#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা :মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ৪৪
দুজন ঝালমুড়ি অর্ডার করে কথা বলতে থাকলো। এরমাঝেই একটা লোক এসে রুহির হাত চেপে ধরে মাথায় কিছু ঠেকালো। রুহি চমকে গেলো এমন হঠাৎ কাজে। ঘাড় ঘুড়িয়ে পাশে তাকিয়েই ভয় পেয়ে গেলো। সিহাব রুহির মাথায় গান চেপে ধরে আছে। রুহি কাপা কাপা গলায় বলদ
” আ…আপনি এ..খানে ককি করে এসেছেন ??” সিহাব কিছু না বলে বাকা হাসি দেয়। গার্ডরা গান নিয়ে এগিয়ে আসতে গেলেই সিহাব বলে উঠে
” একদম একপাও এগোবে না। এগোলেই তোমাদের ম্যামের ক্ষতি। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।”
রুহি ঠোট কামড়ে কান্না করে দিলো। অনিও ভয়ে কাপাকাপি করছে। সিহাব শক্ত করে রুহির হাত চেপে ধরে পেছনে যেতে থাকে। রুহি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে
” আমাকে ছাড়ুন !! ছাড়ুন আমাকে ব্যাথা পাচ্ছি।”
সিহাব হেসে বলে
” ব্যাথা ছাড়া আর কি পাবি ?? তোকে কি ব্যাথা কামানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছি নাকি ?? তোকে মেরে অভিদের ব্যাথা বাড়াবো তারপর তোকেও মেরে ফেলবো।” সিহাবের কথার মাঝে অভিদ, রায়হান এসে হাজির হলো। রুহির মুখে হাসি ফুটলো। অভিদ সিহাবের সামনে এসে রাগি গলায় বললো
” ছাড় ওকে !! নাহলে তুই কোনোদিনও ছাড়া পাবি না” সিহাব হা হা করে হেসে উঠে হাসতে হাসতে বলে
” হাহ তুই কি আমাকে ছাড়বি আগে নিজেরা বেঁচে নে তারপর আমাকে ছাড়ার কথা উঠবে।” বলে রুহির মাথায় আরো জোড়ে গান চেপে ধরে রুহি চোখ খিঁচে বন্ধ করে কেঁদে দেয়। অভিদ ভয়ে এগিয়ে আসতে নিলেই সিহাব অভিদের দিকে গান তাক করে বলে
” এক পাও এগিয়ে আসবি না। এগিয়ে আসলে তোর রুহিকে আর বাঁচাতে পারবি না।” অভিদ সিহাবের কথায় পাত্তা না দিয়ে আরো এগিয়ে আসতে থাকে আর বলে
” দেখ ভালোয় ভালোয় বলছি রুহিকে ছেড়ে দে।” সিহাব রুহিকে নিয়ে পেছতে থাকে। রায়হান এসে সিহাবের হাতে লাথি দিলো। সিহাব ছিটকে একটু দূরে সরে গেলো। শক্ত হাতে গান ধরে থাকায় হাত থেকে গানটা পড়লো না। অভিদ একটানে রুহিকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। রুহি অভিদকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। সিহাব অভিদের সামনে এসে দাঁড়াল আর অভিদের বুক বরাবর গান তাক করে রাখলো। অভিদ রুহিকে আরো শক্ত করে একহাতে জড়িয়ে ধরলো। রায়হান দ্রুত সিহাবের দিকে এগিয়ে আসার আগেই সিহাব অভিদের বুকে শুট করলো। রুহি, রায়হান, অনি অভিদ বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো। অভিদ রুহিকে ছেড়ে মাটিতে পরে গেলো। রুহি অভিদের মাথা কোলে নিয়ে কিছু বলার আগেই অভিদ চোখ বন্ধ করে নিলো।
“অভিদদদদ” বলে চিৎকার করে ঘুম থেকে উঠে বসে রুহি। হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠায় পায়ে টান লাগলো আর আবার ব্যাথায় কুকড়ে উঠে। অভিদ রুহিকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিলো রুহি এভাবে উঠে যাওয়ায় অভিদেরও ঘুম ভেঙে গেলো। চিৎকার শুনে অভিদ উঠে অস্থির হয়ে বলে
” কি হয়েছে তোমার ?? চিৎকার করলে কেনো??”
রুহি ঘার ঘুরিয়ে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ তাকিয়ে দেখে রুহি ঘেমে অবস্থা খারাপ। অভিদ আবার বলে
” কি হয়েছে তোমার এসির মাঝেও এতো ঘামছো কেনো??” রুহি তার পায়ের ব্যাথার কথা ভুলে অভিদের উপর ঝাঁপিয়ে পরে। অভিদের গলা জড়িয়ে ঠোট উল্টে শব্দ করে কেঁদে উঠে। অভিদ চরম অবাক হয়ে গিয়েছে রুহির কি হয়েছে বুঝতে পারছে না। অভিদ রুহির মাথায় হাত রেখে বলে
” কি হয়েছে পাখি বলো আমাকে !! না বললে বুঝবো কি করে ?? আর কাঁদছো কেনো তুমি ??”
রুহি অভিদের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আরো জোড়ে কেঁদে উঠে। অভিদ রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে
” তুমি কি খারাপ স্বপ্ন দেখেছো ?? রুহিপাখি !! কান্না বন্ধ করো আর কথা বলো।” রুহি কিছু না বলে কেঁদেই যাচ্ছে। অভিদ আর কিছু জিজ্ঞেস না করে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো। কিছুক্ষণ পরে রুহির কান্না একটু থামতেই অভিদ রুহির তার দুটো তার গলা থেকে ছাড়িয়ে রুহিকে সামনে আনতে চাইলে রুহি কান্না করতে করতে মাথা মেড়ে না করে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। অভিদ জোড় করে রুহিকে ছাড়িয়ে সামনে বসালো। রুহি আবার ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়। অভিদ রুহির দুই গালে হাত রেখে আদুরে গলায় বলে
” কি হয়েছে বলো আমাকে !! খারাপ স্বপ্ন দেখেছো ?? ভয় পেয়েছো নাকি পায়ে ব্যাথা পেয়েছো ??” রুহি কান্না করতে করতে বলে
” স সি সিহাব.. আ আপনার বুকে !! ” পুরো কথা না বলে আবার কেঁদে দেয়। অভিদ বুঝতে পারলো
রুহি হয়তো খারাপ স্বপ্ন দেখেছে। রুহি অভিদের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে। অভিদ রুহির কান্না থামানোর জন্য পায়ের দিকে তাকিয়ে বলে
” তুমি পায়ে ব্যাথা পেয়েছো ??” রুহি মাথা নেড়ে হ্যা বলে। অভিদ ভয় নিয়ে বলে
” কি !! বেশি ব্যাথা পেয়েছো ??” রুহি কান্না গলায় বলে
” উঠার সময় পায়ে টান খেয়ে ব্যাথা করে উঠেছে।” অভিদ রুহিকে হেলান দিয়ে বসিয়ে বলে
” তুমি বসো আমি ওয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিচ্ছি ব্যাথা কমে যাবে।” বলে বিছানা থেকে নেমে গেলো।
রুহি হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে আস্তে আস্তে কান্না থামাতে থাকে। অভিদ রুহির ওয়েন্টমেন্ট এনে রুহির পায়ে হালকা করে মাসাজ করে দিতে থাকে। রুহির দিকে তাকিয়ে দেখে রুহি কান্না থামিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে বারবার হিচকি উঠছে। কয়েক মিনিট কান্না করেই চোখ মুখের বেহাল দশা। লাল লাল গাল গুলো, ফোলা ফোলা চোখ গুলোর জন্য রুহিকে অসম্ভব কিউট লাগছে। অভিদ রুহির দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে উঠে
” কান্না করায় তোমাকে অনকে কিউট লাগছে।” রুহি চমকে অভিদের দিকে তাকালো। রেগে বলে
” আর সারাদিন কি আমাকে দেখতে পেত্নী লাগে ?? ঠিকাছে তাহলে কালকে থেকে সব সময় আমি কান্না করবো।” রুহি এমন কথায় অভিদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে
” আমি এটা কখন বললাম ?? ” রুহি মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। অভিদ রুহির পায়ে মলম লাগানো শেষ করে লাইট অফ করে রুহির পাশে এসে বসে। রুহির কপালে আর গালে চুমু দিয়ে বলে
” তোমাকে তোমার যে কোনো রুপেই অপরুপ লাগে। তুমি হাসো আর কাঁদো সব সময় তুমি সুন্দরী।” রুহি লজ্জা লজ্জা চেহারায় অভিদের দিকে তাকালো। অভিদ মুচকি হেসে বলে
” আচ্ছা বলো স্বপ্নে কি এমন দেখলে যে কান্না করে দিলে।” স্বপ্নের কথা মনে হতেই রুহির লজ্জা মাখা মুখ কালো হয়ে গেলো। অভিদের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে ভাঙা গলায় বলে
” দেখেছি সিহাব আপনার ববুকে শু..ট করেছে।” অভিদ অবাক হয়ে গেলো। রুহির কান্নার কারণও বুঝতে পারলো। রুহির মিন ভোলানো জন্য বলে
” আচ্ছা ওসব বাদ দাও। স্বপ্নই তো ছিলো আর কিছু না। তোমার কি ঘুম ভেঙে গিয়েছে ?? তাহলে এক সাথে বসে কফি খাই !! দাড়াও আমি বানিয়ে আনছি।” বলে নেমে দাঁড়াতে গেলেই রুহি খপ করে অভিদের হাত ধরে বসলো। ভীতু গলায় বলে
” নাহ আপনি কোথাও যাবেন না। এখানে !! আমার কাছেই থাকুন। নাহলে আপনি শুয়ে পড়ুন আমি আপনার বুকে মাথা রাখলেই ঘুমিয়ে পরবো।” রুহিকে ভয় পেতে দেখে অভিদ আর কিছু বললো না। নিজের জায়গায় শুয়ে পরলো। রুহি এসে অভিদের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরলো। স্বপ্নের কথা ভাবতে ভাবতে অনেক্ষণ পরে আস্তে আস্তে ঘুমে তলিয়ে গেলো। অভিদ চোখ নিচু করে রুহির দিকে তাকিয়ে দেখে রুহি ঘুমিয়ে গিয়েছে। অভিদ ব্ল্যাংকেট দেওয়ার জন্য সাবধানে উঠতে নিলেই টান পরে। অভিদ দেখলো রুহি অভিদের গেঞ্জি শক্ত হাতে ধরে আছে। অভিদ কোনো রকমে ব্ল্যাংকেট শরীরে দিয়ে আবার রুহিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো।
সকাল থেকে রুহি মন মরা হয়ে বসে আছে। কেউ জিজ্ঞেস করলে কিছু হয়নি বলে কাটিয়ে দেয়। অভিদ অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে কিন্তু রুহি এখনও মন মরা হয়ে বসে আছে। অভিদ রুহির দিকে তাকিয়ে বলে
” তুমি বসে আছো এখনও তৈরি হচ্ছো না কেনো ?? দেড়ি হয়ে যাবে তো !!” রুহি মুখ ঘুড়িয়ে আস্তে করে বলে
” আমি আর ভার্সিটিতে যাবো না।” অভিদ বিস্ময় নিয়ে রুহির দিকে তাকালো। রুহির পাশে বসে অবাক হয়ে বলে
” কি হয়েছে তোমার ?? এখন ভার্সিটিতে যাবে না কেনো ?? এতোদিন ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য আমার মাথা চিবিয়ে খেলে আর এখন একদিন গিয়েই আর যাবে না কেনো ?? যাও রেডি হয়ে নাও।” রুহি কিছু না বলে আগের মতো বসে থাকে। অভিদ উঠে রুহিকে কোলে তুলে নিলো। রুহি ভ্রু কুচকে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ রুহিকে ওয়াসরুমের বাথটবের উপরে বসিয়ে দিয়ে রাগি গলায় বলে
” চুপচাপ রেডি হবে। কোনো কথা শুনবো না। তুমি এখন থেকে প্রতিদিন ভার্সিটিতে যাবে। আমি কাপড় দিচ্ছি।” বলে বেড়িয়ে গেলো। রুহি বিষন্য মুখে বসে থাকে। অভিদ আলমারি থেকে রুহির কাপড় দিয়ে বেড়িয়ে যায়। রুহি তৈরি হয়ে অভিদ, রায়হান, অনির সাথে বেড়িয়ে গেলো। ভার্সিটিতে সাক্ষণ রুহি ভয় নিয়ে ছিলো। বাড়িতে ফিরেও মনমরা হয়ে বসে ছিলো। অভিদকে নিজেই ৫বার ফোন করে খোজ খবর নিলো।
রুহির ভয়ের মাঝেই চার দিন কেটে গেলো। আজকে রায়হান আর মিশুর এনগেঞ্জমেন্ট। তবে বেচারা রায়হান এখনও কিছু জানে না। আজকে বাড়িতে কিসের পার্টি হচ্ছে সেটাও জানে না। অভিদ জানিয়েছে এমনি একটা পার্টি রাখা হয়েছে। রায়হান খুশি মনে অভিদের সাথে সব কাজ করর যাচ্ছে। অভিদ সব কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে সাজিয়েছে রুহি, অনিও অনেক হেল্প করেছে। অভিদ, রুহি নিজের বন্ধুদের জন্য কোনো কিছুর কমতি রাখেনি। এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে সবাই যার যার রুমে রেডি হতে চলে গিয়েছে। এতো আনন্দের মাঝে রুহি সেই স্বপ্নের কথাও কিছুক্ষণের জন্য ভুলে গেলো।
চলবে…wait for next part….