প্রণয়াসক্ত পর্ব-১২

0
330

#প্রণয়াসক্ত
#পর্ব_১২
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)

“ফোনের ক্রিং ক্রিং শব্দে ঘুম ভে’ঙে গেলো। মোবাইল’টা হাতে নিয়ে দেখি আরাফ ফোন করেছে”। মুচকি হেসে ফোনটা কানে ধরতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো….

‘আসসালামু আলাইকুম মিসেস আরাফ চৌধুরী’।

‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ব্যাপার কি মশাই? রোমান্টিক মুডে আছেন মনে হচ্ছে’।

‘আমার মিসেস এর সাথে কথা বলার সময় আমি সবসময় রোমান্টিক মুডে থাকি। আর যেখানে কালকে রাতে সব’….

‘এই আরাফ তুমি চুপ করবে? তোমার মুখে দেখি কিছুই আটকায় না’।

‘আচ্ছা এখন আটকালাম কিন্তু ৭ দিন পর যখন তোমাকে আমার ঘরের রানী করে নিয়ে আসবো তখন কিন্তু আর আটকাবো না’।

‘ইসসস দেখা যাবে’।

‘আচ্ছা আমিও দেখাবো হাহাহা’।

‘আরাফফ’।

‘আচ্ছা বাবা চুপ করলাম’।

‘হুম। কোথায় তুমি’।

‘শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি’।

‘কার শ্বশুর বাড়ি’?

‘আমার’।

‘তোমার মানে’?

‘উফফ তোমার বাবার বাড়ি এখন আমার কি’?

‘শ্বশুর বাড়ি’।

‘হ্যা তাহলে আমি আমার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি’।

‘কিহ! কেন’?

‘তুমি কলেজ যাবে না’?

‘হ্যা যাবো’।

‘হুম এখন তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হও। আমি তোমাকে নিতে আসছি’।

‘কেন? আমি কি বাচ্চা নাকি? আমি একা যেতে পারি না’।

‘চুপ একদম চুপ। এখন থেকে আমি তোমাকে নিয়ে যাবো আবার ছুটির পর দিয়ে যাবো’।

‘আমি বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বললাম, তুমি আমাকে বকছো’?

‘হ্যা বকছি’। এবার তাড়াতাড়ি রেডি হও যাওওও’।

‘যাচ্ছি’।

“এটুকু বলেই আরাফকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কে’টে দিলাম। তারপর আরাফের চৌদ্দ না থুরি এখন ওর চৌদ্দ গুষ্টি তো আমার শ্বশুর বাড়ির লোক হবে তাদের কিছু বলা যাবে না তাই ওর চুয়াল্লিশ গুষ্টিকে উদ্ধার করতে করতে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাস্তা করে নিলাম। তখনই মেসেজ টোন বেজে উঠলো। আরাফ মেসেজ পাঠিয়েছে ‘আমি নিচে দাঁড়িয়ে আছি। তুমি এসো’। আমি আম্মুকে বলে বাসা থেকে বের হলাম। একটু সামনে এগিয়ে দেখি আরাফ ওট বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছে। আমি কিছু না বলে সামনে এগিয়ে গেলাম। আমাকে দেখেই আরাফ মুচকি হেসে বাইক স্টার্ট করলো। আমি চুপচাপ উঠে বসলাম। কিছুদূর গিয়ে আরাফ বাইক’টাকে এতো জোড়ে ব্রেক করলো, আমি ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে আরাফকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। কিছুক্ষণ পর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখি আরাফ আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে”। আমাকে তাকাতে দেখেই বলে উঠলো….

‘এভাবে গাল ফুলিয়ে বসে থাকলে কিন্তু আমি রাস্তায় কিস করে দিবো হুহ্’।

‘আমি অবাক হয়ে আরাফের দিকে তাকালাম’।

‘আরাফ ঠোঁট উল্টে বললো, আবার এভাবে তাকাচ্ছো? আমার নিজেকে কনট্রোল করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে কিন্তু’।

“আমার লজ্জায় ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে। এভাবে কেউ বলে নাকি? আমি কিছু না বলে স্বাভাবিক ভাবে বসে রইলাম। কলেজে পৌঁছে আমি কোনো কথা না বলে ক্লাসে চলে গেলাম”।

“ক্লাস শেষ করে আমি আর রিমি ক্যাম্পাসে বসে বসে গল্প করছিলাম হঠাৎ আমাকে কে যেনো ডাকছে। আশে-পাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না। হঠাৎ উপরে তাকিয়ে দেখি তিন তলা থেকে একটা মেয়ে আমাকে ডাকছে। বলছে একটু জরুরি দরকার আছে। মেয়েটা আমাদের ক্লাসের’ই। ভাবলাম হয়তো সত্যি কোনো দরকার আছে তাই আমি আর রিমি উপরের দিকে যেতে লাগলাম। দোতলায় যেতেই রিমির ফোনে একটা কল এলো। ও আমাকে বললো, ‘তুই যা। আমি ৫ মিনিট পর আসছি’। আমিও বেশি মাথা না ঘামিয়ে তিন তলায় গেলাম। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। আমি একটু অবাক হলাম। কিছুক্ষণ আগেই তো মেয়েটা এখানে ছিলো তাহলে কোথায় গেলো? আমি আরেকটু সামনে আগালাম। হঠাৎ কে যেনো আমাকে একটা হ্যাচকা টান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরেছে। আমি ভয়ে চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে যেই চিৎকার দিতে যাবো তখনই কেউ হাত দিয়ে আমার মুখ আঁটকে ফিসফিস করে বলছে ‘আরে চুপ চুপ। আমি আরাফ,তোমার একমাত্র জামাই। এতো ভয় পাওয়ার কি আছে? আমাকে কি গ’ণ’ধো’লা’ই খাওয়াতে চাও নাকি’? আমি পিটপিট করে চোখ খুলে অবাক হয়ে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছি। কিছু বলার জন্য চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। আরাফের হাতের দিকে ইশারা করতেই ও আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে একটা বোকা বোকা হাসি দিলো”। আমি রাগী চোখে তাকিয়ে বললাম…

‘তুমি আমাকে এখানে ধরে এনেছো কেন? আর ওইটা মেয়েটাকে দিয়ে তুমিই আমাকে ডেকে এনেছো তাই না’?

‘হু। কি করবো বলো? আমার অনেক প্রেম প্রেম পাচ্ছে বউ’।

‘আরা’….

“আর কিছু বলতে পারলাম না তার আগেই আরাফ দু’জনের ঠোঁট এক করে দিলো। আমি প্রথমে অবাক হলেও পরে আবেশে চোখ বন্ধ করে আরাফকে জড়িয়ে ধরলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর আরাফ আমাকে ছেড়ে আমার গলার ভাঁজে মুখ ডুবিয়ে বললো ‘তুমি অভিমান করে আছো কেন? একটু বকলেই কি অভিমান করতে হয়? তুমি জানো তোমাকে অভিমান করলে কি সুন্দর লাগে। আমি নিজেকে কনট্রোল করতে পারি না’। এটুকু বলে আরাফ সোজা হয়ে দাঁড়াতে আমি ওকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলাম। আরাফও আমাকে পরম যত্নে বুকে আগলে নিলো। দু’জনের মাঝে বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা”। নিরবতা ভে’ঙে আরাফ বলে উঠলো….

‘আজকে সন্ধ্যায় আমার দেওয়া শাড়ি’টা পড়ে রেডি হয়ে থেকো। সারপ্রাইজ আছে’।

‘কি সারপ্রাইজ’?

‘বলে দিলে কি আর সেটা সারপ্রাইজ থাকে? একটু অপেক্ষা করো জানতে পারবে। আমি সন্ধ্যায় তোমাকে বাসা থেকে নিয়ে আসবো’।

‘আচ্ছা’।

“আরাফের সাথে কথা শেষ করে রিমি আর আমি বাসায় চলে আসলাম। আরাফ কালকে থেকে আমাকে ছুটির পর দিয়ে যাবে। আজকে একটু ব্যস্ত তাই আমিই বললাম আমি আর রিমি চলে যেতে পারবো। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া করে নিলাম। তারপর একটা গল্পের বই নিয়ে পড়তে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর আসরের আযানের ধ্বনি কানে ভেসে আসায় অজু করে নামাজ আদায় করে নিলাম। তারপর আরাফের দেওয়া শাড়ি’টা পড়লাম। ওর দেওয়া ঝুমকো, চুরি, বালা, পায়েল দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে তুললাম। চুল গুলো খোলা রাখলাম। হঠাৎ মেসেজ টোন বেজে উঠলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখি আরাফ মেসেজ করেছে”। মেসেজ ওপেন করলাম…

‘তুমি রেডি হয়ে গেছো? আমি কিন্তু আসছি তোমাকে নিতে’।

“আমি মেসেজের উত্তর দিয়ে আম্মুর কাছে গেলাম”। আম্মু আমাকে দেখে বলে উঠলো…

‘কিরে কোথায় যাচ্ছিস’?

‘আমি জানি না। তোমার জামাই আসছে। কোথায় নাকি নিয়ে যাবে’।

‘ওহ্ আচ্ছা। তাহলে জামাইকে বাসায় আসতে বল’।

‘না মা। ও আজকে আসবে না।

‘আচ্ছা তাহলে রাতে সাবধানে আসিস। বেশি দেরি করিস না’।

‘ঠিক আছে’।

“এর মধ্যেই আরাফ মেসেজ করে জানিয়ে দিলো যে ও এসে গেছে। আমি আম্মুকে বলে বের হলাম। সামনে এগিয়ে দেখি আরাফ দাঁড়িয়ে আছে। আমি ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। আরাফ আমাকে দেখেই মুচকি হাসলো। আমি সামনে যেতেই আমার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো। আমি লজ্জা পেয়ে দৃষ্টি নামিয়ে ফেললাম। আমার ঠোঁটে লাজুক হাসি”। আরাফ বলে উঠলো…

‘বউ এভাবে হেসো না। আমি যে এই হাসিতেই বারবার ঘায়েল হয়ে যাই’।

‘উফ এই মানুষটা এতো লজ্জা দেয় যে কি বলবো। আস্তে বললাম, আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে’।

“আমার কথা শুনে আরাফ কিছু না বলে বাইক স্টার্ট দিলো। আমিও উঠে বসলাম। চলতে শুরু করলাম নিজেদের গন্তব্যে”।

“আরাফ একটা পার্কের সামনে এসে থামলো। পার্ক’টা খুব সুন্দর। বন্ধুদের সাথে ২/১ বার এসেছিলাম তারপর আর আসা হয় নি। পার্ক’টার ভিতরে একটা বিশাল বড় সুইমিং পুল আছে। সুইমিং পুল’টা খুব সুন্দর করে সাজানো। অনেক কাপলা’রা সুইমিং পুল এর পাশে সময় কাটায়। আরাফ একটা কাপড় দিয়ে আমার চোখ বেঁধে দিলো তারপর আমাকে ধরে ধরে কোথায় যেনো নিয়ে যাচ্ছে। এক জায়গায় এসে আরাফ থামলো তারপর আমার চোখের বাঁধন খুলে দিলো কিন্তু চোখ খুলতে বারণ করলো তাই আমি চোখ খুললাম না। কিছুক্ষণ পর আরাফ চোখ খুলতে বললো। আমি আস্তে আস্তে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলাম”।

#চলবে…

[রি-চেইক করি নি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।]