#ভালোবাসি_বুঝে_নাও🍁🍁
#পর্ব_১৮
#সুমাইয়া_সুলতানা _সুমী(writer)
.
বারান্দার পাশের গাছটাই সেই কখন থেকে কাক টা এক ধারে কর্কশ গলায় কা কা করে ডেকেই চলেছে, ধুর ভালোলাগে না,, এখানে কাকটা না ডেকে যদি ককিল ডাকতো তবুও মনটা ভালো হয়ে যেতো।
মেহরাব ভাই চলে যাওয়ার আজ চার দিন হয়ে গেছে,, ওনি যাওয়ার পর কোনো কিছুই ভালো লাগে না সব কিছু কেমন যেনো বিষাদময় লাগে,, (বারান্দায় দাড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছিলাম তখনি মা ডাক দিলো)
কিরে কলেজে কি যাবি না,, বেলা কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে??,, কলেজ টা কি তোর বাপের?? যে যখন ইচ্ছে তখন যাবি (ডাইনিং টেবিল থেকে বলল)
কি আজব কথা বলো মা,, কলেজটা আমার বাপের হলে তো আমি আর কলেজেই যেতাম না,, সারাদিন শুধু শুয়ে বসে থাকতাম৷ কেননা কলেজটা আমার বাপের তাই (টেবিলে বসতে বসতে বলল মাহি)
আপু শুধু কলেজ কেনো স্কুল টাও যদি আমার বাপের হতো তাহলে আমি স্কুলে তো যেতামই না আর যাও যেতাম সেখানে গিয়ে সবার উপর ছড়ি ঘুরাতাম কেননা স্কুলটা আমার বাপের (খেতে খেতে বলল মনির)
ওদিকে মাহি আর মনির এর কথা শুনে মাহির বাবার যেনো গলায় খাবার আটকে যাওয়ার উপক্রম যেমন মা তার তেমন ছেলে মেয়ে,,, তাই একটু গম্ভীর গলায় বলল।
এতো কথা না বলে তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও,,, ১০ টা বাজতে চলল। যেতে হবে তো।
বাবার তাড়াতে দুজন চুপ করে যলদি যলদি খাবার শেষ করে বেড়িয়ে পড়ল।
কলেজে,,,,,
কিরে আমাদের চটপটে মাহি রানির কি হয়েছে?? কদিন ধরেই দেখছি কেমন চুপচাপ (শিলা)
আরে মনে হয় ওর প্রান প্রিয় মেহরাব ভাইয়ের সাথে কিছু হয়েচে তাই না(সাথী)
হুট তোরা চুপ থাক তো,, ওনার সাথে আমার আবার কী হবে?? আর ওনিতো আজ চারদিন বাড়িতেই নেই কাজের জন্য বাইরে গেছে (মুখ গুমড়া করে বলল মাহি)
মাহির কথা শুনে শিলা আর সাথী দুজনে একসাথে বলল।
অ! এই জন্যই বুঝি মেডামের মন খারাপ তাই তো??
না তেমন কিছু না, এখন চল ক্লাসে যায়।
তারপর সবাই ক্লাসে চলে গেলো।
দুপুরে ক্লাস ছুটির পর মাহি কলেজ এর গেট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে রিকশার জন্য দাঁড়াতেই রাস্তার উপারে দেখলো দুজন ছেলে মেয়ে সমানে ঝগড়া করছে তাও আবার এই রোদের মধ্যে।
কিরে ওনারা কি পাগল নাকি রাস্তার মধ্যে দাড়িয়ে এভাবে ঝগড়া করছে কেনো??(শিলা)
পাগল ছাড়া আর কি নয়ত কেউ এভাবে এতো গরমে আর রোদের মধ্যে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ঝগড়া করে??(সাথী)
আরে আমি তো ওনাদের চিনি,,, (মাহি পাশ থেকে বলল)
তুই চিনিস?? কে ওনারা??
আরে ওই মেয়েটা তো মেহরাব ভাই এর খালাত বোন মীরা আর ওই যে ছেলেটা আমার মেঘলা আপুর দেবর,,, কিন্তু ওনারা এভাবে এখানে দাড়িয়ে ঝগড়া করছে কেনো।
ওদিকে,,,,,
আপনি ইচ্ছে করে এমন করেছেন যাতে আমি পড়ে যায়,,, এই আপনি এতো খারাপ কেনো বলেন তো?? সেই গ্রাম থেকে আমার পিছন লেগেছেন আবার এখন শহরে আসার পরও আপনি,, (মীরা)
হুম?? আমার খেয়েদেয়ে কাজ নেই আমি আপনার মতো ময়দা সুন্দরীর পিছু নেবো,, শুনুন আমি না ইচ্ছে করে করিনি ওকে??(লেখিকা;সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী)
সামনে থেকে গাড়ি আসছিলো তাই আমি গাড়িটা সাইট করতে যাচ্ছিলাম আর তখনি আপনি নাচতে নাচতে আমার গাড়ির সামনে চলে আসলেন যত্তসব (নেহাল)
আসোলে কথাটা হলো,, মীরার ভার্সিটী ছুটির পর ও গাড়ি পাচ্ছিলো না তাই রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলো আর তখনি নেহাল তার বাইক নিয়ে একদম মীরার সামনে এসে থামালো একটুর জন্য এক্সিডেন্ট হয়নি,, আর তারপর থেকেই ঝগড়া শুরু।
এই চলতো দেখি ওখানে কি হচ্ছে(এই বলে মাহি আর ওর বান্ধবীরা মিলে নেহালদের কাছে গেলো।
আমার কি মনে হয় জানেন?? আপনি মনে হয় সব কিছুর সাথেই ঝগড়া করেন, যেমন মাটি,, পানি,, বাতাস,, আর একটু ঝগড়া না করলেই আপনার গলা চুলকায় তার জন্যই এভাবে আমার সাথে ঝগড়া করেন (নেহাল)
মীরা রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাহি বলল,,
আরে মিরা আপু আপনি,, আর এখানে কি হয়েছে??
এই যে চলে আসলো আরেকজন নেকামো করতে যত্তসব (মীরা মনে মনে বলল)
আরে মাহি যে তুমি এখানে??(নেহাল)
আমি তো কলেজে এসেছিলাম ভাইয়া।
আমি বুঝি না এই মেয়ের মধ্যে কি আছে,, মেহরাব ও এই মেয়ের জন্য পাগল আর এখন এই নেহাল না বেহাল,ও,,,, ওকে দেখলেই মুখ দিয়ে যেনো মধু ঝড়ে আর আমার বেলায় তিতা করলা (মনে মনে বলল মীরা)
মাহি তোমাকে ভাবি যেতে বলেছে,,, যাবে কিন্তু,, ভাবি তো সব সময় তোমার কথা বলে।
জি ভাইয়া যাবো,, এখন বলেন তো কি হয়েছে?? আপনারা এখানে দাড়িয়ে কি করছেন??
আর বলো না তোমার এই ময়দা সুন্দরী আপু গায়ে পড়ে আমার সাথে ঝগড়া করতে আসে শুধু। (নেহাল)
দেখুন মিস্টার বেহাল আমি মোটেও আপনার সাথে গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে আসি না, আমার রুচি ওতোটাও খারাপ নয় (মীরা)
হুম?? জানি জানি কার রুচি কেমন।
ঘোড়ার ডিম জানেন এখন সরুন তো আমার সামনে থেকে,, এমন সংয়ের মতো দাড়িয়ে না থেকে (তারপর মীরা ওখান থেকে চলে গেলো)
তা মাহি তুমি তো এখন বাড়ি যাবে চলো তোমাকে পৌঁছে দিই??(নেহাল)
না ভাইয়া আমি একাই চলে যেতে পারবো,,, আচ্ছা ভাইয়া আমরা আসি ওকে,, এই চল।
তারপর মাহীরাও ওখান থেকে চলে গেলো।
তিনদিন পর,,,,,
আজকে আমি অনেক খুশি কেননা আজকে মেহরাব ভাই আসবে,,, উফফ কত্ত দিন পর ওনাকে দেখবো,,, এটা ভাবতেই মনের ভিতর কেমন খুশি খুশি লাগছে।
মাহি আমি তোর মামাদের বাসায় যাবো তুই যদি যাস তাহলে তৈরি হয়ে নে (বাইরে থেকে বলল মাহির মা)
সেকি মা তুমি হঠাৎ মামাদের বাসায় যাবে কেনো?? কিছু কি হয়েছে??
হুম তোর মামির শরীল নাকি খারাপ পেশার টা বেড়েছে,, তাই যাবো দেখতে, আবার আজকে নাকি মেহরাব ও আসবে তাই যাই ছেলেটাকে দেখে আসবো,, তুই যাবি নাকি?? যদি যাস তাহলে জামাটা পালটে নে,, আমি হাতের কাজটা সেরেই যাবো।
হ্যাঁ মা আমি যাবো তুমি দাড়াও আমি এখনি তৈরি হয়ে আসছি।
আমাকে তো যেতেই হতো,, ওমমম কি পরে যে যাই আইডিয়া এই জামাটা পড়ে যাবো ওনার তো এই জামাটা অনেক পছন্দ, আর ওনার দেওয়া চুড়ি গুলোও পরবো,, আমার অনেক সখ কানে বড় বড় ঝুমকো ঝুলাবো কিন্তু ওনার কড়া আদেশ,, কানে ওতো বড় বড় দুল পরার কোনো দরকার নেই শেষে দেখা যাবে কান কেটে পরে গেছে তখন??
তাই দুলটা বাদে সব কিছু পড়ে নিয়ে আম্মুর সাথে বেরিয়ে গেলাম,, আম্মু ঘরে দরজা দিয়ে আমায় নিয়ে যেতে লাগলো, বাড়ি এখন কেউ নেই আব্বু অফিসে আর মনির তার রুমে ঘুমায়। তাই ওকে রেখেই আসলাম।
হাটতে হাটতে পৌঁছে গেলাম আমার গন্তব্যে মেন দরজা খোলায় ছিলো,, তাই আর কলিং বেল বাজানোর দরকার পরল না,,, ভিতরে যেতেই দেখলাম ডয়িং রুমে একটা সোফায় মামি বসে আছে আর তার পাশের সোফায় মেহরাব ভাই আর মামির পাশের সোফায় একটা মেয়ে বসে আছে,,, শাড়ি পড়া, কেমন যেনো লাজুক দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে,,
আমরা ভিতরে যেতেই আমি শুনতে পেলাম,, মেহরাব ভাই বলল,, হ্যাঁ বিয়ে করে ফেলেছি,, এটা বলেই ওই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল।
কথাটা কানে যেতেই মহুর্তেই যেনো আমার সব কিছু থমকে গেলো তাহলে কি মেহরাব ভাই বিয়ে করে ফেলেছে?? ওই মেয়েটা কি তাহলে ওনার বউ?? তাহলে কি ওনি আমায় এই সারপ্রাইজই দিতে চেয়েছিলো??(মনে মনে কথা গুলো ভেবেই আমার চোখের কোনে জল চলে এলো)
চলবে,,,,?