প্রিয়মুখ পর্ব-০৭

0
512

#প্রিয়মুখ
#ফারিহা_জান্নাত
#পর্ব০৭

দুপুরের খাবার শেষে সবাই সবার রুমে বিশ্রাম নিচ্ছে। হাসিব আজ অনেক খুশি।নিজের রুমে শুয়ে শুয়ে শুধু ঝুমুরকে নিয়েই ভাবছে সেই প্রিয়মুখ, ছোটবেলার দুষ্ট মিষ্টি চেহারা,রাগ অভিমান আগের মতোই আছে। মনটা যেন বার বার ঝুমুরের কাছে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে।

ঝুমুর নিজের রুমের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বার বার শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবতে চাচ্ছে কিন্তু মন যে শুধু হাসিবকে নিয়ে ভাবনায় ডুবে যেতে চাচ্ছে। ঝুমুর নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে, কেন হচ্ছে এমন?হাসিবকে নিয়ে তো আমি ভাবতে চাই না তবুও কেন আসে আমার ভাবনায়?হাসিবকে আমি ভুলতে চাই কিন্তু হাসিব তো ভুলতে দিচ্ছে না, নিজেকে যত আড়ালে রাখতে চাচ্ছি হাসিব ততই আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো।ফাইজা আর তার বন্ধুরা মিলে ঠিক করেছে ঝুমকার বিয়েতে ওরা নাচ করবে।ফাইজা ঝুমুরের রুমে এসে ঝুমুরের কাছে আবদার করতে লাগলো….

….ঝুমুর আপু তুমি কবে আমাদের নাচ শিখাবে বিয়ের দিন তো এসে গেছে।
(কোনো প্রোগ্রাম হলে ঝুমুর ওদেরকে নাচ শিখিয়ে দেয়।)

….আমি পারবো না ফাইজা। আগের নাচ তো শিখানো আছে তোমরা ওখান থেকে একটা নাচ সিলেক্ট করো।

ফাইজা মন খারাপ করে চলে গিয়ে মায়ের কাছে আবদার করা শুরু করলো…

….আম্মু ঝুমুর আপু আমাদের নাচ শিখাবে না। তুমি আপুকে বলো না আমাদের নাচ শিখাতে।

ফাইজার আম্মুর সাথে ঝুমকাও ছিলো। ঝুমকা তো বেশ খুশি ওর বিয়ে নিয়ে সবার এত আগ্রহ দেখে।
ঝুমকা চাচী কিছু বলার আগেই বলে…..

….আমি ঝুমুর আপুর সাথে কথা বলবো যেন তোমাদের নাচ শেখায় কেমন।যাও তুমি আর বন্ধুরা মিলে ছাদে অপেক্ষা করো।(আমার বিয়েতে ঝুমুর আপু খুশি না নাকি, মাকে বলতে হবে মনে মনে কথা গুলো বললো)

….ফাইজার আম্মু মনে মনে খুশিই হলো যাক ঝুমুর অবশেষে রুম থেকে বের হতে পারবে।

ঝুমকা বেশি দেরি না করে তাড়াতাড়ি মায়ের কাছে গিয়ে ঝুমুরের নামে নালিশ দিতে থাকে….

….মা তুমি কি জানো ঝুমুর আপু আমার বিয়েতে খুশি না

….তোকে কে বলেছে… ঝুমুর?

….এসব বলতে হয় নাকি মা।ফাইজা আমার বিয়েতে নাচবে বলে ঠিক করেছে কিন্তু ঝুমুর আপু নাচ শিখাবে না।আপু তো কখনো এমন করে না তাহলে আমার বেলায় কেন ?তুমি এখন গিয়ে আপুকে বলো ফাইজাকে যেন নাচ শিখায়। (রাগ হয়ে এক টানা কথা গুলো বলে গেলো)

ঝুমকার মা ভাবছে…

…আংটি বদল তো হয়ে গেছে বিয়ের দিনও ঘনিয়ে আসছে ঝুমুরকে দেখলে এখন আর কোনো সমস্যা হবে না।আমার মেয়ের বিয়েতে অনেক আনন্দ হওয়া চাই।যাই ঝুমুরকে একটু শাসিয়ে আসি বলেই ঝুমুরের রুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিলো।

ঝুমুর রুমের দরজা খুলে চমকে গেলো….

বড় চাচী হঠাৎ আমার রুমে কেন?চাচী কি জেনে গেছে হাসিবের সাথে আমার দেখা হয়েছে। সর্বনাশ এখন কি হবে?

বড় চাচী ঝুমুরকে পাশ কাটিয়ে রুমে এসে বলতে লাগলো…

….ঝুমুর তুই নাকি ফাইজাকে নাচ শিখাতে মানা করেছিস?জানিস ঝুমকা কতটা কষ্ট পেয়েছে ওর বিয়েতে নাচ হবে না এটা জানার পর।

ঝুমুর চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। (যাক বাঁচলাম মনে মনে বললো)

….ঝুমুর ছাদে যা ফাইজা আর ওর বন্ধুরা অপেক্ষা করছে তোর জন্য। এক্ষুনি যাবি
কথাটা শেষ করে হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো বড় চাচী

…..আল্লাহরে আল্লাহ কি বিপদে পড়লাম।কি দরকার বিয়েত নাচানাচি করার ধ্যাত।

বিরুক্ত ভাব নিয়ে ছাদে গেলো।ফাইজা আর ওর বন্ধুরা অপেক্ষা করছে। ঝুমুরকে দেখে সবাই তো মহা খুশি।

অনিচ্ছা থাকার সত্ত্বেও ঝুমুর ওদেরকে নাচ শিখাচ্ছে। কোমরে ওড়না প্যাঁচিয়ে নিলো।চুলগুলো বেঁধে রেখেছে খোঁপা করে।

নাচের মাঝখানে চলে এলো ঈশিকা।ঈশিকা ঝুমুরকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে আবার নিচে নেমে গেলো হাসিবকে ডেকে আনার জন্য। ঈশিকা ভেবেছিলো হাসিব এখনো ঝুমুরকে দেখেনি।

দৌড়ে হাসিবের রুমে এসে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকতে লাগলো।

….কি রে কি হয়েছে এত হাঁপাচ্ছিস কেন(হাসিব ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে)

….ভাইয়া তাড়াতাড়ি ছাদে চলো তোমাকে একজনকে দেখাবো।

….আমার কাউকে দেখতে হবে না তুই দেখ যা বিরুক্ত করিস না।

….ভাইয়া প্লিজ চলো না বলেই হাসিবের হাত ধরে টেনে ছাদে নিয়ে গেলো।

ছাদে গিয়ে ঈশিকা ইশারা দিয়ে দেখাচ্ছে ঝুমুরকে।হাসিব ঝুমুরকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,অদ্ভুত রকমের সুন্দর লাগছে।ঝুমুরকে যত দেখছে ততই যেন দেখার ইচ্ছে আরও বেড়ে যাচ্ছে। এক দৃষ্টিতে ঝুমুরকে দেখছে যেন দৃষ্টি ফিরালেই ঝুমুর আবার হারিয়ে যাবে।

ঝুমুর নাচতে নাচতে হঠাৎ চুল খুলে গেলো আর বাতাসে সব চুল মুখের উপর এসে পড়লো।নাচ বন্ধ করে মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে চুল বাঁধবে এমন সময় হাসিবের দিকে চোখ যেতেই পুরো পৃথিবী যেন থমকে গেলো।হাসিবকে যতই এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে হাসিব যেন ততটাই কাছে টানছে।ঝুমুর হাসিবের থেকে চোখ সরিয়ে সবাইকে বলে…

…আজ আর নাচ শিখাবো না সবাই বাড়ি যাও।

সবাই নিচে নেমে যেতে লাগলো ঈশিকাও ফাইজার সাথে কথা বলতে বলতে নিচে নেমে গেলো।সবাই নেমে যেতেই ঝুমুরও নেমে যেতে চাইলে হাসিব ঝুমুরের হাত ধরে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।হঠাৎ এমন
কিছু হাসিব করবে ঝুমুরের ভাবনার বাহিরে ছিলো।

ঝুমুর নিজেকে ছাড়ার জন্য অনেক জোরাজোরি করতে লাগলো কিন্তু হাসিব ঝুমুরকে আরও শক্ত করে ধরলো।ঝুমুর অসহায়ের মতো কান্না করে দিয়ে বলতে লাগলো…

….কেন করছেন আমার সাথে এমন প্লিজ ছাড়ুন আমাকে। কেউ দেখলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।ছাড়ুন প্লিজ

হাসিব ঝুমুরের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো….

…ঝুমুর একদম চুপ হয়ে থাকো।আমাকে তোমার স্পর্শ পেতে দাও।
কথাটা বলেই ঝুমুরের কপালে হাসিবের ঠোঁট আলতো করে ছুঁয়ে দিলো।
হাসিবের ছোঁয়া পেয়ে ঝুমুর যেন সব শক্তি হারিয়ে ফেললো।ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে ঝুমুরের হাত পা যেন অবস হয়ে গেলো।নড়ার শক্তিটুকুই হারিয়ে ফেললো।

হাসিব ঝুমুরকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো…

….ঝুমুর আমাকে কেন এত কষ্ট দিচ্ছো?কেন দূরে সরিয়ে রাখছো।

….আপনি আমার না, আমি অন্যের জিনিস কখনো নিজের মনে করি না।(কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে)

….নিজের জিনিস অন্যকে দিচ্ছো কেমন করে?

….আমার জিনিস আমারই থাকবে কখনো হারাবে না কিন্তু যেটা হারিয়ে গেলো সেটা কখনো আমার ছিলো না।

….তোমার জিনিস কখনো হারাবে না শুধু আগলে রাখতে শিখো।

ঝুমুর হঠাৎ চমকে উঠলো হাসিবের কথা শুনে…
ঝুমুরের ইচ্ছে করছে বলতে আমি তোমাকে হারাতে পারবো না তুমি শুধু আমার থেকো।পরক্ষণেই মনে হতে লাগলো, হাসিব যদি সত্যি আমাকে এত ভালোবাসতো তাহলে ঝুমকাকে কেন বিয়ে করতে রাজি হলো।বুকের মাঝে কষ্ট গুলো চেপে রেখে বললো…

…প্লিজ ছাড়ুন আমাকে।(চোখের পানি টপটপ করে পরতে লাগলো)

হাসিব দেখলো ঝুমুর কান্না করছে।হাসিব ঝুমুরের চোখের পানি নিজের হাতে মুছে দিয়ে বললো….

…যাকে এত ভালোবাসি তার চোখের পানি ঝরতে দিতে তো পারি না।আমার সামনে আর কখনো যেন কান্না করতে না দেখি।সহ্য করতে পারবো না।

কথাটা শেষ করেই হাসিব ছাদ থেকে নেমে যায় আর

ঝুমুর অসহায় দৃষ্টিতে হাসিবের চলে যাওয়া দেখছে।

চলবে……