প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা : আফরিন ইসলাম
সিজন : ৩
পার্ট :৫
ব্যরিস্টার সোহেলের লাশটা গাছে ঝুলছে ৷সাংবাদিকরা তার ছবি তুলতে ব্যস্ত ৷একের পর এক সংবাদ হচ্ছে সোহেলকে নিয়ে ৷তার মৃত্যুর কারন কেউ জানে না ৷তবে এটাকে সবাই পরিকল্পিত খুন বলেই বিবেচনা করছে ৷কারন সোহেলের স্ত্রী এর কথা অনুযায়ী সোহেল আত্মহত্যা করতেই পারে না ৷সে স্বাভাবিক ছিল গতকাল দুপুরেও ৷কিন্তু বিকেলের পরেই সে অস্থির হয়ে যায় অজানা কারনে ৷রাতে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সে বার বার তার সন্তানদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন ৷ বারবার জিঞ্জাসা করার পরেও কিছু বলে নি সে ৷ বাসা থেকে চলে যায় কিছু না বলেই ৷ কিন্তু মাঝ রাতের পর স্বামীকে কল করে আর পান নি ৷আর সকালে তার মৃত্যুর খবর গেছে বাড়ীতে ৷
আরো একটা ব্যাপার পুলিশের মাথা খারাপ করে দিচ্ছে ৷কারন সোহেলের লাশের নিচে তারা একটা চিরকুট পেয়েছেন ৷যেটা একটা ইট দিয়ে চাপা দেওয়া ছিল ৷আর চিঠিটা সাংবাদিকের হাতে যাওয়ার পর সংবাদ মাধ্যম একের পর এক নিউজ করে যাচ্ছে ৷চিঠিতে লেখা ছিল
আমি আমার প্রতিশোধের তিন নম্বর খুনটা সম্পন্ন করেছি ৷আরো চারটা খুন করবো ৷আমি প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুড়ে বেড়াবো ৷কিন্তু ধরতে আমায় পারবেন না ৷তাই আমাকে না খুজে আমার পরবর্তী শিকারদের বাচাঁন ৷
দ্বীপ চৌধুরী পাগলের মতো যা তা বলছে ৷কারন সে জানে না প্রীতিলতা কোথায় আছে ৷তার সব হিসেব গুলিয়ে যাচ্ছে ৷সে নিজের হাতে প্রীতিকে খুন করেছে ৷যেভাবে সে ঐ ছোট মেয়েটাকে মেরে ছিল তাতে তার বাচাঁর কথা না ৷এক আয়ান তার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে ছিল ৷তাকে তো সেই কবেই শেষ করেছে ৷আর এখন এসেছে তার মেয়ে ৷ এভাবে চলতে থাকলে তার মুখোশ সবার সামনে চলে আসবে ৷যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে ৷
অন্যদিকে প্রীতি ঘুমিয়ে আছে ৷তার দরজায় একের পর কড়া নেড়ে যাচ্ছে জবা ৷কাল অনেক রাতে বাড়ীতে এসেছে প্রীতি ৷না চাইতেও ঘুম থেকে সে উঠলো ৷দরজা খুলতেই জবাকে দেখতে পেয়ে মুচকি হাসলো সে ৷তারপর বলল
কি ব্যাপার এত সকাল সকাল ডাকছো যে ৷
কি সব বলছো আপু ৷এগারোটা বাজে ৷
কি এগারোটা বাজে ৷ আমাকে ডাক দাও নি কেন ৷
আপনি অনেক রাত করে ঘুমিয়েছেন তাই ৷নিচে একজন আপনার সাথে দেখা করতে এসেছে ৷অনেক কিছু নিয়ে এসেছে সাথে করে ৷আপনার সাথে তার নাকি কি কথা আছে ৷
তুমি বসতে বলো ৷ আমি আসছি ৷
প্রায় পনেরো মিনিট পরে প্রীতি নিচে গেল ৷নিচে যেয়ে দেখলো শান্ত বসে আছে ৷শান্ত প্রীতিকে দেখে সালাম দিল ৷
প্রীতি সালামের জবাব নিয়ে বলল আমার বাসায় হঠাৎ আপনার আগমন মিঃ শান্ত ৷
দুইটা কারনে এখানে আসা ম্যাডাম ৷গতকাল রাতে ব্যরিস্টার সোহেল খুন হয়েছে বলে পুলিশ ধারনা করছে ৷আজ সকালে তার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া গেছে ৷আপনাকে এসিপি স্যার জরুরী ভাবে ডেকেছেন ৷হয়তো এই কেসটা আপনাকে দিতে চাইছেন উনি ৷
কি সব বলছো এমপি সাঈদের ভাই সোহেল মারা গেছে ৷
জ্বী ম্যাডাম ৷আপনি এখনও জানেন না ৷আর খুনী এর আগেও খুন করেছে ৷সামনে আরো চারটা খুন করবে ৷এমনটাই একটা চিরকুটে আমরা পেয়েছি ৷আপনি তাড়াতাড়ি স্যারের সাথে দেখা করুন ৷ এই কেসের সমাধান করতেই হবে ম্যাম ৷উপর মহল থেকে কড়া আদেশ এসেছে ৷
ওকে আমি নিজেই এর সমাধান করে দেব ৷আমি যাবো এসিপি স্যারের কাছে ৷এবার বলো দ্বিতীয় কারনটা কি এখানে আসার প্রীতি মুচকি হেসে বলল ৷
শান্ত কিছুটা নিরব থেকে বলল আমি আপনার বোন জবাকে বিয়ে করতে চাই ৷
জবা একটু দুরেই দাড়িয়ে ছিল ৷শান্তর মুখ থেকে এমন বাক্য শুনতেই সে কেপেঁ উঠলো ৷কি বলছে এই লোকটা ৷জবা শান্তর দিকে তাকিয়ে রইলো ৷ শান্ত একবার জবার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিল ৷
প্রীতি শান্তর দিকে তাকিয়ে বলল আমার বোন আগে পতিতালয়ে ছিল ৷তার একটা বিয়েও হয়ে ছিল ৷আপনি এগুলো জেনেও বিয়ে করবেন ৷
আমার তাতে কিছু যায় আসে না ম্যাডাম ৷আমি শুধু তাকে নিয়ে একটু ভালো থাকতে চাই ৷ আর কিছু না ৷
আমি কাউকে বিয়ে করবো না ৷হঠাৎ এমন কথায় শান্ত চমকে গেল ৷জবার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে কাদঁছে ৷জবা কাদঁতে কাদঁতে বলল
আমি কোনো দিন বিয়ে করবো না ৷দয়া করে আমাকে নিয়ে আর খেলতে আসবেন ৷জবা কাদঁতে কাদঁতে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল ৷শান্ত তাকিয়ে আছে জবার যাওয়ার পানে ৷
প্রীতি শান্তর দিকে তাকিয়ে বলল অনেক দিনের কষ্ট মনের ভেতর ৷পুরুষ মানুষের দ্বারা আঘাত পেয়েছে ৷ঘা শুকাতে একটু সময় নেবে ৷কিন্তু তাই বলে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা যাবে না ৷পুরনো ক্ষত আবারো জেগে উঠেছে ৷যাও তার কাছে ৷তোমাকে তার প্রয়োজন ৷
প্রীতির কথা শেষ হতেই শান্ত জবার রুমের দিকে দৌড়ে গেল ৷মেয়েটা বিছানায় পরে কাদঁছে ৷শান্ত তার পাশে যেয়ে বসলো ৷জবার কান্নায় শব্দ হচ্ছে ৷শান্তর হঠাৎ করেই রাগ হলো খুব ৷সে কি এই বোকা মেয়েটাকে মেরেছে নাকি যে কাদঁছে ৷শান্ত জবার হাতটা শক্ত করে ধরলো ৷তারপর হেচকা টান দিয়ে বসালো ৷হঠাৎ টান পড়ায় জবাও অবাক হয়ে গেল ৷শান্ত জবার দুইগালে হাত রেখে বলল
কাদঁছো কেন ৷আমি কি মেরেছি তোমাকে ৷
জবা শান্তর হাত নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল
খুব তো ঐ দিন ভালো মানুষী দেখিয়ে ছিলেন ৷সব খুলে যখন দিয়ে ছিলাম তখন তো ফিরেও তাকান নি ৷তা এখন কেন বিয়ে করতে আসছেন ৷নিজের ইচ্ছে মতো ভোগ করতে নাকি ৷তো নিন ভোগ করুন ৷তারপর চলে যান ৷জবা কথাটা বলেই নিজের ওরনা খুলতে গেলে শান্ত তাকে ঠাটিয়ে এক চড় মেরে দিল ৷জবা ছিটকে বিছানায় পরে গেল ৷শান্ত এবার চিৎকার করে বলল
আর একবার যদি উল্টা পাল্টা কথা বলেছো তো জানে মেরে দেব ৷আমি ভোগ করতে এসেছি না ৷কি আছে একটা মেয়ের দেহে যে তাকে ভোগ করা লাগবে ৷আর ভোগ করার যদি ইচ্ছে থাকতো তাহলে ঐ রাতেই সব করতে পারতাম ৷বিয়ে করার কোনো দরকার ছিল না ৷ আর হ্যা বিয়ের পর নিজের টা আমি ঠিকই বুঝে নেব ৷আর কখনো যদি নিজের কাপড় খুলেছো তাহলে একেবারে গলা টিপে মেরে ফেলবো ৷
কেন বিয়ে করবেন আপনি কেন ৷আপনি জানেন না আমি আগে পতিতালয়ে ছিলাম ৷রোজ পাচঁ ছয় জনের সাথে থেকেছি ৷ছয় মাসে কত লোকের সাথে থেকেছি তার হিসেব নেই ৷এই দেহে দেওয়ার মতো আর কিছু নেই ৷সব কুকুর শিয়ালে খেয়ে গেছে ৷এখন আপনার কি চাই হ্যা ৷
শান্ত জবাকে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলল
আমার তোমাকে চাই বুঝেছো ৷আর সেটা নিজের ভালোবাসার মানুষ হিসেবে ৷কাল আমি সব নিয়ে আসবো ৷ কালকেই আমাদের বিয়ে হবে ৷সুন্দর করে সাজবে কাল ৷আর বেশি চালাকি করলে একদম উঠিয়ে নিয়ে যাব ৷
জবা আবারো কেদেঁ দিল ৷তারপর বলল আমি বিয়ে করবো না ৷
শান্ত জবাকে নিজের বুকে চেপেঁ ধরে বলল
আমি বিয়ে করবো ৷তোমার চাওয়ায় আর না চাওয়ায় আমার কি ৷তোমার ভালোবাসা আমার লাগবে না ৷ আমার ভালোবাসাই যথেষ্ট ৷
প্রীতি দরজার কাছে দাড়িয়ে দুইজনের ঝগড়া দেখছে ৷কেন জানি তার আজ খুব আনন্দ লাগছে ৷দুটো ভালোবাসার মানুষ ভালো থাকুক ৷আর কি চাই এই জিবনে ৷প্রীতি আর দাড়ালো না বেড়িয়ে গেল নিজের কাজে ৷
সোহেলের লাশ পোস্টমর্ডামে নেওয়া হয়েছে ৷ সোহেলের খুনের কেস প্রীতির কাছে এসেছে ৷এই কেসটা সেই সমাধান করবে তার ফোর্স নিয়ে ৷
রাত ঘড়িতে দশটা বাজে প্রীতি বসে আছে একটা চেয়ারে ৷তার সামনেই একটা লোক বসে আছে ৷চেয়ারের সাথে বাধা লোকটা ৷প্রীতির দৃষ্টি ঐ লোকটার দিকে ৷প্রীতি নিজের ফোনটা বের করলো ৷তারপর সোহেলের ফাঁসিতে ঝুলার সময় ছটফট করার ভিডিও চেয়ারে বাধা লোকটাকে দেখাতে লাগলো ৷চেয়ারে বাধা লোকটা উম উম শব্দ করতে লাগলো ৷একটা কথাও সে বলতে পারলো না ৷তার মুখটা একটা শক্ত কাপড় দিয়ে বাধা ৷ লোকটার ভয়ে হাত পা কাপঁছে ৷ তার চোখে পানি চলে এসেছে ৷
হঠাৎ করেই প্রীতি লোকটার দুই গাল শক্ত করে চেপেঁ ধরে বলল
কষ্ট হচ্ছে খুব হ্যা ৷নিজের ভাইয়ের ছটফট করা দেহটা দেখে তোর কষ্ট হচ্ছে ৷ খুব কষ্ট হয় না নিজের ছোট ভাইকে বোনকে মরতে দেখলে ৷জানিস আমারো কষ্ট হয়ে ছিল ৷খুব কষ্ট হয়ে ছিল চৌদ্দ বছর আগে ৷কিন্তু আমি সেই দিন কাউকে আমার পাশে পাই নি ৷কাউকে আমার কষ্টের কথা বলতে পারি নি ৷আমি পারি নি আমার ভাইটাকে বাচাঁতে ৷তুই যেমন আমার ভাইকে কেড়ে নিয়ে ছিলি ৷আমিও তোর ভাইকে কেড়ে নিলাম ৷এবার তো হলো সমানে সমান ৷প্রীতি লোকটাকে ছেড়ে দিল ৷হঠাৎ করেই ওর মধ্যে অস্থিরতা ভর করলো ৷প্রীতি নিজের মাথার চুল খামঁচে ধরলো ৷নিজে নিজে কিছু একটা বিরবির করতে করতে বলল
এই তুই তো আমার মাকে দম বন্ধ করে মেরেছিস তাই না ৷আমার মায়ের শরীরটা তখন কত ছটফট করেছিল তুই দেখেছিস ৷আমার মা কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বিছানার চাদর খামচে ধরে ছিল ৷কিন্তু তোদের মনে একটু দয়া হয় নি ঐ দিন ৷আমিও দয়া করবো না আজ ৷আজকের খবরে তোর ভাইকে দেখাচ্ছে ৷কিন্তু কালকের খবরে থাকবি তুই ৷তোকে আমি মারবো না ৷কিন্তু তোর এমন হাল করবো যে তুই প্রতি মুহূর্তে মরতে চাইবি ৷কিন্তু তুই মরতেও পারবি না ৷প্রীতি বাইরে চলে গেল বিরবির করতে করতে ৷
প্রীতি কিছুক্ষন পরে ফিরে এলো ৷কিন্তু এইবার আর সে একা ফিরে এলো না ৷তার সাথে দুইটা ক্ষুদার্থ কুকুর এসেছে ৷ কুকুর দুটোকে দেখে চেয়ারে বাধা লোকটার ভয়ে আত্মা কাপঁছে ৷প্রীতি মাথাটা কাত করে বলল
কি ভয় লাগছে ৷আমি সব ভয় কাটিয়ে দেব এবার তোর ৷
প্রীতির হাতে একটা ধারালো ছুড়ি ৷ছুড়িটা হাতে নিয়ে প্রীতি বলল
কি এমপি সাইদ ভয় পাচ্ছো বুঝি ৷তোমার ভাইও ভয় পেয়ে মরেছে ৷তোমার ভাইয়ের কেসটা আমিই সামলাবো ৷তোমার সামনেই আমি থাকবো প্রতিদিন ৷ কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারবে না তুমি ৷ কাল সকালে আবার আমাদের দেখা হবে ৷ কিন্তু একটু ভিন্ন ভাবে ৷এখন আমি তোমার সামনে তোমারই যম ৷আর কালকে তোমার ……থাক আর বলবো না ৷তুমি ভয় পাবে ৷আমি তো ভয় দেখাবো না ৷আমি তো কাজ করে দেখাবো তাই না ৷ প্রীতি কথা গুলো বলতে বলতে সাঈদের হাতের কনুইতে কোপ বসিয়ে দিল ৷সাঈদ চিৎকার করতে পারলো না ৷প্রীতি সাইদের কাটা ডান হাতটা নিয়ে বলল
তোর এই কাটা হাতটা এবার এই রাস্তার কুকুর দুটো খাবে ৷প্রীতি হাতটা কয়েক টুকরা করে ছিটিয়ে দিতেই কুকুর দুটো খেতে শুরু করলো ৷প্রীতি সাইদের চুল খামচে ধরে বলল
এই দেখ সেই বাড়ী ,সেই ঘর ,সেই তুই ৷কিন্তু এবার তুই বন্দি আর আমি খুনী ৷তুই যেই বাড়ীতে আমার মা বাবার খুন করেছিস ৷ঠিক সেই বাড়ীতেই আজ তোর গল্পের শেষ হবে ৷আমার অন্ধকার রাজ্যের অন্ধকারে এবার তুইও তলিয়ে যাবি
চলবে