#প্রণয়
#পর্বঃ২০
#তানিশা সুলতানা
রুটির মধ্যে ডিম দিয়ে রুটিটাকে রোল বানিয়ে একটা কমড় বসিয়েছে তানহা। এক কামড়ে পুরো অর্ধেক রুটি মুখের ভেতরে নিয়ে নিয়েছে। এখন চিঁবতেও পারছে না গিলতেও পারছে না।
“বাবু ওদের সবাইকে নিয়ে যাবে তুমি। ঘুরিয়ে আনবে কক্সবাজার। আর হ্যাঁ নানুবাড়িতে গিয়ে থাকবে।
তমাল কথা শেষ করে বেরিয়ে যায়। ওনার পেছন পেছন তাহেরও চলে যায়। সূচক তানহার দিকে কটমট চাহনিতে তাকাতে তাকাতে চলে যায়। তোহা ইরা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। আর তানহা মুখটা হা করে কপালে হাত দিয়ে বসে থাকে।
” সাথে উটকো ঝামেলা দিয়ে দিলো??
গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তানহার। মুখের ভেতরে থাকতে থাকতে রুটি নরম হয়ে আসে। কোনো রকমে চিবিয়ে পানি দিয়ে গিলে ফেলে। বাকিটা হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরে।
“ইরা আপি চলো চলো আমরা লাগেজ গুছিয়ে ফেলি।
তোহা আর ইরা চলে যায়। তানহা গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। ওরা গেলে কিছুতেই যাবে না তানহা। যেতে তো চেয়েছিলো বিয়ে করতে। ঘুরতে একদম যাবে না।
” তানহা তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ কর। এভাবে বসে আছিস কেনো? ঔষধ খেতে হবে তো তোর।
তমা বেগম তানহার মাথায় আস্তে করে থাপ্পড় দিয়ে বলে। তানহা মায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে রোলটা হাতে নিয়ে খেতে খেতে রুমে চলে যায়। তমা বেগম বিলাপ বকতে থাকে।
“এই মেয়েটা মানুষ হবে না। এক জায়গায় বসে খেতে হয় এই জিনিসটাই শিখাতে পারলাম না আমি। সারাদিন টইটই করবে আবার খাওয়ার সময়ও টইটই। জান খে*য়ে ফেলবে আমার।
তানহা মায়ের কথায় পাত্তা দেয় না। রুমে গিয়ে খাটের ওপর বসে খেতে থাকে।
” বিছানায় বসে খেতে হয় না জানিস না তুই? ওঠে তাড়াতাড়ি
তোহা তানহার হাত ধরে টেনে বিছানা থেকে উঠিয়ে দেয়। তানহা ভীষণ বিরক্ত এখন।
মানে সবাই খালি বকবেই? কেউ তো একটু ভালোবেসে কথা বলতে পারে।
বাকি রুটি টুকু মুখে পুরে সূচকের রুমের সামনে যায়। ও বাবা ইভা মাথায় ঘোমটা টেনে কফির মগ হাতে নিয়ে ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে। আর সূচক বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে ফোন দেখছে। এখনো খেয়াল করে নি ইভাকে।
তানহা দাঁত কটমট করে ভেতরে ঢুকে পড়ে হুরমুরিয়ে।
“আরে ইভা যে
তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
তানহা একটু হাসার চেষ্টা করে জোরে বলে। সূচক এক লাফে উঠে বসে। ইভাও খানিকটা ভেবাচেকা খেয়ে যায়
” এই তো ওনাকে কফি দিতে এসেছিলাম
একটু হাসার চেষ্টা করে সূচকের সামনে কফির মগের এগিয়ে দিয়ে বলে ইভা।
সূচক তানহার দিকে এক পলক তাকিয়ে কফিটা হাতে নেয়।
“মা ডাকছে তোমায়। এতোগুলো মাছ এনেছে। সূচক ভাইয়া আবার মাছ দেখে দারুণ ভালোবাসে। তুমি নিজে হাতে মাছ গুলো কেটে রান্না করে নিয়ে এসো।
একবার মন গলাতে পারলেই কেল্লা ফতে।
তানহা ইভার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে। ইভা এক গাল হেসে দৌড়ে চলে যায়।
কাজ করায় একদম এক্সপার্ট এই মেয়ে। যে কোনো কাজ খুব ভালো করেই করতে পারে।।আর কাজ করতে ভালোও বাসে।
ইভা বেরিয়ে যেতেই তানহা ঠাস করে সূচকের পাশে বসে সূচকের হাত থেকে কফির মগটা টেনে নিয়ে তাতে চুমুক দেয়।
” এখানে কেনো এসেছিস?
তানহা ধীরেসুস্থে কফিটা গিলে।
“আপনি না আমায় ভালোবাসেন? তাহলে সব সময় এরকম জল্লা*দের মতো মুখ করে থাকেন কেন? একটু হাসতে পারেন আমাকে দেখে। আড় চোখে তাকাতে পারেন আমার দিকে।
একটু আতটু রোম
তানহা বাকি কথা শেষ করার আগেই কোমরে ঠান্ডা একটা হাতের স্পর্শ পায়। শিউরে ওঠে। হাতে থাকা কফির মগের পড়ে বিকট শব্দ করে। চোখ দুটো বড়বড় করে সূচকের দিকে তাকাতে যেতেই আবার অনুভব করে সূচকের মুখটা তানহার ঘাড়ে। হাত পা কাঁপতে শুরু করে তানহার। বুকটা টিপটিপ করছে। হার্ট বিট দ্রুত লাফাচ্ছে।
ঘনঘন নিশ্বাস পড়ছে ঘাড়ে। চোখ মুখ খিঁচে শক্ত হয়ে যায় তানহা। শ্বাস নিতেও ভুলে গেছে।
ঘাড়ে এবার ঠোঁটের স্পর্শ পায় তানহা। শক্ত করে খামচে ধরে সূচকের হাত।
” এখন থেকে তুই আড় চোখে তাকিয়ে থাকিস।
কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে সূচক।
তানহা আরও জমে যায়। কিছু বলতে চাইছে কিন্তু গলায় কথা আটকে যাচ্ছে। মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।
সূচক ডান হাতটা তানহার গালে রাখে। ঠোঁটের আশেপাশে লেগে থাকা রুটির গুড়িগুড়ি অংশ হাতে বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে আলতো করে মুছে দেয়। তানহার কাঁপা-কাঁপি বেরে যায়।
তানহা সূচকের হাত ছেড়ে টিশার্টটা শক্ত করে ধরে।
“তোর দিকে তো আমার তাকাতেই ইচ্ছে করে না। আস্ত পাগল একটা। তাকালেই ইচ্ছে করে থাপ্পড়ে গাল লাল করে দিতে।
গালে হাত ছুঁয়িয়ে বলে।
তারপর দুজনই কিছুখন চুপ। সূচক তানহার চুলে ঘ্রাণ নিচ্ছে আর তানহা সূচকের নিশ্বাস গুনছে।
” খাবার খেয়ে পানি খেয়েছিস?
সূচক ঘাড় থেকে মুখ তুলে তানহার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে। তানহা কোনো উপর দেয় না। ওভাবেই চোখ মুখ খিঁচে থাকে।
সূচক তানহার মুখে ফু দেয়। বন্ধ চোখের পাতা কেঁপে ওঠে। ঠোঁট প্রসস্থ করে একটু হাতে সূচক। সেই হাসিতে কোনো শব্দ নেই।
আবারও ঘাড়ে মুখ ডোবায়।
পরপর কয়েকবার ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে ছোট্ট করে একটা কামড় দিয়ে সূচক ছেড়ে দেয় তানহাকে। ফোন নিয়ে আবার আগের মতো শুয়ে পড়ে। তানহা এখনো শক্ত হয়ে বসে আছে।
কি ছিলো এটা?
নরাচরা শক্তি পাচ্ছে না এখনো। কোনো রকমে শ্বাস টানছে।
” দুই মিনিটের মধ্যে এখান থেকে না গেলে যেটা হয়ে গেছে সেটা আবার হবে।
সূচক গম্ভীর গলায় বলে।
ধাপ করে চোখ খুলে তানহা। সূচকের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। গাল দুটো ভাঠি ভাড়ি লাগছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এখনো হাত পা কাঁপছে একটু একটু।
উঠে দাঁড়ায় যাওয়ার জন্য।
“মনটা নিয়ে যা
সূচক একই ভঙিতে বলে।
তানহা মনটা তুলে দাঁড়াতেই আবারও সূচকের গম্ভীর কন্ঠ
” গুনে গুনে দুই গ্লাস পানি খেয়ো ঔষধ খেয়ে নিস।
এক দৌড়ে এই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
ইরা আর তোহা ফোনে ভিডিও দেখছে তানহা এক দৌড়ে এসে শুয়ে পড়ে। দুজনই ভ্রু কুচকে এক পলক তাকায় তানহার দিকে। তারপর আবার নিজেদের কাজে মনোযোগী হয়।
সাদিয়া বেগমের মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ওনার বড় ভাই ফোন করে জানিয়েছে।
বাবা মারা গেছে কয়েকবছর আগে। এখন মা টাই সম্বল। মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে পাগল হয়ে গেছে যাওয়ার জন্য।
সূচক এমনিতেও কক্সবাজার যাবে। সাদিয়া বেগম এখন তাড়া দিচ্ছে এখনই নিয়ে যাওয়ার জন্য। সূচক ভীষণ বিরক্ত। একটা বিয়েতে এতো বাঁধা আসতেই হবে?
আগে জানলে কালকেই বিয়েটা সেরে ফেলতো।
সাদিয়া বেগম তোহা আর তানহাকেও রেডি হতে বলে দিয়েছে। ইরা আর ইভার যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও উনি নেবেন না।
কারণ তমা বেগম বাড়িতে একা কাজের জন্য। বুড়ো শাশুড়ী তারপর তমাল আর তাহের।
সব মিলিয়ে উনি একা পারবে না। তাই ওদের রেখে যাবে তমা বেগমের হাতে হাতে কাজ করে দেওয়ার জন্য।
তানহা এখনো সেই ঘোর থেকে বের হতে পারছে না। খালি সেই দৃশ্যটাই মাথায় ঘুরছে।
তোহার নানু বাড়ি যেতে দারুণ লাগে।
নানু বাড়ি দুরে হওয়াতে দুই তিন বছর পর পর যাওয়া হয়।
চটপট তোহা রেডি হয়ে নেয়।
তানহা ঝিমচ্ছে দেখে তোহা বিরক্ত হয়ে জোর করে ড্রেস দিয়ে ওকে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয়। আর তোহা তানহার জামাকাপড় নিজের ব্যাগে নিয়ে নেয়।
তানহা ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে।
উসকো খুশকো চুল নাকের ওপর ডার্ক পিপল, শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট। মনে হচ্ছে খড়া ধরেছে। শীত আসছে। এখন ঠোঁট হাত পা এমন হয়ে হবে।
শ্যামলা মুখটা আরও কালো দেখাচ্ছে।
তানহা মুচকি হেসে ঘাড়ে হাত বুলায়। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। লাল হয়ে গেছে জায়গাটা।
তারপর ফ্রেশ ওয়াশ দিয়ে দুই বার মুখ ধুয়ে শেম্পুর করে চটপট গোছল সেরে নেয়।
আজকে নিজেকে গোছাবে। যাতে সূচকের ওর দিকে তাকালে পাগল মনে না হয়।
নীল রংয়ের একটা গাউন পড়ে নেয়।
তোহা রেডি হয়ে বিছানায় বসে আছে। তানহাকে বের হতে দেখে বড়বড় চোখ করে তাকায়।
যে মেয়ের দশ মিনিটেই গোছল শেষ হয়ে যায় ডেকে আজ পাক্কা আধ ঘন্টা লাগিয়েছে।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে সুন্দর করে সাজুগুজু করতে থাকে তানহা।
“তানহা আমরা না বিয়ে খেতে যাচ্ছি না। মা আর ভাইয়া অনেকখন দাঁড়িয়ে আছে। চল
সবে এক ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছে। তখনই তোহা ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।
চুল টাও আঁচড়াই নি। শুধু মুখে স্নো আর চোখে মোটা করে কাজল দিয়েছে।
” বাকিটা গাড়িতে বসে করিস।
তানহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ওর আর স্মার্ট হওয়া হলো না। সারাজীবন এমন অগোছালোই থাকবে।
চলবে
#প্রণয়
#পর্বঃ২১
#তানিশা সুলতানা
“এই পাগল ছাগল এভাবে কেনো আসছে??
সূচক গাড়িতে বসে তানহার দিকে কটমট চাহনিতে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
তানহা গাল ফুলিয়ে সূচকের পাশে বসে পড়ে। তোহা আর সাদিয়া বেগম পেছনে বসে।
” একদম পাগল বলবেন না বলে দিলাম।
আঙুল তুলে চিল্লিয়ে বলে তানহা। ড্রাইভার একবার পেছন ঘুরে ওদের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে দেয়।
“বাবু তোর সমস্যা কি? মেয়েটার সাথে এমন কেনো করছিস?
চোখ পাকিয়ে বলেন সাদিয়া বেগম।
” তো কি করবো? অবস্থা দেখো ওর।
ইডিয়েট একটা।
“ভালো করে বুঝিয়ে বললেই তো হয়।
ক্লান্ত গলায় বলে সাদিয়া বেগম।
” ও বুঝবে? আস্ত একটা ইডিয়েট
সাদিয়া বেগম কথা না বাড়িতে চোখ বন্ধ করে ছিটে মাথা ঠেকায়।
তানহা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
“উনি আমাকে দুচোখে দেখতে পারে না। খালি ধমক দেয়। আমিও আপনাকে দেখতে পারি নি। হুহহহহহ
তানহা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। চোখের পানির থেকে নাকের পানি বেশি পড়ছে।
সূচক বাঁকা চোখে এক পলক তানহার দিকে তাকায়।
তোহা ফোন নিয়ে ব্যস্ত। তার এই দিকে মন দেওয়ার সময়ই নাই। তবুও তানহার নাক টানাতে ভীষণ বিরক্ত লাগছে।
” তুই নাক টানা বন্ধ কর। তাজ ঠিকি বলে। তোর নাক কেটে ফেলা উচিৎ।
তোহা বিরক্ত হয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বলে তোহা। তোহার কথায় তানহার অভিমান আকাশ ছুঁই ছুঁই
কেউ দেখতে পারে না ওকে। সবদই শুধু বকে। থাকবেই নদীর ওদের সাথে।
“গাড়ি থামান আমি নামবো।
তানহা নাক টেনে ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলে।
” ইহহহহহহহ বুচি। গাড়ি থেকে নামবে। সাহস দেখে থাপ্পড়াইতে ইচ্ছে করছে
সূচক বলে।
“তোরা দুইজন এবার মাইর খাবি আমার হাতে। মেয়েটার পেছনে কেনো লাগছিস? আর একটা কথা বললে দুটোকেই নামিয়ে দেবল আমি।
সাদিয়া বেগম ধমক দিয়ে বলে।
তানহার কান্না থেমে যায়। বেশ হয়েছে এদের বকে দিছে।
বিশ্ব জয়ের হাসি দেয় তানহা। সূচক তানহাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।
এক ঠোঁটে নেওয়া লিপস্টিক এখন ঠোঁটের আশেপাশে মাখিয়ে গেছে। এলোমেলো চুল গুলো আরও এলোমেলো হয়ে গেছে। চোখের কাজল লেপ্টে গেছে। কান্না করার জন্য নাকে পানি চলে এসেছে। নাকটাও হালকা লাল হয়ে গেছে। মুখে পাউডার নিয়েছিলো সেটা এল জায়গায় আছে তো আরেক জায়গায় নাই।
কে বলেছে একে সাজতে???
ইডিয়েট একটা। পাগল বানিয়ে দেবে আমায়।
বিরবির করে বলে পকেট থেকে টিস্যু বের করে সূচক। আর তানহার ব্যগ থেকে হেয়ার কিলিপ বের করে।
সূচক টিস্যুটা তানহার দিকে এগিয়ে দেয়। তানহা এক পলক টিস্যুর দিকে তাকিয়ে আরেক পলক সূচকের দিকে তাকায়। তারপর টিস্যুটা হাতে নিয়ে নাক মুছে ফেলে দেয়।
” তোর ওই দু টাকার লিপস্টিক মুছে ফেল। নাক মোছার জন্য দেই নি। ওটা তুই তোর ওড়না দিয়ে মুছে ফেল।
সূচক দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
“দু টাকার না। একশত বিশ টাকার লিপস্টিক আমি এক ঘন্টা দামাদামি করে নব্বই টাকা দিয়ে কিনেছি। দুই টাকায় লিপস্টিক পাওয়া যায় না।
সূচক বাঁকা চোখে তাকায় তানহার দিকে। সূচকের নজর খেয়াল করে তানহা আবার বলা শুরু করে
” এবার নিশ্চয় কাজলের কথা বলবেন?
কাজল বিশ টাকা দিয়ে কিনেছি। দাম কম হলেও মান ভালো।
“তা তো দেখতেই পাচ্ছি।
সূচক ফোঁস করে শ্বাস টেনে তানহার হাত থেকে টিস্যু নিয়ে নেয়। তারপর খুব যত্ন করে ঠোঁটের লিপস্টিক আর লেপ্টে যাওয়া কাজল মুছে দিতে থাকে।
আর এই সুযোগেই তানহা প্রাণ ভরে সূচককে দেখতে থাকে।
“হাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেনো স্টুপিট?
ধমক দিয়ে বলে সূচক। তানহা কেঁপে ওঠে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
” শান্তিতে একটু দেখতেও দেবে না। হনুমান একটা
বিরবির করে বলে সূচক।
মুখটা ভালো করে মুছিয়ে হেয়ার ক্লিপ তানহার হাতে দেয়।
“চুল বেঁধে ফেল।
তানহা কোনো কথা ছাড়াই চুল বেঁধে ফেলে।
বিজয় স্যার খুব জ্বালাচ্ছে তোহাকে। সকাল থেকে মেসেজ দেওয়া শুরু করেছে। একটা দুইটা না বিশটা মেসেজ দিয়েছে। সব গুলোই oiii মেসেজ।
তোহার ভীষণ বিরক্ত লাগছে লোকটাকে। এভাবে জ্বালানোর কোনো মানে হয়?
না পারছে কাউকে বলতে আর না পারছে সয্য করতে।
সূচক ফোন ঘাটছে। দুই কানে হেডফোন গুঁজে পায়ের ওপর পা তুলে বসে ফোন দেখছে।
তানহা আড়চোখে সূচককে দেখছে। দাঁড়ি গুলো বেশ বড় হয়েছে। চুল গুলোও বড় হয়ে গেয়েছে। হয়ত সেলুনে যাওয়ার সময় পাচ্ছে না।
কি এমন কাজ করে যে সেলুনে যাওয়ার সময় হচ্ছে না?
তবে এই লুকে কিউটনেস বেরে গেছে। একদম কিউটের বস্তা লাগছে।
ইচ্ছে করছে বড়বড় চুলের মধ্যে নিজের হাত ডুবিয়ে দিতে। ফর্সা বড় হাতটার মধ্যে নিজের ছোট হাতটা ঢুকিয়ে দিতে।
বেশ কিছুখন লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু সেই সাহসটা কি আর তানহার আছে?
একটু ভালো করে তাকালেই ধমক দিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেবে। লাটসাহেব কি না।
মানে এই লোকটা কি সারাজীবনই এরকম বেরসিক থাকবে? না কি বিয়ের পরে রোমান্টিক হয়ে যাবে?
অবশ্যই হবে না। এর রক্তে রক্তে মিশে আছে বেরসিকতা।
” হারে তানহা তোর কপাল পুরেছে।
কপাল চাপকে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জোরে বলে ওঠে তানহা। সূচকের গান তখন শেষ হয়ে গেছে। তানহার কথা শুনে চট করে হেডফোন কান থেকে খুলে কপাল কুচকে তাকায় তানহার দিকে।
তাহা শুকনো ঢোক গিলে। কথাটা মনে মনে বলতে চেয়েছিলো। জোরে কি করে বলে ফেললো?
“চাপকে যেদিন তোর দাঁত ফেলে দেবো। সেদিন তোর কপাল খুলবে গাঁধা।
ফোন পকেটে পুরে তানহার একটা হাত মুঠো করে ধরে বলে সূচক। তানহা খুশিতে গদগদ হয়ে সূচকের হাতটা জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখে।
সূচক ধমক দিতে গিয়েও দেয় না।
সারাক্ষণ বকাবকি করতে ভালো লাগে না।
ছয় ঘন্টা জার্নি শেষে কক্সবাজার পৌঁছে যায় ওরা। একদম নানুবাড়ির সামনে গাড়ি থামে। সূচকের মামা বাড়ি খুব বড়লোক। তানহাদের তুলনায় তিন গুন বেশি। বড় মা ও দারুণ সুন্দরী। তানহা মাঝেমধ্যে ভাবে এই রকম বড়লোক বাড়ির সুন্দরী মেয়েকে ওনারা কেনো তানহার বড়বাবার সাথে বিয়ে দিয়েছিলে?
গাড়ি থেকে নামতেই দেখতে পায় বৃষ্টি, বৃষ্টির বড় ভাই, বিহান, মামা নানা মামি দাঁড়িয়ে আছে।
সাদিয়া বেগমরা দুই ভাই আর উনি তাদের একমাত্র বোন।
বৃষ্টি ঢাকায় পড়াশোনা করে ওর ছোট চাচার বাড়ি থেকে। সূচক আর বৃষ্টি একই ভার্সিটিতে।
তোহা নেমে এক দৌড়ে গিয়ে নানাভাইকে জড়িয়ে ধরে।
সত্তরের ওপরে লোকটার বয়স। কিন্তু তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই তার এতো বয়স। এখনো খাবার খায় হিসেব করে। রোজ সকালে হাঁটাহাঁটি করে।
তানহা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায়। সাদিয়া বেগম বাবা ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলে। কত বছর পরে আসলো।
ওনার ছোট ভাই ঢাকায় থাকে বউ বাচ্চা নিয়ে। তারাও আসছে মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে।
তানহাও সালাম নিয়ে সবার সাথেই টুকটাক কথা বলে শুধু বৃষ্টির সাথে বলে না। বৃষ্টিও আগে বাড়িয়ে বলে না। সবাই তানহা বেশ পছন্দ করে।
সবাই ভেতরে যায়। সূচকের ফোনে কল আসায় ও পেছনে পড়ে যায়।
তানহাও দাঁড়িয়ে থাকে বাইরে। সূচক কথা বলা শেষ করে এসে দেখে তানহা দাঁড়িয়ে আছে। মুচকি হাসে সূচক।
“তানহা চল আমার সাথে।
তানহার হাতটা মুঠো করে ধরে বলে সূচক।
” ঘুরতে নিয়ে যাবেন?
খুশিতে গদগদ হয়ে জিজ্ঞেস করে তানহা।
“বিয়ে করবো।
বলেই হাঁটতে শুরু করে। তানহা কোনো কথা না বলে সূচকের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকে।
সত্যিই কি বিয়ে হবে আজ? এই স্বপ্ন পুরুষ কি সত্যিই তার স্বামী হয়ে যাবে?
আর ভাবতে পারছে না তানহা। খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখন নাচতে শুরু করলে থাপ্পড় খেতে হবে নিশ্চিত।
মেইন রোডে আসার পরেই দেখতে পায় দশ বারোটা বাইক দাঁড়িয়ে আছে। একটা বাইক খালি। আর বাকি বাইক গুলোতে দুজন করে ছেলে। এই ছেলে গুলোকে তানহা চেনে না। কখনো দেখেও নি।
” লাইলি মজনু হাজির।
সূচক আর তানহাকে দেখে ওনারা চিৎকার করে বলে। সূচক চোখ পাকিয়ে তাকায়। তানহার খুব হাসি পায়
বাইকে বসে হেলমেট পড়তে থাকে সূচক। বাকি বাইক গুলো চলতে শুরু করে দিয়েছে। তানহা যেনো ঘোরের মধ্যে আছে। কি হচ্ছে মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
“উঠবি না কি রেখেই চলে যাবো?
সূচক বলে। তাহা চট করে সূচকের কাঁধে হাত দিয়ে উঠে বসে।
চলবে
#প্রণয়
#বোনাস পর্ব
#তানিশা সুলতানা
লাল টুকটুকে গাউন পড়েছে তানহা। সাজানোর জন্য পার্লার থেকে মেয়ে আনলেও সূচক সাজাতে দেয় নি। অতোগুলো মানুষের সামনেই ধাপ করে বলে দিলো
“ওর যে স্বভাব। সাজানোর পরে দেখা যাবে এক ঠোঁটের লিপস্টিক খেয়েই ফেলেছে। তখন একদম পেত্নী লাগবে।
তানহা শুধু দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা হজম করে নিয়েছেন। একবার বিয়েটা শেষ হোক। এই লোকটাকে যদি বুড়িগঙ্গায় না চুবিয়েছে তাহলে ওর নামও তানহা না।
বড় একটা রুমে তানহারকে হাতে একটা গাউন দিয়ে রেডি হতে বলে সূচক। তানহার চট করে পড়ে বেরিয়ে এসে আবার সূচকের পাশ ঘেসে দাঁড়ায়।
কোনো একটা রেস্টুরেন্টের ছাঁদে এখন ওরা। ছাঁদটাকে খুব সুন্দর করে লাইটিং আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। স্টেজও সাজানো হয়েছে। সেখানে দুটো চেয়ার। চেয়ার দুটোও সুন্দর করে সাজানো। তানহা মুগ্ধ হয়ে চারপাশটা দেখছে।
সবগুলো ছেলে কালো পানজাবি পড়েছে আর সূচক লাল পানজাবি।
কি যে দারুণ লাগছে না লোকটাকে।
তানহার একটু খারাপ লাগছে কারণ একটাও মেয়ে নেই। একটা মেয়ে থাকতে পারতো। তানহারও আনইজি লাগতো না।
সূচক তানহার হাত ধরে স্টেজে উঠে বসে পড়ে। তানহাকেও বসতে বলে। তানহাও মাথা নিচু করে বসে পড়ে। নাক পর্যন্ত লাল ওড়না দিয়ে ঘোমটা টেনে দিয়েছে সূচক।
আজকে কেনো জানি তানহার খুব লজ্জা লাগছে। এই যে লজ্জায় সূচকের দিকে তাকাতে পারছে না। ছেলে গুলো ফোন, ক্যামেরা দিয়ে ছবি দেখছে ভিডিও করছে।
মাঝেমধ্যে বলছে ” ভাবি মুখটা তুলুন”
তবুও তানহা মুখ তুলতে পারছে না।
একটু পরেই লম্বা দাঁড়ি আর সাদা পানজাবি পড়া একটা হুজুর চলে আসে। তার হাতে ছোট একটা ব্যাগ। হুজুর আসতেই সূচক আর তানহার সামনে হুজুরকে বসার জন্য চেয়ার দেওয়া হয়।
মেয়ের এখনো আঠারো হয় নি তাই শুধু কলমা কবুল পড়িয়ে বিয়ে করতে হবে।
আঠারোর পরে রেজিস্টি করবে।
অবশেষে বিয়েটা শেষ হয়ে যায়। হুজুর চলে যায়। তানহা এখনো মাথা নিচু করে বসে আছে। পাশ থেকে সূচক অনেক আগেই উঠে গেছে। কোথায় সেটা দেখার জন্য মাথা তুলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না।
চারপাশে কথা, হাসাহাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
আস্তে আস্তে পুরো ছাঁদ খালি হয়ে যায়। তানহা এখন একা বসে আছে।
হঠাৎ ধাপ করে সূচক তানহার পাশের চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে। খানিকটা চমকে ওঠে তানহা এভাবে আচমকা বসার জন্য। চোখ দুটো বড়বড় করে সূচকের দিকে তাকায়।
ঘামে ভিজে গেছে পানজাবিটা। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।
“তুই খুশি তো তানহা।
চেয়ারে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে সূচক। তানহা ওড়নার এক কোনা দিয়ে সূচকের কপালের ঘাম মুছিয়ে দেয়। সূচক না তাকিয়েই তানহার হাতটা ধরে বুকের ওপর চেপে ধরে।
” বললি না তো খুশি কি না?
ফোঁস করে শ্বাস টেনে বলে সূচক।
“কি করে খুশি হবো? আপনি তো শুধু কথায় কথায় চাপকে দাঁত ফেলে দিতে চান।
মুখ বাঁকিয়ে অভিমানির সুরে বলে তানহা।
সূচক ঠোঁট প্রসস্ত করে একটু হাসে। সেই হাসিতে কোনো শব্দ নেই।
” তোকে আঘাত করার সাহস কি আর আমার আছে?
তানহা সূচকের মুখের দিকে তাকায়।
“তার মানে আপনি খালি আমাকে ভয় দেখান। আসল কথা হলো সত্যি সত্যি মারবেন না।
খুশিতে গদগদ হয়ে চেয়ারের ওপর পা তুলে বলে তানহা
সূচক চোখ খুলে চোখ পাকিয়ে তাকায় তানহার দিকে।
“সত্যি সত্যিই মারবো কথা না শুনলে।
ধমক দিয়ে বলে সূচক। তানহার হাসি হাসি মুখটা চুপসে যায়। গোমড়া মুখে পা নামিয়ে বসে।
সূচক মুচকি হাসে।
” গুড গার্ল
এবার চল যেতে হবে।
সূচক দাঁড়িয়ে পানজাবি ঠিক করে চুলে হাত বুলিয়ে ঠিকঠাক করে।
“কোথায় যাবো?
তানহা দাঁড়িয়ে বলে।
” আপাতত পার্লারে।
তানহার হাত ধরে বলে সূচক।
“পার্লারে কেনো?
খানিকটা অবাক হয়ে বলে তানহা।
” নাক ফুটো করতে হবে।
তানহা খানিকটা ভয় পেলেও শব্দ করে না। নাক তো ফুটো করতেই হবে। দাদিমার কাছ থেকে শুনেছে নাক ফুটো না করলে স্বামীর অকল্যান হয়।
রেস্টুরেন্টের বাইরে এসে দেখতে পায় বৃষ্টি আর তোহা দাঁড়িয়ে আছে। তানহা সূচকের দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়।
“তুই কি রে তানহা? দেখলিই তো দাভাই কতোটা জার্নি করে এসেছে। আর তোর এখনই এই ড্রেস লাগবে?
তোহা তানহার মাথায় চাটি মেরে বলে। তানহা গাল ফুলিয়ে তাকায় সূচকের দিকে। নিজেই আনলো আর এখন পুরো দোষ তানহার।
” শুধু কি তাই?
এখন বায়না ধরেছে নাক ফুটো করবে। বিয়ের বয়স হয়েছে কি না।
সূচক বলে। বৃষ্টির চোখে মুখে বিরক্ত ফুটে ওঠে। তোহা বড়বড় চোখ করে তাকায়।
তানহা মনে মনে সূচকের গুষ্টির পিন্ডি চটকাচ্ছে।
“তোরা নিয়ে যা ওকে। তোরাও ফুটো করে নিস।
পকেট থেকে টানা বের করে তোহার হাতে ধরিয়ে দেয় সূচক। তোহা বিরক্তির শ্বাস ফেলে।
” আসছি বউ। রাতে দেখা হচ্ছে বাসর ঘরে।
তানহার কানের কাছে ফিসফিস করে বলেই চলে যায় সূচক। তানহা হা করে সূচকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
“এই লোকটা তো দেখছি আস্ত বজ্জাতের হাড্ডি। দেখে মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না”
চলবে