#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ১৮/অন্তিম_পর্ব
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অর্পা অয়নের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো অয়ন চোখ বন্ধ করে পরে আছে। অর্পা অয়নের দিকে কিছু সময় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অভ্র অর্পার পাশে এসে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। অর্পা ফিসফিস করে বলে উঠলো
— নিজে চাইলে আজ গল্পটা একটু ভিন্ন হতো। কিন্তু না। তুই এটার যোগ্য।
অর্পার কথা শেষ হতেই অয়ন সবাইকে অবাক করে দিলো। অয়ন নিজের সেন্স ফিরে আসতেই বন্ধ চোখ ধিরে ধিরে খুলতে লাগলো। অয়ন বেঁচে আছে। এই দৃশ্য দেখার জন্য কোনো কোনো ভাবেই অভ্র ও অর্পা প্রস্তুত ছিলো না। অয়ন সেন্স আসতেই চোখ খুলে একটু কষ্ট করে গাড়ি থেকে নিজের বডিটা বের করে আনতে চেষ্টা করলো। একটু চেষ্টা করতেই অয়ন সফল হয়। অয়ন গাড়ি থেকে নেমে কোনো মতে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। অয়নের মাথার কিছু অংশ ফেটে গেছে। রক্ত বেরিয়ে আসছে অয়নের শরীর থেকে। “এতো বড় এক্সিডেন্ট এর পরেও অয়ন বেঁচে থাকে কি করে”? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে অর্পা ও অভ্র। অয়ন ডোবার পাশ থেকে উঠে এসে অর্পার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে আসে। অর্পা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন অর্পার কাছে আসতেই অর্পা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— শয়তানের সহজে মৃত্যু নেই। তোকে দেখার পর এই কথাটা পুরোপুরি বিশ্বাস হলো।
অয়ন অর্পার উদ্দেশ্যে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলতে লাগলো
— শয়তান না অন্য কিছু তা জানি না। তবে তোদের দুটোকে, ওহহহ সরি তিন জনকে নিজের হাতে শাস্তি দিবো বলে বিধাতা আমায় এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে।
অয়নের মুখে ৩ জনের কথা শুনতেই অভ্র অবাক হয়ে যায়।
— তিন জন মানে?
কৌতুহল পূর্ণ কন্ঠে বলে উঠলো অভ্র। অভ্রর দিকে তাচ্ছিল্য কর কন্ঠে অয়ন বলতে লাগলো
— লে হালুয়া তুই কোন গ্রুপে কাজ করিস রে? গ্রুপ মেম্বার সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারনা নেই তোর! ফানি বয়। তুই ছাড়াও তোর অর্পা ম্যাম এর দলে আছে অর্ণব। কি মিস ঠিক টাক বললাম তো? আরে ভাই আমি আগে থেকেই জানতাম আমাকে ফলো করা হচ্ছে। কিন্তু আমি একটু বোকা সাজলাম। বাড়ি গিয়ে অধরাকে নামিয়ে আসার সময়ে অর্ণবকে চোখে পরলো। অর্ণব যে সব কিছুর মাস্টার মাইন্ড তা আমি অনেক আগেই আঁচ করতে পেরেছি। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারিনি। অর্পার সাথে গেম সাজিয়ে ওর ফোনে অর্ণবের নাম্বারটা ও কিছু ফোন কলের রেকর্ড শোনার পরে বিশ্বাস হয়ে গেছে। আর পরিস্কার ও।
অয়ন কথাটা শেষ করতেই অর্পা অয়নের দিকে তেড়ে এসে অয়নের শার্টের কলার চেপে ধরলো।
— আমার সাথে এই নাটক করার কি প্রয়োজন ছিলো? বল আমায়।
অয়ন অর্পার হাত জোড়া শক্ত করে ধরে আলতো করে একটা ধাক্কা দিয়ে নিজের দিক থেকে অর্পাকে একটু দূরে সরিয়ে দিলো অয়ন। মৃদু কন্ঠে অয়ন অর্পাকে উদ্দেশ্য করে তাচ্ছিল্য কর হাসি দিয়ে বলতে লাগলো
— অভিনয় কি তুই একা করতে পারিস? আর কেউ পারে না তাই না! তোর সাথে একটু অভিনয় করে দেখলাম। তুই মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছিস আর আমি সত্যি সামনে এনেছি। সিম্পল।
অয়নের কথা শেষ হতেই রাজ একটা গাড়ি নিয়ে উপস্থিত হয় অয়নের সামনে। রাজের গাড়ির সাথে সাথে পুলিশের গাড়িও চলে আসে। পুলিশের গাড়ি দেখে অভ্র পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে কিন্তু অয়ন অভ্রকে আটকে ফেলে। অর্পা নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশ অভ্রকে গাড়িতে তুললো। অর্পা অয়নের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন অর্পাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— ভালো লাগাটা স্বাভাবিক। তবে তাকে পেতেই হবে এমন চিন্তা করাটা মোটেও স্বাভাবিক নয়। আমি আমার ছেলের কারনে তোমার সাথে ভালোবাসার নাটক করেছি। আসলে অধরার অবহেলা গুলো ভূলে যেতে প্লাস আমার অতিত এই দুটো জিনিস আমার মনের মধ্যে জেদ সৃষ্টি করেছিলো। তাই তোমাকে ভালোবাসার কথা বলি। কিন্তু অর্পা আমার ভালোবাসা শুধু মাত্র একটু সময়ের জন্য সিমাবদ্ধ থাকলেও তোমার ভালোবাসি ছিলো শারীরিক চাওয়ার মধ্যে পূর্ণ। যা আমার মনের মধ্যে ছিলো না। ভালোবাসা ভালো রাখতে শিখায়। কারো থেকে কাউকে ছিনিয়ে নিতে নয়। আশা করি নিজেদের ভূলের সাজা তোমরা ঠিক পাবে। ভালো থেকো।
অয়ন কথাটা শেষ করতেই অর্পাকে পুলিশ নিয়ে যায়। অর্পা অয়নের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এতো কিছু করেও অর্পা অয়নকে নিজের করে পেলো না। অর্ণবকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। অর্পা ও অভ্র পরে গ্রেফতার হলো। অর্পাকে নিয়ে যেতেই রাজ অয়নকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে।
— অয়ন তুই ঠিক আছিস তো?
— হুম ঠিক বলতে মাথা ঘোরাচ্ছে। একটু যদি এদিক ওদিক হতো তবে আমি টাটা বাই বাই।
— হ্যাঁ, কিন্তু অয়ন তুই আমাকে সাথে আনিস নাই কেনো? তুই কি জানতিস যে তোর উপর আক্রমণ হতে পারে এমন কিছু?
— উহু। জানতাম না। তবে আমি সব সময় প্লান এ ও বি বানাই। এ ফেল হলে যেনো বি সাকসেস হয় তার ব্যবস্থা আমি আগে থেকেই করে রাখি।
— হুম।
* সকাল হতেই অয়ন হাসপাতালের বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। সামান্য কিছু চোট ছাড়া অয়নের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। অয়ন সকাল হতেই চোখ মেলেই দেখতে পেলো একটা ভারী কিছু তার বুকের উপর। অয়ন ভালো করে বুকের উপর দৃষ্টিপাত করতেই দেখতে পেলো ভারী কিছু বলতে তার স্ত্রীর মাথাটা তার বুকের উপর আছে। অয়ন ভাবছে কখন অধরা হাসপাতালে এলো? আর ওকে কে খবর দিলো? অয়ন অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। জীবনে ২য় বারের মতো মনে হচ্ছে অয়নের কোনো এক পরী তার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। নার্স অয়নের কেবিনে এসে অয়নের হাত থেকে স্লাইনের ইনজেকশনটা খুলে দিলো। অয়ন অধরাকে মৃদু কন্ঠে ডাকছে।
— অধরা! ওই অধরা। উঠো প্লিজ! আরে সকাল হয়ে গেছে।
অধরার ঘুম ভারী নয়। তাই অয়নের মৃদু কন্ঠের ডাকেই তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অধরা চোখ মেলে দেখতে পেলো অয়ন জেগে গেছে। অধরা অয়নের উদ্দেশ্য বলতে লাগলো
— এই তুই এতো খারাপ কেনো? রাতে এতো কিছু হলো আর আমায় কোনো ভাবেই কিছু জানালি না। তুই একটা বাজে লোক।
অধরা বেশ চিৎকার করে কথা গুলো বলতে লাগলো। অয়ন অধরাকে শান্ত করতে অধরাকে উদ্দেশ্য করে মলিন কন্ঠে বলতে লাগলো
— আহহহ আমার বউ টা অনেক চিন্তা নিয়ে একদম হাসপাতালে চলে এসে আমার বুকে মাথা রেখে অতিরিক্ত টেনশনের জন্য লম্বা একটা ঘুম দিয়েছে। তাই না?
অয়নের কথা শুনে অধরার রাগ আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায়। অধরা রেগে আগুন হয়ে অয়নকে বলতে লাগলো
— আমি এসে দেখি আপনি ঘুমিয়ে আছেন। তাই বিরক্ত না করে আপনার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ফেলি। বালিশ নেই তাই আরকি। যাই হোক আর আসবো না। আপনি আপনার বুক নিয়ে থাকেন এই বার।
অধরা অয়নের পাশ থেকে উঠে দাঁড়ালো অয়ন বাঁকা হাসি ঠোঁটের কোণে এঁকে অধরাকে বলতে লাগলো
— ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ! তুমি কি চাও অন্য কেউ আমার বুকে এসে থাকুক? আবার পরের স্ত্রীর উপর পরক্রিয়া করি আমি?
— একদম খুন করে দিবো এবার।
— হুম।
* একদিন পরে অয়নকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হলো। অয়ন আর অধরার মাঝে সব কিছু ঠিক হয়ে যায়। অয়ন যেই ভুল গুলো করেছে তার সাজা অয়ন কিছুটা হলেও পেয়েছে। অধরা পারতো অয়নকে ফেলে নতুন কাউকে নিজের জীবনে আনতে কিন্তু তাতে লাভ কি হতো? অয়ন এমনটাই থাকতো। চলে তো সবাই যেতে পারে কিন্তু থেকে একজনকে বদলে সবাই দিতে পারে না। অধরা প্রমান করে দিলো যে সবাই জেদের বসে নিজের ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দেয় না। অর্পা, অভ্র, অর্ণবের আইনি সাজার ব্যবস্থা করা হয়। তাদের কর্মের জন্য তারা সাজা পায়। ভালোবাসা কখনও প্রতিহিংসার জন্ম দেয় না। ভালোবাসা ভালো রাখার দায়িত্ব নেয়। যে দায়িত্ব সবাই পালন করতে পারে না। অধরা আর অয়ন নিজেদের অতিতের অভিজ্ঞতা ভুলে নতুন করে নিজেদের জীবন সাজিয়ে নিলো। সুখে দিন কাটাতে লাগলো অয়ন আর অধরা। অয়নের ভুল গুলো ক্ষমার অযোগ্য হলেও অধরা কিন্তু ক্ষমা করে দিয়েছে। মানুষ ভুল করে এক বার। একবার করা ভূলের সাজা সারা জীবনের জন্য দেয়া ঠিক নয়। অতঃপর বলতে চাই সকল স্বামীদের নিজের স্ত্রীর প্রতি দুর্বল হয়ে পরুন। ভালোবাসা দিন ঐ মানুষটিকে। কারন আপনার একটু ভালোবাসা পাবার জন্য একটা মানুষ নিজের পরিবার ছেড়ে আপনার পরিবারকে আপন করে নিয়েছে। তাকে না হয় অবহেলা নামক যন্ত্রনা টা নাই বা উপহার দিলেন। আর মেয়েদের বলতে চাই নিজের স্বামীকে আগলে রাখুন। নিজের ভালোবাসায় তাকে নিজের করে বেঁধে রাখুন। সমাজে সব পুরুষ যেমন খারাপ মানুষ হয় না ঠিক তেমনি সব নারীও ভালো হয় না। ভালো থাকুক ভালোবাসা। ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষ গুলো।
——————– সমাপ্ত——————