প্রণয়ের আসক্তি পর্ব-২২

0
599

#প্রণয়ের_আসক্তি
২২.
#WriterঃMousumi_Akter

কেটে গেছে একমাস নিরব এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।বাড়ির সমস্ত জায়গা সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে।যদিও সেই মানুষ টা সকল ক্যামেরা খুলেই তার কাজ করবে জেনেও নিরব একাধিক গোপন ক্যামেরা লাগালো।অপেক্ষা করছে নির দিন রাত্রী এক করে যে কোনো টাইমে সেই মানুষ টা আসতে পারে।নিরবের অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো রাত চারটার দিকে একটা মানুষ চিঠি রেখে চলে গিয়েছে।অবশ্য নিরব তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলো।খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই নিরব চেক করে দেখে সেই মানুষ টা ভোর রাতে এসেছিলো।দরজার সামনে রেখে গিয়েছে তার সেই চিঠি।মানুষ টাকে দেখে নিরব চমকে যায়।এইতো সেই মানুষ টা যাকে সুপ্তি দেখেছিলো।নিরবের মাথাটা ঘুরর যাওয়ার মতো হলো।পাচারকারী দের সাথে জড়িত কেউ মৃথিলাকে বাঁচাতে চাইছে কিন্তু কেনো?এটা কিভাবে পসিবল।কেউ একজন পাচারকারীদের টিমে জড়িত আবার সেই পাচারকারী কোনো একটা মেয়েকে বাঁচাতে চাইছে।নিরবের মস্তিষ্কে কিছুই ঢুকছে না।সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।তার জীবনে এমন কেস সে কখনোই দেখে নি।এটা কিভাবে হতে পারে। মৃথিলার সাথে তার কি সম্পর্ক আর সে কেনোই বা মৃথিলাকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠে পড়ে লেগেছে।মৃথিলার সাথে কোন না কোনো রিলেশন তো আছেই।পাচারকারীরা কখনো ভাল মানুষ হতে পারে না।এই মানুষ টা পাচারকারীদের সাথে কাজ করছে আবার মৃথিলাকে সেভ করার চেষ্টা করছে।নিশ্চয়ই মৃথিলার সাথে গভীর কোনো সম্পর্ক রয়েছে এই লোকটার।বাট মৃথিলার তো আপন বলতে কেউ নেই দুনিয়াতে থাকলেও তারা মৃথিলার কোনো হদিস জানে না।জানলে তো মৃথিলাকে তারা নিজের কাছে নিয়ে যেতো।হোয়াট ইজ দ্যা ম্যাটার।কেনো হেল্প করছে মৃথিলাকে।

নিরব এই লোকটার ফুটেজ থেকে নেওয়া একটা ভিডিও ওদের অফিসে পাঠিয়ে খোজ নিতে বললো লোকটার নামে কোনো কেস বা মামলা আছে কিনা?অফিস থেকে কিছুক্ষণ পরে জানালো গোয়েন্দা অফিসার আহনাফ নিঁখোজ হওয়ার পর থেকে এই মানুষ টাও নিঁখোজ।উনি হলেন বিখ্যাত ক্রিমিনাল মঈন সিদ্দিকী।যার হাতে পাচার হয়েছে অসংখ্য মেয়ে আর শিশু।মেয়েদের চাকরি দেওয়ার নাম করে অনেক মেয়েকে পাচার করেছে।পরে যখন ওর মুখোশ পুলিশের কাছে খুলে যায় অফিসার অহনাগ মাহমুদ সব প্রমান যোগাড় করে সেদিন থেকে আর এই মঈন সিদ্দিকী কে আর দেখা যায় নি।আশে পাশে কোথাও এই মঈন সিদ্দিকী কে আর পাওয়া যায় নি।

নিরব রহস্যর আরো গভীরে ডুবে গেলো।কিভাবে জানতে পারবে নিরব এই মঈন সিদ্দিকীর রহস্য।এত বড় একজন ক্রিমিনাল যে নিজেই অসংখ্য পাচার করেছে সে কিনা মৃথিলাকে বাঁচাচ্ছে।মৃথিলার বাবা এর সমস্ত প্রমান হাতে পাওয়ার পরেই মৃথিলার বাবা মা সহ এই লোকটা নিঁখোজ।এই লোকটাকে ধরতে পারলেই জানা যাবে মৃথিলার বাবা মায়ের নিঁখোজ হওয়ার রহস্য।

________________________________
মাত্রই এইস এস সি এক্সাম শেষ হয়েছে মৃথিলার।এই টাইমেই কলেজের সব ফ্রেন্ড সার্কাল বাইরে ঘুরতে যাচ্ছে।বেশ ফ্রি আছে মৃথিলা এখন।ঘুরতে যাওয়ার জন্য এখন ই পারফেক্ট টাইম।

বারান্দায় বসে শ্বাশুড়ির মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে মৃথিলা।এই বয়সেও নিরবের আম্মুর মাথায় বেশ ঘন কালো লম্বা চুল।মৃথিলা শ্বাশুড়িকে মজা করে বলছে মা আপনার মাথায় চুল এখনো এইজন্য বাবা আপনাকে এত ভালবাসতেন তাইনা?

-নিরবের আম্মু হেসে উত্তর দিলেন,হ্যাঁ চুল দেখেই উনি আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

–মা আপনাদের কি লাভ ম্যারেজ।

–আমাদের সময়ে কি আর ওসব ছিলো।আমার বাবার কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়েছিলো।

–মা আমার চুল কিভাবে ঘন হবে বলবেন?

–তোমার চুল যথেষ্ট ঘন আছে এ নিয়ে মন খারাপ করোনা।চিংড়ি মাছের মাথা কি বের করে রেখেছ ফ্রিজ থেকে।

–হ্যাঁ মা রেখেছি।

–ঠিক আছে আমি নারকোল কোরা রেডি করেছি।দুধ দিয়ে চিংড়ির মাথা রান্না করবো দেখবা ভালো লাগবে খেতে।

–মা আর কি কিছু রান্না করা লাগবে।

–হ্যাঁ নিরব যে খাসির মাংস এনে রেখেছে ওটা রান্না করবো।আচ্ছা আমার ছেলেটা মানুষ হবে কবে।সব সময় কাজ নিয়ে পড়ে আছে।কবে থেকে বলছি মৃথিলাকে নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঘুরে আয়।টাকা তো আমি ই দিতে চেয়েছি তবুও যাচ্ছে না কেনো?

–আমার বাবা ও সেদিন টাকা পাঠিয়েছে মা। আপু ও রেগুলার বলছে কোথাও ঘুরে আসতে।কিন্তু আপনার ছেলের তো সময় নেই।চলুন মা আমি আর আপনি যায়।

–আমি গতবছর ও কলেজ থেকে এক্সকারশণে গিয়েছি মা কক্সবাজার।তুমি আর নিরব গিয়ে ঘুরে এসো।

–আপনার ছেলের সময় কই মা।

–এর ই মাঝে নিরব এসে বললো শ্বাশুড়ি আর বৌমা মিলে আমার বদনাম করা হচ্ছে।বলেই টিকিট ধরিয়ে দিয়ে বললো,এইযে কক্সবাজার টিকিট দুজনের।এবার কি আমার আম্মু খুশি।নিরবের আম্মু বললো হ্যাঁ আমি খুশি।

–মৃথিলা বললো উনার ল্যাপটপ সাথে গেলে কিন্তু আমি যাবো না মা সোজা কথা।গিয়ে আমাকে এতিমের মতো বসে থাকতে হবে আর আপনার ছেলে মন প্রাণ দিয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থাকবে।

–নিরব বললো,আমি একা যাচ্ছি না যে তোমার বোরিং ফিল হবে।ওখানে সারপ্রাইজ হিসাবে থাকছে মুনতাহা আর তার হাজবেন্ড আরো থাকছে সুপ্তি এবং রিফাত।

মৃথিলা খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।তার কিছু প্রিয় মানুষদের সঙ্গ পাবে।

_______________________________
পরের দিন বিকালে নিরব মৃথিলা,সুপ্তি-রিফাত পৌছে গেলো কক্সবাজারে।মুনতাহা আর রিক আগেই পৌছে গিয়েছে অপেক্ষা করছে সবার জন্য।সুপ্তি নেমে বললো,এখানে সবাই কাপল এসেছে আর আমি সিঙ্গেল।রিফাত ভ্রু কুচকে বললো,এই আমি কে তাইলে তোমার বডিগার্ড। এখানে সুন্দর সুন্দর ছেলে দেখে নিজেকে সিঙ্গেল বলা হচ্ছে বাহ রাজনিতী।সুপ্তি বললো,হ্যাঁ এখান থেকে একটা ছেলে দেখে বিয়ে করবো এই মিথু ছেলে চয়েজ করো।মৃথিলা বললো রিফাত ভাইয়া আছে তো।সুপ্তি বললো,ও জীবনে বিয়ে করবে না দেখছ না বুইড়া কাকু হচ্ছে।রিফাত বললো এইবার ঢাকা ফিরেই বিয়ে করবো প্রমিজ।নিরব বললো মনে থাকে যেনো।

একটা হোটেলের রুম বুকিং করা হলো তিনটা। সবাই ব্যাগ পত্র নিয়ে যার যার রুমে প্রবেশ করলো।লং জার্নি করে সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।সেদিন আর খুব একটা ঘোরাঘুরি করলো না কেউ।এক ই রুমে আড্ডা দিতে দিতে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়লো সবাই।

পরের দিন লম্বা ঘুমে বেশ ফুরফুরে লাগছে সবার।এর ই মাঝে মুনতাহা নিঁখোজ। কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না মুনতাহা কে।প্রায় ঘন্টা খানিক পরে ফিরে এলো মুনতাহা।মুনতাহার মুখ টা বেশ শুকনো লাগছে দেখতে।

মুনতাহার হাজবেন্ড রিক বললো,কোথায় গেছিলে আমাদের রেখে।একা একা ই ঘুরতে বেরিয়েছিলে।আর আমরা চিন্তা করছিলাম।

–মুনতাহার মুখ টা বেশ শুকনো লাগছে।

–নিরব বললো কি হয়েছে ভাবি?এমন লাগছে কেনো আপনাকে।

–মুনতাহা বললো,আমার বাবাকে দেখলাম এখানে।

–নিরব বললো আরে এটা তো খুশির খবর।আঙ্গেল কোথায়? আমাদের সাথেই থাকবে এটা তো আরো ভাল হয়েছে।

–মুনতাহা কাঁদছে রিকের দিকে তাকিয়ে।

–রিক বললো এটা কি বলছো তুমি মুন।তোমার বাবা এখানে কিভাবে আসবেন।তুমি ভুল কাউকে দেখেছো।

–না রিক নিজের বাবাকে চিনতে এতবড় ভুল হবার কথা নয় আমার।উনি আমার বাবা।

–নিরব বললো কেনো রিক ভাই ভাবির বাবা আসতে পারবেন না কেনো?

–রিক বললো,ভাই ওর বাবা ছোট বেলা থেকে নিঁখোজ।ওর বয়স যখন তিন বছর তখন ওর ভাই ওর মায়ের গর্ভে।তখন ই ওর বাবা নিঁখোজ।অনেক খোজাখুজি হয়েছে কোথাও পাওয়া যায় নি।আজ ঊনিশ বছর নিঁখোজ।সে এখানে কিভাবে আসবে বলুন তো।এটা পসিবল নয়।ও ভুল দেখেছে।সব সময় নিজের বাবাকে মিস করে তো তাই হয়তো মানুষের মতো মানুষ দেখেছে।
মুন প্লিজ এখানে ইনজয় করো অতীত ভেবে আর কষ্ট পেও না।

চলবে,,