#প্রণয়ের_আসক্তি
১৫.
#WriterঃMousumi_Akter
মধ্যরাতে নিরব এর ফোন বাজছে ঘুমে অচেতন নিরব এর আজ হুঁশ নেই। হঠাত ফোনের টোনে মৃথিলার ঘুম ভেঙে যায়।
ঘুমের ঘরে মৃথিলা ফোন রিসিভ করে কানে দিয়ে বলে হ্যালো কে বলছেন?
” ফোনের ওপাস থেকে বলে আপনি কে? এত রাতে ওর ফোন আপনার কাছে কেনো।”
“মৃথিলা ঘুম ঘুম চোখে বলে উনি আমার স্বমি তাই উনার ফোন আমার কাছে।”
কথা টা শুনেই মেধা কেঁপে উঠে।কন্ঠটা অতি পরিচিত মেধার।সমস্ত শরীর কাঁপছে মেধার।
“ওহ উনি আপনার স্বামি।আপনি কি আপনার স্বামির বাসায় থাকেন।”
“হ্যাঁ আমরা এখন নড়াইলে ঘুরতে এসছি।”
“আপনার স্বামির নাম কি?”
“উনার নাম তো নিরব।আপনি সকালে ফোন করবেন উনি এখন ঘুমোচ্ছেন।”
মৃথিলা ঘুমের মধ্য বেখায়ালে ফোনে কথা বলেছে ফোন টা রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।
মেধা মধ্যরাতে শকড কন্ঠ টা যে মৃথিলার সেটা বুঝতে বাকি রইলো না।হাত পা কাঁপছে মেধার।তার ভালবাসার মানুষ তার অজান্তে তার বোন কে বিয়ে করেছে।ঠিক এ কারণেই কি নিরব তাকে ইগনোর করছে।মনে হচ্ছে চারদিকে ভূমিকম্পন হচ্ছে।মৃথিলা তো এমন মেয়ে নয়।সে কখনো বোনের বয়ফ্রেন্ড কে বিয়ে করবে না।তাহলে কেনো মৃথিলা নিরব কে নিজের স্বামি বলছে।মৃথিলা নিরবের বাসার ভাড়াটিয়া কে ফোন করে সিওর হয়ে নিলো নিরব সত্যি বিয়ে করেছে।
———————————————————–
মেধা মধ্যরাতে বাসার সমস্ত জিনিস ভেঙে চুরে গুড়িয়ে ফেলছে।বাসায় জিনিস ভাঙার সাউন্ডে মেধার মা বাবা উঠে আসে।মেধার মা বাবা মেয়েকে পাগলামি করতে দেখে বলে কি হয়েছে মা এভাবে সব কিছু ভাঙছিস কেনো?আর এভাবে কাঁদছিস কেনো?
মেধা তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বললো মায়ের জন্য আমার জীবন টা শেষ হয়ে গিয়েছে বাবা।
মেধার মা অবাক হয়ে বলে কি করেছি আমি মেধা।
মেধা চিৎকার দিয়ে বলে,তুমি যদি মৃথিলাকে বাড়ি থেকে বের করে না দিতে তাহলে আজ মৃথিলা নিরবের কাছে যেতে পারতো না।নিরব মৃথিলাকে বাঁচাতে গিয়ে মৃথিলাকে বিয়ে করেছে।কি প্রয়োজন ছিলো বেশী বাড়াবাড়ি করার।তোমার বেশী বাড়াবাড়ির জন্য মৃথিলা আজ নিরবের বউ।
মেধার মা বলে আপদ বিদায় হয়েছে ভাল হয়েছে।তোমাকে ওর থেকে ভাল ছেলের সাথে বিয়ে দিবো।
স্টপ ইট মা।নিরবের থেকে ভাল ছেলে খুজে ও এনে দিতে পারবে না।বাবা আমার নিরব চাই বাবা।নিরব কে আমি ভালবাসি বাবা।আমি অনেক মিথ্যা বলে নিরবের কাছাকাছি গিয়েছিলাম আমার সব পরিশ্রম মিথ্যা হয়ে গেলো।নিরব কে পেতে অনেক মিথ্যা বলেছি আমি।মৃথিলা এখন নিরবের কাছে আছে এতদিনে মৃথিলার থেকে নিরব সব সত্যি জেনে গিয়েছে। নিরব আমাকে আর কখনো এক্সেপ্ট করবে না।নিরব মিথ্যা বলা পছন্দ করে না।আমি যে এত গুলো মিথ্যা বলেছি জানার পর নিরব আমাকে ঘৃণা করবে।
মেধার বাবা বলে মৃথিলা হয়তো নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করে নি।তুমি চিন্তা করো না।মৃথিলা যদি জানে তোমার আর নিরবের রিলেশন ছিলো তাহলে মৃথিলা সরে আসবে। এভাবে কেঁদো না প্লিজ।মৃথিলা সেরকম মেয়ে না যে তোমাকে কষ্ট দিয়ে নিজে সুখি হবে।
মেধার মা বললো,তাহলে নিরব তোমাকে কেমন ভালবাসতো যে এত শিঘ্রই ভুলে যেতে পারবে।তোমার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে নিরব তোমাকে ভাল ই বাসে নি।
মা নিরব আর আমার রিলেশন আর পাঁচটা রিলেশন এর মতো নয়।নিরব আমাকে দেখে পছন্দ করে নি।বা ওর মনে আমার প্রতি ভালবাসা ও জাগে নি কখনো।আমার জীবনের ভীষণ কষ্টের কথা শুনে ওর সসহানুভূতি জেগেছিলো আমার প্রতি।ও চেয়েছিলো সেই কষ্ট থেকে আমাকে বের করে সুন্দর একটা জীবন দিতে।এখন আমি কি করবো।কিভাবে কনভাইস করবো নিরব কে।
বাবা আমি সকালেই যাবো নিরবের কাছে। কেনো নিরব আমার কাছে লুকিয়েছে ওর আর মৃথিলার বিয়ের কথা।তুমি বুঝতে পারছো বাবা আমার অজান্তে কত কিছু ঘটে গিয়েছে আমি কিছুই জানতে পারলাম নাহ।আমি ভাবতেও পারছি না মৃথিলা নিরবের বউ।
মেধার মা বললো,মেধা তোমার চোখের পানি আমি সহ্য করতে পারি না তুমি জানোই।সারাটা জীবন তো আমি তোমার ভালোই চেয়েছি
আমি জানি মা কিন্তু ভালো করতে গিয়ে সব কিছু উলটে পালটে গিয়েছে।নিরব মৃথিলা কে বাঁচাতে গিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে।তুমি বুঝতে পারছো এতে পরিনাম কি হতে পারে।নিরব মৃথিলার হয়ে যাবে।
———————————————————–
পরের দিন বিকালে মৃথিলা রুমের মধ্য দাঁড়িয়ে আছে দরজা টা খোলায় আছে।চিরুনি দিয়ে নিজের চুল এলোমেলো চুল ঠিক করছে।নিরব বললো মিথু কাল রাতে৷ কারো ফোন রিসিভ করেছিলে।মৃথিলা বললো ঘুমের মাঝে করেছি কিনা সেটা তো খেয়াল নেই।নিরব দেখলো মেধার কল রিসিভ এ আছে।দেখে একটু চিন্তা ও করলো আবার ভাবছে ভালোই হয়েছে মৃথিলা বুঝতে পারে নি তাহলে আবার মন খারাপ করতো।মেধা ঠিক ই খুজতে খুজতে এখানে চলে আসবে।মেধা কে কাল ই জানিয়ে দিবো আমি মৃথিলাকে বিয়ে করেছি।তার আগে আজ মৃথিলাকে ওর পরিবারের এক ভীষণ সত্য জানাতে হবে।কিন্তু কিভাবে জানাবো।মৃথিলা কোনো এক্সিডেন্ট ঘটাবে নাতো।মৃথিলা কেনো পৃথিবীর কারো পক্ষে এমন ভয়ানক সত্য মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।নিরব মৃথিলার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা খুব হাসছে।সিম্পল গহনা তে মেয়েটার চেহারা অনেক গুন ফুটে উঠেছে।এই হাসিটা কি কাল দেখতে পাবো।এই কঠিন পরিস্হিতির মোকাবেলা মৃথিলা কিভাবে করবে।মানুষের জীবন কেনো এত কঠিন হয়।কেনো মেয়েটার জীবনে এত জটিলতা প্রতিটি সম্পর্কে।
মৃথিলা পাখি দুইটার সাথে গাল ভরে হেসে হেসে গল্প করছে।নিরব আস্তে ধীরে মৃথিলার গালে চুমু দিতে এগিয়ে যাচ্ছে।নিরব এর দুই ঠোঁট এক জায়গা এক্ষুণি মৃথিলার গালে চুমু দিয়ে দিবে।এমন সময় মুনতাহার প্রবেশ।নিরব মুনতাহা কে দেখেই খানিক দূরে ছিটকে পড়লো।নিরব বেশ খানিক টা লজ্জা পেয়ে যায়।একটু কেশে নিয়ে বললো,,
ভাবি একটু নক দিয়ে আসবেন না।কি লজ্জাটায় না দিলেন সিরিয়াস মুহুর্তে প্রবেশ করে।
মৃথিলা বললো ভাবি তো নক ই দিয়েছিলো আপনি তো অজ্ঞান ছিলেন।
মুনতাহা বললো,ভাই আজ সন্ধ্যায় দাওয়াত রইলো আপনাদের দুজনের।আমি আজ রান্না করবো আপনাদের জন্য।
নিরব বললো ধন্যবাদ ভাবি।কোনো সুখবর আছে।
মুনতাহা বললো,আগে আপনাদের টা শুনতে চাই।আগামি মাসেই শুনতে চাই বুঝলেন।
“মুনতাহা চলে গেলে নিরব বললো ভাবি কি বলে গেলো শুনেছো?”
“কই নাতো আমি কিছুই শুনি নি।”
“থাক না শুনলেও চলবে আমার যা করার করবো।”
“কি করবেন আপনি?”
“ভাবি যেটা বলে গেলো সেটা।”
‘এমন সময় কলিং বেল বাজতেই নিরব গিয়ে দরজা খুলে দিতেই চমকে গেলো।দরজায় ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে মেধা।নিরব সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত মেধা কে দেখে।মেধা ইচ্ছা করেই নিরব কে জড়িয়ে ধরে বললো আই লাভ ইউ নিরব।খুব মিস করছিলে না আমায়।’
মৃথিলার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো কোথায় যেনো।মেধার উপস্হিতি মৃথিলা কখনোই চায় নি।জীবনে প্রথম মৃথিলার মাঝে এমন অনুভূতি তার আপুকে দেখে সে অখুশি।
‘নিরব মেধাকে ছিটকে খানিক টা দূরে ফেলে দিয়ে বললো হোয়াট দ্যা ননসেন্স ইউ মেধা।এটা একটা ভদ্রলোকের বাড়ি।এখানে এসে এভাবে হুট হাট জড়িয়ে ধরে কি আমাকে এখানে একটা চরিত্রহীন ছেলে প্রুভ করতে চাও।কমনসেন্স নেই তোমার।এটা কি তোমার মডার্ণ ঢাকা শহর।এখানের মানুষজন হজবেন্ড ওয়াইফ ও এভাবে যেখানে সেখানে হুটহাট জড়িয়ে ধরে না।’
‘মেধা মুখ একটু মলিন করে বললো,সরি নিরব রিয়েলি সরি।বাট তুমি এমন বিহেভ করছো করছো কেনো?এত দিন পর আমাকে দেখলে তোমাকে সারপ্রাইজ দিতেই ছুটে আসা আমার।কিন্তু তোমার চোখে মুখে এমন বিরক্তি কেনো?এই প্রথমবার আমাকে দেখে অখুশি তুমি?’
‘তুমি কি আমার পেছনে গোয়েন্দা লাগিয়েছো মেধা।আমি কোথায় যাচ্ছি থাকছি তার ইনফরমেশন নিয়ে আমার পিছু নিচ্ছো।’
‘এটা কি বলছো তুমি নিরব।আমি তো তোমাকে ভালবাসি বলেই এসছি।’
‘আমার কাছে একটা বার জিজ্ঞেস করেছো এখানে আসবে কিনা?আমি এখানে কি ঘুরতে এসছি যে তুমি প্রেম করতে এখানে এসেছো।এটা কি প্রেম করার জায়গা।এখাএ তোমাকে আনার হলে তো তোমাকে নিয়েই আসতাম বা বলেই আসতাম তাইনা?’
‘তোমার কি হয়েছে নিরব।তুমি এমন ব্যাবহার কেনো করছো?তোমার সাথে আমার রিলেশন। আমার কি অধিকার নেই তোমার কাছে আসার।’
‘রিলেশন বলে কি আমার মাথা কিনে নিয়েছো তুমি।আমার কি অধিকার নেই শান্তিতে আমার কাজ করার।আমি একটা জব করি আমাকে আমার কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গা যেতে হয়।রিলেশন এর জন্য কি আমি যেখানে যাবো সেখানেও তুমি যাবে।আমি ফেড আপ মেধা প্লিজ লিভ মি এলোন।এই মুহুর্তে আমি ভীষণ টেনশনে আছি।সো তুমি আমাকে আলাদা কোনো প্যারা দিও না।’
চলবে,,