ভিনদেশি তারা পর্ব-২১

0
1924

#ভিনদেশি_তারা
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-২১

৬২.
অন্ধকারে লোকটা এমনভাবে আছে, যে আমি ভয় পেয়ে গেছি। হুট করে কিছুই মাথায় আসছেনা। ভয়ে জমে গেলাম। তাও অদৃশ্য শক্তির টানে সেদিকে তাকিয়েই রইলাম। কথায় আছেনা, নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেশি। আপনি যতোই চাইবেন আকর্ষণ সরাতে, ততো গাঢ়ভাবেই নিষিদ্ধ জিনিস আপনাকে জড়িয়ে ধরবে। আমারও ঠিক এই অবস্থা। রাত দেড়টায় ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে আলোয় লোকটা তার হ্যাটটা সরাতেই গালভর্তি দাড়ি-গোঁফ মিশ্রিত এক লোকের চেহারা ভেসে উঠলো। ধবধবে ফর্সা লোকটাকে বড্ড চেনা চেনা লাগলেও কিছুতেই মনে করতে পারছিনা কে সে।

দরজায় মৃদু টোকা পড়লো। ভীতিকর পরিবেশ থেকে বাঁচার জন্যই আমি তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিলাম। দাদু লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। ধমকি দেওয়া গলায় বললেন, ‘ঘুমাচ্ছিলি নাকি?’

‘ না মানে ইয়ে!’

‘ ছেলেটাকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিস কেন?’

আমি বড্ড অবাক হয়ে বললাম, ‘কোন ছেলে?’

‘ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে যে।’

‘ দাদু তোমার মাথা খারাপ? কোথাকার কোন পাগল মাঝরাতে রাস্তায় শুয়ে আছে কে জানে!’

‘ নিয়ে আয় গিয়ে।’

‘ পাগল হলা নাকি দাদু? কীসব বলছো।’

‘ থাপড়াইয়া দাঁত ফালাবো তোর।’

‘ ঘুম থেকে ওঠে তোমার মাথা ঠিক নাই, যাও গিয়ে ঘুমাও।’

‘ তুই গিয়ে বাঁদরটাকে নিয়ে আয়। বাঁদরামি করবে ভালো কথা, রাস্তায় শুয়ে থাকার লজিকটা কী? পইপই করে বলে দিলাম বউয়ের সাথেই বাঁদরামি করিস, শুনলোই না। দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ-ও মাসের বিরহ পালন করছে রাস্তায় শুয়ে। কী রে! আমেরিকান শেতাঙ্গদের কী মিনিমাম সেন্সটুকুও নাই?’

চোখ দুটো রসগোল্লা করে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী বলছো দাদু?’

‘ আরে সুন্দরী, চিরকুমারী! তোমার কুমারবাবু আইসা পড়ছে। যাও নিয়ে আসো।’

আমি আমতাআমতা করে বললাম, ‘ক্ক…ক্লেভভভ?’

‘ হু নাতনি।’

আমি অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে লোকটার মুখাবয়ব মনে মনে আঁকিবুঁকি করলাম। মাই গড! এটা তো সত্যিই ক্লেভ! ভাবতেই মাথাটা ৩৬০ ডিগ্রি কোণে ঘুরে গেলো আর আমি কয়েকপা পিছিয়ে গেলাম। ফলাফল দরজায় বাড়ি খেয়ে মাথা আলুর মতো ফুলে রক্ত জমাট হয়ে গেলো। তাতেও আমার কোনো অনুভূতি হচ্ছেনা, টের পাচ্ছিনা। দাদু দেখেও কিছু বললেন না। স্মিত হাসলেন। জোরে চেঁচিয়ে কিছু একটা বলতে নিলেই দাদু আমায় চুপ করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ চুপ। সবাই ঘুমাচ্ছে, আওয়াজ করবিনা।’

আমি ফিসফিস করে বললাম, ‘তাহলে?’

‘ তুই গিয়ে ওকে নিয়ে আয়। বেচারা কিছু চিনেনা, জানেনা। তোর বিরহে দু’রাত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। কাল তো আমি মন্টুর বাড়ি রেখে এসেছিলাম জোর করে। গায়ে হলুদের সময় একবার এসেছিলো বাসায়, তাও লুকিয়ে চুরিয়ে। আজ তো আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। মন্টুর বাড়িতে অনেক মশা, কামড়ে কামড়ে লাল বানিয়ে দিয়েছে। তাই আমিই ফোন করে এখানে আসতে বললাম।’

দাদুর কথা শুনে হতভম্ব। বুড়ো বয়সে এই চিকন বুদ্ধি নিয়ে ঘুরে কীভাবে? কিন্তু দাদু ওকে আসতে বলেছে…মানে! দাদু নিজেই ওকে বাংলাদেশে আসতে বলেছে নাকি? ওর খোঁজ পেলোই কোথায় আর জানলোই কীভাবে যে ক্লেভ আমায় পছন্দ করে? ও এম জি!

‘ এই হতচ্ছাড়ি যা না।’

‘ আমি যেতে পারবোনা।’

আমি আসলে যেতে চাচ্ছিনা কারণ ওর সামনে দাঁড়ানোর মুখ বা সাহস আমার নেই। ইচ্ছে করছে মাটি ফাটুক আমি ঢুকে যাই। চোরের মতো ওকে কিছু না জানিয়ে পালিয়ে এসে আমি যে কত বড় ভুল করেছি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো যে ছেলে টইয়া ভূতের মতো পৃথিবী ঘুরে বেড়ায় সে বাংলাদেশেও আসতে পারবে ইভেন আমার মতো চুনোপুঁটিসহ আরও ডজনখানিক চুনোপুঁটি ও ধরে খেয়ে নিতে পারবে। ওফফ চিত্রা..চিত্রারে..তুই শেষ। এই মাতাল টইয়া ভূত এবার বাগে পেলো বলে!

আর এমনিতেও ক্লেভ ভীষণ রাগী। মারোলা বলেছিলো কে যেন একবার ওর সাথে কথার খেলাপ মানে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো, সেই ছেলেকে ও এমন প্যাদানি দিয়েছিলো যে ছেলেটার জ্বর ওঠে, হাতপায়ে ফোস্কা পড়ে গিয়েছিলো। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুদিনের মানেই ফিনিশ!

‘ যাবিনা হতচ্ছাড়ি?’

‘ না দাদ..দু!’

দাদু রাগে গজগজ করতে করতে পাঞ্জাবীটা গায়ে চড়িয়ে ধীরেধীরে দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলেন। আমাকে আর পায় কে! ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে, জানালা বন্ধ করে লেপ মুড়ি দিয়ে কোলবালিশ জাপ্টে ধরে পড়ে রইলাম। অতো ভয় জীবনেও পাইনি। ধুকধকানিতে হার্ট মনে হচ্ছে বেরিয়ে আসবে। গলা শুকিয়ে কাঠ!

৬৩.
কান খাড়া করে শুনতে পেলাম দাদু ক্লেভকে বাসার ভেতরে নিয়ে এসে আস্তে করে দরজা লাগাচ্ছে। আমার ঘরে দু’একবার টোকা পড়লো, আমি সাড়া দিলাম না। নিঃশ্বাস আটকে শুয়ে রইলাম। মনে হচ্ছিলো এক্ষুনি দরজা ভেঙ্গে ক্লেভ ঢুকে পড়বে আর কাঁচা গিলে নেবে। কিন্তু তা হলোনা। সারারাত এমন নির্ঘুম কাটিয়ে দিলাম। আর কোনো শব্দ বা কথা কানে এলো না। দাদুর বুদ্ধি দেখে অবাক। ফজরের আজান পড়ার সাথে সাথে অযু করে নামাজ পড়ে নিলাম, দু’রাকাত নফল নামাজও পড়লাম। দীর্ঘ মোনাজাত শেষ করে ভাবতে লাগলাম সকালে বাসার সবাই ওকে দেখলে কী ভাববে! যাই ভাবুক ক্লেভের সামনে পড়লে আমি কী করবো বা বলবো সেটাই ভেবে পাচ্ছিনা। চট করে আইডিয়া এলো। অফিসে চলে যাবো। ছুটি নিয়েছিলাম পাঁচদিনের, পরশু থেকে অফিস জয়েন করার কথা। কিন্তু এখন তা করা চলবেনা। সকালে যাতে ক্লেভের মুখোমুখি না হতে হয় সেজন্য আমি সকাল ছয়টায় অফিসের জন্য রেডি হয়ে বাসা থেকে চুপিচুপি বেরিয়ে এলাম। কিন্তু এতো সকালে তো অফিস না, তাই সুফিয়ার বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলাম। ও আমার অফিস কলিগ।

ওকে একটা ফোন করে জানিয়ে দিলাম। বেশ অবাকই হলো। ওর বাসায় পৌঁছে একটু ঘুমিয়ে নিলাম, সাথে সকালের নাশতাও খেলাম। উত্তেজনায় বেশিকিছু খেতে পারলাম না। পাউরুটিতে জ্যাম লাগাতে গিয়ে পুরোটা নিচে পড়ে গেলো। কাপ থেকে চা ছলকে পুড়ে গেলো হাত। নুডুলস খেতে গিয়ে কাঁটা চামচ দিয়ে নিজের হাতেই গুঁতো মেরে কঁকিয়ে উঠলাম, সবটাই আনমনে। সুফিয়া বারবার জিজ্ঞেস করলো আমি এমন করছি কেন! কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলাম না। হার্টবিটের জোরালো ধুকপুকানির শব্দে আমার কান তালা লেগে যাওয়ার জোগাড়।

যাইহোক, অফিসেও তেমন মন বসাতে পারলাম না। তবুও কিছু ফাইলপত্র দেখলাম, জমানো কাজ সেরে নিলাম। দুপুরের খাবারের বিরতিতে গরম একমগ কফি খেলাম এমন সময় মোবাইপ তার হাত-পা ছুঁড়ে কাঁদতে লাগলো। বিরক্ত হয়ে রিসিভ করতেই মিতু আপুর উচ্ছ্বসিত গলা শোনা গেলো। বললো, ‘ হ্যাঁ রে চিত্রা বলছিস?’

‘ নাম্বার যেহেতু আমার, আমিই কথা বলছি।’

‘ হ্যাঁ রে শোন না আজ কী হয়েছে!’

‘ কী? তোমার বর ভেগে গেছে?’

‘ সবসময় ফাজলামো করিস।’

‘ আচ্ছা আর করবোনা।’

‘ হুম। শোন আজ বাসায় কী হলো।’

‘ শুনছি!’

‘ সকালে ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশট্রেশ হলাম। বড়কাকা, মেজকা, ছোটকাকু সবাই মর্নিংওয়াক করে ফিরেছে। দাদু পেপার পড়ছেন ড্রইংরুমে। তো মিশু আপু ঘুম থেকে ওঠে যেইনা বাথরুমে ঢুকতে যাবে তখুনি দেখে এক অতিশয় ফর্সা, লম্বা একটা ছেলে খালি গায়ে শরীর মুছতে মুছতে বাথরুম থেকে বের হচ্ছে। তা দেখে মিশু আপু ভাবলো বুঝি কোনো জিন। সেখানেই এক চিৎকার দিয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলো। চিৎকার শুনে আমরা দৌড়ে এলাম, এসে দেখি এই কান্ড। তৎক্ষনাৎ কাকুরা ছোটে এলো, দাদুকে খবর দেওয়া হলো। আর বেচারা লাল ভূতে ব্যক্কলের মতো কীসব হাবিজাবি বলতে লাগলো ইংরেজিতে। দাদু এসে বললো ও নাকি দাদুর নাতজামাই। কার জামাই সেটা আমরা এখনও পর্যন্ত বুঝিনি। বেচারাকে সবাই মিলে কী আদর আপ্যায়ন করছি রে চিত্রা! মিশু তো এখনো ভয়ে সামনেই যাচ্ছেনা। লাল ভূতে বারবার মিশুর খোঁজ নিচ্ছে।’

মিতু আপু থামলো। আমি চুপ করে শুধু শুনছি। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কিছু খেয়েছি কী ওনি?’

আপু বললো, ‘কার কথা বলছিস?’

‘ তোমার ভাষ্যমতে লাল ভূত।’

‘ না রে। সকালে সবার সাথে খেতে বসেছিলো। জানিসই বিয়ে বাড়ির বাড়তি খাবারই খাওয়া হচ্ছে। লাল ভূতকেও সেসব খেতে দেওয়া হলো। মাংসের ঝোল একটু মুখে দিতেই চিৎকার করে পুরো বাসা মাথায় তুললো। ঝালের চোটে কয়গ্লাস পানি খেয়েছে ইয়ত্তা নেই। সারা মুখ লাল হয়ে, চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। তাই আর আমরা কিছু খেতে দিইনি, সেও খেতে চায়নি।’

‘ যাও! গিয়ে মিষ্টিজাতীয় কিছু খেতে দাও। নইলে দাঁড়াও,,আমি পিৎজা অর্ডার করে দিচ্ছি। তোমাদের লাল ভূতকে খেতে দিও। সারাদিন কিছু না খেয়ে ঢং মারাইতে আসছে। বুড়া বয়সে ঢংটা গেলোনা।’

মিতু আপু যে বেশ অবাকই হয়েছে আমি বুঝতে পেরেছি। পরক্ষণেই জিজ্ঞেস করলো, ‘তুই এসব কী বলছিস? তুই চিনিস নাকি একে? কে ও? তোর সাথে সম্পর্ক আছে নাকি? আমেরিকায় থাকতে বুঝি এই ছেলের সাথে তোর পরিচয়? কিরে হ্যাঁ…শুনছিস? হ্যালো.. হ্যালো চিত্রানি?’

আমি শুধু বললাম, ‘হুম!’

আরকিছুই না বলে ফোন কেটে দিলাম। বুক থেকে বেরিয়ে এলো গাঢ় নিঃশ্বাস।

৬৪.
অফিস থেকে ফেরার পথে ক্লেভের জন্য কোল্ড ড্রিংকস, কেক, বার্গার আর কিছু ফল নিয়ে নিলাম। বেশিকিছু পাইনি এর চেয়ে। মনে মনে একবস্তা সাহস সঞ্চয় করলাম। রিকশা ভাড়া করে বাড়ির পথ ধরলাম। মনে মনে দোয়া পড়তে লাগলাম। দেখা হলে আবার না বাসার সবার সামনে চড় মেরে আমার ইজ্জত মেরে দেয়। ভয়ানক পরিস্থিতি। কলিংবেল বাজাতেই মিশু আপু দরজা খুলে দিলো। কিন্তু কিছু বললো না। ধীরে সুস্থে ফ্রেশ হয়ে কাপড় পাল্টে রান্নাঘরে গেলাম। আম্মুও স্বাভাবিক, চাচীরাও স্বাভাবিক। ভাবটা এমন যেনো কিছু হয়ইনি। তবে রান্না হচ্ছে। কষা মাংসের গন্ধে সারা বাড়ি ম ম করছে। রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে দাদুর ঘরের দিকে যেতে পা বাড়ালাম। ড্রইংরুমে চোখ পড়তেই দেখলাম, সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী পরে, টুপি মাথায় দিয়ে এক ভদ্রলোক বসে আছেন। খেয়াল করতেই পায়ের নিচের মাটি শক্ত লাগলো। ও মাই গড! এটা দেখি আমার তারাটা!মুখে দাঁড়ি-গোঁফ নেই, শেইভ করা হয়েছে। ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আস্তে আস্তে সেই চোখ রক্তবর্ণ হয়ে উঠলো। তেড়ে এলো আমার দিকে। আতংকে জমে গেলাম। কোনোমতে বললাম, ‘ক্ক ক্লেভভ তু তুমি?’

রেগে বললো, ‘আমি ক্লেভ নই। আমি মোহাম্মদ আহনাফ!’

আমি বড়বড় চোখ করে তাকালাম। বুঝতে না পেরে বললাম, ‘ক কীসব বলছো তুমি?

ক্লেভ রেগে বললো, ‘এটাই তো তোমার সমস্যা ছিলো, তাইনা? আমার নাম, আমার ধর্ম নিয়ে? আমার ভালোবাসা নিয়ে? যাও..পাল্টে ফেললাম! এবার আর কী এক্সকিউজ আছে তোমার? বলো! সেটাও আমি করবো।’

‘ আ আমি কিছু বুঝতে পারছি না। ততুমি… ‘

‘ হুম। আমি সত্যিই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। কোনো সমস্যা তোমার?’

আমি ‘থ’ মেরে দাঁড়িয়ে আছি। বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমার ঘরে চলে এলাম। পেছনে পেছনে ক্লেভও এলো। অথচ আম্মু, চাচী, আব্বুদের সামনে দিয়ে এলেও কেউ কিছু বললোনা, যেন স্বাভাবিক ব্যাপার। রুমে ঢুকে ক্লেভ দরজা আটকে দিলে আমি আরো আশ্চর্য হলাম। ওর কালো মুখজুড়ে রাগের বহিঃপ্রকাশ! বললো, ‘আমাকে না জানিয়ে পালিয়ে এলে কেন? আমাকে কিছু না জানিয়ে, চোরের মতো কেন চলে এলে? আমাকে একবারও দেখতে তোমার মন চাইলো না?’

‘ তেমন কিছু নয়। আর আমি পালিয়েও আসিনি।’

‘ সিরিয়াসলি? তুমি মুসলমান হয়েও এসব মিথ্যা কথা বলছো? ছিঃ ছিঃ!’

আমার মুখের ‘রা’ হারিয়ে গেলো। অপরাধী মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।

‘ সমস্যাটা কী শুধু ধর্মে ছিলো? নাকি ভালোবাসায়?’

আমি জবাব দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো, ‘শুনো আমি কী বলি, বলেই কালিমা পড়ে শুনালো।

এটুকু বলে আমার দিকে এগিয়ে এলো। হতভম্ব এবং বোকা বনে যাওয়া আমার ঠোঁটে পাগলের মতো চুমু খেতে লাগলো। আমি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। টেবিলের কোণায় একটা বারি খেলো,, আমি হন্তদন্ত হয়ে গিয়ে ওকে ধরলাম। ও আমার হাত ঝটকা দিয়ে ছেড়ে দিলো। তারপর দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। ধর্মগ্রহণ এবং ভালোবাসা দুটোই বুঝিয়ে দিলো।

বাসার সবার আচরণে আমি বেশ অস্বস্তিবোধ করছি। ক্লেভের সাথে সবার কী ভাব। সবাই মোটামুটি ওর ইংরেজি বুঝতে পারছে। মাঝে মাঝে ক্লেভ নিজের ভুলভাল বাংলা শুনাচ্ছে আর সবাই ওর বাংলা শুনে হাসতে হাসতে অজ্ঞান। ও নিজেও বোকার মতো তাকায় আবার হাসিতে মেতে ওঠে। দাদু আর ক্লেভ মিলে আমার আনা কোল্ড ড্রিংকস খেতে লাগলেন। কাউকে ভাগ দিলেন না। এমন একটা ভাব যেন ও এ বাড়ির জামাই। আমি লজ্জ্বায়, অপরাধবোধে ঘর থেকে বেরুলামই না, রাতে খেলামও না।

চলবে….ইনশাআল্লাহ! ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।