#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা :মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ৩৬
নিউজিল্যান্ড শহরের ব্রেকিং নিউজের মূল ব্যাক্তি হচ্ছে যাবেদ খান এবং সিহাব খান। দুজনের প্রত্যেকটা কাজের ভিডিও, ছবিসহ সব প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। সাথে রয়েছে দুজনের নিজেদের দেওয়া অপরাধ স্বীকার করার একটা ভিডিও। যেখানে তারা নিজেরা তাদের সব কালো ব্যবসা অনৈতিক কাজ সম্পর্কে স্বীকার করেছে। নিউজিল্যান্ড শহরের প্রত্যেকটা মানুষ যাবেদ আর সিহাবের নাম নিয়ে থু থু ফেলছে। নিউজিল্যান্ড এর অধিকাংশ মানুষ যাবেদ আর সিহাব খানকে চিনতো। কারণ নিউজিল্যান্ডের নামি দামি এক সরকারি অফিসের কর্মচারী যাবেদ খান। সবাই তাকে বিসস্ত্য লোক হিসেবে জানতো। আজকে টিভির নিউজ শুনে সব লোক দুজনকে পুলিশ স্টেশনের বাইরে দর্শন করতে এসেছে সাথে দুজনের উপর টমেটো, পচা ডিম, পাথর সব ছুড়ে ছুড়ে মারছে। যাবেদ খান আর সিহাব ফ্রি তে গিফট পেয়েও পুলিশকে বলে তাড়াতাড়ি গাড়িতে ভেতর নিয়ে যেতে। কিন্তু পুলিশরা দুজনের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।যাবেদ আর সিহাবের আক্রমণ করায় পুলিশরা সবাই খুশিই হয়েছে। হবেই বা না কেনো ?? এতো কিছুর পরেও দুজন বেঁচে আছে এটাই অনেক। অনেক ঝামেলা করে দুজনকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।
রুহি অভিদের গায়ে হেলান দিয়ে বসে বসে পপকর্ণ খাচ্ছিলো আর যাবেদ, সিহাবের মার খাওয়ার ভিডিও দেখছিলো। ওদের চলে যেতে দেখে বিরক্ত হয়ে পপকর্ণ টেবিলের উপর রেখে দেয়। মুখ ফুলিয়ে বলে
“এতো তাড়াতাড়ি নেওয়ার কি আছে ?? আরেকটু পরে নিলেও পারতো।” অভিদ আড়চোখে রুহির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে
” পাবলিকই যদি দুজনকে মেরে ফেলে তাহলে আমি শাস্তি দেবো কি করে ??” রুহি মুখ ভেংচি দিয়ে বলে
” শাস্তি দেওয়া লাগবে না। আগে বলুন বিডিতে কবে যাবো ?? আমি আর থাকতে পারছি না।”
অভিদ রাগি চোখে রুহির দিকে তাকায়। রুহি অভিদের মুখ দেখে চুপসে যায়। মুখে আঙুল দিয়ে জোতির সাথে ঘেঁষে বসে। সেইদিন বাড়ি যাওয়া cancel করার তিন দিন পর থেকে আবার বিডিতে যাওয়ার বায়না ধরেছে। অভিদ বকা দিলেই থামে। রুহির পাও অনেকটা ভালো এখন। প্রতিদিন এক্সারসাইজ করে। ধরে ধরে হাটতে পারে রুহি।
রুহি বাচ্চাদের মতো চুপটি করে বসে টিভির দিকে তাকিয়ে ছিলো। এতো তাড়াতাড়ি যাবেদ দের নয়ে নতুন হেডলাইন দেখে অবাক হয়ে গেলো।
যাবেদ আর সিহাবের সাথে অনেক পুলিশ সোর্স থাকা সত্ত্বেও তারা দুজন পালিয়ে গিয়েছে। কোথাও খুঁজে পায়নি। কয়েক মিনিটের মাঝে কোথায় হারিয়ে গিয়েছে কেউ বুঝতে পারছে না।
রুহি অবাক হয়ে বলে
” কিভাবে এতো তাড়াতাড়ি সব কিছু হলো ?? দুই মিনিটও হলো না আর ওরা উধাও হয়ে গেলো ??”
রায়হান হেসে বলে
” আমাদের জন্য দুই মিনিট না ১ মিনিটই যথেষ্ট।”
রুহি চমকে অভিদ আর রায়হানের দিকে তাকায়। অভিদ সোফায় হেলান দিয়ে দুই হাত ছড়িয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে আর রায়হান বসে বসে মিষ্টি খাচ্ছে। জোতি অবাক হয়ে বলে
” মানে ?? তোমরাই কি ওদের সরিয়েছো ??” অভিদ বাকা হেসে বলে
” ওদের না সরালে ওদের প্রাপ্য শাস্তি দিবো কি করে ??” আখিল গলা ঝেড়ে বলে
” আচ্ছা তাহলে তো তোমাদের কাজ শেষ তাহলে চলো বাড়ি যাবো ??” অভিদ ভ্রু কুচকে বলে
” মানে কি!! আমি বলেছি না রুহি ঠিক হলে আমরা সবাই বাড়ি যাবো ?? আর তোমরা বাড়ি যাওয়ার জন্য এতো উতলা হয়ে উঠেছো কেনো ??আমি তো বুঝতে পারছি না। হাজার কোটি কোটি মানুষ বিদেশেই ১০-১৫ বছর পরে থাকে। তারা এতো বছর থেকেও এতো উতলা হয় না যতোটা তোমরা হচ্ছো !! ” রুহি মন খারাপ করে বলে
” আমি তো কোনোদিন বাড়ি ছেড়ে এতদূরে থাকিনি তাই ভালো লাগছে না।” রায়হান সবাইকে দেখে বলে
” আচ্ছা অভিদ সবাই মন খারাপ করছে যখন তখন চল। আর রুহি তো মোটামুটি অনেকটাই সুস্থ। রুহি বিডিতে গিয়েই বাকি ট্রিটমেন্ট করতে পারবে আর দরকার পরলে আমরা আবার আসবো।” অভিদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে
” ঠিকাছে। তাহলে ১ সাপ্তাহের মাঝে কোনো একদিনের টিকিট বুক করে নে।” রায়হান হেসে মাথা নাড়ায়। রুহি অনেক খুশি হয়ে বল্র উঠে
” thank you, thank you so much !! love you. আমার তো ইচ্ছে করছে আপনাকে ধরে চুমু….” বাকিটা বলার আগেই থেমে যায়। রুহি সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই রুহির দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে। রুহি নিজের কাজে নিজেই লজ্জায় পরে গেলো। অভিদ রুহির লজ্জা মাথা মুখ দেখে ঠোট চেপে হাসছে। রুহি মাথা চুলকে পাশ থেকে স্টিক টা নিয়ে মাথা নিচুকরে পা চালিয়ে রুমের দিকে চলে গেলো। রুহি চলে যেতেই সবাই জোড়ে জোড়ে হেসে উঠে। অভিদ মুচকি মুচকি হাসি দেয়।
আজকে রুহি,অভিদ, রায়হান, আখিল, আশিক, জোতি সবাই বিডিতে রিটার্ন করছে। সবাই তৈরি হয়ে নিচে বসে আছে, অভিদ আর রায়হান এর অপেক্ষা করছে সবাই । অভিদ, রায়হান দুজন বাইরে গয়েছিলো কিন্তু এখনও আসেনি।রুহি চোখ বন্ধ করে বসে আছে। দুদিন ধরে রুহি অসুস্থ। জ্বর হয়েছে তাই অভিদ রুহিকে যেতে না করেছে কিন্তু রুহি বলেছে বাড়িতে গিয়ে ডক্টর দেখালেই ঠিক হয়ে যাবে। অভিদ আর কিছু বলেনি কারণ রুহি শুনবে না।
কিছুক্ষণ পরে অভিদ আর রায়হান এলো। আখিল দুজনের কাছে গিয়ে বলে
” তোমরা কোথায় গিয়েছিলে ??একটু পরে ফ্লাইট আর তোমাদের এখনি কাজের কথা মনে পরলো ??” রায়হান মেকি হেসে বলে
” আমাদের সাথে স্পেশাল গেস্ট যাচ্ছে তাদের ব্যবস্থা করে এসেছি তাই দেড়ি হয়েছে। আচ্ছা চলো সবাই বেড়িয়ে পরি ??” আখিল মাথা নেড়ে অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” হুম চলো। অভিদ রুহিকে নিয়ে এসো। রুহিকে দেখে দুর্বল মনে হচ্ছে।” অভিদ চোখের পলক ফেলে বলে
” তোমরা যাও আমি রুহিকে নিয়ে আসছি।” বলে রুহির কাছে যায়। আখিল, আশিক, জোতি, রায়হান বেড়িয়ে যায়। গার্ডরা সবার লাগেজ নিয়ে গাড়িতে উঠাতে থাকে।
অভিদ রুহির পাশে গিয়ে বসে ধীর গলায় বলে
” রুহিপাখি !! খারাপ লাগছে ?? মেডেসিন দেবো ??” রুহি চোখ খুলে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদের রুহির চোখের দিকে তাকিয়ে আতকে উঠলো। রুহির চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। অভিদ রুহির গালে হাত রেখে বলে
” তোমার আজকে যাওয়া লাগবে না। তুমি ঠিক হলেই আমরা যাবো ঠিকাছে ?? আমি টিকিট cancel করে দিচ্ছি।” রুহি ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে উঠে
” নাহ আমি বাড়ি যাবো প্লিজ !! টিকিট cancel করবেন না।” অভিদ হার মেনে বলে
” ঠিকাছে চলো।” অভিদ রুহির দুই বাহু ধরে উঠিয়ে দাড় করায়। রুহি ধীর গতিতে এগিয়ে যেতে থাকে। অভিদ রুহিকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে অন্যপাশে এসে নিজেও বসে পরে। রায়হান অভিদের দিকে ঘুরে বলে
” অভিদ রুহিকে ডক্টর দেখিয়ে then আমরা এয়ারপোর্টের দিকে যাই ??” অভিদ মাথা নাড়াতেই রুহি দ্রুত বলে
” নাহ আমাদের ফ্লাইটের দেড়ি হয়ে যাবে তো।”
অভিদ চোখ রাঙিয়ে বলে
” একটাও কথা বলবে না। তোমার একটা আবদার মানছি দেখে ভাববে না যে তোমার সব আবদার মেনে নেবো !! কোনটা ভালো হবে খারাপ হবে সেটা আমাকেই বুঝতে হয়। আমার কথা শোনো আর চুপ করে বসো। আমরা ফ্লাইটের আগেই এয়ারপোর্টে পৌছাবো। রায়হান
ড্রাইভারকে বল হসপিটাল যেতে।” রায়হান হালকা হেসে ড্রাইভারকে বলে গাড়ি হসপিটালের সামনে নিয়ে যেতে।
রুহিকে ডক্টর দেখিয়ে অভিদরা এয়ারপোর্টে যায়। সেখানে আসতেই আবার অভিদদের নিয়ে সবাই ভির জমিয়ে দেয়। গার্ডরা সবাইকে সরিয়ে অভিদ দের ভেতরে নিয়ে যায়। প্লেন টেকওভার করতেই রুহি সস্তির নিশ্বাস ফেলে অভিদের হাত ধরে সিটে শরীর এলিয়ে দেয়। রায়হান অভিদের পাশের সিটে রয়েছে আর আখিল, আশিক, জোতি তিনজন পেছনের তিন সিটে।আর গার্ডরা তো আছেই।
অভিদ রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলে
” দুজনকে ভালো করে আনা হয়েছে ?? চেক করেছিলি ??” রায়হান ভ্রু কুচকে বলে।
” তো আমাকে কি তোর এতো দায়িত্ব জ্ঞানহীন মনে হয় ?? আমি সব দেখে নিয়েছি।” অভিদ রেগে বলে
” আচ্ছা একটা কথা বল !! তুই এমন ভাবে কথা বলিস কেনো ?? আমি কি বলেছি আমি তোকে দায়িত্ব জ্ঞানহীন মনে করি ??” রায়হান দাত কেলিয়ে বলে
” নারে ভাই আমি তো মজা করে বলি। তুই সিরিয়াস নিস কেনো ?? এটা কি আমার দোষ !!”
অভিদ মুখ বাকিয়ে সামনের দিকে তাকায়।
বিডি এয়ারপোর্টে নিউজিল্যান্ডের ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে। সবাই একে একে নেমে গেলো। অভিদ রুহিকে ধরে ধরে নিয়ে এলো। এয়ারপোর্টে বাড়ির কাউকে দেখা গেলো না কারণ অভিদরা না জানিয়েই এসেছে সবাইকে সারপ্রাইজ দেবে বলে। এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই অভিদ রুহিকে কোলে তুলে বাইরে এনে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। আখিল তার গাড়িতে উঠতে নিলেই রায়হান বলে উঠে
” আখিল আমাদের বাড়িতে কিন্তু গাড়ি নেবে।” আখিল অবাক হয়ে বলে
” কিন্তু আমি তো আমার বাড়িতে যাচ্ছি। আমি অন্য একদিন আসবো। আজকে যেতে চাইছি না।”
অভিদ গাড়ির গেট খুলেছিলো উঠবে বলে আখিলের কথা শুনে বলে
” আগে আমাদের বাড়িতে চলো। তোমাদের না নিলে ফুপি আমাকে আর রায়হানকে বকবে। কোনো কথা না বলে বাড়ির দিকে গাড়ি ঘোড়াও” বলে গাড়িতে ঢুকে পরে। আখিল অসহায় ভাবে আশিকের দিকে তাকাতেই আশিকও একই ভাবে তাকায়। আখিল দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে জোতির দিকে তাকিয়ে বলে
” জোতি তাহলে আমাদের সাথেই চলো !!” জোতি মুচকি হেসে বলে
” নাহ আরেকটা গাড়ি আছে তো আমি সেটা তেই যাচ্ছি তোমরা ফ্রি ভাবে যাও” বলে অভিদের অন্য গাড়িতে উঠে পরে। আখিল, আশিক নিজেদের গাড়িতে বসে পরে।
গাড়ি আপন গতিতে অভিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটে চলছে। রুহি অভিদের বুকে লেপ্টে শুয়ে আছে। মেয়েটা প্লেনে কয়েকবার বমি করেছে তাই আরও দুর্বল হয়ে পরেছে। অভিদ রুহিকে এক হাতে জড়িয়ে রেখেছে। হঠাৎ অভিদের ফোনে রিং হয়ে উঠে। অভিদ ফোন বের করে দেখে একজন গার্ড ফোন করেছে। অভিদ ভ্রু কুচকে কল রিসিভ করে গম্ভীর গলায় বলে
” কি হয়েছে ?? দুজন ঠিকা আছে তো ??” অপর পাশে গার্ড ভয়ে আমতা আমতা করতে করতে বলে
“ননাহ মমানেহ ” অভিদ ধমক দিয়ে বলে
” চুপ !! না মানে, না করে বলো কি হয়েছে ??” গার্ড রুমাল দিয়ে তার কপালের ঘাম মুছে বলে
” স্যার !! যাবেদ খান আর সিহাব খানকে বেধে গাড়িতে উঠানোর সময় সিহাব সুযোগ নিয়ে পালিয়ে যায়। আমরা ধরার চেষ্টা করেছি কিন্তু একজনকে শুট করে পালিয়েছে।” অভিদ রেগে চিৎকার করে বলে উঠে
” you stupid, rascal !! What ar doing all ?? ধারণা আছে কতো বড় ব্লান্ডার করেছো ?? সিহাব আবার আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। তোমাকে তো আমি দেখে নেবো you fool !! তাড়াতাড়ি খুজে বের করো ” বলে কেটে দেয় ফোন। রুহি অভিদের চিৎকার শুমে ধরফরিয়ে উঠেছিলো। অভিদের কথা শেষ হতেই ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে।
” কি হয়েছে ??” অভিদ রুহির দিকে তাকিয়ে দেখে রুহি ভয় নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অভিদ মুখ জোড়পূর্বক হাসি টেনে বলে
” নাহ তেমন কিছু না। তুমি ঘুমাও।” বলে রুহির মাথাটা বুকে চেপে ধরে। শক্ত করে রুহিকে জড়িয়ে ধরে।
কিছুক্ষণ পর রায়হান রুহিকে দেখে বুঝে রুহি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। রায়হান অভিদের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেকে বলে
” এভাবে কেউ চিৎকার দেয় ?? রুহি ঘুমাচ্ছিলো বেচারি ভয় পেয়ে গয়েছিলো তো।”
অভিদ রুহির দিকে তাকিয়ে আবার রায়হানের দিকে তাকিয়ে চিন্তার গলায় বলে
” সিহাব পালিয়ে গিয়েছে। সামনে কি হবে তাই ভাবছি। সিহাবকে খুব তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করতে হবে।”
রায়হাম বিস্ময় নিয়ে বলে
” হোয়াট !! কিন্তু এতো গার্ড থাকা সত্ত্বেও পালালো কি করে ?? উফফ এই স্টুপিড গার্ডদের তো কিছু একটা করতেই হবে। ” বলে নিজেও চিন্তিত হয়ে যায়। দুজনই সামনে কি হবে সেটা ভাবার চেষ্টা করছে। সিহাব কিছু করার আগেই ওকে ধরতে হবে।
চলবে… wait for next part….