প্রেমের তাজমহল_২ পর্ব-৮+৯

0
16

#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব৮
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

বৃষ্টিময় পরিবেশ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। একটু আগে বৃষ্টির প্রকোপ থাকলেও এখন কমে এসেছে। আনায়া তবুও চোখ বুজে আছে। বৃষ্টি গাঁয়ে মাখছে আবেশে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে এক যুব তৃষ্ণার্থ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। তার চোখের যেন সমুদ্র সমান তৃষ্ণা। এ তৃষ্ণা এই জীবনের মিটবে না। এইযে যুবক বিগত কয়েক মিনিট যাবত এক দৃষ্টিতে প্রেয়সীর পানে তাকিয়ে আছে তবুও তার তৃষ্ণা মিটছে না। চোখে এক আকাশ সম আকুলতা নিয়ে প্রেয়সীর পানে চেয়ে আছে।

আনায়া চোখ মেলে চাইলো। বৃষ্টির ঝাপ্টা অনেকটাই কমে এসেছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে এখন। আনায়া ছাদের দরজার দাঁড়ানো অর্ণবকে দেখে চমকে উঠলো। অর্ণব ছাদের দরজার সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আনায়া একবার নিজের দিকে তাকায় একবার অর্ণবের দিকে। বৃষ্টিতে ভিজার দরুন কাপড় আঁটসাঁট হয়ে গাঁয়ের সাথে চিপকে আছে। তবে স্বস্তির বিষয় হলো গাঁয়ে সুন্দর করে ওড়না জড়ানো। আনায়া এগিয়ে গেল অর্ণবের দিকে। অর্ণব এখনো ঘোরের মাঝেই আছে। আনায়া অর্ণবের চোখের সামনে চুটকি বাজালো।
“এইযে মিস্টার অ*সভ্য এমপি! আপনি এখানে কি করছেন?”

আনায়ার কথা শুনে অর্ণবের ঘোর ভাঙলো। আনায়াকে নিজের এতটা কাছে দেখে অবাক হলো তবে চমকালো না। মেয়েটা না একটু আগে চোখ বুজে বৃষ্টি উপভোগ করছিলো! তাহলে ওর সামনে কখন এলো?
“এইযে কি ভাবছেন?”

আনায়া ফের জিজ্ঞেস করলো। অর্ণব কথার উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করলো,
“তুমি আমার সামনে কখন এলে? তুমি না দূরে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছিলে?”

“আপনি আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন”

“তুমি আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও”

“আগে আমি জিজ্ঞেস করেছি”

অর্ণব কিছু না বলে আনায়ার কাছে এগিয়ে এলো। কানে ফিসফিস করে বলল,
“তুমি জানো তোমায় বৃষ্টিতে ভেজা অবস্থায় কেমন লাগে?”

আনায়া দুদিকে মাথায় নাড়িয়ে ‘না’ বোঝালো। অর্ণবের ঠোঁটের কোণে দেখা দিলো দুস্টু হাসি। আরেকটু ঝুঁকে আনায়ার কানে সাথে ঠোঁট প্রায় ছুই ছুই অবস্থায় দাঁড়িয়ে বলল,
“বৃষ্টিতে ভিজলে মেয়ে তোমায় আবেদনময়ী লাগে। তোমার সেই রূপ একজন পুরুষকে নিমিষেই কাবু করে ফেলতে পারে। পুরুষ তার কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু আমায় দেখো দিব্বি এখনো তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি সভ্য হয়ে। তাও তুমি আমায় অ*সভ্য এমপি বলো। আফসোস, তুমি আমায় বুঝলে না”

অর্ণবের কথার বিপরীতে আনায়া কি বলবে বুজে পেল না। অর্ণবকে এতটা কাছে দেখে ও ঘাবড়ে গেছে। স্ট্যাচু হয়ে একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো নড়চড় নেই। মনের মাঝে কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। অর্ণবের নিঃশাস এসে পড়ছে আনায়ার ঘাড়ের ওপর। আনায়ার ঘাড় কেমন শিরশির করছে। দম আটকে আসছে। অর্ণব আনায়ার অবস্থায় বুঝে হাসলো। মেয়েটা যে ঘাবড়ে গেছে তা বুঝতে ওর বাকি নেই। আনায়াকে আরেকটু ঘাবড়ে দিবে একই ভঙ্গিতে বলল,
“আরেকটা কথা বলবো?”

আনায়া কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই। দম বন্ধ করে খিচ মেরে দাঁড়িয়ে আছে।
“বৃষ্টিভেজা রূপে তোমায় অনেক বোল্ড লাগছে মেয়ে। নেশা ধরে যাচ্ছে আমার, নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পড়েছে”

আনায়ার আর সহ্য হলো না। অর্ণবের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। অর্ণব আচমকা ধাক্কায় খানিকটা পিছিয়ে গেল। আনায়া দৌড়ে ছাদ থেকে যেতে যেতে বলল,
“অ*সভ্য এমপি”

বলে দৌড় লাগলো। তবে বেশি দূর যেতে পারলো না। বৃষ্টির পানি ছাদে একটু একটু জমে আছে। আনায়া স্লিপ কেটে পড়ে যেতে নিলো। পড়লে সোজা ফ্লোরে। মাথা আর মাথায় জায়গায় থাকবে না। ফেটে চৌচির হয়ে যাবে। আনায়া হাত বাড়ালো তবে আঁকড়ে ধরার মতো কিছুই পেল না। ভয়ে চোখ বুজে নিলো। সেকেন্ড গড়িয়ে মিনিট পার হলো। আনায়া অনুভব করলো ও পড়েনি। শুন্যে ভাসছে। ভয়ে ভয়ে চোখ মেলে তাকালো। চোখের সামনে ভেসে উঠলো অর্ণবের মুখে খানা। আনায়া কেমন বেক্কেলের মতো মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইল। নিজের অবস্থান সম্পর্কে খেয়াল হতেই ভালো করে তাকিয়ে দেখলো অর্ণব ওকে ধরে রেখেছে। অর্ণবের হাতের ওপর আনায়ার মাথা। তাড়াহুড়ো করে উঠতে চাইলো তবে আবার পড়ে যেতে লাগলো। অর্ণব ধরে ফেলল।
“ব্যাঙের মতো লাফালাফি কেন করছো মেয়ে? একটু স্বস্তি মতো থাকো”

অর্ণব আনায়াকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলো। আনায়া নাকের পাটা ফুলিয়ে বলল,
“আপনি আমায় ব্যাঙ বললেন? আপনার সাহস তো কম না”

অর্ণব আনায়ার নাক টেনে দিলো। অতঃপর বলল,
“ব্যাঙের মতো লাফালাফি করলে ব্যাঙ বলবো না তো হাতি বলবো? আর আমার সাহস বরাবরই একটুও বেশি”

আনায়া বুঝলো এই লোকের সাথে তর্কে যেয়ে লাভ নেই। এ শুধু শুধু কথা পেচাবে।
“আপনার সাথে কথা বলাই বেকার। আপনি থাকেন আমি গেলাম”

আনায়া গট গট পায়ে হেটে চলে এলো। অর্ণব তাকিয়ে রইল প্রেয়সীর যাওয়া পানে। আবিরকে নিয়ে একটু বের হবে তাই এসেছিলো। আবির রেডি হচ্ছিলো বলে ও ঢু মারলো আনায়ার ঘরে। মেয়েটাকে রুমে না পেয়ে কি ভেবে যেন ছাদে এলো। ছাদের দরজার পা রাখতেই চোখ আটকে গিয়েছিল এক বৃষ্টি কন্যাতে। যে বৃষ্টি উপভোগ করায় ব্যাস্ত ছিলো। মেয়েটা একটুও টের পায়নি একজন পুরুষ তাকে মুগ্ধ চোখে দেখছিলো। অর্ণবও নিচে নেমে এলো। আবিরের রেডি হওয়া হলে দুজন বের হবে।
——-

আনায়া আর অর্ষা ভার্সিটি এসেছে। মাঝে কয়েকদিন বন্ধ থাকায় আনায়া স্বস্তিতে ছিলো। আজকে ভার্সটিতে ঢুকতে গেলে মনের মাঝে কেমন ভয় ভয় লাগছে। সেদিন রাগের বশে নিশানকে সবার সামনে থা*প্পড় মারলেও এখন ভয় হচ্ছে। নিশান ছেলেটা ভালো না। থা*প্পড়ের বদলা নিতে যদি ওর কোনো ক্ষতি করে! আনায়া নিজে মনে নিজেকে সান্তনা দিলো। ভয় পাওয়ার মেয়ে আনায়া না। বুক ভোরে শ্বাস নিয়ে গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকলো। যে যার মতো মাঠে আড্ডা দিচ্ছে, নিজ ডিপার্টমেন্ট এ যাচ্ছে। আবার কেউ যাচ্ছে ক্যান্টিনে। আনায়া চারপাশে চোখ বুলালো। তবে নিশানকে কোথাও পেল না। স্বস্তির নিঃশাস ফেলল। অতঃপর সোজা হাঁটা দিলো নিজ ডিপার্টমেন্ট এর দিকে। কিছু দূর যেতেই খেয়াল করলো আশেপাশের ছেলে মেয়ে গুলো কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আনায়া সেদিকে পাত্তা দিলো না। নিজের মতো হেটে যেতে লাগলো।

ক্লাস শেষ করে একসাথে সব বান্ধবীরা মিলে বের হলো ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে। আনায়া আর রাইহা কথা বলছে। অর্ষা পিছনে দিয়ার সাথে। আনায়া কি যেন বলছে রাইহা ওর কথা শুনছে। এমন সময় পাশ থেকে রাইহা আনায়াকে খোঁচা দিলো। আনায়া কথা থামিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে?”

রাইহা কিছু না বলে চোখের ইশারায় সামনে দেখালো। মাঠের অন্য পাশে বাইকে হেলান দিয়ে নিশান দাঁড়িয়ে। ওর আশেপাশে রয়েছে ওর চেলাপেলারা। আনায়া ভাবলো নিশান হয়তো ওকে খেয়াল করেনি। তাই এখনো এতটা শান্ত। নাহয় কালকে সবার সামনে সামান্য একটা মেয়ের থেকে চড় খেয়ে এখনো চুপচাপ থাকতো না। তবে আনায়ার ধারণা ভুলে প্রমাণিত হলো। নিশান হুট্ করেই তাকালো আনায়াদের দিকে। এক মুহূর্ত তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলো। আনায়া ভাবলো নিশান বোধ হয় ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু নিশানের মনে যে কি চলছে সেটা শুধু নিশানই জানে।

আনায়া বেশি কিছু না ভেবে পা বাড়ালো ক্যান্টিনের দিকে। আনায়া যেতেই নিশানের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো পৈ*শাচিক হাসি। যেই হাসি বড্ড জ*ঘন্য। সবার চোখের আড়ালে রয়ে গেল সেই নিকৃষ্ট হাসি।
——

অর্ণব আর আবির বসে আছে পাশাপাশি। হুট্ করে বন্ধু মহল এসে ঝাঁপিয়ে পড়েছে অর্ণবের পার্টি অফিসে। কলেজ শেষ হয়ে গেলেও বন্ধুত্ব সেই আগের মতোই রয়ে গেছে। হুট্ হাট যখন ইচ্ছে হামলা চালায় এর ওর বাড়ি কিংবা অফিসে। সবাই কথা বলছে সেই সময় আবিরের ফোন বেজে উঠলো। আবির ফোন নিয়ে এক কোনায় চলে গেল। ফিসফিস করে কথা বলছে। অনেকক্ষন হয়ে গেছে আবির আসছে না। ফিসফিস করে কথা বলেই যাচ্ছে। অর্ণব এগিয়ে গেল আবিরের কাছে। ঘাড়ে হাত রাখতেই আবির চকিতে পিছনে তাকালো। অর্ণব জিজ্ঞেস করলো,
“কার সাথে ফিসফিস করে কথা বলছিস?”

আবির তোতলানো স্বরে জবাব দিলো,
“বোনের সাথে”

অর্ণব ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“বোনের সাথে কে ফিসফিস করে কথা বলে?”

আবির বিড়বিড় করে বলল,
“শা*লা বোনটা আমার না তোর”

অর্ণব বুঝতে না পেরে বলল,
“কি বললি?”

“কিছু না”

অর্ণব সন্দেহান চোখে তাকালো আবিরের দিকে। আবির ততক্ষনে কল কেটে দিয়েছে। ফোন পকেটে ঢুকিয়ে হাত দুটোও পকেটে গুজলো। অতঃপর শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেল আড্ডায়। অর্ণব ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

#চলবে?

#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব৯
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

ক্লান্ত বিকেলে আনায়া দাড়িয়ে আছে ব্যালকনিতে। মাঝে মাঝে মৃদু মন্দ বাতাস বইছে। বাতাসের ঝাপটায় উড়ছে আনায়ার উন্মুক্ত কেশ গুচ্ছ। তবুও রমণীর সেদিকে খেয়াল নেই। সে মত্ত হয়েছে ভাবনার শহরে। ভাবনায় এতটাই ব্যাকুল হয়েছে যে মিহির ডাক তার কর্ণকুহর অবধি পৌছোছেই না। আপন মনে কি যেন ভেবে চলেছে! এইযে এমপি সাহেব মানুষটাকে আনায়া যেমন ভেবেছিলো সে তেমন না। মানুষটা আলাদা, ভিন্ন ধরণের। লোকটার মাঝে এমন কিছু গুণাবলী আছে যা নিমিষেই তাকে সবার থেকে আলাদা করে রাখে। এমপি হওয়া সত্ত্বেও তার মাঝে অহংকার নেই, নেই কোনো ইগো। আনায়া মানুষটাকে ইগনোর করতে গিয়েও কেন যেন পারে না! মানুষটা প্রতিদিন সময় করে আনায়ার খোঁজ খবর নিবে হোক সেটা রাত ১২ টা। তাও দিনে একবার করে হলেও আনায়াকে কল করবে। প্রথম প্রথম আনায়া বিরক্ত হলেও এখন অবচেতন মনে এমপি সাহেবের ফোনের অপেক্ষায় থাকে। লোকটা দিনদিন আনায়ার অভ্যাসের সাথে মিশে যাচ্ছে। আনায়া আপন মনে এসব ভাবছে এমন সময় মিহি ওকে ডাকতে ডাকতে রুমে এলো। পুরো রুমে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ব্যালকনিতে উঁকি দিলো।
“আপু! এই আপু”

আনায়ার ধ্যান ভাঙলো। মিহির দিকে তাকিয়ে হতোচকিয়ে গেল। অতঃপর নিজেকে সামলে বলল,
“কি হয়েছে? এভাবে ডাকছিস কেন?”

“তোমাকে সেই কখন থেকে ডাকছি কিন্তু তোমার কোনো সারাশব্দই নেই। কি এতো ভাবছিলে শুনি?”

“কিছু না। তুই বল ডাকছিলি কেন?”

“বড় মা ডাকছে তোমায়?”

“কেন ডাকছে?”

“আমি কিভাবে জানবো বলো? আমায় বলল তোমার ডেকে দিতে”

“ঠিক আছে তুই যা আমি আসছি”

মিহি চলে গেল। মিহির পিছু পিছু আনায়াও গেল।
——-

আনায়া টেবিলে বসে পড়ছে। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন কমপ্লিট না করলে একসাথে অনেক গুলো জমে যাবে। আনায়া পড়ছে কম ঘুমে ঢুলছে বেশি। চোখে ওর ঘুম তবুও বেচারি ঘুমাতে নারাজ। পণ করে বসেছে পড়া শেষ করে তবেই উঠবে। পড়ার মাঝে আড়চোখে পাশে রাখা ফোনের দিকে তাকাচ্ছে বারবার। আজকে সারাদিনে অর্ণব একবারও কল দেয়নি। হুট্ করে মাথায় এলো মানুষটার কিছু হলো নাতো? ঘড়ির কাটায় চোখ পড়লো। ঘড়িতে ১২ টা বেজে ১৫ মিনিট। অর্ণব কখনো এতটা দেরি করে কল দেয়নি। আনায়ার মন কেমন খচ খচ করছে। ফোনটা হাতে নিলো। ডায়াল নাম্বারে গিয়ে অর্ণবের নাম্বার তুলল। অতঃপর কি ভেবে যেন কল দিলো না। নিজ মনে নিজেকে শাসালো,
“আনায়া তুই কেন ওই অ*সভ্য এমপিকে কল দিবি? তোর ঠেকা পড়েছে নাকি? তার সময় হলে সেই দিবে। কিন্তু মানুষটার কিছু হলো নাতো? তবে কি আমি একটু একটু করে লোকটাকের পছন্দ করতে শুরু করেছি? মোটেও না। এটা কখনো হতেই পারে না। তাই আনায়া এমপির থেকে দূরে থাক। নাহয় ব*জ্জাত বেটা তোকে কথার জালে ফাঁসিয়ে দিবে। তাই তার থেকে যতো দূরে থাকবি ততই ভালো”

আনায়া নিজের মনকে শাসিয়ে ফের পড়ায় মন দিলো। তবে মনোযোগ কেন যেন বারবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আনায়া উঠে একটু হাটাহাটি করলো। অতঃপর ওয়াশরুম থেকে মুখে পানি দিয়ে এলো জাতে ঘুম না পায়। ফের বসলো টেবিলে। আনায়া এক মনে পড়ছে এমন সময় পাশে রাখা ফোনটা বেজে উঠলো। আনায়া তাড়াহুড়ো করে ফোনটা হাতে নিলো। তবে স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নাম্বার দেখে মেজাজ বিগড়ে গেল। এই রাতের বেলায়ও সিম কোম্পানির জন্য শান্তিতে থাকা যাবে না নাকি? আনায়ার ইচ্ছে হলো ফোনটা লোকগুলোর মুখের ওপর ছুড়ে মারতে। তবে সেই অবকাশ তো নেই। মাথা ঠান্ডা করে আবার পড়তে বসলো। মিনিট দশেক পার হতে পারলো না এর মাঝেই আবার ফোনটা বেজে উঠলো। আনায়া বিরক্ত হলো। হবে হয়তো সিম কোম্পানির ফোন। যার ফোনের আশায় সে বসে আছে সেই মানুষটা হয়তো নাও হতে পারে। আনায়া ফোন রিসিভ করলো না। বাজতে বাজতে কেটে গেল। পুনরায় ফোন বেজে উঠলে আনায়া ভাবলো সিম কোম্পানি তো বারবার কল দিবে না। তবে কি অন্য কেউ? ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকালো। স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে “অ*সভ্য এমপি” নামটা। আনায়ার হাত কাঁপছে। মনের মাঝে কেমন ভিন্ন অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে মানুষটার সাথে কতদিন পড়ে কথা। আসলেই কিন্তু সেটা নয়। গতকালই তাঁদের কথা হয়েছে। আনায়া কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো। মৃদু স্বরে সালাম দিলো।

অপর পাশে অর্ণবের মনে প্রশান্তির হওয়া বয়ে গেল। এইযে আজ মেয়েটা নিজে থেকেই কথা শুরু করলো। এমনই দিন তো ফোন রিসিভ করে চুপ করে থাকে। অর্ণব কিছু না জিজ্ঞেস করলো কোনো বাড়তি কথা বলে না। অর্ণবের সারাদিনের ক্লান্তি যেন নিমিষেই কোথায় উধাও হয়ে গেল। মেয়েটা তার কাছে মেডিসিনের মতো। মেয়েটার সাথে কথা বললেই এক ঝটকায় ক্লান্তি হওয়া হয়ে যায়। অর্ণব সালামের জবাব নিলো। অতঃপর চুপ রইলো। ও আজকে দেখতে চায় ও নিজ থেকে কথা না বললে আনায়া কথা বলে কিনা? দুজনের মাঝে নীরবতা। অর্ণব গাঁ এলিয়ে দিলো বিছানায়। একটু আগে বাসায় এসেছে। সারাদিনের ব্যস্ততায় একটু আরাম পেতেই শরীর ছেড়ে দিচ্ছে। গাঁয়ে থাকা সাফেদ রঙের পাঞ্জাবীর সব গুলো বোতাম খুলে দিলো। আনায়া এবার নিজে থেকে মুখ খুলল।
“কেমন আছেন এমপি সাহেব?”

অর্ণব ভাবলো আনায়াকে একটু ঘাঁটিয়ে দেখবে। মেয়েটা আজ হুট্ করে নিজ থেকেই তার খবর নিচ্ছে যে!
“আমার খবর জানতে হলে নিজ থেকেই কল দিতে। এখন জিজ্ঞেস করে লাভ কি বলো? তুমি তো আর আমায় বিয়ে করতে রাজি হবে না, বা আমার বউ ও হবে না। বউ হলে আলাদা হিসেব”

আনায়ার মুখ বেজার হয়ে গেল। বউ হবে না বলে কি সে মানুষটার খোঁজও নিতে পারবে না? অর্ণব ফের জিজ্ঞেস করলো,
“কাল বিকেলে দেখা করতে পারবে?”

“পারবো তবে ক্লাস শেষ হলে”

“ঠিক আছে। সমস্যা নেই”

“হুট্ করে দেখা করতে চাইছেন যে? মতলব কি?”

অর্ণব বিরস কণ্ঠে বলল,
“তোমায় নয়ন ভোরে দেখার অভাবে নয়ন জোড়া যে নিত্য হাপিত্বেস করে ম*রছে, সে খবর কি তুমি রাখো মায়াবতী? উহু, তুমি সে খবর রাখো না। রাখলে নিজ থেকে দেখা দিতে আমায়। ও তুমি দেখা দিবে কেন!আমার বেলায় যে তুমি নিষ্ঠুরিণী”

আনায়া কিছু বলল না। মনে মনে অভিমান জমলো। লোকটা তাকে প্রতিবার এভাবে খোঁচা দিয়ে কথা বলে কেন? আনায়ার যে তার এভাবে বলায় খারাপ লাগে। আনায়াকে চুপ থাকতে দেখে অর্ণব বলে উঠলো,
“সমস্যা হলে দরকার নেই”

“আপনাকে কেউ বেশি বুজতে বলেছে? আপনি এড্রেস দিন আমি সময় মতো পৌঁছে যাবো”

আনায়ার কথায় অর্ণবের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।
“তোমার কষ্ট করতে হবে না। আমি তাপস কে পাঠিয়ে দিবো”

অতঃপর আরো কিছুক্ষন কথা বলে আনায়া কল কেটে দিলো। অর্ণব ও ফ্রেশ হতে গেল। এতো রাতে খেতে ইচ্ছে করছে না। ফ্রেশ হতে গেলেও একেবারে শাওয়ার নিয়েই বেরোলো। বিছানায় শুতেই চোখ লেগে এসেছে ক্লান্তিতে।

অপর দিকে নিকষ কালো আঁধারে ঢাকা কক্ষে প্রতিশোধের জাল বুনছে কেউ। তাও সুক্ষ থেকে সুক্ষতর ভাবে। তার সকল পরিকল্পনা নিকৃষ্টতম । যা সফল হলে অতি সহজেই কারো কাছ থেকে তার প্ৰিয় কিছু কেড়ে নিতে সক্ষম। পরিকল্পনা শেষে লোকটা হেসে উঠলো। বিকট, নিকৃষ্ট সেই হাসি। ফাঁকা ঘরে হাসিটা আরো ভয়ংকর লাগছে।
——

কাঠফাটা রোদ পড়েছে। গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। ক্লাস শেষ করে আনায়া আর অর্ষা বেরিয়ে এলো। গরমে দুজনেরই নাজেহাল অবস্থা। বেলা তিনটার মতো বেজে গিয়েছে। সোজা ঢুকলো ক্যান্টিনে। এখন কিছু না খেলেই নয়। বাসায় যেতে এখনো অনেকটা সময় বাকি। দুজন খাওয়া শেষে বেরিয়ে এলো। ভার্সিটির বাইরে আসতেই নজরে এলো তাপস কে। ছেলেটা গাড়ির পাশে দাড়িয়ে আছে। আনায়া হেটে গেল সেদিকে। তাপসের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে ছেলেটা সম্মানের সহিত সালাম দিলো। অতঃপর গাড়ির দরজা খুলে দিলো। আনায়ার সাথে অর্ষাও উঠে বসলো। আনায়া অর্ষাকে সব বলেছে। অর্ষা ওকে একা ছাড়তে চায় না। তাই নিজেও আনায়ার সাথে এসেছে। কিছুক্ষনের ব্যবধানে গাড়ি এসে থামলো একটা নদীর পারে। জায়গাটা অনেকটাই নীরব,শান্ত। আশেপাশে মানুষের আনাগোনা খুবই কম। জায়গাটা নদীর পাশে হওয়ায় হিমেল হাওয়া বইছে। আনায়া নেমে আশেপাশে তাকালো। তাপস বলল,
“ম্যাম স্যার আপনার জন্য ঐদিকটায় অপেক্ষা করছে”

আনায়া অর্ষাকে ওখানে দাঁড়াতে বলে এগিয়ে গেল অর্ণবের দিকে। কিছুদূর যেতেই লক্ষ্য করলো সাফেদ রঙা পাঞ্জাবী পড়ে লোকটা পানির দিকে তাকিয়ে আছে। আনায়া ভেবে পায়না এমপি, মন্ত্রীদের কেন সাদা পাঞ্জাবীই পড়তে হবে? অন্য রঙ পড়লে তাঁদের জাত যাবে নাকি? ভাবনা বাদ দিয়ে অর্ণবের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। আনায়া যেতেই অর্ণব ঘুরে ওর দিকে তাকালো। অর্ণবের হটাৎ চানিতে আনায়া হতোচকিয়ে গেল। তবে নিজেকে সামলে নিলো। অর্ণব তাকিয়ে আছে তার মায়াবতীর দিকে। মিনিটের কাঁটা পেরিয়ে গেছে ১০ ঘর তাও দুজনের মাঝে কোনো কথা নেই। আনায়া মুখ খুলল,
“দেখা শেষ হয়নি?”

“মায়াবতীকে দেখার তৃষ্ণা আমার এজীবনেও মিটবে না। যতো দেখবো ততো কম পড়ে যাবে। এ দেখার যে শেষ নেই”

আনায়া আর কিছু বলল না চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো। ও দেখতে চায় মানুষটা কতক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারে। তার মাঝে বিরক্ত আসে কি না! আনায়া দাঁড়িয়ে আছে এমন সময় হুট্ করে অর্ণব আনায়াকে টান দিয়ে সরিয়ে দিলো। আনায়ার দিকে ছুটে আশা ছুরিটা যেয়ে সোজা লাগলো গাছে। ঘটনাটা এতটা দ্রুত ঘটলো আনায়া কি থেকে কি হলে কিছুই বুঝতে পারলো না।

#চলবে?