#প্রথম_ভালোবাসার_সুর❤️
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১১
আরবাজের সাথে ধাক্কা খাওয়াতে মেহের পড়ে যেতে নিলে আরবাজ মেহেরের কোমড় শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো।আর মেহের ভয়ে চোখ বড় বড় করে ঢোক গিললো।আরবাজ মেহেরের গায়ের গন্ধ টা স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে। মেহেরের গায়ের গন্ধ টা অন্যরকম!ভীষণ মিষ্টি।হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে আরবাজের।আবারো সেই অনুভূতি। মেহেরই মিনমিন গলায় বললো,
-“ছ..ছাড়ুন।”
আরবাজের হুঁশ হলো।সে মেহেরকে ঠিক করে দাঁড় করিয়ে দিলো।তারপর বললো,
-“তুমি এখানে কি করছ?”
মেহের কি বলবে বুঝতে পারছে না।জোরপূর্বক হেসে বললো,
-“কই কিছুনা তো।”
-“তাহলে লুকিয়ে লুকিয়ে কি শুনছিলে?”
-“আরে না কিছু না।আচ্ছা আমি যাই হ্যা।”
বলেই মেহের যেতে নিলে আরবাজ মেহেরের হাত ধরে মেহেরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,
-“চালাকি কম।কি শুনছিলে লুকিয়ে লুকিয়ে?”
-“সত্যি কিছু না।আমি তো জাস্ট এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম।”
আরবাজ মেহেরের দিকে এমনভাবে তাকালো।তা দেখে মেহের ঢোক গিলে বললো,
-“আমাকে যেতে দিন।”
-“যাও।আমি কি তোমায় আটকে রেখেছি?”
-“আমার হাত।”
আরবাজের খেয়াল হলো যে সে মেহেরের হাত ধরে রেখেছে।আরবাজ মেহেরের হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,
-“আব…সরি।”
-“ইটস ওকে।”
-“নাও গেট আউট।”
পরমুহুর্তেই আরবাজের এমন ব্যবহার দেখে মেহের আবারো চটে গেল।রাগী গলায় বললো,
-“আমারো শখ নাই আপনার ঘরে বসে বসে আপনার প্রেম-নিবেদন দেখার।”
-“কি বললে?”(ভ্রু কুঁচকে)
-“ক…কিছু না।”
বলেই মেহের ছুট লাগালো।আর কিছু সময় থাকলেই তো আরবাজ তার বারোটা বাজাতো।এদিকে মেহেরের এমন অদ্ভুত আচরণ ভালো ঠেকছে না আরবাজের কাছে।মেয়েটা এমন করলো কেন?আর প্রেম-নিবেদন বলতে কি বুঝালো?ভেবে পায় না আরবাজ।
আবারো চলে গেল মুভি দেখতে।এতদিন পর ছুটি পেয়েছে সে।আজ রাত জেগে মুভি তো দেখতেই হবে।
আর সেটাই সে করছিল এতক্ষণ। কিন্তু হঠাৎ মনে হলো কফি খাবে।তাই দরজা খুলেছিল।কিন্তু খোলার পরই তো এইসব কান্ড হলো।আরবাজের কফি খাওয়ার মুড চলে গেল।বিছানায় শুয়ে এবারে কানে ব্লুটুথ দিয়ে মুভি দেখায় মনোযোগ দিল।
।
আজ সকাল থেকে শেহনাজ পারভীন বেশ চুপচাপ। আগে তো মেহেরের সাথে কথা বলতেন না।কিন্তু আজ কারোর সাথেই বলছেন না। মেহেরও চুপচাপ নাশতা বানালো।সবাইকে সার্ভ করলো।কিন্তু আজ আরবাজকে খাবার টেবিলে পেল না সে।মনে মনে বলতে লাগলো,
-“নিশ্চয়ই সারারাত গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে মহাশয় টায়ার্ড!”
কথাটা বলেও বেশ বিরক্ত হলো মেহের।এই লোকটা এত অসভ্য কেন!আর থাকতে না পেরে বলেই বসলো,
-“আরবাজ আসেননি।মনে হয় উনি ঘুমাচ্ছে। আমি কি ডেকে আনব?”
শেহনাজ পারভীনের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললেও উনি মেহেরের দিকে তাকালেন না পর্যন্ত। নিজের মত খেয়ে যাচ্ছেন।মীরা তা দেখে মেহেরের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বললো,
-“ভাইয়া আজ ছুটি পেয়েছে না!আজ তো ঘুমাবেই।”
-“ওওও আচ্ছা।”
শাহীন খান পেপার পড়ছিলেন।সেখান থেকে চোখ সরিয়ে বললেন,
-“এখন তো বেলা হচ্ছে। তুমি বরং ডেকে আনো।”
-“জ্বী।”
বলেই মেহের সেখান থেকে চলে গেলো আরবাজের ঘরের উদ্দেশ্যে।আরবাজের ঘরে গিয়ে মেহের নক করলো।কিন্তু দরজা খুললো না কেউ।খুলবে কিভাবে!আরবাজ তো ঘুমে।মেহের এতবার নক করার পরেও কেউ দরজা খুললো না।মেহের কয়েকবার দরজায় লাত্থি-উস্টা দিয়েও লাভ হলো না।শুধু একবার ঘুম ঘুম গলায় আওয়াজ এলো,
-“উফফ!হু ইজ দেয়ার?”
মেহের জবাব দিল না।এবার ভাবলো জোরে ঘুষি দিবে।যেই ভাবা সেই কাজ।হাতে হাত ঘষে ঘুষি দিতেই দরজা খুলে গেল আর ঘুষি লাগলো ঠিক আরবাজের বুকে।রোজ যথাযথ শারিরীক পরিশ্রম আর ব্যায়াম করা আরবাজের গায়ে ঘুষিটা এত জোরে না লাগলেও
সকাল সকাল মেহেরের এহেন কান্ডে সে বেশ রেগে গেল।মেহেরের হাতের কব্জি ধরে টেনে বলতে লাগলো,
-“হোয়াট আর ইউ ডোয়িং?আর ইউ ক্রেজি?”
মেহের আবারো একটা ব্লান্ডার করে জিভে দাঁত কাটলো।তারপর ভয়ে ভয়ে বললো,
-“সরি আসলে ভুলে….”
-“চুপ।একটা বাড়তি কথাও বলবে না।”
-“কথা বলবো না?”
-“যা জিজ্ঞেস করব তাই বলবে ”
মেহের হাত মুচড়িয়ে ছাড়াতে চাইছে। কিন্তু আরবাজ এমনভাবে চেপে ধরেছে যে সেটা ছাড়ানো দায়।
আরবাজ হাতটা শক্ত করে ধরেই বললো,
-“এখন বলো,সকাল সকাল আমার ঘরে কি?”
-“আ..আংকেল ডাকতে পাঠিয়েছেন।”
-“বাবা?”(অবাক হয়ে)
-“জ্বী।”
-“কিন্তু বাবা তো জানে যে আজ আমি একটু লেট করেই উঠবো।”
-“আমি কি করে বলব বলুন তো।প্লিজ আমার হাত ছাড়ুন।”
আরবাজ হাতটা ছুঁড়ে ফেলে দিল।মেহের হাত ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললো,
-“এমন করলেন কেন?লাগেনা বুঝি আমার।”
-“সকাল সকাল আমার ঘুমের তেরোটা না বাজালে কি হচ্ছিল না তোমার? “(বিরক্ত হয়ে)
মেহের নিজের হাতের কব্জিতে ম্যাসাজ করতে করতে বললো,
-” ওহ মিস্টার!এখন সকাল না।১০ টা পার হয়ে ১১ টা বাজতে চললো।বেলা হয়ে গেছে।”
-“তোমায় জিজ্ঞেস করেছি?”
-“করলেও উত্তর দিতাম না।আপনি যেহেতু উঠেই গেছেন গিয়ে ফ্রেশ হন।আমি বরং আপনার জামা-কাপড় গুলো বের করে দিচ্ছি।”
বলেই মেহের আলমারি খুলতেই আরবাজ এগিয়ে গিয়ে মেহেরের হাত ধরে ওকে আটকে দিল।মেহের অবাক হয়ে তাকালো আরবাজের দিকে। ইশারায় জিজ্ঞেস করলো,
-“কি?”
-“আমার জন্য তোমার না ভাবলেও চলবে। ”
-“জামি আমি।কিন্তু এটা আমার দায়িত্ব। ”
-“আমি বলিনি তোমাকে পালন করতে। ”
বলেই মেহেরের হাতটা সরিয়ে দিলো।মেহের আরবাজের চোখে চোক রেখে বলতে লাগলো,
-“সেদিন না বললাম?আপনি দায়িত্ব কে অবহেলা করতে পারেন।কিন্তু আমি না।”
-“আমি অবহেলা করছি?”
-“হয়ত।”
বলে মেহের আবারো আলমারির দরজায় হাত দিতেই আরবাজ মেহেরের হাত আবারো সরিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,
-“তোমাকে বললাম না আমার জন্য কিছু করতে হবে না।”
-“কেন?”(ভ্রু কুঁচকে)
-“এ ঘরে থাকো না তাহলে করবে কেন।”
কিছু সময় সবকিছু নিস্তব্ধ থাকলো।মেহের বেশ অবাক হলো আরবাজের কথা শুনে।আরবাজ অন্যদিকে ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আছে।মেহের বুঝতে পারলো না যে আরবাজ চায় টা কি।আরবাজ কি তবে চায় যে মেহের তার সাথেই থাকুক?এ কথা বলার সুযোগ না দিয়েই আরবাজ বলে উঠলো,
-“এবার তুমি যেতে পারো।”
মেহের দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথা নাড়ালো।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো যে আগ বাড়িয়ে আর আরবাজের জন্য কিছু করতে যাবে না।এদিকে না চাইতেও আরবাজ মনে মনে ভাবছে,
-“আমার কি হচ্ছে, কেন আমি এমন করছি।”
মেহের যাওয়ার পর আরবাজ ফ্রেশ হয়ে নেয়।ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখতে পেল তার বাবা বসে বসে টিভি দেখছেন।তার মা শেহনাজ পারভীন টেবিলে বসে বসে সবজি কেটে বাটিতে তুলে রাখছেন।আর মেহের টেবিল থেকে বসে বসেই টিভিতে হওয়া নিউজ দেখছে।মীরা যে তার পাশে বসে এত কথা বলছে তার কোনো পাত্তাই নেই।তবে শেহনাহ পারভীন মাঝে মাঝে মীরার কথার উত্তর দিচ্ছেন।আরবাজ এগিয়ে গিয়ে টেবিলে বসে পড়লো।শেহনাজ পারভীন আরবাজকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন,
-“কিরে,ঘুম হয়েছে ঠিক মত?”
-“হ্যা মা।খেতে দাও।”
শেহনাজ পারভীন ঢাকনা সরিয়ে প্লেট এগিয়ে দিলেন।
মীরা বলতে লাগলো,
-“আজ ঘুরতে যাবি ভাই?”
-“ঘুরতে কেন?”(ভ্রু উঁচিয়ে)
-“মন চাইলো।আয় না যাই।”
-“ভেবে জানাচ্ছি।”
-“ভাবার কি আছে।আজ তো ছুটিই।আর তাছাড়া ভাবীও তো বের হয় না।”
মীরার কথা শেষ হতেই শেহনাজ পারভীন বলে উঠলেন,
-“কোথাও যাওয়া হচ্ছে না।”
মেহের এতক্ষণে তাকালো তাদের দিকে।শেহনাজ পারভীনের কথা শুনে মীরা বলতে লাগলো,
-“যাই না মা।”
-“না মানে না।কোথাও যাওয়া হচ্ছে না কারো।”
শাহীন খান এতকিছু শোনেননি এতক্ষণ। তিনি তার মত মেহেরকে ডেকে বলতে লাগলেন,
-“মেহের!আমার মনে ছিল না।তোমার বাবা গতকাল কল করেছিলেন আমাকে।তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন।”
মেহেরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে শেহনাজ পারভীন বলে উঠলেন,
-“এতদিন পর কল দিয়েছে তবে।”
শাহীন খান প্রতিবাদ করে বললেন,
-“মেহেরের তো ফোনই নেই।ও কথা বলবে কি করে?”
আরবাজের হাত থেমে গেল।মুখ তুলে তাকালো মেহেরের দিকে।মেহের অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে শাহীন খানের দিকে।আরবাজ এতক্ষণে বুঝলো যে তার রিকুয়েষ্ট কেন একসেপ্ট হয়নি।কেননা মেহেরের তো ফোনই নেই।এজন্যই হয়ত ওর সময় কাটেনা।আর ঠিক এ কারণেই মেহের সারাঘর ঘুরে ঘুরে এর ওর কাজ করে দেয়।আরবাজের কেন যেন খুব হাসি পেল।তবে হাসিটাকে চাপা দিয়ে সে খেতে লাগলো।
মীরা বলতে লাগলো,
-“ভাইয়া!মাকে বল না।”
-“আমি কি বলব?মা না করেছে যেহেতু তাহলে তোর যেতে হবে না।”
-“ধূর ভাল্লাগে না।”
বলেই মীরা চলে গেল।মেহের মীরাকে উঠতে দেখে উঠে চলে গেল।তা দেখে শেহনাজ পারভীন বলতে লাগলেন,
-“আমাকে বসিয়ে দুজন মহারাণী চলে গেলেন।এখন আমাকে এসব একা একা করতে হবে!”
এটা শুনে শাহীন খান হেসে দিলেন।আর বলতে লাগলেন,
-“মেয়েগুলো আর কত করবে?তুমহ বরং তোমার ছেলেকে দিয়ে করাও।”
আরবাজ এটা শুনে বলতে লাগলো,
-“তাহলে তুমিও লেগে পড়ো বাবা।”
।
শাড়ি পড়ে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে মীরা।তার ঠিক সামনেই মেহের বসে বসে ফুল গাছের ফুল দেখছে।মীরা বিরক্ত হয়ে বলতে লাগলো,
-“ভাবী!তুমি না আমার মন ভালো করতে শাড়ি পড়াইলা।বললা ছবি তুলে দিবা।এই তোমার ছবি তোলার নমুনা?”
-“আরে দাঁড়াও না।এইযে দেখো এই ফুলটা।”
-“আর দেখতে পারতাম না।তুমি আসবা?”
মেহের উঠে দাঁড়ালো।মীরা বলতে লাগলো,
-“তোমাকে এই শাড়িটায় ভালোই মানিয়েছে ভাবী।”
-“কই থেকে কিনছিলা এটা?”
-“কিনছিলাম একটা পেইজ থেকে।কিন্তু আমাকে এতটা সুন্দর লাগেনি।তোমাকে তো মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে।কালো রঙে কোনোদিন দেখিনি তো তোমায়।”
-“আচ্ছা হয়েছে। দাও ছবি তুলে দিই।”
মেহের ফোনটা নিলো মীরার দিকে।হঠাৎ মীরার চোখ গেল নীচে।আরবাজ বাইক বের করছে।মীরা উপর থেকে ডাকতে লাগলো,
-“ভাইয়া?”
আরবাজ উপরে তাকালো।মীরা দাঁড়িয়ে আছে শাড়ি পড়ে।আর এর পাশেই পিছন দিকে মুখ করে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে।পড়ণে কালো শাড়ি।আর চুলগুলো খোলা থাকায় তা কোমড় অবধি বিছিয়ে পড়েছে।আরবাজকে ডাক দেয়ায় মেহের পিছনে ঘাড় ঘুরালো।আরবাজের চোখ থেমে গেল!আজ আবারো যেন মেহেরকে নতুনরূপে আবিষ্কার করলো সে!
চলবে…..