#ভালোবাসি_বুঝে_নাও🍁🍁
#পর্ব_১৭
#সুমাইয়া_সুলতানা _সুমী(writer)
.
দুপুরের কড়া রোদ চোখে এসে পড়ায় ঘুম ভেঙে গেলো আমার,,সকালে মেহরাব ভাইদের বাসা থেকে এসে রুমে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমায় গেছি নিজেই জানি না,,, মায়ের ডাকে হুস ফিরল।
মাহি এই মাহি দরজা খোল সেই যে সকালে ওবাড়ি থেকে এসে দরজা আটকে রেখেছিস খোলার নাম গন্ধ ও নেই,, যোহোরের আযান সে কখন দিয়েছে নামায কালাম কি একে বারেই ছেড়ে দিয়েছিস?? (মা আরো কিছুক্ষন বক বক করে আমাকে আরো কিছু কথা বলে চলে গেলো আমি ও মায়ের কথা শুনে বিছানা থেকে উঠে বসে গোসল এ চলে গেলাম)
গোসল সেরে এসে চুলগুলো মুছে যোহোরের নামাজ টা পড়ে নিলাম,, মাথাটা ভিষণ বেথ্যা করছে হয়ত অনেকক্ষণ কান্না করার কারনে,, কান্না করার কথায় মনে পড়ল আজকে মেহরাব ভাই এর আমার সাথে করা ব্যবহার এর কথা,, আর কখনো কথা বলবো না,, সামনেও যাবো না আর,,,, উফফ ভীষণ মাথ্যা ধরেছে তাই রুম থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরে গেলাম দেখলাম আম্মু রান্না করছে।
সেকি আম্মু তুমি এই দুপুর বেলা আবার রান্না করছো কেনো??তাও এই গরমে।
এমনি আমার ইচ্ছে করছে তাই।
বুঝলাম মা ভিষণ রেগে আছে, একেতে গরম তারপর আবার দুপুর বেলা এসময় সবারি কম বেশি মেজাজ খারাপ থাকে,, তাই আমি আর মা কে চা বানানোর কথা বললাম না,, নিজেই অন্য চুলায় কোনো রকমে পানি গরম করে চা টা বানিয়ে কাপে ঢেলে নিয়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলাম।
উফফ কি গরম বাবা মনে হচ্ছে যেনো আমার হাতই পুরে যাবে (ফু দিতে দিতে বললাম,, তখনি সামনে থেকে কেউ একজন বলে উঠল)
যখন গরম তা খেতেই পারিস না তখন খেতে যাস কেনো?? আর খালি পেটে চা খেতে হয় না,, পেট বেথ্যা করবে (মেহরাব খেতে খেতে বলল)
কথা শুনে আমি সামনে তাকিয়ে দেখি আমার সামনের চেয়ারে বসে মেহরাব ভাই ইলিশ মাছ দিয়ে খুব মজা করেই ভাত খাচ্ছে,, আজব আমি তো এখান দিয়েই রান্না ঘরে গেলাম তবুও ওনাকে দেখলাম না?? আবার চা নিয়ে এখানে এসে বসলাম তবুও ওনাকে দেখলাম না,, আর দেখবোই বা কীভাবে আমার পুরো নজর তো ছিলো চায়ের উপর,,,কিন্তু ওনি যানলো কীভাবে যে আমি কিছু খাইনি?? (মনে মনে বললাম)
আমার দিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকিস না আমার পেট খারাপ করবে,, (খেতে খেতে বলল মেহরাব)
কি এত বড় অপমান,, ওনাকে তো,, না আমি কিছু বলবো না,, আরে আমি তো ওনার সাথে কথাই বলবো না আর,,, তাই আমি আমার চায়ের দিকে নজর দিলাম আস্তে আস্তে ফু দিতে লাগলাম।
আমি বললাম তো খালি পেটে চা খেতে হয় না,, তবুও খাচ্ছিস কেনো??
ওনি আমায় নিষেধ করার কে?? ওনি যখন আমায় নিষেধ করেছে তখন আরো বেশি করে খাবো (মনে মনে বলে) ওই গরম চায়েই চুমুক দিলাম আর তারপর যা হওয়ার তাই হলো গেলো ঠোঁট আর জিব্বাহ গেলো পুরে,, ওনার উপর এতোটাই রাগ করেছি যে আমি ভুলেই গিছিলাম চা টা গরম,,,
আআআআআআআ পানি (চেচিয়ে বললাম)
আমার কথা না শুনলে এমনি হয় আগেই বলেছিলাম (পানি দিতে দিতে বলল মেহরাব)
নিবো না পানি ওনার থেকে আমি,,, আমি পানি না নিয়ে ওখান থেকে উঠে এসে নিজের রুমে চলে গেলাম তারপর ফ্যান টা ছেড়ে দিয়ে তারনিচে হা করে বসে থাকলাম,,, ইস কত জালা করছে,,, আমি তো চা খেতেই পারি না গরম বলে,, আজকে মাথা বেথ্যা করছে বলে তাই একটু খেতে গেলাম,, সেখানেও ওনি এসে ঝামেলা পাকাই দিলো,, ওরে আমার ঠোঁট আর জিব্বা সব পুরে গেছে (কাঁদছি আর কথাগুলো ভাবছি তখনি রুমে মেহরাব ভাই আসলো)
পানিটা খেয়ে নিলে এখন এখানে এসে এভাবে হা করে বসে থাকতে হতো না (বিছানায় বসে বলল)
আমি ওনার আসা দেখে ঠিকঠাক হয়ে বিছানায় বসে পড়লাম,,, দেখছেও যে আমি ওনার সাথে কথা বলছি না তবুও গায়ে পড়ে কথা বলতে এসেছে যত্তসব,, বকা দেওয়ার সময় মনে ছিলো না??(কথাগুলো মনে মনে বলে আমি বিছানায় পা ঝুলিয়ে দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে তাকলাম)
অনেক্ক্ষণ হয়ে গেছে মেহরাব ভাই এর কোনো সাড়া শব্দ নেই তাই আমি আস্তে করে ওনি যেখানে বসে ছিলো সেদিকে তাকালাম,, এমা ওনি তো নেই হঠাৎ করে কোথায় উধাও হয়ে গেলো,, তখনি কোলের উপরে কারো ছোঁয়া পেলাম দেখলাম ওনি নিচে বসে বিছানার দুপাশে হাত রেখে আমার কোলের উপরে মাথা দিয়ে বসে আছে।
সরিরে সকালে ওভাবে বলার জন্য,, আমি জানি আমি ভুল করেছি তখনি ওভাবে তোকে কথাগুলো বলা ঠিক হয়নি,, কি করবো বল গ্রাম থেকে আসার পর এতো কাজের চাপ যে ঠিক মতো ঘুমাতেও পারিনি,,, অফিসের টেবিলে ফাইল এর উপর ফাইল জমা হয়ে ছিলো
,(লেখিকা;সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী)
,, সারাদিন তো অফিসে কাজ করতে হতোই আবার রাত জেগে ফাইল গুলো দেখতে হতো,,,এর মাঝে আমি একবার এখানে এসেছিলাম তোকে দেখতে কিন্তু তখন তুই কলেজে ছিলি তাই দেখা হয়নি,,, আজকে শুক্রবার ছিলো তাই সারারাত কাজ করে ভোরের দিকেই ঘুমিয়ে ছিলাম,, কেবলি ঘুমিয়েছি আর তখনি তুই গিয়ে ওমন করে চিৎকার করে ডেকে উঠলি আমি তো প্রথমে ভয়ই পেয়ে গিছিলাম তাই ওমন ধরফর করে উঠে বসলাম,, তারপর একে তো কাঁচা ঘুম তারপর তুই ওভাবে ডাকায় ভয় পেয়ে গিছিলাম তাই ওভাবে বলে ফেলেছি,,,,তাই জুম্মার নামাযটা পড়েই ওমনি চলে এসেছি খাইওনি তারপর এখানে এসে খালাম, জানি তুই অনেক রেগে আছিস আমার উপর সেই জন্যই আগে খেয়ে শক্তি বানিয়ে তারপর আসলাম,,,, সরি প্লিজ আমায় মাফ করে দে(এটা বলে ওনি আমার কোলের মধ্যে মুখ ডুবালেন)
সত্যি ওনাকে দেখে কেমন আগোছালো লাগছে চুলগুলো এলোমেলো দাড়িও একটু বড় বড় হয়েছে,, তবে দাড়ি বড় হওয়াই আরো বেশি সুন্দর লাগছে,, ওনি সব সময় দাড়ি ছোট ছোট করে কেটে রাখেন কখনো ক্লিন সেভ করেন না,,,
(আপনাদের লেখিকারও দাড়ি অনেক ভালোলাগে🙈🙈🙈)
আমার ও বোঝা উচিত ছিলো ওনাকে,, ওনি হয়ত কোনো কাজের মধো আছে নয়ত ওনি তো কখনো আমার সাথে ওমন করে না, তাই আমি বললাম,,
আচ্ছা ঠিক আছে,, আর শুনেন আমিও সরি (মুখ ফুলায়ে বললাম)
ওনি আমার কোল থেকে মুখ উঠায়ে আমার গাল দুটো টেনে দিয়ে বলল।
ওলে আমাল অবুঝ পরিটা লে গুলুমুলো।
এই চেহারায় হাত দেবেন না,, আপনার হাতে জীবাণু থাকতে পারে (ভাব নিয়ে বললাম)
তাই না?? ফুপি তো বললো আপনি কিছু খাননি,, এখানে চুপটি করে বসেন আমি খাবার আনছি (এই বলে ওনি চলে গেলো)
আমি আমার হাত দিয়ে আমার গাল দুটো মুছে নিলাম,,, ওনি শুধু আমার গাল ধরে টানাটানি করে যদি ছিড়ে যায় তখন?? আর গাল না থাকলে আমায় কেমন দেখাবে এসব ভাবতে ভাবতেই ওনি খাবার নিয়ে চলে আসলো।
তারপর ওনি নিজের হাতে ভাত মাখায়ে মাছ থেকে কাটা বেছে আমায় খাইয়ে দিলেন।
আআআআ ঝাল লাগছে পানি দেন (আমি চেঁচিয়ে বললাম)
কই খাবারে তো ওতোটাও ঝাল হয়নি তাহলে তোর ঝাল লাগছে কেনো?? ও বুঝলাম আপনি তো আবার জিব্বা পুরায়ে বসে আছেন তাহলে ঝাল তো লাগবেই(ওনি পানি দিতে দিতে কথাগুলো বলল)
আমি পানিটা খেয়ে বললাম,, এতো বেশি কথা না বলে খাইয়ে দিনতো অনেক ক্ষিধা লেগেছে আমার,
তারপর ওনি আমায় সুন্দর করে ভাতগুলো মেখে খাইয়ে দিতে লাগলেন,,, আর আমি এক গাল করে ভাত আর একটু করে পানি খাচ্ছিলাম,, এমন করেই পুরো ভাতগুলো ওনি আমায় খাইয়ে দিলেন তারপর মুখটা মুছে দিয়ে নিজের হাতটা ধুয়ে আবারো নিচে বসে বললেন।
শোন তোকে কিছু বলার ছিলো।
হুম বলেন।
আমাকে আজকে বিকালে অফিসের কিছু কাজের জন্য চট্টগ্রাম যেতে হবে।
কদিনের জন্য???
এই সপ্তাহ খানিকের জন্য।
যেতেই হবে(মুখ ফুলিয়ে বললাম)
ওনি মুচকি হেসে বললো,, হুম যেতেই হবে,, তবে ওখান থেকে এসে আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
সত্যি?? কি সারপ্রাইজ বলেন বলেন (আমি খুশিতে গদগদ হয়ে বললাম)
উমম না বলে দিলে কি আর সারপ্রাইজ থাকে??
আপনি কেনো যাবেন?? আপনি না গিয়ে অন্য কাউকে পাঠিয়ে দিলে হয় না?? আবার ১ সপ্তাহ আপনাকে দেখতে পাবো না।
ওনি আমার কথাশুনে মুচকি হেসে মেঝে থেকে উঠে আমার সামনে দাড়িয়ে দুহাতে আমার মুখটা ধরে কপালে চুমো খেয়ে বললেন।
“””অপেক্ষা হলো শুদ্ধতম ভালোবাসার একটি চিন্হ।সবাই ভালোবাসি বলতে পারে কিন্ত সবাই অপেক্ষা করে সেই ভালোবাসা প্রমাণ করতে পারে না”” “”
চলবে,,,??