#বোনু
#Part_27
#Writer_NOVA
শহর থেকে বেশ দূরে একরা পরিত্যক্ত বাংলো।চারিদিকে বন বিছুটি গাছে পরিপূর্ণ। অনেক ছিমছাম ও নির্জন।কাউকে মেরে পুঁতে ফেললেও খবর পাবে না।এমন বাংলোতে ঘন্টা খানিক ধরে আটকে আছে অনেক মানুষ। মির্জাদের পাঁচ ভাই-বোন, মাসফি,নুহা,জিবরান এমনকি তারিনও বাদ যায়নি।বেচারী তারিন গতরাতে উষার সাথে থাকবে বলে এসেছে।তাকেও সকালে তুলে আনছে।বাকি আছে শুধু অরূপ ও জিনিয়া।সবার দুই হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। দাড়িয়ে থাকতে থাকতে সবার পা ব্যাথা হয়ে গেছে।
ঈশানঃ আমি আর পারছি না। আমার দুই পা ব্যাথা হয়ে গেছে।
ইশাতঃ অরূপ কখন আসবে? আমার অবস্থা খারাপ।
অর্ণবঃ আমি তো দারোয়ান চাচা কে লুকিয়ে অরূপের নাম্বার দিয়ে এসেছি।তাছাড়া আমিও ম্যাসেজ করে আমাদের বিপদের কথা বলছি।এখন অরূপ আসতে এতো দেরী করছে কেন?
উষাঃ ছোট ভাইয়ু সর তো আমার দিক থেকে। নয়তো লাথি মারবো।মনে হচ্ছে হাত দুটো দড়ি দিয়ে বাঁধা না থাকলে পুরো শরীরের ভার আমার কাঁধেই দিয়ে দিতি।
ঈশানঃ তোর সমস্যা কি বল তো? মাথাটা একটু তোর কাঁধে সামান্য হেলান দিয়েছি তাতেই কান্না করে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলছিস।
উষাঃ শয়তান,বাঁদড়,বিলাই যা ভাগ এখান থেকে।
ঈশানঃ আমার সাথে এমন করছিস না।মনে রাখিস।তোর বিয়ে আমরা রিকশা ওয়ালার সাথে দিবো।
উষাঃ ভালো যা। তোকে তো রাস্তা থেকে পাগল ধরে এনে সে পাগলের সাথে বিয়ে দিবো।
নুহাঃ তাহলে আমার কি হবে?
নুহার মুখ ফসকে কথাটা বের হয়ে গিয়েছিলো।ওর কথা শুনে সবাই হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। নুহা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে লজ্জায় জিহ্বায় কামড় দিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।
উষাঃ বাহ্ নুহা।খবর কি?
জিবরানঃ কি বললি ঈশান? তুই উষার বিয়ে রিকশা ওয়ালার সাথে দিবি।তাহলে আমি এতো বিজনেস করে কি করবো?কাল থেকে রিকশা চালাবো।এখান থেকে ছাড়া পেলেই বিজনেস ফেলে রেখে রিকশা কিনবো।তারপরও তো আমার উষা আমার কাছে থাকবে।
তারিনঃ এই ইশাত গাধাটাকেও একটু বুদ্ধি দিয়ো সবাই। একাবারে আনরোমান্টিক একটা মানুষ। মনের মধ্যে ফিলিংস নামক কোন বস্তু নেই। এত বোঝাই তবুও বোঝে না।
ইশাতঃ কি বললি তারু?
তারিনঃ কেন বয়রা নাকি তুমি? শুনতে পাওনি।
আদিলঃ মাসফি ভাই তোমায় কোথা থেকে তুলে আনলো?আমরা তো সবাই এক বাড়িতে ছিলাম বলে তুলে আনতে তাদের সমস্যা হয়নি।
মাসফিঃ আমি তো কিছুই বুঝলাম না। বৃষ্টির মধ্যে কিছু জরুরী কাজ ছিলো সেগুলো কম্পলিট করতে গিয়েছিলাম।গাড়িতে উঠতে যাবো ঠিক তখনি কেউ পেছন থেকে মুখে স্প্রে জাতীয় কিছু মারলো।তারপর জ্ঞান ফিরে দেখি এখানে।
অর্ণবঃ জিবরান তোমার খবর কি?
জিবরানঃ ভাই আমার খবর এখন বিজনেস ছেরে রিকশা কিনবো। এখনকার আপডেট আপাতত রিকশা চালানোর ট্রেনিং নেওয়া।
উষাঃ সত্যি জেব্রা একটা।(বিরবির করে)
অর্ণবঃ আমি তা বলি নি।আমি জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে তুলে কি করে আনলো?
জিবরানঃ দুঃখের কথা কি আর বলবো ভাই। গাড়ি নিয়ে বের হয়ে ছিলাম অফিসের উদ্দেশ্যে।পথে গাড়ি আটকে আমাকে কিডন্যাপ করে এনেছে।
ইশাতঃ হোয়াট!! তোকে কিডন্যাপ করছে।তোর মতো একটা জিরাফকে কেউ কিডন্যাপ করতে পারে।
জিবরানঃ বেশি বকবক করিস না।নয়তো তোর অতীত ফাঁস করে দিবো।কলেজে থাকতে যে একটা মেয়ের পিছু পিছু ঘুরতি। কিন্তু মেয়েটা তোকে পাত্তা দিতো না।কি জানি নাম?
ঈশানঃ সিনথিয়া। আমার মনে আছে।আমাদের কলেজের ইংলিশ প্রফেসরের মেয়ে।
ইশাতঃ তোরা কি চুপ করবি? (দাঁতে দাঁত চেপে)
তারিনঃ কি ইশাত তুমি একটা মেয়ের পেছন পেছন ঘুরতে।তুমি এমনটা করলে আমার সাথে। এই জন্যই তো বলি আমাকে কেন ভালবাসো না।তুমিও আমার ভালবাসা নিয়ে খেলা করলে।আমার মনটাকে ভেঙে দুই টুকরো করে ফেলছো তুমি। তোমার সাথে আর নয়।আমি এই জীবন রাখবো না। কচু গাছের সাথে ফাঁসি দিয়ে নিজের জীবন বিসর্জন দিবো।
(কান্নার অভিনয় করে)
উষাঃ হয়ছে আর বাংলা মুভির ডায়লগ মারতে হবে না।ভালো লাগলে ঘুরতেই পারে।তোর কি?আমার ভাইয়ুর যাকে ভালো লাগবে তার পিছনেই ঘুরবে।লেখা আছে কোথাও আমার সেজু ভাইয়ু কারো পিছনে ঘুরতে পারবে না।
তারিনঃ তুই আমার বান্ধবী নামে কলঙ্ক। কোথায় আমার পক্ষ নিয়ে কথা বলবি তা না করে তোর ভাইয়ের গুণগাণ শুরু করলি।
উষাঃ সবার আগে আমার ভাইয়ু।তুই কোন কলুর বলদরে?যা মুড়ি খা।
তারিনঃ ভালো হবে না কিন্তু। একবার এখান থেকে ছারা পাই তারপর তোর ব্যন্ড আমি বাজাবো।আর যদি বাই চান্স তোর ভাইয়ের বউ হই তাহলে তোর মাথার চুল আমি একটাও রাখবে না।শাক রাঁধবো।
ঈশানঃ তোরা দুজন একটু চুলোচুলি করতো।এভাবে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাচ্ছি। ফ্রী তে যদি মুভি দেখতে পারি তাহলে বিনদোন পাবো।
উষাঃ ঈশানু আরেকটা কথা বলবি তোর মাথার চুল আমি ছিঁড়বো। (ইশাতের দিকে তাকিয়ে কলা করে)ভাইয়ু এই শাঁকচুন্নিকে কখনও বিয়ে করো না।দেখো তোমাদের সামনে আমাকে কি বললো?
ইশাতঃ ঠিক আছে বোনু।ওকে আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না।এত বড় সাহস আমার বোনুকে এসব কথা বলে।
তারিনঃ কি বললে তুমি? আরেক বার বলো।
(চোখ লাল করে)
ইশাতঃ কোথায় কিছু বলি নি তো।(কিছুটা ভয় পেয়ে)
তারিনঃ মনে থাকে যেনো।সারা জীবনের জন্য পঙ্গু করে ঘরে বসিয়ে রাখবো।তখন আমিও দেখবো তোমায় বিয়ে করতে কোন মেয়ে আসে।
মাসফিঃ বা–প–রে ইশাত কি থ্রেট দিলো তোমায়?
ইশাতঃ ভাবেন তো বিয়ের আগেই এমন বিয়ের পর তাহলে আমার কি অবস্থা হবে?
মাসফিঃ ভাই আমি বিয়ে করবো না।বিয়ে করলে নাকি বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই মরে যায়।আমি বেঁচে থাকতে চাই।
নুহাঃ জিবরান ভাই, ঈশানের ব্যাপারে কিছু বলুন।
জিবরানঃ ওহ্ হবু ছোট ভাবি আপনার দেখছি ঈশানের ব্যপারে খোঁজ খবরও নিতে শুরু করেছেন?ডুবে ডুবে জল খাওয়া হচ্ছে বুঝি।(ভ্রু নাচিয়ে)
ঈশানঃ জিবরান চুপ করিস কিন্তু।
জিবরানঃ ঈশান কলেজে থাকতে এক বার—
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে ঈশান জিবরানকে পা দিয়ে পেটে লাথি মরলো।ঈশানের সাথেই জিবরানকে বেঁধে রাখা হয়েছে।
জিবরানঃ আউচ–
ঈশানঃ শালা,চুপ করতে বলেছি।শুনিস নি তো।আরো দুইটা খাবি।
জিবরানঃ আমি তোর কোন জন্মের শালা?এক হিসেবে তোর হবু বিয়াই আরেক হিসেবে ছোট বোনের হবু জামাই।
ওদের বকবকানিতে গার্ডরাও বিরক্ত হয়ে বারবার ওদের দিকে চোখ লাল করে তাকাচ্ছে। তাতে ওদের কি আসে যায়?ওরা কি কাউকে ভয় পাইনি যে সামান্য গার্ডদের চোখ রাঙানিতে দমে যাবে।ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলেই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে নিজেদের বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে সবাই গল্প করছে।
🍁🍁🍁
সি.সি টিভি ফুটেজে ওদেরকে একসাথে এরকমভাবে দেখে খুব খুশি হচ্ছে অজানা ব্যাক্তিটা।পুরো প্ল্যানটাই তার।ভেবেছিলো এক এক করে সবার ক্ষতি করবে।কিন্তু হঠাৎ করে প্ল্যান চেঞ্জ করতে হলো।সবাইকে তুলে এনে একসাথে শেষ করে দিবে।পাশে হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে নাহিদ।
—অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো।আর কিছু সময় পর থাকবে আমার রাজত্ব। আমার স্বপ্ন পূরণ হবে আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।ওদের সবাইকে শেষ করে আমি বড় করে একটা পার্টি দিবো।
নাহিদঃ ভাই আপনি ঐ খানে না গিয়ে এখানে কি করছেন?আমাদের তো বাংলোতে যাওয়া উচিত।
—হ্যাঁ,যাওয়া উচিত। তবে আরেক জনের আসা বাকি আছে।তাকে ছারা খেলাটা তো জমবে না।
নাহিদঃ কার কথা বলছেন ভাই? আমার জানা মতে আর কেউ বাকি নেই।সবাই আমাদের কাছে বন্দী।
—আছে একজন।অরূপ মির্জা তো এখনো এসে পৌঁছায় নি।
নাহিদঃ অরূপ😱।(অবাক হয়ে)
—হ্যাঁ,অরূপ।
নাহিদঃ অরূপ তো মারা গেছে ভাই।
—অরূপ মারা গেলে কি ওর জন্য অপেক্ষা করি।আমি লোক লাগিয়ে খবর নিয়েছি। অরূপ মির্জাদের বাগান বাড়িতে আত্মগোপন করে রেখেছে। ওকে তো আমরা তুলে আনতে পারবো না।কিন্তু এতখনে অরূপের কাছে খবর চলে গেছে। আর সে নিজে থেকে আমাদের কাছে ধরা দিবে।
নাহিদঃ ভাই মির্জারা তো পাক্কা খিলাড়ি হয়ে গেছে।
—কিন্তু আমিও কম বড় খিলাড়ি নই।অরূপের মৃত্যুর ব্যাপারটা আমার প্রথমেই সন্দেহ সন্দেহ হয়েছিলো।তবে সেদিন মির্জাদের বাগান বাড়িতে যেতে দেখে পুরো সিউর হয়ে গেলাম।তাই অরূপের খোঁজ খবর নিতে শুরু করলাম।আমার সন্দেহ সঠিক বের হলো।অরূপ এখনো জীবিত আছে।
নাহিদঃ এত বুদ্ধি নিয়ে থাকেন কোথায় ভাই? আমাকেও একটু দিয়েন।
—অদরকারী কথা রেখে কাজের কথায় আসা যাক।আমরা কিছু সময় পর বাংলোতে যাবো।সেখানে গিয়ে কি করবো তাই তোমাকে বলছি।মনোযোগ সহকারে শোনো।
নাহিদঃ জ্বি ভাই বলেন।
—-শোনো তাহলে…………..
🍁🍁🍁
বিরক্তর সাথে হাই তুলছে সবাই। কখন যে অরূপ এসে ওদের উদ্ধার করবে? সেই প্রতিক্ষায় সবাই সময় পার করছে।ধৈর্য্যর বাঁধ এখন ভেঙে যাওয়ার উপক্রম।
উষাঃ আহ্ মশা।আজকে মশাও আমাদের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের পেট ভোজন করছে।ছোট ভাইয়ু আমাকে মশা কামড়াচ্ছে। জলদী মশা তাড়া।
ঈশানঃ তোর জামাই কে বল?আপাতত মনে কর আমি এখানে নেই। আমি একটা হিসাব মিলাতে পারি না।বলতো ইশাত বাবা-মা কেন এই কাজটা করলো।
ইশাতঃ কি কাজ?🙄
ঈশানঃ বাবা-মা বোনুকে বিজ্রের নিচ থেকে কেন কুড়িয়ে এনেছিলো।আমরা চার ভাই তো বেটার ছিলাম।
ইশাতঃ কথাটা মন্দ বলিস নি।আমিও খুঁজে পাচ্ছি না তার কারণটা।
উষাঃ আমাকে বিজ্রের নিচ থেকে কুড়িয়ে এনেছে নাকি তোদের?তোদের দুজনকে ব্রিজের নিচ থেকে পেয়েছে। যদি কুড়িয়ে না পেতো তাহলে দুজনের চেহারা কি ভিন্ন হতো নাকি?কেউ কি বলবে তোরা জমজ ভাই।ব্রিজের নিচে অনেক কান্না করেছিলি তাই বাবা-মায়ের মায়া হয়েছে আর তোদের দুজনকে কুড়িয়ে নিয়ে এসেছে। আমিতো সবার আদরের প্রন্সেস।(ভাব নিয়ে)
ঈশানঃ উহ্, আসছে প্রিন্সেস।তুই হলি জরিনার মা।
উষাঃ কি আমি জরিনার মা?(রেগে)
ঈশানঃ তোর মেয়ে হলে তার নাম রাখবো জরিনা।আর ছেলে হলে রাখবো কালু।তাই এখন থেকে তোর নাম হয় জরিনার মা নয়তো কালুর মা।
উষাঃ বড় ভাইয়ু, মেজু ভাইয়ু এই শয়তানটাকে কিছু বলো।আমি নাকি জরিনার মা,কালুর মা।
ইশাতঃ জরিনা নামটা বেশ মিলিছে তো জিবরানের সাথে। জরিনা, জিবরান।বাহ্ শান তুই তো সেই নাম চয়েজ করেছিস।
উষাঃ একবার শুধু বাড়িতে যেতে দে।তারপর তোদের দুজনকে কি করে টাইট দিবো তা শুধু দেখবি।
ঈশানঃ কি করবি কালুর মা?
উষাঃ বড় ভাইয়ু কিছু বলো এটা কে?
অর্ণবঃ শান, তুই এই অবস্থায়ও মজা করছিস।বোনুর সাথে না লাগলে কি তোর হয় না।
ঈশানঃ একদম ঠিক কথা বলেছো বড় ভাইয়া। বোনুর সাথে না লাগলে আমার পেটের ভাত হজম হয় না।
আদিলঃ একটু পর গার্ডদের হাতে রডের বারি খেলে এমনিতেই পেটের ভাত হজম হয়ে যাবে। বডিগার্ড গুলোকে দেখেছিস।একেকটা পাহাড়ের মতো দেখতে,বডি বিল্ডার গুলো।আমাদের মতো শুটকি মাছকে এক হাতেই তুলে আছার মারতে পারবে।আমার তো দেখেই ভয় করছে।
মাসফিঃ ওদের তো গায়ে শক্তি আছে। আর আমাদের আছে বুদ্ধি। সেটা দিয়ে আমরাই জিতে যাবো।
জিবরানঃ মেজু ভাইয়া আমারও তো ভয় করছে।একটা ঘুষি মারলো চোখ মুখে অন্ধকার দেখবো।তখন আর পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হবে না।তোমার বোনও কোনদিন আমার কালু বা জরিনার মা হতে পারবে না।
উষাঃ মি.জেব্রা আপনিও শুরু করলেন?(রেগে)
জিবরানঃ সরি জরিনার মা।
উষাঃ মি.জেব্রা। (চিৎকার করে)
তারিনঃ নাম দুটো বেশ সুন্দর উষানি বেবি। কালু ও জরিনা।তোর সাথেও মানাবে।
উষাঃ এখন যদি আমার হাত দুটো খোলা থাকতে তাহলে তোদের সবাইকে যে আমি কি করতাম তা নিজেও জানি না।
তারিনঃ কেন রে বেবি এখন জ্বলে কে?আমাকেও কিছু সময় আগে কম কথা শোনাস নি।তখন মনে ছিলো না।একে তো তোর কথা মতো কালকে তোদের বাড়িতে রাতে থাকলাম।তখন যদি তোর কথা না শুনতাম তাহলে এখন এভাবে হাত বাঁধা অবস্থায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মশার কামড় খেতে হতো না। কালকে বাসায় চলে গেলে আজ আর এখানে থাকতে হতো না।
উষাঃ থাকলি কেন চলে যেতি।তোকে কি আমি ধরে বেঁধে রেখেছিলাম নাকি।
তারিনঃএতো বড় মিথ্যা কথা বলিস না ননদিনী।আল্লাহ তোর উপরে শুকনা ঠাডা ফালাইবো। তুই মিলিয়ে নিস কালুর মা।
উষাঃ আবার কালুর মা??তারু রে তোর খবর আছে। এক বার আমি শুধু ছারা পাই। তারপর তোকে কিলিয়ে আলু ভর্তা বানাবো।
নুহাঃ আর পারছি না।হাত দুটো মনে হচ্ছে ছিঁড়ে যাচ্ছে। আর কতখন এভাবে বাদুড় ঝোলা হয়ে থাকবো।নিজেকে এখন আমার বাদুড়দের দলের সদস্য মনে হচ্ছে।
ইশাতঃ কালুর মা মনে হয় অনেক রেগে গেছে শান।
ঈশানঃ ও জরিনার মা রাগো কেন?
🍁🍁🍁
উষা রাগে ফোঁস ফোঁস করছে।আর ওর দুই ভাই ওকে আরো রাগাচ্ছে।উষাকে এভাবে লুচির মতো ফুলতে দেখে ঈশান ও ইশাত বেশ মজা পাচ্ছে। মাসফি ওদের ভাই-বোনের ঝগড়া,খুনসুটি দেখে চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না।দু গাল বেয়ে পানি পরছে।অদিতিও ওর সাথে এমন করতো।আজ ওদের দেখে অদিতির কথা মনে পরছে।কেউ খেয়াল না করলেও অর্ণবের চোখ এড়ালো না মাসফির ব্যাপারটা।মাসফি থেকে থেকে চোখের পানি কাঁধ দিয়ে মুছছে।
অর্ণবঃ মাসফি কাঁদছো কেন?
অর্ণবের কথা শুনে সবাই মাসফির দিকে তাকালো।
মাসফিঃ না ভাই কিছু না।চোখে কি জানি পরেছে?
আদিলঃ মিথ্যা কেন বলছো মাসফি?তোমার নিশ্চয়ই অদিতির কথা মনে পরেছে।
মাসফিঃ খুব মিস করছি অদিতিকে।
এতটুকু বলে মুখ বন্ধ করে উপরের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করতে লাগলো মাসফি।তবে অবাধ্য পানি ওর কথা শুনলো না।গাল বেয়ে ঠিক নিচে পরে গেল।সবাই চুপ হয়ে গেলো।এমন পরিবেশটা ঈশানের ভালো লাগছিলো না।তাই কিছু সময় পর ঈশান উষার কানের সামনে মাথাটা ঝুঁকিয়ে আস্তে করে বললো।
ঈশানঃ ও কালুর মা খবর কি?
উষাঃ মি.জেব্রা আপনি কিছু বলছেন না ছোট ভাইয়ু কে?ও কিন্তু বেশি করছে এখন।
জিবরানঃ কি হয়েছে?
উষাঃ ঈশানু শয়তানটা আবার আমাকে কালুর মা বলছে।
জিবরানঃ আমি কি বলবো?আমাদের বাচ্চারা নাম তো তার মামারা রাখতেই পারে।এটা মামাদের অধিকার। আমি কিছু বলতে পারি নাকি।তাদের হক তারা অবশ্যই পালন করবে।নয়তো মামা হয়েছে কেন?আমার কিন্তু নাম দুটো খারাপ লাগছে না।
উষাঃ জেব্রা আপনিও আমার সাথে মজা নিচ্ছেন। আমি এগুলো মনে রেখে দিলাম।পরে এগুলোর সুদ সহ আসল উঠাবো।
নুহাঃ ওদের ভাই-বোনের সম্পর্কটা আমার খুব ভালো লাগে।এই ঝগড়া, খুনসুটি। আবার একটু পরেই মহব্বত। বোনের সামন্য কিছু হলেই ভাইদের জান চলে যায়।আবার বোনকে না খেপালেও ছোট ভাই দুটোর ভালো লাগে না।সত্যি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো ও বড় সম্পর্ক হলো ভাই-বোনের সম্পর্ক।এদের না দেখলে আমি কখনও বুঝতেই পারতাম না।আল্লাহ ওদেরকে তুমি ভালো রেখো।এমন ভাই সবার কপালে জুটে না।উষা অনেক বড় ভাগ্য নিয়ে জন্মিয়েছে বলেই একটা দুইটা নয় চারটা ভাই পেয়েছে।ওরা যেনো সবসময় এরকম থাকতে পারে।কোন বিপদ যাতে ওদের আলাদা না করে।(মনে মনে)
একটু থেমে ভাই-বোন আবার শুরু করে দিলো।ওদের এই মিষ্টি ঝগড়া এই অসহ্যকর পরিস্থিতিতে সবারি বেশ ভালো লাগছে।হঠাৎ কেউ দরজার দিক থেকে বলে উঠলো।
—–তোমরা যদি নিজেরা নিজেরা ঝগড়া করো তাহলে আমরা গেম খেলবো কি করে?এত কষ্ট করে তোমাদের তুলে আনার তো কোন মানেই হয় না।কত কষ্ট করে একেক জনকে একেক জায়গায় থেকে এতগুলো গার্ড দিয়ে তুলে আনলাম। এখন যদি তোমরা নিজেদের মধ্যে ভেজাল করো তাহলে কি ব্যাপারটা ভালো দেখায় বলো।
সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে আৎকে উঠলো।তার মানে সে ছিলো সকল নাটের গুরু।যাকে তারা কখনও সন্দেহ করে নি।সবাই অবাক।দরজায় থাকা মানুষটাকে কেউ কখনো সন্দেহের ছিটে ফোটাও রাখেনি।আজ সে এই মূল গেমের পেছনে ছিলো।সবার চোখে অবিশ্বাস। মাসফির চোখ দুটো গোল গোল হয়ে গেছে। মুখ দিয়ে শুধু একটা বাক্য বের হলো।
মাসফিঃ আরান তুই???
#চলবে