#প্রথম_ভালোবাসার_সুর❤️
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১২
আরবাজকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মীরা জোরে জোরে বলতে লাগলো,
-“ভাইয়া!ওই ভাইয়া?”
আরবাজ অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে মেহেরের দিকে।দমকা বাতাসে মেহেরে চুলগুলো উড়ছে।মেহের কানে চুল গুঁজার চেষ্টা করছে।মীরা আরবাজের চোখের দৃষ্টি লক্ষ্য করে মেহেরের দিকে তাকালো।মেহের ফোনের ক্যামেরা ঠিক করছে।আরবাজ যে তার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে সেটায় মেহেরের খেয়াল পর্যন্ত নেই।মীরা হালকা হেসে বললো,
-“ভাইয়া?কই যাস?”
আরবাজের ঘোর কাটলো না।কিন্তু মীরার দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিল,
-“যাচ্ছি না তো।”
-“যাচ্ছিস না?”
মীরার চিৎকার করে বলায় আরবাজের ভ্রু কুঁচকে গেল।রাগ নিয়ে বললো,
-“চেঁচাচ্ছিস কেন ভতি।”
-“চেঁচাব না?তুই তো কথাই শুনছিস না।”
মেহের এতক্ষণে ওদের দিকে তাকালো।এগিয়ে এসে রেলিং এর কাছে দাঁড়ালো। আরবাজের দিকে না তাকিয়েই মীরাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলতে লাগলো,
-“কি হয়েছে টা কি?”
-“ভাইয়াকে ডাকছি,কিন্তু ভাইয়া তাকাচ্ছেই না।”
-“তাহলে বিরক্ত করছ কেন?চলো ছবি তুলি।”
-“দাঁড়াও।”
এতটুকু বলে মীরা আবার আরবাজকে ডাকলো।আরবাজ তখন মেহেরকেই দেখছিল উপরের দিকে তাকিয়ে।মীরা ডেকে বললো,
-“ভাইয়া!যাবি না যেহেতু তাহলে একটু উপরে আায় না।”
-“কেন?”
-“ছবি তুলে দে আমার আর ভাবীর।”
মেহের মীরাকে এটা করতে না করলো।কিন্তু মীরা শুনলো না।আরবাজ যেন খুশিই হলো।তবে খুশির কারণ টা সে নিজেও জানে না।শুধু জানে যে মেহেরকে এভাবে দেখতে তার ভালো লাগছে।খুশিটা প্রকাশ না করেই সে বাড়িতে ঢুকলো।সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠে দেখতে পেল মেহের রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে।আর মীরা ফোনের ছবি গুলো দেখছে।আরবাজ আসতে আসতে মীরা বেশ ৪-৫ টা ছবি তুলে ফেলেছে।আরবাজ এসে বলতে লাগলো,
-“কি হয়েছে?”
-“ছবি তুলে দে না ভাইয়া।”
-“এরজন্য ডেকে আনলি আমাকে।”
আরবাজ না চাইতেও বারবার চোখ মেহেরের দিকে যাচ্ছে।আজ আবহাওয়াটা বেশ সুন্দর।অনেক সুন্দর বাতাস দিচ্ছে।মেহের রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে।আর বাতাস এসে মেহেরকে ছুঁয়ে দিচ্ছে।অবাধ্য চুলগুলোকে মেহের সামলানোর চেষ্টা করছে।আরবাজকে সেখানে তাকিয়ে থাকতে দেখে মীরা হাসলো।তারপর আরবাজের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।ফিসফিস করে বলে উঠলো,
-“সুন্দর না ভাইয়া?”
-“হুম অনেক!”(ঘোরে)
-“তাই বুঝি?”(শয়তানি হেসে)
আরবাজের হুঁশ এলো।মীরার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“কি হয়েছে? সমস্যা কি তোর?”
-“কই না তো।আমার আবার কি হবে।”(মুখ চেপে হেসে)
-“ছবি তুলবি না?চল তাড়াতাড়ি কর।”
-“ভাইয়া তোর ফোন থেকে তুলে দে না!
-“না আমার ফোনে আমি স্টোরেজ ফুল করব না।তাও তোর ছবি দিয়ে।”
-“দে না।”(ঠোঁট উল্টে)
-“আচ্ছা যা দাঁড়া।”
মীরা পোস দিলো আর আরবাজ ছবি তুলে দিচ্ছে।তবে বারবার চোখ মেহেরের দিকে যাচ্ছে। মেহের মীরাকে দেখছে আর হাসছে।মীরা ফোনটা নিয়ে নিলো।
-“দে তো দেখি কি তুলেছিস।”
বলেই ছবি দেখতে লাগলো।তারপর বললো,
-“এটা কি তুলেছিস ভাইয়া!তোর মন কই?”
-“যেমন চেহারা তেমন ছবি।দে ফোন দে।”
-“তুই আমাকে বাজে চেহারা বললি।ভাবী!”
বলেই মীরা ন্যাকা কান্না করতে লাগলো।মেহেরকে ডেকে বললো,
-“ভাবী!আমার কি বাজে চেহারা?”
-“আরে একদম না।”
-“তাহলে ভাইয়া বলে কেন?”
-“আরে যাদের নিজের চেহারা ভালো না তারা অন্যকে বলে।”
আরবাজ ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
-“এক্সকিউজ মি!তুমি কি আমাকে বললে?”
-“বয়েই গেল।”
-“ভালো।”
-“দেখুন আমার ইচ্ছে নেই ঝগড়া করার।আমায় খুঁচাবেন না।”
-“আমি কেন খুঁচাব!”
মীরা ওদের থামাতে গেলে মেহের বলে উঠলো,
-“মীরা তুমি ছবি তুলো।আমি গেলাম।”
-“আরে ভাবী দাঁড়াও।”
-“কেন?”
-“তুমিও তো তুলবে।যাও দাঁড়াও ভাইয়া তুলে দিবে।”
-“না লাগবে না।”
-“আরে দাঁড়াও তো।”
দেখ গেল আরবাজকে বলা লাগলো না।সে প্রথমে বেশ নাটক করলেও মেহেরের অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে দিল।মেহের তবুও বারবার মুখ ভেংচি কাটছে।আরবাজ বলতে লাগলো,
-“ছবি গুলো তোর ফোনে নিয়ে আমার ফোন থেকে ডিলিট করবি।”
-“আমার ফোনে এত জায়গা নেই।ভাবীর গুলো থাক।”
-“আমি পারব না।ডিলিট করতে হবে।”
মেহের এটা শুনে রেগে গেল।তারপর বলতে লাগলো,
-“যা ইচ্ছে করুন।আমি বলেছিলাম ছবি তুলে দিতে?অসহ্য!মীরা থাকো তুমি।”
বলেই মেহের চলে গেল।আরবাজ সেদিকে তাকিয়ে বললো,
-“বেয়াদব একটা।”
-“ভাইয়া তুইও না!এভাবে বলার কি ছিল?”
-“তুই চুপ কর।ওর ছবি তুলতেই হত?”
মীরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আরবাজের ফোনের ছবিগুলো সাইড করে দেখতে দেখতে হঠাৎ মেহেরের একটা ছবি চলে এল।আরবাজ যেটা ফেসবুক থেকে নিয়েছিল সেটা।মীরার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।মেহেরের এই রূপ তো সে নিজেও দেখেনি।তাহলে আরবাজ কিভাবে দেখলো?তাও মেহেরের ছবি আরবাজের ফোনে।মীরা অবাকের শীর্ষে।আরবাজ মীরার দিকে তাকিয়ে ফোনে তাকাতেই ফোনটা টেনে নিলো।তারপর বললো,
-“আব..নিচে যা।”
-“ভ..ভাইয়া!এটা কি ছিল?”
-“কই কিছু না।মদন।যা ভাগ।”
-“ভাইয়া মেহের ভাবীর ছবি তোর ফোনে।তাও এত আগের।”
-“কিসব বলছিস।কি দেখতে কি দেখেছিস।”
বলেই আরবাজ দ্রুত পায়ে চলে গেল।মীরা সেখানেই তাকিয়ে রইলো।তারপর ফিক করে হেসে দিলো।আর বলতে লাগলো,
-“যাক!প্রেমের বাতাসটা মনে হয় আমার ভাইয়েরই আগে লাগছে।এখন এটা আরেকটু গাঢ় হওয়ার পালা।তারমানে ভাইয়া শুধু উপরে উপরেই রাগ দেখায়। মূলত সে ভাবীকে দেখতেই ছাদে এসেছিল।”
মেহের মন খারাপ করে মীরার দেয়া শাড়িটা খুলে ফেললো।নিজের আগের শাড়িটা ফের গায়ে দিয়ে মীরার শাড়িটা ভাজ করছে।এমন সময় মীরা এসে ঘরে ঢুকলো। আর বলতে লাগলো,
-“ভাবী তুমি এভাবে রাগ করলে কেন?”
-“আমি রাগ করিনি।”
-“মিথ্যে বলো না।আমি দেখেছি।”
-“…..”
-“তুমি জানো বা ভাবী কি হয়েছে।ভাইয়া তো….”
বলতে বলতে মীরা থেমে গেল।এভাবে বলাটা কি ঠিক হবে?সে আগেই কেন বলবে?মেহেরের বুঝতে হবে।
সে আগে বলে দিলে তো মজাই শেষ।
-“কি?”
-“না কিছু না।”
-“বাদ দাও তো এসব।যা শোনার তাই শুনাইছে আমাকে।এখন আর এসব বলে কি লাভ।”
মীরা কিছু বললো না।সে তো জানে তার ভাইয়া যা বলেছে সেগুলো মনের কথা না।
মীরা ছবি নিয়ে বসলো।মেহের কিছু সময় বারান্দায় ছিল।তারপর ঘরে এসে বলতে লাগলো,
-“ফোনটা একটু দেবে?আমার আইডিতে ঢুকে দেখতাম বন্ধু-বান্ধব কেউ নক করেছে কিনা।”
মীরা ফোন এগিয়ে দিল। মেহের নিজের আইডিতে লগ ইন করে দেখলো তার বন্ধু-বান্ধব অনেক মেসেজই করেছে।কিন্তু মেহের সেসবের রিপ্লাই করলো না।ইচ্ছে হচ্ছে না!কিন্তু চোখ পড়লো একটা আইডিতে।
‘আবির আবরাজ খান’
মেহেরকেই রিকুয়েষ্ট দিয়েছে। কি সুন্দর আবরাজের হাসিমাখা মুখটা জ্বলজ্বল করছে।মেহেরের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। আবরাজ তাকে রিকুয়েষ্ট দিয়েছে?
দুদিন আগে।মীরা তাড়া দিলো,
-“ও ভাবী।আমি পোস্ট করব তো।”
মেহের কিছু না ভেবে একসেপ্টে চাপ দিয়ে লগ আউট করে মীরার হাতে ফোন বুঝিয়ে দিল।আবরাজ যে তাকে এভাবে ফেসবুকে এড দিবে সেটা সে ভাবেনি।তবে কি আবরাজ তার আইডি চেক করেছে!
মেহেরের হিচকি উঠে গেল।না জানি কি কি দেখেছে!
এদিকে আবরাজ দরজা খুলতে নিল বাইরে যাবে বলে। মীরার জন্য তো তখন যেতে পারলো না।কিন্তু দরজা খুলতেই মেহেরের বাবাকে দেখতে পেলো আবরাজ।আবরাজ তৎক্ষনাৎ সালাম দিয়ে বললো,
-“ভিতরে আসুন না আংকেল।”
মেহেরের বাবা সিদ্দিক আলম ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,
-“তুমি ভালো আছ তো বাবা?”
-“এইত আছি আংকেল।আপনি কেমন?”
-“রাখছে আল্লাহ ভালোই।তোমার বাবা কোথায়।”
বলতে বলতে শেহনাজ পারভীন রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এলেন।আর শাহীন খান ও ঘর থেকে বের হয়ে এলেন।নিজের প্রাণপ্রিয় বন্ধু আর একইসাথে বিয়াই কে দেখে শাহীন খান অনেক খুশি হলেন। কোলাকুলি করে সোফায় বসালেন।সিদ্দিক আলম হাতের মিষ্টওর বাক্স তুলে দিলেন।শেহনাজ পারভীন ভালো-মন্দ কিছু জিজ্ঞেস করলেন না।বরং সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে আরবাজকে বলতে লাগলেন,
-“তুই না কোথায় যাচ্ছিলি।”
আবরাজকে বলতে না দিয়ে শাহীন খান বলে উঠলেন,
-“আরে না।তোমার শ্বশুর এসেছেন।কই যাবে?বসো।”
আবরাজ কিছু না বলে বাবার পাশে বসলো। বাইরে আওয়াজ শুনে মেহের আর মীরা দুজনেই বের হয়ে এলো।মেহের নিজের বাবাকে দেখে কোনোকিছুরই তোয়াক্কা না করে সোফায় বসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল।মীরা এসে সালাম দিল সিদ্দিক আলম কে।
উনি সালামের উত্তর দিয়ে মেয়েকে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে হেসে দিলেন।আর বলতে লাগলেন,
-“পাগলী মেয়ে।কাঁদছিস কেন?”
-“কেমন আছ তুমি বাবা?”
-“আমার মা ঘরে নেই।আমি কিভাবে ভালো থাকি। ”
-“মা কেমন আছে?”
-“তোর মা ও এমনই।”
মেহের বাবাকে জড়িয়ে ধরে আবারো কাঁদতে লাগলো।শাহীন খান বলতে লাগলেন,
-“মেহের মা!তুমি কিন্তু এবার আমায় ছোট করে দিচ্ছো।এভাবে কাঁদলে তোমার বাবা মনে করবেন আমি তোমার যত্ন করি না।অযত্নে থাকো।”
মেহের নিজের কান্না থামানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু কিছুতেই হচ্ছে না।এতদিন পর নিজের বাবাকে কাছে পেয়ে মেহেরের যেন ঈদ লেগে গেছে। এটা তার খুশিরও কান্না।আবরাজ চুপচাপ দেখছে মেহেরকে।
মেয়েটা এই হাসে আবার এই কাঁদে।এই মজা করে তো এই মন খারাপ করে থাকে। এই মেয়েটাকে আবরাজ বুঝতে পারে না।
সিদ্দিক আলম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-“হয়েছে মা।আর কাঁদিস না।কিছু মনে করিস না রে।আমার একটা মাত্র মেয়ে তো এতদিন পর আমায় দেখে আরকি।”
-“কি মনে করব বল তো?মেহের তো আমারও মেয়ে।”
সিদ্দিক আলম হেসে সায় দিলেন।মেহের কান্না থামালেও বাবার এক হাত ধরেই বসে রইলো। সিদ্দিক আলম এবার শেহনাজ পারভীন কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“মাফ করবেন বেয়াইন।আমি আসলে মেয়েকে দেখে আপনারই খোঁজখবর নেয়ার কথা… ”
-“না কোনো সমস্যা নেই।”
-“কেমন আছেন বেয়াইন?”
-“আছি কোনোরকম।”
শেহনাজ পারভীন এটা বলে আর উত্তরের আশা করলেন না।নিজেই বলতে লাগলেন,
-“ভালো থাকার মত কি আর রেখেছেন আপনারা?এতদিন পর মেয়ের কথা কিভাবে মনে পড়লো আপনাদের? মেয়েকে আমার ছেলের ঘাড়ে গছিয়ে তো শান্তিতেই আছেন মনে হয়।”
চলবে…..