#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা :মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ২৮
অভিদ কান্না থামিয়ে সামিরের দিকে তাকায়। আবার রুহির দিকে তাকিয়ে রুহিকে কোলে তুলে নেয়। রায়হান বলে
” অভিদ তুই রুহিকে নিয়ে পেছনে বস। আমি ড্রাইভ করছি আর সামির তুমি আমার সাথে বসো। গার্ড তোমরাও এসো আর জলদি ডক্টরকে ফোন করে কেবিন রেডি করতে বলো ” বলে গাড়িতে উঠে বসে। অভিদ রুহিকে নিয়ে পেছনে বসে। সামির রায়হানের সাথে সামনে বসে। রায়হান হসপিটালের দিকে গাড়ি ঘুড়িয়ে নেয়।
রুহিকে আধ ঘন্টা আগে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গার্ডরা সবাই কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।অভিদ, রায়হান,সামির করিডোর এর বাইরের চেয়ারে বসে আছে মাথায় হাত দিয়ে। অভিদ কেঁদে কেটে চোখ মুখ লাল করে রেখেছে। রায়হানও চোখ মুখ লাল করে বসে আছে। সামির হাটুতে ভর রেখে দুই হাত দিয়ে মুখ ডেকে বসে আছে। এতোক্ষণ চুপ করে ছিলো। রায়হান সামিরের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে
” তুমি রুহিকে কোথায় পেয়েছো ?? ওর এই অবস্থা কেনো?? ”
সামির মুখ থেকে হাত সরিয়ে অভিদ আর রায়হানের দিকে তাকায়। অভিদ সামনেই আইসিউতে তাকিয়ে রয়েছে। সামির একটা নিশ্বাস ফেলে বলে
” আমি একজন ডক্টর। আমি যেই হসপিটালে চাকরি করি দুইদিন আগে সেখানে রুহিকে যাবেদ রহমান নিয়ে আসে। আমি নরমাল ডক্টর দের মতই ছিলাম রুহির ব্যাপারে কিছু জানতাম না। শুনেছিলাম রুহিকে এখানে এক প্রকার লুকিয়ে রেখেছে। আজকে যাবেদ রহমান তার একটা লোককে বলছিলো রুহিকে কোনো খারাপ একটা ইনজেকশন দিতে কিন্তু আমি শুনে ফেলায় রুহিকে নিয়ে কোনো রকমে পালিয়ে আসি। রুহিকে আইসিউ থেকেই নিয়ে এসেছিলাম।”
রায়হান সামিরের পায়ের উপর হাত রেখে বলে
” তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেবো বুঝতে পারছি না। তোমার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো। রুহিকে আমরা দের মাস ধরে খুজছিলাম কিন্তু পায়নি।”
সামির রায়হানের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলে
” এতে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই। আমি শুধু ওনাকে হসপিটাল থেকে বের করে এনেছি বাকি সব তো আপনারাই করছেন।”
রায়হানের হঠাৎ চিন্তা শুরু হয়। চিন্তিত হয়ে বলে
” কিন্তু তোমার তো এখন লাইফ রিস্ক আছে।”
সামির মুচকি হাসলো। শান্ত স্বরে বলে
” শুধু লাইফ রিস্ক না চাকরিটা শেষ করে দেবে ওই যাবেদ খান। দেবে না দিয়েও দিয়েছে হয়তো।”
রায়হান শান্তনা দিয়ে বলে
” চাকরি শেষ হলে হাজারটা চাকরি পাবে তবে। প্রাণ শেষ হলে প্রাণ পাবে।” সামর মাথা নিচু করে হালকা হাসলো। অভিদ উঠে এবার আইসিউর দরজার সামনে দাঁড়ায়। এখনও বাড়িতে কিছু জানায় নি রায়হান। ভাবছে পরে জানাবে।
কিছুক্ষণ পরে ডক্টর বেড়িয়ে আসলো। অভিদ তার সামনে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে
” আ আমার রুহি কেমন আছে এখন ?? ওর সাথে দেখা করতে পারবো ??” ডক্টর অভিদের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে
” আমার কেবিনে আসুন কথা আছে।” বলে হনহন করে নিজের কেবিনের দিকে চলে যায়। অভিদের গলা শুকিয়ে আসলো। ডক্টর কি কথা বলার জন্য ডাকছে সেটা বুঝতে পারছে না। রুহির কঠিন কিছু হয়ে গেলো না তো ?? ভেবেই অভিদের ভয় হচ্ছে হচ্ছে। রায়হান অভিদের এমন অবস্থা দেখে কিছু বুঝতে পারে তাই কাধে হাত রেখে আশ্বস্ত দিয়ে বলে
” চিন্তা করিস না। রুহি একদম ঠিক হয়ে যাবে। ডক্টর হয়তো এটা বলতেই ডাকছে। আমিও তোর সাথে যাচ্ছি চল” অভিদ হালকা ঘার হেলিয়ে বলে
“হুম ” বলে এগোতে নিলেই অভিদ আবার ঘুরে যায় সামিরের দিকে তাকিয়ে দেখে সামির বসে আছে। অভিদ তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
সামির সামনে কারো পা জোড়া দেখে মাথা উঠিয়ে তাকায়। সামনে অভিদকে দেখে লাফিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” এখানে বসে বসে রুহিকে দেখে রাখবে। কেউ যাতে না আসে। আমি এখুনি আসছি।” বলে রায়হানকে নিয়ে আবার চলে যায়। সামির ঘোরের মধ্যে সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ পরে আবার বসে পড়ে। হঠাৎ অভিদকে দেখে ভয় পেয়ে গেছিলো।
অভিদ, রায়হান ডক্টরের কেবিনে ঢুকলে ডক্টর তাদের বসতে বলে। দুজন ডক্টরের সামনের চেয়ারে বসে। অভিদ ভীত স্বরে বলে
” ডক্টর রুহির ঠিকাছে তো ?? তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে তো ??”
ডক্টর তার চোখের চশমা খুলতে খুলতে বলে
” দেখুন মি. অভিদ আমরা দুজনই পরিচিত আর খুব ঘনিষ্ঠ। তাই আমি বলছি যে মিসেস রুহির সাথে কি হয়েছিলো সেটা যদি বলেন। তাহলে আমার জন্যও সুবিধা আর মিসেস রুহির তাড়াতাড়ি রিকোভার করতে সাহায্য হতে পারে।”
অভিদ, রায়হান দুজন একে অপরের দিকে তাকায়। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে রুহিকে কোথায় রাখা হয়েছে, প্রতিদিন মারার কথা সবই বললো।
ডক্টর সব শুনে দুঃখ স্বরে বলে
” মিসেস রুহির সাথে সত্যি অনেক খারাপ হয়েছে। যাই হোক, এবার আমার কথা মন দিয়ে শুনুন। মিসেস রুহিকে প্রতিদিন মারার কারণে ওনার শরীরের খুব খারাপ ভাবে দাগ পরে গিয়েছে। প্রতিদিন মারার কারণে প্রতি রাতে জ্বর আসতো খাওয়া, দাওয়া বলতে গেলে হতোই না। হয়তো ডিপ্রেশনের কারণে দিনে একবার খেতো বা খেতোই না। এতে ওনার শরীর প্রচন্ড দুর্বল হয়ে গিয়েছে। শরীরের মারের জায়গা জখমে ব্যাথা করবে। উনি খুবই ভয় পেয়ে আছে। ওনাকে কখনও একা রাখা যাবে না। আর বিশেষত রাতে একা রাখলে ওনার আবার সমস্যা হবে, মারের কথা গুলো মনে পরবে আর প্যানিক হয়ে উঠবে। ওনাকে সবার মাঝে রাখতে হবে। সুস্থ হতে একটু সময় লাগবে ওনার। আমি সব মেডিসিন লিখে দিচ্ছি, সব সময় মতো খাওয়াবেন। মেডিসিন মিস হলে রিকোভার করতে সময় লাগবে।আমি একটা ওয়েন্টমেন্ট লিখে দিচ্ছি যেটা দিলে কয়েক দিনের মধ্যেই শরীরের দাগ চলে যাবে আর ব্যাথাও আস্তে আস্তে কমে যাবে।” বলে কিছু মেডিসিন প্রেসক্রাইপ করে দেয়।
অভিদ প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে সব দেখে নিয়ে বলে
” ডক্টর এই ওয়েন্টমেন্ট টা আমার কাছেই আছে।
ডক্টর মাথা নেড়ে বলে
” ওকে থাকলে ভালো। শোনো রুহিকে আরও এক সাপ্তাহ হসপিটালাইট থাকতে হবে।”
অভিদ একটু অসহায় গলায় বলে
” কি ?? এতোদিন !! আচ্ছা ঠিকাছে। তবে রুহির জ্ঞান ফিরবে কখন ?? জ্ঞান ফিরলে আমি ওর সাথে দেখা করতে পারবো ??”
ডক্টর মেকি হেসে বলে
” হ্যা পারবে। তবে মিসেস রুহির আজকে জ্ঞান ফিরবে না আর ওনাকে যেন বেশি কান্না না করেন। কান্না করলে অসুস্থ হয়ে পরবে। আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবেন”
অভিদ, রায়হান কেবিন থেকে বের হয়ে গার্ডের কাছে প্রেসক্রিপশন দেয়।
অভিদ গিয়ে রুহির পাশে একটা চেয়ার টেনে বসে। রুহিকে দেখে অভিদের গলা আটকে আসলো, চোখ ছলছল হয়ে আসে। হসপিটাল ড্রেস পরা রয়েছে। খোলা হাতে, পায়ে গলায় মারের দাগ দেখা যাচ্ছে। মাথায় চোট রয়েছে, ঠোটের কোণেও কাটার দাগ। দুধে আলতা সুন্দর গায়ে কালো দাগে ভরে গিয়েছে। অভিদ ঠোট কামড়ে কান্না আটকে রাখে। রুহির ক্যানেলা লাগানো হাতটা নিজের হাতের মাঝে নিয়ে ঠোট ছোয়ায়। রায়হান নিজেও রুহিকে দেখে কান্না আটকে রেখেছে। অভিদকে দেখে বুঝতে পারছে অভিদের কেমন লাগছে। কি করে নিজেকে সামলে রেখেছে। রায়হান কেবিনে ঢুকে অভিদের কাধে হাত রাখে। অভিদ লাল লাল চোখে রায়হানের দিকে তাকায়। রায়হান ভাঙা গলায় বলে
” বাড়িতে সবাইকে জানিয়ে দেবো ?? ”
অভিদ নাক টেনে কান্না গলায় বলে
” না রুহির জ্ঞান ফিরুক। আমি দুদিন পরে সবাইকে একসাথে ফোন করে বলবো। ”
রায়হান মাথা নেড়ে বলে
” ঠিকাছে।” অভিদ রুহির হাতটা সযত্নে রেখে দেয়। চেয়ার ছেড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।
রায়হানের দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে দাতে দাত চেপে বলে
” যাবেদ খান, সিহাব খানের এখানের সব কারখানা, গোডাউন, দুইদিনের মাঝে পুড়িয়ে দে। যেই কটা দেশে ওর কালো ব্যাবসা রয়েছে সব শেষ করে দেবো। ওর আমি এমন অবস্থা করবো যে নিঃস্ব হয়ে রাস্তায় এসে পরবে। ওদের দুজনকে মেরে মাটিতে পিশে দেবো। কোনো ভাবেই ছাড়বো না ওদের।”
রায়হান দাত কিড়মিড় করতে করতে বলে
” ছাড়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।! রুহির আজকে এই অবস্থা শুধু ওদের জন্য। আরও কোতো মেয়ের সাথে এমন করেছে কে জানে !! ওদের আমি দেখে নিচ্ছি। তুই রুহির সাথে থাক আর কোনো দরকার হলে তোকে বলবো।”
অভিদ হাতের দুই আঙুল দিয়ে কপাল ঘষে বলে
” আচ্ছা সামির কোথায় ?? ওকে কোনো একটা সেফ জায়গায় রেখে আয়। আর আমি এখানে আরও গার্ডের ব্যবস্থা করছি।”
রায়হান হুম বলে উশখুশ করতে থাকে। অভিদ রায়হানকে দেখে ভ্রু কুচকে বলে
” কি বলবি বল ”
রায়হান গলা ঝেড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে অভিদের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ বলে
” আচ্ছা আখিলকে জানাবো ?? মানে তুই বললেই জানাবো।”
অভিদ রাগি নজরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো রায়হানের দিকে তারপর গম্ভীর গলায় বলে
” যদি রুহিকে ভাবি বলে ডাকতে পারে। তাহলে জানাবি আর আসতে চাইলে আসতে বলবি।” বলে হনহন করে রুহির রুমে ঢোকে।
রায়হান বোকার মতো তাকিয়ে থাকে অভিদের যাওয়ার দিকে। নিজেকে ঠিক করে সামিরকে নিয়ে বের হলো।
নিউজিল্যান্ডের নামকরা হসপিটাল। এখানে সব রকমের সিকিউরিটি থাকলেও অভিদ কোনো রিস্ক নিতে চায়না। তাই অভিদ রুহির কেবিনে স্পেশাল গার্ডের এরেঞ্জমেন্ট করেছে। অভিদের বলা ডক্টর আর নার্স ছাড়া অন্য কোনো ডক্টর বা নার্স ঢুকতে পারবে না। রায়হান সামিরকে সেফ জায়গায় রেখে এসেছে। আখিলকেও জানিয়েছে। আখিল সব শুনে অস্থির হয়ে গিয়েছিলো। অভিদের শর্ত মেনে সকালের ফ্লাইটের টিকিট বুক করেছে।
অভিদ রুহির কেবিনের বাইরে রায়হানের সাথে কথা বলছিলো। তখন হঠাৎ রুহির কেবিনের ভেতর থেকে নার্স দৌড়ে এসে অভিদের সামনে দাঁড়িয়ে হাপানো স্বরে বলে
” মিসেস রুহির জ্ঞান ফিরছে। অভিদ, অভিদ বলে ডাকছে। আপনি ভেতরে আসুন স্যার।” অভিদের চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে।
রায়হান খুশি হয়ে অভিদকে বলে
” অভিদ রুহির কাছে চল।” অভিদ হালকা হেসে রুহির কেবিনে দ্রুত ঢুকে পরে। পেছনে রায়হানও আসে।
চলবে…wait for next part….