#গল্পের_নাম_ভালোবাসাময়_প্রহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:১৬
রাত তন্নির রুমে প্রবেশ করে দেখলো তন্নি পড়ার টেবিলে বসে মনোযোগ সহকারে পড়ছে।রাত তন্নির কাছে গিয়ে দাড়িয়ে বললো,
~ছেলেটা কে ছিল রে?
তন্নি রাতের কন্ঠ শুনে বই থেকে মুখ উঠিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললো,
~কোন ছেলে?
রাত নিজের রা/গ/কে কন্ট্রোল করে বললো,
~যে তোকে চকলেট আর ফুল দিলো।
তন্নি ভ্রুকুচকে রাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
~তুমি কী আমার ন/জ/র রাখছো?খুবই খা/রা/প কথা রাত ভাইয়া।
বলেই সে মুখ টি/পে হেসে ফেললো রাতের রা/গ আরো বেড়ে গেলো তন্নির হাসি দেখে।রাত তন্নির বাহু চে/পে ধরে চেয়ার থেকে উঠিয়ে বললো,
~রাস্তায় দাড়িয়ে একটা অচেনা ছেলের সাথে দাড়িয়ে কথা বলছিলি যদি সেই ছেলেটা তোর কোনো ক্ষ/তি করতো।এই ফুল আর চকলেটে যদি কিছু মিশিয়ে দিয়ে তোর সাথে কোনো
খা/রা/প কিছু করতো তখন কী করতি?আজ কাল কতো কিছু হয় রাস্তায় এই জ্ঞান আছে তোর?
রাত একনাগাড়ে কথা গুলো বলে থামলো তন্নি রাতের থেকে নিজেকে ছা/ড়ি/য়ে বললো,
~আমি তো তার মাকে সাহায্য করেছিলাম তাই আমাকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছিলো আর সে ভালো একজন মানুষ তার মা আমাকে তার ব্যাপারে অনেক কথা বলেছে।
তন্নির কথা শুনে রাত তন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~তুই বড় হয়েছিস তোর এখন থেকে সব বুঝে শুনে চলতে হবে।
তন্নি বললো,
~আমি জানি রাত ভাইয়া।
রাত আর কিছু না বলে তন্নির থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসলো রাতের কেন যেন ছেলেটাকে সুবিধার মনে হচ্ছে না। রাতের মন বলছে ছেলেটার কোনো উদ্দেশ্য আছে না হলে এভাবে বাসা খুজতে তো বের হতো না।রাত এসব কথা ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসলো বাসায় আসতেই দেখতে পেলো সবাই একসাথে বসে আলোচনা করছে।অধরা রাতকে দেখে বললো,
~রাতও এসে পরেছে আমরা সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
রাত বললো,
~কীসের এতো আলোচনা?
রক্তিমের মা বললেন,
~আমরা তোর জন্য মেয়ে দেখা শুরু করবো। সেটা নিয়েই আলোচনা করছে সবাই।
রাত বললো
~আমি এখন বিয়ে করবো না।
রক্তিমের মা বললেন,
~এমন কথা আমি শুনবোনা এক বউ এসে পরেছে আরেক বউও আমি এ বাসায় চাই।
রক্তিম রাতের কাঁধে হাত রেখে বললো,
~বিয়েটা করে ফেললে ভালো হয় তুই তো এখন অফিসেও যাওয়া শুরু করেছিস।
রাত বললো,
~আমি বিয়ের জন্য প্রস্তুত না তাই এ নিয়ে আর কথা বলবে না।
রক্তিমের বাবা বললেন,
~তোর কী কোনো পছন্দ আছে থাকলে বলতো পারিস।
অধরাও রাতের কাছে বসে বললো,
~হ্যাঁ রাত বল তোর মনের কথা।
রাত মাথা নিচু করে ফেললো অধরা, রক্তিম সহ সবাই রাতের দিকে তাকিয়ে মুখ টি/পে হাসছে রাত মিনমিন স্বরে বললো,
~হ্যাঁ আছে একজন।
অধরা ব্যাকুল হয়ে বললো,
~কে সে?
রাত বললো,
~এখন বলা যাবে না কারণ আমি মেয়েটিকে এখনও নিজের মনের কথা বলিনি।
অধরা বললো,
~মেয়েটি কী আমাদের ভার্সিটির?
রাত বললো,
~নাহ।
রক্তিম অধরাকে বললো,
~থাক ও নিজে আগে সিউর হোক তারপর আমাদের কাজ আমরা করে নিবো।
রক্তিমের মা বললো,
~হ্যাঁ তাহলেই ভালো হয়।
রাত সেখান উঠে নিজের রুমে চলে গেলো অধরা রান্নাঘরে গিয়ে রাতের খাবার তৈরি করতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো কে সে মেয়ে?তখনই রক্তিম এসে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো অধরা তার ছোঁয়া পেয়ে ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে আসলো। রক্তিম অধরার গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
~কার ভাবনায় ব্যস্ত?
অধরা বললো,
~আছে কেউ একজন যার ভাবনায় বিভোর আমি থাকি।
রক্তিম বললো,
~এখন ভাবনা থেকে ছুটি নিন ম্যাডাম কারণ আপনার বর এখন আপনাকে নিয়ে ব্যস্ত হবে।
অধরা বললো,
~রান্না করছি এখন কোনো সময় নেই আমার।
রক্তিম বললো,
~ডিনারের পর আমরা ঘুরতে বের হবো তখন কিন্তু কোনো বাহানা চলবে না।
অধরা বললো,
~যথা আজ্ঞে মহারাজ।
অধরাকে ছেড়ে দিয়ে রক্তিম রান্নাঘর থেকে চলে গেলো অধরা মুচকি হেসে নিজ কাজে মনোযোগ দিলো একটু পর রক্তিমের মাও তাকে সাহায্য করতে আসলো।রক্তিমের মা অধরাকে বললো,
~অধরা,তোমরা কিছুদিনের জন্য বাহিরে থেকে ঘুরে আসো নিজেদের মতো করে সময় কা/টা/ও।এখন এসব সংসারের কাজ তোমার করতে হবে না আমি আজই রক্তিমকে বলবো তোমায় নিয়ে যেতে।
অধরা বললো,
~মা,আমরা সবাই মিলে ঘুরতে গেলে কেমন হয়?একসাথে পিকনিক টাও হয়ে যাবে।
রক্তিমের মা অধরার দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমরা গেলে তো সেই বাসার পরিবেশই হয়ে যাবে আমি চাই রক্তিম আর তুমি একা কিছুদিন একসাথে থাকো।
অধরা বললো,
~তাহলে রাত আর তন্নিকে সাথে করে নিয়ে যাই তারাও একটু ঘুরে আসলো।
রক্তিমের মা বললো,
~হ্যাঁ তাদের নিয়ে যেতে পারো আমি সব ব্যবস্থা করে দিবো।
ডিনারের সময় রক্তিমের মা সবাইকে তার কথা জানালো কেউই তার কথায় অমত করলো না রাত একটা রির্সোটে যাওয়ার প্ল্যান করলো।রক্তিম আর অধরাও তাতে সহমত পোষন করলো অধরা তন্নিকে ফোন করে বললো আগামীকাল সন্ধ্যায় তার রওনা দিবে।তন্নিও রাজি হয়ে গেলো রাত মনে মনে ঠিক করলো সে তার মনের কথা তন্নিকে জানিয়ে দিবে।ডিনারের পর রক্তিম আর অধরা গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলো রক্তিম অধরার একহাত ধরে গাড়ি ড্রাইভ করছে। তারা এই নিরব শহরে ঘুরে বেরালো গভীর রাত পর্যন্ত সারাটাসময় রক্তিম অধরাকে নিজের কাছে রেখেছে।আইসক্রিমের আবদার করায় রক্তিম একটু রা/গ করলেও পরে অধরার কথায় মেনে নেয় তার আবদায়।রক্তিম আর অধরা অনেক রাত করে বাসায় ফিরে এসে সোজা ঘুমাতে চলে যায় কারণ তারা প্রচুর ক্লান্ত হয়ে গেছে তাই আর অন্যদিকে রাত বারান্দায় বসে তন্নির খেয়ালে ডু/বে আছে। রক্তিম আর অধরার মতো কী রাত আর তন্নিও এক হতে পারবে তাদের ও কী “ভালোবাসাময় প্রহর” আসবে তা সময় ধীরে ধীরে বলে দিবে।
সকালবেলা কলিংবেল বেজে উঠলো তন্নি প্রভাকে নাস্তা দিচ্ছিলো তাই অধরার মা গিয়ে দরজা খুলতেই এক ভদ্রমহিলা আর এক যুবক তাকে সালাম জানালো।অধরার মা সালামের জবাব দিয়ে বললো,
~আপনারা কে?
সেই যুবকটি বললো,
~আমার নাম রাজ উনি হলেন মা।মিস তন্নি আমাদের ভালো মতে চিনেন।
অধরার মা তাদের ভিতরে আসতে দিলেন তন্নি তাদের দেখেই হাসি মুখে সালাম দিয়ে তার মাকে সব বুঝিয়ে বললো।অধরার মা বললেন,
~আপনারা বসুন আমি নাস্তা নিয়ে আসি।
রাজের মা বললেন,
~নাহ আপা এগুলো কিছু করতে হবে না আপবি যদি একটু তন্নির বাবাকে ডেকে দিতেন তাহলে ভালো হতো।
অধরার মা বললেন,
~উনি রুমেই আছে তন্নি যাও ডেকে নিয়ে আসো।
তন্নির কাছে বিষয়টা ভালো ঠেকছেনা সে গিয়ে তার বাবাকে ডেকে নিয়ে আসলো।অধরার বাবা রাজের মায়ের সামনে গিয়ে বসে বললেন,
~জ্বী বলেন আপা।
রাজের মা রাজের দিকে তাকিয়ে বললেন,
~আমরা আপনার মেয়েকে বাড়ির বউ করে নিতে চাই।
কথাটা শুনে তন্নির মাথা ঘুরে উঠলো সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেউ উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
~তন্নি এখনো অনেক ছোট আমরা তার বিয়ে নিয়ে ভাবছিনা।
সবাই হতবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো রাত দাড়িয়ে আছে তন্নি রাতকে দেখে ঘা/ব/ড়ে গেলো কারণ রাতের চোখ গুলো লাল হয়ে আছে পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে।রাত রুমে প্রবেশ করে ঠান্ডা গলায় বললো,
~শুনতে পাননি আমি কী বলেছি?বসে থেকে লাভ হবে না।
চলবে