নেশাক্ত ভালোবাসা ২ পর্ব-৩২+৩৩

0
1579

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩২

পরেরদিন সকালে আইরাতের ঘুম ভেঙে যায় বেশ চিল্লাপাল্লার আওয়াজে। চোখ-মুখ কুচকে উঠে বসে পরে। রুমের আশে পাশে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম নেই। তারপরেই আরো বেশ কিছু শোরগোলের আওয়াজ কানে এসে বাজতেই আইরাত তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নেমে পরে। তবে মাথাটা কেমন যেনো একটু চক্কর দিয়ে ওঠে। করিডরে গিয়ে কাচের রেলিং এ হাত দিয়ে নিচের দিকে কিছুটা উঁকি দিতেই দেখে হোটেলের একদম নিচে বেশ অনেক মানুষ একসাথে জড়ো হয়ে আছে। দেখে তো মনে হয় মিডিয়ার লোকজন। আইরাত রুমের ভেতরে এসে পরে। তখনই আব্রাহাম আসে।

আব্রাহাম;; গুড মর্নিং বেবিগার্ল।

আইরাত;; কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?

আব্রাহাম;; এইতো এখানেই। তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।

আইরাত;; আচ্ছা নিচে এতো লোকজন কেনো?

আব্রাহাম;; হোটেলে লাশ পাওয়া গেছে তাই।

আইরাত;; উল্লাসের লাশ?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ।

আইরাত;; কিন্তু তাহলে তো…

আব্রাহাম;; আরে প্যারা নাই চিল। ওহ হ্যাঁ তার আগে তুমি এটা খাও।

আইরাত;; লেবুর শরবত?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ। এটা হ্যাংওভার সারাতে ভালো কাজ করে।

আইরাত;; আমি আবার কখন কি খেলাম কাল তো….

আব্রাহাম;; ম্যাডাম আপনি কাল যে অরেঞ্জ জুস নামক তরল পদার্থ টুকু খেয়েছিলেন তাতেও এলকোহল মিক্স ছিলো।

আইরাত;; ওহ নো।

আব্রাহাম;; আচ্ছা এবার তুমি ফ্রেশ হতে যাও।

আইরাত আস্তে আস্তে লেবুর শরবত টুকু খেয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। আসলেই মাথা টা এবার বেশ পাতলা লাগছে। আর ওদিকে আব্রাহাম আবার বাইরে বের হয়। রুম পেছনের দিক থেকে লক করে গেছে। সে হোটেলের হলরুমে চলে যায়। অর্থাৎ যেখানে পার্টি এরেঞ্জ করা হয়েছিলো। আব্রাহাম কে হলরুমে আসতে দেখে বাইরের মিডিয়ার লোকজন যেনো আরো ঠেলে ভেতরে আসতে চাইছে। কিন্তু গার্ড গুলো সব থামিয়ে রেখেছে। তখন আরেকজন গার্ড গিয়ে আব্রাহামের কাছে দাঁড়ায়।

আব্রাহাম;; কি এইসব! হ্যাঁ মিডিয়ার লোকজন সবাই এসেছে। আসারই কথা তবে এতো ঝামেলা ক্রিয়েট কেনো করছে?

গার্ড;; স্যার আসলে গতকাল রাতের লাশকে নিয়ে গিয়ে ব্রিজের ওপর থেকে নিচে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে এসেছি।

আব্রাহাম;; তাহলে এরা এখানে এতো ভীড় কেনো করছে? লাশ তো শেষ।

গার্ড;; স্যার এরা আসলে আপনার সাথে দেখা করতে চায়।

আব্রাহাম;; ফর হুয়াট?

গার্ড;; স্যার আপনি এসেছেন আপনি। আপনার সাথে যে কেউ দেখা করার জন্য পাগল। এখানে আর কি বা বলি।

আব্রাহাম;; এতো আজাইরা সময় নেই আমার কাছে। আরেকটা কথা এখানে উল্লাসের অনেক চেনাজানা মানুষ আছে বুঝলে। তারা উল্লাস কে না পেয়ে হয়তো সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিবে। যাই হয়ে যাক আমি বেশি কিছু ঝামেলা চাই না। কেউ বেশি বারাবারি করলে সোজা মেরে ফেলো৷

গার্ড হালকা ভাবে মাথা নাড়ায়। আর আব্রাহাম আরেক বার ভীড়ের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চোখে গ্লাস পরে এসে পরে।

দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে আইরাত খানিক পেছন ঘুরে তাকায়। তারপর আবার নিজের চুল মুছাতে মনোযোগ দেয়। আব্রাহামও এসে দেখে আইরাত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের চুল মুছছে। আব্রাহাম আস্তে করে এগিয়ে গিয়ে আইরাতের হাত থেকে টাওয়াল টা নিয়ে নেয়। তারপর নিজেই তার চুলগুলো মুছে দিতে লাগে।

আইরাত;; আব্রাহাম আমার চুল কি বেশি বড়ো?

আব্রাহাম;; না ঠিকই আছে। না বড়ো না ছোট।

আইরাত;; আমি একটু চুল কাটি?

আব্রাহাম;; না

আইরাত;; বেশি না একটুউউউউউউউ!

আব্রাহাম;; না বলেছি। (চোখ গরম করে)

আইরাত;; আচ্ছা।

আব্রাহাম;; চলো বাইরে যাই।

আইরাত;; কেনো?

আব্রাহাম;; বাইরে রিসোর্টে গিয়ে খাবো।

আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম আইরাত কে সাথে করে নিয়ে চলে যায়। রিসোর্টে গিয়ে সমুদ্রের একদম কাছে একটা টেবিলে বসে পরে৷ এত্তোগুলো খাবার তাদের সামনে রেখে দেওয়া হয় তবে সেগুলো তে নজন না দিয়ে আইরাত একমনে তাকিয়ে আছে সমুদ্রের স্রোতে ভেসে আসা প্রচুর পরিমাণে ঝিনুকের দিকে। সেগুলোর ওপরে রোদের কিরণ পরে চিকচিক করছে। আব্রাহাম গ্লাসে জুস ঢালতে ঢালতে আইরাতের নজর অনুসরণ করে সেদিকে তাকায়।

আব্রাহাম;; সমুদ্রের পানিতে যাবে?

আইরাত;; ঝিনুক গুলো কি সুন্দর।

আব্রাহাম;; হুমম।

আইরাত;; আমি যাবো।

আব্রাহাম;; আগে খেয়ে নাও।

এখন না খেলে তো আব্রাহাম তাকে যেতে দিবেই না উল্টো আরো রাগারাগি করবে তাই আইরাত হালকা হলেও কিছুটা খেয়ে নেয়। তারপর নিজে একাই চলে যায়। প্যান্ট পরে ছিলো আইরাত। তা বেশটুকু গুটিয়ে নেয়। তারপরেই সোজা চলে যায় পানিয়ে। তার খুশি দেখে কে। ইচ্ছে মতো লাফাচ্ছে। আর হাতে ছোট ছোট ঝিনুক কুড়াচ্ছে। আব্রাহাম টেবিলে বসে থেকেই আইরাতের এইসব বাচ্চামো দেখছে। বেশ সময় সেখানে থেকে তারপর এসে পরে।

আইরাত;; এখন আমরা কোথায় যাবো?

আব্রাহাম;; এখন আমরা শুট করতে যাবো।

আইরাত;; কি? কাকে?

আব্রাহাম;; দেখি কাকে ধরে নিয়ে শুট করে দেওয়া যায়।

আইরাত;; মজা করবেন না একদম।

আব্রাহাম;; চলো তুমি।

আইরাত এসে ড্রেস চেঞ্জ করে নেয় কেননা পানিতে লাফিয়ে লাফিয়ে আর বিশাল আকারের এক একটা ঢেউ এসে কাপড় পুরো ভিজিয়ে দিয়েছে৷ চেঞ্জ করে এসে দেখে আব্রাহাম বসে বসে কতোগুলো রিভলবারে বুলেট লোড করছে৷ আইরাত কপাল কুচকায়।

আইরাত;; আপনি কি আসলেই শুট করবেন?

আব্রাহাম;; আমি না তুমি করবে।

আইরাত;; কিন্তু কেনো?

আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে লিফটে উঠে পরে। তারপর অন্য আরেকটা ফ্লোরে নিয়ে এসে পরে।

আইরাত;; এটা কতো নাম্বার ফ্লোর?

আব্রাহাম;; ১৯ নাম্বার।

আইরাত;; ওহ।

তখন একজন লোক এসে আব্রাহামের সাথে কথা বলতে লাগে। আব্রাহাম একজন গার্ড কে আইরাত কে নিয়ে যেতে বলে। আইরাত গার্ডের সাথে একটা বড়ো সড়ো রুমে চলে যায়। এখানেও গার্ড রা রয়েছে। সামনে সারিবদ্ধ ভাবে বেশ কিছু বুলেট বোর্ড আছে। যেগুলো তে আসলে শুট প্রেক্টিস করা হয়। আব্রাহাম কয়েক মিনিট পর এসে আইরাতের চোখে একটা সেইফটি গ্লাস পরিয়ে দেয় সাথে কানে একটা সাউন্ড প্রুফ হ্যাডফোন। আসলে রুমটা একদমই নীরব-শুনশান। ফলে আস্তে কথা বললেও যেনো তা বেশ জোরে শোনা যায় আর রুমের চারিদিকের দেওয়াল এসে বারি খায়৷ রিভলবারের আওয়াজ সাধারণত বেশ জোরেসোরেই হয়৷ হ্যাঁ তবে তা যদি সাইলেন্সার হয় সেক্ষেত্রে ভিন্নতা। কানে এসে যেনো তীব্র গুলির আওয়াজ টা না লাগে তাই সাউন্ড প্রুভ হ্যাডফোন টা পরা।

আইরাত;; আপনি এগুলো পরাচ্ছেন কেনো?

আব্রাহাম;; শুট করা শিখবে তুমি।

আইরাত;; আমি শিখে কি করবো?

আব্রাহাম;; আরে আমার বউ তুমি। জামাই-বউ সমান সমান থাকতে হবে না।

আইরাত;; তাই বলে এটা….

আব্রাহাম;; লিসেন তেমন কোন কথা না আসলে সেল্ফ ডিফেন্স। বলেছি না লাইফে সবকিছুই ট্রাই করা বা তার এক্সপেরিয়েন্স থাকা ভালো।

আইরাত;; ভালোই হলো শিখিয়ে দিন তাহলে প্রথমে আমি আমার ফুপি কে মেরে দিবো। ঢিচকেওওওও।

আইরাতের কথা শুনে আব্রাহাম হেসে দেয়। তারপর আইরাত কে নিজের উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেয়। অর্থাৎ আইরাতের পিঠ টা তার বুক বরাবর নিয়ে নেয়। আইরাতের দুহাতের ভাজে পজিশন করে রিভলবার টা রেখে দেয়। তারপর তার পেছন দিক থেকে আব্রাহাম আইরাত কে জড়িয়ে ধরার মতো করে ধরে। আইরাতের হাতের ওপর আব্রাহাম তার হাত জোড়া রেখে দেয়।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল প্রথমত তুমি যাকে শুট করছো বা করবে তার বরাবর রিভলবার তাক করবে। এতো সই না করলেও চলবে প্রথম প্রথম মানে আগেই একটা অংশ বরাবর গানটা ঠেকিয়ে নিবে। যদি এমন চান্স থাকে যে তোমার বিপরীতে থাকা লোকটি তোমার আগেও দ্রুত শুট করে দিতে পারে তাহলে আর কিছুর চিন্তা বাদ দিয়ে আগে সোজা তার দিকে বার কয়েক শুট করে দিবে। হোক সেটা গুলি না লাগলো। এতে সে অবশ্যই সরে যাবে।

এই বলেই আব্রাহাম আইরাতের হাত নিয়ে নিশানা ছাড়াই বুলেট বোর্ড যেগুলো মানুষের আকৃতি নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোর দিকে দুবার শুট করে দেয়। এতে আইরাত মুখ কুচকে ফেলে।

আব্রাহাম;; এটা গেলো। সেকেন্ডলি যদি ব্যাপারটা এমন হয় যে তুমি কাউকে অর্থাৎ যে কাউকেই আড়াল থেকে শুট করছো। তোমার কাছে এনাফ টাইম আছে গান তাক করার জন্য তাহলে গানের আগে তার সাথে সাইলেন্সার ফিট করে নিবে। এতে সুবিধে তোমার। কারণ সাইলেন্সারের সাথে একটা ফোকাস হোল থাকে যার দ্বারা তুমি নিদিষ্ট ব্যাক্তিকে খুব সহজেই নিশানা বানাতে পারবে। আর হ্যাঁ তোমার সুবিধে মতো গুন হাতে ধরে একপাশের চোখ খোলা রেখে আরেক পাশের চোখ বন্ধ করে নিবে এতে আরো ইজি হবে। ওয়েট ডেমো দিচ্ছি একটা।

এই বলেই আইরাতের হাত থেকে রিভলবার টা নিয়ে তাতে সাইলেন্সার ফিট করে নেয় তাও আইরাত কে বুঝিয়ে শিখিয়ে দেয়। আবার আইরাত কে আগের মতো করে ধরে তারপর একদম বুলেট বোর্ডের বুক বরাবর তাক করে গুলি করে দেয়। আগের বার গুলি করার সময় আওয়াজ পেয়েছে আইরাত। যদিও সাউন্ডপ্রুভ গেজেট ছিলো তবুও বেশ আন্দাজ পেয়েছে শব্দের। আর এবার যেনো কিছুই হলো না। এভাবেই দুবার আব্রাহাম আইরাত কে দেখিয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; ক্লিয়ার?

আইরাত;; একদম।

আব্রাহাম;; হুম আমি কিন্তু আর দেখিয়ে দিবো না।

আইরাত;; চলবে।

আব্রাহাম;; প্রতিদিন এসে প্রেক্টিস করবে।

আইরাত;; এতো ভালো আমার ভার্সিটির টিচার রাও বুঝায় না।

আব্রাহাম;; আহা এটা ভূল। তুমি জানো কি অধিকাংশ স্টুডেন্ট”স দের কাছেই পড়াশোনা একটা প্যারা। তারা সেই ভবে বুঝতেই চায় না পড়া তাই কঠিন লাগে। আর এখন তো শুট। ব্যাপার টা কিছুটা হলেও কৌতুহল জাগায় তাই এতো ভালো লেগেছে।

আইরাত;; পয়েন্ট৷

আব্রাহাম;; হ্যাঁ এইযে আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে একটা পড়াচোর।

আইরাত;; এইইই গুল্লি মাইরা খুলি উড়ায় দিমু কিন্তু।

আব্রাহাম;; ওয়াহ, মেরি বিল্লি মুঝেই মেউ। আল্লাহ আমি ভয় পাইছি তো। এখন বাসায় চলো।

আইরাত হেসে দেয়। তবে বাইরে সবার সামনে দিয়ে যাওয়ার মাঝে আইরাতের মাথায় একটা বুদ্ধি এসে বাত্তির মতো জ্বলে ওঠে। আব্রাহামের হাত ধরে সে হাঁটছিলো হঠাৎ থেমে যায়। আব্রাহামও থেমে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।

আব্রাহাম;; কি হলো চলো।

আইরাত;; আমি আর হাঁটতে পারবো না।

আব্রাহাম;; কেনো কি হয়েছে জানপাখি? পায়ে ব্যাথা?

আইরাত ঠোঁট উল্টিয়ে দিয়ে ড্যাবড্যাব করে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকে। আব্রাহাম তা বুঝতে পেরে বাকা হাসে। আইরাতের হাত ধরে এক টান দিয়ে সোজা পাজাকোলে তুলে নেয়। আইরাত তার দুহাত দিয়ে আব্রাহামের গলা জড়িয়ে ধরে। এভাবে সবার সামনে দিয়ে আব্রাহাম আইরাত কে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে দেখে অনেকে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই লাভ ওয়ালা কমেন্ট থ্রো করছে তাদের দিকে।


রাতের বেলা বসে বসে ট্যাবে গেমস খেলে যাচ্ছে আইরাত। আব্রাহাম বসে বসে পপকর্ন খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। পাশে তাকিয়ে দেখে আইরাত গেইম”স খেলতে মগ্ন। অন্য কোন দিকে হুস নেই। এগুলো এখন আব্রাহামের কাছে বেশ বোরিং লাগছে। তাই সে আস্তে করে আইরাতের পাশ থেকে উঠে যায়। আর আব্রাহাম যে তার পাশ থেকে উঠে গেছে সেদিকে কোন খেয়ালই নেই আইরাতের। তার কয়েক মিনিট পরেই হঠাৎ ধুপ করে পুরো রুমের লাইট অফ হয়ে যায়। এবার আইরাতের হুস ফিরে আসে। ট্যাবের লাইটে আবছা সব দেখা যাচ্ছে। পুরো রুম অন্ধকার দেখে আইরাত দ্রুত লাইট অন করে ট্যাবের। পাশে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম নেই। এবার আইরাত বুঝে যে সে এই অন্ধকার রুমে পুরো একা। এইতো আইরাতের হাওয়া টাইট। সে শুকনো কিছু ঢোক গিলে। বিছানা থেকে উঠে পরে।

আইরাত;; আব্রাহাম, আব্রাহাম!

_________________________

আইরাত;; আব্রাহাম কোথায় আপনি? আব্রাহাম!

কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই পাশের রুম থেকে কিছু পরে যাওয়ার আওয়াজ পায় আইরাত। সে সেদিকে এগিয়ে যায়। সেই রুমে গিয়ে দেখে লাইট আছে। আইরাত কপাল কুচকে পেছনে তাকায়।

আইরাত;; বুঝলাম না এই রুমে লাইট আছে বাট ওই রুমে লাইট নেই কেনো?

আইরাত আরো ভেতরে যায় আর যেতেই দেখে আব্রাহাম বসে আছে ফ্লোরে। তার সামনে একটা বড়ো আকারের এ-ফোর সাইজের মোটা পেইন্টিং পেপার। আইরাত খেয়াল করে আব্রাহাম একটা প্যান্ট আর একটা সাদা স্লিভলেস টি-শার্ট পরে আছে। তার দুহাতে প্রচুর রঙ লেগে আছে। আইরাত তার হাত থেকে ট্যাব টা রেখে দিয়ে খালি পায়ে আব্রাহামের দিকে এগিয়ে যায়। এবার যেনো আবার রুমের আলো আগে থেকে কমে আসে। হালকা আঁধার আলো। আইরাত আব্রাহামের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। খেয়াল করে দেখে আব্রাহামের চোখ দুটো তার পেইন্টিং কাগজেই স্থীর। সামনে আসা সিল্কি চুলগুলো কপালে ঠেকে রয়েছে তার। সে কাগজে কি আঁকছে আইরাত তা দেখতে চাইলেও দেখতে দিচ্ছে না।

আইরাত;; আব্রাহাম!

আব্রাহাম;; হুমম বেবিগার্ল।

আইরাত;; আপনি আমাকে রেখে একা এসে পরেছেন কেনো?

আব্রাহাম;; তুমি তো গেমস খেলছিলে তাই।

আইরাত;; আপনার থেকে অবশ্যই গেইম’স আমার কাছে বেশি না।

আব্রাহাম;; হুমম।

আইরাত;; কি হুমম!

আব্রাহাম;; হুমম হুমম।

আইরাত;; বসে থাকুন আপনি আপনার হুমম হুমম নিয়ে আমি গেলাম।

আইরাতের চলে যেতেই আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে থামিয়ে দেয়। আইরাত ঘুরে তাকায়। আব্রাহাম এক টানে আইরাত কে নিজের পাশে বসিয়ে দেয়। তারপর পেইন্টিং কাগজ টা আইরাতের সামনে ধরে। আইরাতের চোখে বিষ্ময় & মুখের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। আব্রাহাম বসে বসে তারই পেইন্টিং আঁকছিলো।

আইরাত;; আপনি এতো সুন্দর করে আঁকতে পারেন!

আব্রাহাম;; তোমার জন্যই শেখা। আসলে শেখা বলতে ট্রাই করতে করতে হয়ে গেছে। আমি আর কিছুই আঁকতে পারি না শুধু তোমার ছবি ছাড়া।

আইরাত;; অন্নেক অন্নেক সুন্দর হয়েছে।

আব্রাহাম;; থাংকু থাংকু।

আইরাত;; 😆

আব্রাহাম-আইরাত বসে আছে। আব্রাহামের দুহাতে এখনো রঙ লেগে আছে। তাদের পাশেই রঙ-তুলি পরে আছে। অর্থাৎ রুমের হুলিয়াই পুরো পালটে গেছে। হঠাৎ আইরাত তার আঙুলে সামান্য কিছুটা রঙ নিয়ে আব্রাহামের নাকের ডগায় লাগিয়ে দেয়। আব্রাহাম আবার আইরাত কে ঝাপটে ধরে নিজের নাক আইরাতের নাকে ঘষে দেয়। আব্রাহামের তো মাথা একটু ঘুরে যায়। তাই সে আইরাত কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। আইরাতের ঘাড়ে নিজের মুখ গুজে দিয়ে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। আব্রাহাম ইচ্ছে করেই হাতে রঙ নিয়ে আইরাতের গলায়-ঘাড়ে লাগিয়ে দেয়। আইরাত তার দুহাতে রঙ নিয়ে আব্রহামের সাদা শার্টে নিজের দুহাতের ছাপ লাগিয়ে দেয়। ছাপ লাগিয়ে দিয়ে সে নিজেই হাসতে হাসতে শেষ। আব্রাহাম তার হাতে আরো রঙ নিয়ে আইরাতের উরুতে লাগিয়ে দেয়। আইরাতের কানের পেছনে চুমু এঁকে দেয়। আইরাত ঘুরে গিয়ে আব্রাহামের কপালে চুমু দেয়। অর্থাৎ দুজনেই রঙ দিয়ে ডুবে গেছে। এভাবেই তাদের খুনশুটি তে রাত টুকু কেটে যায়।


⛅⛅~~

আইরাত;; আব্রাহাম আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন বলুন তো!

আব্রাহাম;; সারপ্রাইজ এটা, গেলেই বুঝতে পারবে।

আইরাত;; কিন্তু চোখ থেকে কাপড় টা তো খুলুন!

আব্রাহাম;; না। তুমি শুধু আমার সাথে সাথে চলতে থাকো।

আব্রাহাম আইরাতের চোখদুটো একটা লাল রেশমি কাপড় দিয়ে বেধে রেখেছে। আইরাত কে সে একটা জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। সারপ্রাইজ। তবে সে তা কোন মতেই আইরাত কে বলবে না। সকালে ব্রেকফাস্ট করেই আব্রাহাম হুট করে এসে আইরাতের চোখে কাপড় বেধে দেয় তারপরই এগুলো। তবে আইরাত শুধু একা না। তার কোলে টাফি & সফটিও আছে। তারা দুজন সুন্দর করে চুপচাপ বসে আছে আইরাতের কোলেই। আইরাতের হাতে নিজেদের গা ঘষছে। আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তারপর বাইরে গিয়ে আইরাত কে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে আব্রাহাম ড্রাইভিং সীটে গিয়ে বসে পরে।

আইরাত;; আব্রাহাম এবার তো চোখের বাধন খুলুন!

আব্রাহাম;; না। তুমি শুধু চুপ করে বসে থাকো৷

দেখতে দেখতেই প্রায় বেশ সময় পর গাড়ি এসে থামে একটা খোলামেলা জায়গায়। গাড়ি থামার আভাস পায় আইরাত। আব্রাহাম নেমে এসে আইরাত কে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনে। আইরাতের কোলেও টাফি & সফটি। গাড়ি থেকে নেমে আব্রাহাম আবার আইরাতের এক হাত ধরে এগিয়ে যেতে থাকে।

আইরাত;; আব্রাহাম আর কতো দূর?

আব্রাহাম;; জাস্ট এ মোমেন্ট বেবিগার্ল এসে পরেছি।

আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে এবার একটা জায়গায় থেমে পরে। তারপর আস্তে করে আইরাতের চোখ থেকে কাপড় খুলে দেয়। আইরাত তার কোল থেকে টাফি & সফটি কে নিচে নামিয়ে দেয়। তারা আব্রাহামের পায়ের কাছ দিয়ে লাফালাফি করছে। আস্তে ধীরে নিজের চোখ মেলে তাকায় আইরাত। অবিশ্বাস্য! আব্রাহাম তাকে এমন কিছু একটা গিফট করবে আইরাত ভাবেই নি।

আইরাতের সামনে একটা ২ থেকে ৩ তালা ফ্লোরের বাসা আছে। বাসা টা একদম ধবধবে সাদা। বাসার পাশেই সারি সারি বেশ কিছু গাছপালা রয়েছে। বাসার সামনে একটা খোলা বাগান আছে তাতেও ফুলের বাগান দিয়ে ভরা। বাসার কোণায় কোণায় ফুলের অনেক গুলো রঙ-বেরঙের টব আছে। সেগুলো তে নজর কাড়া সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটে আছে। বাসার ওপরে একটা ছাদ আছে। প্রত্যেক টা রুম বা দরজার সামনে ছোট ছোট করিডর আছে। সব সাদা দেওয়ালে ছোট ছোট ঝাড়বাতি ঝুলে আছে। বাড়ির পাশে যে গাছগুলো আছে তার পাতার ফাক দিয়ে মিষ্টি রোদ এসে তার উষ্ণতা ছড়িয়ে আছে। বাড়ির মেইন দরজার সামনে নেইম প্লেটে সুন্দর করে লিখা
{~আব্রাহাম❤️আইরাত~}। ভালোলাগার ব্যাপার টা এসে ঠ্যাকায় খোলা নীল আকাশ টায়। গাঢ় নীল আকাশের নিচেই সাদা বাসা। সম্পূর্ণ বাড়ির ভিউটা এত্তো মাত্রায় সুন্দর যে চোখ জুড়িয়ে যায় দেখে। প্রকৃতি আর আধুনিকতার সংমিশ্রণ মিলে বাড়িটা। সাধারণ মাত্রায় অতি অসাধারণ সুন্দর।আইরাত কে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে আব্রাহাম আইরাত কে পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে মাথার সাথে মাথা তার ঠেকিয়ে দেয়। আইরাতের কানের পাশে আস্তে করে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল, পছন্দ হয়েছে?

আইরাত হালকা মাথা ঘুরিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়।

আইরাত;; এত্তো সুন্দর সারপ্রাইজ যা বলারও বাইরে।

আব্রাহাম;; আমার একটা ছোট্ট ড্রিম ছিলো জানো!

আইরাত;; এটা!

আব্রাহাম;; হুম।
“বিশাল নীল আকাশের নিচে আমাদের একটা সুন্দর সাদা বাড়ি হবে 🤍💙”

আইরাত;; “একটা বাড়ি, দুজন মানুষ আর এত্তোগুলো ভালোবাসা”

আব্রাহাম আইরাতের কপালে চুমু খায়।
আব্রাহাম-আইরাত কে একসাথে হাসতে দেখে টাফি & সফটি খুশিতে চারিদিকে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেয়।





চলবে~~

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩৩

আইরাত বর্তমানে কিচেনে। ছোট এশ কালারের একটা ফ্রোক পরে চুলগুলো কে ওপরে বেধে ঠোঁটের কোণে হালকা জিভ বের করে গভীর মনোযোগ দিয়ে রান্না করছে। তাকে দেখে এমন মনে হচ্ছে যে খুব কষ্ট করে চেষ্টা করে এইসব করছে। গরমে কিছুটা ঘেমে কপালে বিন্দু বিন্দু পানিফোটা জড়ো হয়েছে। সেগুলো থেকে থেকে হাতের উল্টো পাশ দিয়ে সে মুছে যাচ্ছে। সামনের চুলগুলো কপালে আর সাইডে এসে ঠেকে রয়েছে। তার দুহাতে লেগে রয়েছে নানা ধরনের মশলা যা ফলে কিছুটা কাশিও দিচ্ছে সে। আসলে আব্রাহাম বাসায় নেই মানে রুমে নেই আর কি তাই আইরাত এক প্রকার লুকিয়ে-চুরিয়েই রান্না ঘরে গিয়েছে রান্না করতে। আজ হঠাৎ করেই মনে হলো যে নতুন কিছু ট্রাই করা যাক তাই তার পদাচরণ হলো রান্নাঘরে। আব্রাহাম জানলে কি করবে তাকে সেও জানে না। মূলত আইরাতের আব্রাহামের জন্যই রান্না করা। আব্রাহামের কষা মাংস অনেক বেশিই পছন্দের। তাই আইরাত আস্তে ধীরে সময় নিয়ে পরম যত্ন সহকারে বানাচ্ছে। হ্যাঁ অবশ্য সামনে ফোন অন করে তাতে ইউ টিউবের একটা রেসিপি ভিডিও অন করা আছে। অতঃপর বেশ কয়েক ঘন্টা পর রান্না হলো। মাংসের কালার তো দারুন এসেছে না জানি খেতে কেমন হয়েছে। ওইদিন পায়েসের মতো চিনির জায়গায় লবণ না দিলেই হয়েছে। কয়েক টুকরো মাংস তুলে মুখে পুড়ে নেয়। নাহ, সেইদিনের থেকে অনেক বেশিই ভালো হয়েছে। আইরাত তো খুশিতে গদগদ। এই প্রথম তার মাংস রান্না তাও আবার আব্রাহামের জন্য তার ওপর আবার ভালোও হয়েছে। রান্না শেষে কোমড়ে নিজের দুহাত ঠেকিয়ে রান্নাঘরের চারিপাশে একবার চোখ বুলায়। এটা কি আদৌ রান্নাঘর নাকি গোয়ালঘর তা বুঝা বড়ো দায়। আইরাতের মাথা ঘোড়াচ্ছে। এখন আবার তাকে এইসব গোছগাছ করতে হবে। খাবার সুন্দর করে সার্ভ করে টেবিলের ওপর রেখে দিয়ে এসে আবার রান্নাঘর গোছাতে লাগে। দ্রুত করতে হবে আব্রাহামের আসার আগেই। সে আইরাত কে বলে গিয়েছিলো যে ইম্পর্ট্যান্ট কিছু কাজ আছে হয়তো আসতে টাইম লাগবে আর সেই ফাকেই আইরাত এইসব কিছু করে নিয়েছে। টুকটুক করে সব কাজ সেরে ফেলে আইরাত। তারপর সোজা একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে নেয়। রুমে এসে বসে ছিলো আব্রাহামের অপেক্ষায় তখনই আব্রাহাম আসে। আইরাত খেয়াল করে দেখে আব্রাহাম রাগে কেমন একটু ফুলে ফুলে আছে। এখন আইরাত কি করবে বুঝে না। তবে নিজের সামনে তাকিয়েই আব্রাহাম তাকে দেখে দেয় এক হাসি।

আব্রাহাম;; বেশি দেরি করে ফেললাম কি?

আইরাত;; না একদম না।

আব্রাহাম;; কিছুর একটা স্মেল পাচ্ছি।

আইরাত;; গ্যাস হুয়াট!

আব্রাহাম;; হুমমমমমম। এটা….

আইরাত;; হুম বলুন বলুন।

আব্রাহাম;; এটা কষা মাংসের স্মেল।

আইরাত;; হ্যাঁ

আব্রাহাম;; স্মেল র‍্যালি গুড।

আইরাত;; ওয়েট।

আইরাত গিয়ে হাতে একটা বাটিতে বেশটুকু কষা মাংস আনে। তারপর এসেই আব্রাহামের মুখে পুড়ে দেয়।

আইরাত;; কেমন হয়েছে?

আব্রাহাম;; অসম্ভব ভালো। তবে কি দরকার ছিলো রান্নাঘরে যাওয়ার?

আইরাত;; আপনি বুঝলেন কি করে যে আমি রেধেছি।

আব্রাহাম;; তো আমি বুঝবো না তো আর কে বুঝবে।

আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম আইরাতের হাত দুটো নিয়ে কিছুটা স্মেল নেয়।

আইরাত;; কি করছেন?

আব্রাহাম;; ঘরের বউ রান্না করলে তাদের হাত থেকে যেমন সুগন্ধ ছড়ায় ঠিক তেমন সুগন্ধ আসছে এখন। লাইক এ টিপিকাল ওয়াইফ।

আইরাত;; আমার রান্না যে খাওয়ার যোগ্য হয়েছে তাই যথেষ্ট।

আব্রাহাম ফ্রেশ হয়ে আসে তারপর দুজন মিলে একসাথে খেয়ে নেয়। করিডরে গিয়ে বসে পরে। আব্রাহাম বসে বসে বই পড়ছে আর আইরাত দুহাত ভাজ করে গোল দোলনা তে বসে আছে। একমনে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে।

আইরাত;; ওইই ওইই ওইই

আব্রাহাম;; হ্যাঁ

আইরাত;; ওইইইইই

আব্রাহাম;; আরে বাবা শুনছি তো বলো।

আইরাত;; আপনি কি ব্যাস্ত?

আইরাত;; একবার শুধু বল যে তুই ব্যাস্ত তারপর কিয়ামত হইয়া যাবো সোজা (মনে মনে)

আব্রাহাম;; না বেবিগার্ল, বাকিদের জন্য ব্যাস্ত কিন্তু আমার বউটার জন্য কখনোই না।

আইরাত মেকি হাসে।

আইরাত;; ওয়েট আব্রাহাম আমাকে রেখে বই পড়ছে কেনো? (মনে মনে)

আইরাত;; বই বেশি ইম্পর্ট্যান্ট?

আইরাত;; বুকসেল্ফে আজকে আগুন লাগায় দিমু আমি দাড়া (মনে মনে)

আব্রাহাম ঠাস করে বই টা রেখে দিয়ে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত মুখ টা অন্য দিকে ঘুরিয়ে ফেলে। আব্রাহাম উঠে এসে আইরাতের দুগাল ধরে মুখ টা উঁচু করে নিয়ে তার ঠোঁটে চুমু বসিয়ে দেয়। তারপর আইরাত কে নিজের কোলে নিয়েই বসে পরে।

আইরাত;; ভাবছিলাম একটা বড়ো সড়ো ঝগড়া করবো তা আর হইলো না। এই পোলা আগেই সব বুইঝা যায়।

আব্রাহাম;; কিছু বললে?

আইরাত;; না।

আব্রাহাম;; বাইরে যাবে?

আইরাত;; ঘুড়তে?

আব্রাহাম;; আজকে শুট করেছিলে?

আইরাত;; গেলাম ই না তো।

আব্রাহাম;; আজকে যেনো নিশানা ঠিক থাকে!

আইরাত;; আচ্ছা৷

তখনই টাফি & সফটি দৌড়িয়ে করিডরে আসে। তারা ঘুমাচ্ছিলো। ঘুম থেকে উঠেই সোজা এখানে ছুটে চলে এসেছে। আইরাত তাদের দেখে উঠে পরে। একটা আব্রাহামের কোলে চলে যায় আরেকটা আইরাতের কোলে। তারা দুজনেই এত্তো পরিমানে কিউট। তাদের জন্য খাবার, কাপড় সহ সব কিছুই এনে দিয়েছে। একটা ছোট বেড আছে তাদের জন্য সেখানেই তারা থাকে। একদিনেই তারা আব্রাহাম-আইরাতের পোষ মেনে গেছে।


বিকেলের দিকে আইরাত একাই রুমের বাইরে বের হয়ে পরে। আব্রাহাম নিজেই যেতে বলেছে আইরাত কে যদিও তার সাথে গার্ড আছে। আইরাত এখন যাচ্ছে শুট করার ফ্লোরে। সেখানে গিয়ে আগে গুলি করতে হবে নয়তো আব্রাহাম এসে তাকেই গুলি করে দিবে। আইরাত যাচ্ছিলো একাই তবে একজনের নজর তার দিকে পরে। সে হচ্ছে আতিকের এক চেলা বিজয়। আতিক একটা সময় এই বিজয় কেই আইরাতের সব বায়ো ডাটা বের করতে বলেছিলো। সে সব খোঁজ নিয়ে আতিক কে বলেছিলোও। তবে এখন যে এখানে সে আইরাত কে দেখবে তা ভাবে নি। বিজয় সাথে সাথে আতিক কে খবর টা জানিয়ে দেয়।

ওদিকে আব্রাহাম রাশেদের সাথে কথা বলছে। রাশেদের একই কথা যে কবে তারা দেশে ফিরবে। কিন্তু এদিকে বললেই তো আর আসতে পারছে না সব ঝামেলা শেষ করে তবেই আসতে হবে। সেদিকের অবস্থা আছে ভালোই। আইরাতের ফ্যামিলি সহ বাকি সবাই অনেক ভালো আছে। কথা বলে শেষ করে দেখে আইরাত বাইরে গিয়েছে প্রায় আধা ঘন্টা হবে আব্রাহাম রেডি হয়ে দ্রুত তার কাছে চলে যায়। তবে একটা ব্যাপার হচ্ছে যে এখানে আব্রাহাম কে কোন কিছুর বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে যেভাবে খুশি সেভাবে থাকা যায়। অর্থাৎ দেশে কেমন রিভলবার বের করার আগে আশেপাশে কে আছে, কি করছে, পুরো পরিস্থিতি বুঝে তারপর সব করতে হয় কিন্তু এখানে চায় তুমি রিভলবার পকেটে নিয়ে ঘুরো বা হাতে কেউ কিছুই বলবে না। আব্রাহাম মুখে এক গম্ভীরতা এনে যেতে লাগে। আইরাত উনিশ ফ্লোরের যেই রুমে আছে সেখানে চলে যায়। গিয়ে দেখে আইরাত শুধু চোখে সেইফটি গ্লাস পরে দুহাতের ভাজে একটা গান নিয়ে ঠাস ঠাস করে গুলি একের পর এক করেই যাচ্ছে। প্রথমগুলো কয়েকটা নিশানা সঠিক না হলেও এবারের গুলো সব নিশানা ভেদ করে যায় একদম।

আব্রাহাম;; আয় হায় Bandook meri laila…

আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে দেখে সে দুহাত ভাজ করে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷

আইরাত;; দেখুন আমি সব ঠিকঠাক করে করেছি৷

আব্রাহাম;; হুম গুড। তবে সাউন্ড প্রুফ গেজেট পরো নি কেনো?

আইরাত;; একচুয়ালি আই লাভ দ্যাট সাউন্ড তাই।

আব্রাহাম;; হুমম।

আইরাত;; এখন এখান থেকে যাই?

আব্রাহাম;; চলো।

তারা দুজন বের হয়ে পরে। যেতে যেতেই হঠাৎ আব্রাহামের সাথে তার এক চেনা পরিচিত মানুষের সাথে দেখা হয়ে যায়। মিস্টার ডিসোজা৷ আসলে আব্রাহামের সাথে তার অনেক আগে থেকেই ভালো সম্পর্ক। উনি এটাও জানেন যে আব্রাহাম-আইরাত দুজন হাসবেন্ড & ওয়াইফ। এখানে যে আব্রাহাম আছে তা তিনি জানতেন না। এভাবে হুট করেই আব্রাহামের সাথে তার দেখা হয়ে যায় সাথে উনার বউ-বাচ্চাও রয়েছে৷

ডিসোজা;; আব্রাহাম!

আব্রাহাম;; হে ম্যান হাউ আর ইউ?

ডিসোজা;; ভালো। তুমি এখানে আছো আগে বললে না যে?

আব্রাহাম;; আমিই জানতাম না যে তুমি এখানে আছো৷ ভেবেছি কাজে ব্যাস্ত।

ডিসোজা;; তেমন কিছুই না। ওকে তো এ হচ্ছে আমার বউ আর আমার ছেলে।

আব্রাহাম আইরাত কে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলে…

আব্রাহাম;; আমার।

এটা বলেই সবাই কিছুটা হেসে দেয়। মিসেস ডিসোজার সাথে আইরাতের অনেক কথা হয়। তাদের একটা ছোট্ট ছেলে আছে অনেক কিউট। আইরাত আর থাকতে না পেরে কোলে নেয়। আইরাত আর মিসেস ডিসোজা একটা টেবিলে গিয়ে বসে পরে তারা দুজন কথা বলছে আর তাদের থেকে কিছুটা দূরেই আব্রাহাম আর মিস্টার ডিসোজা কথা বলছে। ডিসোজা সব কথা বলে যতটুকু বুঝলো তা হলো আব্রাহাম সোজাকথা নিজের জান দেয় আইরাতের ওপর।

ডিসোজা;; আচ্ছা বউ কে তো সবাই ভালোবাসে তাই না! তবে সত্যি বলতেই হবে আমি অন্য কাউকেই দেখি নি কারো জন্য এতো টা পাগল থাকতে। বাকিদের টা জানি না তবে অন্তত আমি তো দেখি নি।

আব্রাহাম;; ‘যেই মেয়ে একটা কাপড় চুস করতে গিয়ে পুরো দোকান/শো-রুম উলট-পালট করে ফেলে সে বেছে বেছে তোমাকে চুস করেছে তাও আবার পুরো জীবনের জন্য,, ব্রো একটু তো ভালোবাসো”!

ডিসোজা আব্রাহামের কথায় হেসে দেয়। অতঃপর তাদের সাথেই বেশ সময় আড্ডা দিয়ে আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে এসে পরে৷ আসার সময় আব্রাহাম বিজয় কে একনজর দেখে। তাকে দেখেই আব্রাহামের ডাউট হয় যে আতিক তাহলে এখানেই আছে আর তার কাছ থেকেই কোহিনূরের ব্যাপারে সব জানা যাবে। তবে এখন ঝামেলা না করে সেখান থেকে দ্রুত কেটে পরে আব্রাহাম।


সারাটা দিন এটা ওটা করেই কেটে যায় তাদের। এখন রাত বেজে চলেছে বারো টার ওপরে৷ আব্রাহাম হাপিয়ে গেছে আইরাত কে ঘুমানোর কথা বলতে বলতে তবে কে শোনে কার কথা। আইরাত ফ্লোরে বসে বসে পাজাল বক্স সলভ করছে আর আব্রাহাম বসে বসে আইরাত কে দেখছে।

আব্রাহাম;; এই মেয়ে!

আইরাত;; কি হইছে (কিছুটা চিল্লিয়ে)

আব্রাহাম;; কিছু না।

আইরাত আবার তার পাজালের দিকে নজর দেয়। আসলে সে পাজাল গুলো ঠিক করে আস্তে আস্তে একটা ঘর বানাচ্ছে। সব এলোমেলো হয়ে ছিলো সেগুলো দিয়ে সুন্দর করে একটা ঘর বানাচ্ছে আইরাত। গভীর মনোযোগ দিয়ে করছে এতে আব্রাহাম ডিস্টার্ব করলে থেকে থেকে চিল্লিয়ে ওঠে।

আব্রাহাম;; তুমি কি ঘুমাবা না। ঘুম নাই চোখে? নিশাচরী কোথাকার।

আইরাত;; বাড়ি বানাতে দিন আগে আমাকে।

আব্রাহাম;; আহ বাড়ি! আমার বাড়ির অভাব পরছে।

আইরাত;; আপনি চুপ করেন।

আইরাতের এইসব ত্যাড়ামি আর নিতে না পেরে আব্রাহাম হাত দিয়ে আবার এলোমেলো করে দেয় আইরাতের বানানো আধো বাড়ি টা। এতে তো আইরাত থুম মেরে বসে থাকে। আস্তে করে মাথা তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহামও ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে আইরাতের দিকে। কতোক্ষম চুপ করে থেকে আইরাত এক চিল্লানি দিয়ে ওঠে….

আইরাত;; এইইইইইইইইইই।

আব্রাহাম তার কান চেপে ধরে।

আইরাত;; আপনি এটা কি করলেন?

আব্রাহাম;; কি করেছি?

আইরাত;; কি করেছেন মানে? আপনি জানেন না কি করেছেন। আমি এতো কষ্ট করে ঘর টা বানালাম আর আপনি ভেঙে দিলেন কেনো?

আব্রাহাম;; আম……

আইরাত;; আপনি ভাঙলেন কেনোওওওওও?

বুঝলো আইরাত চেতে গেছে। এখন আব্রাহাম কি করবে। আইরাত চোখ লাল করে বসে আছে।

আব্রাহাম;; আমার লক্ষীটি, আমার ময়নাবউ, আমার সোনা বউ, আমার কলিজা বউ, আমার আদরের বউ রাগ করে না প্লিজ বউ। আমার সুন্দর বউ, আমার বান্দর বউ।

শেষের কথা টা বলেই আব্রাহাম দাঁত দিয়ে জিভ কাটে। আইরাতের তো কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে লাগলো। এ যেনো আগুনে ঘি। আব্রাহাম তো মুখ ফস্কে বলে ফেলেছে। এখন কি করবে। আইরাত রাগে আগ-বাবুলা হয়ে গেছে। সে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম আইরাতের বাহু ধরে টান নিয়ে নিজের ওপর ফেলে দেয়। আইরাতের কোমড় একহাতে ধরে আরেক হাত তার চুলের ভাজে ঢুকিয়ে দেয়। তারপর সে আইরাতের ঠোঁট গুলো আকড়ে ধরে। আইরাত চোখ গুলো বড়ো বড়ো করে তাকায়। সে আব্রাহামের কাছ থেকে সরে আসতে চায় কেননা তার কাছে এখন তার ঘর ভাঙার ব্যাপার টা বেশি বড়ো। তবে আব্রাহাম তাকে ছাড়ে নে। কিছু সময় পর ছেড়ে দেয়। আব্রাহাম তো খুশি, তবে আইরাত একদম ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে।

আব্রাহাম;; ওইইই

আইরাত;; আপনি আমার বাড়ি ভেঙে দিলেন কেনো?

আব্রাহাম;; ধুর ছাই তুমি আর তোমার বাড়ি।

আইরাত;; আমি আপনাকে লাদেনের বোম মেরে চান্দে পাঠায় দিবো।

আব্রাহাম;; পরে জামাই পাবা কোথায়?

আইরাত;; পেয়ে যাবো আবার।

আব্রাহাম দেয় এক ধমক। এতে আইরাত চমকে ওঠে। আব্রাহাম বুঝলো যে এই মেয়ে আর আজ সারারাত ঘুমাচ্ছে না। কি আর করার এরপর আব্রাহাম-আইরাত দুজনেই মিলে একসাথে পাজাল দিয়ে বাড়ি বানাতে লাগলো।

এখানে সহজে ইলেক্ট্রিসিটির প্রব্লেম হয় না তাই রুমের লাইট ইচ্ছে করেই বন্ধ করে দিয়ে বসে আছে দুজনে। করিডরের বড়ো সাদা পর্দা দুদিকে কিছুটা জড়ো করে দিয়ে রেখেছে। আব্রাহাম বসে আছে একদম দরজার মুখেই। আব্রাহামের বুকেই পিঠ ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে বসে আছে আইরাত। আব্রাহাম তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। ঠান্ডা শীতল বাতাস এসে ছুইয়ে যাচ্ছে। রুমের ভেতরে কোন আলো নেই। শুধু দুটো বড়ো আকারের ক্যান্ডেল জ্বলছে। আর বাইরের আলো এসে পুরো রুম আলোকিত করে রেখেছে। আইরাত উঠে পরে আব্রাহাম কে বলে তারপর দু-কাপ কফি বানিয়ে আনে। একটা আব্রাহামের দিকে এগিয়ে দেয়। তারা নিজেদের কাপে এক চুমুক কফি খেয়ে তারপর কাপ এক্সচেঞ্জ করে নেয়।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!

আইরাত;; হ্যাঁ জামাইজান।

আব্রাহাম;; তুমি গান গাইতে পারো রাইট!

আইরাত;; আপনার থেকে মোটেও মোটেও ভালো না, একদম না।

আব্রাহাম আর কিছু না বলেই উঠে গিয়ে গিটার নিয়ে এসে আবার করিডরের মুখে বসে পরে।

আইরাত;; কি করছেন? গান গাবেন আপনি। ওয়াও।

আব্রাহাম;; আমি না তুমি গাবে।

আইরাত;; আব্রাহাম আমি সত্যি পারি না।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ আমার জানা আছে। এবার গাও।

আইরাত;; আরে কিন্তু…

আব্রাহাম;; বাথটাবে ফেলে দিয়ে আসবো কিন্তু এতো রাতে।

আইরাত;; না।

আব্রাহাম;; তাহলে গাও।

আইরাত আর কোন উপায় না পেয়ে রাজি হয়েই গেলো। আব্রাহাম গিটারে টুংটাং আওয়াজ তুলে সেই তালে তালে আইরাতও তার ছাড়া গলায় গান ধরে…

~প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষণ দিতে চাই
তোমাকে…. ওওওওওও তোমাকে~`~

~স্বপ্ন সাজাই, নিজেকে হারাই
দুটি নয়নে রোজ নিশুতে যাই
তোমাকে…. ওওওওওও তোমাকে~`~

*~জেনেও তোমার আঁখি চুপ করে থাকে
রোজ দুইফোঁটা যেনো আরও ভালো লাগে
গানে, অভিসারে, চাই শুধু বারেবারে••

তোমাকে…. ওওওওওও তোমাকে~`~

-*-যেদিন কানে কানে সব বলবো তোমাকে
বুকের মাঝে জাপ্টে জড়িয়ে ধরবো তোমাকে~

*~* পথ চেয়ে রই, দেরি করো না যতই
আর ভোলা যাবে না জীবনে কখনোই,,
তোমাকে…. ওওওওওও তোমাকে~`~

~•~ তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি,
তুমি আসলে জোনাকি রাশি রাশি `•
“রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে
বলো কীভাবে বোঝাই ভালোবাসি ❤️!?

~* সব চিঠি সব কল্পনা জুড়ে
রঙ মিশে যায় রুক্ষ দুপুরে 🍂
সেই রঙ দিয়ে তোমাকে আঁকি
আর কীভাবে বোঝাই ভালোবাসি ❤️!?

~হ্যাঁ প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষণ দিতে চাই
তোমাকে…. ওওওওওও তোমাকে~`~

স্বপ্ন সাজাই, নিজেকে হারাই
দুটি নয়নে রোজ নিশুতে যাই
তোমাকে…. ওওওওওও তোমাকে ❤️🥀~`~

আব্রাহাম বসে বসে গিটার বাজাচ্ছিলো আর এক দৃষ্টিতে আইরাতের দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে ছিলো। আইরাত তো গাওয়া শেষ করে বসে আছে। গিটার টা হাত থেকে পাশে রেখে দিয়ে আইরাতের দিকে নিজের দুহাত মেলে ধরে আব্রাহাম। আইরাত সোজা গিয়ে আব্রাহামের বুকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে।





চলবে~~