ভয়ংকর সে পর্ব-৩২+৩৩

0
307

#ভয়ংকর_সে #পর্ব_৩২
#M_Sonali

“ওকে এখানে নিয়ে এসেছ কেন? ও এইখানে আসার উপযুক্ত এখনো হয়নি। আজ তো তার উপযুক্ত হওয়ার কথা ছিল। তাহলে তুমি নিজের কাজ শেষ না করেই ওকে এখানে কেন এনেছো শ্রাবণ?”

উনার কথার উত্তরে শ্রাবণ কিছু বলল না। তার চোখ দুটো আগুনের মতো জ্বলজ্বল করছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ রকম রেগে আছে সে। কিন্তু চাঁদনী কিছু বলবে বলে মুখ খোলার জন্য এগিয়ে গেল। তখনই শ্রাবণ তাকে কিছু বলতে না দিয়ে এক মুহূর্তের মধ্যে তাকে নিয়ে উড়ে কোথাও যেন চলে গেল। সে এতটাই দ্রুত গিয়েছে যে চাঁদনী চোখ পর্যন্ত খুলতে পারেনি। হাওয়ার বেগ এটা বেশি ছিলো যে চোখের পাতা যেনো আটকে গিয়েছিলো তার। সে যখন বুঝতে পারল সে কোথাও নেমেছে। তখন চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো সে একটি বিশাল বড় রুমের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।

রুমটার চারিদিকে শ্রাবণের ছবি টাঙানো। কত রকমের ভয়ংকর রূপে দেখা যাচ্ছে তাকে। যেন ভ্যাম্পায়ারের প্রতিটা রূপ ফুটে উঠেছে ছবিগুলোতে। চাঁদনী ছবিগুলো দেখে বেশ ভয় পেল। তারপরেও এখন রাগে শরীর পুড়ছে তার। সে শ্রাবণের কাছ থেকে কোন উত্তর তো পায়’ইনি বরং তাকে সে এখানে নিয়ে এসেছে। কথাটা মনে হতেই সে ওর দিকে ফিরে তাকাল। দেখল শ্রাবণ রাগে কটকট করছে। ওকে এমন ভয়ংকর রুপে দেখে কিছু বলার সাহস পেলো না সে। কেন যেন ভীষণ ভয় করতে লাগল ওকে দেখে তার মনে।

চাঁদনী মাথা নিচু করে কয়েক পা পিছিয়ে গেল। কেন যেন এই মুহূর্তে শ্রাবনকে ভীষণ ভয় লাগছে তার। তাই সে আর ওকে সাহস করে কিছু বলল না। শ্রাবণ রুম থেকে বেরিয়ে বাইরে থেকে দরজা ঠাস করে লাগিয়ে দিয়ে কোথায় যেনো চলে গেল। এবার চাঁদনীর ভীষন রাগ হল। কিন্তু ভয়ের কারণে রাগটা খাটাতে পারল না সে। তাই এদিক ওদিক তাকিয়ে পুরোটা রুম তীক্ষ্ণ চোখে দেখতে লাগলো।

ওখান থেকে বেরিয়ে শ্রাবণ ফিরে এলো তার দাদুর কাছে। তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হুংকার ছেড়ে বলল,

“কে ছিল ওই ভ্যাম্পায়ার? যে চাঁদনীকে মারতে গিয়েছিল? সত্যি করে বলুন। আমি জানি আপনি ভালো করেই জানেন। আপনাকে বলেছি চাঁদনীকে আমি এই রাজ্যের উপযুক্ত রানী বানিয়ে এখানে নিয়ে আসব। তাহলে কেন এমন করলেন। কেন ওই ভ্যাম্পায়ার কে পাঠালেন ওকে মারার জন্য? কত বড় একটি ভুল করে ফেলেছেন জানেন আপনি? এখন আমি কি করব। আমি চাঁদনীকে না পারছি ভ্যাম্পায়ার বানাতে আর না পারছি এভাবে ছেড়ে দিতে। ওকে আজ রাতের মধ্যে পুরোপুরিভাবে ভ্যাম্পায়ার শক্তি না দিলে ওর অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। যেটা আমি কখনোই হতে দিব না।”

ওর কথা শুনে দাদু বিশ্মীত হলো। ওর সামনে এগিয়ে এসে বলল,

“এসব কি বলছ শ্রাবন? তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? আমি এমন কিছুই করিনি। আর কে যাবে চাঁদনীকে মারতে? আমিতো জানি তুমি ওকে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের রানী বানিয়ে নিয়ে আসবে। তাহলে কেন তাকে মারতে যাব। বরং আমি তো তোমাদের দুজনের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করছিলাম।”

“আমি বিশ্বাস করি না আপনার কথা। আপনি আমার মাকেও ঠকিয়েছিলেন। আর একি ভাবে এখন আমাকেও ঠকাচ্ছেন। যদি আমি প্রমাণ পাই যে আপনি এসব করেছেন। তাহলে আমার চাইতে খারাপ কেউ হবে না। আপনি ভালো করেই জানেন আমার জেদ ও রাগ এর ব্যাপারে।”

কথাগুলো বলেই সেখান থেকে রাগে কটমট করতে করতে চলে গেল শ্রাবণ। ও চলে যেতেই বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন ওর দাদু। সে গম্ভীর মুখে মনে মনে কিছু একটা ভেবে রাগে জ্বলতে লাগলেন। ইশারা করে নিজের বিশ্বস্ত কিছু শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ারকে কাছে ডাকলেন। তাদের সাথে কিছু একটা নিয়ে গোপনে পরামর্শ করতে লাগলেন।

শ্রাবণ ফিরে এসে চাঁদনীকে যে রুমে রেখে গেছে সেই রুমের দরজায় দাঁড়ালো। কিন্তু ভিতরে ঢোকার সাহস নেই তার। কারণ যেভাবেই হোক আজ রাতের মাঝে চাঁদনীকে পুরোপুরি ভ্যাম্পায়ার না বানালে, এটা চাঁদনীর জন্য অনেক খারাপ কিছু হয়ে যাবে। সে মানুষ এবং ভ্যাম্পায়ারের মাঝখানে আটকে থাকবে। যার কারণে সে ধীরে ধীরে উন্মাদ হয়ে যাবে। আর একসময় পুরোপুরি পাগল হয়ে যাবে। হিশ্র জানোয়ারের মত হয়ে যাবে। যাকে সামনে পাবে তাকেই কামড়াতে চাইবে। রক্ত পান করতে চাইবে। একসময় হয়তো নিজেকে শেষ করে দিবে সে। যেটা শ্রাবণ কখনোই হতে দেবে না। তাই সে নিজের মনকে শক্ত করে। দরকার পড়লে চাঁদনীর উপর জোর খাটিয়ে তাকে ভ্যাম্পায়ারে পরিবর্তন করবে সে। কিন্তু তবুও চাঁদনীকে তার সুস্থভাবে চাই’ই চাই।

এসব ভেবে শ্রাবণ আর দেরি না করে দ্রুত রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে পড়লো। কিন্তু ভিতরে ঢুকতেই যেন পায়ের নিচের মাটি সরে গেল তার। সে দেখল দুই পাশ থেকে দুটি বড় বড় বাদুড় চাঁদনী কে ধরে রেখেছে। আর একটি বাঁদুর অলরেডি চাঁদনীর গলার কাছে মুখ নিয়ে গেছে। এই বুঝি তার গলায় নিজের দাঁত বসিয়ে দিল বলে। শ্রাবণ মুহূর্তে গর্জন করে উঠল। ধেয়ে যেতে চাইলো ওদের কাছে। কিন্তু অদ্ভুত এক শক্তির কারণে আটকে গেল সে। ওদের কাছ পর্যন্ত পৌঁছতে পারলোনা। ওর সামনেই ভ্যাম্পায়ারটা চাঁদনীর গলায় নিজের দাঁত বসিয়ে দিলো। ওর শরীরের রক্ত চুষে খেতে লাগলো। কিন্তু সে শত চেষ্টা করেও সেখানে যেতে পারল না। অজানা এক শক্তির কাছে আটকে রইলো সে।

বেশ কিছুক্ষণ পর চাঁদনী সেখানেই ঢলে পড়ে গেল। ওর চোখের সামনে এসব ঘটনা ঘটতে দেখে ওর মাথা এতটা গরম হয়ে গেল যে। সে পাগলের মত হয়ে গেল। চাঁদনীর কিছু হলে সে সবকিছু ধ্বংস করে দেবে। পুরো ভ্যাম্পায়ার রাজ্য শেষ করে ফেলবে। সে নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চেষ্টা করে সেই অদৃশ্য দেয়াল ভেঙে ফেলল। এবং দ্রুত এগিয়ে গেলো সেখানে। কিন্তু সেখানে পৌছানোর আগেই দুজন বাদুড় রুপি ভ্যাম্পায়ার কোথায় যেন হারিয়ে গেল। আর যে ভ্যাম্পায়ারটি ওর গলায় নিজের দাঁত বসিয়ে দিয়েছিল। সে সেখানেই দাঁড়িয়ে ছটফট করতে লাগল। শ্রাবন গিয়ে সোজা তার গলা চেপে ধরে বলল,

“বল তোকে এখানে কে পাঠিয়েছে? আর কারা তোরা? কেন আমার চাঁদনী কে মারতে এসেছিস?”

কিন্তু ভ্যাম্পায়ারটা কিছুই বলতে পারলোনা।ধীরে ধীরে তার শরীর গলে যেতে লাগল। শ্রাবণের সামনে সে পুরোপুরি আগুনে ঝলসে যাওয়ার মতো গলে গলে সেখানে পড়ে মারা গেল। ওকে এভাবে মারা যেতে দেখে শ্রাবনের মুখে ফুটে উঠল রহস্যময় হাসি। কারণ সে ভাল করেই জানত সে ছাড়া অন্য কোন ভ্যাম্পায়ার যদি চাঁদনীর রক্ত খেতে চায়। তার এই অবস্থাই হবে। কারণ ওর শরীরে আছে শ্রাবনের শক্তি। যে শক্তির সাথে পেরে ওঠা অন্য কোন ভ্যাম্পায়ার এর সাধ্য নয়।

কিন্তু এভাবে ওর রক্ত পান করার কারণে চাঁদনীর বেশ কিছু সমস্যা হবে। যেমন ভ্যাম্পায়ার হলেও তার শক্তি অনেকটা কম হবে। যার কারণে সে পদে পদে বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকবে। তবে এখানে আরেকটি উপায় আছে। যেটা শ্রাবণ ছাড়া অন্য কেউ জানেনা। সে মনে মনে কিছুক্ষণ একটা চিন্তা করলো। তারপর কিছু একটা ভেবে ওর কাছে এগিয়ে গেল। ওকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। ওর গায়ের সকল কাপড় খুলে নিয়ে একটি রঙিন চাদরে ওর শরীর ঢেকে দিলো। তারপর বিছানার পাশের বড় জানালাটা খুলে দিল সে। জানালা ভেদ করে আকাশে থাকা বিশাল চাঁদের তীব্র জোসনার আলো এসে পড়ল চাঁদনীর গায়ে। কিছুক্ষণ যেতেই ওর গা থেকে একটি আলোকরশ্মি বেরোতে থাকলো। সেটা পুরোপুরি রক্তের মতো লাল বর্নের।

শ্রাবণ পাশে দাঁড়িয়ে এই সব কিছুই দেখতে লাগল। এভাবে বেশ কিছুটা সময় পার হয়ে যেতেই চাদনীর শরীরে ভীষণ রকম ঝাঁকুনি শুরু হলো। চোখ বন্ধ করে অজ্ঞান অবস্থাতেই জোরে জোরে কাপতে লাগলো সে। পাশে দাড়িয়ে মন খারাপ করে তার দিকে তাকিয়ে রইল শ্রাবণ। কারণ সে বেশ ভালোভাবেই জানে ওর সাথে এখন কি হচ্ছে। এভাবে অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পর একসময় সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে গেল। ওর শরীর থেকে বের হওয়া আলোকরশ্মি কোথায় যেন মিলিয়ে গেল। শ্রাবণ দ্রুত জানালা লাগিয়ে দিয়ে আবারও ওর কাছে ফিরে এলো। ওর কপাল ও সারা শরীরে হাত বুলিয়ে দেখল ওর শরীর প্রচন্ড রকম গরম হয়ে আছে। যেন জ্বর হয়েছে তার।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,

#ভয়ংকর_সে #পর্ব_৩৩
#M_Sonali

“আজ থেকে তুমি চিরমুক্ত চাঁদ পাখি। আর কখনো এই শ্রাবন বিরক্ত করবে না তোমায়। কখনো তোমার সামনে ভালবাসার দাবি নিয়ে দাঁড়াবে না। আগে যেমন তুমি একা ছিলে। আজ থেকেও তুমি সম্পূর্ণ একা হয়ে যাবে। তোমার জীবনে ভ্যাম্পায়ার শ্রাবণ নামে আর কেউ থাকবে না। আমি তোমাকে মুক্তি দিয়ে দিলাম। নিজের মত বাঁচো। নিজের মতো ভালো থেকো। তোমার জীবনে যে কষ্টের ছায়া হয়ে নেমে এসে ছিলাম আমি। সেই ছায়া নিজে থেকেই সরিয়ে নিলাম। তোমার জীবনে #ভয়ংকর_সে নামে আর কখনো কেউ আসবে না। ভালো থেকো, আর পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও।”

চাঁদনী কে সামনে বসিয়ে রেখে এই কথাগুলো বলছিল শ্রাবণ। কথাগুলো বলা শেষে তার থেকে ধীরে ধীরে পিছনে সরে যেতে থাকে সে। মুহুর্তের মাঝে ধোঁয়ার মতো হয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। চাঁদনী উঠে দাঁড়ায় ছুটে যায় সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তার দিকে। কিন্তু সে আর কোথাও পায় না তাকে। শুধু একবারই চিৎকার দিয়ে ডেকে ওঠে “শ্রাবণ” বলে। মুহুর্তেই তার ঘুম ভেঙে যায়। সে ঘুম থেকে জেগে উঠলো মাত্র। এতক্ষণ হয়তো কোনো স্বপ্ন দেখছিল সে।

চিৎকার দিয়ে উঠে বসে সে। তার কানে ভেসে আসে চারিদিক থেকে ফজরের আজান। আশেপাশে চোখ মেলে দেখে নিজের রুমে শুয়ে আছে। জানালা খোলা থাকায় জানালা থেকে হালকা চাঁদের আলো ঘরে এসে পড়ছে। যার মৃদু আলোতে সে স্পষ্টই বুঝতে পারে সে নিজের রুমে। তার সারা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। সে বুঝতে পারছে না এতক্ষণ কি হচ্ছিল তার সাথে। সে কি সত্যিই স্বপ্ন দেখছিল নাকি এটা বাস্তব ছিল। কিন্তু এখানে ও কিভাবে এলো? সে তো শ্রাবণ এর সাথে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে ছিল। তাহলে এখানে পৌঁছালো কিভাবে সে? আর তার সাথে কি হয়েছে কিছুই যেন মনে করতে পারল না সে। সে দ্রুত বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল। নিচে নেমে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে জানালার কাছে গিয়ে এদিক সেদিক খুঁজতে লাগলো।

না কোথাও কিছু নেই। চারিদিকে সবকিছু স্বাভাবিক। চাঁদনীর কেন যেন ভীষণ রকম অস্থির হতে লাগল। সে ভেবে উঠতে পারছে না তার সাথে কি হচ্ছে বা হয়েছে। সে দরজা খুলে দ্রুত বাইরে বেরিয়ে গেল। তার বাবা এবং দাদির রুমে গিয়ে দরজায় ঠকঠক করতে লাগল। রতন মিয়া এসে দরজা খুলে দিলো। ঘুম ঘুম চোখে তার দিকে তাকিয়ে উত্তেজিত গলায় রতন মিয়া বললেন,

“কি হয়েছে চাঁদনী! এসময় এভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছিস কেন?”

উনার কথার উত্তরে চাঁদনী বেশ অবাক হল। কেননা ওনাকে দেখে ওনার কথায় বোঝা যাচ্ছে চাঁদনী যে এখানে এসেছে তাতে উনি একটুও অবাক হননি। বরং উনি আগে থেকে জানতেন চাঁদনী এখানে। তাই বেশ অবাক হলো চাঁদনী উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,

“বাবা উনি কোথায়? ওনাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না কেন? আর আমি এখানে কিভাবে এলাম? আমি তো এখানে ছিলাম না!”

ওর কথায় ভ্রু কুচকালো রতন মিয়া। অবাক হয়ে গম্ভীর গলায় বললো,

“এসব কি আবোল তাবোল বকছিস চাঁদনী? কার কথা জিজ্ঞেস করছিস তুই? এই উনি টা আবার কে? আর এখানে ছিলি না মানে কোথায় ছিলি তুই? পাগল হয়ে গেলি নাকি সাত সকালবেলা।”

এবার যেন চাঁদনী আরো বেশি অবাক হলো। তার মাথা ঘুরতে লাগলো। তার বাবার এমন কথায়। সে উত্তেজিত কণ্ঠে চোখের পানি ফেলে বলল,

“বাবা আমি শ্রাবণের কথা বলছি। উনি কোথায়? আমাকে কেন উনি ওসব কথা বলল? আর আমি এখানে কখন এলাম। উনি আমাকে কখন এখানে নিয়ে এসেছে?”

“সকাল সকাল এসব কী পাগলামি শুরু করেছিস চাঁদনী? কে আবার এই শ্রাবণ? কার কথা বলছিস তুই? আর তোকে এখানে রেখে গেছে মানে? তুই তো সারাক্ষণ এখানেই থাকিস। পাগল টাগল হলি নাকি। কীসব বকছিস এসব?”

উনার কথার উত্তরে চাঁদনী কিছু বলবে তার আগেই পিছন থেকে রত্না বেগম হায় হায় করে বলে ওঠেন,

“আল্লাহ গো আমার নাতনি বুঝি পাগল হয়ে গেল। দুই দুইবার বিয়ে ভাঙার শোকে ওর আজ এই অবস্থা। রতনরে আমার একটা মাত্র নাতনিকে শেষে কিনা এ অবস্থায় দেখতে হবে কল্পনাও করিনি। তুই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চাঁদনীর বিয়ের ব্যবস্থা কর। আমি আমার নাতনি কে এমন পাগল অবস্থায় দেখতে পারবোনা।”

রত্না বেগমের কথায় যেন মাথায় আকাশ থেকে পড়লো চাঁদনীর। ও যেন বাবা এবং দাদির কথা কিছুই বুঝতে পারছে না। একেতো শ্রাবণের টেনশন তার ওপর তাদের এমন কথায় মাথা ঘুরতে শুরু করলো তার। সে এবার বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলো,

“এসব তুমি কি বলছো দাদি? কিসের বিয়ে ভাঙ্গার কষ্ট? আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে। শ্রাবণ আমার স্বামী। আর আমিতো তার সাথেই ছিলাম। কিন্তু আমি এখানে এলাম কখন? আমাকে উনি কখন রেখে গেছেন? তোমরা এমন আবোল-তাবোল কথা বলছ কেন? এমন ভাব করছো যেন কিছুই মনে নেই তোমাদের। প্লিজ দাদি এখন আমার এসব ভালো লাগছে না। সত্যি করে বল উনি কোথায়? উনি আমাকে এসব কথা কেন বলে গেলেন?”

এবার ওর কথায় যেন আঁতকে উঠলেন রত্না বেগম। সে হায় হুতাশ করতে করতে বলে উঠলেন,

“ওরে রতনরে আমার একমাত্র নাতনী এবার সত্যিই পাগল হয়ে গেল। আমি তোকে বারবার বলেছিলাম এভাবে একটি যুবতী মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেলে সে কতটা আঘাত পায় এবার বুঝতে পারলি তো। এখন আমার নাতনিকে কে বিয়ে করবে? অত পাগল হয়ে গেছে পুরো।”

“আহ মা, চুপ করো তো। আমি দেখছি ব্যাপারটা।”

রত্না বেগম কে থামিয়ে দিয়ে কথাটা বলে উঠলেন রতন মিয়া। বেশ গভির চোখে তাকালেন চাঁদনীর দিকে। গম্ভীর গলায় বললেন,

“চাঁদনী মা তুই ঘরে যা। চুপচাপ শুয়ে একটু রেস্ট নে। আমি বুঝতে পারছি বারবার বিয়ে ভাঙার কারনে তুই অনেক ভেঙে পড়েছিস। তাই এসব আবোল-তাবোল কথা বলছিস। চিন্তা করিস না আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোর বিয়ের ব্যবস্থা করব। আগের দুই বিয়ের চাইতেও এবার আরো ভালো ঘরে বিয়ের ব্যবস্থা করব তোর। আর এবার তোর বিয়ে দিয়েই ছাড়বো। আমার চাঁদনী মায়ের মত রূপসী মেয়ে এই এলাকায় আর একটাও নেই। দেখিস তোর কত ভালো পরিবারে বিয়ে হবে। কত সুখি হবি তুই। একদম রাজরানী হয়ে থাকবি শশুরবাড়িতে।”

কথাগুলো বলে চাঁদনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন রতন মিয়া। উনার কথার উত্তরে চাঁদনী কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। সে মনে মনে কিছু একটা ভেবে চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেল। আর কোন প্রশ্ন করল না। ওকে চুপচাপ নিজের রুমে চলে যেতে দেখে কিছুটা স্বস্তি অনুভব করলেন রতন মিয়া এবং রত্না বেগম। চাঁদনী নিজের রুমে ফিরে গিয়ে দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে দিলো। তারপর চুপচাপ গিয়ে বিছানার উপর বসে আনমনে কিছুক্ষণ জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল। এতক্ষণে বাইরে বেশ পরিস্কার হতে শুরু করেছে। চারিদিকে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে কানটা জুড়িয়ে যাচ্ছে।

সে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। পা টিপে টিপে চলে যায় ডেসিন টেবিলের সামনে। আয়নায় নিজেকে ভালোভাবে একবার পর্যবেক্ষণ করে। গলায় হাত রেখে ভালোভাবে দেখে। না তার গলায় কোন দাগ নেই। সে সম্পন্ন ফিটফাট আছে। আয়নার সামনে থেকে সরে এসে জানালার পাশে দাঁড়ায়। সে জানালার গ্রিলে হাত দিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি রাখে। অদূরে গাছের ওপর কত রকমের পাকপাখালি এদিক থেকে ওদিক ছোটাছুটি করছে এবং কিচিরমিচির করে ডাকছে। চাঁদনী মুগ্ধ নয়নে সেসব দেখে। কিন্তু তার মুখটা গম্ভীর হয়ে আছে। মনে মনে যেন খুব করে কিছু একটা ভাবছে সে। জানালার কাছ থেকে আবার সরে গিয়ে বিছানায় বসে। কিছুক্ষণ চুপ করে মাথা নিচু করে বসে থাকে। মনে মনে বলে ওঠে,

“আপনি সবার স্মৃতি থেকে যতই সব কিছু মুছে দেন না কেনো। আমার স্মৃতি থেকে নিজেকে কখনো আড়াল করতে পারবেন না শ্রাবন। আমি ভালো করেই জানি আপনিই নিজের শক্তি দিয়ে বাবা আর দাদিকে সব ভুলিয়ে দিয়েছেন।”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,