বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে পর্ব-৫৬

0
1068

#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_৫৬
#Esrat_Ety

টগবগ করে পানি ফুটতে শুরু করেছে। আলো দাঁড়িয়ে রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখছিলো। বাইরে সম্ভবত ঝ’ড় উঠেছে। অথচ বিকেলেও আবহাওয়াটা একেবারেই ঠিকঠাক ছিলো। হাত বাড়িয়ে আলো কফির ক্যানটা ক্যাবিনেট থেকে নামাতে গিয়ে টের পায় আলোর মাথাটা হঠাৎ করে চক্কর দিয়ে উঠতে চাইছে । কিচেন ক্যাবিনেট ধরে চুপচাপ কয়েক মূহুর্ত দাঁড়িয়ে থেকে নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে আলো কফি বানিয়ে দু’টো মগে ঢেলে নেয়। কিছু মুহূর্ত চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে হাত দিয়ে নিজের খোঁপা ছোঁয়, রজনীগন্ধার মালাটা ছুঁতেই ঠোঁট প্রশ্বস্ত হয় হাসিতে তার, কফির মগ থেকে নিঃসৃত ধোঁয়ার সাথে উবে যায় তার অভিমান। লোকটা একটা চতুর লোক, আস্ত একটা ধুরন্ধর লোক। ঠিক জানে কি করলে আলোকে সামলানো যাবে। এভাবেই জনগণকে সামলায় এই লোকটা। তবে এতে কাজ হবে না আজ, অনেক ভুগিয়ে ছাড়বে আজ ঐ লোকটাকে আলো। তারপর সব অনূভুতি উগ্রে দেবে আজ সারাদিন বসে যা জড়ো করেছিলো।
শাড়ির আঁচলটা ডান কাঁধে তুলে দুই হাতে দুটো মগ তুলে নিয়ে ধীরপায়ে দোতলার সিঁড়ির দিকে যায়। শরীরটা ভীষণ ক্লান্ত লাগছে, ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে সে। পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ, বাইরে বিদ্যুৎ চম’কাচ্ছে, বি’কট শব্দে মেঘ প্রকৃতিকে হু’মকি দিচ্ছে। লিভিং রুম পেরিয়ে দুই কদম পা ফেলতেই কিছু একটা ভাঙার আওয়াজ পায় সে। আওয়াজ টা তাদের ঘর থেকে আসছে। বিচলিত হয়ে দ্রুতপায়ে এগিয়ে গিয়ে চাপিয়ে রাখা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই সে থ’মকে যায়।

সামিন আলোর দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে আছে। তার হাতে একটা ফুলদানি। পুরো মেঝেতে ঘরের আসবাবপত্র টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে আছে। আলো তৎক্ষণাৎ কিছু চিন্তা না করে কফির মগ দুটো রেখে ছুটে গিয়ে সামিনের হাত থেকে ফুলদানি নিয়ে নেয়। সামিনের অস্বাভাবিক অবস্থা দেখে কন্ঠে উ’ৎ’ক’ণ্ঠা নিয়ে বলে,”কি হয়েছে? পার্টির সাথে গ্যা’ঞ্জাম করেছেন আবার? কতবার বলেছি রাজনীতি ঘরের বাইরে ফেলে রেখে ঢুকবেন প্রতিদিন। এখন শান্ত হোন। বাচ্চাদের মতো ভাঙচুর করছেন!”

সামিন কি করে শান্ত হবে। কি করে!
আলোকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দেয়ালে লাগাতার প্রহার করতে থাকে। আলো একটা বি’কট চিৎকার দিয়ে সামিনের হাত আগলে নিয়ে চেঁচিয়ে বলতে থাকে,”পাগল হয়েছেন? মাথা খা’রাপ হয়ে গিয়েছে?”

সামিন আলোর দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে কিছু মুহূর্ত। তারপর আলোর দুই বাহু ধরে ঝাকুনি দিয়ে বলতে থাকে,”কেনো? বললে না কেনো? আমাকে শুরুতেই বললে না কেনো? বলো, কেনো?”

আলো ভীত চোখে সামিনের দিকে তাকায়,কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”কি বলিনি? কি উল্টোপাল্টা বকছেন মেয়র সাহেব।”

সামিন শক্ত করে ধরে আলোকে বলতে থাকে,”যদি সবটা বলতে আমায়, সবটা ঠিক করে দিতাম আমি। সেই ক্ষমতা আমার ছিলো। কেনো বললে না। কেনো?”

আলো অবাক দুটি চোখে তাকিয়ে থাকে শুধু। সামিন আলোকে ছেড়ে দিয়ে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করতে শুরু করে আবারও, বেড সাইডের টেবিল ল্যাম্প উঠিয়ে সজোরে মেঝেতে ছু’ড়ে মে’রে চেঁচাতে থাকে,”কেনো বললে না, বললে না কেনো!”

আলো ছুটে গিয়ে পেছন থেকে সামিনকে জরিয়ে ধরে, সামিনের বুকের কাছের শার্ট শক্ত করে খামচে ধরে রেখেছে সে। সামিন নিস্তেজ হয়ে পরে, নিষ্প্রাণ গলায় বলে ওঠে,”করুণা করলে আমায় সবাই! করুণা! সবথেকে বড় শা’স্তি এটা আলো। একজন অপরাধী জানে।”

আলো শক্ত করে সামিনকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে রাখে, সামিনের কথার জবাবে বলে ওঠে,”একটু খুলে বলুন না। আমিও যে ভীষণ অস্থির হয়ে পরছি তা কি উপলব্ধি করতে পারছেন না। একটা সমস্যা হলে সেটা আলোচনা করে ঠিক করা যায় মেয়র সাহেব।”
কন্ঠে আকুতি নিয়ে বলতে থাকে আলো।

সামিন আলোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আলোর মুখোমুখি দাঁড়ায়,আলোর চোখে চোখ রেখে বলতে থাকে,”কিসের আলোচনা করে ঠিক করবো? সবকিছু ধ্বংস করে কি ঠিক করবো আমি?”

আলো তাকিয়ে থাকে। সামিন আবারও হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দেয়ালে এলোপাথাড়ি প্র’হার করতে থাকে। চেঁচিয়ে বলতে থাকে,”আমি জঘন্য। জঘন্য আমি।”

আলো সামিনের হাত আগলে নিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়, কান্নাভেজা কন্ঠে বলে ওঠে,”এভাবে আপনি আমায় ব্যাথা দিচ্ছেন যে।”

সামিন আলোর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আলোর দুচোখের কার্নিশে পানি জমেছে। ধরা গলায় বলে,”বলে দিন কি দোষ করেছি। শাস্তি দিন। নিজেকে কষ্ট দিয়ে আমাকে য’ন্ত্রণা কেনো দিচ্ছেন?”

বিদ্যুৎ চম’কানোর সাথে সাথে বিকট শব্দে কাছে কোথাও বজ্রপাত হয়। আলো আর সামিন স্থির হয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকে। আলো গলায় কান্না চাপিয়ে রেখে একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”অসুস্থ বোধ করছি আমি। দোহাই লাগে আমাকে সবটা খুলে বলুন। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আপনার অস্থিরতা লাঘব করার।”

সামিন ঘরের মেঝের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলে,”ঠিক এভাবে ‌। হ্যা এই টুকরো গুলোর মতোই আদরের ভাইটাকে ভেঙেচুরে দিয়েছি আমি। কে’ড়ে নিয়েছি তোমাকে তার থেকে।”

আলো চ’ম’কে উঠে সামিনের দিকে তাকায়। সামিন অসহায়ের মতো এদিক ওদিক তাকায়। ধরা গলায় বলে,”আমি এমন কেনো আলো?”

আলো সামিনের হাত ধরে ফেলে, কাঁপা কাঁপা গলায় বলে , “মেয়র সাহেব শুনুন আপনি। ওটা অতীত। ওই অতীতকে টেনে এনে আমাদের দুজনের বর্তমান অনূভুতিকে আপনি অসম্মান করবেন না। আমি আশা করিনা এমন কিছু আপনার থেকে।”

সামিন আলোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দরজার দিকে যায়। হুট করে ইলেকট্রিসিটি চলে যায়। বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে দেখতে পায় সামিন ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। আলো পেছন থেকে ডাকতে ডাকতে ছুটে এসে লিভিং রুমে সামিনকে আবারও জরিয়ে ধরে পেছন থেকে। কেঁদে ফেলে বলে,”আপনি কথা শুনুন। যেদিন থেকে আপনাকে আমি স্বামী বলে স্বীকার করেছি, প্রতিজ্ঞা করেছি আমৃত্যু আপনাকেই নিজের অস্তিত্ব হিসেবে মনে করার। আমার এই অনুভূতিকে আপনি আঘাত করছেন মেয়র সাহেব।”

সামিন আলোর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে এগিয়ে যায়। আলো ছুটে গিয়ে পুনরায় জরিয়ে ধরে, ফুঁপিয়ে বলে ওঠে, “আজকের দিনটা আমার মাটি করে দেবেন না আপনি। কতটা আবেগ, অনূভুতি সাজিয়ে আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, সেটা না শুনে কোথায় যাচ্ছেন। এমন করলে আমি কাল সকালেই ও বাড়িতে চলে যাবো। আর ফিরবো না। পরে আফসোস করবেন।”

সামিন এক মিনিট চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে আলোর হাত ছাড়িয়ে দিয়ে দ্রুতপায়ে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামে। আধো অন্ধকারে দু’চোখ ভর্তি পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আলো। ওখানে পাথরের মতো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মেঝেতে ধপ করে বসে পরে। মেঘের গুড়ুম গুড়ুম শব্দের মাঝে আলো হঠাৎ গাড়ি স্টার্ট হবার শব্দ শুনতে পায়। এতো ঝ’ড় বৃষ্টির রাতে কোথায় যাচ্ছে মানুষটা! নিজের অস্থিরতা দূর করতে মরিয়া হয়ে কোথায় ছুটছে। নিজের অস্থিরতা নিয়ে এতটাই বিচলিত যে পিছু ফিরে দেখলো না আলোকে কতটা ভোগান্তি দিয়ে যাচ্ছে সে। কি স্বার্থপর মানুষটা!

***
ফোনের রিংটোনের শব্দে রেহেনার ঘুম ভেঙে যায়। রাত সাড় নয়টা থেকে একটা লম্বা ঘুম হয়েছে তার। চোখ খুলে উঠে বসে সে, পাশের টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে আলোর নাম্বার। চিন্তিত ভঙ্গিতে ফোনটা রিসিভ করে রেহেনা। ওপাশ থেকে আলো কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে ওঠে,”আম্মু।”

দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে মেঝেতে পা ছড়িয়ে আলো বসে আছে। কিছুক্ষণ পর পর একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলছে সে। রেহেনা মেয়ের গলা শুনে উৎকণ্ঠা নিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,”কি হয়েছে আম্মু! কি হয়েছে!”

আতাউর আলমের ঘুম ভেঙে গিয়েছে। উঠে দ্রুত স্ত্রীর হাত থেকে ফোন টা নিয়ে বলে,”আম্মু কি হয়েছে? তুমি কাঁ’দছো কেনো?”

আলো চুপ করে থাকে। রেহেনা বলে,”জামাইয়ের সাথে ঝ’গড়া করেছিস? দে ওকে ফোনটা দে। কথা বলবো। নিশ্চয়ই তুই কিছু করেছিস না রে? ও তো শুধু শুধু ঝ’গড়া করার ছেলে না।”

আলো দু’চোখ বন্ধ করে ফেলে, দু’চোখের কার্নিশ বেয়ে দুফোঁটা তরল গড়িয়ে পরে তার।
আতাউর আলম বলে ওঠে,”বলো আম্মু।”

_কিছুনা আব্বু, কিচ্ছু হয়নি। উনি ঘুমাচ্ছেন। আমার হঠাৎ করে খুব অস্থির লাগছে। আমি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে চাই। আম্মুর কাছে নিয়মটা জানতে ফোন দিয়েছি। আমি বিস্তারিত জানি না।

আতাউর আলম মেয়ের কথায় আশ্বস্ত হয়না। উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে,”আমি আসবো মা? এখন আসবো?”

_কাল এসো।
অস্ফুট স্বরে বলে আলো। রেহেনা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের নিয়মটা আলোকে বুঝিয়ে দেয়। আলো হুট করেই ফোন কেটে দেয়।
বাড়ির ইলেকট্রিসিটি চলে এসেছে। কিন্তু বাইরে ঝড়ের ভয়াবহতা বেড়েছে।

আলো একুশ বারের মতো সামিনের নাম্বার ডায়াল করে। নাম্বার টা বন্ধ। আলো ফোন রেখে উঠে দাঁড়ায়,মাথাটা আবারও চক্কর দিয়ে ওঠে। দেয়ালে ভর দিয়ে কিছুক্ষণ কাঁচের জানালায় দৃষ্টি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

কিছু সময় পরে মাথায় শাড়ির আঁচল টেনে ওয়াশ রুমে ঢুকে ওযু করে বের হয়। মেঝেতে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায়ের জন্য দাড়িয়ে যায়।

আতাউর আলম উঠে গাঁয়ে শার্ট চাপিয়ে নেয়। রেহেনা উদ্বিগ্ন হয়ে বলে,”কোথায় যাচ্ছো এই ঝ’ড় বৃষ্টির রাতে?”

ফোন আর ওয়ালেট পকেটে ঢুকিয়ে ক্যাবিনেট থেকে একটা ছাতা বের করে ঠান্ডা গলায় বলে,”মেয়ে মিথ্যা কথা বলেছে। নিশ্চয়ই দুটোতে খুব বিশ্রীভাবে ঝ’গ’ড়া করেছে,মিলিয়ে দিয়ে আসি।”

***
ওষুধটা হাতের ক্ষ’ততে লাগাতেই যন্ত্রনায় ফরসা মুখ টা নীল রঙের হয়ে যায়। কিন্তু সামিন যন্ত্রনাটুকু হজম করে নেয় দ্রুত। কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি।
ফুয়াদ ডান হাতটা ব্যা’ন্ডেজে মুড়িয়ে দিতে দিতে আড়চোখে বেশ কয়েকবার সামিনকে দেখে।
ব্যান্ডেজ করা হয়ে গেলে ফার্স্ট এইড বক্সটা সরিয়ে রেখে সামিনের চোখে চোখ রেখে ঠান্ডা গলায় বলে ওঠে,”বল । সমস্যা কোথায়। আলোর সাথে ঝ’গড়া করেছিস?”

সামিন চুপ করে ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে থাকে। ফুয়াদ বলতে থাকে,”বল! কি হয়েছে? কে কি করেছে?”

_কেউ কিছু করেনি। যা করার আমিই করেছি।
নিস্তেজ কন্ঠে জবাব দেয় সামিন।

ফুয়াদ কয়েক মুহূর্ত চুপ করে সামিনের দিকে তাকিয়ে থেকে দাঁতে দাঁত চেপে সামিনের কলার ধরে ঝাকুনি দিয়ে বলে,”শোন, ভুগতে চাইলে একা একা ভুগবি। আমাদের এতো ভো’গান্তি দিবি না খবরদার!”

সামিন ফুয়াদের থেকে চোখ নামিয়ে নেয়, তার দৃষ্টি এখন মেঝেতে নিবদ্ধ। কিছুটা সময় নিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,”আমি সব ঘে’টে দেই ফুয়াদ। তুই ঠিকই বলিস, আমি বড্ড অযোগ্য।”

ফুয়াদ সামিনের মুখোমুখি বসে পরে। সামিনকে বলে,”দেখ কি হয়েছে তা তো আমি জানি না। বলছিসও না, তাহলে আমার কাছে এলি কেন? আমার মাথা খা’রাপ করার জন্য?”

_দুনিয়া আমাকে করুণা করে ফুয়াদ।

_আমি তো করি না। তোকে দেখলে আমার রা’গ হয়। করুণা আসে না।

_আমি দুনিয়ার কাছে ভালো সাজতে পারবো, নিজের কাছে ভালো সাজার যে কোনো অপশন নেই। কোনো অপশন নেই!

ফুয়াদ একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে সামিনের দিকে। আবারও তার ফোন বেজে ওঠে, এই নিয়ে চৌদ্দবার আলো তাকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে। এইবার বেচারীর জন্য মায়া হচ্ছে ফুয়াদের। সামিনের বারণ সত্তেও ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে আলোর কান্নাভেজা কন্ঠ ভেসে আসে।

ফুয়াদ স্বাভাবিক গলায় বলে ওঠে,”ও আমার কাছে আছে। চিন্তা করো না।”

আলোর কন্ঠনালী থেকে অনেক কষ্টে কথা বের হয়,”ভাইয়া,উনি ঠিক আছে?”

_হ্যা ঠিক আছে।

আলো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধরা গলায় বলে,”আজ আমার জীবনের সবথেকে বিশেষ, সবথেকে আনন্দের একটা দিন ছিলো ভাইয়া ‌‌ । আপনার বন্ধু কত সুন্দর ভাবে, আয়োজন করে ন’ষ্ট করে দিলো সেসব। সকাল থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত বাড়ির বাইরে কাটিয়েছে, এর মাঝে আমার ফোন পর্যন্ত রিসিভ করেনি, আর বাড়িতে এসে সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে বেড়িয়ে গিয়েছে। ভেঙেচুরে দিয়ে গিয়েছে ঘরের সব জিনিসপত্র, ভেঙেচুরে দিয়েছে আমাকে। এটাই তো চেয়েছিলো উনি তাইনা? প্রতিশোধ নিয়েছে অবশেষে, আমার করা সব অপমান, অবহেলার প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে। কি মোক্ষম সময়ে, যখন আমি পুরোপুরি ওনার উপর নির্ভরশীল হয়ে পরেছি তখনই আসল রূপটা উনি দেখিয়ে দিয়েছে। আপনার বন্ধু একজন চালবাজ লোক।”

_তুমি ঠিক ভাবে কথা পর্যন্ত বলতে পারছো না আলো। শান্ত হও, আমি দেখছি , শান্ত হও তুমি।

_ওনার কাছে একটু ফোনটা দেবেন? নয়তো লাউড স্পিকারে দিন‌ ।

ফুয়াদ ফোনটা লাউড স্পিকারে দিয়ে রাখে। সামিন চুপচাপ মেঝের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বসে আছে।

আলো বলতে থাকে,”সুযোগ শুধু আপনাকেই দেওয়া হবে,আপনি কাউকে দেবেন না? আমাদের দুজনের অস্থিরতা কাটিয়ে তোলার সুযোগ চাইছি আমি মেয়র সাহেব, আমাকে দয়া করে সুযোগ দিন। সাদাকালো বিষাদের পরে সবটা কিন্তু রঙিন। আপনি নিজে রাঙিয়েছেন আমায়। এই রং টুকু আপনি কে’ড়ে নেবেন না। এতো বড় অন্যায় আমার সাথে করবেন না। আপনি বাড়িতে আসুন, আপনার জন্য আমি কত আনন্দময় সূচনা নিয়ে বসে আছি, আপনি জানেন না। দয়াকরে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না, আমাকেও বঞ্চিত করবেন না।”

আলো ফোন কে’টে দেয়। ফুয়াদ হাঁটু গেড়ে বসে পরে, ধ’মকের সুরে বলে,”অসুস্থ হয়ে পরেছে মেয়েটা। তোর কোনো অধিকার নেই এভাবে ওকে কষ্ট দেওয়ার।”

সামিন চুপ করে থাকে, ফুয়াদ বলে,”আমি জানি না তোদের মধ্যে কি হয়েছে। আমার জানার ইচ্ছেও নেই। শুধু এতটুকু বল, যা হয়েছে তা শুধুমাত্র তোর জন্য হয়েছে তাইতো?”

_হু।

_এখানে আলোর কোনো দোষ নেই তাইতো?

_না। নেই, ছিলোনা, কখনোই ছিলোনা।

_তাহলে ওকে কেনো শা’স্তি দিচ্ছিস?

সামিন নিশ্চুপ। ফুয়াদ বলতে থাকে,”যা হয়েছে,মানে তুই যা করেছিস তা কি শুধরে দিতে পারবি? আছে তোর সেই ক্ষমতা?”

সামিন কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে ধীরে ধীরে মাথা নাড়িয়ে বলে,”না। নেই।”

_এর পেছনে কারন কি? কেনো পারবি না।

_সময়। সময় সময়ের সাথে সবকিছু বয়ে নিয়ে এসেছে। এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে সবাইকে,অনেকটা পথ।

_তো? তাহলে তুই শুধরে দিতে না পারলে সাজানো গোছানো সবটা কেন বি’গড়ে দিচ্ছিস? নিজে থমকে দাঁড়িয়েছিস দাঁড়িয়েছিস ভালো কথা, তুই আলোকে কেনো ধা’ক্কা দিয়ে পিছু ঠেলে দিচ্ছিস। ও কি এইটা ডিজার্ভ করে? দেখ ট্রুলি আন্সার করবি। ও ডিজার্ভ করে এমন কিছু?”

সামিন মাথা নাড়িয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,”না।”

_সেটাই ,ও এসব ডিজার্ভ করে না। ও ডিজার্ভ করে সামিনকে, যে সামিনকে ও নিজের সমস্ত জড়তা পাশে সরিয়ে দিয়ে গ্রহণ করেছিলো, সেই সামিনকে। আচ্ছা এখন বল,যা হয়েছে তা কি আদৌও তোর সজ্ঞানে হয়েছে? জেনেবুঝে করেছিস তুই?

_নাহ।
শব্দটার সাথে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে যায় সামিনের ভেতর থেকে।
তারপর বলে ওঠে,”জানলে আমি কখনো এমন কিছু করতামই না।”

_বুঝলাম করতি না। এখন শোন, জেনে বুঝে আলোকে তুলে নিয়ে বিয়ে করেছিলি,ওটা অন্যায় ছিলো, অপরাধ ছিলো। অন্যায় আর অপরাধ করলে শা’স্তি পেতে হয়। শাস্তি পেয়েছিস, আলো শাস্তি দিয়েছে, নিজে নিজেকে দিয়েছিস, কাহিনী খতম। আর তুই তোর যেই গ্লানির কথা ভেবে মরমে ম’রে যাচ্ছিস, তোরই ভাষ্যমতে সেটা তোর অজান্তে করেছিস। অজান্তে মানে ওটা ভুল। ভুলের সংশোধন হয় , কিন্তু কিছু কিছু ভুলের সংশোধন হয়না জানি। তখন অন্য উপায় বের করতে হয়। এখন তোকে একটা জিনিস দেখাই আমি।”

এই পর্যন্ত বলে ফুয়াদ থামে, উঠে গিয়ে একটা কাঁচের মগ নিয়ে এসে সামিনের সামনে বসে পরে। সামান্য উচু থেকে ফেলে মগটা পাঁচ ছয় টুকরো করে ফেলে। সামিন ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। ফুয়াদ বলে,”দেখ মগটা ভেঙে গেলো। ধরে নে নিজের অজান্তে ভাঙলাম, এখন কি এই মগটা জোড়া লেগে যাবে? জোড়া লাগলেও এর আগের রূপ ফিরে পাবে? বল? দেখ চুপ করে থাকবি না,বল।”

সামিন মাথা নেড়ে অস্ফুট স্বরে বলে,”না।”

ফুয়াদ বলে,”হ্যা। আমার ধারণা মতে তোর ভুলটাও হচ্ছে এমন কিছু। এখন তোর করনীয় কি জানিস? দাড়া আরেকটু আসছি।”

ফুয়াদ উঠে গিয়ে তার আলমারির ভেতর থেকে একটা কারুকার্য খচিত মগ নিয়ে এসে সামিনের সামনে রাখে। তারপর বলে চিনতে পেরেছিস এটাকে?

সামিন মাথা নাড়ায়। ফুয়াদ বলে,”তোর মনে আছে? ক্লাস ফোরে থাকাকালীন বন্ধুদের পাথে পাড়ার ফুটবল ম্যাচে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে একটা মগ জিতেছিলাম। আপু যেটা ভেঙেছিলো,আমি কান্না করেছিলাম দেখে মা অবিকল দেখতে একটি মগ কিনে দিয়েছিলো আমাকে?”

সামিন মাথা নেড়ে বলে,”মনে আছে ‌।”

ফুয়াদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”মা তার পরেরদিন এ্যাক্সি’ডেন্টে মা’রা যান। এবং এটাই মায়ের থেকে আমার সর্বশেষ গিফট। আমি সবসময় আগলে আগলে রাখতাম। ইন্টামিডিয়েটে পড়াকালীন সময়ে ভুল করে ধাক্কা লেগে মেঝেতে পরে গিয়ে ভেঙে যায়। ভুল করে কিন্তু, নিজের ইচ্ছায় করিনি। তাই নিজেকে দোষারোপ না করে আমি কি করেছি জানিস? যেহেতু এটাকে আগের রূপে ফেরাতে পারবো না, ফেলে দিতেও পারবো না, এবং এর ভাঙাচোরা অবস্থাটাকেও চোখের সামনে দেখতে পারবো না তাই বুদ্ধি বের করে নিজেই এটা দিয়ে ক্রাফট বানিয়ে ফেলেছি। তুই ভাবতে পারবি এটা সেই মগটা? আমি নিজেও চিনতে পারিনি। ”

সামিন চুপ করে থাকে। ফুয়াদ বলে,”জীবনের কিছু কিছু ভুল হচ্ছে এমন। না সংশোধন হয়, না ফেলে দেওয়া যায়, না ভুলটা চোখের সামনে ওভাবেই ভুল হয়ে পরে থাকতে দেখতে পারা যায়। সেই ভুলগুলো নিয়ে এমন একটা ক্রাফট বানিয়ে ফেলতে হয়। একটা অতি সুন্দর ক্রাফট। এই মাত্র যে মগটা ভাঙলাম, এটা দিয়েও চমৎকার একটা ক্রাফট বানিয়ে দেখাবো আমি তোকে।”

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ফুয়াদ সামিনের পিঠে চা’পড় মে’রে বলে,”তুইও পারবি। আমার বিশ্বাস, তোর হাতে গড়া ক্রাফট টা হবে অতি চমৎকার। তুই আমাদের সামিন।”

সামিন ফুয়াদের দিকে মাথা তুলে তাকায়। ফুয়াদ বলে,”যা বলছি তাই কর। আলোর কাছে যা! কতটা দ’ম দেখেছিস মেয়েটার। কতটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেছে দুজনের অস্থিরতা কাটিয়ে ফেলবে। তুই ওর আত্মবিশ্বাস ভেঙে দিস না। স্বামী হিসেবে স্ত্রীর আত্মবিশ্বাসকে সম্মান জানা। ওকে সুযোগ দে। নিজেকেও দে‌ । যে ভুলটা তোর অজান্তে হয়েছে সেটা নিয়ে আত্মগ্লানিতে ভো’গা অন্যায়। নিজের আত্মাকে কষ্ট দেওয়া অন্যায়, সেই সাথে আত্মার সাথে জরিয়ে থাকা মানুষ গুলোকে কষ্ট দেওয়াও ঘোর অন্যায়, আর অন্যায় করিস না, এবার থাম।”

সামিন চুপ করে বসে থাকে। ফুয়াদ সামিনের হাত টেনে ধরে তোলার চেষ্টা করে বলতে থাকে,”ওঠ! ওঠ বলছি! চল তোকে বাড়িতে দিয়ে আসি। চল। চল বলছি।”

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সামিন বলে,”তুই থাক। কাল সকালে তোর ফ্লাইট। আমি গাড়ি নিয়ে এসেছি। যেতে পারবো‌!”

সামিনের কথা শুনে ফুয়াদের ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে। সামিনের কাঁধে হাত রেখে বলে,”যা। মেয়েটা অপেক্ষা করছে তোর জন্য। গিয়ে প্রথমেই ওর কাছে ক্ষমা চাইবি। যা বলছি। নয়তো ঘা’ড় ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেবো বাসা থেকে।”

***
বৃষ্টি থেমে এখন হু হু করে বাতাস বইছে। বারান্দার খোলা দরজাটা বাতাসের জন্য দেয়ালের সাথে বিকট শব্দে ধাক্কা খাচ্ছে বারবার। আলো বিছানায় বসে সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফোনটা হাতে তুলে নেয়। সময় রাত তিনটা সাতাশ মিনিট। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবারও ফুয়াদের নাম্বার ডায়াল করে। ফুয়াদ ফোনটা রিসিভ করে বলে,”ওকে পাঠিয়েছি আমি। তুমি তোমার ইচ্ছামতো শাস্তি দিও ওকে। বুঝেছো? এখন শান্ত হও।”

আলো ফোনটা কেটে চুপ করে বসে থাকে। চোখ বেয়ে দুফোঁটা তরল গড়িয়ে পরতেই ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে,”আমি শুধু আপনার স্ত্রী। স্বামীর কাছে সব অনূভুতি জমা দেওয়া হয়ে গিয়েছে আমার। আপনাকে নিয়ে সামনে এগোতে চাচ্ছি আমি। আপনি কেন ধাক্কা দিয়ে পেছনে সরিয়ে দিতে চাইলেন। আমি শুধু আপনারই স্ত্রী মেয়র সাহেব। আপনার সাথেই থাকবো আমি।”

গাড়ি হাইওয়েতে উঠেছে। ঝড়ের মধ্যে সাঁইসাঁই করে ছুটে চলেছে । শেষ রাত তাই হাইওয়েতে খুব একটা গাড়ি দেখা যাচ্ছে না, বানিজ্যিক কিছু বড় ট্রাক ছাড়া। যেগুলো মূলত কাঁচা সবজি নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশ্য রওনা হচ্ছে। সামিন গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়। হঠাৎ চোখের সামনে আলোর কান্নাভেজা মুখটা ভেসে ওঠে, সামিনকে শান্ত করার জন্য কতটা উতলা হয়ে উঠেছিলো, সামিন সেই উৎকণ্ঠার দাম না দিয়ে একপ্রকার উপেক্ষা করে চলে এসেছে। ঠিক করেনি সামিন। একেবারেই ঠিক করেনি। ঐ মুখটা দেখার জন্য ভেতরটা তীব্র ভাবে ছ’ট’ফ’ট করতে শুরু করেছে, কোলে মাথা রেখে অসহায়ের মতো বলতে ইচ্ছে করছে,”আমাকে অনুপ্রেরণা দাও আলো, মানসিক শক্তি বাড়ানোর অনুপ্রেরণা দাও আমায়।”

গাড়ির গতি আরো কিছুটা বাড়িয়ে ডানদিকে মোড় ঘুরতে ব্যাস্ত সামিন‌‌। ছটফটানি তার মনে,তার মস্তিষ্কে। মস্তিষ্ক তোলপাড় করা ঝড়ের ঝাপটা সামলাতে গিয়ে সে খেয়াল করেনি ডানদিক থেকে ছুটতে ছুটতে আসা বিশাল ট্রাক টাকে ।
যখনই সম্বিৎ ফিরে পেলো ততক্ষণে বড্ড দেরী হয়ে গিয়েছে। একদৃষ্টে বোকার তাকিয়ে ছাড়া আর কিছু করার নেই তার। কানের কাছে শুধুমাত্র আলোর কথাগুলো প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।
“ফিরে আসুন মেয়র সাহেব। আপনার জন্য আমি এক আনন্দময় সূচনা সাজিয়ে বসে আছি। আপনি শুনবেন না?”

***
হঠাৎ করে আলো নিজের অজান্তে কাঁচের টুকরোর উপরে পা ফেলে দেয়। রক্তে ভরে যায় পায়ের তলা। একটু ঝুঁকে দু’চোখ বন্ধ করে, দাঁতে দাঁত চেপে কাচের টুকরো টা টেনে বের করে। কলিং বেলের শব্দ হয় হঠাৎ। কলিং বেলের আওয়াজে আলো আলুথালু বেশে ছুটতে ছুটতে নিচে নামে। শরীর তাকে সমর্থন না করলেও মনের সমস্ত শক্তি খরচ করে পাগলের মতো ছুটে যায় সদর দরজার কাছে। দরজা খুলে তাকিয়ে থাকে সে। আতাউর আলম কাকভেজা হয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে আলোর দিকে তাকিয়ে কন্ঠে উ’ৎ’ক’ণ্ঠা নিয়ে বলে,”কি হয়েছে আম্মু। তুই ঠিক আছিস তো?”

সামিনকে না দেখতে পেয়ে আলোর বুকটা হঠাৎ হু হু করে ওঠে। মাথা নাড়িয়ে বাবাকে অস্ফুট স্বরে বলে,”হঠাৎ এতো রাতে এলে যে‌। বললাম তো সব ঠিক আছে‌ ।”

আতাউর আলম বলে,”আচ্ছা ঠিক আছে। ঠিক থাকলে সামিনকে ডাক। ওর সাথে একটু কথা বলে চলে যাই। ডাক।”

আলো ডাকে না। শুধু বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে।

***
“হ্যা হ্যা,হ্যালো। আরে ফোন দিও না। আমি অন ডিউটি তে। আরে এখানে একটা এ’ক্সিডেন্ট হয়ে গিয়েছে। ট্রাকের সাথে প্রাইভেট কারের সংঘর্ষ। আমাদের মেয়র ইয়াসার মির্জার গাড়ি। তাকে হসপিটালাইজড করা হয়েছে।
না গাড়িতে সে একাই ছিলো, আমি দেখিনি। শুনেছি আশঙ্কাজনক । ট্রাক ড্রাইভার পালিয়েছে। আরে রাখো তো,এতো কথা বলার সময় নেই।”

ফোন কেটে দিয়ে লোকটি নিজের অধিনস্ত কনস্টেবল কে ধমক দেয়,”আরে কি করছো মনসুর, গাড়িটাকে সরানোর ব্যবস্থা করো এখান থেকে। সকাল হতে না হতেই রাস্তায় তো জ্যাম লেগে যাবে।”

***
আতাউর আলম ধমকের সুরে বলে,”কি হলো! ডাক সামিনকে। কথা বলে চলে যাই।”

আলো মাথা নিচু করে একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”আব্বু উনি……”

ধুপধাপ শব্দ হয়। সিঁড়ি ভেঙে ছুটে নামতে থাকে ইশমাম, ইলহাম,ইশিতা।”

আলো মাথা ঘুরিয়ে তাকায় তাদের দিকে। ইশমাম এসে হাঁপাতে হাঁপাতে আলোর মুখোমুখি দাঁড়ায়। আলোর চোখে চোখ রেখে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে,”ভাইয়া….!”

চলমান……