#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব -৩১
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদিও পোস্ট করেন লেখিকার নাম দিয়ে পোস্ট করবেন)
আজ আদ্রিয়ান ও দাদীমার জন্য নাস্তা বানাচ্ছে মেঘা। আদ্রিয়ান অবশ্য ঘুমে। মেঘা সকাল সকাল উঠেই গোসল করে কিচেনে চলে আসছে। সার্ভেন্ট রা মানা করার সত্ত্বেও সে কোনো বারণ শুনে নি। আদ্রিয়ান যদি দেখে যে মেঘা কিচেনে তাহলে হয়তো হুলোস্তুল কাণ্ড বাঁধাবে। কি এক অবস্থা। সেসব কে তুয়াক্কা না করে নিজের মতো নাস্তা বানাতে লাগলো। এতদিন এই বাড়িতে থেকে আদ্রিয়ান এর পছন্দ অপছন্দ সবই সে আগে থেকেই জেনে নিয়েছে। সাথে কিভাবে রান্না করতে হয় তাও সেইফ থেকে শিখে নিয়েছে সবার অগোচরেই। মাঝে মাঝে রান্না করতো সে আদ্রিয়ান এর জন্য। আদ্রিয়ান হয়তো বিষয় টা জানতো তাই মাঝে মাঝে সার্ভেন্ট দের সাথে রাগারাগি করতো কেনো মেঘা কিচেনে যাই। সেই বিষয় গুলো মেঘা জানতো না। কিন্তু পরে রেনু খালাই কথাই কথাই মেঘাকে বলে। মেঘা এসব শুনে তেমন কোনো পাত্তা দিলো না। সে তার মন চাইলেই রান্না করতো। রান্না টা তার এখন প্রিয় কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
“কিরে বুড়ি তুই এত সকালে এখানে কি করছিস? ওমা একি এলাহী কাণ্ড? এতো কিছু রান্না কি তুই একা করেছিস?”
হঠাৎ করে দাদীমার কণ্ঠ শুনে চমকে উঠলো। আর সেই সময় ডিম অমলেট করার জন্য তেলে দিচ্ছিলো। তেল গরম হাওয়াই অসতর্কতার জন্য তেল ছিটকে হাতে পড়লো। হালকা আহ্ করে আওয়াজ করলো যা দাদীমার কানে পৌঁছালো।
“কিরে হাত পুড়ে ফেলেছিস নাকি? দেখি দেখি!
দাদীমা যখনই মেঘার হাত ধরতে যাবে তখনই হাত পিছনে নিয়ে
“আরে দাদীমা আমার কিছু হয়নি। তুমিই তো হঠাৎ করে এসে আমাকে চমকে দিলে তার জন্যই তো আমি ভয় পেয়ে আওয়াজ করলাম”
“ইশ,, আমারও বুদ্ধি লোপ পাচ্ছে। বেশি ভয় পাইয়ে দিয়েছি আমার বুড়িটাকে? তাইনা? আমি খুব সরি রে বুড়ি?”
দাদীমার এরূপ কথাতে ফিক করে হেসে দিলো।
“দাদীমা আজ কিন্তু বিয়ের আমার প্রথম রান্না। তোমার নাতি তো আমাকে এখানে আসতেই দেই না। বলে কিনা আমি নাকি এখনও অনেক পিচ্ছি। এসব নাকি আমি সামলাতে পারবো না। তোমার নাতিতো আর জানে না মেঘা কি? হুঁ,,,”
বলেই মুখ টা কে বিকৃত করে আবার দাদীমার দিকে তাকালো। দাদীমা মেঘার কথাই খুব মজা পেলো।
“ঠিক বলেছিস। তোর দাদা শশুরও আমাকে একদম চোখে হারাতো। কোনো কাজই করতে দিতো না। কাজ করার বয়স নাকি তখন আমার হয়নি। অথচ বাবার সংসারে আমি পুরো পরিবারের জন্য রান্না করতাম। ছোটো ছিলাম ঠিকই তবুও সব কাজই করতে পারতাম। সে কথা তোর দাদা বুঝলিতো!!”
বড্ড অভিমান করে বললো দাদীমা। ওদের কেমিস্ট্রি দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা একে অপরকে কতটা ভালোবাসতো। এই যে দাদা নেই তবুও দাদিমা নিঃসংকোচে ওনার কথা বললে প্রফুল্ল হয়ে বলে। যেনো এখনও সদ্য ফোটা প্রেম আবেগ। কতো নিখুঁত সেই অনুভূতি গুলো।
“দাদীমা দাদুমনিকে খুব ভালোবাসো তাইনা?”
“সে আর বলতে! তোর দাদুমনি যা রাগী আর গম্ভীর ছিলো। সব সময় আমাকে বকার উপরেই রাখতো। কিন্তু খুব ভালোবাসতো আমায়। কখনো কোনো দুঃখই আসতে দেইনি। কিন্তু হঠাৎ করেই মানুষটা আমাকে ফেলে চলে গেলো। আর রেখে গেলো তার দুই অংশ কে। যাদের দিকে তাকিয়েই আমার দিন কাটতে লাগলো।এরপর একদিন আমার ছেলে আর ছেলের বউও চলে গেলো আমাকে ছেড়ে রেখে গেলো তাদের সন্তান কে। এরপর থেকেই সেই আমার এক মাত্র অবলম্বন হয়ে গেলো”
দাদীমার কথা শুনে মেঘার চোখে পানি চলে আসলো। আসলেই জীবন যুদ্ধে সবাই সংগ্রাম করছে। কেউ বেশি তো কেউ কম। কিন্তু তবুও সংগ্রাম করে যাচ্ছে। মেঘা নিজেকে সামলাতে না পেরে দাদীমা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। আসলে তার কেনো জানি খুব খারাপ লাগছে। দাদীমা মেঘাকে শান্ত হতে বলে মজার মজার কথা শুনাতে লাগলো যেনো মেঘার মন খারাপ না হয়। এমনিতেই সামনে পরীক্ষা। তার মধ্যে এতো কিছু ঘটলো। যার জন্য মন অন্য দিকে গেলে হয়তো তা পড়াশুনাতে ইফেক্ট পড়তে পারে।
_________________________
মেঘা কফি নিয়ে রুমে ঢুকে দেখল আদ্রিয়ান বেডে নেই। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দে বুঝতে পারল যে আদ্রিয়ান ফ্রেশ হচ্ছে। কফির কাপটি টেবিলে রেখে বেড গুছাতে লাগল। মেঘা যখন বেড গুছাতে ব্যস্ত তখন আদ্রিয়ান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল গুলো মুছতে লাগলো। এরপর সামনে তাকিয়ে দেখলো তার পিচ্ছি বউটা খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। মেঘার কোমরের ঠিক উপরের দিকে শাড়ীর কিছু অংশ নীচে নেমে যাওয়ায় কোমড় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। যেখানে আদ্রিয়ান এর ভালোবাসার দু একটা চিন্হ ভেসে আছে। মেয়েটা যে তার পাগলামি গুলো হাসি মুখে মেনে নেই এতেই যেনো আদ্রিয়ান এর মন পুলকিত হয়। ভালোবাসার মানুষ যদি নিজেকে প্রিয় ব্যাক্তির সান্নিধ্য মিশে যায় তখন পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী ব্যাক্তি হিসেবে গণ্য হয়। আদ্রিয়ান মোহনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধীরে ধীরে এগুতে লাগলো। মেঘা যখন বেড গুছানো শেষ হয় তখন নিচে নেমে যেই ঘুরতে যাবে তখনই আদ্রিয়ান সাথে ধাক্কা খেয়ে পিছলে পড়ে যায়। সাথে বাঁচার জন্য যখন আদ্রিয়ান এর শার্ট এর কিছু অংশ ধরে তখন আদ্রিয়ানো মেঘার টানে তার উপর পড়ে যায়। আর তাতে দুজনেরই ওষ্ঠ মিলিত হয়। মেঘা চোখ বড় বড় করে আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে থাকে। কি হলো ব্যাপার টা তার বুঝছে কিছু সেকেন্ড লাগে। যখন বুঝতে পারে তখন আদ্রিয়ান কে সরাতে চাইলে আদ্রিয়ান সরে না। বরং মেঘাকে আরেকটু শক্ত করে চেপে নিজের সাথে একদম মিশিয়ে নিয়ে কিছুক্ষন মিষ্টি মুখ করতে থাকে। এইভাবে ৫ মিনিট করার পর আদ্রিয়ান মেঘার ওষ্ঠ ছেড়ে কপালে গভীর ভাবে একটি কিস করে।
“আচ্ছা স্নিগ্ধ পরী? তোমার মধ্যে এতো মিষ্টি কেনো? যার মিষ্টির স্বাদ বার বার গ্রহণ করলেও আরো গ্রহণ করতে ইচ্ছে করে?”
আদ্রিয়ান এর এরূপ কথা শুনে মেঘা ভীষণ লজ্জা পাই। লজ্জায় মুখে রক্তিম আভা ফুটে উঠে।
“তোমার লজ্জা রাঙ্গা ওই রক্তিম আভাও আমাকে পাগল করে দেয় জান। কিভাবে সামলাবো নিজেকে আমি বলোতো? না তুমি আমাকে ঠিক থাকতে দিলে না। এই পাগলের পাগলামি গুলো এখন সামলাও!”
বলেই আদ্রিয়ান মেঘার ঘাড়ে মুখ গুছলো। মেঘার শরীরে শীতল স্রোতের মতো শিহরণ বয়ে গেলো। আদ্রিয়ান তার স্পর্শ গুলো যখন আরো গভীর করতে লাগলো। তখন মেঘা তার হাত দিয়ে আদ্রিয়ান চুল খামছে ধরতে নইলে তীব্র হাতের ব্যাথায় আহ্ করে উঠলো। আদ্রিয়ান হঠাৎ মেঘার এরূপ শব্দে মাথা তুলে মেঘার দিকে তাকিয়ে দেখলো মেঘার চোখে পানি। তার জানকে কি খুব কষ্ট দিয়ে ফেললো।
“কি হয়েছে জান? কোথায় ব্যাথা পেয়েছো?”
বলেই মেঘাকে চেক করতে লাগলো। আদ্রিয়ান এর এরূপ কাণ্ডে মেঘা তাড়াতাড়ি হাত টা শাড়ির নিচে লুকিয়ে ফেললো। যা আদ্রিয়ান চোখের আড়াল হয়নি। আদ্রিয়ান খুজা বন্ধ করে মেঘার দিকে তাকালো।
“হাতে কি হয়েছে তোমার মেঘ? দেখি দেখাও!”
আদ্রিয়ান এর কথাই মেঘা উঠে বসলো এরপর কেবলাকান্তের মতো একটা হাসি দিয়ে
“আরে কি হবে হাতে। কিছুই হয়নি। সত্যি বলছি?”
“আমি তোমাকে হাত দেখাতে বলেছি”
“কিছুই হয়নি। আচ্ছা আপনার কফি তো ঠান্ডা হয়ে গেছে। এতো কষ্ট করে আপনার জন্য কফি করলাম আর দেখেন এখন ঠান্ডা হয়ে গেছে”
“তুমি কার পারমিশন নিয়ে কিচেনে গিয়েছো?”
আদ্রিয়ান এর কঠিন বাক্যর কথা শুনে মেঘা ঢুক গিললো।
“কি হলো? আমি কিছু জিগ্গেস করেছি! কার পারমিশন নিয়ে তুমি কিচেনে গিয়েছিলে? বলো?”
চিৎকার করে জিজ্ঞেস করায় মেঘা কেপে উঠলো। আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে দেখলো তার চোখ থেকে ক্রোধ ঝরছে। মনে হচ্ছে সেই ক্রোধে মেঘাকে অতুল সাগরে ভাসিয়ে দেবে।
” না,, মা,,,,নে,,, আ,,,সলে___
“কি মানে আসলে করছো? দেখি হাত দেখাও”
বলেই যখনই আদ্রিয়ান মেঘার হাত ধরতে যাবে ওমনিই মেঘা হাত আবার লুকানোর ব্যার্থ চেষ্টা করলো। কিন্তু শেষ রক্ষে আর হলো না আদ্রিয়ান জোর করে হাত টিকে সামনে এনে দেখলো ডান হাতের উপরের চামড়ায় দুটো মাঝারি আকারের ফুষ্কা পড়েছে। জায়গা গুলো কালো হয়ে আছে। এই মেয়ে এই ব্যাথা নিয়ে এতক্ষন দিব্যি বসে ছিল। আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি নিজের পার্সোনাল ওষুধের ওয়ার ড্রপ থেকে বার্ন ক্রিম নিয়ে মেঘাকে বেডে বসিয়ে যত্ন সহকারে লাগিয়ে দিতে লাগলো। যখনই মেঘা ব্যাথায় কেপে উঠছে তখনই আদ্রিয়ান ফু দিতে লাগলো। কিন্তু আদ্রিয়ান এক বারও মেঘার দিকে তাকাই নি। এই মেয়ে সব সময় তার অবাধ্য হয়। বেশি লাই দেওয়াতে মাথায় উঠে নাচছে। আদ্রিয়ান মেডিসিন লাগিয়ে মেঘার সাথে কোনো কথা না বলেই ওয়াশরুমে গিয়ে একদম অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বের হলো। এরপর ল্যাপটপ আর ফাইল নিয়ে বের হয়ে গেলো। মেঘার দিকে ফিরেও তাকালো না। মেঘা এতক্ষন বসে বসে আদ্রিয়ান এর কাণ্ড গুলো দেখছিল। আদ্রিয়ান কি তার সাথে রাগ করেছে? রাগ তো করারই কথা। বার বার অবাধ্য হচ্ছে। কিন্তু তাঁরও তো ইচ্ছে হয় আদ্রিয়ান এর জন্য কিছু করতে। কিন্তু আদ্রিয়ান যা পসেসিভ,, মনে হয়না মেঘার এই জীবনে নিজ ইচ্ছে মতো কিছু করতে দেবে। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করেই হুস আসলো যে আদ্রিয়ান তো রুম থেকে বের হয়ে নিচে গেলো। মেঘার বানানো নাস্তা করলে আদ্রিয়ান আর রাগ করে থাকতেই পারবে না। তাই সে তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে দেখলো সার্ভেন্ট রা সবাই মাথা নিচু করে আছে। কিন্তু আদ্রিয়ান কে কোথাও দেখতে পেলো না। এরপর সার্ভেন্ট দের জিজ্ঞেস করলো তারা সবাই এখানে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে কেনো। তখন একজন উত্তর দিল যে মেঘাকে কিচেনে আসতে দেওয়ার জন্য তাদের এই মান্থের সেলারি কেটে দেওয়া হয়েছে। যার জন্য সবাই এই ভাবে দাড়িয়ে আছে।এরূপ কথা শুনে মেঘার মন টা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান তার উপর করা রাগ এই মাসুম সার্ভেন্ট দের উপর ফেলছে। তাদের তো কোনো দুষ নেই। দোষ তো মেঘার। শাস্তি দিলে তাকে দেবে। কিন্তু না তার কাজ তো বাকা।
#চলবে_কি?
#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব -৩২
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদিও পোস্ট করেন লেখিকার নাম উল্লেখ করে পোস্ট করবেন)
ঘন কালো মেঘের আড়ালে প্রকৃতি যেমন তার রূপ অন্ধকার করে ছেয়ে গেছে তেমনই ভাবে মেঘার মনও ঘন কালো হয়ে আছে। কাল থেকে মেঘার টেস্ট এক্সাম। কিন্তু পড়াশুনা তে মন দিতে পারছে না। মন দিবেই বা কি করে? মন টাতো এক নিষ্ঠুর স্বামীর কাছে পড়ে আছে। যে তার মন টাকে চুরি করে তার সাথে করে নিয়ে গেছে। আজ প্রায় এক সপ্তাহ হলো আদ্রিয়ান দেশে নেই। কিছু জরুরী কাজে লন্ডন গিয়েছে। সেইদিন সন্ধ্যায় এসে তাড়াতাড়ি করে কিছু ফাইল নিয়ে মেঘার সাথে কোনো কথা না বলেই চলে গেলো। সে যে দেশের বাইরে যাচ্ছে সেটাও মেঘাকে বলে যাইনি। মেঘা কি এতটাই অবহেলার যোগ্য? সেতো এমন কিছু করেনি যাতে আদ্রিয়ান তাকে এভাবে শাস্তি দেবে। এতো কিছু ভেবে যখন মন কে শক্ত করে তখন সেই মন আবার তার বিরুদ্ধে গিয়ে আদ্রিয়ান কে মনে করতে থাকে। সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত আদ্রিয়ান ফোন পর্যন্ত করেনি। মেঘা এই পর্যন্ত অনেক বার ফোন দিয়েছিল কিন্তু আদ্রিয়ান ফোন তুলে নি। এরকম তিন দিন দেওয়ার পর যখন ফোনে তুললো না তখন একটা মেসেজ আসে আদ্রিয়ান থেকে।
“এখানে আমি একটা বিশেষ কাজে এসেছি। তাই বার বার ফোন দিয়ে বিরক্ত করবে না। সামনে এক্সাম তাই পড়াশুনায় মনোযোগ দাও। সেটা কাজে দেবে।”
এরূপ মেসেজ দেখে মেঘা অনেক্ষন স্তব্ধ ছিলো। যখন হুস আসলো তখন রাগে অভিমানে মোবাইল টা দেওয়ালে নিক্ষেপ করলো। এতে মোবাইল টি ভেঙ্গে পুরো অবস্থা খারাপ। এরপর থেকে মেঘা আর আদ্রিয়ান এর খুঁজ নেইনি। এই কয়দিনে মেঘার খাবার, ঘুম সব লাটে উঠছে। শুধু পড়াশুনা নিয়েই ছিলো। দাদিমা জোর করে খাওয়ালেও কয়েক লোকমা খেয়ে আর খেতো না। এতে মেঘার অনিয়ম হতো। যার জন্য পেট ব্যাথাও বাড়তে লাগলো। ডক্টর বার বার বলে গিয়েছিল যাতে মেঘার খাবারের কোনো অনিয়ম না হয়। এতে তার পেট ব্যাথা বাড়তে পারে। এতো অনিয়ম করলেও পড়াশুনা করতে ভুলেনি। কিন্তু আজ কোনো মতেই পড়াতে মন বসলো না। পেটে ব্যাথা করছে হালকা সাথে আদ্রিয়ান এর কথাও খুব মনে পড়ছে। তাইতো বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ঘন মৌসুমে দাড়িয়ে আছে একা একা। খুব কষ্ট হচ্ছে তার। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যাথা। কোনো মতে পেট চেপে নিচে বসে পড়লো। কিছুক্ষন আগেই মুসল ধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। যার নিদারুণ মেঘাও সেই বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় নিজেকে শায়িত করছে। শাড়ীর প্রত্যেক টা অংশই শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। ক্রমশই চোখে মুখে আধার দেখছে। হয়তো যন্ত্রণা নিরাময় এর স্থান্তর ধাপ বিলীন হচ্ছে ধীরে ধীরে। হঠাৎ করেই মনে হলো তার পাশে কেউ দাড়িয়ে আছে। কিন্তু শরীরে সেই টুকু বল নেই যে পাশ ফিরে তাকাবে। তাই বল প্রয়োগ করতে যেয়েই ধীরে ধীরে মিশে গেলো অন্ধকার অম্বরে। আর সেই ব্যক্তি তাড়াতাড়ি হাঁটু গেড়ে বসে নিজের ব্যাক্তি গত প্রেয়সী কে আগলে নিলো।
_____________________________
আস্তে আস্তে নেত্র পল্লব খুলে তাকিয়ে দেখলো তার হাত টি শক্ত করে কেউ ধরে আছে। হাতের ব্যাক্তি টিকে দেখে মুখে হাসি আসলো। মেঘাকে তাকিয়ে দেখতে দেখে সামনের ব্যাক্তি টির হাসি ফুটে উঠলো। সারা রাত মেঘার কোনো গেয়ান ছিলো না।
“এখন কেমন লাগছে আমার আম্মু টার?”
মেঘার আব্বুর কথা শুনে মন পুলকিত হলো। অনেক দিন পর নিজের আব্বু কে দেখে চোখের জল আর ধরে রাখতে পারল না। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তবুও মুখ খুলে তার আব্বুর সাথে কথা বললো
“এই তো আব্বু। আমার আবার কি হবে। আমি ভালো আছি আব্বু।”
“সে তো বুঝায় যাচ্ছে কেমন ভালো আছো তুমি?”
আব্বুর এরূপ কথাই মেঘা আর কিছু বলল না। শরীর টা প্রচন্ড দুর্বল লাগছে। তার সাথে পেটেও হালকা ব্যাথা।
“কয়েক দিনে নিজের কি অবস্থা করেছো? আমি কি তোমাকে এই অবস্থায় রেখে গিয়েছিলাম?”
হঠাৎ করে গম্ভীর আওয়াজে মেঘা চোখ সরিয়ে বাম দিকে তাকিয়ে দেখলো তার প্রিয় ব্যাক্তি টি জানালার কাছে দাঁড়িয়ে মেঘার দিকে তাকিয়ে আছে। অনেক দিন পর আদ্রিয়ান কে দেখে হঠাৎ করেই বাম পাশের হৃদপিণ্ড টা ক্রমশই বিট করতে লাগলো। সেই বিটের মাঝেও সুখ সুখ অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিকে পাওয়ার আক্ষেপ ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে ওই মন পিঞ্জিরাই। গত কয়দিনে কি হয়েছিল তা যেনো নিমিষেই ভুলে গেলো।
“চুপ কেনো এখন? আমি কিছু জিগ্গেস করেছি তোমাকে? নিজের এই অবস্থা করার মানে কি? আমি কি সারাক্ষণ তোমাকে পাহারা দিয়ে রাখবো। নিজের কোনো কাজ নেই আমার! তোমার এসব কাণ্ডের জন্য আমাকে এমার্জেন্সি লন্ডন থেকে আসতে হলো। ইডিয়ট!”
আদ্রিয়ান এর এসব কথাই নিমিষেই মেঘার মন ভয়ংকর ভাবে খারাপ হলো। আদ্রিয়ান এই ভাবে কথা গুলো তাকে বললো। ওকি এতটাই ঠুনকো যে এসব কথা তাকে শুনতে হবে। মেঘা যেনো হঠাৎ করেই একদম চুপ হয়ে গেলো। কোনো কিছুই বলো না আর। চুপ চাপ শুয়ে থাকলো। মেঘার এরূপ ব্যাবহারে আদ্রিয়ান এর রাগ সপ্তম আকাশে। ইচ্ছে করছে এই মেয়েকে থাপরাতে থাপড়াতে কথা বলাতে। কতো বড়ো সাহস তাঁর কথার উত্তর না দিয়ে কেমন শুয়ে আছে। আর শরীরের কি হাল করেছে। আদ্রিয়ান একটা সিক্রেট কাজে লন্ডন গিয়েছিল। ওইখানে কিছু কিছু জিনিষ এমন ছিলো যে পরিবারের সাথে বা মেঘার সাথে যোগাযোগ করা অনেক রিস্ক হয়ে যেতো। তার জন্যই মেঘার সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি। কিন্তু এই মেয়ে যে তার খুঁজ নেওয়ার দেওয়ানা হয়ে নিজের এই অবস্থা করবে জানলে কখনোই আদ্রিয়ান কথা না বলে থাকতো না। কিন্তু এই মেয়েকে বোঝাবে কি করে? এমনিতে শরীরের অবস্থা কিছুটা উন্নতির পথে যাচ্ছিলো কিন্তু না তার তো অসুখ প্রিয়।
“আব্বু,, কয়টা বাজে এখন?”
হঠাৎ করে মেঘার প্রশ্নে সবাই মেঘার দিকে তাকালো। মেঘার আব্বু হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাতটা বিশ। মেয়েকে সেটা বললে মেঘা তাড়াতাড়ি উঠে গেলো। দশটা থেকে এক্সাম। আর সে এখন হসপিটালে।
“আব্বু বলছিলাম যে দশটায় আমার এক্সাম। তুমি আমাকে একটু কলেজ পৌঁছে দেবে।”
মেঘার কথাই সবারই খেয়াল হলো যে আজ মেঘার এক্সাম আছে। আদ্রিয়ান এটা শুনে ভ্রু কুঁচকালো। এক্সাম এর জন্য সব কিছুই অ্যারেঞ্জ করে রেখেছিল আদ্রিয়ান। কিন্তু মেয়েটা এত অসুস্থ। এক্সামে অ্যাটেন্ড কিভাবে করবে সেটা নিয়েই চিন্তিত ছিলো।
“শশুর আব্বুকে নিয়ে যেতে হবে না। আমি সব কিছু অ্যারেঞ্জ করে রেখেছি। আমি নিয়ে যাবো!”
আদ্রিয়ান এর কথাই মেঘা তেমন কোনো উত্তর দিলো না উল্টো তার আব্বুকে বললো সে তার আব্বুর সাথে যেতে চাই। আদ্রিয়ান যখন আবার বারণ করলো তখন মেঘার আব্বু আদ্রিয়ান কে চোখ দিয়ে ইশারা করে কিছু একটা বললো। আদ্রিয়ানো চুপ করে গেলো। এরপর মেঘা অনেক কষ্টে নার্সের ধারা ফ্রেশ হয়ে নিলো। আদ্রিয়ান সাহায্য করতে চাইলে মেঘা তার আব্বু কে বলল যে সে নিজে করতে পারবে। কিন্তু তবুও যাতে সামনের লোকটা তাকে আগ বারিয়ে ধরতে না আসে। মেঘার হঠাৎ করে এমন কথার মানে মেঘার আব্বু বুঝতে পারলো। তাই ইশারা করে এখন নার্স কে দিয়ে হেল্প করার জন্য পাঠালো। জামাই এর সাথে মনোমালিন্য হওয়ার দরুন এমন করছে মেঘা। কিন্তু এখন যেহেতু মেঘা অসুস্থ আর এক্সাম দিতে যাবে তাই তার আব্বু আদ্রিয়ান কে চুপ করে থাকতে বললো। কিছু বলতে বারণ করলো। এতে হিতের বিপরীত হতে পারে। কারণ মেঘা নরম স্বভাবের হলেও মান অভিমান টা প্রচুর। তাই সেটা ভাঙতে সময়ের প্রয়োজন। যেটা আপাতত এখন নেই। আগে মেঘা এক্সাম দিয়ে আশুক তারপর না হয় আদ্রিয়ান মেঘাকে বোঝাবে। হসপিটলে আপাতত আদ্রিয়ান, আসাফ, রুশ আর মেঘার আব্বু আছে। দাদীমার শরীর অসুস্থ থাকায় আস্তে পারেনি। আসার জন্য চেষ্টা করেছিল কিন্তু শরীর সাই দিলো না। যার জন্য একটু পর পর ফোন করে মেঘার খবর নিচ্ছিলো আসাফ থেকে।
____________________________
অনেক কষ্টে মেঘা এক্সাম দিয়ে হল থেকে বের হলো। তার সাথে আবার দুই জন মহিলা গার্ডও আছে। একজন মেঘাকে ধরে ধরে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। আরেকজন আশেপাশে চোখ বুলিয়ে চারিপাশ ভালো ভাবে পরখ করছে। মেঘা বের হয়ে দেখলো তার আব্বু আর আদ্রিয়ান এক সাথে দাড়িয়ে আছে। চারিদিকে কয়েক জন গার্ডও আছে। হঠাৎ করেই মেঘার শরীর টা আবার খারাপ লাগতে লাগলো। শরীর টা কেমন ছেড়ে ছেড়ে দিচ্ছে। মেঘা কোনো মতে তার আব্বু কে ডাক দিলো। আদ্রিয়ান এতক্ষন ফোনে কিসব করছিলো। হঠাৎ করে মেঘার আওয়াজ শুনে সামনে তাকিয়ে দেখলো মেঘা চোখ গুলো নিভু নিভু হয়ে আসছে। তাড়াতাড়ি সে দৌঁড়ে মেঘার সামনে যেতে লাগলো। মেঘা সম্পূর্ণ শরীরের ভার ছেড়ে দিলে আদ্রিয়ান তাকে আগলে নিলো। শরীর প্রচন্ড উইক থাকায় আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। তাই সেন্সলেস হয়ে পড়ে থাকলো এক নিষ্ঠুর মানবের কুলে। যে তার স্বামী হয়। নিষ্টুর স্বামী।
আদ্রিয়ান এর হঠাৎ করেই ভয় পেতে লাগলো। তাড়াতাড়ি মেঘাকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। তার আব্বুও ড্রাইভারের পাশে বসলো। আদ্রিয়ান অনেক বড় মেঘাকে ডাকলো কিন্তু কোনো সাড়া পেলো। আদ্রিয়ান এর অবস্থা দেখার মতো ছিল। ছেলেটা কালকে থেকে যেই ভাবে পাগলামি করেছে। এক বিন্দু যদি মেঘা দেখতো। তাহলে মেঘা এই ছেলেটার সাথে কথা না বলে থাকতেই পারতো না। কিন্তু আপসোস এর কিছুই বকা মেয়েটা জানতেও পারলো না। মেঘার আব্বু এসব
#চলবে_কি?