বাজাতে। নির্জন কোন আওয়াজ ছাড়া স্থানে সিটির আওয়াজ যেনো স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। আব্রাহাম কে দেখেই উল্লাসের কপালে গাঢ় ভাজ পরে। সে এই সময়ে এখন এখানে আব্রাহাম কে মোটেও আশা করে নি।

উল্লাস;; আপনি?

আব্রাহাম;; এসে গেলাম।

উল্লাস;; গার্ড”স, গার্ড”স!

আব্রাহাম;; সবগুলো কে চিতপটাং করে এসেছি।

উল্লাস রেগে আব্রাহামের দিকে তাকায়।

আব্রাহাম;; আরে আরে রেগে যাচ্ছিস কেনো? মারি নি কাউকেই। শুধু গার্ড গুলো একসাথে যেখানে ছিলো সেখানে ক্লোরফোর্ম গ্যাস লিক করে দিয়েছি। ধোঁয়ার মতো সাদা গ্যাস সারা টা জুড়ে ছড়িয়ে পরেছে। যার দরুন সবাই কাশতে কাশতে মাটিতে লুটিয়ে পরেছে। চিন্তা নেই ২-৩ ঘন্টার মাঝেই জ্ঞান এসে পরবে।

উল্লাস;; কি চাই কি আপনার?

আব্রাহাম;; কোহিনূর।

উল্লাস;; আ….

আব্রাহাম;; দেখ আমি অযথা ঝামেলা চাচ্ছি না। সোজা সাপটা বলে দে যে কোহিনূর এখন আছে কোথায়!?

উল্লাস ফিক করে হেসে দেয়৷

উল্লাস;; আপনার কি মনে হয় যে এই কোহিনূর যদি আমার কাছেই থেকে থাকতো তাহলে এখনো আমি এখানে বসে আছি। কবেই এখান থেকে উড়াল দিতাম।

আব্রাহাম;; সেটুকু আমারও জানা আছে। যখন এখানে আসি গার্ড দের দিয়ে সব খবর নেই৷ তাদের মাঝে তোর নাম উঠে আসে। তোর ছবিও হাতে পাই। আর দেখ না এই হোটেলে তোকেও পেয়ে যাই। আর আমি জানি যে তোর মতো গাধা রুপি চালাকের কাছে কোহিনূর থাকবে না তবে তা কোথায় বা কার কাছে আছে তা তো জানিসই সো এবার মুখ খোল।

উল্লাস;; আর যদি না খুলি তো!

আব্রাহাম;; আজই তোর শেষ দিন।

উল্লাস তার পাশের টেবিলে থাকা একটা ভারি ফ্লাওয়ার ভ্যাস তুলে আব্রাহামের দিকে ছুড়ে মারে।
তবে সে সরে যায়। উল্লাসের আর কিছু বলা বা করার আগেই আব্রাহাম তার বুক বরাবর দেয় এক লাথি বসিয়ে৷ এতে উল্লাস চটকে গিয়ে ধিরিম করে পরে যায়। সে উঠে দাঁড়াতো তবে তার আগেই আব্রাহাম তার বাম পা দিয়ে উল্লাসের গলাতে চাপ দিয়ে ধরে। তার নাক দিয়ে ব্লাড বের হয়ে পরে।

আব্রাহাম;; এখনো সময় আছে বলে দে।

উল্লাস;; সত্যি বলছি কোহিনূর তো আমার কাছে নেই ই তবে কার কাছে আছে ঠিক তাও জানি না। তব ত তবেহ, আতিক রহমান নামে একজন আছে সে হয়তো জানে।

আব্রাহাম অবাক।

আব্রাহাম;; এই আতিকের সাথেও তোদের কানেকশন আছে?

উল্লাস;; হ্যাঁ আছে শুধু কিছুদিনের জন্য।

আব্রাহাম;; এই আতিকের কাছে তো কোহিনূরের মতো জিনিস থাকার প্রশ্নই আসে না।

উল্লাস;; নেই তবে সে হয়তো আসল ঠিকানা জানে যে কোহিনূর কোথায় আছে।

আব্রাহাম তার পা দিয়ে উল্লাসের গলায় আরো জোরে চেপে ধরে। উল্লাসের তো দম যায় যায় অবস্থা। সে তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে…

উল্লাস;; এই আ আ আত আতিক ম মনে হয় এখান এ এখানেই আমেরিকাতেই রয়েছে।

আব্রাহাম;; কবে আর কাদের সাথে এসেছে?

উল্লাস;; গতকাল রাতেই এসেছে। আর তারা একাই এসেছে৷ হয়তো আতিক আর সাথে তার কিছু লোকজন। শেষ সব বলে দিয়েছি আমি আর কিছুই জানি না। এবার, এবার আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ।

আব্রাহাম;; আইরাত!

উল্লাস কিছু না বুঝতে পেরে তাকায়। আব্রাহাম নিজের জেকেট থেকে রিভলবার টা বের করে চেক করতে করতে বলে..

আব্রাহাম;; ওই মেয়ে কে আমি ভালোবাসি৷ ওই মেয়ে আমার। (গান দিয়ে নিজের বুকে দেখিয়ে)

উল্লাস;; তা তার ম মানে…!

আব্রাহাম;; ওকে আমিই পাঠিয়েছিলাম। সন্ধ্যায় তোর সাথে ওর ১৭ নং টেবিলে দেখা করা, এমনকি এখনো দেখা করতে আসা সবই আমার বানানো প্ল্যান তোকে ফাসানোর জন্য। আর দেখ না তুই ফেসেও গিয়েছিস৷ আইরাত আমার বিয়ে করা বউ।

উল্লাস চরম অবাক। সে কোন ভাবেই বুঝতে পারে নি তাদের এই চালকে।

আব্রাহাম;; জানিস তো একটা কথা মানতেই হবে যে একটা মেয়ে একটা ছেলেকে নিজের সর্বোচ্চ ভালোবাসা দিয়ে যেমন সঠিক পথে আনতে পারে, যেমন জীবন সুধরিয়ে দিতে পারে ঠিক তেমনই ওই একটা মেয়েই একটা ছেলে কে চরমভাবে বরবাদও করে দিতে পারে। প্রমাণ নিজেকে দিয়ে দেখ। আইরাত তোকে ফাসিয়েছে। দুটো মিষ্টি সুরে কথা কি বললো তুই তো ভেসেই গেলি। মেয়ে মানুষ ভয়ংকর হয়। মৃত্যু পর্যন্ত টেনে এনে ছেড়ে দিবে। যা তোকেও দিয়েছে। আইরাতের সাথে ক্যামেরা ছিলো যার দ্বারা আমি খুব সহজেই তোর কাছে পৌঁছে গেছি। আমি চাইলে অনেক আগেও তোর কাছে এসে পরতে পারতাম সোজা সামনে এসে তোকে খুন করে রেখে যেতে পারতাম তবে তা করি নি কেনো জানিস! কারণ মানুষের দূর্বল পয়েন্টে আঘাত করে মারার মজাই আলাদা। অনেক ইজি হয়। আমি তোকে সত্যি জানে মারতাম না। একদমই না। কিন্তু এখন মেরেই দম নিবো। কেনো? কারণ আমার আইরাত, তুই আমার আইরাতের দিকে নজর দিয়েছিস। এখন ওপরে গিয়ে ফ্লার্ট করিস।

উল্লাস আর একটা টু শব্দও করতে পারেনা। আব্রাহাম ধাই ধাই করে সব গুলো বুলেট তার বুকে শুট করে দেয়। বুকটা যেনো ঝাঝড়া হয়ে যায় মূহুর্তেই। আব্রাহাম তার রিভলবার টা উল্লাসের লাশের পাশেই ছুড়ে ফেলে দিয়ে এসে পরে। বাইরে এসে গার্ড দের বলে রাতের মাঝেই উল্লাসের লাশের কিছু একটা ব্যাবস্থা করে দিতে। আর পুলিশ কেস হলে তা আব্রাহাম নিজেই হ্যান্ডেল করে নিতে পারবে।


তবে ওদিকে আইরাত এলোমেলো হয়ে শুয়ে-বসে আছে। আব্রাহামের ওই হুডি ফ্লোরে পরে আছে। জামা চেঞ্জ করে একটা হাটু অব্দি থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর শার্ট পরে বসে আছে। সামনে এতো বড়ো একটা কেক। চাকু দিয়ে কাটছে আর খাচ্ছে। অর্ডার করেছিলো সার্ভেন্ট এসে তা দিয়ে গিয়েছে। তারপর আবার সার্ভেন্ট আসে তার কাছ থেকে আইরাত কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে নেয়। খেতেই থাকে। তার ১৫-২০ মিনিট পর আব্রাহাম আসে। রুমের ভেতরে লুকিং ক্যামেরা তে আব্রাহাম কে দেখে বিছানা থেকে এক লাফ দিয়ে নেমে পরে আইরাত। দরজা খুলে দেয়। আর আব্রাহাম আইরাতের আপাদমস্তক দেখে নেয়। ঠোঁটের পাশে এত্তোগুলো চকোলেট সব লেগে আছে। তার ওপর পাতলা একটা শার্ট আর হাফ প্যান্ট পরে আছে। আব্রাহাম ঢোক গিলে তাকে দেখে। আব্রাহামের এখন নিজেরই কেমন নেশা নেশা লাগছে আইরাত কে দেখে। যাই হোক সে দ্রুত রুমের ভেতরে এসে পরে। নিজের ওপর থেকে জেকেট টা খুলে সোফার ওপরে রেখে দেয়।

আব্রাহাম;; এটা কি করে রেখেছো?

আইরাত কিছু না বলেই কয়েকবার হিচকি তুলে। আব্রাহাম কিছু বলবে তার আগেই আইরাত সোজা আব্রাহামের কাছে গিয়ে তার গলা ধরে ঝুলে পরে৷ আব্রাহাম তার কোমড় ধরে ফেলে।

আব্রাহাম;; আইরাত!!

আইরাত আবার হিচকি তুলে জোরে।

আইরাত;; এই আপনি আসতে এতো দেরি করলেন কেনো?

আব্রাহাম;; এই মেয়ে দেখি৷

আব্রাহাম আইরাতের গালে নিজের দুহাত রেখে তার মুখটা আইরাতের মুখের কাছে আনে বেশ।

আব্রাহাম;; এই তুমি ড্রিংক করেছো?

আইরাত;; না তো কখন করলাম!

আব্রাহাম;; তা তো তুমিই জানো।

আব্রাহাম তাকিয়ে দেখে একটা ফুড ট্রে তে একটা আধো খাওয়া চকোলেট খেক আছে আর তার পাশেই একটা কাচের বোতল।

আব্রাহাম;; এগুলো এখানে কেনো?

আইরাত;; আমার না খুব খুদা লেগেছিলো। আপনি তো এখানে নেই নয়তো আপনাকেই কামড় বসিয়ে দিতাম। হালুউউউউউউউউউউউউউউউম। এর জন্য খাবার অর্ডার করেছি৷

আব্রাহাম;; আরে বসো দেখি এখানে৷

আব্রাহাম আইরাত কে বসিয়ে দেয়। তারপর গিয়ে সব খাবার চেক করে। কেক ঠিক থাকলেও ড্রিংক টা এলকোহল জাতীয়। আসলে বোতলে লিখা অরেঞ্জ জুস তবে এতে বেশ এলকোহল মেশানো আছে। তাই আইরাত না বুঝেই খেয়ে নিয়েছে। আব্রাহাম এক হাত তার কোমড়ে দিয়ে আরেক হাত দিয়ে তার কপাল চেপে ধরে।

আইরাত;; এই জামাই কাছে আসো। (আঙুল দিয়ে আব্রাহাম কে কাছে ডেকে)

আব্রাহাম;; ইয়া খোদা কই তুমি!

যদি এক গ্লাসের মতো ড্রিংক টুকুও আইরাত খেতো তা ঠিক ছিলো কিন্তু বোতল শেষ করে দিয়েছে পুরো। মাথা তো ধরবেই৷ আব্রাহাম আর কি করবে গিয়ে আইরাতের পাশে বসে। আইরাত সাইড থেকে আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে কিন্তু আইরাত আব্রাহাম কে সম্পূর্ণ জড়িয়ে ধরতে পারছে না সাইডে থেকে। কোন ভাবেই আইরাতের দুহাত মিলছে না। আব্রাহাম হেসে দেয়।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল ছেড়ে দাও পারবে না।

আইরাত;; আম্মু থাকলে মানে শাশুড়ী আম্মু থাকলে আমি জিজ্ঞেস করতাম যে আম্মু কি মানে কি খেয়ে আপনার ছেলে কে পেটে রেখেছিলেন!!

আব্রাহাম;; হয়েছে তোমার আজগুবি কথা বলা৷ এবার দেখি এদিকে এসো।

আব্রাহাম ওয়েট টিস্যু পেপার এনে আইরাতের সামনে বসে। মুখ আলতো ভাবে মুছে দিতে থাকে। আব্রাহাম উঠে চলে যেতে ধরবে তখন আইরাত আব্রাহামের হাত ধরে আটকিয়ে দেয়। আব্রাহাম দাঁড়িয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। আইরাত মাথা নিচু থেকে হঠাৎ মাথা তুলে দাঁড়ায়। আইরাতের আঁখিজোড়া দেখে আব্রাহামের কেমন বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। কেননা আইরাতের চোখে অশ্রুবিন্দু টলমল করছে। সে আব্রাহামের দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে থাকে।

আইরাত;; আ”ম সরি আব্রাহাম।

আব্রাহাম এক হাটু ভাজ করে আইরাতের সামনে বসে।

আব্রাহাম;; কি হয়েছে জানপাখি?

আইরাত;; আমি আপনাকে অনেক, অনেক হার্ট করেছি তাই না!

আব্রাহাম;; একদম না।

আইরাত;; মিথ্যে বলতে হবে না জানি আমি।

আব্রাহাম; তুমি খেয়ে নিয়েছো উল্টা-পাল্টা তাই এখন যা তা বকছো জান। চলো উঠো রাতও অনেক রয়েছে ঘুমাবে চলো।

আইরাত;; আমার কথা আছে আপনার সাথে অনেক।

আব্রাহাম;; আচ্ছা বলো। সারারাত শুনবো আমি।

আইরাত;; আব্রাহাম আমি না, আমি না আপনাকে অনেক ভালোবাসি। অনেক বেশিই।

আব্রাহাম শুধু এক নজরে আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে ভাবে নি যে আইরাত তাকে এখন এই কথা বলবে।

আইরাত;; জানি না কখন আর কীভাবে বাসলাম৷ আমি ভাবি নি কখনো যে আমি নিজেই আপনাকে এইসব বলবো। কিন্তু বলে দিলাম। জানেন আমার খুব রাগ হয় কেউ আপনার দিকে তাকালে। আপনার ব্যাপারে কথা বললে, আপনার ওপরে ক্রাশ খেয়েছে হাবিজাবি বললে। আমি না এককাজ করবো আপনার সামনে একটা কাগজে লিখে দিবো যে ‘আইরাতের জামাইজান’ তাহলে কেউ আর নজর দিবে না।

আব্রাহাম;; হুমম।

আব্রাহাম মুখ চেপে হাসে।

আইরাত;; এরপর থেকে যদি দেখেছি যে কোন মাইয়া আপনার দিকে তাকাচ্ছে তাহলে ওর চুল টেনে টাক্কু করে দিবো আমি বলে দিলাম৷

আব্রাহাম;; আচ্ছা, আর কেউ যদি তোমার দিকে তাকায় তো?

আইরাত;; তার সাহসই হবে না। আপনি তো মেরেই দিবেন তাকে। যেভাবে উল্লাস কে মারলেন।

আব্রাহাম;; তুমি?

আইরাত;; আমি দেখেছি। রুমে এসে দেখি আরেকটা ফোন সেটা অন করেই দেখি আমার ক্যামারার সাথে সেট করা৷

আব্রাহাম;; ভয় লাগে নি?

আইরাত;; নাহ।

আব্রাহাম;; আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

আইরাত;; আমিও যাবো আপনার সাথে।

আব্রাহাম;; তুমি গিয়ে ঘুমাও বেবিগার্ল, আমি আসছি।

আইরাত;; আমাকে সাথে না নিলে আমি আপনাকে যেতেই দিবো না।

আব্রাহাম;; চুপ বসো এখানে।

আইরাত কে এক ধমক দিয়ে বসিয়ে আব্রাহাম দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আসে। এসে শার্ট পরতে যবে তার আগেই আইরাত শার্ট টেনে ধরে।

আব্রাহাম;; শার্ট দাও।

আইরাত;; আব্রাহাম!

আব্রাহাম;; বলো।

আইরাত;; আপনি কি জানেন!

আব্রাহাম;; কি?

আইরাত;; আপনাকে যে উন্মুক্ত ভেজা শরীরে কি পরিমাণ হট লাগে!

আব্রাহাম;; 🤦‍♂️

আইরাত;; 😁

আব্রাহাম;; বুঝেছি এভাবে হবে না।

আব্রাহাম আইরাত কে এক সময় কাতুকুতু দেয় আইরাত খিলখিল করে হেসে দিয়ে আব্রাহামের শার্ট টা ছেড়ে দেয়। আব্রাহাম রেডি হয়ে এসে কোন কথা না বলেই আইরাত কে পাজাকোলে তুলে নেয়৷ বেডে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়। আইরাত কে নিজের বাহুডরে নিয়ে শুয়ে পরে। সে আব্রাহামের বুকে নিজের মাথা গুজে দেয়।

আব্রাহাম;; ঘুমাও বেবিগার্ল, কাল সকালে অনেক ইম্পর্ট্যান্ট কাজ বাকি আছে তোমাকে নিয়েই।

আইরাত;; কি কাজ?

আব্রাহাম;; তা কালই দেখবে।

আইরাত;; শুনুন না।

আব্রাহাম;; হুমম।

আইরাত;; ‘আই লাভ ইউ জামাইজান’।

আব্রাহাম আইরাত কে নিজের আরো কাছে এনে পরে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। তার এক হাত দিয়ে আইরাতের কোমড়ে ধরে। আরেক হাত আইরাতের মাথার পেছনে খোলা চুলে ডুবিয়ে দেয়। আইরাত আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরে তার বুকেই, আব্রাহাম আইরাতের মাথায়-কপালে চুমু দিয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; ‘আই লাভ ইউ টু বেবিগার্ল’।





চলবে