#প্রণয়ের_আসক্তি
২৪.
#WriterঃMousumi_Akter
–মুনতাহা এমন একজন কে নিজের বাবা বলে দাবি করলো মৃথিলা যাকে দেখেই অবাক হয়ে গেলো।মৃথিলা মুনতাহা কে বললো,উনি আমাদের বাসার কাজের লোক রহিম চাচা ভাবি।আমাদের বাসায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।আপনি উনাকে আপনার বাবা ভেবেছেন।
–মুনতাহা আশ্চর্য হয়ে মৃথিলার দিকে তাকালো।মৃথিলাকে বললো,ভাবি আপনি উনাকে চিনেন?
–চিনি মানে ভীষণ ভাল করেই চিনি উনাকে।আমি সেই ছোট বেলা থেকেই উনাকে দেখে আসছি।আমাদের বাসায় সেই ছোট বেলা থেকেই উনি কাজ করেন।বলতে পারেন উনার কাছেই মানুষ হয়েছি আমি।
সুপ্তি ও বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মৃথিলা আর সুপ্তির দিকে।সুপ্তির কাছে ব্যাপার টা বেশ অবাক লাগছে।সুপ্তি গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করে তাই কোনো কিছুই নরমাল লাগে না সুপ্তির কাছে।
-মুনতাহা মৃথিলালে বললো ওনার পরিবারে কে কে আছেন?
–কেউ নেই যারা ছিলো,যুদ্ধের সময় মারা গিয়েছে।বাবা উনাকে ছোট বেলা থেকেই চিনে।খুব ভাল মানুষ রহিম চাচা।উনার মতো মানুষ খুজেও পাবেন না।
–আপনাদের সাথেই এসছেন উনি বুঝি।
–না বাবা মা আপু এসছেন তো উনাদের সাথেই এসছে।
–জানেন ভাবি উনি দেখতে একদম ই আমার বাবার মতো।পৃথিবীতে একই রকম দুইটা মানুষ কিভাবে হয়।
–একজনের মতো সাতজন মানুষ আছে ভাবি। যদিও আমি সিওর না তবে শুনেছি। তাছাড়া উনি আপনার বাবা হলে আপনাকে চিনবে না।আর পৃথিবীতে এমন কোনো বাবা নেই যে সন্তানের থেকে দূরে থাকতে পারে।কেনো আপনার থেকে দূরে থাকবে বলুন তো!
মুনতাহা দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিলো!
–মৃথিলা বললো,ভাবি আমি রহিম চাচার সাথে আপনার কথা বলিয়ে দিবো দেখবেন আপনার মন ভীষণ হালকা হবে। চলুন আমি আপনার কথা বলিয়ে দিবো।
মৃথিলা মুনতাহা কে নিয়ে মেধাদের হোটেলের দিকে রওনা হলো।এখান থেকে কাছেই।দুজনে হাঁটতে হাঁটতে গেলো।মৃথিলাকে দেখে মৃথিলার বাবা বললো মা তুমি ও এখানে এসছো শুনে খুব ভাল লাগলো।আমি তোমাদের আমাদের সাথে আনি নি কারণ আমি চেয়েছিলাম তোমরা আলাদা ভাবে একটু সময় কাটাও।মৃথিলা বললো, বাবা তুমি আগে জানলে এক সাথেই আসতাম।আমার খুব ভাল লাগছে তোমরাও এসেছো।
মুনতাহার দিকে তাকিয়ে বললো মেয়েটা কে হয় মা।
মৃথিলা বললো, আমাদের খুব কাছের মানুষ বাবা।বোনের মতোই আমার।নড়াইল বাসা ভাবিদের।
মৃথিলার বাবা বললো,বসো মা এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো তুমি?
মুনতাহার মন বড্ড ছটফট করছে।কোথায় তার বাবার মতো দেখতে মানুষ টা।চারদিকে খুজছে মুনতাহা।
মৃথিলার বাবা রহিম চাচাকে ডেকে বললো রহিম কফি আর নাস্তা নিয়ে এসো।মিথু মা আর একজন আত্মীয় এসছে।
কিছুক্ষণের মাঝেই রহিম চাচা কফি আর বিস্কুট সাথে অন্যান্য নাস্তা নিয়ে এলো।
রহিম চাচা মৃথিলা কে দেখেই বললো মৃথিলা মা তুমি এসছো আগেই শুনেছি।এভাবে আমাদের এখানেও দেখা হবে ভাবতে পারিনি।কেমন আছো মা তুমি?
মুনতাহার চোখ ছলছল করছে, হাত পা কাঁপছে।এক নজরে রহিম চাচার দিকে তাকিয়ে আছে।দুটো মানুষ এর মাঝে বুঝি এতটায় মিল হয়।কিভাবে পসিবল জমজ ছাড়া এটা হয় না।বাবার কোনো জমজ ও নেই।
–মৃথিলা হেসে বললো আলহামদুলিল্লাহ চাচা।আপনি কেমন আছেন চাচা?
–জ্বী মা ভাল আছি।নউ কফি নাও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো।
–মৃথিলা কফি নেওয়ার পর রহিম চাচা মুনতাহার দিকে কফির কাপ এগিয়ে দিয়ে বললেন তুমিও নাও মা কফি।
–মুনতাহা পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রহিম চাচার দিকে।কফি নিতে নিতে চোখ দিয়ে টুপ টাপ করে পানি পড়ছে মুনতাহার।রহিম চাচা অবাক হয়ে বললেন কি হলো মা তুমি কাঁদছো কেনো এভাবে?কি হয়েছে তোমার।মুনতাহা এবার খুব জোরে কেঁদে ফেললো।মৃথিলার বাবা,আর রহিম চাচা দুজনেই অবাক হয়ে তাকালো।
মৃথিলা মুনতাহার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো প্লিজ ভাবি কাঁদবেন না। আমি বুঝতে পারছি আপনার কষ্ট টা।
মৃথিলা রহিমা চাচার দিকে তাকিয়ে বললো জানেন চাচা ভাবির বাবা নেই কিন্তু দেখতে আপনার মতোই ছিলো তাই আপনাকে দেখে ভাবির কষ্ট হচ্ছে।রহিম চাচা মুনতাহার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো জন্ম মৃত্যু উপরওয়ালার হাতে মা কেঁদো না।তুমি আমাকেই বাবা ডেকো মা।আমি ও তো তোমার বাবার মতো।আমার মতো কাজের লোক কে যদি বাবা ডাকতে ঘৃণা না করে তাহলে ডেকো মা।আমি মিথু মাকে ও নিজের মেয়ের মতোই ভালবাসি আজ থেকে না হয় আমার ও দুইটা মেয়ে হলো।
মুনতাহা কেঁদেই যাচ্ছে।কিছু বলার মতো শক্তি নেই মুনতাহার।
মৃথিলা বললো চাচা ভাবির বাবা মারা যান নি।পারিবারিক একটা ঝগড়ার জন্য রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে আর ফিরে আসে নি।
সবার মাঝেই বেশ কিছুক্ষণ খারাপ লাগা কাজ করছিলো।মুনতাহা সিওর হলো এটা তার বাবা ছিলো না।মুনতাহার মন কে বুঝিয়ে নিলো।নিজের মন হালকা করে আবার ফিরে এলো।
সেদিন রাতেই নিরব ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে দেখে সে এতদিন ধরে যাকে খুজছে সে তার রুমের মাঝেই দাঁড়িয়ে আছে।সেই দাঁড়ি গোফ ওয়ালা মানুষ টা।যাকে ধরতে পারলেই নিরব সব রহস্যর সমাধান করতে পারবে।নিরব এক মিনিটে ভেবে নিয়েছে মানুষ টা কি তাকেই খুন করতে এসছে এখানে।নিরব সাথে সাথে নিজের বুক পকেট থেকে পিস্তল বের করে সেই মানুষ টার মাথায় ধরলো।নিরব পিস্তল নিয়ে এগিয়ে এসে তার গলা চেপে ধরে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলে চাইলেই এখনি তোর ঘিলু বের করে দিতে পারি।কিন্তু তুই কে আর কেনো এসব করছিস সব টা না জেনে আমি তোর কিছুই করবো না।বেশী বাহানা না করে আর চালাকি না করে বল তুই কে?এমন সময় মুখোশধারী ব্যাক্তিটি খলখল করে হেসে দিলো তাও আবার মেয়ে কন্ঠে।নিরব যেনো শকড হলো ক্রিমিনাল কি তাহলে কোনো মেয়ে।কিন্তু এই হাসি টা তো সেই হাসি যে হাসিটা তার ভীষণ প্রিয়।এটা মৃথিলার হাসি।নিরব পিস্তল নামিয়ে মৃথিলার ড্রেস দাঁড়ি গোফ খুলে দেখে মৃথিলা খল খল করে হাসছে।নিরব ভীষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলো মৃথিলাকে।মৃথিলা এই গেট আপ এ নিরব কে আজ চমকে দিয়েছে।তার মানে নিরব এতদিন যাকে খুজছে সে ছদ্মবেশ ধরে পাচার করে।তার মানে এই দাঁড়ি গোফ সেই ক্রিমিনাল এর ছদ্মবেশ এর হাতিয়ার।সে সবার মাঝে সাধারণ মানুষের মতোই আছে। আর আড়ালে তার অন্য রুপের চেহারা।কে সে যে এই ছদ্মবেশে থাকে।সে কি তাহলে চোখের সামনে দিয়েই ঘুরছে।সে কতটা ধূর্ত হলে এই জীবন্ত ছদ্মবেশ ধরে থাকে একতা মানুষ ডাবল রোল নিয়ে থাকে।
–মৃথিলা হাসতে হাসতে বললো কি হলো শুট মি অফিসার।প্লিজ শুট মি!
–নিরব মৃথিলাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বললো শুট তো তুমি আমাকে করেছো মৃথিলা।
–কিভাবে অফিসার।
–তোমার ভালবাসার গুলি এমন ভাবে হৃদয়ে বিধে গিয়েছে আহত আমি তোমার জন্য।
–তাইনা?
–হ্যাঁ আমিও শুট করতে চাই তোমাকে, তবে সেটা অস্ত্র দিয়ে নয় ভালবাসায়। বলেই নিজের হাতের পিস্তল ফেলে দিলো নিরব।এক পা দু পা করে এগোচ্ছে মৃথিলার দিকে।
–মৃথিলা পেছনের দিকে সরে যাচ্ছে।ওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো মৃথিলার।মৃথিলা নরম কন্ঠে বললো এদিকে কি অফিসার।
–নিরব এক হাত ওয়ালে ঠেকিয়ে সম্পূর্ণ ঝুকে আছে মৃথিলার দিকে।লজ্জায় চিবুক নেমেছে মৃথিলার।
-এই যে বালিকা টি এভাবে লজ্জা পেও না।এমন মিষ্টি চেহারায় লাজুক চাহনি দিয়ে খুন করতে চাও নাকি আমাকে।এমনিতেই কিছুক্ষণ আগের কিলার লুকে ফিদা আমি।আমি ভাবতেই পারিনি আমার সহজ সরল বউটা কিলার রুপে আগুন রুপ ধারণ করে।
–নিরবের বুকে আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে বললো সরুণ এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন, লজ্জায় মারা যাচ্ছি আমি।
–ওহ শিট!কিল মি নাউ।
–আপনাকে খুন করতে বলছেন?
-হ্যাঁ বলছি প্লিজ কিল মি।নিরব এর কন্ঠ কাঁপছে,ওষ্ট এগিয়ে নিলো মৃথিলার দিকে।মৃথিলার গলায় গাড় চুম্বন করলো ঠোঁট ডুবিয়ে।মৃথিলাকে বললো এই কালো মিচমিচ তিলটা নেশাক্ত ভাবে টানছে আমায়।
________________________________
পরের দিন হোটেলের রুমে বসে আছে মৃথিলা।নিরব বাইরে গিয়েছে রিফাত এর সাথে।তাদের এখানে কি একটা কাজ আছে সেই কাজের জন্য।সারাদিন আজ হোটেলে ফেরে নি।সেই সাথে সুপ্তি ও আছে। হানিমুনের নামে এখানে এসেও কাজ করে চলেছে নিরব।রুমের মাঝে একা একা ভীষণ রোরিং হচ্ছে মৃথিলা।হঠাত বাইরে থেকে কলিং বেল এর আওয়াজ আসছে।মৃথিলা দরজা খুলতেই দেখে একজন ছেলে আর একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তাদের হাতে কয়েক টা বক্স।মৃথিলার হাতে দিয়ে বললো আপনি কি মৃথিলা।মৃথিলা মাথা নেড়ে বললো হ্যাঁ আমি কিন্তু কেনো?বক্স গুলো মৃথিলার হাতে দিয়ে বললো ম্যাম এগুলো আপনার জন্যই।মৃথিলা বেশ অবাক হয়ে বললো আমার জন্য বাট আমি তো অর্ডার করি নি।মেয়েটি বললো আপনার নামেই ছিলো ম্যাম প্লিজ সাইন করে দিন।মৃথিলা বেশ অবাক হয়ে সাইন করে বক্স গুলো ভেতরে নিয়ে গেলো।
প্রথম বক্স টা খুলে দেখে চল্লিশ ডজন চুড়ি।মৃথিলা ভীষণ অবাক হলো আর খুশি হলো এত এত চুড়ি তার জন্য গিফট হিসাবে এসেছে বাট এই মারাত্মক সারপ্রাইজ টা তাকে কে দিলো।
আরেক টা বক্স খুলে দেখলো একটা কালো শাড়ি,সাথে কালো কানের দুল মৃথিলা এটা দেখেও সারপ্রাইজড হলো ভীষণ ভাবে।
আরেক টি বক্স খুলে দেখলো,কিছু লিপিস্টিক,নেলপালিস মেয়েদের যাবতীয় কসমেটিক্স এর কিছু কিছু জিনিস।
বক্স গুলো পেয়ে তো মৃথিলা ভীষণ খুশি কিন্তু কে পাঠালো নিরব।নিরব তো এখানেই এসছে তার সাথে তাহলে এইভাবে গিফট পাঠালো কে।
এগুলো ভাবতে ভাবতেই কেউ পেছন থেকে মৃথিলার চোখ বেঁধে দিলো।মৃথিলা এইবার রিতীমত ভয় পেয়ে গেলো।আবার কি তাকে কেউ কিডন্যাপ করছে।
চলবে,,