#ভালোবাসি_বুঝে_নাও🍁🍁
#পর্ব_১৬
#সুমাইয়া_সুলতানা _সুমী(writer)
.
তোমরা এসব কি শুরু করলে বলো তো?? এতো রাতে, আর মেহরাব ভাই তুই কিছু বল ওদের (মেঘ)
আমি কি বলবো ভাই,, তুই জানিস না?? লেডিস ফাস্ট তাই আমার এখানে কিছুই বলার নাই (মেহরাব)
কি ভাইয়া আপনি যান না বাসর ঘরে আপনাকে আটকাচ্ছে কে??(মাহি)
হ্যাঁ সারাদিন কত খাটা খাটনি করেছেন এখন তো একটু রেস্ট নেওয়ার সময় তাই না??? তো যান আপনি রুমে গিয়ে সুন্দর করে ঘুমিয়ে পড়ুন(ইশিতা)
আরে আমার বোউন বিয়ের পর বউ ছাড়া বাসর ঘরে গিয়ে কি করবো মাছি মারবো? তোমরা তো আমার বউকেই দিচ্ছো নাহ(মেঘ)
মেঘের কথাশুনে মেঘলা লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলো,,,, তারপর মেহরাব বলল।
আহ মেঘ এসব কি বলছিস তুই?? এখানে আমি আছি তুই আমার সামনে এসব বলছিস লজ্জা করছে না তোর??(মেহরাব)
ধূর ছাই রাখ তো তোর লজ্জা এখানে আমার বউ চুরি হয়ে যাচ্ছে আর তুই আছিস লজ্জা নিয়ে,,, মাহি বোন আমার পিল্জ আমার বউকে আমায় দিয়ে দাও,,, সময় কিন্তু আমারো আসবে তখন দেখাবো মজা (মেঘ)
এই এ তো দেখি রিতীমত আমাকে থ্রেট দিচ্ছে,, যাও বা ভাবলাম আপুকে দেবো কিন্তু এখন আর দেবো না,(লেখিকাঃ সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী) আর শোনেন এই খানে মানে এই গ্রামে আজকে আমাদের লাস্ট নাইট আবার কবে আসব তার ঠিক নেই তাই আমি চাই না আজকের রাতটা ঘুমিয়ে নষ্ট করতে। (মাহি)
রাতে মানুষ ঘুমাবে না তো কি করবে হা ডু ডু খেলবে??(মেহরাব)
এই তো শুরু হয়ে গেলো আরে আমি কি হা ডু ডু খেলতে বলেছি নাকি?? আমার পুরো কথাটা তো শেষ করতে দেন(মাহি)
হুম বল।
আমি বলছি কি আজকে রাতটা সবাই মিলে ছাদে বসে আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দিলে কেমন হয়??
হমম খুব ভালো হয় তা তোমরা যাও না সবাই মিলে আড্ডা দাও মাঝখানে আমার বউকে টানছো কেনো??(মেঘ)
কি ভাইয়া বিয়ে হতে না হতেই এমন বউ পাগল হয়ে গেলেন??(মাহি)
ওদের কথা শুনে মেহরাব গলা খাক্কারি দিয়ে বলল৷
আচ্ছা অনেক কথা হয়েছে এখন চল সবাই ছাদে যায়,, মাহি যা বলল তেমনি হবে, সত্যি আজকে এখানে আমাদের লাস্ট নাইট আবার কবে আমরা সবাই এভাবে একসাথে হতে পারবো জানি না,, তাই এখন চল সবাই,, মাহি তুই আর ইশিতা মেঘলা কে চেঞ্জ করিয়ে, বালিশ আর কাথা নিয়ে উপরে আয় কেননা ছাদে তো অনেক ময়লা তাই ওগুলো বিছাতে হবে আর আমি মেঘ আর নেহাল পাটি নিয়ে আসছি ওকে।
ওকে ভাইয়া, এই চলো সবাই তারপর মাহিরা সবাই চলে গেলো।
কিরে এমন দেবদাশ মার্কা চেহারা করে আছিস কেনো? চল (মেহরাব)
আমি এর প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো,,, তোর বিয়ের দিন না আমি মাহিকে লুকিয়ে রাখব তখন বুঝবি কেমন লাগে(মেঘ)
হাহাহা চেষ্টা করে দেখতে পারিস এখন চল।
তারপর মেহরাব মেঘ আর নেহাল রাও চলে গেলো,, সবাই চেঞ্জ করে ছাদে যাবে, বড়রা সবাই ঘুমিয়ে পরেছে সারাদিন অনেক ধকল গেছে, আবার ভোরে উঠতে হবে, তাই সকাল সকাল সবাই শুয়ে পরেছে।
নেহাল আর মেঘ পাটি নিয়ে ছাদে চলে গেছে,, মেহরাব ফোন নিতে রুমে এসেছিলো তারপর ফোনটা নিয়ে ছাদের সিঁড়ির দিকে পা বারিয়েছে।
ওই তো মেহরাব আসছে আমি ইচ্ছে করে ওর উপর পরে যাবো আর ও না চাইতেও আমার ধরবে আর আরে ওই তো মাহি কাথা আর বালিশ নিয়ে এদিকেই আসছে বাহ এতো দেখি মেঘ না চাইতেই জল,,, (মনে মনে বলে মীরা হাসলো তারপর মীরাও সিঁড়ির দিকে গেলো)
এই যে শুনুন না এগুলো একটু ধরুন না,, দেখুন আমি নিতে পারছি না,, আপুরা তো আমার উপর চাপিয়ে দিয়ে চলে গেছে,, সাহায্য করুন আমায় (দূর থেকে মাহি মেহরাবকে দেখে বলল)
একে তো দেড় ফুটের ছোট একটা বাচ্চা তুই তার উপর এতো কিছু নিয়েছিস কেনো?? (মেহরাব মাহির কাছে গিয়ে মাহির থেকে সব কিছু নিতে নিতে বলল,,)
শুনুন আমি মোটেও,,,,,(মাহি আর কিছু বলার আগেই ছাদের সিঁড়ির কাছে কিছু পড়ার আওয়াজ হলো মাহি আর মেহরাব সেদিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলো,,, কেননা মীরা নেহাল এর উপর পড়ে গেছে, মানে নেহাল মাটিতে আর মীরা নেহাল এর উপর আর নেহাল মীরার কমর জরিয়ে ধরে আছে)
কিছুক্ষণ আগে,,,,
ছাদে মাহি আসছে না দেখে নেহাল ভাবলো মাহিকে ডেকে নিয়ে আসি তাই মাহিকে ডাকার জন্য সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিলো নেহাল,, আর তখনি মীরা মেহরাব মনে করে নেহাল কে ইচ্ছে করে ধাক্কা দেয় য়ার ফল সরূপ ওরা একে অপরের উপর..
এই আপনি তো খুব খারাপ মেয়ে দেখলেই জরিয়ে ধরতে ইচ্ছে করে??(মীরা নেহাল এর উপর থেকে উঠে জামা কাপড় ঝাড়তে ঝাড়তে বলল)
আমার নাহয় মেয়ে দেখলে জরিয়ে ধরতে ইচ্ছে করে কিন্তু আপনি কি হ্যাঁ ইচ্ছে করে ছেলেদের গায়ে পড়েন, গায়ে পড়া মেয়ে একটা (নেহাল জামা ঝাড়তে ঝাড়তে বলল)
এই মুখ সামলে কথা বলুন অসভ্য ছেলে কোথাকার।।
হুম??? কত সভ্য এলেন রে,, গায়ে পড়া মেয়ে কোথাকার।
এরকম এক দুই কথায় ওদের মধ্যে ঝগড়া বেধে গেলো আর দূর থেকে মাহি আর মেহরাব সেটা উপভোগ করছে।
আমি কি ভাবছি বলুন তো??(মাহি)
কি??
ভাবছি ওদের দুজন কে ধরে বিয়ে দিয়ে দিলে কেমন হবে বলুন?? তারপর দুজন মিলে সারাদিন ঝগড়া করবে আর একে অন্যর চুল ছিড়বে হিহিহি অনেক মজা হবে না??
হ্যাঁ আপনার মাথায় তো খালি এসব বুদ্ধিই ঘোরা ফিরা করে,, এখন চল ওদের থামাতে হবে নয়ত আজকের রাতটাই মাটি হয়ে যাবে।
তারপর মাহি আর মেহরাব গিয়ে ওদের ঝগড়া থামালো,, তারপর সবাই মিলে ছাদে গেলো আর সারারাত আড্ডা দিয়ে ভোরের দিকেই সব ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ল,৷ মীরা তো নিহাল কে মেহরাব ভেবে আস্টেপিস্টে জরিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে আর নেহাল ও মীরাকে মাহি ভেবে জরিয়ে ধরে রেখে ঘুমাচ্ছে। মেঘলা মেঘ এর হাতের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে আর মেঘ এক হাতে মেঘলাকে আগলে রেখেছে।
ইশিতা একটু দূরেই ঘুমিয়ে আছে হাতে ফোন নিয়ে,,, আর মাহি তো মেহরাব এর বুকে একদম চার হাত পা তুলে দিয়ে আরামে ঘুমিয়ে আছে,, আর মেহরাব শুধু অপলক দৃষ্টিতে তার মাহিকেই দেখে যাচ্ছে যেনো মনে হচ্ছে চোখের পলক ফেললেই মাহি কোথাও হারিয়ে যাবে।
সকাল ৮ টার দিকে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মাহিরা বেরিয়ে পড়ল যদিও ভেবেছিলো আরো সকালে বেরোবে তবুও গোছগাছ করতে করতে আবার সবার থেকে বিদায় নিতে গিয়েই দেরি হয়ে গেলো। সারা রাস্তা মাহি মেঘলা মেঘ নেহাল মীরা আর মেহরাব ঘুমাতে ঘুমাতে এসেছে আর গাড়ি ড্রাইভার ড্রাইভ করেছে নেহাল এর সাথে ড্রাইভার ও এসেছিলো।
৭দিন পর,,
ঢাকা থেকে ফিরার আজ সাতদিন হয়ে গেছে,, মেঘলা আপু ওর শশুর বাড়ি আমিও গ্রাম থেকে এসেই পড়াশুনা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে গেছি,কেননা আর কিছুদিন পরেই আমার ইয়ার চেঞ্জ পরিক্ষা তাই,,, কিন্তু একটা কথা এই সাত দিনে মেহরাব ভাই এর টিকিটুকুও দেখিনি,, কোথায় ওনি বাড়ি আছে তো?? নাকি অসুস্থ,, না না অসুস্থ হলে তো আমি জানতে পারতাম,, ওনি তো আমায় রোজ অফিস যাওয়ার আগে কলেজে পৌঁছে দিতো,, হঠাৎ করে ওনার কি হলো কি গিয়ে একবার দেখবো নাকি?? রুমে বসে এসব কথা ভাবছিলো মাহি তারপর বিছানা থেকে নেমে উড়না টা নিয়ে গায়ে ভালোমতো জরিয়ে বাইরে বেরিয়ে নিজের মা কে বলল।
মা আমি বড় মামাদের বাসায় যাচ্ছি বিকেলেই চলে আসবো,,।
আচ্ছা শোন তুই যখন ওবাড়ি যাচ্ছিসই তাহলে এটা নিয়ে যা,,, আজকে তো ইলিশ মাছ রান্না করেছি মেহরাব তো আবার এটা খেতে খুব পছন্দ করে ধর এবার যা (এই বলে মাহির মা আবার রান্না করে চলে গেলো)
মাহিও টিফিন বাটিটা হাতে নিয়ে চলল,, আজকে শুক্রবার তাই মাহি বাড়িতে নয়ত এখন তো ও কলেজে থাকত।
বাটিটা হাতে নিয়ে মেহরাবদের বাড়ির দিকে গেলো,, বাইরে থেকে কলিং বেল টা বাজাতেই রুপালি দরজা খুলে দিলো।
কিরে এতো সকাল সকাল আয় ভিতরে (মিষ্টি হেসে মাহিকে নিয়ে ভিতরে গিয়ে বলল)
আর বলো না মামি মা আজকে ইলিশ মাছ রান্না করেছে তাই ভাইয়ার জন্য পাঠিয়ে দিলো। এই নাও।
সে নবাব তো এখনো ঘুম থেকেই উঠেনি সকাল ১০ টা বাজতে চলল এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছে কত ডাকলাম উঠলো না যাতো মা তুই গিয়ে ডেকে নিয়ে আয়।
আমি??
হ্যাঁ তুই,, আমি ততক্ষণে টেবিলে খাবার দিই যা যা।। এই বলে রুপালি রান্না ঘরে চলে গেলো,, আমি আর কি করবো আমিও গুটিগুটি পায়ে ওনার রুমের দিকে গেলাম,, আজকে তো ওনার খবর করে ছাড়বো এতো দিন কোনো যোগাযোগ করেনি কেনো আর কি এমন রাজকার্য করছিলো যে আমার সাথে কথাও বলেনি।
এসব ভাবতে ভাবতে মাহি মেহরাব এর রুমে পৌছালো,, পুরো রুম অন্ধকার হালকা ডিম লাইট জলছে জানালা তো সব গুলোই অফ এই রুমের ভিতর থাকলে বোঝাই যাবেনা এখন দিন নাকি রাত,,, বিছানায় উদম গায়ে উপুড় হয়ে কমর পযন্ত কাথা নিয়ে ঘুমিয়ে আছে মেহরাব ভাই,, বাবা গো এত বেশি কেউ এসির পাওয়ার দেই?? আমি তো মনে হয় ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি এনি এমন করে আছে কীভাবে,,,
আমি আস্তে করে ওনার কানের কাছে গিয়ে জোরে ওনাকে ডেকে উঠলাম।
আমার ডাক শুনে ওনি ধরফর করে উঠে বসল, চোখগুলো টকটকে লাল চুলগুলো আগুছালো,, আমি তো ওনার এমন ভয় পাওয়া দেখে হেসে কুটিকুটি হচ্ছি,,
কি ভয় পেয়েছেন?? এখন বলেন তো এতোদিন কই ছিলেন কোনো খবর নেই, আর আমার প্রশ্নের উত্তর এর কি হলো??
ওনি রেগে চোখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে ধমকে বললেন,, আমি তো আর তোর মতো সারাদিন শুয়ে বসে খাই না আমার অনেক কাজ থাকে,, আর এখন একদম বিরক্ত করবি না,, সব সময় শুধু কানেন কাছে প্যান প্যান করে,,, একেবারে বিরক্ত করে মারে যত্তসব ঝামেলা,, এখনো এখানে সং এর মতো দাড়িয়ে না থেকে বেরিয়ে যা গেট আউট (জোরে চিৎকার করে বলল)
ওনার চিৎকারে আমি কেঁপে উঠলাম চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু জল জমতে শুরু করেছে,, কি এমন করলাম যে ওনি আমায় এভাবে বলল ঠিক আছে আর আসবো না কখনোই আসবো না ওনার কাছে।(কথাগুলো মনে মনে বলে) তারপর আমি ওনার রুম থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসলাম।
চলবে?