#পরীজান
#পর্ব ১৪
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌
কর্মজীবি নওশাদ,পরিশ্রম দিয়ে গড়ে তুলেছে নিজের সাম্রাজ্য। যেখানে রানীর মতো থাকবে পরী। রাজকন্যাকে তো রানী হিসেবেই মানায়। তাই পরীর স্থান কোন উঁচু পরিবারে হওয়া উচিত। নওশাদ সেই উঁচু পরিবারের ছেলে। এসব অনেক কথাই বলছে কবির। হাতে পানির গ্লাস নিয়ে নাঈম তা নিরবে শুনে যাচ্ছে। নিজের প্রিয় বন্ধুর অনন্ত শয্যাতে মনক্ষুণ্য তার। এখন আবার পরীর বিয়ে!!এসব মেনে নিতে খারাপ লাগছে নাঈমের। ও চলে যেতেই নিচ্ছিল কিন্ত কুসুম পরীর কথা বলাতে রয়ে গেল। কেন জানি পরীর কথাটা ফেলতে মন চাইলো না নাঈমের। কিন্ত এখন ভাতের সাথে এসব কথাও যে তার হজম করতে হবে তা ভাবেনি। ওদিকে শায়েরের কোন হেলদোল নেই। প্রগ্রাসে গিলছে সে। জমিদারের পারিবারিক সিদ্ধান্তে শায়ের কখনও কথা বলেনি। আজও তাই চুপ করে আছে।
কবিরের কথা শেষ হতে না হতেই আখির বলে উঠল, ‘দেখো এখন এসব নিয়ে আমাদের ভাবার সময় নেই।বন্যায় তো সব তলিয়ে গেছে। তার উপর আমাদের বাড়িতে আসা একজন ডাক্তার মারা গেছে। এজন্য আমাদের কারো মন ভালো নেই। আর নওশাদ তো আমাদেরই ছেলে। ধীরে সুস্থে সব করলেই ভাল হয়।’
আফতাব তাতে সায় দিয়ে বলে,’আর তাছাড়া বন্যার জন্য আমার কাজের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা আগে সব ঠিকঠাক করি তারপর নাহয় আগানো যাবে।’
-‘আপনাদের যত সময় যত লাগুক সমস্যা নেই। কিন্ত কথা দিন পরীকে আপনারা নওশাদের হাতে তুলে দেবেন?’
কবিরের কথায় আখির নিজেই কথা দিলো যে সে পরীর বিয়ে নওশাদের সাথেই দিবে। নাঈম আর বসে থাকতে পারল না। খাবার আর তার গলা দিয়ে নামবে না। সে উঠে চলে গেল কলপাড়ের দিকে। হাত ধুয়ে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল সেখানেই। সে ভাবতে লাগল সত্যিই তো পরীর স্থান কোন উঁচু পরিবারে হওয়া উচিত। কোন অংশে কম না পরী। বড় ঘরের মেয়ে সে আর আছে জ্যোৎস্নার মতো কোমল রুপ। নওশাদের মতো বড়লোক ছেলেকেই পরীর পাশে মানায়। নাঈম কলপাড় থেকে বের হয়ে নৌকাঘাটে গেলো। সেখানে গিয়ে দেখা হলো রুপালির সাথে। হাটতে হাটতে এখানে এসে দাঁড়িয়েছে সে। নাঈমকে দেখেই রুপালি বলে উঠল,’আপনি নিশ্চয়ই নাঈম।’
নাঈম অবাক হয়ে দেখছিল রুপালিকে। অসম্ভব সুন্দর মেয়েটা। দেখলে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। নাঈম ও মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। রুপালির প্রশ্নের জবাবে নাঈম বলে উঠল,’জ্বী।’
-‘আপনাদের কথাই শুনছিলাম পরীর কাছে। আপনাদের সাথে আসা একজন মারা গেছে শুনে খুব খারাপ লেগছে। তবে সবার কথাই পরী আমাকে বলেছে।’
মুচকি হাসলো রুপালি। নাঈম এখনও অদ্ভুত চোখে দেখছে রুপালিকে। তবে পরী ওর কথা বলেছে শুনে ভাল লাগল নাঈমের।
-‘ওহ আমি তো পরিচয় দেইনি। আমি রুপালি পরীর মেজো বোন। আজকে সকালেই এসেছি।’
এখন নাঈম চিন্তামুক্ত হলো। পরীর বোন রুপালি এজন্যই এতো সুন্দর। পরী নিশ্চয়ই রুপালির মতোই সুন্দর। নাঈম বলল,’ওহ,আমি আপনাকে তো দেখিনি তাই চিনতে পারিনি। কিন্ত আপনি অন্দর থেকে বাইরে এসেছেন কেন?’
-‘বুঝলাম না আপনার কথা!!’
-‘আমি যতদূর জানি অন্দর থেকে মেয়েরা খুব কম বের হয়। আর আপনার বোন পরী তো বেরই হয় না।আপনি বের হয়েছেন তাই বললাম আরকি।’
-‘আপনি তো ঘরের খবর সব জেনে গেছেন দেখছি।অন্দর থেকে মহিলাদের বের হওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ না। জমিদার বাড়ির আশেপাশে যেতে পারবে কিন্ত পরীর কথা আলাদা। ওর তো কোন পুরুষ কে মুখ দেখানো বারণ। এটা আম্মার কথা,আব্বা এসবে নেই।’
মাথা নেড়ে নাঈম বলে,’ওহ।’
-‘আপনি নাকি আজই চলে যাবেন?থেকে গেলে ভাল হত।’
-‘নাহ,আসলে পালকের বাবা মা অনেক দূর্বল হয়ে গেছে। মেয়েকে হারিয়ে পাগল প্রায়। আমরা সেখানেই আছি। এখন সেখানেই যেতে হবে। যদি কখনও সময় হয় তো এসে দেখা করে যাব।’
মালা জেসমিন কে বলে নাঈম আর অপেক্ষা করলো না। নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল।
বিকেলের দিকে রুপালি পরীকে ডেকে এনে মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে। পরী চুপ করে উদাসীন হয়ে বসে আছে। কেন জানি মনটা ভালো নেই তার। কারো সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে না। সে একমনে তাকিয়ে আছে বৈঠক ঘরের দরজার দিকে। ইচ্ছে করছে এক ছুটে বের হয়ে যেতে। কিন্ত মা যে ওর পা দুটো আটকে দিয়েছে। এরকম বন্দি জীবন ওর ভাল লাগে না। মুক্ত পাখিদের মতো উড়তে চায় পরী। তা বোধহয় কখনোই সম্ভব নয়।
-‘তোর কি মন খারাপ?’
-‘হুম।’
-‘কি হয়েছে?’
-‘জানি না। বোধহয় মনের অসুখ করেছে।’
-‘এই অসুখ ভাল না। ডাক্তার দেখাইতে হইবে।’
কুসুম আসতে আসতে বলে উঠল,’খুবই সুন্দর ডাক্তার গো আপা। আমি দেখছি,পরী আপার লগে মানাইবো অনেক।’
পরী বুঝলো না কুসুমের কথা। তাই সে বলে,’কি বলস এসব তুই?’
-‘আল্লাহ আপনে জানেন না?মেজো আপার দেওরের লগে আপনার বিয়া ঠিক। আহা কি সুন্দর পোলাডা। আপনের লগে অনেক মানাইবো।’
পরী চট করে দাঁড়িয়ে গেল। রুপালির দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকাতেই সে বলল,’আরে নওশাদ। ছেলেটা খুব ভালো। তোর দুলাভাই,,,,,’
পরীর হুংকারে থেমে গেল রুপালি।
-‘দুলাভাই কে বলো আর না আগাতে। নাহলে আমাকে তো চেনোই। বয়স দেখে আমি কারো সাথে না কথা বলি না গায়ে হাত তুলি সেটা ভাল করে জানো।’
-‘পরীইই তোর সাহস তো কম না। নিজের দুলাভাই কে নিয়ে এসব বলে কেউ?’ধমকে উঠল রুপালি।
-‘বাহ স্বামীর জন্য এতো ভালোবাসা এতো দরদ। তাহলে ওই স্বামী কেন তোমাকে রেখে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিল?ভালোবাসা কি তার নেই?’
-‘পিছনের কথা বাদ দে। তুই কি তোর দুলাভাই কে মানতে পারছিস না?’
-‘তুমি পেরেছো মানতে?সিরাজ ভাইকে ছেড়ে,,’
-‘পরী চুপ কর।’ রুপালি মুখ চেপে ধরলো পরীর। আশেপাশে ভয়ার্ত নজর বুলিয়ে দেখে নিল আর কেউ আছে কি না। নাহ কেউ নেই। পরী নিজের মুখ থেকে বোনের হাত সরিয়ে বলে,’একই রক্তের গন্ধ ও এক হয়। তোমার দেওরের ও তাই। আমাকে রাগাবে না। যে রক্তকে ঘৃণা করি সে রক্তকে নিজের করে নিতে পারব না।’
পরী দোতলায় দৌড়ে গেল। রুপালি বারবার পরীকে ডাকতে লাগল। বলতে লাগল নওশাদ ওরকম নয় সে ভালো ছেলে। কিন্ত পরী সেকথা কানেও নিল না। কুসুম ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। পরীর কথাগুলো ওকে শোকে পাঠিয়ে দিয়েছে।
রুপালি আস্তে আস্তে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকালো। সাথে সাথেই ওর কপোলদ্বয় ভিজে গেল বিন্দু বিন্দু অশ্রুকণায়।
সিরাজ কে ভালোবেসেছিল রুপালি। পাগলের মতো ভালোবেসেছে। কিন্ত তার সাথে মিলন হলো না রুপালির। সদ্য ফোঁটা ফুলটা অকালেই ঝড়ে গেছে। কিন্ত রেখে গেছে তার সুবাস। যা কখনোই ভুলতে পারবে না রুপালি। ও পারে না ভেতরের ক্ষতটা কাউকে দেখাতে। কিন্ত পরী তা ঠিকই দেখতে পায়। তবে কখনোই বলেনি আজ রাগের মাথায় বলে দিয়েছে পরী। এতে অনেক আঘাত পেয়েছে রুপালির মন। পালঙ্কের উপর বসে কাঁদছে সে। আর ফেলে আসা স্মৃতিচারণ করছে।
আফতাবের কর্মচারী ছিল সিরাজ। সেই সুবাদে জমিদার বাড়িতে আসা যাওয়া চলতো সিরাজের। রুপালির সাথে প্রতিদিন দেখা হতো ওর। কথা হতো, আবার রুপালি এটা ওটা এগিয়ে দিতো। এভাবে কখন যে ওদের মন দেওয়া নেওয়া হয়েছিল তা দুজন টেরই পায়নি। কিন্ত এই প্রকৃতি মেনে নিলো না ওদের ভালোবাসা। ঝড় তুলে আলাদা করে দিলো দুজনকে। রুপালির বিয়ের পর আর দেখেনি সিরাজ কে। এক বুক কষ্ট নিয়ে সে পাড়ি দিয়েছে দূর অজানায়। আর রেখে গেছে মন ভাঙা কিশোরীর এক সমুদ্র অশ্রুসিক্ত নয়ন। কত যে কেঁদেছে রুপালি। কাঁদতে কাঁদতে যখন চোখের পানি সব শুকিয়ে গেছে তখন আর কাঁদতো না।
কিন্ত আজ আবার অশ্রুরা হানা দিয়েছে। ভাঙা মনটা আবার নতুন করে ভাঙছে।
নিজের ঘরে বসে রাগে ফুঁসছে পরী। নওশাদ কে সে কিছুতেই বিয়ে করবে না। কবিরের রক্তই তো নওশাদ। এদের সবার স্বভাব ও এক। রুপালির বাচ্চা হচ্ছিল না দেখে কবির দ্বিতীয় বিয়ে করতে চেয়েছিল। পাত্রী ও দেখেছিল,সেদিন মালাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিল রুপালি। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সবই দেখেছে পরী। তারপর থেকেই কবিরকে ঘৃণা করে পরী। ওর ধারণা পুরুষরা কেবল নারীদের ব্যবহার করতেই জানে ভালোবাসতে জানে না।
পরী সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে নওশাদ কে কিছুতেই বিয়ে করবে না। এতে আফতাবের সাথে যুদ্ধ করবে সে। বাকি দুবোনের মতো সে নরম না। তার সাহস ও বুদ্ধি দুটোই অনেক।
নওশাদ চৌকি পেতে বসে আছে। জুম্মান ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে অন্দরে যাচ্ছিল। নওশাদ দেখে জুম্মান কে ডাকলো। নওশাদ হেসে বলল,’কোথায় গিয়েছিলে?’
-‘শাপলা বিলে। পরী আপা আমার উপর রাগ করছে। শাপলা গুলা দিলে আপা খুশি হইব।’
-‘শাপলা তোমার আপার পছন্দ?’
-‘হু,তবে পদ্মফুল অনেক বেশি পছন্দ করে আপা। কিন্ত আমি তো পদ্মফুল পাইলাম না। গেরামের সব পোলাপান লইয়া গেছে। আর এই বিকালে কি ফুল ফোটে?আমি কলি আনছি এখন হাত দিয়া ফুল ফুটামু তারপর আপারে দিমু।’
হাসলো নওশাদ। জুম্মানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,’আচ্ছা যাও। সন্ধ্যার পর আমার সাথে দেখা করো কথা আছে।’
জুম্মান মাথা নেড়ে অন্দরে ঢুকল। নওশাদ চেয়ে রইল জুম্মানের যাওয়ার পানে। এই ছেলেটা খুব শীঘ্রই ওর একমাত্র শালাবাবু হতে চলেছে। ভাবতেও ভালো লাগছে ওর। খাওয়ার সময় ভদ্র ছেলের মত চুপ করেছিল সে। ভাবটা এমন ছিল যেন লজ্জা পাচ্ছে। অবশ্য একটু লজ্জা লাগছিল ওর কিন্ত অভিনয় করেছে বেশি। এটুকু না করলে কি চলে? নাহলে সে যে অতি ভদ্র তা প্রমাণ করবে কিভাবে?সবাই তো তাকে ভালো বলছে কিন্ত পরী!!সে কি বলে?পরীর মনের কথা তো জানা দরকার। নওশাদের ভাবনার মাঝে কবির এসে বলল,’কি রে এখানে বসে আছিস যে?আসার পর তো দুদণ্ড বিশ্রাম করলি না।’
নওশাদ হেসে বলে,’তোমার শালিকে বউ করে এনে দাও তারপর দেখবে দিনরাত শুধু বিশ্রাম করছি।’
কবির নওশাদের পিঠ চাপড়ে বসতে বসতে বলল, ‘ভালো কথা বলছিস দেখছি।’
-‘আচ্ছা ভাই তুমি কখনোই পরীকে দেখোনি?’
-‘পরী তো ওর কাকার সামনেই আসে না। আমার সামনে আসবে কেমনে?তোর কপাল ভাল রে নওশাদ। এই পরীকে পাওয়ার জন্য কত পুরুষ বুকে পাথর বাঁধে আর তুই সেই পরীরে ঘরে তুলবি।’
-‘ভাগ্য ভাল কি না জানি না। তবে পরীর জন্য যা করতে হয় এই নওশাদ তা করবে। আমি পরীরে না দেখেই পছন্দ করি। তুমি জানো আমি এই বাড়িতে শুধু পরীর জন্য আসতাম। কিন্ত পরীর দর্শন পেতাম না। আমার খুব খারাপ লাগে পরী কেন সামনে আসে না?কিন্ত স্বপ্নে আমি দেখি পরীরে। চোখ নাক মুখ স্বপ্নেই আঁকি। ভাই পরীরে কিন্ত আমার চাই।’
-‘চিন্তা করিস না পরী তোর হবে। তোর ভালোবাসা সফল হবে নওশাদ।’
সৌজন্য মূলক হাসি দিল নওশাদ। পরীর জন্য যে তার আর তর সইছে না। মন চাইছে এখনই ছুটে অন্দরে যেতে। আর পরীর সুন্দর বদন খানার মুখোমুখি হতে। কিন্ত এটা করলে বেয়াদবি করা হবে তাই মনের অদম্য ইচ্ছা বিসর্জন দিয়ে বসে রইল।
জুম্মান শাপলার কলিগুলোর সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করে তাদের ফুলে রুপান্তরিত করলো। তারপর গুটি গুটি পায়ে পরীর ঘরে গেল। নীল রঙের ফিতা দিয়ে চুল বাধছে পরী। জুম্মান আস্তে করে পরীর পিছনে গিয়ে দাঁড়াতেই পরী বলে উঠল,’এখানে এসেছিস কেন?’
-‘আপা দেখো তোমার লাইগা শাপলা আনছি। আমি বিলে যাইয়া নিজেই তুইলা আনছি। নেওনা আপা?’
পরী ঘুরে জুম্মানের মুখের দিকে তাকালো। কাঁদো কাঁদো মুখ করে শাপলা বাড়িয়ে দিয়েছে জুম্মান। পরী আর না করলো না। হাত বাড়িয়ে শাপলা গুলো নিলো। সাথে সাথে জুম্মানের মুখে হাসি ফুটে উঠল। সে বলল,’তোমার রাগ কমছে আপা?আমি তো ভাবলাম আপার হইলো কি?কথাও কেমনে জানি কও!!’
-‘কেন ভাল লাগে না?শোন তুই জমিদারের ছেলে জুম্মান। তুই এই গ্রামের সবচেয়ে ধনী ছেলে। তোর সবকিছুই তো সবার থেকে আলাদা হতে হবে। তাই শুদ্ধ ভাষায় কথা বলবি। মনে থাকবে?’
জুম্মান মাথা নেড়ে বলল,’আমি তো তোমার মতো কথা কইতে পারি না!!’
-‘আমি শেখাব তোকে।’
পরী ভেবে নিয়েছে যে জুম্মান কে ও নিজের মতো করে তৈরি করবে। তাই জুম্মান কে এটা ওটা শেখাতে লাগল। সাথে কিছু গভীর পরামর্শ করতে লাগল।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই অঘটন ঘটিয়ে ফেলল নওশাদ। নাহ সে ঘটায়নি। অঘটন নিজেই তাকে ঘটিয়েছে। ঘুম ঘুম চোখে ঘর থেকে বের হতেই ধপাস করে পড়লো গিয়ে গোবর গাদায়। পুরো শরীর মাখামাখি হয়ে গেল গোবরে। বিশ্রি গন্ধ আসছে পুরো শরীর থেকে। নওশাদের নিজেরই বমি পেয়ে গেল তা দেখে। এরকম করে কে গোবর ফেলে রেখে গেল?উঠে দাঁড়াতে গিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পড়লো সে। বিরক্ত হয়ে হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াল নওশাদ।
শায়ের সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। নওশাদের অবস্থা দেখে হাসি পেলেও চেপে গেল সে। বলে উঠল,’কি ব্যাপার হবু জামাই?বিয়ে হতে এখনও ঢের দেরি আর আপনি এখনই গোবর খেলা শুরু করে দিয়েছেন?’
শায়েরের কটাক্ষ করে বলা কথাগুলো ভাল না লাগলেও তা হজম করে নিলো নওশাদ বলল,’আর বলবেন না কে যেন এখানে গোবর রেখে গেছে। আসতেই পড়ে গেলাম।’
নওশাদ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। হঠাৎই শায়েরের চোখ গেল অন্দরের দরজার দিকে। কয়েক জোড়া পা দেখা যাচ্ছে। সন্দেহ মনে সে কুসুম কে ডাকতেই পা গুলো সরে গেল। কুসুম এলো হাতে পানি ভর্তি বালতি আর ঝাড়ু নিয়ে। কুসুম নওশাদের দিকে তাকিয়ে বলল,’ইশশ রে কি অবস্থা!!কেমনে হইলো?’
জবাব টা শায়ের এগিয়ে এসে দিলো,’এখানে গোবর রেখেছে কে?’
-‘আমি রাখছি। উঠান লেপতে কইছে বড় মায়। কিন্ত হেয় না দেইখা হাটলে আমি কি করমু?’
কুসুম পানির বালতি সমেত নওশাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,’আহারে কি গন্ধ আসতাছে। খারান এহনই গতর ধুইয়া দিতাছি।’
কুসুম বালতির সব পানি ঢেলে দিলো নওশাদের মাথায়। প্রচন্ড রেগে গেল নওশাদ। কুসুমকে ধমক দিয়ে চলে গেল কলপাড়ের দিকে। কুসুমের কাজ দেখে শায়ের হেসে ফেলল। কুসুম অন্দরে চলে গেল। শায়ের খেয়াল করলো কুসুমের পা জোড়া আরেক জোড়া পায়ের সাথে মিলিত হয়েছে। শায়ের চিন্তা করলো এটা কি অনাকাঙ্খিত ঘটনা নাকি কেউ কঙ্খিত ভাবে ঘটনাটা ঘটিয়েছে?
কুসুম দৌড়ে পরীর কাছে গেল। এতক্ষণ পরী আর জুম্মান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল আর হাসছিল। পরিকল্পনাটা পুরোটাই পরীর। সে চায় নওশাদ যেন এখান থেকে চলে যায় তাই আজ থেকে সে নওশাদ কে নাকানি চুবানি খাওয়াবে। সেজন্য কুসুম আর জুম্মান কে হাত করেছে সে। কুসুমের সাথে কথা বলে পরী নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।
-‘পরী আপা।’ কুসুমের ডাকে ফিরে তাকায় পরী।
-‘আপনের পায়ের আরেকখান নূপুর কই??’
#চলেবে,,,,,
#পরীজান
#পর্ব ১৫
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌
নিজের পায়ের দিকে তাকাতেই চোখ জলে ভরে ওঠে পরীর। আরেকটা নূপুর গেল কোথায়?কখন খুলে পড়ে গেছে তা টেরই পায়নি পরী। নূপুর জোড়া যে সোনালীর। যাওয়ার আগে পরীকে দিয়ে গেছে। কিন্ত পরী তার মূল্য দিতে পারেনি। হারিয়ে ফেলল সেটা!!চোখ মুছে পরী মেঝেতে বসে পড়ল। সোনালীর এই একটা স্মৃতিই পরীর কাছে ছিল। কিন্ত তার প্রতি হেয়ালিপনা কিভাবে করতে পারলো পরী?মনটা খারাপ করে ওখানেই বসে রইল সে। কুসুম কাছে এসে বলে,’কি হইছে আপা?নূপুর খানা পড়লো কই?’
-‘জানি না কুসুম। আমি এখন কোথায় খুজবো??’
জুম্মান পরীর পাশে বসে বলল,’তুমি চিন্তা কইরো না আপা। তুমি তো অন্দর ছাড়া কোন খানে যাও না। পুরা অন্দর খুঁজলেই পাওয়া যাইবো।’
পরী ভেবে দেখলো কথাটা ঠিকই বলেছে জুম্মান। কিন্ত সে তো বৈঠক ঘরেও গিয়েছিল। তাই পরী বলল,’তুই আর কুসুম বৈঠকে গিয়ে খোঁজ। আমি অন্দরে দেখতাছি।’
কুসুম আর জুম্মান তাই করে। বৈঠক ঘরের আনাচে কানাচে খুঁজতে লাগলো দুজনে। শায়ের নিজের ঘর থেকে বের হয়ে দেখলো ওরা উকিঝুকি দিচ্ছে। শায়ের কিছু বলতে চাইলো কিন্ত পারলো না। নওশাদ ভেজা কাপড়ে এসেছে। কুসুম কে দেখে ওর রাগ হলো। সে রাগন্বিত কন্ঠে বলল,’এই মেয়ে তুমি আবার এসেছো!!আমার গায়ে গোবর,পানি দিয়ে মন ভরেনি তোমার?’
জুম্মান নওশাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,’আরে ভাই পরী আপার এক পায়ের নূপুর হারাইয়া গেছে। তাই খুঁজতে আইছি।’
-‘পরীর নূপুর এইদিকে পড়েছে?কই দেখি।’
নওশাদ এগিয়ে নিজেও খুজতে লাগল। কুসুম জুম্মান কে চোখ মেরে বলল,’পরী আপার কত শখের নূপুর টা। যে পাইয়া দিব তারে পরী আপা মনে হয় পুরস্কার দিবো। চল জুম্মান ভাল কইরা খুঁজি।’
পরীর মন পাওয়ার লোভে নওশাদ বলল,’তোমরা যাও পরীর নূপুর আমি খুঁজে দিব।’
-‘দেইখেন কিন্ত হবু দুলাভাই। তাইলে পরী আপা আপনের উপর খুব খুশি হইবো।’
নওশাদের পাগলামো দেখে শায়ের হেসেই যাচ্ছে। কি নাকানি চুবানি দিচ্ছে ওরা। হঠাৎই শায়েরের খেয়াল হলো সকাল থেকে সে একটু বেশিই হাসছে। আগে তো হাসতোই না। হলো কি ওর?এসব ভাবতে ভাবতে শায়ের নিজ গন্তব্যে চলে গেল।
শায়ের যখন ফিরল তখন বেলা সাড়ে দশটার বেশি বাজে। এসে দেখলো নওশাদ এখনও সেই হারানো নূপুর খুঁজে যাচ্ছে। শায়ের হাসি চেপে এগিয়ে গিয়ে বলল,’আপনি এখনও সেই নূপুর খুঁজে যাচ্ছেন?’
-‘কি করবো বলুন পরীর নূপুর বলে কথা।’
-‘আচ্ছা আপনি কি ছোট কন্যাকে কখনো এখানে আসতে দেখেছেন?’
-‘না তো।’
-‘তাহলে তার নূপুর এখানে আসবে কিভাবে?’
বোকা বনে গেল নওশাদ। তাই তো!!পরী তো কখনোই বৈঠক ঘরে আসেনা তাহলে নূপুর আসবে কোথা থেকে? তাহলে কি ওই কুসুম ওকে বোকা বানালো? রাগে গজ গজ করতে করতে নওশাদ নিজের ঘরে চলে গেল। শায়ের মুচকি হেসে নিজের ঘরে চলে গেলো।
হতাশ হয়ে নিজের ঘরে বসে আছে পরী। খালি পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সারা অন্দর খুঁজেও নূপুর টা পাওয়া গেল না। তারপর থেকেই পরীর মনটা একটু বেশিই খারাপ। পালঙ্ক থেকে উঠে গিয়ে সে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। একঝাক মুক্ত বাতাস এসে ছুঁয়ে দিলো পরীকে। চোখদুটো বন্ধ করে ফেলে পরী। চোখের সামনে ভেসে উঠল সোনালীর হাস্যজ্বল মুখটা। দেখতে বড়ই ভালো লাগছে পরীর। মনে হচ্ছে সোনালী ওর কাছেই আছে। কিন্ত এই ভালোলাগার স্থায়ীত্ব বেশিক্ষণ হলো না। দরজার ক্যাচ ক্যাচ শব্দে ফিরে তাকালো সে। রুপালি এসেছে,সে পরীর কাছে এসে দাঁড়াল। শান্ত গলায় বলল,’রাগ করে আছিস আমার উপর?’
পরী মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল,’নাহ।’
-‘পরী আমি সিরাজ কে ভালোবেসেছি আর বড় আপা রাখালকে। বড় আপার ভাগ্যে তার ভালোবাসা থাকলেও আমার ভাগ্যে নেই। কষ্ট হলেও আমি মানিয়ে নিচ্ছি পরী। তুই কেন পারবি না?তুই তো কাউকে ভালোবাসিস না। তোর তো কোন কষ্ট হবে না পরী। আমার মতো তো অতীতের স্মৃতি নিয়ে তোকে বাঁচতে হবে না।’
-‘ভালোবাসার মানুষ কে যেমন ভোলা যায় না তেমনি ঘৃণা করা মানুষ কে ভালোবাসা যায় না।’
-‘এভাবে বলিস না পরী। নওশাদ কে আমি চিনি। ও খুবই ভাল ছেলে।’
-‘নিজের স্বামীকে এতোদিনে চিনতে পারলে না। আর তুমি চিনবে তোমার দেওরকে?হাসালে আপা তুমি।’
কথার জালে বারবার রুপালিকে পেঁচিয়ে ফেলছে পরী। আর কিছুই বলার নেই রুপালির। যা করার এখন নওশাদ কেই করতে হবে। পরীকে বোঝাতে হবে যে নওশাদ খুবই ভালো ছেলে। রুপালি আস্তে করে পরীর ঘর থেকে বের হয়ে এলো। পরী আবার জানালার ধারে গিয়ে আকাশ পানে তাকালো। আজ আকাশে মেঘ নেই ঝকঝকে রোদ উঠেছে। অথচ পরীর মনে রোদ নেই। মেঘে ঢাকা পড়েছে তার মনের সূর্যটা। পরী গোমড়া মুখে আকাশটাকে দেখে চলছে।
মালা মুখ কালো করে বসে আছে। পাশেই রুপালি বসে। মালা সায় দিচ্ছে না পরীর বিয়েতে। সে তো নওশাদ কে ভালোভাবে চেনে না। আর তাছাড়া নওশাদের পরিবার কেমন তাও জানে না। সোনালী তো চলেই গিয়েছে। রুপালি অনেক কষ্টে নিজের সুখ খুজে পেয়েছে। কিন্ত পরীর ব্যপারে মালা খুব সচেতন তাই মালার মনের ভেতর নাড়া দিচ্ছে ভয়। রুপালি বারবার মালাকে বুঝিয়েও মানাতে পারছে না।
জুম্মান ঘাটে গেল পানি কতটুকু কমেছে তা দেখার জন্য। লাঠিটা উঠিয়ে সে দেখলো অনেক পানি কমে গেছে। যাদের বাড়িঘর একটু উঁচুতে ছিল তাদের ঘর জেগেছে। দুএক পরিবার ঘর ঠিক করে সেখানে থাকছে। বন্যা এসেছে আজ ছাব্বিশ দিন চলছে। জুম্মান সব হিসেব করে রেখেছে। হিসেবের দিক দিয়ে জুম্মান খুবই সচেতন। সে লাঠিটা আবার পুঁতে দিলো। ঘুরে দাঁড়াতেই দেখলো নওশাদ দাঁড়িয়ে আছে।
-‘মিথ্যে বললে কেন আমাকে?’
-‘কি মিথ্যা কইছি আমি?’
-‘পরীর নূপুর সত্যিই হারিয়েছে?’
-‘সত্যিই তো। আপা সকাল থেকে মন খারাপ কইরা বইসা আছে।’
সন্দিহান চোখে জুম্মানের দিকে তাকিয়ে নওশাদ বলল,’তোমার আপা তো বৈঠক ঘরে আসে না তাহলে নূপুর টা বৈঠক ঘরে আসবে কিভাবে?’
জুম্মান মাথা চুলকে বলল,’সেটাও তো কথা। তাইলে আপা বৈঠক ঘরে আমাগো খুঁজতে কইলো ক্যান?’
নওশাদ বুঝলো যে ছোট্ট জুম্মান কিছুই জানে না। ওই কুসুম মেয়ে টাই কিছু করেছে। আসার পর থেকে ওর পিছনে লেগেই আছে মেয়েটা। এদিকে কবির ও নেই। দুই শ্বশুরের সাথে কোথায় যেন গিয়েছে।
জুম্মান ছোট নৌকায় উঠতে উঠতে বলল,’যাই আবার কতগুলা শাপলা নিয়া আসি। দেখি আপার মন ভালো করতে পারি নাকি!!’
নওশাদ শুনেই বলে উঠল,’এই আমি যাব আমি যাব।’
বলতে বলতে এক প্রকার লাফিয়ে নৌকায় চড়ে বসে নওশাদ।’
দুজনে মিলে শাপলা বিলে আসলো। বিলে গিয়ে দেখলো ছেলেমেয়েরা গোসলে নেমেছে। পানি অনেক কমে গিয়েছে বিধায় ওদের যেন সুবিধা হয়েছে। একপাশে বিন্দুর ভেলা দেখা গেল। সেও শাপলা তুলতে এসেছে। জুম্মান কে দেখে সে ভেলা নিয়ে এগিয়ে এলো।
-‘আরে জুম্মান যে। তা কি মনে কইরা?আর এই বেডা কেডা?’
-‘মেজো আপার দেওর গো। হের লগে আমাগো পরী আপার বিয়া হইবো।’
বিন্দু পা থেকে মাথা পর্যন্ত অবলোকন করলো নওশাদের। দেখতে ছেলেটা ভারি সুন্দর। শার্ট প্যান্ট পড়ায় আরো সুন্দর লাগছে। এই গ্রামে খুব কম যুবকরা শার্ট প্যান্ট পড়ে থাকে। টাকার অভাবে অনেকে কিনতে পারে না। লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরেই থাকে সারাদিন। সম্পানও লুঙ্গি পরে। বিন্দু ভাবলো ইশশ সম্পান যদি এই রকম শার্ট প্যান্ট পড়তো কতই না সুন্দর লাগতো ওকে। নওশাদের মতো একজোড়া জুতো পড়লে একেবারে সাহেবদের মতো লাগবে। ভেবে মনে মনে হাসল বিন্দু।
-‘কি গো বিন্দু দিদি কইলা না আপার জামাই কেমন?’
-‘রাজ পুত্তুর রে জুম্মান। পরীর চান কপাল। যেমন সুন্দর পরী তেমন সুন্দর জামাই। পরীর লগে তো কথা কইতে হইবো। সই আমার বিয়া করব।’
-‘তুমি পরীকে দেখেছো? কেমন দেখতে?’
হঠাৎই নওশাদ প্রশ্ন করে বসে। বিন্দু মৃদু হাসে নওশাদের আগ্রহ দেখে।
-‘এতো গরজ ক্যান গো বাবু?তর সয় না বুঝি?চান্দের লাহান মুখখান দেহার লাইগা তইয়ার হইয়া যান। জ্ঞান হারাইতে পারেন। তয় এইডা কইতে পারি আপনে ঠকবেন না।’
খিলখিল করে হেসে উঠল বিন্দু। তারপর নিজের কাজে মন দিলো। বিন্দুর কথা ও হাসির তোড় নওশাদের দুকান ভরে বাজে। সত্যিই এতো অপরূপা পরী?
জুম্মান হাল্কা ঝুঁকে শাপলা তুলতে গেল। কিন্ত নওশাদ তাতে বাধা দিলো। পরীর জন্য সে নিজেই শাপলা তুলবে। তাই সে ঝুকে কয়েক টা শাপলা তুলল। আরেকটু দূরে একটা পদ্ম দেখা যাচ্ছে। খুশিমনে নওশাদ পদ্ম তে হাত দিলো। পদ্মের বোটা একটু শক্ত বিধায় কসরত করতে হচ্ছে। এমন সময় জুম্মান হাতের বাঁশ টা দিয়ে নৌকাটা হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। ভারসাম্য রাখতে না পেরে নওশাদ ধপাস করে পানিতে পড়ে গেল। আশেপাশের সবাই তা দেখে হেসে উঠল। জুম্মান নিজেও হাসতে লাগল। বিন্দু হাসি থামিয়ে বলল,’কিগো বাবু পরীর প্রেমে পড়ার আগেই জলে পড়লা।’
বিন্দুর হাসি আরো বাড়লো। এবার আর রাগ করলো না নওশাদ। সে নিজেও হাসলো বলল,’তোমাদের পরীর প্রেমই আমাকে পানিতে এনে ফেলেছে। কি করব বলো?’
-‘তুমি খুব রসিক গো বাবু। পরীর ভাগ্য ভালা।’
বিন্দুর প্রশংসায় নিজের প্রতি গর্ব হচ্ছে নওশাদের। সে সাবধানের সহিত পানি থেকে নৌকাতে উঠে আসে। তারপর ফিরে আসে জমিদার বাড়িতে। উঠোনের এক কোণে বাঁশের বেঞ্চি পাতা। শায়ের আর কবির সেখানে বসে কথা বলছে। নওশাদ কে ভেজা গায়ে আসতে দেখে কবির বলে উঠল,’তুই এভাবে ভিজলি কিভাবে?
-‘শাপলা তুলতে গিয়ে পানিতে পড়ে গেছি।’
-‘ইশশ শেষমেশ পঁচা পানিতে পড়লি!!যা যা কলপাড়ে। আমি তোর জামাকাপড় দিচ্ছি।’
কবির উঠে চলে গেল। জুম্মান শাপলাগুলো দূরের ফেলে দিয়ে এলো। শায়ের অবাক হয়ে বলে,’ফেললে কেন?’
-‘তো কি করমু ওই বেডার ফুল আপারে দিমু? আপা তো আমারে মাইরা ফালাইবো। আমার ভাল লাগে না হ্যারে।’
-‘তাহলে কাকে ভাল লাগে?’
-‘আপনেরে।’
বলেই হাসলো জুম্মান। শায়ের বেশ অবাক হয়ে বলে,’আমার থেকেও তো তোমার নওশাদ ভাই বেশি সুন্দর।’
-‘তাও তারে আমার ভালো লাগে না। হের চেহারায় কোন মায়া নাই। কিন্ত আপনের আছে। আপনে অনেক ভাল মানুষ। আপনের কথাও ভাল লাগে।’
তাজ্জব বনে গেছে শায়ের। মাথা ঠিক আছে তো জুম্মানের?কোথায় নওশাদ আর কোথায় সে!! আকাশ পাতাল তফাত। তার সাথে তো নওশাদের তুলনা হয়ই না। জুম্মান চলে যেতে নিচ্ছিল কিন্ত আবার শায়েরের সামনে এসে বলে,’একখান কথা কই সুন্দর ভাই? পরী আপার লগে আপনেরে কিন্ত খুব মানাইবো।’
কথা শেষ করে জুম্মান আর দাঁড়াল না। দৌড়ে অন্দরের ভেতর চলে গেল। শায়ের স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। পরে ভাবল ছোট্ট ছেলে। মনে যা এসেছে তাই বলেছে। বুঝলে একথা বলতো না। কোথায় রাজকুমারি আর কোথায় সামান্য মালি।
ঘুটঘুটে অন্ধকার। রাত্রি অনেক তা বোঝাই যাচ্ছে।মধ্যরাতের বেশি তো হবেই। জমিদার বাড়ির চাকররা পর্যন্ত ঘুমিয়ে পড়েছে। অন্দরের দরজা খুলে বৈঠকে প্রবেশ করে কেউ। তার হাতে হারিকেন। মুখটা সপ্তবর্ণে ঢেকে কিছু একটা খোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্ত পাচ্ছে না তবুও সে হাল ছাড়ছে না। তখনই একটা ভারি পুরুষালী কন্ঠস্বর ভেসে আসে,’আপনি আবার বৈঠকে এসেছেন!!’
#চলবে,,,,,